![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার সুহৃদ মাওলানা মুহাম্মদ কামরুজ্জামান রচিত জন্নাতের বয়ান বই এর অংশটুকু পাঠকের জনয উপহার
জান্নাতীদের বিনোদনের একটি চিত্র ঃ হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ঃ বেহেশ্তে একটি বাজার আছে। বহেশ্তেবাসী সপ্তাহের প্রত্যেক জুমআর দিন সেখানে একত্রিত হবে। তখন উত্তরা হাওয়া প্রবাহিত হবে এবং এ হাওয়া তাদের মুখমণ্ডলে ও কাপড়-চোপড়ে সুগন্ধি নিক্ষেপ করবে, ফলে তাদের রূপ-সৌন্দর্য আরও অধিক বৃদ্ধি পাবে। অতঃপর যখন তারা বর্ধিত সুগন্ধি ও সৌন্দর্য অবস্থায় নিজেদের বিবিদের কাছে যাবে, তখন বিবিগণ তাদেরকে বলবে, আল্লাহর কসম! তোমরা তো আমাদের অবর্তমানে সুগন্ধি ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে ফেলেছ। এর উত্তরে তারা বলবে, আল্লাহর কসম! আমাদের অবর্তমানে তোমাদের রূপ-সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। (মুসলিম, মেশকাত শরীফ)
(৪১)لَهُمْ فِيهَا فَاكِهَةٌ وَلَهُم مَّا يَدَّعُونَ [সূরা ইয়া-সীন, আয়াত-৫৭]
সেখানে তাদের জন্য থাকবে ফলমূল এবং তারা যা কিছুর ফরমায়েশ করবে তাই তারা পাবে।
া مَا يَدَّعُوْن এর يَدَّعُوْن শব্দটি دَعْوَةٌ থেকে উদ্ভুত। অর্থ- আহবান করা, ডাকা। অর্থাৎ, জান্নাতীরা যে বস্তুকেই ডাকবে, তা পেয়ে যাবে। কোরআনুল কারীম এক্ষেত্রে يَسْئَلُوْن (তারা চাবে) বলেনি। কেননা, চেয়ে লাভ করাও এক প্রকার শ্রম ও কষ্ট, যা থেকে জান্নাত পবিত্র। জান্নাতে সকল প্রকারের ফল-মূল, তাদের আদর আপ্যায়নের জন্যে উপস্থিত থাকবে। জান্নাতবাসীগণ যাই কামনা করবে, যা তাদের মন চাবে তার সবই তাদের প্রদান করা হবে। আর মুখ ফুটে যা বলবে তাতো পাবেই। (উসমানী, মাআরেফুল কোরআন)
(৪২)سَلَامٌ قَوْلًا مِّن رَّبٍّ رَّحِيمٍ [সূরা ইয়া-সীন, আয়াত-৫৮]
দয়াময় প্রতিপালকের পক্ষ হতে তাদেরকে সালাম বলা হবে।
া ব্যাখ্যা ঃ দয়াময় প্রতিপালকের পক্ষ থেকে জান্নাতীদেরকে ‘সালাম’ বলা হবে। এই সালাম প্রদান হয়ত ফেরেশ্তাদের মাধ্যমে হবে, নতুবা হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী খোদ দয়াময় প্রতিপালক সরাসরি সালাম জানাবেন। তাহলে সেই কাক্সিক্ষত ও আনন্দঘন মুহূর্তের স্বাদ ও শান্তি কেমন হতে পারে! (হে আল্লাহ আপনার নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা এর ওসীলায় সেই দুর্লভ নিআমত আমাদের নসীব করুন!) (উসমানী)
৩৫
খোদ দয়াময়ের পক্ষথেকে সালাম জানানোর হাদীসটি নিম্নরূপ ঃ
২৮
জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ঃ জান্নাতবাসীরা তাদের নিয়ামতরাজি উপভোগে নিমগ্ন থাকবে। হঠাৎ উপর থেকে তাদের প্রতি নূর বিকীর্ণ (ছড়ানো) হবে। মাথা উঠিয়ে তাকাতেই তারা দেখতে পাবে উপর দিক থেকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাশরীফ এনেছেন। অতঃপর তিনি বলবেন ঃ আসসালামু আলাইকুম হে জান্নাতবাসীরা! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এটাই হচ্ছে কুরআনের বাণী سَلَامٌ قَوْلًا مِّن رَّبٍّ رَّحِيمٍ (দয়াময় রবের পক্ষ থেকে তাদেরকে সালাম দেয়া হবে) এর তাৎপর্য। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাদের দিকে দৃষ্টি দেবেন এবং তারাও তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকবে। যতক্ষণ তারা আল্লাহর দিকে তাকিয়ে থাকবে ততক্ষণ কোন নিয়ামতের দিকে তাদের দৃষ্টি থাকবে না। অতঃপর আল্লাহ ও তাদের মধ্যে আড়াল সৃষ্টি করে দেয়া হবে। কিন্তু তাদের উপর এবং তাদের ঘর-দোরে আল্লাহর নূর ও বরকত স্থায়ী হয়ে থাকবে। (ইবনু মাজাহ)
(৪৩) أُولَٰئِكَ لَهُمْ رِزْقٌ مَّعْلُومٌ [সূরা সাফ্ফাত, আয়াত-৪১]
তাদের জন্যে রয়েছে নির্ধারিত রিজিক।
া ব্যাখ্যা ঃ “নির্ধারিত রিজিক” এ আয়াতের শাব্দিক অর্থ এই যে, তাদের জন্য এমন রুযী তথা খাদ্য-সামগ্রী রয়েছে, যার অবস্থা জানা হয়ে গেছে। তাফসীরবিদগণ এর বিভিন্ন মর্মার্থ বর্ণনা করেছেন। কেউ বলেছেন, এতে বিভিন্ন সূরায় বর্ণিত বেহেশ্তী খাদ্য-সামগ্রীর বিশদ বিবরণের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। হাকীমুল উম্মত হযরত থানভী (রহ এ ব্যাখ্যাই অবলম্বন করেছেন। কেউ কেউ বলেন, رِزْقٌ مَّعْلُومٌ এর অর্থ এই যে, এ রিজিকের সময়কাল নির্দিষ্ট ও জানা। অর্থাৎ এ রিজিক সকাল-সন্ধা নিয়মিতভাবে সরবরাহ করা হবে। অন্য এক আয়াতে بُكْرَةً وَّعَشِيًّا (সকাল-সন্ধা) পরিস্কার উল্লেখ করা হয়েছে। তৃতীয় এক তাফসীর এই যে, সেটা নিশ্চিত ও স্থায়ী রিজিক হবে। দুনিয়ার মত নয় যে, কেউ নিশ্চয়তা সহকারে বলতে পারে না যে, আগামীকাল কি এবং কতটুকু রিজিক পাবে। দুনিয়াতে কেউ একথাও জানে না যে, তার অর্জিত রিজিক কত দিন তার কাছে থাকবে। আজ যে নিয়ামত আছে কাল হয়তো তা থাকবে না। প্রত্যেকেই এ আশংকায় সদা শংকিত থাকে। কিন্তু জান্নাতে এমন কোন আশংকা থাকবে না। জান্নাতের রিজিক যেমন নিশ্চিত, তেমনই চিরস্থায়ী। (মাআরেফুল কোরআন)
৩৬
(৪৪)فَوَاكِهُ ۖ وَهُم مُّكْرَمُونَ [সূরা সাফ্ফাত, আয়াত-৪২]
ফলমূল এবং তাদেরকে করা হবে সম্মানিত।
া ব্যাখ্যা ঃ فَوَاكِهُ শব্দটি فَاكِهَةٌ -এর বহুবচন; অর্থ- ফল। কোরআন নিজেই এ শব্দের মাধ্যমে জান্নাতের রিজিকের তাফসীর করে দিয়েছে যে, সে রিজিক হবে ফলমূল। ক্ষুধার প্রয়োজন মেটানোর জন্য নয়; বরং স্বাদ হাসিল করার জন্য যা খাওয়া হয়, তাকেই আরবী ভাষায় فَاكِهَةٌ বলা হয়। ফল-মূলও স্বাদ হাসিল করার জন্যে খাওয়া হয়। তাই এর অনুবাদ করা হয় ‘ফলমূল’। অন্যথায় এর অর্থ ফলমূলের অর্থের চেয়ে ব্যাপক। ইমাম রাযী (রহ فَوَاكِهُ শব্দ থেকে এ সূক্ষ্ম তত্ত্ব বের করেছেন যে, জান্নাতে যেসব খাদ্য-সামগ্রী দেয়া হবে, তা সবই স্বাদ উপভোগ করার জন্যে দেয়া হবে; ক্ষুধা মেটানোর জন্যে নয়। কারণ, জান্নাতে মানুষের কোন কিছুরই প্রয়োজন হবে না। সেখানে জীবন ধারণ অথবা স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যও কোন কিছুর প্রয়োজন হবে না। তবে আকাক্সক্ষা হবে এবং আকাক্সক্ষা পূর্ণ হলেই আনন্দ লাভ হবে। জান্নাতের যাবতীয় নিয়ামতের লক্ষ্যই হল আনন্দ দান করা। (মাআরেফুল কোরআন)
“তারা হবে সম্মানিত” - এ বাক্য দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, জান্নাতীদেরকে এ রিজিক পূর্ণ সম্মান ও মর্যাদাসহকারে দেওয়া হবে। কারণ, সম্মান ব্যতীত সুস্বাদু খাদ্যও বিস্বাদ হয়ে যায়। এ থেকে আরও জানা গেল যে, কেবল খানা খাওয়ালেই মেহমানের হক আদায় হয়ে যায় না বরং তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করাও তার অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। (মাআরেফুল কোরআন)
(৪৫)فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ [সূরা সাফ্ফাত, আয়াত-৪৩]
নিয়ামতপূর্ণ উদ্যানে।
(৪৬)عَلَىٰ سُرُرٍ مُّتَقَابِلِينَ [সূরা সাফ্ফাত, আয়াত-৪৪]
তারা উঁচু আসনে সামনা-সামনি বসা থাকবে।
া ব্যাখ্যা ঃ এটা জান্নাতীদের মজলিসের চিত্র। তারা রাজাসনে মুখোমুখি হয়ে বসবে। কারও দিকে কারও পিঠ থাকবে না। এর বাস্তব চিত্র কি হবে সে সম্পর্কে আল্লাহ্ তাআলাই সঠিক জানেন। কেউ কেউ বলেন, মজলিসের পরিধি এত সুদূর
বিস্তৃত হবে যে, একে অপরের দিকে পিঠ করার প্রয়োজন হবে না। পক্ষান্তরে আল্লাহ্ তাআলা জান্নাতীদেরকে এমন দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি ও বাকশক্তি দান করবেন, যার ফলে তারা দূরে উপবিষ্টদের সাথে স্বাচ্ছন্দে কথাবার্তা বলতে পারবে। কেউ কেউ বলেন, জান্নাতীদের রাজাসন ঘূর্ণায়মান হবে, যার সাথে কথা বলতে চাবে, তার দিকেই ঘুরে যাবে (মাআরেফুল কোরআন)
৩৭
(৪৭)يُطَافُ عَلَيْهِم بِكَأْسٍ مِّن مَّعِينٍ [সূরা সাফ্ফাত, আয়াত-৪৫]
তাদেরকে ঘুরে ঘুরে পরিবেশন করা হবে এমন স্বচ্ছ সুরাপাত্র-
(৪৮)بَيْضَاءَ لَذَّةٍ لِّلشَّارِبِينَ [সূরা সাফ্ফাত, আয়াত-৪৬]
যা হবে সাদা রংয়ের, পানকারীদের জন্য সুস্বাদু।
(৪৯)لَا فِيهَا غَوْلٌ وَلَا هُمْ عَنْهَا يُـنـزَفُونَ [সূরা সাফ্ফাত, আয়াত-৪৭]
তাতে মাথা ঘুরবে না এবং তাতে তারা হবে না মাতাল।
৩০
া ব্যাখ্যা (৪৭,৪৮,৪৯) ঃ উপরোক্ত তিনটি আয়াতে জান্নাতের শরাব বা মদের আলোচনা করা হয়েছে। জান্নাতীদের কাছে এমন পানপাত্র আনা হবে অর্থাৎ জান্নাতী বালকরা আনবে, যা প্রবাহিত শরাবে পূর্ণ করা হবে। এই শরাব দেখতে হবে শুভ্র এবং পানকারীদের জন্য হবে সুস্বাদু। আয়াতে ‘غَوْلٌ’ এর অর্থ কেউ ‘মাথা ব্যথা’ এবং কেউ ‘পেট ব্যথা’ বর্ণনা করেছেন। আবার কেউ দুর্গন্ধ ও আবর্জনা; কেউ ‘মতিভ্রম হওয়া’ উল্লেখ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে শব্দটি উল্লেখিত সব অর্থেই ব্যবহৃত হতে পারে। হাকিম ইবনে জরীর (রহঃ) বলেন, এখানে غَوْلٌ অর্থ- আপদ (বিরক্তিকর)। অর্থাৎ জান্নাতের শরাব দুনিয়ার শরাবের মত বিরক্তিকর হবে না। মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, দুর্গন্ধ, মতিভ্রষ্টতা, বমি হওয়া, ফুসফুস রোগাক্রান্ত হওয়া ইত্যাদি কিছুই হবে না। স্বাদ ও তৃপ্তিতে থাকবে ভরপুর। জান্নাতী মদের নহরগুলো কখনও শুকিয়েও যাবে না। (মাআরেফুল কোরআন, উসমানী)
(৫০)وَعِندَهُمْ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ عِينٌ [সূরা সাফ্ফাত, আয়াত-৪৮]
তাদের কাছে থাকবে ডাগর ডাগর চোখের নারী (হুর), যাদের দৃষ্টি (আপন আপন স্বামীতে) থাকবে নিবদ্ধ।
(৫১)كَأَنَّهُنَّ بَيْضٌ مَّكْنُونٌ [সূরা সাফ্ফাত, আয়াত-৪৯]
(তাদের নিখুঁত অস্তিত্ব) এমন মনে হবে যেন তারা (ধুলোবালি হতে) লুকিয়ে রাখা ডিম।
৩৮
া ব্যাখ্যা (৫০,৫১) ঃ এ আয়াতদ্বয়ে যে নারীদের ছবি অঙ্কিত হয়েছে, তারা হল জান্নাতের হুর। যে সব স্বামীর সাথে আল্লাহ তাআলা তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপন করে দেবেন, তাদের দৃষ্টি আপন আপন স্বামীতেই আবদ্ধ থাকবে। তারা তাদের ছাড়া কোন ভিন্ন পুরুষের দিকে চোখ তুলে তাকাবে না। আল্লামা ইবনে জওযী (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, তারা তাদের স্বামীদেরকে বলবে, - আমার পালনকর্তার ইয্যতের কসম, জান্নাতে তোমার চেয়ে উত্তম ও সুশ্রী পুরুষ আমার দৃর্ষ্টিগোচর হয় না। যে আল্লাহ আমাকে তোমার স্ত্রী এবং তোমাকে আমার স্বামী করেছেন, সমস্ত প্রশংসা তাঁরই। আয়াতের আরও একটি ব্যাখ্যা আছে। কোন কোন মুফাসসির বলেন, তারা (এমনি তো অকল্পনীয় রূপসী হবেই, তাছাড়াও) আপন-আপন স্বামীদের চোখে এতটাই সুন্দরী ও স্বামীর প্রতি নিবেদিতা হবে যে, স্বামীদের মনে অন্য কোন নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করার বাসনাই হবে না। (قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ এ আয়াত সম্পর্কে ৯৯ নং আয়াতে আরো আলোচনা আছে) (তাওযীহুল কোরআন, মাআরেফুল কোরআন)
া “লুকিয়ে রাখা ডিম” এখানে জান্নাতের হুরগণকে লুকানো ডিমের সাথে তুলনা করা হয়েছে। আরবদের কাছে এই তুলনা প্রসিদ্ধ ও সুবিদিত (ভালভাবে জানা) ছিল। যে ডিম পাখার নীচে লুকানো থাকে, তার উপর বাইরের ধুলিকণার কোন প্রভাব পড়ে না। ফলে তা খুব স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন থাকে। তাছাড়া এর রঙ সাদা হলুদাভ হয়ে থাকে, যা আরবদের কাছে রমণীদের সর্বাধিক চিত্তাকর্ষক রঙ হিসেবে গণ্য হত। তাই এর সাথে তুলনা করা হয়েছে। কোন কোন তাফসীরবীদ বলেন, এখানে ডিমের সাথে তুলনা করা হয়নি; বরং ডিমের বাকলের অভ্যন্তরস্থিত ঝিল্লির সাথে তুলনা করা হয়েছে। উদ্দেশ্য এই যে, এই রমণিগন ডিমের ঝিল্লির ন্যায় নরম ও কোমল হবে। কেউ কেউ বলেছেন, উটপাখীর ডিমের ন্যায়, যার রঙ খুবই সুন্দর। বস্তুত তুলনা দেওয়া হয়েছে নির্মল ও সুবর্ণ হওয়ার ব্যাপারে, শুভ্রতার ব্যাপারে নয়। অন্যত্র বলা হয়েছে, كَانَّهُنَّ اليَاقوتُ وَالمَرجَانُ ‘যেন প্রবাল ও পদ্মরাগ’ (সূরা রহমান); অন্যত্র বলা হয়েছে كَأَمْثَالِ اللُّؤْلُؤِ الْمَكْنُونِ ‘যেন তারা লুকিয়ে রাখা মুক্তা’ (সূরা ওয়াকিআ)। (উসমানী, মাআরেফুল কোরআন)
(৫২)هَٰذَا ذِكْرٌ ۚ وَإِنَّ لِلْمُتَّقِينَ لَحُسْنَ مَآبٍ [সূরা সোয়াদ, আয়াত- ৪৯]
এ সব হল উপদেশ-বাণী। নিশ্চিতভবে জেনে রেখ, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য রয়েছে উত্তম ঠিকানা।
(৫৩)جَنَّاتِ عَدْنٍ مُّفَتَّحَةً لَّهُمُ الْأَبْوَابُ [সূরা সোয়াদ, আয়াত- ৫০]
স্থায়ী বসবাসের জান্নাত, যার দরজাসমূহ তাদের জন্য সম্পূর্ণরূপে উন্মুক্ত থাকবে।
া ব্যাখ্যা ঃ জান্নাতের দ্বার জান্নাতীদের প্রবেশের পূর্ব থেকেই উন্মুক্ত থাকবে। যাতে প্রবেশে বিলম্ব না হয়। সম্মানিত মেহমানের জন্য পূর্ব থেকেই দরজা খুলে রাখা হয়। জান্নাতীগণ নিজেরাই নিজেরদের কক্ষ চিনতে পারবে। জান্নাতীগণ যখন জান্নাতে গমন করবে, তখন কারো নির্দেশনা ব্যতিরেকে আপন আপন গৃহে চলে যাবে। চীৎকার দিয়ে দরজা খোলার প্রয়োজন হবে না। (উসমানী, মাআরেফুল কোরআন)
৩৯
া مُّفَتَّحَةً لَّهُمُ الْأَبْوَابُ -এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত হাসান বসরী (রহঃ) ও হযরত কাতাদা (রহঃ) বলেন, জান্নাতের দরজাগুলো এমন হবে যে, বাইর থেকে ভিতরে এবং ভিতর থেকে বাইরের দৃশ্য পরিস্কারভাবে দেখা যাবে। দরজাগুলো জান্নাতীর কথা বুঝবে এবং কথাও বলবে। সুতরাং যখন তাকে বলা হবে খুলে যাও, তখন খুলে যাবে। আর যখন বলা হবে বন্ধ হয়ে যাও, তখন বন্ধ হয়ে যাবে। (জান্নাতের স্বপ্নীল ভুবন)
(৫৪)مُتَّكِئِينَ فِيهَا يَدْعُونَ فِيهَا بِفَاكِهَةٍ كَثِيرَةٍ وَشَرَابٍ [সূরা সোয়াদ, আয়াত- ৫১]
সেখানে তারা হেলান দিয়ে বসে বহু ফলমূল ও পানীয়ের ফরমায়েশ (আদেশ)করবে।
া ব্যাখ্যা ঃ জান্নাতে বহু প্রকারের ফলমূল ও পানীয় রয়েছে। জান্নাতীদের চাহিদা মুতাবিক সেবকগণ ফল ও পানীয় সরবরাহ করবে। (উসমানী)
(৫৫)وَعِندَهُمْ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ أَتْرَابٌ [সূরা সোয়াদ, আয়াত- ৫২]
আর তাদের কাছে থাকবে এমন সমবয়স্কা নারী, যাদের দৃষ্টি (আপন আপন স্বামীতে) নিবদ্ধ থাকবে।
৩২
া ব্যাখ্যা ঃ أَتْرَابٌ -এটা تِرْبٌ -এর বহুবচন; অর্থ- সমবয়স্ক। এর এক অর্থ জান্নাতে পুরুষ ও নারী সব এক বয়সের হবে। দ্বিতীয় অর্থ হতে পারে, তারা সকলে (বহেশ্েেতর রমণীগণ) পরস্পরে সমবয়স্কা হবে। প্রথম অর্থে স্বামীদের সমবয়স্কা হওয়ার উপকারিতা এই যে, সমবয়সীর সাথেই প্রণয়-প্রীতি জমে ভালো, বন্ধুত্ব বেশি সুখকর হয়; এ কারণে মনের ও মতের মিল অধিক হয়। ফলে একে অপরের সুখ ও কৌতুহলের প্রতি অধিকতর লক্ষ্য রাখে। দ্বিতীয় অর্থে সমবয়স্কা হওয়ার উপকারিতা এই যে, তাদের পরস্পর ভালবাসা, স¤প্রীতি ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক হবে; সপতœীসুলভ (সতিনসুলভ), হিংসা-বিদ্বেষ ও ঘৃণা থাকবে না। বলাবাহুল্য, এটা স্বামীদের জন্যে পরম সুখের ব্যাপার। (মাআরেফুল কোরআন, তাওযীহুল কোরআন)
জান্নাতীদের বয়স সম্পর্কে তিরমিযী শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ঃ জান্নাতবাসী কেশবিহীন, দাড়িবিহীন ও সুরমায়িত চক্ষুবিশিষ্ট ত্রিশ বা তেত্রিশ বছর বয়সীর মত জান্নাতে প্রবেশ করবে।
৪০
তিরমিযীর আরেক সনদে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ঃ ছোট বয়সে কিংবা বৃদ্ধ বয়সে যে কোন বেহেশ্তী লোক (দুনিয়াতে) মারা যাবে, সে বেহেশ্তে ত্রিশ বছর বয়সী (যুবক) হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং এই বয়স (-এর আকৃতি) কখনও বৃদ্ধি পাবে না। (মেশকাত শরীফ)
হযরত ইকরিমা (রাঃ) বলেন, বেহেশ্তবাসী পুরুষ ও মহিলারা তেত্রিশ বছর বয়সী যুবক-যুবতীর ন্যায় হবে। তাদের দেহ তাদের পিতা হযরত আদম আলাইহিস্ সালামের ন্যায় ষাট হাত লম্বা হবে। পুরুষরা দাড়িবিহীন কালো চক্ষু বিশিষ্ট হবে। সবার শরীরে সত্তর জোড়া পোশাক থাকবে। প্রত্যেক জোড়ার রং প্রতি মুহূর্তে সত্তরটি রূপ ধারণ করবে। পুরুষ-মহিলা একের প্রতিচ্ছবি অন্যের শরীরে দেখতে পাবে। তাদের থুথু, শ্লেষ্মা ইত্যাদি হবে না। আরো বর্ণিত আছে, যদি কোন জান্নাতী মহিলা স্বীয় হাত দুনিয়াতে উন্মুক্ত করে, তাহলে আসমান-যমীন আলোকিত হয়ে যাবে। (তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ, তামবীহুল গাফিলীন)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই জান্নাতীরা যুবক হবে। ভ্রƒ-পলক ও মাথার চুল ছাড়া অন্য কোথাও কোন লোম থাকবে না। তারা আদম (আঃ) -এর ন্যায় ষাট হাত লম্বা হবে আর ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) এর ন্যায় তেত্রিশ বৎসরের যুবক হবে। গায়ের রং শুভ্র, পোশাকের রং সবুজ হবে। তারা সত্তর জোড়া পোশাক পরবে। প্রত্যেক প্রকার ভিন্ন রঙের হবে। তাদের হাতে দশটি আংটি থাকবে।
প্রথম আংটিতে লিখা থাকবে ঃ سَلمٌ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ
অর্থ ঃ ইহকালে তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছিলে- তাই তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। (সূরা রাআদ-২৪)
দ্বিতীয় আংটিতে লিখা থাকবে ঃ اُدْخُلُوْاهَا بِسَلمٍ امِنِيْنَ
অর্থ ঃ তোমরা শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে জান্নাতে প্রবেশ কর। (সূরা হিজর-৪৬)
তৃতীয় আংটিতে লিখা থাকবে ঃ تِلْكَ الْجَـنَّةُ الَّتِىْ اُوْرِثْـتُمُوْهَا بِمَاكُنْـتُمْ تَعْلَمُوْنَ
অর্থ ঃ কৃতকর্মের ফল হিসাবে তোমাদেরকে এ জান্নাত প্রদান করা হয়েছে। (সূরা যুখরুফ-৭২)
চতুর্থ আংটিতে লিখা থাকবে ঃ رُفِعَتْ عَنْكُمُ الْأحْزَانُ وَالْهُمُوْمُ
অর্থ ঃ তোমাদের দুঃখ-দুশ্চিন্তা দূর করে দেয়া হল।
পঞ্চম আংটিতে লিখা থাকবে ঃ اَلْبَسْنَاكُمُ الْحُلّى وَالْحُلَلَ
অর্থ ঃ আমি তোমাদেরকে পোশাক ও অলংকার পরিয়েছি।
ষষ্ঠ আংটিতে লিখা থাকবে ঃ وَزَوَّخْـنَاكُمُ الْحُوْرَ الْعِـيْنَ
অর্থ ঃ আমি তোমাদেরকে ডাগর ডাগর হুরদের সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ করলাম।
সপ্তম আংটিতে লিখা থাকবে ঃ فِيْهَا مَاتَشْتَهِيْـهِ الْأنْـفُسُ وَتَلَذُّ الْأعْيُنُ وَاَنْتُمْ فِيْهَا خلِدُوْنَ
অর্থ ঃ হৃদয় যা চাবে এবং চক্ষু যা উপভোগ করবে, সে সব কিছু সেখানে রয়েছে। আর তোমরা সেখানে অনন্তকাল থাকবে। (সূরা যুখরুফ-৭১)
৪১
অষ্টম আংটিতে লিখা থাকবে ঃ وَافَـقْـتُمُ النَّبِـيِّـيْنَ وَالصِّدِّيْـقِيْنَ
অর্থ ঃ তোমরা নবী ও সিদ্দীকদের অনুসারী ছিলে।
নবম আংটিতে লিখা থাকবে ঃ صِرْتُمْ شَبَابًا لاَّ تَهْرَمُوْنَ
অর্থ ঃ তোমরা চিরন্তন যুবক হলে- আর বৃদ্ধ হবে না।
দশম আংটিতে লিখা থাকবে ঃ سَكَـنْـتُمْ فِىْ جَوَارِمَنْ لاَّ يُـؤْذِي الْجِيْرَانَ
অর্থ ঃ তোমরা এমন সত্তার প্রতিবেশী হলে- যিনি প্রতিবেশীদের কষ্ট দেন না।
(তামবীহুল গাফিলীন)
আনাস বিন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করলে তাদের শারীরিক কাঠামো আদম (আঃ) এর অবয়বের ন্যায় ষাট হাত বরাবর হবে। সৌন্দর্য হবে হযরত ইউসুফ (আঃ) এর ন্যায়। বয়স হবে হযরত ঈসা (আঃ) এর ন্যায় ৩৩ বছর। তাদের ভাষা হবে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ন্যায় (অর্থাৎ আরবী ভাষা)। তরা হবে দাড়ি বিহীন, লোম বিহীন এবং কাজল কালো আঁখি বিশিষ্ট। (জান্নাতের স্বপ্নীল ভুবন)
(হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন ঃ জান্নাতীদের ভাষা হবে আরবী।) (জান্নাতের স্বপ্নীল ভুবন)
(৫৬)هَٰذَا مَا تُوعَدُونَ لِيَوْمِ الْحِسَابِ [সূরা সোয়াদ, আয়াত- ৫৩]
তোমাদেরকে এরই (অর্থাৎ নেয়াপূর্ণ জীবন) প্রতিশ্র“তি দেয়া হচ্ছে, হিসাব দিবসের জন্য।
া ব্যাখ্যা ঃ অর্থাৎ ৫২ হতে ৫৫ নং আয়াত পর্যন্ত যে সব নেয়ামতের কথা বর্ণিত হয়েছে, এ আয়াতে তার প্রতিশ্র“তি দেয়া হচ্ছে।
(৫৭)إِنَّ هَٰذَا لَرِزْقُنَا مَا لَهُ مِن نَّفَادٍ [সূরা সোয়াদ, আয়াত- ৫৪]
নিশ্চয়ই এটা আমার এমন রিযিক (দান), যা কখনও নিঃশেষ হবে না।
া ব্যাখ্যা ঃ এগুলো অবিচ্ছিন্ন ও চিরস্থায়ী নিআমত, যা কখনও শেষ হবে না।
(৫৮)لَهُم مَّا يَشَاءُونَ عِندَ رَبِّهِمْ ۚ ذَٰلِكَ جَزَاءُ الْمُحْسِنِينَ [সূরা যুমার, আয়ত- ৩৪]
তাদের প্রতিপালকের কাছে পাবে বাঞ্ছিত (যা চাবে) সবকিছু, এটাই সৎকর্মশীলদের প্রতিদান।
া ব্যাখ্যা ঃ ‘ لَهُم مَّا يَشَاءُونَ ’ এ আয়াত সম্পর্কে ২৫ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
৪২
(৫৯)وَسِيقَ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ زُمَرًا ۖ حَتَّىٰ إِذَا جَاءُوهَا وَفُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَامٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوهَا خَالِدِينَ [সূরা যুমার, আয়ত- ৭৩]
যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে চলেছে, তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা সেখানে পৌঁছাবে এবং তাদের জন্য তার দরজাসমূহ পূর্ব হতেই উন্মুক্ত থাকবে (তখন বড় আনন্দঘন দৃশ্য হবে)। তার রক্ষীগণ তাদেরকে বলবে, আপনাদের প্রতি সালাম। আপানারা সুখী থাকুন। আপনারা এতে (জান্নাতে) প্রবেশ করুন স্থায়ীভাবে থাকার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১:৩০
খাটাস বলেছেন: অনেক সুন্দর লেখা। প্রিয় তে রাখলাম। কিন্তু একটা প্রশ্ন আছে, দুনিয়ার নারীরা জান্নাতে কি পাবে, তার খুব বেশি বর্ণনা নেই। আমাদের মা বোন দের জন্য কি রাখা হয়েছে, সেই তথ্য গুলো তুলে ধরলে পোস্ট আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ হত। কারন জান্নাতে নারীদের অবস্থান একটা বিতর্কিত বিষয়। আশা করি জানাবেন। ভাল থাকবেন। প্লাস।