![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله رب العالمين ، والصلاة والسلام على خير المرسلين ، أما بعد ؛
ইসলামের অন্যতম মূলনীতি হলো: রাসূল (স.) কে সম্মান ও মহব্বত করা। সকলের চেয়ে রাসূল (স.) কে সর্বাধিক মহব্বত করতে হবে। অন্যথায়, কারো ঈমানই পূর্ণ হবে না। এ মর্মে রাসূল (স.) ইরশাদ করেন:
لا يؤمن أحدكم حتى أكون أحبَّ إليه من ولده ووالده والناس أجمعين
“তোমাদের কেউই ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ আমি তার কাছে তার ছেলে-সন্তান, মাতা-পিতা তথা সব মানুষের চেয়ে সর্বাধিক প্রিয় না হবো” (বুখারী-মুসলিম)।
কিন্তু প্রশ্ন হলো: এর অর্থ কি এই যে, আমাদেরকে অবশ্যই মীলাদুন্নবী বা রাসূল (স.) এর জন্মদিবস পালন করতে হবে?
এ প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে কয়েকটি কথা জানা অত্যাবশ্যকীয়:
ক. আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
{ الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينً}
“আজকে আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম (জীবনব্যবস্থা) পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের উপর আমার নি‘আমাতকে সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকেই একমাত্র দ্বীন/জীবনব্যবস্থা হিসেবে নির্বাচন করলাম” (আল-মাইদাহ: ৩)। অতএব, ইসলামকে পরিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা দেয়ার ঐ দিন যা ইসলামের মধ্যে ছিলো না, আজকেও তা ইসলামের মধ্যে গণ্য করা হবে না।
খ. রাসূল (স.) বলেন,من عمل عملاً ليس عليه أمرنا فهو رد “আমাদের ধর্মে নেই এমন কাজ যদি কেউ করে, তবে তা অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে” (মুসলিম)। অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, “সমস্ত বিদআত/ইসলামের মধ্যে নবতর সংযোজন ই হচ্ছে পথভ্রষ্টতা” (মুসলিমু)। এই হাদীসদ্বয় থেকে প্রমাণিত হয় যে, রাসূল (স.) যা শরীয়ত হিসেবে গণ্য করেন নি, তাই শরীয়তপরিপন্থী। তা কখনোই সুন্দর কাজ হতে পারে না। কারণ, হাদীসে (كل) (সমস্ত) শব্দটি ব্যাপাকার্থবোধক শব্দাবলীর অন্তর্গত।
গ. রাসূল (স.) এর প্রতি ভালোবাসা ও তাঁকে সম্মান প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরামগণই সর্বশ্রেষ্ঠ। এ ব্যাপারে কোন বিবেকবান সন্দেহ পোষণ করতে পারে না। এতদসত্বেও কোন একজন সাহাবী থেকে এ রকম কোন বর্ণনা পাওয়া যায়নি যে, তিনি মীলাদুন্নবী উদযাপন করেছেন। তাহলে কি আমরা সাহাবীদের চেয়েও রাসূল (স.) এর প্রতি অধিক ভালোবাসা পোষণ করছি?
ঘ. মীলাদুন্নবী পালনকারীকে আমরা যদি প্রশ্ন করি, রাসূল (স.) কি তাঁর মীলাদ উদযাপন করেছেন? জবাবে যদি সে বলে: না, তিনি উদযাপন করেন নি। তবে আমরা বলবো: রাসূল (স.) স্বয়ং যে কাজ করেন নি, সে কাজটি আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উপায় তথা ইবাদাত হিসেবে মনে করার দুঃসাহস আপনি কিভাবে/কোথায় পেলেন? অথচ রাসূল (স.) উম্মতকে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সমস্ত বিষয় বলে দিয়েছেন। একটিও বাদ দেন নি।
আর যদি সে বলে, রাসূল (স.) পালন করেছেন। তাহলে আমরা বলবো,
{ هَاتُواْ بُرْهَانَكُمْ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ}
“যদি আপনারা সত্যবাদি হয়ে থাকেন, তাহলে আপনাদেও প্রমাণাদি পেশ করুন” (আল-বাকারাহ:১১১)।
এ পর্যায়ে তাদের কাছে কোন দলীল পাওয়া যাবে না। সুইয়ের ছিদ্র দিয়ে যতদিন উট প্রবেশ করতে পারবে না, ততদিন পর্যন্ত...।
অতএব, মীলাদুন্নবী উদযাপন করা কারো জন্য শরীয়তসিদ্ধ নয়।।
মীলাদুন্নবী উৎসব সম্পর্কে যতটুকু জানা যায় তা হলো, ফাতেমীয়রা প্রথম এর প্রবর্তন ঘটায়। উল্লেখ্য যে, তারা নিজেদেরকে হযরত ফাতিমার (রা) প্রতি আরোপণ করলেও মূলত ফাতিমার সাথে তাদের কোন প্রকার সম্পর্ক নেই। তারা ছিলো সব দাসশ্রেণীর। অনেক নির্ভরযোগ্য ইসলামী পন্ডিত, যেমন ইমাম ইবনু কাসীর তার বিদায়াহ অননিহায়াহ গ্রন্থে এ তথ্যটি উল্লেখ করেছেন।
ইমাম ইবনু কাসীর উক্ত কিতাবে আরো বলেন, রাসূল (স.) এর জন্মের দিন-তারিখ অকাট্যভাবে জানা যায় না। ইমাম কুরতুবী তার তাফসীরের মধ্যে এব্যাপারে আলেমদের কিছু মতানৈক্য তুলে ধরেছেন। এমনকি যদি ধরেও নেয়া হয় যে, রাসূল (স.) ১২ রবিউল আউয়াল মাসে জন্ম নিয়েছিলেন, তাহলে এ কথাও মনে রাখতে হবে যে, তিনি একই দিনে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। অতএব, ঐ দিন শোকার্ত না হয়ে শুধু আন্দন্দিত হওয়া কি যৌক্তিক?
আল্লাহর বাণী:
{ قُلْ بِفَضْلِ اللّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُواْ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ}
“বল, আল্লাহর দয়া ও মেহেরবাণীতে। সুতরাং এরই প্রতি তাদেও সন্তুষ্ট থাকা উচিত। এটিই উত্তম সে সমুদয় থেকে যা সঞ্চয় করছ” (ইউনূস: ৫৮)। এই আয়াত দিয়েও মীলাদুন্নবী উৎসবের পক্ষে প্রমাণ পেশ করা ঠিক নয়। কারণ, শ্রেষ্ঠ যুগের (সাহাবা, তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী) কেহই এই আয়াতরে অনুরূপ ব্যখ্যা করেন নি। তাহলে কি আমরা সাহাবা ও তাবেয়ীদের চেয়েও কুরআন বেশি বুঝি? তাদের যুগে যেহেতু, এ জাতীয় ব্যখা করা হয়নি, তাই এটি ছিলো তাদের ঐকমত্য যে, এই আয়াত দ্বারা ঐ অর্থ উদ্দেশ্য নয়। বরং ইমাম কুরতুবী (স.) সালাফ থেকে বর্ণনা করে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলছেন,
(فضل الله الإسلام ، ورحمته القرآن)
“আল্লাহর অনুগ্রহ হচ্ছে: ইসলাম। তাঁর রহমত হচ্ছে কুরআন”।
ঐ স্বপ্ন দিয়েও এ ক্ষেত্রে প্রমাণ পেশ করা যাবে না। যাতে বলা হয়েছে যে, আবু লাহাব রাসূল (স.) এর জন্ম গ্রহণে খুশী হয়েছিলেন বলে আল্লাহ তার শাস্তি লাঘব করে দিয়েছেন। কারন, এ স্বপ্নটি সনদ দ্বারা প্রমাণিত হয়নি। তাছাড়া, কাফিরকে কোন ভালো কাজের প্রতিদান দেয়া হয় না। কারণ আমল কবুল হওয়ার একটি মূল শর্ত হলো, ঈমান। যা তার নেই। তদুপরি তা যদি এমন আমল যা সাওয়াবের ক্ষেত্র নয়। কারণ, সন্তানাদি হওয়ার আনন্দ একটি স্বভাবগত বিষয়। শুধু এজন্যই মানুষকে কোন সাওয়াব দেয়া হয় না।
وأما صيام النبي صلى الله عليه وسلم يوم الاثنين لأنه يوم وُلد وبُعث فيه فلا يدل على جواز الاحتفال . فالحديث دليل على أننا نصوم هذا اليوم من كل أسبوع شكراً لهذه النعمة ، وليس فيه أننا نحتفل بيوم واحدكل عام ، والعبادات لا قياس فيها .
রাসূল (স.) সোমবার রোজা পালন করতেন। কারণ ঐ দিন তিনি জন্ম গ্রহণ করেছেন। এই হাদীস দিয়েও মীলাদুন্নবীর পক্ষে দলীল দেয়া যায় না। কারন এ হাদীসের দাবী হচ্ছে, আমরা এই নি‘আমাতের শুকরিয়া করার জন্য এই দিন রোজা রাখবো প্রত্যেক সপ্তাহে। কিন্তু এর মধ্যে এমন কোন অর্থ নাই যে, আমরা বছরে একদিন উৎসব পালন করবো। ইবাদাতের মধ্যে কোন কিয়াস চলে না।
মূলকথা, আল্লাহর নবীর (স.) সুন্নাতকে শক্ত করে ধারণ করাই হচ্ছে রাসূল প্রেমের শ্রেষ্ঠ নমুনা। এর মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত কল্যান ও হিদায়াত। অন্যথায়, নতুন কিছু তৈরি করে তাকে বিদআতে হাসানাহ নাম দিয়ে বিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যাবেনা। অতএব, প্রমাণিত হলো, রাসূল প্রেমের নামে মীলাদুন্নবী তথা জলনে জুলুসের এ সব আয়োজন সাওয়াব নয়; বরং গুনাহের আয়োজন ও অনুশীলন ছাড়া আর কিছুই নয়।
হে আল্লাহ আমাদেরকে বিদ‘আত মুক্ত ঈমান ও আমল দাও। আমীন
লেখকঃ
ড. বি. এম. মফিজুর রহমান আল-আযহারী
অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ
সমন্বয়ক, মোরালিটি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এমডিপি)
সাবেক পরিচালক, ইউনিভার্সিটি রিকোয়ারমেন্ট কোর্সেস
আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।
copy post
২| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৩৩
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
মিলাদুন্নবী পালন করা যাবে না, এমন কোন ফতুয়া কোন হাদিসে আছে?
মুহম্মদ (সা এর নামে দরুদ পাঠে সমস্যা কি?
প্রতিদিন ই তো দরুদ পাঠ করা হয় এই বিশেষ দিনে একটু বেশী দরুদ পাঠ নফল নামাজ রোজা রাখাতে সমস্যা কোথায়?
বাংলাদেশ সহ দক্ষিন এশিয়ায় ইসলাম প্রচার-প্রসার হয়েছে পির-দরবেশদের মাধ্যমে। মিলাদুননবী মিলাদ এদেশে বহুলভাবে দির্ঘদিন থেকে সর্বত্র প্রচলিত। এসব এবাদতের অংশ না হলেও দীর্ঘদিন প্রচলিত ধর্মিয় প্রথা।
সৌদি ওহাবী পন্থিরা, মৌদুদিবাদী জামাত ও তাদের মতবাদীরা মিলাদুন্নবী, তবলীগ, এস্তেমা, মিলাদ, ইত্যাদি পছন্দ করে না, পালন করে না। বিটিভিতে এদের দির্ঘ প্রচারনায় এদেশে জনপ্রীয় "খোদা হাফেজ" এখন আল্লাহাফেজ হয়ে গেছে। এরা এদেশের জনপ্রীয় আধ্যাত্তিক দের ও মাজার পছন্দ করে না। শাহাজালাল মাজারে বোমা হামলা এদের অনুসারিরাই করেছিল
তারা এমনকি হজ করাকেও পছন্দ করে না।
এইজন্য জামাতিরা প্রায়ই সৌদি ভ্রমনে গেলেও কখনো হজ করতে দেখা যায় না।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৪৩
আহলান বলেছেন:
মিলাদুন্নবী পালন করা যাবে না, এমন কোন ফতুয়া কোথায় উল্লেখ আছে? মাসিক বেতন ভাতায় ইমামতি করা যাবে এমন হাদিস কোথায় আছে? বরং সহিহ হাদিসে বলা আছে তুমি এমন কাওকে মুয়াজ্জিন নিযুক্ত করবে যে এই কাজের জন্য অর্থ নেবে না, মুয়াজ্জিনের জন্য যদি এই হুকুম হয় তবে দেশের লক্ষ লক্ষ মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিনের বেতন কি হালাল হচ্ছে? বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি করা লেখাপড়া করা কোন সহিহ হাদিস সিদ্ধ?