নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে জানতে চাই,ছুটে চলেছি অজানার পথে,এ চলার শেষ নেই ।এক দিন ইকারাসের মত সূর্যের দিকে এগিয়ে যাব,ঝরা পাতার দিন শেষ হবে ,আর আমি নিঃশেষ হয়ে যাব ।

অপু দ্যা গ্রেট

গাহি সাম্যের গান- মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান, নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি, সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।

অপু দ্যা গ্রেট › বিস্তারিত পোস্টঃ

জলেশ্বরী তুমি কত দূর, নাকি ধরা দেবে নাঃ জলেশ্বরী (বুক রিভিউ)

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৩৩









চারদিকে লাশ, লাশের গন্ধ ।

.

বিগত চারদিন ধরে নৌকাতে আমি । আগে নৌকাতে চড়িনি । নৌকাটা আগে ধান পাট কাঠাল বহন করত । আপাতত আমাকে বহন করছে । তবে এই নৌকাতে কোন ইঞ্জিন নেই । ইঞ্জিনের কাজ করছে দুজন মাঝি । লিয়াকত ও বজলু । তবে এই দুজনের মাঝে তেমন কোন মিল নেই । তারা সারাক্ষন ঝগড়া করতেই ব্যস্ত থাকে ।

তবে আমার জীবন এত সহজ ছিল না । বিগত চার দিন অনেক রোমাঞ্চকর ও এডভেঞ্চার মনে হয়েছে । তাতে অবশ্য নৌকার মাঝিদের অবদান বেশি । কিন্তু এই আমি আজ যেখানে সেখান ছিলাম না । হঠাৎ করেই বাবা আমাকে লসএঞ্জেলেস পাঠিয়ে দেয় পড়াশুনা করার জন্য । যদিও আমি জানতাম না আমি কি করব । কারন আমি কে এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা ছিল না ।

দেশ থেকে খবর এলো বাবা মারা গিয়েছে । ছাদ থেকে মাথা ঘুরে পরে গিয়েছেন । দেশে এসেও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল আমার বাবা মারা গিয়েছেন । যদিও তার সাথে আমার তেমন কোন সম্পর্ক বা সেই ভাবে কথা বার্তা হতো না । তবে শেষ পর্যন্ত তিনি আমাকে যেটা বলে গিয়েছেন সেটা হলো, “জলেশ্বরী যেতে হবে, খুজে বের করতে হবে ইব্রাহীম গাজী নামে একজন লোককে” ।

“আর, পারছি না । জলেশ্বরী গ্রামের ইব্রাহিম গাজী আমাকে ঘুমাতে দেয় না । মাঝে মাঝে মনে হয় লাফিয়ে পড়ি ছাদ থেকে” ।

দীর্ঘ নয় বছর পর ফিরে ঠিক এই সংবাদটাই আমাকে ভাবিয়ে তোলে । তাই আমি চলেছি জলেশ্বরীর খোজে । জানি না আদৌ পাবো কিনা । তবে খুজে বের করতেই হবে । ইব্রাহিম গাজী বেচে আছেন কিনা তাও জানি না । শুধু জানি তাকে খুজে বের করতে হবে । কিন্তু আমি কে, সেটাই তো আমার কাছে অজানা ।

যেহেতু পুরো দেশ বন্যা আক্রান্ত । তাই নৌকাই ভরসা । এরই মাঝে একজন কে পাওয়া যায় । কিন্তু সেই আসল ইব্রাহিম গাজী কিনা । সেটাও ভেবে দেখতে হবে । ইব্রাহিম গাজী কি আদৌ কেউ আছে? নাকি সব কিছুই একটা ভ্রম । মরিচিকার পেছনে ছুটে চলা । সত্যি কি তাকে পাওয়া যাবে ।

কাজল, তার নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় এই লোকটির খোজে । অথচ তার মাঝি দুজন তাকেই অজ্ঞান অবস্থায় চড়ে ফেলে পালায় । জ্বরে অজ্ঞান কাজল কে খুজে পায় একটি তরুনী । সেও তার মত আটকা পরে আছে এই চড়ে । কাজলের অবস্থা করুন । তাই দেখে মেয়েটির মমতা জেগে ওঠে । পরম মমতায় কাজলে কাছে টেনে নেয় ।

কাজল কি খুজে পাবে ইব্রাহিম গাজী কে? এই রহস্যময় তরুনীটি কে? কি তার পরিচয়? নাকি কাজল খুজে ফিরছে নিজেকে?

“জলেশ্বরী” বইটি ওবায়েদ হকের অন্যতম একটি অসাধারন বই । পাঠ প্রতিক্রিয়ার শুরুতেই বলতে হচ্ছে তার লেখনি নিয়ে । তার লেখনি সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই । আমার মতে এই সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় খুড়ধার তার লেখনির মধ্যে খুজে পাওয়া যাবে । পাঠক মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে প্রতিটি পৃষ্ঠায় বুদ হয়ে থাকে । পাতার পর পাতা মুগ্ধতায় ভরা । যেন অদৃশ্য কোন এক মায়াতে আপনি জড়িয়ে যাবেন ।

এবার আসি গল্প প্রসঙ্গে, গল্পটি পড়ার পর মনে হবে অসাধারন । কিন্তু নিজে খুজে পাওয়ার চেষ্ঠা এবং তার সাথে জড়িত সকল কিছুর বর্ননা যেন আপনার সামনে জীবন্ত মনে হবে । মনে হবে লেখকের বর্ননাশৈলী এবং কল্পনা অনেক বেশি গভীর । তার জীবনবোধ আপনাকে মুগ্ধ করবে ।

বইটিতে এক বেদে জীবনের বর্ননা উঠে এসেছে । তাদের জীবন জীবিকা এবং তাদের ভিতর যে যে একাত্ত্ববোধ সেটা দারুন ভাবে ফুটে উঠেছে ।

বইয়ের যে বিষয়টি খারাপ লেগেছে তা হলো কয়েকটি ঘটনা হঠাৎ করেই ঘটে গিয়েছে । রাস্তায় চলতে গিয়ে দেখা হয়েছে এমন মানুষ । খাবারের ব্যবস্থা কিভাবে হয়েছে সেটা বর্ননা সেভাবে উঠে আসেনি । যেহেতু বন্যা তাই সব জায়গাতে খাবার পাওয়া সম্ভব নয় । আবার হঠাৎ করেই সেই তরুনীর দেখা যাকে কাজল পিছনে ফেলে এসেছিল । অনেক গুলো কাকতালীয় ঘটনা এক সাথে ঘটে গিয়েছে । তবে সেটা গল্পের মাধুর্যতা নষ্ট করেনি ।

কাজল কি পারবে ইব্রাহিম গাজীকে খুজে বের করতে?

সর্বোপরি, জলেশ্বরী বইটি আপনাকে গল্পের মাঝে আটকে রাখবে । মনে হবে আপনার সামনেই সব হচ্ছে । আপনি সব কিছু দেখতে পাচ্ছেন । যেন আপনার কথাই বলা হয়েছে ।

বইটি প্রকাশ করেছে, বায়ান্ন (’৫২) প্রকাশ । বইয়ের মান নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ রাখেনি তারা । বাধাই এবং পাতার মান ভাল লেগেছে । প্রচ্ছদ আর একটু ভাল হতে পারত । বই অনুযায়ী প্রচ্ছদ আমার কাছে একটু কম ভাল লেগেছে । এছাড়া বইটি দাম অনুযায়ী একদম ঠিক আছে ।

সবশেষে, বইটি মনে হবে এতো ছোট হলো কেন । যেন শেষ হয়েও হলো না শেষ ।

বইঃ জলেশ্বরী
লেখকঃ ওবায়েদ হক

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:০৯

শায়মা বলেছেন: মনে হচ্ছে দারুন একটা বই!

২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৩০

ওমেরা বলেছেন: বুক রিভিও নাতো, মানুষের মনে বই কেনার কিউরিসিটি জাগাইলেন !!

৩| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি শুধু লোভ দেখান।
আফসোস লাগে।

৪| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:১০

মা.হাসান বলেছেন: অত্যন্ত সুন্দর রিভিউ হয়েছে। বইটি সংগ্রহের চেষ্টা করবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.