![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
'আত্মকথন' (৩য় পরিচ্ছেদ)
আজ অমলদের সাথে কিন্তু ওদের ভাগ্যটাও অনেক প্রসন্য, তা না হলে অনেক আগেই বাইক খাঁদে পরতে পারত। অমল আগে কখন কাঁচা রাস্তায় বাইক চালায়নি। আর রাস্তাটাও বুঝি আজ ফুরোবে না বলে পণ করেছে। পেছন থেকে জাবেদ বলল,
-অমলদা আসেন একটা সিগারেট খাই।
অতি উত্তম প্রস্তাব, অমলের ও তাই ইচ্ছে ছিল। বাইক থেকে নেমে অবাক হয়ে দেখল, জাবেদের হাতে একটি শিশি ঝুলছে। ও জানতে চাইল,
-এটা কি ?
-কাশির সিরাপ,
-আপনার ঠান্ডা লেগে আছে আর আমাকে মাজার দেখাবার জন্যে আপনি এই শীতে এত দুর চলছেন ?
-কে বলল আমার ঠান্ডা লেগেছে ?
-তবে সিরাপ কেন ?
-আরে এটা নিচ্ছি একটু নেশা হবার জন্যে, আজ মদ পেলাম না, আর আমাদের মফস্বলে'ত আর ফেন্সিডিল পাওয়া যায় না, তাই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো আর কি।
-তবে আমার ভাগেরটা কই ?
-বারে, আমি কি জ্যোতিস নাকি ? আমি কি করে জানব, আপনি আজ আমার সাথে থাকবেন ? ওকে এখান থেকে ২ জন শেয়ার করে নিব।
এ কথা বলে ও অর্ধেকটা খেয়ে বাকি অর্ধেক অমলের দিকে এগিয়ে দিল।
অভ্যাস বসত অমল নামটা পরে নিল, এক্স্পেক্টটোরেন্ট গ্রুপ, কফ নিঃস্বারক, ভাল নেশা হয় খেলে। ঢক ঢক করে গিলে নিয়ে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে ও বলল,
-জাবেদ ভাই আপনি কি কাজ করেন ?
-আযব তো, দু ঢোক গিলেই সব ভুলে গেলেন ? স্টেশনে বলেছিলাম আমি কিছু করিনা,অবশ্য বড় ভাইর ব্যাবসা আছে, মাঝে মাঝে বসি দোকানে, আর ঘুড়ে ফিরে খাই। সুখী মানুষ আমি।
আপনি কি করেন ? আপনার ব্যাপারে কিছু বলবে
-আপনি উপন্যাস পরেন ?
-হুম
-শরত্চন্দ্র তার বিখ্যাত উপন্যাস শ্রীকান্ত তে বলেছিলেন, 'সৃষ্টিকর্তা মাঝে মাঝে এমন কিছু সৃষ্টি করেন যে, তাদের ভাল আর খারাপের মাঝামাঝি রাখেন, তারা না পারেন ভাল হতে না পারেন খারাপ হতে' আমি সেই টাইপ মানুষ। ঢাকায় বাড়ি, আমি মোবাইল ফোন টেকনিশিয়ান, বাবার সাথে মতের মিল নেই, তাই কামাই, আর ঘুরি, আপনাকে আমার খুব ভাল লেগেছে ভাই। আজকের এ রাতটা আমার খুব মনে থাকবে।
-বাহ্ִ ভাল। জানেন রাখাল শাহ্ִ'র মাজার টা হল বিলের মাঝে, এটা হাকালুকি হাওরের একটা অংশ, বর্ষা এলে পুর হাওড় পানিতে ডুবে যায়, কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানেন ? রাখাল বাবার মাজার টা বিলের মাঝে থেকেও ডুবে না, এটা পানির ওপরে থাকে, বাকি সব পানির নিচে।
-এতে অবাক হবার কি আছে ? হয়্ত তার মাজার উঁচু জমিতে আছে, তাই,
- আরে নাহ, আপনি গেলেই দেখতে পাবেন, তার মাজার আর বাকি জমি এক ই উচ্চতায়, কিন্তু সব ডুবে যায়, বাবার মাজার টা ডুবে না, কি কারিশমা তার, আসলে ওলিরা মরে না, তাদের রুহ বা নুর থেকে যায়, এ কারনেই ত আমি আপনাকে ওই মাজারে নিয়ে যাচ্ছি।
-বলেন কি, এটা তাহলে অলৌকিক বটে, আর হাকালুকি হাওড় এত্ত বড়, আমিত জানি ওটা নর্সীংদির কিছু পর থেকে শুরু,
-হুম হাকালুকি হল উপ মহাদেশের সব চেয়ে বড় হাওড়।জানেন এর নাম হাকালুকি কেন ? প্রচলিত আছে বহু আগে হাকা নামের এক রাজা এ হাওড় দিয়ে পালাচ্ছিলেন, তখন তাকে শত্রুরা আক্রমন করে, ওই সময় তিনি তার বিপুল ধন রত্ন এই হাওড়ের কোন একটা অংশে লুকিয়ে ফেলেন, তারপর থেকেই এর নাম হাকালুকি।
-আপনিত অনেক জানেন দেখছি।
-নিজের এলাকা, জানা না থাকলে কি চলে ?
-ওই সপ্মদ এর পরে কি হল ?
-জানিনা, আজ পর্যন্ত ওটা কারো হাতে পরেনি, তাই বলে এটা মিথ্যা ও নয়, কারণ যদি মিথ্যা হত তবে আর কিছু প্রচলিত গল্প থাকত। আপনি বৃহত্তর সিলেটের যেখানেই যাননা কেন, এ গল্পটা শুনতে পাবেন। দুরে কোথাও মনে হল শেয়াল ডেকে উঠল, চলুন র'ওনা দেই।
-হুম।
ওরা যখন উঠবে ঠিক তখন ই পাশের বাঁশঝাড়টা নড়ে উঠল, মনে হল যেন তার মাঝে কয়েক'শ প্রানী এক সাথে নাড়া দিয়ে জেগে উঠল।
অমল ঘাবরে গেলেও জাবেদ কে কিছু বলল না। কেন যেন ওর মনে হল ঝাড়ে ও সাদা কিছু একটা দেখেছে, তবে ওটা চোখের ভুল ও হতে পারে।
জাবেদ ও কিন্তু ওই এক ই জিনিস দেখেছে, আর ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, তার কাছে ও ওটা চোখের ভুল। সে ও ব্যাপারটা এড়িয়ে গেল।
চলছে বাইক, চলছে অপরিচিত দুই বন্ধু, তাদের পাশে চলছে আরেকজন, আর বেশি দুর নয়, ১০ মিনিট পেরোলেই ওরা পৌছে যাবে রাখাল শাহ্ִ'র মাজারে।
©somewhere in net ltd.