নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাধারণ পরিবহন

চাপা মারাই আমার কাজ

ট্রাক

সমগ্র বাংলাদেশ আজ ৫টন। তার মধ্যে আমি একাই .১ টন।

ট্রাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

হরর (!) গল্পঃ মামা

০৮ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২১

১।

ফুফাতো বোনের বাসায় বেড়াতে আসছি। বুঝতে শেখার পর এই প্রথম আসলাম। বাসা বাংলাদেশের এক কোনায়। এ কারনেই আসা হয় না। দুলাভাই বন বিভাগের কর্মকর্তা। বাসা তাই বনের ভিতরেই। নাদিম নামের ফুটফুটে এক ছেলে আছে তাদের। দেখলেই আদর করতে মন চায়। এখনো স্কুলে যায় না। ফটফট করে কথা বলে।

আপার বাসায় পৌছুলাম সন্ধ্যার দিকে। বাসাটা ভয়ানক নির্জন। এই সন্ধ্যাতেই মধ্যরাতের অন্ধকার। সারাজীবন বিভিন্ন ভুতের গল্পে যে ধরনের বাড়ির কথা পড়েছি, অনেকটাই সেরকম। কে জানে,এ বাড়ির আশে পাশেই তেনাদের আস্তানা কিনা? আমি আবার ভয়ানক ভীতু। একা একা এসে ভুলই করলাম কিনা কে জানে?

হাত মুখ ধুয়ে আসতেই দেখি নাদিম মায়ের আচল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি কাছে ডাকলাম। আসতে লজ্জা পাচ্ছে দেখে ও’র মা আমার দিকে ঠেলে দিলেন, ‘যাও, মামা হয়।’ আমি হাত বাড়িয়ে কোলে নিয়ে একটা চুমু দিলাম। ও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা কামড় বসিয়ে দিল। আমি আউ করে উঠলাম। ওর মা ধমক দিলেন, ‘ছিঃ বাবা, মামার সাথে এমন করতে হয়?’

আমি ব্যাথা ও রাগ দুটোই সামলে বললাম, ‘না না সমস্যা নেই, ছোট মানুষ।’

ওর মা সরে গেলে দিলাম এক চিমটি। পিচ্চি ব্যথায় না কেদে আবার আমাকে কামড়াতে উদ্যত হল। ও’র ছোট ছোট সাদা দাত টিউব লাইটের আলোয় ঝিকিয়ে উঠল। আমি সরে গিয়ে বাঁচলাম। এই শান্ত চেহারার পিচ্চি যে এত ত্যাদড় তা কে জানত?



২।

রাতে ভোজনটা ভালই হল। এই প্রথম ভাই এসেছে বলে আপা জবরদস্ত রান্না করেছে। ভুরিভোজন এবং ভ্রমন জনিত ক্লান্তিতে দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। গভীর রাতে হঠাত ঘুম ভেঙ্গে গেলো। বিছনায় উঠে বসে শুনি পাশের রুমে নাদিম চিৎকার করছে, আর ওর মা থামানোর চেষ্টা করছে। আমি আবার ঘুমাতে যেতেই শুনি নাদিম চিল্লাচ্ছে,

- আমি মামা খাবোওওওওওওওও

- খেয়ো বাবা, এখন না কালকে খেয়ো।

- না এখুনি খাবোওওওওওও, মামা খাবোওওওওওও

- ছিঃ, লক্ষ্মী বাবা আমার। কাদে না, মামা বেড়াতে আসছে না। পাশের রুমে ঘুমাচ্ছে, খুব টায়ার্ড, ঘুম ভেঙ্গে গেলে তোমাকে দুষ্টু বলবে না?

- বলুক, আমি মামা খাবোওওওওওওও

আর ঘুম, এই কথা শুনে তো আমার হাত পা পেটের ভিতর সেধিয়ে গেলো। কয় কি পুলা। জঙ্গলে থেকে থেকে এরা কি মানুষ খেকো হয়ে গেছে নাকি? এ জন্যই সে সময় কামড় দিসিল। হায় হায় রে! এই ছিল কপালে? ইয়া মাবুদ এই রাতটা পার করে দাও। কাল সকালেই এখান থেকে ভাগব।

চিল্লা চিল্লিতে দুলাভাইয়ের ঘুম ভাঙল এতক্ষণে। আপাকে জিজ্ঞাসা করলেন,

- কি হইসে? চিল্লায় কেন এত?

- মামা খাবে।

- তো দাও না, পাশের রুমেই তো আছে।

- এত রাতে কি সব খাওয়া দাওয়া। পিয়াসের ঘুম ভেঙ্গে যাবে না?

- আরে বাচ্চা থামাও আগে। যে চিল্লানি দিচ্ছে, ঘুম এতক্ষণে ভেঙ্গেই গেসে।

- তারপরও বাচ্চাদের যতসব বাজে অভ্যাস করানো।

- আরে আজকের মত থামাও। পরে দেখা যাবে।

এবার সব আশা ভরসা গেলো। সন্ধ্যায় যা ভাবসিলাম তাই হচ্ছে। জঙ্গলে থাকতে থাকতে এরা ফুল ফ্যামিলি ভ্যাম্পায়ার বা ওয়ারউলফ টাইপ কিছু একটা হয়ে গেছে, এ জন্যই বোধহয় আপা দুলাভাই বেশি একটা এখান থেকে বের হন না।

শুনতে পাচ্ছি আপা এগিয়ে আসছে, আমি বিছানার সাথে আটকে গেলাম। উঠে দরজাটা যে বন্ধ করব সেই শক্তিটুকুও আর অবশিষ্ট নেই। আপা আসছে আর বলছে,

- তুমি খুব দুষ্টু, এত রাতে মামা খেতেই হবে?

নাদিম কিছু বলল না। আনন্দসূচক একটা শব্দ করল। আপা এগিয়ে আসছে, আমি কোলবালিশ চেপে ধরে দোয়া দরুদ যত আছে সব পড়তে লাগলাম। জীবনের সব অপকর্মের কথা মনে পড়তে লাগল, ভাবসিলাম পরে কোনো একসময় তওবা করে ভালো মানুষ হয়ে যাব তা আর হল না।



৩।

খুট করে দরজা খোলার শব্দ হল। আমি মশারির ভিতর ততক্ষণে ঘামতে শুরু করেছি। আপা মৃদু স্বরে ডাক দিলেন, ‘পিয়াস, জেগে গেছিস?’

আমি জবাব দিলাম না। সত্যি কথা হল জবাব দেয়ার শক্তি নেই। আমার চিৎকার দিতে মন চাচ্ছিল। বলতে চাচ্ছিলাম, আপা আমাকে ছেড়ে দাও প্লীজ, ‘আমিতো তোমার কোনো ক্ষতি করি নাই।’ কিন্তু কোনো আওয়াজ বেরুল না।

আপা এগিয়ে এসে লাইট জ্বালালেন। নাদিম ডাক দিল, ‘মামাআআআআআ’

আপা দ্রুত ওর মুখ চাপা দিলেন, ‘হিসসসস, মামার ঘুম ভেঙ্গে যাবে।’

শুনে আমার বুকটা ধড়াস করে উঠল। বুক ভেঙ্গে কান্না আসতে চাইল।

আপা এগিয়ে আসছেন আমার বিছানার দিকে। আমার মাথার দিকেই আসছেন। শেষবারের মত কালিমা পড়ে চোখ শক্ত করে বুজে পড়ে রইলাম। একেকটা সেকেন্ড অনন্ত কালের মত লাগছে। তারপর.........

তারপর যেন কেটে গেলো অনন্ত কাল। সময় যেন স্থির হয়ে গেছে, আমি আশঙ্কা করছি যে কোনো মূহুর্তে আমার ঘাড়ে চেপে বসবে ছোট ছোট দাতওয়ালা মুখ। অপেক্ষায় আছি তো আছিইইইইইইইইই......

অপেক্ষার চাদর ফুঁড়ে আপার কণ্ঠ শোনা গেলো,

- কিরে পিয়াস তুই এরকম নাক মুখ কুচকে আছিস কেনো? আর এত ঘামছিস কেনো?

বলে আমার কপালে হাত রাখলেন। আমি একটা আর্তচিতকার দিয়ে উঠে বসলাম।

তাকিয়ে দেখি আপা সামনে বসে আছে, কোলে নাদিম কি যেন একটা খাচ্ছে।

আপা বললেন,

- কিরে স্বপ্ন দেখতেসিলি? এত ঘামছিস কেনো, গরম বেসি লাগতেসে?

আমি আমতা আমতা করে হ্যা না এর মাঝে কিছু একটা বললাম।

আপা নিজ থেকেই বলা শুরু করলেন,

- এই বান্দরটারে নিয়ে আর পারি না। জঙ্গলে থেকে থেকে পুর বান্দর হচ্ছে। দ্যাখনা এত রাতে বলে মামা খাবে। দিনে ৫/৬ প্যাকেট মামা খাওয়া লাগে।

আমি শুকনো মুখে জিজ্ঞাসা করলাম, মামা কি?

- আরে প্রাণ কোম্পানি বানাইসে, চকলেটের মত।

ভালো করে তাকিয়ে দেখি নাদিম ওয়েফারের মত কিছু একটা খাচ্ছে। আমার জানে এতক্ষণে পানি এল। আপা আবার বললেন,

- তুই এত ঘামছিস কেনো? খারাপ স্বপ্ন দেখছিস? পানি খাবি?

আমি মাথা ঝাকালাম। আপা মাথার কাছে ফ্রিজ থেকে পানি এনে দিলেন।

এতক্ষণে কাহিনী বুঝলাম। নাদিম শুধু মামা খেতে চায় বলে দুলাভাই অনেকগুলো কিনে এনে ফ্রিজে রেখে দিয়েছিলেন। আর সেই ‘মামা’ নিতেই আপার এই রুমে আগমন।

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে পানির গ্লাস ফেরত দিলাম। আপা মশারি গুজে দিতে দিতে বললেন,

- ঘুমা। নতুন জায়গায় এরকম হয়।

আমি আর কি করি আপার আদেশ মানার চেষ্ট করতে লাগলাম।

বড় বাচা বেচে গেছি এবার। শালার প্রাণ কোম্পানি, দুনিয়ায় নাম আর নাই? আজকে আমি হার্ট অ্যাটাক করলে কি তোরা দায়ভার নিতি?

মন্তব্য ৩০ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৩০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৫

খেয়া ঘাট বলেছেন: হরর গল্প পড়ে এতো হাসি আগে হাসি নাই। ভালো লাগলো।

০৮ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৯

ট্রাক বলেছেন: আপনার ভাল লেগেছে জেনে আমার খুব ভাল লাগ্ল

২| ০৮ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৭

খেয়া ঘাট বলেছেন: বনবিভাগের কর্মকর্তা। কত স্মৃতি মনে পড়ে গেলো।

০৮ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১০

ট্রাক বলেছেন: আপ্নিও ছিলেন নাকি বনে?

৩| ০৮ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৪

মনিরা সুলতানা বলেছেন: মামা র হরর কাহিনী মজা লাগ্ল ......

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:২৪

ট্রাক বলেছেন: হি হি

৪| ০৮ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৭

খেয়া ঘাট বলেছেন: হুমম, ছিলাম। বনের নির্জনতা খুব বেশী ভালো লাগতো।
চারপাশে বন, মাঝখানে সরকারি অফিস। আহারে..........

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:২৪

ট্রাক বলেছেন: হুম

৫| ০৮ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪০

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~

০৯ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:০৮

ট্রাক বলেছেন: B-)

৬| ০৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ৮:০৩

আশাবাদী ডলার বলেছেন: এটা তো ফানি হরর গল্প। অনেক মজা পেলাম :D

০৯ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:০৯

ট্রাক বলেছেন: :P

৭| ০৯ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:০৫

রেজোওয়ানা বলেছেন: মজার ভুতের গল্প!!

০৯ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:১০

ট্রাক বলেছেন: ;) ;)

৮| ০৯ ই জুন, ২০১৩ রাত ২:৫৪

দুঃখিত বলেছেন: বেচারা পিয়স ভাই :) কয়দিন পর দেখা যাবে - চাচা, খালা , ফুফু সব নামেই কিছু না কিছু বের হইছে ;)



অঃ টঃ ভাই প্রান কিন্তু বিলায় আছে , নগদে তাগো জুস আর আচ্চার নিয়া কিন্তু এলাহি কান্ড হইতাছে ;) :) :)

০৯ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:১০

ট্রাক বলেছেন: !:#P

৯| ০৯ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:৫১

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: হা হা হা জটিল ! ৪র্থ ভালোলাগা :)

ভালো থাকবেন সবসময় :)

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:২৩

ট্রাক বলেছেন: আপনিও

১০| ০৯ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:০৭

অহন_৮০ বলেছেন: =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ মজাই লাগছে

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:২৫

ট্রাক বলেছেন: ;)

১১| ১১ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:১৪

মামুন রশিদ বলেছেন: ভয় পাওয়ার বর্ননা খুব মজার হইছে ।

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:২৬

ট্রাক বলেছেন: অনেক থ্যাঙ্কিউ!

১২| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৪৭

অপ্রচলিত বলেছেন: চমৎকার হরর! গল্প :) হাসতে হাসতে শেষ :P :P

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৩

ট্রাক বলেছেন: :!> :!> :!>

১৩| ৩১ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:২৬

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: হা হা হা !! এইটা জোশিলা হইছে :P :P :P

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:২৭

ট্রাক বলেছেন: :-B =p~

১৪| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:৪১

নিয়ামুল ইসলাম বলেছেন: =p~ =p~ =p~ =p~

০২ রা মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৮

ট্রাক বলেছেন: :-B :-B B-)

১৫| ০২ রা মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৭

ফয়সাল আহমেদ ইমন বলেছেন: :-& :-& :-& :-& :-& :-& :-&

০৯ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:১৮

ট্রাক বলেছেন: ????????????

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.