![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১.
টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ খুবই মধুর শোনায় কথাটা টুকি শুনেছে, কিন্তু সেই মধুর শব্দ টুকি কখনও নিজের কানে শুনেনি। টিনের চালের ঘরে সে কখনও থাকেনি। তবে এই মুহূর্তে সে ব্যাপারটা কিছুটা হলেও আঁচ করার চেষ্টা করছে।
টুকি এখন একটা ওভারব্রিজের উপর দাড়িয়ে আছে। ওভারব্রিজের ছাদ খোলা না, টিনের শেড দেওয়া আছে, বৃষ্টি হচ্ছে প্রচণ্ড। টিনের শেডে সেই বৃষ্টি পড়ে রিমঝিম শব্দ কিছুটা হচ্ছে। তবে টিনের চালে বৃষ্টি যখন পড়ে তখনও শব্দ টা এরকমই হবে কিনা টুকি বুঝতে পারছে না। অমিত এলে জিজ্ঞেস করতে হবে। অমিতের গ্রামের বাড়িতে টিনের চাল আছে। সেই টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ হলে অমিত ওকে একদিন ফোন দিয়ে শোনাতে চেষ্টা করেছে কিন্তু টুকি শুধু গমগম আওয়াজ ছাড়া কিছুই শুনতে পারেনি। টুকির এটা নিয়ে আফসোস আছে তবে এই আফসোস বেশি দিন থাকবে না।টুকি খুব শিঘ্রি যেকোনো দিন অমিতকে নিয়ে পালিয়ে চলে যাবে অমিতের গ্রামের বাড়িতে।
ওরা অবশ্যই পালিয়ে বিয়ে করবে। চুরি করে বিয়ে করে গ্রামের বাড়িতে পালিয়ে গিয়ে টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শোনার মধ্যে একটা এডভেঞ্চার আছে, কিন্তু অমিতকে ব্যাপারটা ঠিক বুঝানো যাচ্ছে না। তাছাড়া বর্ষাকাল প্রায় শেষ। বর্ষাকাল না হলে তো বৃষ্টির শব্দ শোনা যাবে না। সুতরাং পালাতে হলে পরবর্তী বর্ষার জন্য এক বছরের অপেক্ষা। কিন্তু এক বছর অপেক্ষা করা ঠিক হবে কিনা টুকি বুঝতে পারছে না। এক বছর অনেক দীর্ঘ সময়। এক বছরের মধ্যে যদি অমিত অন্য কাউকে ভালোবেসে ফেলে? ঝুঁকিটা নেওয়া কি উচিত হবে? টুকি বুঝতে পারেনা। ছেলেদের গোপন প্রেম থাকে, অমিতেরও আছে কিনা টুকি জানেনা। মনে হয় আছে,নয়ত ওর ফোন অফ কেন এখন?
অমিত টুকিকে ওভারব্রিজের উপর অপেক্ষা করতে বলেছে। ৩০ মিনিট হয়ে গেল টুকি অপেক্ষা করছে,অমিত এখনও আসেনি। সেটা কোন ব্যাপার না। অমিত হচ্ছে কিছুটা মেয়ে মেয়ে টাইপের । মেয়েদের মতই লেট করে সব সময়। আরও কারন অবশ্য আছে অমিতকে মেয়ে বলার। দুই বছর ধরে প্রেম করছে ওরা তবু অমিত কখনও টুকির হাত ধরতে চায়নি। দুই বছর প্রেম করে হাত না ধরা একটা অপরাধ। এই ধরনের ফৌজদারি অপরাধ শুধু মাত্র মেয়ে মেয়ে টাইপ ছেলেরাই করতে পারে।
অমিত মিনমিন করে অবশ্য একবার চুড়ি পরিয়ে দেবার অজুহাতে ওর হাত ধরতে চেয়েছে, কিন্তু টুকি লজ্জা পেয়ে অমিতকে বকা দিয়েছিল সেদিন। টুকির ঝাড়ি খেয়ে অমিত পিছিয়ে গেছে,আর কখনও বলেনি। চুড়িটা অবশ্য ছোট হয়ে গিয়েছিল । অমিত ওটা পালটে দেবার জন্য নিয়ে গেছে। টুকির সেদিন অনেক রাগ হয়েছিল, চুড়ি ছোট হয়েছিল সে জন্য না, সেদিন অমিত জোর করেনি বলে। আচ্ছা,অমিতের মত মেয়ে মেয়ে টাইপের ছেলেদেরও কি গোপন প্রেম থাকে?
টুকি ওভারব্রিজের রেলিঙের কাছে গিয়ে দাড়ায়। বৃষ্টির ছাট ওকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। বৃষ্টির ভিতর অনেক জন একসাথে ভিজলেও বৃষ্টির ছাট গায়ে লাগিয়ে ভিজতে হয় একা একা,কিন্তু টুকির একা একা ভিজতে ভালো লাগছে না।
২.
অমিত গত পনেরো মিনিট ধরে রিকশার ভিতর বসে আছে। রিক্সা অবশ্য চলছে না,রিক্সা দাড়িয়ে আছে ওভারব্রিজের নিচে। রিক্সাওয়ালা বেজার মুখে দাড়িয়ে আছে। বেচারাকে অমিত ৫০০ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়েছে ভাংতি করার জন্য। রিক্সাওয়ালা বিপাকে পড়েছে। তার কাছে ৫০০টাকা ভাংতি নেই। বৃষ্টির মধ্যে কোথাও থেকে ভাংতি করাও সম্ভব না। সে বেজার মুখে গত পনেরো মিনিট ধরে ঘ্যান ঘ্যান করেছে। কিন্তু অমিত রিক্সাওয়ালার ঘ্যান ঘ্যান শুনেনি। অমিত তাকিয়ে আছে ওভারব্রিজের উপরে।
টুকিকে দেখা যাচ্ছে। টুকি বৃষ্টির পানিতে হাত ভিজিয়ে ভেজা হাত মুখে লাগাচ্ছে। সুন্দর লাগছে মেয়েটিকে। রিক্সাওয়ালা আবার ঘ্যান ঘ্যান শুরু করেছে। অমিত ২৫ টাকার ভাড়া দিতে গিয়ে ৫০০ টাকার নোট ধরিয়ে দিল ক্যান এইটা নিয়ে ঘ্যান ঘ্যান। আস্তে আস্তে রিক্সাওয়ালার গলার স্বর করুণ হয়ে যাচ্ছে। অমিতের কাছে ভাংতি টাকা আছে। কিন্তু সে ইচ্ছা করেই দেরি করাচ্ছে রিক্সাওয়ালাকে। টুকি দেরি করার কারন জিজ্ঞেস করলে অমিত বলবে রিক্সাওয়ালা টাকা ভাংতি করতে পারছিল না। এইটা পুরোপুরি মিথ্যা না, আংশিক সত্য। বৃষ্টির দিনে প্রেমিকার কাছে পুরোপুরি মিথ্যা বলতে নেই।
অমিত রিক্সাওয়ালাকে আবার বলল কোথাও চেষ্টা করে দেখতে। রিক্সাওয়ালা আবার করুণ মুখে চেয়ে রইল। অমিতের দেরি করার কারন হল সে টুকিকে চুরি করে দেখছে। এই চুরিকে অমিত নাম দিয়েছে “stealing with eyes” ,এই চুরিতে ধরা পড়লেও শাস্তি নেই। চুরি করে দেখার সুযোগ সব সময় থাকেনা। এখন আছে।
টুকি আজ অমিতকে কি বলবে অমিত জানে। সে খুব শিঘ্রই অমিতকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চায়। টুকির ধারনা অমিত কিছুটা মেয়ে মেয়ে টাইপের, যে কারনে সে পালাতে ভয় পায়।
এই মেয়ে লুকোচুরি খেলতে খুব পছন্দ করে। অথচ মেয়েটা কি জানে সে কখনও তার বাচাকাচ্চা হলে তাদের সাথে লুকোচুরি খেলতে পারবে না? বাচ্চাদের সাথে লুকোচুরি খেলার সময় বাচ্চারা আড়ালে লুকিয়ে থেকে খুব জোরে “টুকি” বলে আওয়াজ করে,কিন্তু অনেকগুলো বাচ্চা একসাথে মায়ের নাম ধরে চিৎকার করে করে ডাকছে এটা কি কোন মা মেনে নিবে? আচ্ছা, ওদের কি অনেকগুলো বাচ্চা হবে?
অমিত রিক্সাওয়ালার দিকে তাকায়। বেচারা আশা ছেড়ে দিয়ে উদাস নয়নে বৃষ্টি দেখছে। পকেট থেকে ৫০ টাকার একটা নোট বের করে রিক্সাওয়ালার হাতে দিয়ে অমিত দ্রুত রিক্সা থেকে নেমে ওভারব্রিজের দিকে দৌড় দেয়।
৩.
টুকি হঠাৎ খেয়াল করে অমিত একটা রিক্সা থেকে নেমে দৌড়ে ওভারব্রিজে উঠছে। তার মানে ও এতক্ষন ওখানেই দাড়িয়ে ছিল? অমিত উঠে আসছে উপরে। পকেট থেকে সাদা প্যাকেট মোড়ানো কিছু একটা বের করছে ও।
টুকি মিষ্টি করে হেসে অমিতকে বুঝিয়ে দিল ও আসলে ধরা পড়ে গেছে। অমিত লজ্জা লজ্জা মুখ নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
-এতক্ষণ রিক্সায় বসে ছিলে কেন?
-না মানে এমনি।
-পকেটে কি? আমার চুড়ি?
-হু।
-পালটে এনেছ?
-না, চুড়িওয়ালাকে পাইনি।
-তাহলে এনেছ কেন?
-আমি চুড়ি নিয়ে কি করব?
-হাতে পরে বসে থাক। আমরা পালাচ্ছি কবে বল তো।
-আজকে।
-মানে?
-১২ টায় বাস।
-ফাজলামি করছ?
-না, বৃষ্টির দিনে প্রেমিকার সাথে ফাজলামি করতে নেই।
-বৃষ্টির দিনে প্রেমিকা নিয়ে পালাতে হয়?
-হু।
-আমার টিনের চালে বৃষ্টির কি হবে?
-দুই ঘণ্টা লাগবে যেতে গ্রামে। এই বৃষ্টি দুই ঘণ্টার আগে থামবে না। আবহাওয়া দপ্তরের সাথে কথা হয়েছে।
-আচ্ছা। চুড়ি বের কর।
-কি করবে?
-কি আবার করব? তোমার হাতে পরিয়ে দিব।
অমিত লজ্জা পায় ভীষণ। কি করবে বুঝে উঠতে পারেনা। টুকি অমিতের হাত থেকে চুড়ি গুলো নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখে। কালো ক্যাটকেটে রঙের চুড়ি। ছেলেরা মেয়েদের জন্য কালো রঙের চুড়ি কিনে অমিত কে না দেখলে বিশ্বাস হত না ওর।
-নাও, পরিয়ে দাও আমাকে।
-পরিয়ে দিব মানে? এগুলো তো ছোট হয় তোমার।
-এই যে দেখ আমার হাত ভেজা, ভেজা হাতে জোর করলে পরে ফেলা যাবে। নাও, পরিয়ে দাও। ১২ টা বাজতে খুব বেশি দেরি নেই।
অমিত টুকির ভেজা হাতে জোর করে চুড়ি গুলো পরাতে চেষ্টা করে। টুকি খেয়াল করে অমিত ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে ওর হাত ধরে রাখতে। টুকির ব্যাথা লাগছে ভীষণ। ও অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকে রাখে। অমিতের মুখ দেখে মনে হচ্ছে এই চুড়ি কোন ভাবে টুকির হাতে পরানো না গেলে সেটা ভীষণ লজ্জার ব্যাপার হবে। ও খুব মনোযোগ দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চেষ্টা করছে চুড়ি টা পরিয়ে দেবার। হঠাৎ কিভাবে জানি চুড়ি গুলো ঢুকে যায় টুকির হাতে। অমিত হাসি হাসি মুখ নিয়ে টুকির দিকে তাকিয়ে দেখে ওর চোখে পানি।
অপরাধীর দৃষ্টিতে তাকায় অমিত।
-ব্যাথা পেয়েছ হাতে তাই না?
টুকি হেসে ফেলে।
-এটা কি পরালে? চুড়ি নাকি হাতকড়া? এগুলো তো আর খোলা যাবেনা।
-এগুলো হাতকড়া। আজ থেকে তোমার যাবজ্জীবন।
অমিত শক্ত করে টুকির হাত ধরে রেলিঙের পাশে দাড়ায়। কোথা থেকে দমকা বাতাসের সাথে বৃষ্টির ছাট এসে ভিজিয়ে দেয় ওদের। হঠাৎ টুকির মনে হয় বৃষ্টির ছাটেও আসলে একা একা ভিজতে নেই। বৃষ্টির ছাট মাখতে হয় দুজন একসাথে।
১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:১২
পসর কুমার ভৌমিক বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:৩১
না পারভীন বলেছেন: এটা কি পরালে? চুড়ি নাকি হাতকড়া? এগুলো তো আর খোলা যাবেনা।
-এগুলো হাতকড়া। আজ থেকে তোমার যাবজ্জীবন।
সবচেয়ে ভাল লেগেছে ।
৩| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৩৪
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
বৃষ্টির শব্দ পড়তে ভালই লাগল।
৪| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১৫
শূন্য পথিক বলেছেন: সুন্দর
৫| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:০৮
চেনা মুখ, অচেনা ছায়া বলেছেন: সহজ, সুন্দর , সাবলীল গল্প।
৬| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২৩
অশ্রু কারিগড় বলেছেন: টুকির মনে হয় বৃষ্টির ছাটেও আসলে একা একা ভিজতে নেই। বৃষ্টির ছাট মাখতে হয় দুজন একসাথে।
।
।
।
মুগ্ধ হলাম আপনার লেখা পড়ে । শুভকামনা রইল ।
২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:০৯
পসর কুমার ভৌমিক বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২৩
খেয়া ঘাট বলেছেন: বর্ণনাগুলো খুবই সাবলীল এবং সুন্দর হয়েছে। পাঠ করে মুগ্ধ হলাম।