![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আত্মকথন (১ম পরিচ্ছেদ)
-পাগলা জাঈদ
কুঁ ঝিঁক ঝিঁক শব্দে চলতে থাকা ঢাকা গামী ট্রেন টা যখন অল্প পাশ দিয়ে চলে গেল, অমল তখন ও শৈশবে নিমগ্ন। আহা শৈশব, বড় বড় কড়াই গাছ, বুড়িগংগা নদীর পাড় ঘেষা এলাকা, সবুজ যেন সর্বত্র তার পশড়া সাজিয়ে বসে আছে। ওখানে অমলের নানী বাড়ি। ওই এলাকাতেই ছোট্ট একটা ঘর ভাড়া
করে থাকত অমল রা। সে, তার ছট বোন আর মা, বাবা মাঝে মধ্যেই আসতেন। যেদিন বাবা আসত সেই দিনটা ঈদের মত আনন্দে কাটত ওদের। হঠাৎ মাথার ওপর ডানা ঝাপটানোর আওয়াজে ধ্যান ছুটল অমলের, মাথার এক হাত ওপরে ইয়া বড় এক বাঁদুড়। গায়ে কাঁটা দেবার মত অবস্থা, কিন্তু অমলকে ভয় দেখাবার সাধ্য যে ওই বাঁদুড়ের নেই, তা বোধ হয় বাঁদুরটা যানেনা। অমল একটা হাত লম্বা করে দিল, আর সম্ভবত ভয় পেয়ে বাঁদুড় বাবাজি তার ওড়ার গতি বাড়িয়ে দিলেন। অমল মহা বিরক্ত, ভাবছিল আজ ঢাকা যাওয়া দরকার, সে স্টেশন অভিমুখে এগিয়ে চলল, তার জানা নেই, আজ রাতের শেষ ট্রেনটা খানিক আগেই তার সামনে দিয়ে চলে গেছে।
কুলাউড়া স্টেশনে পৌছে এক ভদ্রলোকের কাছে ও জানতে চাইল
-ভাই উপবন এক্সপ্রেস কখন আসবে বলতে পারেন ?
ভদ্রলোক সিগারেট এ লম্বা টান দিয়ে উত্তর করলেন
-ওটা তো মশাই এখন শ্রী মঙ্গল পৌছে গেছে।
অমল বোকা বনে গেল যেন, ট্রেনটা তবে আজ একটুও লেট হয়নি! ঘড়ি দেখে তো আর ওবাক, রাত এখন ৩ টে, ঠায় দাড়িয়ে থেকে ভাবল, হোটেল এর দরজা বন্ধ, কোথায় যাবে এখন ?
লোকটাকে বলল,
-ভাই একটা সিগারেট হবে ?
-হুম
সিগারেট টা হাতে নিয়ে আবার বলল
-ভাই লাইটার টা দেবেন ?
-হুম
ভাই আপনি কি এখানকার লোকাল ?
-হুম
এবার অবাক হবার পালা, এর কথায় সিলেট এর আঞলিক টান নেই, কেমন যেন অন্যরকম ব্যাপার। সিলেটের সাথে ওর অনেক দিনের পরিচয়, কিন্তু এমন অন্যমনস্ক লোক এই প্রথম। ভাবল নাম জেনে নেই,
-ভাই আপনার নাম কি ?
-জাবেদ
-কি করেন ?
-কিছুনা
-দেখেন আমি ঢাকা যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ট্রেন চলে গেছে, এখানে কি রাতে দেখার মত কিছু আছে ?
-হুম
-আমাকে দেখাবেন ?
-হুম
এত দারুন জ্বালা, এত দেখি হুম ছারা কথা কয়্না। হঠাৎ ওকে ভরকে দিয়ে জাবেদ বলল,
-আমি রাখাল শাহ'র মাজারে যাব এখন, যাবেন ?
অমল বলল, -হুম
মোটর সাইকেলে বসে ঠান্ডায় অমলের কাঁপ ধরে গেল, জাবেদ ছেলেটা কে ওর ভাল লেগেছে, রাখাল শাহ'র নাম শুনেছে ও, কিন্তু কখন যায়্নি ওদিকে, কুলাউড়া থানাটা দারুন। প্রকৃতি এখানে রানীর ছেয়ে অধিক সুন্দরী, এই একটি থানায় ১৬ টি চা বাগান, কি অপরূপ সুন্দর, সিলেটের সব চেয়ে সুন্দর থানা এটা। ওদের বাইক যখন বড়লেখা পৌছাল, জাবেদ তখন বাইক থামিয়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে গেছে।
এ এমন একটা কাজ যে, একজন কে দেখলে আরেক জনের বেগ চেপে যায়, অদুরে গিয়ে অমল ও দাড়িয়ে গেল। জাবেদ নিজে একটি সিগারেট জ্বেলে আরেকটি অমল কে দিল, সাথে বাইকের চাবি। অমল চাবিটা হাতে নিয়ে বলল,
-ভাই আমি এ শীতে বাইক চালাতে পারব না
-না পারলে ২ জন এক সাথে মরে যাব
-বলেন কি !
-হুম, আমি আর চালাতে পারছি না, আমি একা হলে চালাতাম, মরলেও ভয় ছিলনা, কিন্তু আপনাকে সাথে নিয়ে মরে আমি দোষ ঘাড়ে নিতে চাইনা, মরতে হয় নিজে চালিয়ে মরুন, আমি পেছনে থাকব।
-আরে বাহ্ִ আমার বুঝি দোষ হবে না ?
-হুম
-তবে আমি কেন চালাব ?
-কারন আপনাকে মাজার দেখতে হবে, আমি ওটা বহুবার দেখেছি।
অমল আর কথা না বাড়িয়ে বাইক স্টার্ট দিল, পেছন থেকে জাবেদ বলে দিতে লাগলো কোন দিকে যেতে হবে। মেইন রোড ছেরে যখন ওরা কাঁচা রাস্তায় নেমে পরল, অমলের হাত তখন সত্যি কাঁপছে। ভয়ে ভয়ে ও জাবেদ কে বলল,
-এবার আপনি চালান
কিন্তু জাবেদের উত্তর টা শুনে ও হতবাক,
-নাহ, আপনি ই চালান, দারুন কাঁপছেন আপনি, বারে বারে মনে হয়, এই বুঝি পরে গেলেন, কিন্তু পরছেন না, এই দোদুল্যতাটা দারুন, মরার সামনে গিয়ে আবার ফিরে আসছি। চালান ভাই, জোরে চালান। তবে খেয়াল রাখবেন, এক্সিডেন্ট হলে যেন মরে যাই, লেংড়া হয়ে বেচে থাকতে পারব না আমি।
এর পর আর কথা থাকে না, চলছে অরা গন্তব্যে, নিথর রাত, রাত জাগা পাখি আর মোটর বাইকের শব্দ কে সংগে নিয়ে।
জানা নেই ওদের অজান্তে আর ও একজন ওদের সাথে চলছে, ওরা তাকে দেখেনি, দেখার সাধ্য নেই যে, সে পরে আছে সাদা গেড়ুয়া, লম্বা দাড়ি উঁড়ছে বাতাসে, মিটিমিটি হাসছে সে, তার হাসিটা অবিকল অমলের মত দেখতে।
(চলবে)
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৪৫
পাগলা জাঈদ বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:২৫
htusar বলেছেন: শুভ ব্লগিং
৩| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:২৬
পাগলা জাঈদ বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২৭
শফিউল বশর যুবরাজ বলেছেন: ব্লগের জগতে স্বাগতম