![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখতে দেখতে ৮টি বছর পেরিয়ে গেল। আর রাত্রিটা পেরোলেই সেই ভয়াবহ দিনটিতে পদার্পন করবে। সেই দিনটির কথা মনে করতে পারছেন কি?
মনে করতে না পারলেও আপনাকে দোষ দেবার মওকা থাকবে না। কারণ গত ৮ টি বছরে যতো ঘটনা ঘটেছে তার মাঝে এই ঘটনাকে ভুলে যাওয়ারই কথা। যেহেতু ইতিহাসবিদরা বলে থাকেন, বাঙালীরা বড়ই ভুলো মনা জাতি। ভুলে গেলেও সমস্যা নেই। স্মরণ করিয়ে দেবার জন্য লিখতে বসেছি। ২৫ ফেব্রয়ারী ২০০৯ সাল। পিলখানার সেই ভয়াবহ বিডিআর বিদ্রোহের দিন। যে বিদ্রোহের আড়ালে খুন হয়েছে বাংলাদেশের ৫৭টি সম্পদ। ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হারানো একটি দেশের জন্য চাট্টিখানি কথা নয়। আমরা দেশে স্বাধীনের পর এতো ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখিন হলাম। কিন্তু ৯ মাস ধরে চলা স্বাধীনতা যুদ্ধেও আমরা এতোগুলো সেনা অফিসারকে হারাইনি। আর মাত্র দুইদিনেই পুরো জাতিকে প্রায় নিঃস্ব হতে হল।
আমি লিখতে বসে হয়তো স্বার্থপরের মত শুধু দেশের কথাই বলে যাচ্ছি। কিন্তু এই ৫৭ জন সেনা অফিসার কারো না কারো ভাই, কারো না কারো পিতা, কারো না কারো সন্তান, কারো না কারো স্বামী। সেই স্বজনহারা মানুষগুলোর মর্মব্যাথা আমাকে স্পর্শ করতে কোনদিনই পারবে না। এটাই বাস্তবতা। শিল্পী হায়দার হোসেনের সেই গানের কলির সাথে সুর মিলিয়ে বলতে হয়, ‘যার চলে যায় সেই বোঝে হায় বিচ্ছেদে কি যন্ত্রনা’। এই বিচ্ছেদের যন্ত্রনা ঠিক তারাই পাচ্ছেন। আর আমরা যন্ত্রনা পাচ্ছি আপন স্বার্থের কথা ভেবে। আমার দেশ সম্পদ হারা হল। আমার দেশ বীর সন্তান হারা হল। আমার দেশ বীর সন্তানদের হারিয়ে আজ প্রায় নিঃস্ব বনে গেল। সেই ৫৭ জন বীর সন্তানের অভাব আমরা পরতে পরতে দেখতে পাই। দেখতে চান কোথায় সেই অভাব?
বাংলাদেশের মাটিতে ভারতবিরোধী কোনও ধরনের তৎপরতা চলতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন। ৪৪তম সীমান্ত সহায়তা সম্মেলনে মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক কে কে শর্মাকে এ বার্তা দিয়েছেন বিজিবির মহাপরিচালক।
সেই বীরদের হারিয়ে জাতি আজ অযোগ্য ব্যক্তিদের হাতে বন্দি হয়ে পড়েছে। সীমান্তে প্রতিদিন বিএসএফ বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যা করছে। বিনিময়ে বিজিবি প্রধান ভারতকে শক্তিশালী করতে এবং বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের এইসব অন্যায় কাজে যেন কেউ বাধা কিংবা প্রতিবাদ করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করবেন।
কিন্তু ঠিক রকম একটি পরিস্থিতিতে তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালক মেজর শাকিল পতাকা বৈঠকে বলেছিলেন, ‘আমার দেশের মানুষকে যদি পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয় তবে তার জবাব আমরাও দিব। সেই জবাব ফাঁকা গুলি দিয়ে নয়। রক্তের বদলে রক্ত দিয়ে আমরা সেই জবাব দিব। আমার দেশের মানুষের সাথে বিএসএফ এর অনৈতিক আচরন আর এক মুহুর্তও বরদাসত করা হবে না।’
সে সে অবস্থায় বিজিবি মহাপরিচালকের মুখে ভারত মাতার জয়গান। অভাবটা বুঝতে পারছেন কি?
রৌমারিতে তৎকালীন বিডিআর বাহিনী বিএসএফ কি রকম নাকানি চুবানি খাইয়েছিল, সেই কথা নিশ্চয়ই আপনাদের স্মরন আছে। বেশ কয়েকবছর আগে সেই সীমান্তে বেড়াতে গিয়েছিলাম। স্থানীয় মানুষদের মুখে শুনলাম, আগে বিডিআরকে দেখলে ভারতের বিএসএফ সৈন্যরা কাপড় নষ্ট করে ফেলতো। আর এখন বিজিপিকে দেখে বিএসএফরা দাঁত কেলিয়ে হাসে। মূল অভাবটা কি এবার বুঝে এসেছে?
বিজিপিকে একটি নামসর্বস্ব বাহিনীতে পরিণত করবার নগ্ন এজেন্ডা ছিল পিলখানার সেই বিডিআর বিদ্রোহ। প্রশ্ন হল, এজেন্ডাটি কার ছিল?
সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আপনাকে আরো কিছু প্রশ্ন জানতে হবে। হ্যাঁ! এই উত্তর জানতে হলে কিছু প্রশ্ন আপনার সামনে রাখতে হবে।
প্রশ্ন নং ১ঃ বিডিআর বিদ্রোহের সংবাদ সবার প্রথম ভারতের এনডিটিভি জানলো কি করে?
প্রশ্ন নং ২ঃ বিডিআর বিদ্রোহের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য ভারত সরকার বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করে রেখেছিল কেন?
প্রশ্ন নং ৩ঃ বিডিআর বিদ্রোহ ব্যর্থ হলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সামরিক অভিযান চালানোর জন্য ভারত সরকার সেনা প্রস্তুত রেখেছিল কেন?
এই তিনটি প্রশ্ন! শুধুমাত্র এই তিনটি প্রশ্নই আপনাকে জানিয়ে দিবে বিডিআর বিদ্রোহের এজেন্ডা কার ছিল।
সেই প্রশ্ন পেরিয়ে এবার আসি তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ এর পুত্র রাকিন আহমেদ এর কিছু প্রশ্নের দিকে। বিডিআর বিদ্রোহের পর এক অনুষ্ঠানে রাকিন আহমেদ কিছু প্রশ্ন রাখেন। সেই প্রশ্নগুলোও একটু মিলিয়ে নিন। তাহলে জানতে পারবেন, এই ৫৭ জন সেনা অফিসারের আসল হত্যাকারী কারা? প্রশ্নগুলো হল’
১) বিদ্রোহের ঘটার পর সেনাবাহিনী যখন উপস্থিত হয় সরকার কেন ঢুকতে বাঁধা দিল ?
২) এটা একটা মিলিটারি সিচুয়েশন। এখানে সেনাবাহিনী ট্যাকল করবে। সেনাবাহিনী না পাঠিয়ে তারা কেন কোন ধরনের নিরাপত্তা ছাড়াই রাজনীতিক নেতাদের পাঠালো? নিরাপত্তা ছাড়া নেতাদের পাঠিয়ে সরকার কীভাবে এতো আত্মবিশ্বাসী ছিল?
৩) হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পরেও আশেপাশের ৩কিলোমিটার জায়গায় কেন সেনাবাহিনীকে সরিয়ে নেয়া হলো এবং জওয়ানদের পালাতে সুযোগ দেয়া হল?
৪) ৫৭ জন অফিসারকে খুন করে শরীরকে বিক্ষত করা হয়েছে, বেয়নেট দিয়ে খোচানো হয়েছে, স্বাধীনতা যুদ্ধেও আমরা এতো অফিসারকে হারাইনি। আমার আরেকটা প্রশ্ন, এই ঘটনার ২-৩ দিন আগে কর্ণেল গুলজারসহ আরো কয়েকজন চৌকস অফিসারকে তাড়াহুড়ো করে কেন র্যাব থেকে বিডিআরে আনা হলো?
এই সকল প্রশ্নই বলে দেয় এই হত্যাকান্ডের পিছনে আসল কলকাঠি কে নেড়েছিল।
আর একটি প্রশ্ন। বাংলাদেশে কত যদুমদু মরলেও সেই দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসাবে ঘোষনা করা হয়। কিন্তু জাতির এই ৫৭ জন বীর সন্তানকে হারিয়েও সরকার এই দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষনা করল না কেন? এই বীরদের প্রতি সরকারের বিমাতাসুলভ আচরনের কারণ কি? তবে কি সরকারই...
নাহ আর বেশি কিছু বলতে চাই না। আর এই দেশটিতে নাকি সত্য কথা বেশি বলতে হয় না। যত কম পারা যায় ঠিক ততোই কম সত্য বলতে হবে। তবেই নাকি কতৃত্বশীলদের আস্থাভাজন হওয়া যাবে। আস্থাভাজন হবার কোন ইচ্ছা না থাকলেও স্বাভাবিক মৃত্যুর তো ইচ্ছা আছে। তাই এই তরুন বয়সে গুমের ঝুঁকি না নিয়ে লিমিটেড সত্য কথা বললাম। হাজার হোক, আমরা নাকি স্বার্থপর জাতি। তাই আমিও সত্য বলার আগে নিজের স্বার্থকেই বেশি প্রাধান্য দিলাম।
©somewhere in net ltd.