নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চেষ্টাই আছি........
সেজাদ অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। শার্টের হাতায় বোতামটা লাগিয়ে, ব্রিফকেস নিয়ে যেই বেরুতে যাবে এর মধ্যেই কিচেন থেকে সুরঞ্জনার ডাক-
এই শুনছো?
সেজাদ দরজার দিকে এগোতে এগোতে বলল-
না, শুনছি না।
সুরঞ্জনা মিছে অভিমানী ঝড় তুলে, বললো-
আমি ডাকলেই তো তুমি শুনো না। রাজ্যের কথা তোমার কানে পরে, শুধু আমার কথাই পরে না। আমার কন্ঠ তো আর কোকিল কন্ঠি না।
সেজাদ কথার মাঝেই বলে ফেললো-
কি সকাল বেলা কাকের মত চেচাতে শুরু করেছো।
বলেই জ্বীবায় কামড় দিয়ে ফেললো; ভুল বলেছে। ঝগড়ার শুরু। নিজের কথা ঢাকতেই, গলা একটু উচিয়ে বললো-
তোমার কথা না শুনে উপায় আছে বলো। যা মাইকের মত গলা তোমার।
বলেই বুঝতে পারলো আবারও ভুল করেছে। ওর কপালটাই এরকম, ভুল ঠিক করতে গিয়ে বারবার ভুল করে ফেলে। আর এইভাবেই দিনে তার অপরাধের সংখ্যা বেড়েই চলে। সুরঞ্জনা প্রত্যেকটার হিসাব রাখে। রাতে তার বিচার হয়। সেই বিচারে সে এক নিষ্ঠার সাথে বরাবরি দোষীই হয়। নিরপরাধ হবার কোন কারণ নেই, বিপক্ষ পার্টি যখন নিজেই জর্জ আর জামিন কই। কোন উকিল, মোক্তার তো নেই-ই; নিজের সাফাই গাইবার নিজেরি অধিকার নেই। এমন রাষ্ট্রে সে কী করে যে বারবার ভুল করে!
এবার নিজেই সে গদগদ হয়ে বললো -
আমার কান তো সারাক্ষণই ব্যাগ্রই থাকে তোমার কথা শোনার জন্য। তুমি সেটা জানো, তারপরও কেন জিঙ্গেস করো শুনছি কিনা।
ঝগড়া শুরু করবার মত যথেষ্ট অপরাধ সেজাদ করছে, কিন্তু এখন সুরঞ্জনা সে দিকে পা বাড়ালো না। এর জবাব সেজাদ পাবে, ছাড় পাবে না। সুরঞ্জনা ঢং করে বললো-
আহা, সোনার স্বামীগো আমার। প্রেম একদম গলদাইয়া গলদাইয়া পড়ে।
সেজাদ র্যাক থেকে জুতা নিয়ে পরতে পরতে বললো-
আহ, কী বলবে বলো না। শুধু শুধু গ্যাজাচ্ছো কেন?
সুরঞ্জনা অগ্নিমূর্তি ধারণ করে হাতের চামিচটা নিয়ে তেড়ে এলো- আমি গ্যাজাচ্ছি?
সুরঞ্জনা যুদ্ধাবেশ দেখে সেজাদ হেসে ফেললো। অস্ত্র যদিও সে শক্তই এনেছিলো, সেজাদেরও যথেষ্ট ভয় পাবার কারণ ছিলো। কিন্তু সুরঞ্জনার মুখে সাবানের ফেনা, মাথায় ভাত-তরকারি লেগে একাকার অবস্থা। বেচারা ভয় পাবার বদলে হেসে ফেললো। সুরঞ্জনা অবাক হয়ে ইশারা করলো, কী? সেজাদ উঠে এসে সুরঞ্জনা কে আয়না দেখালো। সুরঞ্জনাও হেসে ফেললো। যাক, মেঘলাচ্ছন আবহাওয়া কেটে গেল। আকাশ পরিষ্কার, দিনের ঝলমলে আলোতে আমরাও ওদের লাল-নীল সংসার পরিষ্কার দেখতে পেলাম।
সেজাদ সুরঞ্জনারি শাড়ির আঁচল দিয়ে সুরঞ্জনারি মুখ মুছে দিয়ে এমন ভাব করলো যেন বিশাল কোন কাজ করছে। সুরঞ্জনার বিগলিত হওয়া উচিৎ। কী কারণে জানিনা, সুরঞ্জনাও বিগলিত হয়ে গেল। গদগদ হয়ে বুকের কাছে মুখ এনে বললো-
এই শুনছো?
সেহাদ মৃদু হেসে বলল-
না, শুনছি না।
সুরঞ্জনা বললো- কাল একটা ফ্রিজ দেখে এসেছি, ৭০ দাম চেয়েছে, আমার জন্য ৫০ করবে বলেছে। একটা নেই, না?
সেজাদ হাসি মুখেই বললো- তোমার জন্য বিশাল ছাড়। কে হয় তোমার?
সুরঞ্জনা একটু আরষ্ঠ হয়ে বললো- আমার কে হবে! সীমার ভাইয়ের বন্ধুর দোকান।
সেজাদ ব্যাঙ্গ করে বললো - তোমার বন্ধুর ভাইয়ের বন্ধু! বিশাল কাছের সম্পর্ক।
সুরঞ্জনার কন্ঠেও ঠাট্টার সুর- সেইজন্যই তো অফারটা করলো। কিস্তিতেও দেওয়া যাবে। প্রথমে ২০ হাজার, তারপর মাসে মাসে ৫ হাজার। কাছের সম্পর্ক না হলে দিতো, বলো! সীমাই তো দামদর ঠিক করলো।
সেজাদ একটু গম্ভীর হয়ে অনুরোধের সুরে বললো- আর কয়েকটা দিন কষ্ট করো। সামনের বোনাস পেলেই, পাক্কা।
বোনাসের উপর কত কিছু পড়ে আছে- কক্সবাজার ঘুরতে যাওয়া, কিচেনের ট্যাপ সারানো, বাবার চশমা, এক টুকরো নিজের ঘরের আশা। কত ছোট ছোট স্বপ্ন ঠেকে থাকে এক একটি প্রত্যাশায়, কত বড় বড় দায়িত্ব। আর একটা বাড়লো।
সেজাদ সুরঞ্জনার কপালে একটা চুমু দিয়ে বেড়িয়ে গেল। সেজাদ বেড়িয়ে গেলেই, সুরঞ্জনার মনেহল সেজাদ চলে গেল। সুরঞ্জনার কাছে সেজাদের এই চলে যাওয়াটা অন্য রকম। চারপশটা নির্জন হয়ে আসে, নিরবতা সুরঞ্জনাকে কাটতে আসে, সমস্ত বাড়িটা খা খা করে। সুরঞ্জনার অসহ্য হয়। সারাটাদিন কাজ করেও সুরঞ্জনার কাজ ফুরায় না। যদিও আসে পাশের দুই এক ঘর শান্তি পায়, কিন্তু সুরঞ্জনা পায় না।
সেজাদ ফুটপাতের খোলা বাজারের মধ্যে দিয়ে হেটে যাচ্ছে। অফিস যাওয়ার পথে এটাই শর্টকাট। এই পথে সামান্য হেটে গেলেই ১৫ টাকা বাচে, যদি না বদমাশ গুলো সাথে দেখা হয়। তখন তো আবার চা খাও, সিগারেট খাও। সেজাদ যদিও এড়াতেই চেষ্টা করে, কিন্তু সব সময় পারে না। ফাদে পড়ে গেলে আর ফাঁক থাকে না।
সেজাফ অফিসে ঢুকেই দেখে জলিল বসে আছে, ইনস্যুরেন্স করাতে চায়। যার বর্তমান-ই নাই, তার আবার ভবিষ্যতের ভাবনা কি। কি অবাক কান্ড, এই লোকটাও বলে কেবল আপনার জন্যই ভাই, এই প্যাকেজ। আপনার কিছু হলে ভাবীর কি হবে একটু ভাবেন। সেটাতো ভাববো কিন্তু তার কিছু হলে আমার কী হবে? সেই ইন্সুইরেন্স কোথায় করাবো? হারানো মানুষ কে, কে ফিরিয়ে দেয়?
সকাল বেলায় সেজাদের মেজাজ খারাপ হল। এই লোক কে তারাতে এখন আধা ঘন্টা লাগবে। এমনি নির্লজ্জ। সকালটাই প্যারা দিয়ে শুরু হল।
দুপুর না গড়াতেই সুরঞ্জনার ফোন- যুথির তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেল।
সেজাদ একটু বেশীই আলাভোলা। বেখেয়ালি মনেই সে বলে ফেললো- কোন যুথি?
সাথে সাথেই সুরঞ্জনার ঝারা কন্ঠ- আমার খালাতো বোন কে তুমি চেনো না? আমার আত্মীয় স্বজন কারো কথাই তো তোমার মনে থাকে না।
সকালের ঘুমোট ভাবটা, যেটা কেটে গিয়েছিলো বলে সেজাদের মনে হয়েছিলো, সেটা এখন বুঝি বর্ষণ শুরু করলো।
সেজাদ তড়িঘড়ি করে বললো- আরে চিনবো না কেন? তো কী হয়েছে?
সুরঞ্জনা- ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে।
সেজাদ- তো কংগ্রাচুলেট জানাও।
সুরঞ্জনা- শুধু কংগ্রাচুলেট জানিয়ে হবে না। যেতে হবে।
সেজাদের বুকটা ধক করে উঠলো। সকালের ফ্রিজটা যদিও বোনাসের উপর চাপানো গেছে, কিন্তু এটা চাপা দিবে কী দিয়ে। সেজাদ শুধু সংক্ষেপে বললো- হুম। তারপর আরও কিছু ইতি-উতির কথা বলে কেটে দিলো। সেজাদ মনে মনে বললো- আজ যেন বদমাশ গুলোর সাথে দেখা হয়, ভীষণ দরকার। দরকারের- অদরকারের হিসাব সেজাদ রাখে, কিন্তু মূর্খ পকেটটা বরাবরি হিসাব ভুল করে। কম্পানির হিসাব সেজাদ রাখছে ঠিকি, কিন্তু পকেটের হিসাব ভুল করছে। প্রতিবার কেমন করে যে এমন গড়মিল হয়, সেজাদ মিলাতে পারে না। সেজাদ ব্যাগ গুছায়, রেডি হয়। আজ একটু তাড়াতাড়ি যেতে হবে। বদমাশ গুলা একটাও যেন হাত ছাড়া না হয়।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:৩৯
রাজীব নুর বলেছেন: বেশ কিছু বানান এডিট করে ঠিক করে নেবেন।