নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে জানতে চাই,ছুটে চলেছি অজানার পথে,এ চলার শেষ নেই ।এক দিন ইকারাসের মত সূর্যের দিকে এগিয়ে যাব,ঝরা পাতার দিন শেষ হবে ,আর আমি নিঃশেষ হয়ে যাব ।

অপু দ্যা গ্রেট

গাহি সাম্যের গান- মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান, নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি, সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।

অপু দ্যা গ্রেট › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুইসাইড কেন এবং কি কারনে হয়!!!!

০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ১০:১১

মানুষ যখন নিজেই নিজের মৃত্যু ঘটায়, তখন একে আত্মহত্যা বা সুইসাইড বলে। আবার কিছু মানুষ আছে, যারা নিজেকে আহত বা নিজের ক্ষতি করে। কিন্তু তাদের আসলে মৃত্যুবরণ করার কোনো প্রকৃত ইচ্ছা নেই। একে বলে প্যারাসুইসাইড।

স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চল, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো এবং জাপানে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি (লাখে পঁচিশের ওপরে)। গত ৫০ বছরে সারা পৃথিবীতে, মূলত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আত্মহত্যার হার শতকরা ৬০ শতাংশ বেড়েছে। সারা পৃথিবীর যত মানুষ আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যুবরণ করে, তার মধ্যে ২.০৬ শতাংশ বাংলাদেশি। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রতি লাখে ১২৮.০৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করে। প্রতিবছর এই সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রতিদিন ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করে।

বাংলাদেশে কীটনাশক পান, ইঁদুর মারার বিষপান, ফাঁসি, ঘুম বা ব্যথার ওষুধ, হারপিক, স্যাভলন ইত্যাদি বিষাক্ত তরল পান করার মাধ্যমে মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে। অল্পবয়সী মেয়েদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি দেখা যায়।

আত্মহত্যার ধরনেও রয়েছে বৈচিত্র্য। কেউ নিজেই নিজের জীবন নিয়ে নেয়। আবার কেউ এক বা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে চুক্তি করে একসঙ্গে আত্মহত্যা করে। একে বলে প্যাক্ট সুইসাইড। কখনো কখনো দলের চাপে অনেকে একসঙ্গে আত্মহত্যা করে। একে বলে ম্যাস সুইসাইড।

জিম জোনস নামের এক ধর্মগুরুর নেতৃত্বে ১৯৭৮ সালের ১৮ নভেম্বরে জোনস টাউন নামে একটি কমিউনিটিতে ৯০৯ জন মার্কিন নাগরিক ম্যাস সুইসাইডের মাধ্যমে মৃত্যুবরণ করেন। কোনো কোনো সমাজে সম্মান রক্ষার জন্য আত্মহত্যার চল ছিল। একে বলে অনার সুইসাইড। জাপানের সামুরাইরা নিজের পেট কেটে আত্মহত্যা করত। একে বলা হতো সেপুকু। উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা অনেক সময় বড় ধরনের অপরাধ করার পর আত্মহত্যা করার মাধ্যমে বিচার ও অসম্মানিত হওয়া থেকে নিজেদের ও নিজেদের পরিবারকে বাঁচাতেন। একে বলে ডিউটিফুল সুইসাইড। গ্রিক সম্রাট নিরো ও জার্মান সেনাপতি এরউইন রোমেল এই প্রক্রিয়ায় আত্মহত্যা করেছিলেন।

অনেক সময় যিনি আত্মহত্যা করতে চান, তাঁর শারীরিক সক্ষমতার অভাব বা সাহসের অভাব থাকায় তিনি অন্য কারো সাহায্য নিয়ে আত্মহত্যা করেন। একে বলে ইউথানসিয়া। পৃথিবীর কোনো কোনো দেশে এ ধরনের আত্মহত্যা বৈধ আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডাক্তার জ্যাক কোভোকিয়ান সহায়তা করার জন্য একটি মেশিন বানিয়ে বহুসংখ্যক মানুষকে আত্মহত্যা করতে সাহায্য করে ব্যাপকভাবে নিন্দিত হয়েছিলেন। উনি নিজে অবশ্য কিছুদিন কারাভোগ করে বহাল তবিয়তে ৮৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। অনেক সময় নিজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে প্রভাবিত হয়ে আত্মহত্যার সময়ে নিজের ভালোবাসার মানুষকে হত্যা করে তার পর কেউ কেউ আত্মহত্যা করেন। একে বলা হয় মার্ডার সুইসাইড (ভিন্নমতে মার্সি কিলিং)। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫-এর প্রকাশনায় দেখা যায়, বরগুনার এক মা আত্মহত্যার আগে তার তিন ও পাঁচ বছরের দুটি সন্তানকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেছেন।

কোনো আদর্শ দ্বারা পরিচালিত অন্য মানুষকে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্য কেউ কেউ অন্যদের মেরে নিজেও মারা যায়। একে বলে সুইসাইড অ্যাটাক। ২৯ নভেম্বর ২০০৫ তারিখে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও গাজীপুরে সুইসাইড বম্বিংয়ে ১০ জনের মতো মানুষ মৃত্যুবরণ করে এবং আরো বহু মানুষ হতাহত হয়। (উইকিনিউজ, ২৯ নভেম্বর, ২০০৫) কখনো কখনো আদর্শগত প্রচারণা ও প্রতিবাদ করার জন্য নিজেকে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘটে। চীনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অংশ হিসেবে তিব্বতের কিছু মানুষ এমনটা করেছে।

কেন এই আত্মহনন?

কেন মানুষ নিজের জীবন নিজে নেয়? তার কি তখন মাথার ঠিক থাকে? সুস্থ মাথায় কি এটা করা সম্ভব? নানা ধরনের ব্যাখ্যা দেখা যায়।

— মানসিক রোগীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে, যেমন—বিষণ্ণতা, বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্ত, উদ্বেগে আক্রান্ত ইত্যাদি রোগীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার উচ্চ। বিষণ্ণতার রোগীদের মধ্যে এক ধরনের তীব্র আশাহীনতা তৈরি হয়। দুনিয়ার সবকিছু তারা নেতিবাচকভাবে দেখে। তারা নিজের সম্পর্কে, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ও অন্য মানুষ সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তা পোষণ করে। তারা ভাবে, এই পরিস্থিতি দিন দিন আরো খারাপ হবে এবং এটি পরিবর্তনের জন্য শত চেষ্টায়ও কোনো লাভ হবে না। এর চেয়ে মুক্তির একমাত্র উপায় নিজেকে মেরে ফেলা। এই চিন্তায় তাড়িত হয়ে তারা আত্মহত্যা করে। অনেক বিষণ্ণতার রোগী খামোখাই তীব্র অপরাধবোধে ভোগে। ফলে নিজেকে শাস্তি দিতেই তারা আত্মহত্যা করে।

কগনিটিভ সাইকোথেরাপির জনক অ্যারনটি বেকের তত্ত্ব পড়লে আমরা আত্মহত্যার বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা পেতে পারি।

— অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিলে আত্মহত্যার হার বেড়ে যায়। সমাজে যখন বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, যখন মানুষ বিচ্ছিন্নতায় ভোগে, তখন আত্মহত্যার হারও যায় বেড়ে।

— রাজনৈতিক আদর্শের কারণে আত্মহত্যা করতে দেখা যায়, যেমন—আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীরা করে থাকে।

— অনেকে বাধ্য হয়েও আত্মহত্যা করে, যেমন—বন্দিশিবিরের তীব্র নির্যাতন সইতে না পেরে অনেকে আত্মহত্যা করেন।

— সম্মান রক্ষার জন্য কোনো কোনো সমাজে আত্মহত্যার রেওয়াজ প্রচলিত ছিল, যেমন—জাপানের সামুরাই যোদ্ধারা আত্মহত্যা করত। আবার বড় বড় পদে থাকা ক্ষমতাশালী মানুষের মধ্যে পরিস্থিতির চাপে অন্য কোনো উপায় না থাকায় আত্মহত্যা করার বিষয়টি চোখে পড়ে।

— দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীরা অনেক সময় আত্মহত্যা করে। অসুখের তীব্র যন্ত্রণা সইতে না পেরে অনেকে এই পথ বেছে নেয়।

— বাংলাদেশে পরিচালিত এক গবেষণায় পারিবারিক সমস্যা (৪১.২%), পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া (১১.৮%), বৈবাহিক সমস্যা (১১.৮%), ভালোবাসায় কষ্ট পাওয়া (১১.৮%), বিবাহবহির্ভূত গর্ভধারণ ও যৌন সম্পর্ক (১১.৮%), স্বামীর নির্যাতন (৫.৯%) এবং অর্থকষ্ট (৫.৯%) থেকে রেহাই পেতে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

— কোনো কোনো পেশার মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি দেখা যায়, যেমন—ডাক্তার, ডেন্টিস্ট বা দন্ত বিশেষজ্ঞ, পুলিশ বা সশস্ত্র বাহিনীর লোক ইত্যাদি।

— মনঃসমীক্ষণের জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতে, যখন ভালোবাসার মানুষের প্রতি সৃষ্ট তীব্র রাগ ও আক্রমণাত্মক মনোভাব নিজের প্রতি ধাবিত হয়, তখন মানুষ আত্মহত্যা করে। অন্যকে হত্যা করার সুপ্ত কামনা যখন অবদমিত হয়, তখন সেটা আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়। মানুষের মধ্যে একটি শক্তি তাকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়, আরেকটি তাকে ধ্বংস করে ফেলতে চায়। এই ধ্বংসের শক্তির জন্যই মানুষ আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যাকারীর মধ্যে হত্যার কামনা, নিহত হওয়ার কামনা ও মৃত্যুর কামনা লক্ষ করা যায়।

— আত্মহত্যার চেষ্টাকারীদের মধ্যে তার মৃত্যুর পর কী কী পরিস্থিতি হবে, কার কী কী প্রতিক্রিয়া হবে, তার মৃত্যুর ফলে কে কে গুরুতর কষ্ট (শাস্তি) পাবে, এসব বিষয়ে নানা রকম কল্পনা দেখা যায়। অনেকে এর মাধ্যমে নিজেকে শাস্তি দিতে চায়। অনেকে তার ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে আবার মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে আত্মহত্যা করে। অনেকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য আত্মহত্যা করে। অনেকে পুনর্জন্ম লাভের আশায় আত্মহত্যা করে।

— অনেকের ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যই এমন যে তারা খুব ঝোঁকে চলে। কিছু মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে তা করতেই হবে, এমনটা ভাবে। অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা নেই। এদের মধ্যে আত্মহত্যার ঝুঁকি থাকে।

— যাদের ঘরবাড়িতে আত্মহত্যা করার উপাদান বেশি থাকে, তারাও কিছুটা ঝুঁকিতে থাকে। যেমন—আমাদের দেশের কৃষকদের বাড়িতে কীটনাশক সহজলভ্য থাকতে দেখা যায়।

— মিডিয়ার, যেমন—পত্রিকা ও টেলিভিশনে ভুলভাবে উপস্থাপিত প্রতিবেদনের মাধ্যমেও আত্মহত্যা উৎসাহিত হতে পারে। যেমন—বিখ্যাত কোনো অভিনেতা বা অভিনেত্রীর আত্মহত্যার খবর খুঁটিনাটিসহ ব্যাপক সহানুভূতি দিয়ে প্রচার করার পর তাঁর ভক্তদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়। খারাপ মানুষের দ্বারা উত্ত্যক্ত হয়ে অমুক নামের নিরীহ একটি মেয়ে নিরুপায় হয়ে আত্মহত্যা করেছে এমন খবর দিনের পর দিন প্রচার পাওয়ার পর একইভাবে উত্ত্যক্ত আরেকটি মেয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিতে পারে।

— কিছু কিছু গবেষণায় আত্মহত্যার পেছনে জিনগত ভিত্তি পাওয়া গেছে। পরিবারের মধ্যে আত্মহত্যার ইতিহাস থাকলেও এই ঝুঁকি বাড়ে। পরিবারের কেউ আত্মহত্যার চেষ্টা করলে বা আত্মহত্যা করলে তার সন্তানদের মধ্যে আত্মহত্যার চেষ্টা করার আশঙ্কা বেশি থাকে। একই ডিম্বাণু থেকে জন্মানো যমজদের একজন আত্মহত্যা করলে আরেকজনও আত্মহত্যা করার ঝুঁকির মধ্যে থাকে। এই ঝুঁকি ভিন্ন ডিম্বাণু হতে জন্মানো যমজদের মধ্যে কিছুটা কম থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, যদি একই ডিম্বাণু থেকে জন্মানো একজন যমজ আত্মহত্যার জন্য চেষ্ট করে, তবে তার যমজটির মধ্যে আত্মহত্যা করার ঝুঁকি ১৭.৫ গুণ বেশি থাকে। আত্মহত্যার পেছনে মস্তিষ্কে সেরোটনিন ও নরএপিনেফ্রিনের ঘাটতিকে দায়ী করেছেন গবেষকরা।

আত্মহত্যার সতর্কসংকেত

— ব্যক্তি যখন মরে যাবে, সবার থেকে অনেক দূরে চলে যাবে এমনটা বলতে শুরু করে।

— সবার থেকে ক্ষমা চায়।

— বিদায় চায়।

— আত্মহত্যার পরিকল্পনার কথা বলে।

— আত্মহত্যার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী জোগাড় করে।

— যদি কেউ আত্মহত্যা কীভাবে করবে, তার অনুশীলন বা রিহার্সেল করে ও আন্তরিকভাবে আত্মহত্যা করার মতো সাহস বাড়াতে চায়।

— ঘুম ও খাওয়া-দাওয়া কমে গেলে, আচার-আচরণে সাংঘাতিক পরিবর্তন ঘটলে তা ঝুঁকি নির্দেশক হতে পারে।

— নিজের চেহারা ও পোশাক-আশাকের সৌর্ন্দযের বিষয়ে অসচেতন হয়ে ওঠে।

— আত্মবিশ্বাস কমে গেলে।

— নিজেকে ঘৃণা করে। ঘনিষ্ঠজনদের দূরে ঠেলে দেয়। নিজেকে অন্যের ওপর বোঝা মনে করে।

— অধৈর্য হয়ে পড়ে। বিরক্তি বেড়ে যায়।

— কেউ কেউ ধূমপান বাড়িয়ে দেয়। অনেকে মদ্যপান বা নেশা গ্রহণ বাড়িয়ে দেয়।

— নিজের জিনিসগুলো দান করতে শুরু করে।

— বড় ধরনের কোনো সমস্যার মাঝে পড়ে বলে সে আর পেড়ে উঠছে না। যেমন—প্রেমে ব্যর্থ হয়ে তীব্র মানসিক কষ্টে পড়ে গেলে।

— আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে এমন মানুষ। বিশেষত যদি আত্মহত্যার নোট লিখে চেষ্টা করে থাকে, যদি এমনভাবে চেষ্টা করে থাকে যাতে কেউ তার চেষ্টার বিষয়টি ধরতে না পারে, যাতে মৃত্যু নিশ্চিত হয় তাহলে।

— কারো নিজের ক্ষতি নিজে করার ইতিহাস থাকলে। যেমন—কেউ যদি নিজেকে নিজে আহত করে।

— জটিল দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষ।

— বিষণ্ণতা, বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার ইত্যাদি মানসিক রোগে আক্রান্ত হলে, বিশেষত আশাহীন হয়ে পড়লে।

আত্মহত্যার বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ

— বিবাহ, সন্তান ও ভালোবাসাপূর্ণ পারিবারিক সম্পর্ক।

— জোরদার সামাজিক সম্পর্ক।

— আত্মনিয়ন্ত্রণ ভালো থাকা।

— পরিবারের প্রতি ভালোবাসা ও তাদের সম্মানহানির কারণ বা ক্ষতির কারণ হওয়ার ভয়।

— ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মচর্চা।

— পেশায় নিয়োজিত থাকা।

— ইতিবাচক চিন্তা করা।

করণীয়

— আত্মহত্যার চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারি সেবা নিশ্চিত করুন। ডাক্তার যেভাবে ব্যবস্থাপত্র দেন, সেভাবে অনুসরণ করুন; প্রেসক্রিপশন নিরাপদে সংরক্ষণ করুন এবং রোগী ওষুধ খাচ্ছে ও নিয়ম মানছে, তা নিশ্চিত করুন।

— আত্মহত্যার চেষ্টাকারীর দিকে চব্বিশ ঘণ্টা নজরদারি বজায় রাখুন। একা ঘরে ঘুমাতে দেবেন না। রুম এমনকি টয়লেটের ছিটকিনি ও তালা অকেজো করুন, যাতে ভেতরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতে না পারে। তার সঙ্গে যারা বসবাস করছে, তারা যাতে তার আত্মহত্যাপ্রবণতার কথা জানেন ও সাবধান থাকতে পারেন, তা নিশ্চিত হোন।

— শরীর কিছুটা ঠিক হলে তাকে মানসিক রোগের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। প্রয়োজনে মানসিক হাসপাতালে মাসখানেক ভর্তি করে রাখুন। ভর্তি রাখতে অস্বস্তি বোধ করবেন না। আপনি জীবন রক্ষার চেষ্টা করছেন। মানসিক হাসপাতাল বলে লজ্জিত বা দুঃখিত হবেন না।

— তাঁকে মানসিক সমর্থন দিন। তাঁর সমস্যাগুলো জেনে নিয়ে যতটুকু পারা যায়, সমাধান করে দেওয়ার চেষ্টা করুন। সমাধানযোগ্য না হলে তাঁকে জানান যে এই বিপদের দিনে তাঁর সঙ্গে আপনি আছেন। তাঁর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন। ভুলেও আত্মহত্যার চেষ্টা নিয়ে কটাক্ষ করবেন না। উসকানিমূলক কিছু বলবেন না। তার দুঃখের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। কোনো উপদেশ দেবেন না। শুধু শুনে যান।

— কিছুটা কথা বলার মতো অবস্থা হলে তাঁকে সাইকোথেরাপি দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। সাইকোথেরাপি হলো এক ধরনের কথার চিকিৎসা। নানা ধরনের সাইকোথেরাপি প্রচলিত আছে। কগনিটিভ বিহেভিয়র থেরাপি (সিবিটি) এবং ডায়ালেকটিক্যাল বিহেভিয়র থেরাপি (ডিবিটি) আত্মহত্যার প্রতিরোধে বিশেষ ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে। যদি পারিবারিক সমস্যা আত্মহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে সিস্টেমিক ফ্যামিলি থেরাপি বলে এক ধরনের ফ্যামিলি থেরাপি আজকাল সফলভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। এদের চিকিৎসায় দলীয় থেরাপি বা গ্রুপ থেরাপিও সাফল্যের সঙ্গে প্রয়োগ করা হচ্ছে। কেউ যদি আত্মহত্যার চেষ্টা নাও করে, যদি তাঁকে আত্মহত্যার ঝুঁকিতে আছে এমন মনে করেন, তবে তাঁকে সাইকোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করান। প্রয়োজনে মানসিক ডাক্তারও দেখান। সরকারি মেডিকেল কলেজের মানসিক বিভাগে, পাবনা মানসিক হাসপাতাল, ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের মনোরোগবিদ্যা বিভাগে এই সেবা পাওয়া যায়। দ্রুত চিকিৎসা দিন। জীবন শেষ হয়ে গেলে আর ফেরত আসবে না।

— যদি কেউ আত্মহত্যার চেষ্টা করেই ফেলে, তবে একটুও দেরি না করে তাঁকে উদ্ধার করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বা নিকটস্থ যেকোনো হাসপাতালে নিয়ে যান এবং চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করুন।

— যদি বিষপান করে থাকে বা ঘুমের ওষুধ খায়, তবে ডাক্তারের কাছে নেওয়ার আগে বমি করাতে চেষ্টা করুন। সে যাতে ঘুমাতে না পারে, সেই চেষ্টাও করুন। কালবিলম্ব না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। ফাঁসি নিলে কৃত্রিম পদ্ধতিতে শ্বাস ফেরানোর চেষ্টা করতে পারেন। মুখে মুখ লাগিয়ে ফু দিয়ে শ্বাস চালুর চেষ্টা করতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা, ঘাবড়ে যাবেন না। যদি মাথা কাজ না করে তবে পরিবারের যার মাথা ঠান্ডা, তেমন কারো সঙ্গে কথা বলে দ্রুত পদক্ষেপ নিন। সময়ই জীবন। সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে আত্মহত্যার চেষ্টাকারী বেঁচে যেতে পারে।

— অনেক সময় আত্মহত্যার চেষ্টাকরীদের ঘনিষ্ঠজনদের এত বেশি মানিসক চাপ হয় যে তাদেরও মনসিক সমর্থন দরকার হয়। প্রয়োজনে নিজেরা কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপি নিন।

— আপনার পরিবারের কারো যদি আত্মহত্যার ঝুঁকি থাকে, তবে তাঁকে সমর্থন দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ করবেন। তাঁর যত্ন নেবেন, লক্ষ রাখবেন, মানসিক সমর্থন দেবেন, শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা নিখুঁতভাবে করবেন। এর পরও যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটেই যায়, তবে তা মেনে নেবেন। নিজেকে অপরাধী ভাববেন না। মনে রাখবেন, জীবনের অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এমনকি সবচেয়ে সফল মানুষরাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

আত্মহত্যার চেষ্টাকারীদের করণীয়

— চিকিৎসা নিন। ভালো থাকুন। মানসিক ডাক্তার দেখান। ওষুধ খান। নিয়মিত সাইকোথেরাপি নিন।

— খুব বেশি মরে যেতে ইচ্ছা হলে পরিবারের সদস্যদের, বন্ধুদের বলুন। তাঁদের সমর্থন নিন।

— ধৈর্য ধরুন।

— ইতিবাচক চিন্তা করার চেষ্টা করুন।


(সংগৃহীত)

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ১০:৪৮

কালনী নদী বলেছেন: ভালো লিখেছেন+++ প্রিয়তে নিলাম। শুভেচ্ছা জানবেন ভাই।

০২ রা জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:৪৫

অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:৪২

মহা সমন্বয় বলেছেন: বেশ তথ্যবহুল পোস্ট। আসলে আত্নহত্যা একটি মানসিক ব্যাধি এছাড়া আত্নহত্যার আর কোন কারণ থাকতে পারে না। বিভিন্ন কারণে এ রোগ হতে পারে।

০২ রা জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:৪৬

অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন: আমাদের সবাই কে সচেতন হওয়া উচিত

৩| ১০ ই জুন, ২০১৬ রাত ৯:৩০

শায়মা বলেছেন: মহা সমন্বয় ভাইয়া একেবারেই সঠিক কথাটাই বলেছে। আত্মহত্যা মানষিক বৈকল্য!

০২ রা জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:৪৭

অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন: ধন্যবাদ আপু

৪| ০২ রা জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৩:১৮

রনি শেখ বলেছেন: ++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.