নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে জানতে চাই,ছুটে চলেছি অজানার পথে,এ চলার শেষ নেই ।এক দিন ইকারাসের মত সূর্যের দিকে এগিয়ে যাব,ঝরা পাতার দিন শেষ হবে ,আর আমি নিঃশেষ হয়ে যাব ।

অপু দ্যা গ্রেট

গাহি সাম্যের গান- মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান, নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি, সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।

অপু দ্যা গ্রেট › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক বীরশ্রেষ্ঠ !!!!

০৯ ই মে, ২০১৫ রাত ১১:২৮

১৭/১১/৭১
লেফটেন্যান্ট রফিক

(১) দুই - এক দিনের জ্ন্য ভাঙ্গাবাড়ির ৮৯ মর্টার দিয়ে কাজ চালাও ; আর বাইরেটা সম্ভব হলে ওয়েল্ড করে নাও , না হয় এখানে পাঠিয়র দাও । ভাঙ্গাবাড়ির দিকে একজন এমএফসি ও কসাই বাড়িতে একজন এফএফসি রাখতে পার । জিরোআরজে- ২০(জাপানী সেট) সেটটা পাঠিয়ে দিয়ো আজকেই ।

(২) ঐ দিনের প্ল্যানিংটা এক দিনের ( ২৪ ঘন্টা ) জন্য পিছিয়ে গিয়েছে ।

এম জাহাঙ্গীর

এই চিঠি বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর লিখেছিলেন । এই চিঠি ছিল ৭ নং সেক্টরের ভোলাহাট সাবসেক্টরের লেফটেন্যান্ট রফিক এর জন্য । এই চিঠিতে মূলত যুব্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ।

বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর । সাত জন বীরশ্রেষ্ঠের অন্যতম । তিনি তার শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করেছেন । তবুও পিছু হটেননি ।

১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায়ই
পাকিস্তান সামরিক একাডেমীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৮ -র ২ জুন তিনি ইঞ্জিনিয়ার্স কোরে কমিশন লাভ করেন।১৯৭১ -এ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় তিনি পাকিস্তানে ১৭৩ নম্বর ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটেলিয়ানে কর্তব্যরত ছিলেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি ছুটে এসেছিলেন পাকিস্তানের দুর্গম এলাকা অতিক্রম করে। তবে ৩ জুলাই পাকিস্তানে আটকে পড়া আরো তিনজন অফিসারসহ তিনি পালিয়ে যান ।

মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ৭নং সেক্টরে, যোগ দিলেন মেহেদীপুরে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে৷ ক্যাপ্টেন আনাম ৪নং সেক্টরে, সিলেট রণাঙ্গনে৷ মেহেদীপুরের অদূরেই বয়ে চলেছে মহানন্দা নদী৷ মেহেদীপুর ক্যাম্পের দায়িত্ব পেয়েছেন ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর৷ বয়স মোটে তেইশ৷ তারুণ্যে টগবগ করে ফুটছেন তিনি৷ দৃঢ় প্রত্যয়ের এক অসম্ভব লড়াকু মানুষ৷ পরিধানে লুঙ্গি, গায়ে গেঞ্জি, মাথায় লাল গামছা, পায়ে ক্যানভাসের জুতো৷ এই তরুণ সেক্টর কমান্ডারকে দেখে মেহেদীপুর মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধারা প্রথমে আঁচ করতে পারেনি কতটা ইস্পাতকঠিন তাঁর মন, কতটা বলিষ্ঠ তাঁর স্বভাব৷ তাঁর কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, কর্তব্যপরায়ণতা এবং ক্লান্তিহীন অধ্যবসায় তাঁর অল্প বয়স আর বাচ্চা বাচ্চা চেহারাটাকে অতিক্রম করে পরিণত করেছে এক প্রবলব্যক্তিত্বে৷ তাঁর নামে সবাই এক ডাকে দাঁড়িয়ে যায় ।

৩ ডিসেম্বর ১৯৭১

বাংলাদেশ জুড়ে সব ফ্রন্টে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে শুরু হলো চূড়ান্ত লড়াই৷ মেহেদীপুর ক্যাম্পেও প্রস্তুতি শুরু হলো৷ এরই মধ্যে কোথাও কোথাও হানা দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধারা৷ যেন পরীক্ষা করে নিয়েছে নিজেদের শক্তি৷ এখন প্রস্তুতি শুরু চূড়ান্ত লড়াইয়ের৷ মহানন্দা নদীর অপর পারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর৷ সেখানে শক্ত ঘাঁটি গেড়ে আছে পাকিস্তানি হানাদাররা৷ সে ঘাঁটি আগলাতেই নদীর তীর ঘেঁষে তারা তৈরি করে রেখেছে প্রতিরক্ষা দুর্গ৷ জনশূন্য চারদিকে৷ ঝোপঝাড়, গাছপালায় ভরা এই প্রতিরক্ষা দুর্গ৷ সেখানে তাদের হটানোর দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের উপর৷

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর৷

লেফটেন্যান্ট কাইয়ুম, লেফটেন্যান্ট আউয়ালসহ ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে একটি আক্রমণের উদ্যোগ নিলেন ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর৷ বেশ কয়েকটা নৌকায় তাঁরা উজানে পাড়ি জমালেন ৷

ভোররাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের পশ্চিমে বারঘরিয়া৷ সেখানে অবস্থান নিয়ে পরিকল্পনা করা হলো হানাদার বাহিনীকে মিত্রবাহিনী দিয়ে গোলাবর্ষণ করে বিভ্রান্ত করে দেয়ার৷ এই অপ্রস্তুত অবস্থাতে আক্রমণ চালাবে মুক্তিবাহিনী৷ কিন্তু মিত্রবাহিনী গোলাবর্ষণ না করার ফলে মুক্তিবাহিনী নতুন কৌশল পরিকল্পনা করল৷

১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১৷ ভোরারাত৷

চাঁপাইনবাবগঞ্জকে দখল করার জন্য শুরু হলো চূড়ান্ত অপারেশন৷ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর জানতেন এটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান, জানতেন সহকর্মীরাও৷ তাই তিনি সহকর্মীদের জিজ্ঞেস করলেন এই অভিযানে কারা তাঁকে সঙ্গ দিবেন৷ সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা তিনি সঙ্গীদের দিয়েছিলেন৷ মাত্র ২০ জন তাঁর ডাকে সাড়া দিলেন৷ ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে তিনি রওনা দিলেন৷ শীতের শেষ রাত৷ প্রচণ্ড শীতে হাত-মুখ জমে যাচ্ছে৷ রেহাইচর এলাকা দিয়ে তাঁরা মহানন্দা নদী পায়ে হেঁটে পাড়ি দিলেন৷ উত্তর দিক দিয়ে আক্রমণের সূচনা করা হলো ৷ অতর্কিত হামলা করে বেয়নেটের মাধ্যমে খতম করতে করতে তাঁরা এগোতে লাগলেন দক্ষিণ দিকে৷ ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর এমনভাবে আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিলেন যাতে উত্তর থেকে শত্রু নিধন করার সময় শত্রু দক্ষিণ দিক থেকে গুলি করতে না পারে৷ সম্মুখ ও হাতাহাতি যুদ্ধ ক্রমেই তীব্র আকার ধারণ করতে থাকে৷ আর মাত্র কয়েকটা বাঙ্কারের পাকসেনা বাকি৷ তখনই দেখা দিল সমস্যা৷ পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সের কয়েকজন সৈন্য বাঁধের ওপর ছিল তারা ব্যাপারটা টের পেয়ে গেল৷ তারা যোগ দিল পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে৷ এরপরই পাকিস্তানি বাহিনী শুরু করে দিল গুলিবর্ষণ৷ কিন্তু জাহাঙ্গীর পিছু হটতে নারাজ৷ তিনি ভয়ে ভীত নন৷ তিনি সবাইকে নির্দেশ দিলেন এগিয়ে যাওয়ার জন্য৷ পাশাপাশি তিনি নিজেও এগিয়ে যেতে লাগলেন সামনের দিকে৷ তিনি হয়ে উঠলেন অদম্য দুঃসাহসী৷

হঠাৎ একটা গুলি এসে পড়ল সরাসরি ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের কপালে৷ মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন এই অসম সাহসী যোদ্ধা৷ হানাদারদের বেপোরোয়া গুলি বর্ষণের সামনে টিকতে পারলেন না তাঁর বাকি সহযোদ্ধারাও৷ তাঁরা পিছু হটলেন, নদীতে দিলেন ঝাঁপ৷ ডুব-সাঁতার দিয়ে চলে গেলেন নিরাপদ দূরত্বে৷ প্রচণ্ড শীতে তাঁরা নদী পাড়ি দিয়ে মৃতপ্রায় অবস্থায় হাজির হলেন মেহেদীপুর মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে৷ শোকের মাতম উঠল চারদিকে৷ দিকে দিকে রটে গেল ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের শহীদ হবার সংবাদ৷ মুক্তিবাহিনীর সব সদস্য দ্রুত এই শোককে শক্তিতে পরিণত করে প্রতিশোধের জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেন৷ তাঁদের প্রবল আক্রমণের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হলো বর্বররা৷ মুক্ত হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ৷ ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের রক্তক্ষরা নিষপ্রাণ দেহ নদীর পাড় থেকে উদ্ধার করে সম্মাননার মধ্য দিয়ে সমাহিত করা হলো গৌড়ের ঐতিহাসিক সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে৷ আজও ধীরে বহে সেই মহানন্দা তার ঢেউয়ে ঢেউয়ে উচ্চারণ করে যায় বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নাম৷ স্বাধীনতার মাত্র ২ দিন পূর্বে ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে এই মহান বীর দেশের জন্য শহীদ হলেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র দুই দিন আগে তিনি শহীদ হন । কিন্তু যুব্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যাননি । লড়াই করেছেন । তার উপর অর্পিত দ্বায়িত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠার সাথে । মুক্ত করেছেন ছিনিয়ে এনেছেন স্বাধীনতা দেখিয়েছন বাঙ্গালির শক্তি আর বুব্ধিমত্তা । এই সকল বীরদের জন্যই আজ আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা । মুক্ত ভাবে চলার স্বাধীনতা ।

তাইতো বলতে ইচ্ছে করে ,

হে , বঙ্গ জননী !
এমন বীর যুগে যুগে কেন তুমি জন্ম দাওনি ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মে, ২০১৫ রাত ২:২৬

এম. রহমান বলেছেন: সুন্দর পোস্ট। ধন্যবাদ।

০৫ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:০৩

অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন: ধন্যবাদ । পড়ার জন্য ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.