নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাখির মতো উড়তে চাই, মুক্ত বাধাহীন।বন বনানীর মাথার উপর অাকাশ সীমাহীন।

গিরি গোহা

ইচ্ছে হলেই চলো ব্লগে

গিরি গোহা › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে দিবে ক্ষমতা মোরে, আব্বা বলে ডাকবো তারে!

১৯ শে মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪১



অতিসম্প্রতি আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহবুবুল আলম হানিফ পাশ্ববর্তি রাষ্ট্রের প্রতি নিখাঁত প্রেম প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক রক্তের সম্পর্ক
হানিফ সাহেবের এই বক্তব্যের সাথে আমি ১০০% সহমত প্রকাশ করছি। ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্কের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে হাজারো ফেলানীর তাজা রক্ত। ফেলানীর ঝুলে থাকা সেই কাঁটাতারের বেড়ায় হয়তো এখনো ফেলানীর রক্তের ঝাপ লেগে আছে। সীমান্তের মাটিগুলো সাক্ষি হয়ে আছে শতশত বাংলাদেশী মানুষের উপর ভারতীয় বিএসএফ বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের। এই রক্তগুলো দিয়েও বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক টিকে আছে। আর সেই সম্পর্ক আরো জোরদার করছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিজিপি। প্রায় প্রতিমাসেই বাংলাদেশীদের রক্তের বিনিময়ে ভারতের সাথে সম্পর্কটা জোরদার হচ্ছে। আর বিজিবির সদস্যরা পতাকা বৈঠকে হাসিমুখে লাশ গ্রহণ করছে। এভাবেই ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক একটি যুগান্তকারী মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছে।

রক্তের সম্পর্কের পাশাপাশি আমি পানির সম্পর্কের কথাটিও স্মরন করিয়ে দিতে চাই। স্বাধীনতার পরপরই তো ভারতের সাথে বাংলাদেশের পানি দিয়েই সম্পর্কের সূত্রপাত ঘটে। আমাদের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র ভারত থেকে ৫৪ টি নদী বাংলাদেশের বুক চিরে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। তবে এই ৫৪ টি নদীর সবগুলোই ভারত থেকে জন্মলাভ করেনি। যেমন গঙ্গা নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্য হলেও ব্রক্ষ্মপুত্র নদের জন্ম হয়েছে চীনের তিব্বত অঞ্চলের দক্ষিণ-পশ্চিমে। তিব্বতের সাংপো (Tsangpo) , চীনের ইয়ারাং জাংবো (Yarlang zangbo), অরুনাচলের দিহাং (Dihang) ,আসামের ব্রক্ষ্মপুত্র (Brahmaputra) বাংলাদেশে এসে নাম নিয়েছে যমুনা নদী। এই ৫৪ টি নদীর মধ্যে গঙ্গ,তিস্তা এবং সারি নদীতে বাঁধ নির্মানের কথা আমরা কমবেশি জানি।

কিন্তু আরো একটু পিছনে ফিরে দেখা যাক। ১৯৮৭ সালে তৎকালীন পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সংসদে বলেন "India Hampered the natrural flow of 22 rivers and tributaries flowing from india to Bangladesh by constructing groynes and embankments." (ref: India-Bangladesh relations, Documents 1971-2002)
(ভারত ২২ টি নদী ও উপনদীর উপর গ্রোয়েন বাঁধ নির্মান করে বাংলাদেশের পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে)
এভাবেই ভারতের সাথে পানিময় সম্পর্কটি আরো দির্ঘস্থায়ী হতে থাকে।

তারও আগে গঙ্গানদীর পানি নিয়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কটি একটু তিক্ত পর্যায়ে পৌছে যায়। সেই তিক্ত পর্যায়কে মধুর করতে বাংলাদেশ জাতিসংঘের স্বরনাপন্ন হয়। ১৯৭৭ সালে নভেম্বরে ভারত একরকম বাধ্য হয়েই গঙ্গার পানি নিয়ে ৫ বছর মেয়াদী চুক্তি করে। সেই চুক্তির ২ এবং ৩ ধারায় শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার নূন্যতম পানি প্রবাহের ৮০ শতাংশ প্রাপ্তির বিষয়ে বাংলাদেশকে ওয়াদা প্রদান করে ভারত। কিন্তু এই চুক্তির মেয়াদ উত্তির্ণ হলে ভারত আর চুক্তি নবায়ন করেনি। আর এভাবেই বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ মরুভূমির পর্যায়ে পৌছে যায়। এরপর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ৩০ বছর মেয়াদী চুক্তি করেন তৎকালীন এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ততোদিনে যা ক্ষতি হবার তার ঢের বেশি ক্ষতি হয়ে গেছে। সেই ক্ষতিভার বাংলাদেশকে হয়তো আজীবনই বহন করে যেতে হবে। আর সেই ক্ষতিই মাহবুবুল আলম হানিফদের সাথে ভারতের বন্ধুত্বকে আরো জোরদার করবে।

১৯৮০ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় মন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ নদী কমিশনের সভায় প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, গজলডোবা পয়েন্টে প্রাপ্ত পানির ২৫ শতাংশ পানি তিস্তানদীর বেঁচে থাকার জন্য নূন্যতম রেখে ৩৬ শতাংশ বাংলাদেশ এবং ৩৯ শতাংশ ভারত পাবে। সেই সভায় যৌথ নদী কমিশনকে ৯০ দিনের মধ্যে চুক্তি নবায়ন করতে বলা হলেও সেই ৯০ দিন আজও ফুরায় নি। অতিসম্প্রতি শোনা যাচ্ছে, সেই ৯০ দিন নাকি সমাপ্ত হতে যাচ্ছে। আগামী ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়ে প্রতিরক্ষা চুক্তির বিনিময়ে নাকি এই ৯০ দিনের অবসার ঘটাবেন। অর্থাৎ তিস্তা চুক্তি সম্পাদন করবেন। কিন্তু ঘাড়ত্যাড়া মমতা দি রাজি হয় কিনা সেটাই মুখ্য বিষয়!

বছর কয়েক আগে হানিফদের সাহেবদের বন্ধু ভারত সরকার মাইনথ্রু নদীর উপর ৬৩ মিটার উঁচু বাধ নির্মান করে। সেই বাঁধ থেকে ভারত জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। আন্তজার্তিক আইনের ধোড়াই কেয়ার করে এই বাঁধ নির্মান করে ভারত। ভারত হানিফদের বন্ধু বলে কথা। তাই হানিফসাহেবদের দলের একজন মন্ত্রী বলেন, ভারত তাদের নদীতে বাঁধ নির্মান করবে প্রাসাদ নির্মান করবে সেই বিষয়ে কথা বলার আমরা কে(!) তাদের দেশের নদী তারা যা ইচ্ছা করবে। আমাদের পোড়া কপালই বলতে হয়। বঙ্গবন্ধু বড় আফসোস করে বলেছিলেন, সবাই পায় সোনার খনি আমি পেয়েছি চোরের খনি। এখন দেখি গন্ডমূর্খের খনিও বাংলাদেশের এই মন্ত্রীপরিষদেও ঠাই করে নিয়েছে। একটি আন্তজার্তিক নদীর উপর দেশগুলোর কি অধিকার রয়েছে সেকথাও আমাদের মন্ত্রীরা জানে না। হয় কপাল! মাইনথ্রু নদীর বাঁধ নির্মান বন্ধে সিলেটের মানুষ ‘নদী বাচাঁও আন্দোলন’ করলেও সে আন্দোলন যে কোন কাজে আসেনি তা ৬৩ মিটার বাঁধই জলজ্যান্ত প্রমান হিসেবে দন্ডায়মান রয়েছে। আর টিঁপাইমুখ বাঁধের কথা নাই বা বললাম!

এতোসব নদীর পানি দিয়েও ভারতের সাথে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তিস্তার বুকে জমে ওঠা হাজার হাজার একর চরের সাদা বালুকনা দিয়েও ভারতের সাথে আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। আরো কত কিছু দিয়েই তো ভারতের সাথে আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। কিন্তু বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশ কি পেল সেই কথা হানিফ সাহেবরা আমাদের কেন বলে না?

বন্ধু হিসেবে হানিফ সাহেবরা পেয়েছেন বাংলাদেশের ক্ষমতা। এখন আবার পেতে যাচ্ছেন স্থায়ী ডিটেক্টরশীপ। বিনিময়ে প্রতিরক্ষা চুক্তিও হয়তো সাক্ষর করে গালভরা সফলতার গল্প সাংবাদিক সম্মেলনে ঘটা করেই রাষ্ট্রিয় করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু আমজনতা হিসেবে আমরা ভারতের কাছে কি পেলাম? বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে ভারত বাংলাদেশের জনগনকে কি দিয়েছে?

এই প্রশ্নটি হয়তো কালের সাক্ষি হয়ে থাকবে। কিন্তু মাহবুবুল আলম হানিফদের দৃষ্টিসীমায় পড়বে না। কারণ, ক্ষমতাই শক্তি ক্ষমতাই বল। যে দিবে ক্ষমতা মোরে আব্বা বলে ডাকবো তারে।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:২৯

অতঃপর হৃদয় বলেছেন: হাসি পাইল।

২| ১৯ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:০৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হানিফসাহেবদের দলের একজন মন্ত্রী বলেন, ভারত তাদের নদীতে বাঁধ নির্মান করবে প্রাসাদ নির্মান করবে সেই বিষয়ে কথা বলার আমরা কে(!) তাদের দেশের নদী তারা যা ইচ্ছা করবে। আমাদের পোড়া কপালই বলতে হয়। বঙ্গবন্ধু বড় আফসোস করে বলেছিলেন, সবাই পায় সোনার খনি আমি পেয়েছি চোরের খনি। এখন দেখি গন্ডমূর্খের খনিও বাংলাদেশের এই মন্ত্রীপরিষদেও ঠাই করে নিয়েছে। একটি আন্তজার্তিক নদীর উপর দেশগুলোর কি অধিকার রয়েছে সেকথাও আমাদের মন্ত্রীরা জানে না। হয় কপাল!

কপালের সাথে আছে চেতনার হাই ডোজ এনসথেসিয়া!
একাত্তর ছিল আমজনতার প্রতিরোধ!
বাঁচতে হলে আমজনতাকেই এগিয়ে আসতে হবে!

৩| ২০ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:২১

অগ্নি সারথি বলেছেন: নতজানু পররাষ্ট্রনীতি কোনভাবেই কাম্য নয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.