![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজকাল মেঠো পথ খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন । কিন্তু এই গাঁয়ের এই অংশে প্রবেশের রাস্তাটা এখনও মাটির। এই মাটির রাস্তাটি আর ছোট পিচের রাস্তাটির সঙ্গমস্থলে ছোট্ট চায়ের টং। টঙ্গে বসলে বহুদূর পর্যন্ত চোখ আটকায় না, মনে হয় যেন সবুজ একটা সমুদ্রের পাশে বসে আছি । আর মেঠো পথটাকে মনে হয় সবুজ সমুদ্রের মধ্যে দিয়ে একে বেকে চলে যাওয়া একটা অজগর । সারা রাত বাস যাত্রার পর রিকশা ভ্যান চেপে এই টং আর মেঠো পথের সামনে নামতে নামতে সকাল আঁটটা। মেঠো পথে গন্ত্যবে এগোনের আগে টঙে এককাপ গরম চা নিয়ে বসেছি । হেমন্তের সকালে হালকা কুয়াশা ভেদ করে সূর্যি এখনও সকালের প্রথম চুমু খেতে পারেনি সামনের সবুজ সমুদ্রে । গ্রাম কিন্তু ঠিকই জেগেছে অনেক আগে। নানান পাখিদের কলরব ভেসে আসছে ছারদিক থেকে। কোথাও একটা গরু ডেকে উঠল হাম্বা করে ।
গতকাল বিকেলে বাসে কেনা পত্রিকাটি টঙের বেঞ্চে রেখে চায়ের কাপে একটা চুমুক দিলাম। ছোট্ট হাত ব্যাগটি ও রাখলাম একমাত্র ভাঙ্গা চেয়ারটির উপর । জেগে ওঠা গ্রামের প্রাণ জনা দুয়েক বয়েসি কৃষক তাদের মাঠে সকালের সাধনার প্রথম পাঠ শেষ করে একটু বিশ্রাম আর এক কাপ চায়ে চুমুক দিতে এসেছেন । কুশল বিনিময় আর টুকটাক কথা হচ্ছিল তাদের সাথে । হঠাৎই তাদের একজন ফেলে রাখা বাসি পত্রিকার ছবিটির দিকে নির্দেশ করে জানতে চাইলেন- বাবাজি এইডা কার ছবি, ওনার গায় এইডা কি পরাইয়া দিতাছে ?
মনে মনে একটু হাসলাম । দেখালাম পাশের জনও উত্তর শোনার জন্য আগ্রহী। টং ওয়ালাও এবার ঘাড় উঁচিয়ে ছবিটি দেখার চেষ্টা করলেন ।
চাচাজি এইটা একজন বিখ্যাত লেখক, কবির ছবি। উনাকে সন্মান দেয়া হচ্ছে, আর যেটা পরিয়ে দিচ্ছে এটাকে বলে উত্তরীয়।
বাবাজি উত্তরীয় জিনিসটা কী ? মনে মনে একটু বিরক্ত হলাম, ভাবলাম মূর্খ কৃষক তোমার উত্তরীয় চেনার দরকারটা কি ।
চাচা এটা সন্মান জানানোর একটা পদ্ধতি, দেশ ও জাতির জন্য যারা বড় বড় অবদান রাখেন তাদের এভাবে সন্মান জানানো হয়। উনি একজন কলম যোদ্ধা, উনি কলম দিয়ে লিখে যে অনবদ্ধ সৃষ্টি করেছেন , দেশের মানুষের জন্য যে অবদান রেখেছেন তার জন্য এই সন্মান ।
মনে মনে দুষ্ট আনান্দ বোধ হল। যাক ব্যাটা মূর্খ কৃষককে ব্যপক জ্ঞান দেয়া গেল । কৃষক সামনের সবুজ সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে নির্লিপ্ত কিন্তু দৃঢ় গলায় জানতে চাইলেন – কৃষকও তো লাঙ্গল দিয়া অনেক কষ্ট কইরা ফসল ফলায়, এইটা ও তো অই লেখকের মত একটা সৃষ্টি , আরও বেশী কষ্টের; আর দেশের মানুষের জন্যে এই সৃষ্টি, মানুষেরা আমাগো এই সৃষ্টি খাইয়া বাঁচে। উনার সৃষ্টি তো মনের জন্যে, আর আমাদের সৃষ্টি শরীরের জন্যে। শরীর বাঁচলে না মনের প্রশ্ন। কই আমাগো ছবি তো কোনদিন পত্রিকায় ছাপা হয় না, আমাগের তো কেউ কোনদিন সন্মান জানায় না, অই রকম উত্তরীয় পরায় না । ক্যান ?
একটা বড় ধরনের ধাক্কা খেলাম। কৃষকের কথার জবাব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম না, অবশ্য এটা আমার কাছে তাঁর কোন প্রশ্ন ছিল কি না , নাকি তাদের শ্রমে ঘামে তৈরি সবুজ সমুদ্রের প্রতি অভিমান তাও বুঝতে পারছি না। সকালের প্রথম রোদের চুমু মেঠো পথের ধারের ঘাসের ডগায় শিশিরের গালে লেগে গেল এইমাত্র । সামনের শস্যের সমুদ্রে সকালের সোনা রোদের ঢেউ । আমার দৃষ্টিও কৃষকের মত সামনের সবুজ সমুদ্রে গেল; কৃষকের দৃষ্টিতে সীমাহীন নির্লিপ্ততা আর অভিমান, আমার দৃষ্টিতে তীব্র লজ্জা ।
২| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৩
পরিব্রাজক। বলেছেন: সহমত ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:১৬
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: ভাল লিখেছেন -- আমরা কৃষকদের মূর্খ চাষাই বলি -- অথচ উনাদের শ্রমেই গড়ে উঠেছে সভ্যতা -- আর কৃষকরা না থাকলে ঐ কলম যোদ্ধাদের অস্তিত্ব থাকতো না ----------