নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অবয়ব

তুমি গতানুগতিক হলেই বরং আমি একটু অন্য রকম; অন্যথা একই রকম।

সীমান্ত সন্ন্যাসী

তুমি গতানুগতিক হলেই বরং আমি একটু অন্য রকম; অন্যথা একই রকম।

সীমান্ত সন্ন্যাসী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বোধের অতি মূল্যায়ন কেন করছি ?

১৩ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০০

লেখালেখির হাত আমার কোন কালেই ছিলো না। বোধকরি এখনো হয়নি। তাই ৪ বছর এক মাসেও কোন কিছু লেখা হয়ে উঠেনি ব্লগে। আমার বরাবরই মনে হয়েছে- যদি কোন কিছু কিংবা নতুন কোন তথ্য কাউকে জানানোর না থাকে তবে পুরোনো কথা নতুন করে বলার কি মানে আছে। অভিব্যক্তি এমন কিছু হওয়া উচিত যা আগে কখনো ব্যক্ত করা হয়নি। এ কারনে পড়তেই আমার অনেক বেশী ভালো লাগে, লিখতে নয়।

কিন্তু এখন কেন লিখছি ?

মূল্যবোধ এমন একটি বিষয় যা মানুষকে মূল্যায়ন করতে শেখায়। তাই যারা মূল্যায়ন করতে জানে না কিংবা যাদের মধ্যে বোধের অভাব রয়েছে তাদের কাছে এটা আশাও করা বোকামি। আর আমাদের এই বোকামির সুযোগ নিয়েই যারা বোধহীন কিছু মানুষকে অতিমূল্যায়নের যে মন্ত্র শিখিয়ে দিচ্ছে, প্রকারান্তে আমরাই তাদের সেই বিশ্বাসের গাছে পানি ঢেলে যাচ্ছি। গাছ ফল দিচ্ছে। ফল বীজ দিচ্ছে। নতুন নতুন অতিমূল্যায়নে বনভূমি বাড়ছে।

ইতিহাস ঘাঁটলে হাজার বছরের যে সভ্যতা আমাদের বর্তমান অর্জন কে ম্লান করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট তা হল আমাদেই এই বর্তমান শেকড়হীন মূল্যবোধের অতিমূল্যায়ন। যা আমাদের লালন করার কথা ছিলো। কিন্তু এর পরিবর্তে আজ সেটাকে আমরা পালন করছি। কিন্তু সেটা কোন অর্জনের ভিত্তিতে নয়, বিশ্বাসের ভিত্তিতে। আর এই বিশ্বাসের ভিত্তি এখন এতই মজবুত যে মাঝে মাঝে এটাকেই আঁকড়ে ধরতে হয় অর্জন কে বর্জন ও বিসর্জন দিতে।

১৭৫৭ থেকে ৪৭, ৫২, ৬৯ আর ৭১ এর মধ্যে দিয়ে বাঙালি জাতি হিসেবে আমরা যে মূল্যবোধ অর্জন করেছিলাম, ২০১৫ তে এসে আজ তাঁকে আমরা কিভাবে মূল্যায়ন করছি ? জাতি কিংবা বাংলাদেশি হিসেবে আজ আমাদের আত্মবিশ্বাস অথবা ধর্মবিশ্বাস যাই বলিনা কেন, অর্জিত সেই মূল্যবোধগুলোর মধ্যে কোন বোধের পরিপেক্ষিতে সেটাকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে ! কিংবা আদৌ কি আমরা সেটা করছি !

অনেক অনেক কাল আগে যখন আমাদের জ্ঞানের অভাব ছিলো, জানার প্রচণ্ড আগ্রহই আমাদের অজ্ঞতাকে দূর করে বিজ্ঞানের বোধ কে জাগ্রত করেছে। আর যাদের সেই বোধ জাগ্রত হয়নি তাঁরা পুড়িয়ে মেরেছে বিজ্ঞানীদের। অনেক অনেক দিন পর অসংখ্য বিজ্ঞানীদের আত্মত্যাগের পর মানুষ যখন তাদের অর্জিত জ্ঞানকে বিশ্বাসের নিরিখে বিচার না করে ব্যবহারিক সুফলের উপায়ে খোঁজে পেয়েছে, তখনই মানুষ তাদের কে মূল্যায়ন করতে শিখেছে। সভ্যতার শুরুটাও তখন থেকেই। কিন্তু মানুষ তখনও সভ্য হতে শিখেনি।

বিজ্ঞান সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সভ্যতা সৃষ্টি কে মূল্যায়ন করে। আর সৃষ্টি সভ্যতাকে প্রতিষ্ঠিত করে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠিত সভ্যতার সকল সুফল যখন কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে, তখন তা সিংহভাগ মানুষের মানবিকতাকে কোন তোয়াক্কাই করে না। সভ্যতার শুরুতে মানুষ যখন এই সুযোগটি নিতে শিখে গেছে, তখন এটাই বিচক্ষণতা যে- শক্তিমানরাই বেঁচে থাকবে আর দুর্বলের বিনাশ ঘটবে।

স্বার্থ ও সম্পদ যখন মানবিকতাকে কে ভূলুণ্ঠিত করে চলছে তখন বিজ্ঞানীদের মতো এবারো কিছু মানুষ এগিয়ে আসে তাদের বোধের নতুন একটি মাত্রাকে প্রতিষ্ঠা করতে। আর এটা হল মানুষের নৈতিকতা বোধ। যা মানুষের মধ্যে নীতির প্রতিষ্ঠা ঘটায় এমন কিছুর ভিত্তিতে যা শক্তি ও সামর্থ্যের কথা বিবেচনায় না নিয়ে মানবিকতা কে তুলে ধরে শুধু মাত্র বিশ্বাসের ভিত্তিতে। বোধের এই বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত করে স্রোষ্টার।

যদিও খুব সহজ ছিলো না, তবু যারা বোধের এই ধারণা কে ধর্ম বিশ্বাস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে সৃষ্টিকর্তা কে সামনে রেখে, তাদের সবার উদ্দেশ্য প্রায় একই ছিলো- মানবিকতা কে প্রতিষ্ঠা করা। করেছেনও তাই এবং সফলও হয়েছেন। সে কারনে এটি সম্বব হয়েছে তা হল সহনশীলতা। পৃথিবীর সকল ধর্মই মানুষের এই বোধ তার বিশ্বাস কে জাগ্রত করেছে বলেই যুগে যুগে মানুষ ধর্মের পথে এসেছে। অবস্থান বেদে জাতি ও ধর্ম ভিন্ন হলেও তাদের বিশ্বাস ও বোধের স্থান ছিলো অভিন্ন। আর তাই আজও প্রকৃত ধার্মিকরা বোধের এই চর্চাটি অব্যাহত রেখেছে।

পৃথিবীর মানুষেরা শক্তির ভিত্তিতে সভ্যতা গড়েছে। যখনি অনাচার হয়েছে, ধর্ম তাঁকে পথ দেখিয়েছে। কিন্তু যখন ধার্মিকেরা লেবাসে জড়িয়েছে তখন মানুষের প্রকৃত শিক্ষাই মানুষকে পথ দেখিয়েছে। যদিও এই পথ সহজ ছিলো না, তবুও মানুষ সফল হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে যদি বলি তবে দেখা যাবে, ব্রিটিশরা আমাদের শক্তি দিয়ে শাসন করেছে। কিন্তু আমরা শোষিত হয়েছি। আর সেকারণেই শোষিতদের প্রায় ২০০ বছর লেগেছে সঠিক একটি শাসন ব্যবস্থা পেতে। কিন্তু নতুন এই ব্যবস্থায় আমারা দৃশ্যমান চকিদারের লাঠির ভয়ে অদৃশ্য ঈশ্বরকেই বেশী প্রাধান্য দিয়েছি সেই শোষণের ভয়েই। তাই নতুন এই শাসন ব্যবস্থায় ধর্মকেই প্রাধান্য দিয়েছি মানবিক বিবেচনায়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। অনেক দেরিতে হলেও অবশেষে আমরা টের পেয়েছি যে মানবিক মূল্যবোধের বিবেচনায় আমরা ধর্মকে প্রাধান্য দিয়েছি আসলে সেটা ছিলো লেবাসধারীদের আদর্শ। সঠিক ধর্ম নয়। ফলে এর চরম মূল্যও দিয়ে হয়েছে আমাদের ১৯৭১ এ। ৩০ লক্ষ্ লোকের জীবন আর ৩ লক্ষ্ মা-বোনের ইজ্জত। যা আমাদের অর্জন করতে শিখিয়েছে স্বাধীনতা। বোধের আরো একটি নতুন মাত্রা; যা সাধারণ মানুষের মধ্যে শোষণের লাঠি ও ধর্মের লেবাস নিংড়ে নতুন একটি মূল্যবোধের জন্ম দিয়েছিলো। যা পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রের কাছে এখনো এক সোনার হরিন। কিন্তু আমরা সেই হরিণটিকে অর্জন করেছিলাম।

কিন্তু পৃথিবীর বয়স যতই বাড়ছে, সভ্যতা মানুষ কে চরমভাবে অসভ্য করে তুলছে। পৃথিবী গোল, আর একারণেই বোধহয় সবকিছু ঘোরেফিরে আসে। আজ স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর আমরা আমাদের অর্জিত মূল্যবোধ কে ভুলে গিলে খেয়ে ফেলেছি।

জানি আমার মতের সাথে কারো মতামত মিলবে না, কিন্তু কেউ কি আমাকে দেখাতে পারবেন- স্বাধীন এই বাংলাদেশের কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা আমাদের অর্জিত মূল্যবোধ কে চর্চা কিংবা লালন করা হচ্ছে ! কম পয়সার টেলিটক ছেড়ে যখন পর্যাপ্ত নেটওয়ার্ক এর অভাবে যেখানে আমরা বেণিয়াদের থ্রীজি সুবিধা গ্রহণ করছি বেশী দামে, সেখানে স্বাধীনতার কোন বোধ আমাদের কে প্ররোচিত করছে সেটা আমার জানা নেই। চাকরী, ব্যবসা, বাণিজ্য এসবের কথা না হয় বাদই দিলাম।

মানুষের যে মৌলিক কতগুলো অধিকার থাকে তার মধ্যে বাঁক স্বাধীনতাও একটি। কিন্তু অন্য সব কিছুর মতো আমরা এটাকেও বিসর্জন দিয়েছি এবং এখনো দিয়ে যাচ্ছি। এমনকি আমার যে ব্যক্তি স্বাধীনতা আছে- যাকে বলা হয় বিশ্বাস, সেটাও এখন আর আমাদের কোন অর্জিত বোধের বিবেচনায় মূল্যায়িত হচ্ছে না। কিন্তু যাদের পেশী শক্তি আছে তাদের সেই বিশ্বাসকে ঠিকই মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এমনকি সেই বিশ্বাস যাতে অন্যকে ধারণ করতে বাধ্য করা যায় সেটার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে তাদের সেই বোধ কে অতিমূল্যায়ন করে। এতে যদি আমাদের সকল অর্জন বিসর্জনও দিতে হয় তবুও কেউ পিছ পা হতে কুণ্ঠাবোধ করছে না। আমার তো বোধগম্য হচ্ছে না, কেউ কি বলবেন যে আমাদের অর্জিত কোন মূল্যবোধের বিবেচনায় এই কাজ গুলো করা হচ্ছে !

আমার বিশ্বাস যদি কাউকে অবিশ্বাসী করে তুলে তবে আমি কেন আমার সেই ঠুনকো বিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে। যদি থাকতেই হয় তবে হয় আমার বিশ্বাসকে আরো মজবুত করতে হবে না হলে বিসর্জন দিতে হবে। কিন্তু এর কোনটাই যদি আমি না করে অন্যের গলা কেটে আমি আমার ঠুনকো বিশ্বাসকে মজবুত করতে চাই এবং আমার রাষ্ট্র যদি আমাকে এই কাজ করতে পরোক্ষভাবে সাহায্য করে, তবু আমি জানতে চাই- আমাদের অর্জিত কোন মূল্যবোধের বিবেচনায় আমি ও আমার রাষ্ট্র এই ঠুনকো বোধকে অতি মূল্যায়ন করার চেষ্টা করছি ?

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৯

প্রামানিক বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট

২| ১৪ ই মে, ২০১৫ সকাল ৯:১২

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: খুব চমৎকার একটা লেখা!

৩| ১৪ ই মে, ২০১৫ সকাল ৯:২১

মনিরা সুলতানা বলেছেন: হুম ভাবনার অনেক কিছুই আছে লেখায়।

৪| ২০ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৭

রেজা সিদ্দিক বলেছেন: নতুন করে ভাবনার খোরাক। লিখে যান।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.