নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে জানতে চাই,ছুটে চলেছি অজানার পথে,এ চলার শেষ নেই ।এক দিন ইকারাসের মত সূর্যের দিকে এগিয়ে যাব,ঝরা পাতার দিন শেষ হবে ,আর আমি নিঃশেষ হয়ে যাব ।

অপু দ্যা গ্রেট

গাহি সাম্যের গান- মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান, নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি, সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।

অপু দ্যা গ্রেট › বিস্তারিত পোস্টঃ

রকিবুল হাসানের প্রতিবাদ

০১ লা জুন, ২০১৫ সকাল ১১:১৭

অনেক ই বলেন খেলার সাথে রাজনীতি মিশাবেন না । আচ্ছা মেশালাম না । কিন্তু অতীত কি করে ভুলে যাব কি করে ভুলে যাব আমাদের দেশের খেলোয়ারদের সব সময় বৈষম্যের স্বীকার হয়েছে । তাদের কে বন্দীর মত করে রেখেছিল । ডাক ঠিক ই আসত কিন্তু সু্যোগ দেয়া হত না ।

যারা খেলার সাথে রাজনীতি মেশাতে চান না । তাদের জন্য রকিবুল হাসানের এই ঘটনা শেয়ার করলাম ।

১৯৭১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রকিবুল হাসানের জয় বাংলা স্টিকার ব্যাট দিয়ে প্রতিরোধ এখন ভুবনবিখ্যাত ঘটনা। তবে তাঁর এই রুখে দাঁড়ানা কিন্তু সেদিন প্রথম ঘটনা নয়। কৈশোর পার হতে না হতেই রকিবুল হাসান দেখেছিলেন, কী এক ভয়াবহ বৈষম্যের মুখোমুখি এই বাংলার মানুষকে হতে হয়। শতভাগ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তান দলে ঠাঁই হয় না রকিবুল হাসান বা শহীদ আব্দুল হালিম চৌধুরী জুয়েলের। রকিবুল নিজেই শুধু বাঙালি বলে বারবার অনুর্ধ্ব-১৯ দলে ডাক পেয়েও সেরা একাদশে ঠাঁই পাননি। তখনকার দুই পাকিস্তান মিলিয়ে সেরা পারফরমার হওয়ার পরও একাদশে নেওয়া হতো না তাঁকে, নেটে ব্যাট করতে দেওয়া হতো না নিয়মমতো।

তবে এসব ব্যক্তিগত অপ্রাপ্তি নিয়ে নয় । রকিবুল হাসান প্রথম রুখে দাঁড়িয়েছিলেন রাজনৈতিক কারণেই। অনুর্ধ্ব-২৫ দলের ক্যাম্পে রকিবুল তখন করাচিতে। ক্যাম্পের মধ্যেই একদিন সন্ধ্যায় খুব আড্ডা জমেছে রাজনীতিও চলে এসেছে আলোচনায়। হঠাত্ বাঁহাতি স্পিনার, পেশোয়ারের কামরান রশীদ বলে উঠল, 'আইয়ুব খান মেড আ মিসটেক। হি শুড কিলড দ্য...মুজিব।'

একটা সেকেন্ডও দেরি হলো না। রকিবুলের সপাট ঘুষিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল কামরান। চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়ার পর শুরু হলো ভয়ঙ্কর পিটুনি। পেটাতে পেটাতে কামরানকে টিলার নিচে নিয়ে এলেন রকিবুল, হাতের কাছে যা পেলেন, তা-ই দিয়ে চলল আঘাত ততক্ষণে রক্তাক্ত কামরান জীবনভিক্ষা চাইতে শুরু করেছে। পাকিস্তানের বুকে, করাচিতে বসে একজন বাঙালির এই রুদ্রমূর্তি দেখে যেন বিস্ময়ে, আতঙ্কে পাথর হয়ে রইল পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা।
পরিদন কোর্ট মার্শালে ডাক পড়ল রকিবুল হাসানের। মেজর সুজা জিজ্ঞেস করলেন, কেন এমন করেছ?
রকিবুল চোখে চোখ রেখে উত্তর দিয়েছিলেন, 'ও আমার নেতাকে গালি দিয়েছে, বাঙালির নেতাকে গালি দিয়েছে। যতবার গালি দেবে, ততবার আমি এমন করব।'

এই সিংহহূদয় মানুষটি তাঁর প্রতিজ্ঞা বারবার রেখেছেন। নিজের শত বঞ্চনাতেও চুপ করে থাকলেও যখনই বাঙালির অপমানের প্রশ্ন এসেছে, যখনই আমাদের প্রতিরোধের প্রশ্ন
এসেছে, রুখে দাঁড়িয়েছেন। আর সেরা রুখে দাঁড়ানোর গল্প ওই 'জয় বাংলা' স্টিকার। কোনো প্রতিবাদ শাসকেরা সহজে ছাড়ে না। সেই 'জয় বাংলা' স্টিকারের ফল হিসেবে জীবনটাই দিতে হচ্ছিল রকিবুল হাসানকে। ম্যাচ চলা অবস্থাতেই সংসদ ভেঙে গেল, আগুন জ্বলে উঠল শহরে, খবর পৌঁছাতে স্টেডিয়ামের প্যান্ডেলেও লাগল আগুন। পুরো নগরীই তখন জ্বলছে, ক্রিকেট কি আর বাঁচে। বাকি
পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা তখন ক্যান্টমেন্টে আত্মগোপন করল। আর রকিবুল হাসান মিশে গেলেন ছাত্র-জনতার মিছিলে। তখনও তিনি জানেন না, তাঁর নামে ওয়ারেন্ট জারি হয়ে গেছে।

৭ মার্চ
জাতি পেয়ে গেল মুক্তির দিশা। রকিবুল হাসান বুঝে গেলেন, যুদ্ধেই যেতে হবে। ২৫ মার্চ ঢাকায় নামল পাকিস্তানি বাহিনী রকিবুল জানলেন, তাঁকে খোঁজা হচ্ছে মেরে ফেলার জন্য। পরিবার চলে গেল গোপালগঞ্জে নিজেদের বাড়িতে; আর রকিবুল হাসানরা দুই ভাই বাবার সার্ভিস রিভলবার হাতিয়ে নিয়ে চললেন ট্রেনিং ক্যাম্পে।

এই স্বল্প জায়গার কী সামর্থ্য বাঙালির সেই বীরত্ব ফুটিয়ে তোলে! আমরা শুধু বলতে পারি,আরো অনেক ক্রিকেটার-ফুটবলারের মতো আয়েশী জীবন ছেড়ে রকিবুলও রণাঙ্গনে শুরু করেন দেশ বাঁচানোর লড়াই। সে লড়াইয়ে রকিবুলরা জয় নিয়ে ফিরলেন, ফিরলেন জুয়েল-মুশতাকের মতো অনেক প্রিয়জনকে হারানোর শোক নিয়ে। বিনিময়ে পেলেন স্বাধীন পতাকা এবং নিজেদের একটি ক্রিকেট দল। আজও পত পত করে উড়তে থাকা লাল-সবুজ পতাকার দিকে চোখ পড়তে স্মৃতি রকিবুল হাসানকে নিয়ে যায় সেই ১৯৭১ সালে। মনে পড়ে যায় তাঁর মার্চের শুরুতে জহির আব্বাসের
সঙ্গে কথোপকথন। সেই ম্যাচ পন্ড হয়ে যাওয়ার পর জহির আব্বাসরা ফিরে যাচ্ছেন পাকিস্তানে। যাওয়ার সময় জহির হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, 'রকিবুল, করাচিতেই দেখা হবে
আবার।'

রকিবুল কী ভেবে দৃঢ়কণ্ঠে বলেছিলেন,'অবশ্যই। তবে আমার সঙ্গে তখন নতুন পাসপোর্ট থাকবে'।

কথা রেখেছিলেন রকিবুল হাসান। নয় মাস যুদ্ধ করে নতুন পাসপোর্টের মালিক হয়ে তবেই ঘরে ফিরেছেন আমাদের রকিবুল হাসানরা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.