নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের সম্পর্কে বলার মত কিছু নাই। যে দিন বলার মত পরিস্থিতি হবে আশাকরি সেদিন আর বলতে হবে না।

পাজী-পোলা

চেষ্টাই আছি........

পাজী-পোলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

শরগোল (Repost)

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:১০

{ সত্য ঘটনা অবলম্বনে ওয়েব সিরিজের জন্য একটি গল্প আংশিক ঘটনা মিথ্যা কেবল নাটকীয় করার জন্য। }

মফস্বল একটি শহর, হাতের তালুর চেয়েও ছোট এই শহরটি বিভক্ত হয়ে আছে কয়েকটি হাতের মুঠোয়। অর্থ, ক্ষমতা আর বন্দুকের নল যার সীমারেখা। হাড়ি- পাতিলের মত ঠুকাঠুকি লেগেই ছিল। তবে পাতিলের ভেতরে পড়ে থাকা হাড়, মাংস, রক্তের মাঝে সংঘর্ষ হত বেশি। সেই সব সংঘর্ষ সুস্বাদু খবর হয়ে ছড়াতো কান থেকে কানে। শহরের অদূরেই একটি মহল্লা সবুজ বাগ। সেখানে গুটি গুটি পায়ে বাড়ছিল কয়েকটি গুটি পোকা। যাদের অবাধ্য হাতের মুঠোয় সহজেই ধরা দিত অস্ত্রের ঝিলিক। যাদের চোখে স্বপ্ন ভাসছিল চারপাশের মাথা ছেটে মাথা তুলে দাঁড়াবার। এমনি ৭ টি গুটি পোকার গ্যাং হলো ব্যাঙ। কত আর বয়স হবে, ৭/৮। এই বয়সেই দুরন্ত, ছুটন্ত, অবাধ্য। মহল্লায় প্রতিদিন ওদের নিয়ে বিচার বসত। যেদিন বসত না সেদিনও বসত উশৃঙ্খল আনন্দ উদযাপনের জন্য। বাকী কারণ গুলার মধ্যে আছে গাছের ফল চুরি, বিদ্যুতের তার চুরি, রাস্তার-অন্যের বাসার লাইট ভেঙ্গে ফেলা ঢিল মেরে আর অন্য পাড়ার গ্যাং এর সাথে মারামারি তো লেগেই আছে। যে বিচার দিত সে সহজে ছাড় পেত না। রাতে তার বাড়িতে চলত ভুতুড়ে তান্ডব। মাঝ রাতে বাড়িতে ঢিল পড়ত পলিথিন ভর্তি হাগু- মুত। চুরি হয়ে যেত বাড়ির পোষা প্রাণী। সে ভয়ে অনেকে বিচারও দিত না। এমনি বেপরা বেড়ে উঠছিল কয়েকটি বিষ পোকা। সবুজ বাগের পাশেই নীল বাগ সেখানেও উম্মাদ ভাবে বেড়ে উঠছিল একটি এসিডের গাছ। ভেতরে ভরে নিচ্ছিলো বিষাক্ততা।

শহরের এই অংশটা সরকার বংশের হাতে। ওরা ছিল ৬ ভাই। একি বাবার দুই মায়ের সন্তান। প্রথম পক্ষের নওয়াজ, গোরকি, পুশকিন। দ্বিতীয় পক্ষের দিলার, রুস্তম, মজনু। ৬ ভাইই ছিল কোননা কোন দলের নেতা। যেমনঃ নওয়াজ জাতীয় পার্টি, দিলার, রুস্তম, মজনু ও পুশকিন কখগ দলে আর মজনু ছিল xyz দলে। সবুজ বাগের মুখেই বাস্ট্যান্ড। মজনু ছিল বাস্ট্যান্ডের শ্রমিকদের নেতা। তার হুকুমেই চলত সব। সে চালাতেও ইচ্ছামত। ইচ্ছে হলেই উঠিয়ে নিয়ে যেত যে কোন মেয়েকে কিংবা সাধারণ যাত্রীদের সাথে রঙ তামাশায় মেতে থাকত। মজনুর সাথে সবসময় ঘুরতে বুদা পাগলা। বুদা পাগলা জন্ম থেকেই এবনরমাল।

কখগ পার্টির গোড়া পত্তন এই শহরেই। এই শহরের একটি থানা গাব গাছিতে তাদের আদি বাস। তখন ক্ষমতায় ছিল কখগ পার্টি। প্রেসিডেন্টের বয়স বাড়ছিল তাই দলের ভার নিতে হয় প্রেসিডেন্টের ছেলেকে। দলের ভার নেবার আগে সে দেশের সব গুলো জেলা ঘুরার সিদ্ধান্ত নেয় জনগণের সমর্থন অর্জনের জন্য। প্রথমেই যেতে চায় আদি নিবাস বাবার বাড়ি গাবগাছিতে। সে যখন এই শহরে আসে তখন তাকে তীব্র ভাবে অপমানিত হতে হয়। গাবগাছিতে যেতে হলে সবুজবাগের উপর দিয়ে যেতে হবে। সবুজবাগ আর গাবগাছির মাঝে ছোট্ট একটা ব্রীজ। এই শহরের বুকের উপর দিয়ে বয়ে চলা ছোট্ট একটি নদীর উপর দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে মজনু একা একটি শর্টগান হাতে প্রেসিডেন্টের ছেলের গাড়ী বহর আটকে দেয়। সেখান থেকেই ঢাকায় ফিয়ে আসতে হয় প্রেসিডেন্টের ছেলেকে। মুভির দৃশ্য মনে হলেও ঘটনাটা সত্য। সত্য কখনও চপা থাকে না তাই বাতাসের মত ঘটনাটা ছড়িয়ে পড়ে গোটা শহরে।

নাসিম, সোহাগ তখন উঠতি ক্যাডার। ছোট-মোট দলের কাছ থেকে সালাম পায়। লোকেরা ভয়টয় করে। তারা অপেক্ষা করতে থাকে বড় মাছ গিলে খেয়ে জায়গা নেবার জন্য। সুযোগ পেয়ে যায় হাতের মুঠোয়। উপর মহল থেকে পেয়ে যায় পাকা হুকুম। দুর্বৃত্ত হয়ে ওঠে তারা। ভিড় করে মজনুর দলে। ভিড় ঠেলে হয়ে ওঠে মজনুর কাছের লোক। তারপর একদিন প্রকাশ্যে রাস্তায় বাস্ট্যান্ডের সামনে ধাবড়িয়ে হত্যা করে তাকে। মুহূর্তেই সমস্ত শহর নীরব হয়ে যায়। শশানের মত একলা পড়ে থাকে একলা বাসট্যান্ড। এই ঘটনা ইন্সপায়ার হয়ে ধরা দেয় গুটি পোকাদের কাছে, এসিডের গাছের কাছে। তার আগে যে খুন হয়নি, শহর কোন লাশ দেখেনি এমন না। কিছুদিন পরপর এই শহরের রাস্তায়, নর্দমায় চিপসের প্যাকেটের মত পরে থাকত লাশ। কিন্তু এমন প্রকাশ্যে দিবালোকে এত চোখের সামনে এই প্রথম। তাছাড়া প্রেসিডেন্টের ছেলের ঘটনা প্রতিটি ঠোঁটে ঠোঁটে। এমন কিছু হবার আশংকায়- অপেক্ষায় ছিল শহর। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল প্রতিটি বুকে, মুখে। রাঘব বোয়ালদের মাঝে পাঙ্গাসের জায়গা করে নিয়েছিল নাসিম, সোহাগ। তাদের ছায়াও ভয় পেতে শুরু করে মানুষ থেকে কুকুরের দল। সরকার বংশ কিছুই করতে পারেনি কারণ অর্ডার ছিল একদম উপর থেকে স্বয়ং প্রেসিডেন্টের ছেলের।

এসিডের গাছ তখন বেশ জায়গা দখল করে নিয়েছে। আসে পাশের জংলা সরিয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এসিডের এই বাড়ন্ত গাছটি শুভ। শুভর বাবা আগা-গোড়া পুরোটাই ডুবে থাকত বাংলা মদের বোতলে। অভাব-অনাহারের সংসার। একদিন সকালে বাবা মার ঝগড়ার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় শুভর। যা নিত্য দিনের গল্প। ঘরের হাড়ি পাতিল গুলোও ছুড়াছুড়িতে অতিষ্ট। শুভ বিছানা ছেড়ে বারান্দায় দাঁড়ায়। মা তরকারি কাটছিল। শুভর বাবা স্ত্রীকে ছেড়ে ছেলেকে দেখে ছেলে কে গালি দিতে শুরু করে। শুভ মায়ের কাছে যায়। পায়ের নিচ থেকে বঁটিটা নিয়ে বসিয়ে দেয় বাবার ঘাড়ে। আর্তনাদ করে ওঠে বাবা, চিৎকার দেয় মা। রক্ত ছিটকে এসে লাগে শুভর গায়ে। শুভ শান্ত ভঙ্গিতে বেরিয়ে যায়। চায়ের দোকানে গিয়ে রক্ত ধুয়ে ফেলে সিগারেট খায়, চা খায়। সে যাত্রায় শুভর বাবা বেঁচে যায়। কিন্তু ঘটনাটা মধুর মত ছড়িয়ে পরে চার্ পাশে। কানে পরে সরকার বংশের বড়ছেলে নওয়াজের।

তখন পাড়াটা ইউনিয়ন ছিল আর সেই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে লড়তো সৎ দুই ভাই নওয়াজ আর দিলার। দিলার ছিল কখগ পার্টিতে অর্থাৎ কিনা তখনকার সরকার দলে। নওয়াজের ছোট হলেও দিলার কে দেখাত নওয়াজের চেয়েও বৃদ্ধ। প্রকাশ্যে সৎ ভাইদের মধ্যে প্রচন্ড বিবাদ থাকলেও ভেতরের খবর হল নওয়াজের বুদ্ধিতে চলত সরকার বংশ। তার মাথা থেকে বুদ্ধি সরকার বংশের অন্যান্য মস্তকে, শিরায়, অংগে-প্রত্যঙ্গে পড়ত। নওয়াজ শুভকে দলে ভেড়ায়। সমগ্র সবুজ বাগ ছেড়ে দেয় শুভর হাতে। শুভ বখাটে যুবকের মত ধর্ষণ করে সমগ্র এলাকাকে। শক্ত পিলারের মত পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে সরকার বংশ। শুভর তাপে অতিষ্ট হয়ে ওঠে এলাকার নির্জীব প্রাণীরাও। তারপর একদিন মাঝ রাতে শুভ খবর পায় একটি বন্ধ দোকানের ভেতরে নাসিম, সোহাগ ও রশিদ বোতল খুলে বসেছে। দোকানের শাটারে ধাক্কা দেয় বুদা পাগলা। শাটার তুলে দেয় নাসিম। বুদা পাগলা ততদিনে নাসিম, সোহাগের দলে ভিড়েছে। স্বভাব বসেই বুদা পাগলাকে নিয়ে একটা সস্তার রসিকতা করে নাসিম। হো হো করে হেসে ওঠে সোহাগ, রশিদ। এক পলকেই দোকানের মধ্যে ঢুকে পরে একদল ছোকরা। শুভ ও তার দলবল। হাতে ধারালো অস্ত্র ছুরি-চাকু, রিভলবার। এলোপাথাড়ি চালাতে থাকে তারা। রক্ত-মাংসের দাগ লেগে যায় দেয়ালে। মাংসের স্তুপ হয়ে পরে থাকে তিনটি মানুষ। কিভাবে যেন সোহাগ বেঁচে যায়। ধ্বসে যায় শরীরের নিম্নাংশ। আজো হুইল চেয়ারে সে বেঁচে আছে। দুটো বুলেট জায়গা করে নিয়েছিল রশিদের পাছায়। পরের দিন খবরটা চল হয়ে যায় আর শুভ বিয়ে করে মজনুর বিধবা স্ত্রীকে। বানিয়ে ফেলে দুর্গের মত আস্তানা। কারো বুঝতে বাকি থাকেনা কি ঘটেছে, কেন ঘটেছে, কে ঘটিয়েছে। কিন্তু প্রতিটি মুখ যেন সেলাই করা। ভুল করেও কেউ সেই ঘটনা নিয়ে আলোচনা করে না। সবাই থেকে যায় নিজ নিজ ঘরের ভেতরে।

ওদিকে গুটি পোকাদের তখন উঠতি যৌবন। নাকের নিচে আভাস দিচ্ছে কালো কালো গোফ। গুটি পোকাদের এই গ্যাং ব্যাঙ এ ছিল রাজন, রাজীব, ফয়সাল, আপেল, রকি, মনির, রাকিব। এলাকায় প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে জুয়ার আসর। সেই আসরেই তারা মগ্ন থাকত এছাড়া মদ ও বাজারে নারীর শরীর তো আছেই। আর মহল্লার বড় ভায়েরা তখন ইট, বালুর ব্যবসার নামে চাঁদা তুলতো নির্মাণাধীন বাড়ি থেকে। এলাকার একটি স্কুলে বার্ষিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে যায় গ্যাং ব্যাঙ এর দল। সেখানেই তনুকে দেখে ভাল লেগে যায় আপেলের। তারপর তখনকার দিনে ভালবাসার গল্পে যা হত, পিছে পিছে যাওয়া কথা বলার চেষ্টা। আপেল পড়ত এলাকার বাহিরের একটা স্কুলে। রাজন বরাবরি ভাল ছাত্র সে দখল করে নিয়েছিল জেলা স্কুল। রাজীব, রাকিব আলাদা আলাদা প্রাইভেট স্কুল, ফয়সাল যদিও এলাকার স্কুলেই পড়ত কিন্তু স্কুলের ধারের কাছেও ঘেষত না রকি, মনির। রাজন, রকি চাচাত ভাই. ফয়সাল তাদের দুর্সম্পকের মামা। আপেল, মনির, রাজীব, রাকিব সহ তারা পাশাপশি বাড়িতে থাকত। রাজন, রকির বাবা কাকারা ছিল এক সময়ের ত্রাস। রাজন রকির এক কাকা ছিল কখগ পার্টির ক্যাডার। একবার xyz পার্টির সাথে সংঘর্ষে ককটেল লেগে তার হাতের কব্জি উড়ে যায়। তখন স্বয়ং প্রধানমত্রীর ছেলে তাকে দেখতে এসেছিল। বাপ্ চাচাদের অস্ত্র পরে থাকত চোখের সামনে। নিজেদের দেহের চেয়ে বড় তলোয়ার, চাকু হাত বাড়ালেই পেত তারা। তাছাড়া পাশের এলাকার বন্ধু রাশেদ, জুম্বাদের নিয়ে বাসস্ট্যান্ডের ওপর পাশে অন্য একটি এলাকার চাতালে দিনে দুপুরে ছিনতাই করত। ছেলেদের পরনের কাপড় পর্যন্ত খুলে নিত। রাশেদ, জুম্বাদের পাড়াও ছিল অদ্ভুদ। সেখানে ঘরের বউরা অচল ভর্তি টাকা নিয়ে খোলা মাঠে গিয়ে বসত জুয়ার আসরে। গ্যাং ব্যাঙের অত্যাচার দিন দিন বেড়েই চলছিল। রাজন, রকির বাপ্ চাচাদের নামের কারণে আর রাশেদ, জুম্বাদের পাড়ার নাম শুনে কিছু বলত না সেই এলাকার কমিশনার। কমিশনারও ছিল কখগ পার্টির। কিন্তু একদিন ধর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। কমিশনার লেলিয়ে দেয় তার চেলাপেলা দের। সেদিন সবাই পালিয়ে গেলেও ধরা পরে যায় রাজন। বেদম মার খায় সে। তারপর থেকেই এলাকার বড় ভাইদের সাথে যাওয়া শুরু করে পার্টি অফিসে। বাপ্ চাচাদের নামের কারনে পার্টিতে জায়গা করে নিতে বেগ পেতে হয় না। হয়ে ওঠে নেতাদের কাছের লোক।

আপেল তনুর প্রেম তখন চলছে তুমুল দমে। বিশ্বাস ঘাতকতা করে বসে তনু। একি ক্লাসের নিলয়ের প্রেমে হাবুডুবু খায় সে। পাড়ার ছোট ভাই সাগর, গুলফামের কাছ থেকে খবর পেতে দেরি হয় না আপেলের। সে নিষেধ করে দেয় তনুকে, নিলয়কে। কিন্তু বাধা মানে না তারা। সে খবরও পেয়ে যায় আপেল। একদিন স্কুলে একটি ক্রিকেট ম্যাচ কে কেন্দ্র করে নিলয়ের সাথে ঝগড়া বাধায় সাগর, গুলফাম। নিলয় মেরে তাড়িয়ে দেয় তাদের। সাগর, গুলফাম ছুটে যায় আপেলের কাছে। আপেল একটা চাকু নিয়ে ছোটে জুয়ার আসরে। আসরে তখন ছিল রকি আর ফয়সাল। ওদের সাথে করে নিয়ে আপেল স্কুলে যায়। ওৎ পেতে থাকে স্কুল ছুটির অপেক্ষায়। ছুটির পর নিলয় বের হলে ক্ষেপাটে ষাঁড়ের মত তেড়ে যার আপেল। তারপর এলোপাথাড়ি ঘুসির মাঝে একটা ছোট ছুরি নিলয়ের পেট ভেদ করে ঢুকে যায় ভেতরে। নিলয়ের বন্ধু মঈন এগিয়ে আসলে ছুরির দাগ বসে যায় মইনের শরীরেও। জন সমাবেশ জমে যায় স্কুলের গেটের সামনে। সবার চোখের সামনে দিয়ে সটকে পরে ওরা। দুটি রক্ত মাংসের শরীর থেকে হা হয়ে গলগলিয়ে বেরিয়ে আসে রক্ত। ভিজে যায় স্কুলের সামনের রাস্তা। দুটি খুনের দায়ভার নিয়ে পালিয়ে যায় আপেল, রকি, ফয়সাল, সাগর, গুলফাম। বছর খানেক পালিয়ে থেকে কোর্টে স্যালেন্ডার করে জেলে চলে যায় তারা। পলাতক থাকা অবস্থায় মাঝে মাঝে মুখ ঢেকে আস্ত পাড়ায়। আপেল চলে যেত তনুর বাড়িতে। বাবা মাকে আড়াল করে পেছনের দরজা দিয়ে আপেলকে বাড়ির ভেতরে ঢুকিয়ে নিতে তনু। সারা রাত থেকে বের হয়ে আসত সকালে ফজরের আজানের সময়।
সে সময় রাজন, রাকিব আর মনির শুরু করে বালুর ব্যবসা। নিলয়ের খুনটা তাদের এগিয়ে দেয় অপরাধ চক্রের দিকে কয়েক ধাপ।

নদীর গভীর থেকে খাবলা খাবলা চক চকে বালু তুলে বিক্রি করতে শুরু করে। রাইসুল তখন প্রতিষ্ঠিত বালুর ব্যবসায়ী। নদীর বুক থেকে বালু তুলে আসে পাশের জমি বিলীন করে দিচ্ছে নদীর গর্ভে। কোন জমির মালিক কিছু বললে নামমাত্র মূল্যে কিনে নিত সে। এই বালুর ব্যবসা কে কেন্দ্র করে হলুদ গ্রামের একটি দলের সাথে গন্ডগোল লেগে যায় তার। একদিন হলুদ গ্রামের কিছু ছেলেপেলে কৌশলে ঢেকে নিয়ে যায় তাকে। বেধম পিটুনী দেয়। মাথার ভেতরে একটা রড ঢুকে যায়। রডটাকে মাথার ভেতরে নিয়েই ছুটতে থাকে রাইসুল। নিজ এলাকায় ঢুকে নেতিয়ে পরে সে। রাইসুল মৃত্যুর পর আর কোন বাধা থাকে না গ্যাং ব্যাঙ এর। মহল্লার বড় ভাই রাসেল, জুয়েল এর সাথে ইট বালুর ব্যবসার নামে চাদা বাজিতে জড়িয়ে পরে তারা। ব্যবসা কে কেন্দ্র করে রাশেদ, জুম্বার সাথে ক্যাচাল হয় রাসেল, জুয়েলের। একদিন দুপুর বেলা কাউকে কিচ্ছু বুঝতে না দিয়ে রাশেদ, জুম্বারা ঢুকে পরে পাড়ায়। পাড়ার একটি দোকানের সামনে পেয়ে যায় রাসেলের ছোট ভাই রাজন কে। রাজন থাকত ঘুমের ট্যাবলেট আর বাংলা মদে। রাশেদ, জুম্বাদের ছুরির সামনে থেকে নেশায় চূর্ন দেহ নিয়ে নড়তে পারে না সে। রাসেল বাদী হয়ে কেস করলে রাশেদ, জুম্বা ঢুকে যায় জেলের ভেতরে। যেখানে আগে থেকেই রকি, ফয়সাল, আপেল ছিল। জেলখানার ভেতরে বন্ধুত্ব গাঢ় হয় তাদের। এদিকে টাকা ভাগাভাগি নিয়ে রাসেলের সাথে ক্যাচাল লাগে জুয়েলের। রাসেলদের হতে মার খেয়ে পাড়া ছাড়া হয় জুয়েল। শুভর দলে ভিড়ে সে। তারপর একদিন সুযোগ বুঝে আক্রমণ করে রাসেলকে। রড দিয়ে মাথা ফাটিয়ে ফেলে রাসেলের। ব্যবসা সপূর্ণ চলে যায় গ্যাং ব্যাঙের হাতে। এমন সময় জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আসে আপেল, রকি, ফয়সাল। এসেই তারা শুরু করে মাদকের ব্যবসা।

শহরের ওপর প্রান্ত বেগুনী বাগ। বেগুনী বাগ চামড়ার গুদাম তখন একটু একটু করে দখল করছে মতিন। মতিনের সেখানে মাদকের আখড়া বসিয়েছে। সে অন্য এক গল্প। মতিনের ছোট ভাই তুফানের সাথে আপেল পড়ত একই স্কুলে। বন্ধুত্ব আগে থেকেই ছিল। তুফানের সাথে মাদকের ব্যবসা চালাতে শুরু করে তারা। ওপর দিকে শুভুর ছায়ায় শক্তিশালী হয়ে উঠছিল জুয়েল। অপেক্ষা করতে থাকে গ্যাং ব্যাঙকে নিশ্চিন্ন করার। নয়ত ব্যবসা বাড়ি কিছুই ফিরে পাচ্ছে না সে। একদিন চুপি চুপি বাড়িতে আসে জুয়েল। খবর পেয়ে যায় গ্যাং ব্যাঙের দল। তারপর গ্যাং ব্যাঙের গুটি পোকাদের হাতের মুঠোয় জুয়েলের প্রাণ আর রক্তের দাগ লেগে যায়। গভীরে শোক ও ক্ষোভ পালন করে শুভ। এলাকায় হটাৎ করে একটি মেয়ে আসে, তাতিয়া। অনেক আগে তারা এই এলাকায় থাকত। যখন তাতিয়ার জন্ম হয়নি। বউকে বাড়িতে রেখে ঢাকায় চাকরি করত তাতিয়ার বাবা। রাজনের কাকার সাথে তখন এক্সট্রা ম্যারিটিয়াল এফেয়ারে জোড়ায় তাতিয়ার মা। সে গটনা জানাজানি হয়ে গেলে তাতিয়ার বাবা তাতিয়ার মাকে নিয়ে ঢাকায় চলে যায়। সেখানেই তাতিয়ার জন্ম হয়। এতদিন পর তারা আবার বাড়ি ফিরে আসে। রাজনের এক চাচাত ছোট ভায়ের সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাতিয়ার। কিন্তু বেশিদিন টিকে না। তারপর গড়ে ওঠে রাজনের সাথে। তাতিয়ার প্রাচীর টপকে রাজন গভীর রাতে ঢুকে যেত তাতিয়ার ঘরে। বহু রাতে তাতিয়ার বাড়ি থেকে প্রাচীর টপকে বের হতে গিয়ে রাজনের চোখাচোখি হত কাকার সাথে। কিন্তু কেউ যেন কাউকে চেনে না, কেউ কিচ্ছু দেখেনি এমন নিপুন অভিনয়ে এড়িয়ে যেত। তাতিয়ার ফুপাত বোন পাপিয়া আসে এলাকায়। পাপিয়ার সাথে রিলেশনে জোড়ায় ফয়সাল। তাতিয়া ধরা পরে যায় পরিবারের কাছে। তাতিয়ার মা বিচার দেয় রাজনের কাকার কাছে। রাজনের কাকা জানতে পারে তাতিয়া তারি সন্তান। কাকা নিষেধ করে রাজন কে। সেখানেই তাতিয়ার সাথে রাজনের সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় এরপর তাতিয়ার সাথে সম্পর্ক করে রকি। গোপনে বিয়ে হয়ে যায় তনুর। খবরটা শুনে পাগল হয়ে যায় আপেল। স্বামীর বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে আসে তনু কে। ফয়সাল ও পালিয়ে বিয়ে করে ফেলে পাপিয়াকে। মণিরের পরিবার ঘটা করে বিয়ে দেয় মনিরের।

সায়েম তখন একটু একটু করে হাত খুলতে শুরু করেছে। সায়েম নাসিমের ছোট ভাই। যে নাসিম খুন করে মজনু কে যে নাসিম খুন হয়ে যায় শুভর হাতে। নাকে দম করে রাখে সে সরকার বংশের। সরকার বংশ চাইলে শুভকে দিয়ে সায়েমের কাজ সমাধা করতে পারত কিন্তু তাদের নজর তখন গ্যাং ব্যাঙের উপরে। গ্যাং ব্যাঙকে তারা হাত করতে চায় তাই সায়েমের মার্ডারের সুপারি দেয়। কিন্তু গ্যাং ব্যাঙ স্বাধীন। তারা কারও অধীনে কখন কিছু করেনি করবেও না। তারা নাকচ করে সরকার বংশের প্রস্তাব। বাধ্য হয়েই সরকার বংশ শুভকে দেয় সায়েমের ভার। আস্তানা থেকে বের হয় শুভ। সহজ শিকার সায়েমের কাজ সমাধা করে আবার ঢুকে যায় আস্তানায়। এই ঘটনা ভীতির জন্ম দেয় গ্যাং ব্যাঙের কাছে। সবাই বলাবলি করতে থাকে এবার কিছু একটা হবে। সরকার বংশ আর শুভর পোলাপানদের সাথে সংঘর্ষ লেগেই থাকে গ্যাং ব্যাঙের। সরকার বংশের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ায় সরকার বংশ নাখোশ তাদের উপরে। ঘটনা যখন বাড়তে থাকে এক রাতে গ্যাং ব্যাঙ ঢুকে পরে শুভর আস্তানায়। তছনছ করে দেয় শুভর শরীর, আস্তানা। তারপর থেকে তারাই শহরের এ অংশের হর্তাকর্তা। সরকার বংশ গুটিয়ে নেয় নিজেদের। একদিন মাদকের কেসে রাজনকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। রকি, রাকিব অস্ত্র হাতে ধরা পরে পুলিশের হাতে। বাপ্ চাচারা রাজনকে ছাড়াতে পারলেও রকি, রাকিব কে যেতে হয় জেলে। অন্যদিকে জুয়েল মার্ডারের কেস কোর্টে ওঠে, ধরা দেয় আপেল, ফয়সাল। থানা থেকে বেরিয়ে পরিবারের চাপে ভাল হয়ে যায় রাজন। ছেড়ে দেয় গ্যাং ব্যাঙ। জেলথেকে বেরিয়ে রাকিবও হাটে রাজনের পথে।

তখন যৌথ বাহিনীর সময়। প্রতিদিন খবরের কাগজে তাজা তাজা খবর আসে রাঘব বোয়ালদের ক্রসফায়ার আর জেল বন্দীর। বাদ যায় না পার্টির বড় বড় নেতারাও। সেসময় এক রাতে যখন সম্পূর্ণ পাড়া ঘুমে অচেতন। চুপিচুপি হানা দেয় যৌথ বাহিনী। জুয়ার আসরে পেয়ে যায় রকি, রাজীব, মনিরকে। বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে ফয়সাল আর আপেলকে। বুলেটের শব্দে ঝাঁঝরা করে দেয় তাদের শরীর। সমস্ত পাড়া জেগে ওঠে আতঙ্কে। গিজ গিজ করে বেরিয়ে আসে মানুষ। বডিগুলো তুলে গাড়িতে। আপেল বেঁচে যায় কিন্তু সুস্থ স্বাভাবিক হতে পারেনি আর সে। পাগল হয়ে ঘুরে রাস্তায়। রাজন, রাকিব মাঝে মাঝে স্মৃতির পাতা মন্থন করে। হাসে কাঁদে। ছোট্ট একটা ইতিহাস চাপা পরে থাকে শহরের শরীরের ভাঁজে।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৩:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: মানুষের নাম কেন আপেল হয়??!!

২| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:৪৯

মা.হাসান বলেছেন: গ্যাং ব্যাঙ আর কালোবাগের আপেল বন্ডের কাহিনী চমৎকার। আমাজনে মিরজাপুর নামের একটা সিরিজের দু-তিনটা পর্ব দেখেছি। তার চেয়ে রঙিনবাগের ব্যাঙদের গল্প অনেক ঘটনা বহুল। ওয়েব সিরিজ এক পর্বে হলে হয় নাকি ? ক্যাসিনো , ষাবড়িনা এগুলোও দরকার আছে না?

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৩:৫৪

পাজী-পোলা বলেছেন: ছোট করে লিখছি, ভেতরে আরো অনেক গল্প পরে আছে। যদিও কখন বানাতে পারি তাহলে পুরোটাই বানাবো। সত্য ঘটনা যতটা ছিল ততটাই তুলে ধরবো।

মির্জাপুর চরম একটা ওয়েব সিরিজ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.