নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের গতি প্রকৃতি

রাজনীতির ইনসাইড অফসাইড

পীর হাবিরূর রহমান

রাজনৈতিক বিশ্লেষক। নির্বাহি সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

পীর হাবিরূর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাইয়ের সকল প্রেম বোনের স্নেহের কাছে ম্লান

০৯ ই মে, ২০১২ বিকাল ৪:৫৬





নিয়তির কাছে অকালেই হার মানতে হলো আপার। আপা চলে গেছেন। আপা চলে গেছেন মানে একেবারেই চলে গেছেন। আর কখনো টেলিফোন করে হাবিব তোর শরীর কেমন? খেয়াল রাখিস_ কথাটি গভীর স্নেহমাখা কণ্ঠে কেউ বলবে না। আমিও আর গভীর রাতে সিঙ্ হিকম্যান রোড, স্পার্কব্রুক, বার্মিংহামের দরজায় প্রবেশ করে দেখতে পাব না মায়ের মমতা নিয়ে উদ্বিগ্ন মমতাময়ী বোনের অপেক্ষা। মায়ের শূন্যতা বুঝতে না দেওয়া আবদারের বড় জায়গাটিই চলে গেল। এভাবেই সব চলে যায়। জীবনও যায়। গেল শনিবার রাতে ব্রেনস্ট্রোক করে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আপা। রবিবার সকালে বাসা থেকে বের হয়ে অফিসে যাওয়ার পথে ভাবীর টেলিফোনে খবর পাই। লন্ডন থেকে বড় ভাগি্ন সুলতানা শেফা খবর দেয় অবস্থা ভালো নয়। কদিন বিক্ষিপ্ত ভাবনায় কেটেছে। স্মৃতির ক্যানভাসে সুনামগঞ্জের এক মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারের আট ভাই-বোন নিয়ে বাবা-মায়ের সাজানো সংসারচিত্র যেন একমুহূর্তে নস্টালজিয়ায় কাতর করে দিল। চাকরির সুবাদে বাবা নানা জায়গায় থাকতেন। পরিবারের সবার বড় ভাই হাঁটাচলা করতে, কথাবার্তা বলতে পারলেও প্রতিবন্ধী ছিলেন। পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান হিফজুন্নেসা খানম জুঁই ছোট ভাইবোনগুলোকে স্নেহ-মমতা-গাইডলাইন দিয়ে আগলে রাখতেন। এখনো মনে পড়ে '৮১ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিলেও আমার '৮০ সালে এসএসসি দেওয়ার কথা ছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে একটি বছর কেজি স্কুলে কেটেছে আমার।



যুদ্ধের পর কালীবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে '৭২ সালে ক্লাস ওয়ান থেকে অটোপাস হয়ে টুতে ভর্তি হলে ওই স্কুলের শিক্ষিকা জুঁই আপার সঙ্গেই আমার যাওয়া-আসা হতো। আপা বদলি হয়ে চলে গেলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আমার তখন মন খারাপ করত। '৭৩ সালে আমি ভর্তি হয়ে যাই সরকারি জুবিলি উচ্চবিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে। রেজাল্ট ভালো হওয়ায় আমার বেতন দেওয়া লাগত না। দিতে হতো টিফিন ফি। একবার টিফিন ফি জমা না দিয়ে জীবনে প্রথম আপার একখানি থাপ্পড় খেয়েছিলাম। মায়ের চেয়ে আমার দুরন্ত শৈশব কেটেছে আপার শাড়ির অাঁচল ধরে। আপার সঙ্গে মাঝেমধ্যে তার বান্ধবীদের বাসায় যাওয়া, আপার কাছে পড়াশোনা, বই-খাতা বুঝে নেওয়া, মাথা আচড়ানো থেকে স্কুল ড্রেসআপ সব সেরে নিতাম। স্কুল ফলাফল নিয়ে আপার সঙ্গে প্রথম বোঝাপড়া করতে হতো। '৭৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে বাসায় ফিরে দেখি আত্দীয়স্বজনের আনন্দ-কোলাহলমুখর পরিবেশ। কারণ পর দিন ৩১ ডিসেম্বর আপার বিয়ের অনুষ্ঠান ঘিরে প্রস্তুতি চলছে। শীতের গোধূলীলগ্নে লাজুক মুখ নিয়ে ঘরের এক কোণে চুপচাপ বসে আছেন আপা। ফলাফল নিয়ে আপার কাছে গেলাম। তারপর আপা আমাকে নিয়ে খেতে বসলেন। সারা দিন আপা অপেক্ষায় ছিলেন ফলাফল নিয়ে আমি ফিরে এলে আমাকে নিয়ে খেতে বসবেন। তখন যোগাযোগব্যবস্থা ছিল করুণ। লন্ডন থেকে আমার এক মামা দুটি মাইক্রোবাস এনেছিলেন। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক পাথরে পাথরে বেহাল দশা। আপার বিয়ের রাতে আমি সবার আড়ালে পুকুরপাড়ে গিয়ে গোপনে অনেকক্ষণ কেঁদেছিলাম। আপা শ্বশুরবাড়ি চলে যাবেন, এই ভাবনায় আমার ভেতরটা ঢুকরে কেঁদে উঠেছিল। আপার সঙ্গে আমাকেও দেওয়া হয়েছিল। তখন বড় বোনদের বিয়েতে ছোট ভাই-বোনদের সঙ্গে যাওয়ার রেওয়াজ ছিল সিলেট অঞ্চলে। আপার বাসর রজনীতে আমাকে তার শ্বশুরবাড়ির বাংলোঘরে থাকতে বলা হলে আমি কান্না জুড়ে দিলাম। আমার আবদার আপার সঙ্গেই থাকব। আমি আপার সঙ্গেই ঘুমিয়েছিলাম। পরবর্তীতে বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে উপলব্ধি করেছি মধ্যবিত্ত পরিবারের টানাপোড়েনের সংসার হলেও আভিজাত্য, শিক্ষা, আদব-কায়দা, রুচির প্রশ্নে একটি গ্রাম্য মূর্খ বিলেতপ্রবাসী পরিবারের পাত্রের সঙ্গে আমার শান্ত, নম্র, ভদ্র, বিনয়ী, অমায়িক ব্যবহারের আত্দমর্যাদাসম্পন্ন বড় আপার বিয়েটি ছিল অসম।



বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কানে এসেছিল আমরা ভাই-বোনেরা তখন ছোট ছোট থাকায় এবং আমার বাবা একজন সহজ-সরল পরহেজগার ইবাদত-বন্দেগিতে নিমগ্ন মুমিন মুসলমান ভালো মানুষটির আস্থার সুযোগ নিয়ে আটপৌরে মায়ের ঘনিষ্ঠ স্বজনদের কোনো একজন তার সন্তানদের কাউকে লন্ডন নিয়ে যাবে, এই শর্তে বিয়েটি পাকা করেছিলেন। বিয়ের পর যখন আমার আপার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠতে থাকল তখন পরিবার থেকে বিবাহবিচ্ছেদের কথা বলা হলেও পারিবারিক সম্মানের কথা ভেবে আপা রাজি হননি। সারাটি জীবন অন্তহীন বেদনা ও দুঃখ সয়ে গেছেন বিনা প্রতিবাদে। '৭৬ সালে লন্ডন চলে গেলে তার কোল আলো করে আসে শেফা। মেধাবী শেফা এখন বুটসের একটি ব্রাঞ্চের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছে ফার্মাসিস্ট হয়ে। তার স্মার্ট সুদর্শন স্বামী সফল ব্যবসায়ী। '৭৬ সালে লন্ডন গেলে আপাকে আর দেশে আসতে দেওয়া হয়নি। একপর্যায়ে বিষণ্নতার চাদরে তার জীবন ঢাকা পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শে পরিবারসহ তিন মাসের জন্য বেড়াতে আসেন দেশে। '৮৬ সালে ক্লাস সিঙ্ েরেখে যাওয়া আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুণ। তখন শেফা ছাড়াও আমিনুর রহমান, শাবানা রহমান ও তৌফিকুর রহমান_ এ চার সন্তানের জননী তিনি। আমাদের বাড়িতে দীর্ঘদিন পর ঈদের আনন্দের চেয়েও মহাআনন্দ বয়ে যায়। লন্ডনপ্রবাসী বোনটির জন্য জায়নামাজে বসে কাঁদতে কাঁদতে আমার মা যেন অন্ধ হয়ে যেতেন। আমার মায়ের সুরেলা কোরআন তিলাওয়াতের আওয়াজ এখনো আমি শুনতে পাই। অনেক দোয়া-দরুদ জানতেন। আল্লাহর ওপর অসীম আস্থা ছিল বাবা-মায়ের। তিন মাসের আনন্দ শেষে লন্ডন ফিরে যাওয়ার পর আপার কোল আলো করে সামিউর রহমান পৃথিবীর মুখ দেখে। সেখানে শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে দিয়ে আপা সন্তানদের সাফল্যে নিজের সুখ খুঁজেছিলেন। তার বড় মেয়েই ফার্মাসিস্ট নয় দ্বিতীয় সন্তান আমিনুর রহমান একজন ডাক্তার হয়েও বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটিতে খুতবা পড়ায়। ছেলেবেলায় কিশোরদের মধ্যে দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তৃতীয় সন্তান শাবানা এমএসএস করে লন্ডনে শিক্ষকতা করে। চতুর্থ তৌফিক একজন স্বনামধন্য ডেন্টিস্ট। সবার ছোট সামি একজন অ্যাকাউন্ট্যান্ট। '৯৮ সালে লন্ডন গেলে একদিন দুপুরে বার্মিংহাম গিয়ে খাবার কথা ছিল বন্ধুবান্ধব নিয়ে। পর দিন ভোর ৬টায় পেঁৗছে দেখি নিদ্রাহীন বড় আপা গরম খাবার নিয়ে মহাআনন্দে বসে আছেন ভাইটির জন্য। বন্ধুবান্ধব সবাই গেলে আপা খুশি হতেন খুব। কত কত রান্না, পাগল হয়ে যেতেন। একবার সেলিম চৌধুরী, বুলবুল জিলানীকে দুটি সোয়েটার দিলেন। বললাম ওরা এটা পড়বে না। আপার কি লজ্জা। প্রতি বছর সামারে লন্ডন গেলে আপার খুশি দেখে কে? প্রথম দর্শনেই আমাকে ১০০ পাউন্ড পকেটে গুঁজে দিয়ে শপিং মলে নিয়ে গিয়ে বা সন্তানদের দিয়ে পাঠিয়ে কাপড়-চোপড় কিনিয়ে দিতেন। যতবার আপার মুখোমুখি হয়েছি ততবার আমি সেই ছেলেবেলার মতোই জেদ, আবদার, মেজাজ সব দেখিয়েছি। ২০০২ সালে নতুনধারা নামে একটি দৈনিকের সঙ্গে যুক্ত হলে প্রকাশনালগ্নেই সেটির মৃত্যু হয়। আমি মানসিক বিপর্যয় ও বেকারত্বের মুখোমুখি হয়ে লন্ডনে চলে যাই। তিন মাসের জন্য সেখানে ঘুরে বেড়াই।



মামাত ভাই সৈয়দ হাবিবুর রহমান শিশু তখন আমাকে সার্বক্ষণিক সঙ্গ দেয়। ফেরার সময় আপার বার্মিংহামের বাড়িতে সুনামগঞ্জ শহরের প্রবাসী স্বজনদের ডেকে আড্ডার আসর বসাই। বুকভরা অন্তহীন মায়া নিয়ে আপা সবাইকে স্নেহের বাঁধনে জড়াতেন। ব্রাইটন থেকে ইমানুজ্জামান চৌধুরী মহি, লন্ডন থেকে ফজলুল কবির তুহিন, তার অকালপ্রয়াত স্ত্রী মান্না রহমান, আমজাদ শায়েল, ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন, অ্যাডভোকেট ফারজানা শীলা, উত্তর থেকে তৌফিক দোলনসহ অনেকেই ছুটে আসে। আপার খুশির শেষ নেই। দেশে ফেরার দিন আপা হাসতে হাসতে দেড় হাজার পাউন্ড দিয়ে বললেন, এখন অনেক বড় হয়েছিস। ছেলের বাবা হয়েছিস। ধীরস্থির জীবন যাপন করিস। শেফার বিয়ে, আমিনের বিয়ে আপার টেলিফোনে আমি না বলতে পারিনি। ছুটে গিয়েছি। '৯৯ সালে আমি লন্ডন থাকা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়ে আবু মুসা হাসান, মাহমুদ হাসান, আইনি ইলিয়াসরা গেলে তাদেরও সেখানে নিয়ে যাই। আমিনের সঙ্গে দাবায় হেরে যাওয়া আবু মুসা হাসান আলাপকালে জানান, আপা আর তিনি একই সময়ে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। আপার খুব ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছিলেন নাজমা আপা। নাজমা আপা তার ভাই-বোনদের মধ্যে সবার বড় ও খুব শান্ত-ভদ্র ছিলেন। নাজমা আপা আরও আগেই চলে গেছেন। তার বান্ধবী নিলু আপা এখন কানাডায় বাস করেন। লুৎফা আপা আমাদের পাড়ায়ই আছেন। রত্না চক্রবর্তী হবিগঞ্জে, কল্পনা ভট্টাচার্য সুনামগঞ্জ শহরেই আছেন। আপার বান্ধবীরা সবাই সুস্থ আছেন। আপার বুকের গভীরে অন্তহীন বেদনা, ছোট ছোট দুঃখ, দীর্ঘশ্বাসের ছায়া কখনোই মুখে পড়ত না। মায়ায় ভরা মুখখানি তার ছিল শাশ্বত বাঙালি মায়েদের মুখচ্ছবি। শালীনতার নেকাবে ঢাকা তার জীবন ছিল আটপৌরে। কলেজে যাওয়া-আসার বেলা থেকেই মাথার ওপরে শাড়ির অাঁচল টানা থাকত। তার চেহারার মাধুর্যে যে কেউ তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতেন। ৫০-এর পর তার শরীরে বিষণ্নতা থেকে প্রথমে ডায়াবেটিস বাসা বাঁধল। তারপর উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিল। আথ্রাইটিস ঠাঁই নিল।



একবার ব্রেনস্ট্রোক হয়ে গেল। কয়েকদিন আগে টেলিফোনে বলেছিলাম, তুমি দেশে বেড়াতে আসো। আমি তোমার প্লেন ফেয়ার দেব। হাতখরচ দেব। আপা হেসেছিলেন। যেন ছোট্ট ছেলে বলছে কি! কথা দিয়েছিলেন কিছুদিন পর আসবেন। আপা কথা রাখেননি। সারা জীবন কথা রেখেছেন। ভাই-বোন, আত্দীয়-অনাত্দীয়, সন্তানদের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। দেশে না এলেও অনেক গরিবের জন্য টাকা পাঠাতেন। আমার অন্তর জন্মের আগে নবজাতকের জন্য অনেক সুন্দর সুন্দর পোশাকই নয়, কসমেটিকসও পাঠালেন। একজন মা হিসেবে সন্তানের জন্য তার হৃদয়টা বিলিয়ে দিতে কার্পণ্য করেননি। একজন বউ হিসেবে শ্বশুরকুলের জন্য হাসিমুখে কম করে যাননি। একটি একান্নবর্তী পরিবারের বড় বোনের জায়গা থেকে ভাই-বোনদের জন্য অগাধ স্নেহ-মমতা বিলিয়েছেন। তার ছোট ছোট দেবর-ননদের নামের সঙ্গে ভাই-বোন শব্দজুড়ে ডাকতেন। বৃহস্পতিবার সংজ্ঞাহীন অবস্থায় আপা শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। এই লেখাটি যখন লিখছি তখন তার দুই কন্যা শেফা ও শাবানা স্নেহময়ী মাকে শেষবারের মতো গোসল করাতে ছুটেছে মসজিদে। জুমার পর নামাজে জানাজা শেষে তাকে চিরনিদ্রায় সেখানে শায়িত করা হবে। আপার মায়ার মুখখানি কাফনের ভেতর থেকে কেমন শান্ত দেখাচ্ছে আমি চোখ বুজে ঠিক দেখতে পাচ্ছি। আমি ঠিক শুনতে পাচ্ছি আমার আপাকে তার সন্তানরাও আর মা বলে ডাকছে না। কালিমা শাহাদাত পাঠ করতে করতে অনেকের সঙ্গে বলছে, লাশ উঠাও, লাশ নামাও। পৃথিবীর সব দুনিয়াদারি থেকে নিজেকে দূরে রেখে আল্লাহর ইবাদত ও সন্তানদের নিয়ে মগ্ন থাকা ঘাসের মতো সরল বাবা, মাটির মমতা মাখানো বড় মেয়েটিকে নিয়ে সব সময় বলতেন, 'আমার জুঁই আমাকে খুব শান্তি দিয়েছে'। আপা সবাইকে শান্তি দিলেও অনেকেই আপাকে পৃথিবীতে শান্তির মুখ দেখতে দেয়নি কখনোসখনো। আপাকে যতবার দেখেছি ততবার কবি আবুল হাসানের কবিতার চরণ বুকের ভেতরে উদ্ধৃত হয়েছে_ 'ঝিনুক নীরবে সহো/ঝিনুক নীরবে সহে যাও/বুকেতে বিষের বালি/মুখ বুজে হাসিতে মুক্তো ফলাও।' বুকভরা বেদনা নিয়ে হাসিতে মুক্তো ফলিয়ে গেছেন আপা। লন্ডন থেকে হিউমারাস আপা টেলিফোনে কথা বলতেন তার ছোট আদরের ভাই মিসবাহর সঙ্গে। মিসবাহ নানা গল্প শোনাত, আপা ওখানে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতেন। সবাইকে শান্তি দিয়ে কী শান্তির ঘুমই না ঘুমাচ্ছেন আপা। আপা তুমি ঘুমাও। তুমি ঘুমাও। অনেক বছর পর শান্তির ঘুম ঘুমাও।



আল্লাহর ফেরেশতারা তোমার জন্য বেহেশতের দরজা খুলে দেবেন। তোমাকে আর কেউ কষ্ট দেবে না। কষ্ট যা পাওয়ার এই পৃথিবীর বুকে সয়ে গেলে তুমি। প্রিয় পাঠক, কবি আবু হাসান শাহরিয়ারের কবিতার চরণ আমার বোনের জীবনে ষোলআনা পূর্ণ হয়েছে। কবি বলেছেন, 'ভাইয়ের সকল প্রেম বোনের স্নেহের কাছে ম্লান'। আবু হাসান শাহরিয়ার তার বোনদের একখানি কবিতার বই হলেও উৎসর্গ করে দিয়ে গেছেন। আমি আমার মমতাময়ী বোনের জন্য কিছুই দিতে পারিনি। অকৃতজ্ঞ নির্লজ্জের মতো দুই হাত ভরে নিয়েছি শুধু। এই জীবনে সুযোগ পেলে আমি আমার কৈফিয়ত দিয়ে যাব আত্দজীবনী লিখে। কতটা নির্দয় মানুষের জীবন কখনো কখনো হয়। কতটা নির্দয় হয় কোনো কোনো মানুষের মন। সেই চিত্র আমি অনাগত প্রজন্মের জন্য লিখে রেখে যাব। পাঠকের জায়গা কেড়ে নিয়ে ব্যক্তিগত জীবনের অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য দুঃখিত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.