নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাখির মতো উড়তে চাই, মুক্ত বাধাহীন।বন বনানীর মাথার উপর অাকাশ সীমাহীন।

গিরি গোহা

ইচ্ছে হলেই চলো ব্লগে

গিরি গোহা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাছে আসার ঐতিহাসিক ঘটনা...

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৪১

ইরানের জাইয়্যান নামক গ্রামে সালমান নামে এক যুবক থাকতো। তাঁর বাবা ছিল ঐ গ্রামের প্রধান। তাঁরা জন্মগত ভাবেই ধনাঢ্য ছিলেন। সালমানরা বংশানুক্রমিকভাবে ‘মাজুস’ (magian) ধর্মের অনুসারী ছিলেন। মাজুসি ধর্ম মূলত আগুনের উপাসনা করতো। সেই ধর্মের রীতিনীতি গুলো কঠোর এবং কষ্টসহিসঞ্চু। কিন্তু তারপরও প্রচন্ড কষ্ট ‍উপক্ষো করে ধর্ম মেনে চলার চেষ্টা করত। আর সেই কষ্ট সহ্য করার বদৌলতে সালমানকে পদন্নতি দিয়ে ‘আগুনের রক্ষক’ উপাধি দেওয়া হয়। এই উপাধি পাওয়ার অর্থহল মন্দিরে আগুন জ্বালানো এবং সেই আগুন যেন নিভে না যায় সেই দেখভাল করার সমস্ত দায়দায়িত্ব সেই উপাধি বহনকারীর উপর ন্যাস্ত থাকতো। মাজুস ধর্মে এই উপাধিটি অন্যতম সম্মানিত উপাধি ছিল।

সালমান ছিল তাঁর বাবার সবচেয়ে আদরের সন্তান। তিনি সালমানকে এতো বেশি ভালোবাসতেন যে, তিনি ছেলেকে ঘরে আটকিয়ে রাখতেন। যেন বাহিরে না যেতে না পারে এবং চোখের আড়াল না হয়। একদিন সালমানের বাবা বাড়ি বাড়ানোর কাজে ভীষন ব্যস্ত ছিলেন। সেকারণে তিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছিলেন না। তখন তিনি আদরের সন্তান সালমানকে বলেন, ‘সালমান! তুমি আজকে আমাদের দোকানের দিকে খেয়াল রাখো। এবং সূর্য ডোবার আগে আগেই দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে আসবে। অন্য কোথাও যাবে না কিন্তু।’

সালমান তাঁর বাবার কথামত দোকানর পথ ধরল। গেল। দোকানে যাবার পথে একটি খৃস্টান গীর্জার সামনে দিয়ে যেতে হয়। সালমান এর আগে সে মাজুস ধর্মের মন্দির ব্যতিত আর কোন ধর্মীয় উপাসনালয় দেখার সুযোগ পায় নি। তাই সে বেশ আগ্রহ ভরে গীর্জাটি অবলোকন করতেছিল। ঠিক ঐ সময় খৃস্টানদের নিয়মিত ধর্ম পালনের জন্য নির্ধারিত সময় ছিল। সালমান কৌতূহলবশত গীর্জার মধ্যে প্রবেশ করল এবং আগ্রহ ভরে খৃস্টানদের কার্যকলাপ অবলোকন করল। গির্জায় উপস্থিত এক খৃস্টানকে সালমান বলল, ‘তোমাদের ধর্মের কেন্দ্র কোথায়?’
লোকটি জবাবে বলল, ‘পবিত্রভূমি আশ-শাম।’
খৃস্টানদের ধর্মীয়নুষ্ঠানে সালমান এতোটাই মনোযোগী ছিল যে, বাবার বলা কোন কাজেই সে করতে পারলো না। এরই মধ্যে সূর্য প্রায় ডুবে গেছে। কিন্তু সালমানের বাড়ি ফেরার কোন নামগন্ধ নেই। এদিকে সালমানের বাবা চিন্তায় অস্থির। যতোই সময় গড়াতে লাগল সালমানের বাবার চিন্তা ততোই বাড়তে লাগল। সবশেষে তিনি সালমানকে খুঁজতে লোক পাঠালেন। শেষমেষ সন্ধ্যার কিছু পরে সালমান নিজেই বাড়ি ফিরল। সালমানের বাবা তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ‘কোথায় ছিলে এত্তোক্ষন?’
সালমান কখনো মিথ্যে বলতো না। সালমান বলল, ‘খৃস্টানদের গীর্জায় ওদের প্রার্থনা দেখছিলাম। খৃস্টানদের ব্যাপারে আরো জানতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল।’
তখন সালমানের বাবা শঙ্কিত হয়ে বলল, ‘দেখ বাবা! তাদের ধর্ম ভালো নয়। তোমার এবং তোমার পূর্বপুরুষের ধর্মই সবচেয়ে উত্তম।’
তখন সালমান প্রতিবাদ জানিয়ে বলল, ‘তাদের ধর্ম আমাদের চেয়ে অনেক উত্তম।’

এসব কথাশুনে সালমানের বাবা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ল। না জানি আমার ছেলে ধর্মান্তরিত হয়ে যায়। এই ভয় থেকেই সালমানকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে তাঁর বাবা।

শেকলে বাঁধাবস্থায় সালমান অতিকষ্টে খৃস্টান গীর্জার ফাদারের কাছে একটি খবর পাঠালো। ‘যদি আপনারা আশ-শাম গামী কোন কাফেলার সন্ধান পান, তবে আমাকে জানাবেন।’
বেশ কিছুদিন পর সালমানের কাছে একটি বার্তা এলো। ‘আশ-শাম গামী একটি কাফেলার সন্ধান পাওয়া গেছে তুমি যেতে চাইলে চলে আসতে পারো।’
এরপর সালমান সুকৌশলে নিজেকে মুক্ত করে বাড়িতে পালিয়ে গেল তারপর সেই কাফেলার সঙ্গি হয়ে পবিত্র ভূমি আশ-শামে পৌছে গেল।

ধর্মের ব্যাপারে সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তির কাছ থেকেই সালমান ধর্ম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিল। তাই নিজের আগ্রহ বশত সিরিয়ার সবচেয়ে প্রাচীর গীর্জার ফাদারের শিষ্য হয়ে বসবাস শুরু করেন সালমান। সেই ফাদার ছিল খুবই বয়স্ক। ধীরে ধীরে সেই ফাদারের কাছে সালমান খৃস্টান ধর্ম শিক্ষাগ্রহণ করছিল। বয়স হয়ে যাবার কারণে একদিন সেই ফাদার মারা গেল। সে মারা যাওয়ায় শহরের সব মানুষ গীর্জায় আসল ফাদারকে শ্রদ্ধা জানাতে। লোকজন বলাবলি করতেছিল, ফাদার খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। ফাদারের সহযোগী হিসেবে লোকজন সালমানকে কিছু বলতে অনুরোধ জানায়। তখন সালমান বলে, “আপনারা যাকে ভালো মানুষ বলছেন, তিনি আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে খারাপ মানুষ”।
লোকজন এই কথা শুনে হৈহৈ করে সালমানকে মারতে এলো। সালমান তাদেরকে অনুরোধ করল, আগে আমার কথা শেষ করতে দিন। তারপর না হয় আমাকে শাস্তি দিবেন। তখন লোকজন শান্ত হল। সালমান সমবেত লোকজনকে বলল, “ফাদার সবাইকে দান করার জন্য উপদেশ দিতো। লোকজন তার হাতে দানের টাকাও তুলে দিতো। কিন্তু ফাদার সেই টাকাগুলো নিজের জন্য ব্যবহার করতেন এবং সঞ্চয় করতেন। বিশ্বাস না হলে চলো আমার সাথে।”

এরপর সালমান ফাদারের বিছানার তল থেকে ৭ টি সোনার মোহরে ভরা পাতিল বের করে। এবার মানুষ বিশ্বাস করে সালমান সত্যি কথাই বলছে। যেসব মানুষ ফাদারকে সম্মান জানাতে এসেছিল এবার তারা ফাদারের লাশে থুঁথু দিতে লাগল। লোকজন এতোটাই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল যে, লোকজন লাশটাতেই আঘাত করতে শুরু করল। একসময় সেই ক্ষত বিক্ষত লাশটিকে ক্রুশবিদ্ধ করে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। রোদে পুড়ে এবং কাক শকুনের আক্রমনে ফাদারের লাশের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যায়।

এরপর অন্য এক ব্যক্তিকে ফাদারের স্থানে স্থলাভিষিক্ত করা হয়। এক সময় এই ফাদারও বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌছে গেল। সালমান ফাদারের শিয়রে গিয়ে বলল, ‘আপনি তো আমার সব ঘটনাই জানেন। কিভাবে আমি সবকিছু পেরিয়ে ধর্মের শিক্ষা নিতে এসেছি। এখন আপনার মৃত্যু সমাগত। আপনি আমাকে কার কাছে রেখে যেতে চান?’
ফাদার বলল, ‘তুমি মসুল অঞ্চলে যাও। সেখানে একজন আছেন যিনি আমার মতোই ইবাদত করেন। তার কাছে গেলে তুমি প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।’
এরপর সালমান মসুলে চলে গেল। কিছুদিন পর এই পাদ্রীও মারা গেল। এবার এই পাদ্রী তাঁকে নিসিবেসে চলে যেতে বলেন। নিসিবেসের প্রধান পাদ্রীর শিষ্য হতে পরামর্শ প্রদান করেন। এরপর সালমান নিসিবেসে এসে ধর্ম শিক্ষা গ্রহণ করতে থাকেন। নিসিবেসের পাদ্রী মারা যাওয়ার প্রাককালে সালমানকে আম্মুরিয়ার ফাদারের কাছে যেতে বললেন। আম্বুরিয়া হচ্ছে বাইজেন্টাইন।

এরপর সালমান আম্মুরিয়ায় এসে বসবাস শুরু করল। এখানে এসে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবসাও শুরু করল। ভেড়া পালন করতো এবং ভেড়া বিক্রি করে প্রচুর ইনকাম করতো। আম্মুরিয়ার পাদ্রীও কিছুদিন পর মৃত্যুর মুখোমুখি হলেন। মৃত্যুর আগমুহুর্তে তিনি সালমানকে বলেন, ‘আমি তোমাকে আর কোন ফাদারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিতে পারছি না। তবে এখন নবী আসার সময় হয়েছে। তিনি এমন একটি স্থানে বসবাস করবেন যা খেঁজুর বেষ্টিত আর চারপাশে থাকবে পাথূরে মরুভূমি। তিনি উপহারের খাবার খাবেন কিন্তু দানের খাবার খাবেন না। তাঁর দুই কাঁধের মাঝখানে নবুয়্যাতের চিন্হ থাকবে।’


এরপর সালমান তার ব্যবসা বিক্রি করে দিয়ে অর্জিত অর্থ নিয়ে একটি ব্যবসায়ী কাফেলার সাথে মদীনায় পাড়ি জমান। সেই ব্যবসায়ী কাফেলার সর্দার ছিল মহাধুরন্দর। মদীনায় পৌছানোর পূর্বে সালমানের সব টাকা পয়সা জোর পূর্বক ছিনতাই করে এবং সালমানকে মদীনার বাজারে দাস হিসাবে বিক্রি করে দেয়। এভাবেই সালমানের দাস জীবনের সূচনা ঘটে।

একদিন সালমান তাঁর মনিবের খেঁজুর বাগানে খেঁজুর পাড়তেছিল। সালমান ছিল গাছের উপরে আর তাঁর মনিব গাছের নিচে খেঁজুর কুড়াচ্ছিল। এমন সময় সেই মনিবের ছোটভাই এসে মনিবকে বলে, ‘শুনেছেন কিছু? মক্কায় নাকি কে একজন নিজেকে নবী বলে দাবি করেছে!’ এ কথা শুনে সালমান সঙ্গে সঙ্গে গাছ থেকে নেমে আসে। সে জিজ্ঞেস করে, ‘কি হয়েছে?’
তখন মনিব রেগে গিয়ে বলে, ‘তোমার শুনে কাজ নেই। যা করতেছিলে তাই করো। যাও’।
কিন্তু সালমান নাছোড়বান্দা। ঠিক আগের মতোই ঠায় দাঁড়িয়েছিল। এইবার মনিব সালমানের নাকে ঠুস করে ঘুষি বসিয়ে দেয়।

পরেরদিন সূর্য উঠবার আগেই সালমান তার ব্যাগের পুটলিটি নিয়ে মক্কার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। একসময় সে মক্কায় পৌঁছেও যায়। বেশ কিছু সময় খোঁজাখুঁজির পর সে নবীর সন্ধান পায়। নবীর সামনে গিয়ে বলে, ‘এই খেঁজুরগুলো আমি আপনার এবং আপনার সাহাবীদেরকে দান করলাম।’
তখন আল্লাহর রাসূল খেঁজুরগুলো সাহাবীদের জন্য বাড়িয়ে দিলেন। কিন্তু তিনি নিজে সেখান থেকে একটি খেঁজুরও নিলেন না।
এরপরের দিন সালমান আবারো রাসূল (সঃ) এর সামনে আসলেন। এবার কিছু খেঁজুর রাসূল (সঃ) এর দিকে বাড়িয়ে বললেন, ‘এই খেঁজুরগুলো আপনি আপনার জন্য উপহারসরূপ এনেছি।’
এইবার আল্লাহর রাসূল সেই উপহারের খেঁজুর মুখে দিলেন।
এবার সালমান মাথা বাড়িয়ে রাসূল (সঃ) এর ঘাড় দেখার চেষ্টা করলেন। সালমানের এই মাথা বাড়ানো দেখে আল্লাহর রাসূল হাসলেন এবং পাগড়ি খুলে প্রশস্ত ঘাড়টাকে উন্মুক্ত করে দিলেন। সালমান এইবার উন্মুক্ত ঘাড়ের দিকে তাঁকিয়েই বুঝতে পারলো ইনিই সেই শেষ নবী। এই সালমানই আল্লাহর রাসূলের প্রিয় সাহাবী হযরত সালমান ফারসী (রাঃ)। এরপর সালমান এক আল্লাহর উপর ঈমান আনল এবং দির্ঘযাত্রার পর আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছাকাছি আসতে পারলো।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:০৩

ওমেরা বলেছেন: খুব সুন্দর ইতিহাস জানলাম অনেক ধন্যবাদ ।

২| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:১৭

ইউনিয়ন বলেছেন: ইতিহাস।

৩| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:৪০

বনসাই বলেছেন: একই লেখা আগেই পড়েছিলাম। রিপোস্ট কি?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.