নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাধারণ পরিবহন

চাপা মারাই আমার কাজ

ট্রাক

সমগ্র বাংলাদেশ আজ ৫টন। তার মধ্যে আমি একাই .১ টন।

ট্রাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

থ্রিলার গল্পঃ বদলা

১৫ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৩

উপক্রমনিকা

সবাই বলেছিল,ওরা অনেক তুই একা পারবি না।

আমি শুধু বলেছিলাম , তোরা সাথে আছিস কিনা বল ?

সবাই বলল, তা তো আছি কিন্তু ভেবে দ্যাখ, ক্ষমতা কিন্তু ওদের হাতে।

আমি জবাব না দিয়ে চুপ করে থাকলাম। অনেক দিন ধরেই চুপ করে আছি। এবার কিছু করার পালা।

আমার প্রতিটি রক্ত কনায় প্রতিশোধের আগুন।

ক্যাম্পাসে ওরা আমাকে সবার সামনে পিটিয়েছিল। অবশ্য এটা ওদের কাছে নতুন কিছু নয়। ওদের মন চাইলেই ওরা কাউকে না কাউকে এভাবে ধরে এনে পিটায়। আমকে পিটানোর কারণটা অবশ্য গুরুতর-ই। ক্যাম্পাসে ওদের বিরোধী গ্রুপের লীডার আমি। একসয় অবশ্য একই গ্রুপে ছিলাম। তখন আমি নিজেও এরকম কয়েকটায় ছিলাম। অবশ্য সরাসরি কারো গায়েই আমি কখনো হাত তুলিনি। শুধু দেখেছি।

পিটানোর সময় কলেজের প্রতিটা ছেলে মেয়ে আমাকে দেখছিল। তাদের চোখে দয়া ছিল না, ছিল আতঙ্ক। এই কাজটা করার জন্যই আমাকে মারা হচ্ছিল। আমার কোনো দোষ ছিল না, শুধু সবার মধ্যে ভয় আর আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য আমাকেই বলির পাঠা বানান হল। যাতে ভবিষ্যতে ওদের বিরুদ্ধে কেউ না দাঁড়ায়।

মার খেয়ে মাস দেড়েক হাসপাতালে ছিলাম। এর মধ্যে যারা আমাকে মেরেছে তাদের বড় ভাই মানে গডফাদার এসে আমাকে দেখে গেছে। আমার সামনে ওদেরকে ঝেড়েছে। জানি যে সবই পলিটিক্যাল গেম তাই শুধু বলেছি, ইটস ওকে। সুস্থ্য হয়ে ওদের সাথে হাসি মুখে কথা বলেছি, চা খেয়েছি, ঈদে কোলাকুলিও করেছি।

শুধু অপেক্ষা করেছি সুযোগের। এতদিন পর সেই সুযোগ এসেছে।



১।

কলেজের বার্ষিক পিকনিক আজ।

পুরো কলেজ একসাথে পিকনিকে যাবে। ভেন্যু কক্সবাজার। তিনদিনের ট্যুর। প্রায় দশটার মত বাস ঠিক করা হয়েছে। আগের দিন সন্ধ্যায় রওনা দেয়া হচ্ছে যাতে যাওয়ার জন্য দিন নষ্ট না হয়। আয়োজক কমিটির সবাই খুব ছোটাছুটি করছে। পিকনিক উপলক্ষে বেশ মোটা অঙ্কের দাঁও মারা গেছে। তাই সবার দিল খোশ।

প্রতিটা বাসেই পর্যাপ্ত রাতের খাবার, সকালের নাস্তা দিয়ে দেয়া হয়েছে।

রাতের জার্নি বলে মাইক লাগান হয়নি, ভিতরে হ্যান্ড মাইকের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। কমিটির হেড শাহেদ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সব তদারকি করছে। এই কলেজের বড় ভাই সে। সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের সভাপতি।

সব ঠিকঠাক কিন্তু রওনা দেওয়ার ঠিক আগ মূহুর্তে বাধলো বিপত্তি। হঠাত একটা বাস বিগড়ে গেল। কিছুতেই স্টার্ট নেয় না। এমনিতেই মেয়েদের সাজুগুজু করে আসতে অনেক দেরি হয়েছে, ফলে সবাই তাড়া দিচ্ছিল। গাড়ি সারাতেও নাকি ২/৩ ঘণ্টা লাগবে। এখন একটা বাসের জন্য সবাই আটকে গেছে।

এক ফার্স্ট ইয়ারের ছেলে হঠাত বুদ্ধি দিলো যে, প্রতি গাড়িতেই তো দুই তিনটা সীট খালি আছে আর আয়োজক কমিটির প্রত্যেকের প্রতি গাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। তাদেরকে নামিয়ে সেসব সীটে এই গাড়ির লোকদের তুলে দেওয়া হোক আর আয়োজক কমিটি বাস ঠিক করে নিয়ে আসুক। সাথে সাথে অনেক গুলো ছাত্র এই প্রস্তাবে সমর্থন দিলো। স্যরদেরও পছন্দ হল প্রস্তাবটা। আর কি করা, আয়জক কমিটি গোমড়া মুখে মেনে নিলো সব। বাকি গাড়িগুলো রওনা দিয়ে চলে গেলো। কমিটির মেম্বাররা গোমড়া মুখে বসে বসে সিগারেট টানতে লাগলো, বাসের ড্রাইভার আর হেল্পার বাসের ইঞ্জিনে খুটখাট করতে লাগলো।



২।

৩ ঘণ্টা পর গাড়ি ঠিক হল। বিরক্ত ক্লান্ত সবাই বাসে উঠল। মাত্র ২০ জন রয়ে গেছে। তাই ইচ্ছা মত দুই সীট নিয়ে একেক জন বসতে পারল। গাড়ি ছাড়তেই কমিটির হেড শাহেদ বাসের হেল্পারকে ডেকে সবাইকে নাস্তা দিয়ে দিতে বলল। চিকেন বার্গার। ভালোই ক্ষুধা লেগেছিলো সবার তাই বেশ মজা করেই খেল সবাই। খেয়ে পানি খেয়ে সীটে হেলান দিতেই ঝিমুনি শুরু হল। জানালা দিয়ে ঢোকা ঠান্ডা বাতাসে কিছুক্ষনের মধ্যেই সবাই ঘুমিয়ে পড়ল। এদিকে বাস ছুটে চলেছে। রাত দুইটার দিকে হেল্পার সবাইকে রাতের খাবার খেতে ডাকল, কিন্তু সবাই বেহুশের মত ঘুমাচ্ছে, কেউই জাগল না।



৩।

মুখে পানির ঝাপটা লাগতেই চোখ মেলল শাহেদ। প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে গালি দিলো কয়েকটা। এত সাধের ঘুমটা ভাঙ্গাল কে? চোখ খুলতেই আলোয় চোখ ধাধিয়ে গেলো। হাত দিয়ে মুখটা মুছতে যেতেই অবাক হল, হাতটা মুখের কাছে আনতে পারছে না। কিসের সাথে যেন বাধা। মাথা ঝাকি দিয়ে পিট পিট করে তাকিয়ে দ্যাখে ওর চার হাত পা-ই বাধা। শুয়ে আছে একটা নোংরা মেঝেতে। পাশেই গোঙ্গানির আওয়াজ হতে তাকিয়ে দ্যাখে শুধু ও-ই না, আয়োজক কমিটির বাকিরাও একই ভাবে বাধা।

মুখে গামছা পেঁচানো এক লোক বালতিতে পানি নিয়ে সবার মুখে মারছে আর ঘুম ভাঙ্গাচ্ছে। শাহেদ লোকটাকে ডাকার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না, শরীরে এক ফোটা শক্তি নেই। ঘাড় ঘুরিয়ে আশে পাশে দ্যাখার চেষ্টা করল। বিশাল এক রুমে ওরা। সম্ভবত পরিত্যাক্ত কোনো ফ্যাক্টরি। মেশিন পত্র কিছু আর নেই। লোকটা সবাইকে জাগিয়ে বেরিয়ে গেলো কিছু না বলেই। যাওয়ার আগে লাইটটাও নিভিয়ে গেলো।

এতক্ষণে সবার ঘোর কেটেছে। সবাই একযোগে কথা বলা শুরু করল। বেশির ভাগই শাহেদকে উদ্দেশ্য করে,

- শাহেদ ভাই, কই আমরা?

- এইখানে কেমনে আসলাম?

- আমাদের বানসে কেনো?

- ও শাহেদ ভাই।

শাহেদ নিরুত্তর কারন ও নিজেই এসব প্রশ্নের জবাব খুজছে।

এদিকে সময় যতই যাচ্ছে সবার মধ্যে ততই আতঙ্ক জেকে বসছে। ভ্যাপসা গরম। দরদর করে ঘামছে সবাই। বুনো মশা ছেকে ধরেছে। গায়ের উপর দিয়ে ইদুর দৌড়াদৌড়ি করছে। ঘুটঘুটে অন্ধকার সবাইকে আরো বেশি কাবু করে দিচ্ছে। অনেকেই জোরাজুরি করে বাধন ছেড়ার অপচেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিয়েছে। সবার মনে নানা আশঙ্কা দানা বাধছে। অনেকেই আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না কেদে দিল।

- ও শাহাদ ভাই আমাদের কি মেরে ফেলবে?

- ভাই আমরা কি করসি?

- ভাই আমাদের বাঁচান।

অনেকে বাবা মা কে ডেকে ডেকে কাদতে লাগল।

শাহেদের নিজেরও গলা ছেড়ে কাদতে মন চাচ্ছে। শুধু সিনিয়র বলে পারছে না।

গরম, ঘাম, মশা, চুলকুনি মিলে ওদের কাছে এখন একেকটা সেকেন্ড অনন্ত কালের মত লাগছে। যন্ত্রনার শেষ সীমায় পৌছে ওদের যখন মৃত্যু কামনা করা বাকি তখন আবার জ্বলে উঠল বাতি।



৪।

সেই লোকটাই আবার।

মুখে গামছা পেঁচানো এখনো। তাকে দেখেই সবাই একযোগে ডাকাডাকি শুরু করল

- ও ভাই, ভাইরে আমাদের ছেড়ে দেন

- আমরা কি করসি ভাই, আমরাতো আপনার কোনো ক্ষতি করি নাই

- ভাই আপনি যা চান তাই দেব।

- ভাইরে আমরা কি করসি একবার বলেন?

- ও ভাই.........।(কান্না)

হঠাত লোকটার পিছনেই ইঞ্জিনের আওয়াজ পাওয়া গেলো।

সবাই আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে দেখলো ওরা যে বাসে করে কক্সবাজার যাচ্ছিল সেটা এগিয়ে আসছে।

একি, বাসটা ওদের গায়ের উপর দিয়ে যাবে নাকি?

সবাই একযোগে কান্না শুরু করল। এমনকি শাহেদ ও নিজেকে ধরে রাখতে পারল না।

বাসটা এগিয়ে এসে ঠিক শেষের জনের পায়ের কাছে থামল।

আবারো সবাই প্রাণপণে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে লাগল।

হঠাত বাসটা হর্ন দিল খুব জোরে। সবাই থেমে গেলো।

বাস থেকে কিছু লোক নামল। সবার মুখেই গামছা পেঁচানো। হাতে হকিস্টিক।

সবার আর বুঝতে বাকি থাকল না কি হতে চলেছে। আবার কান্নার রোল পড়ল। আবার বাসের হর্ন পড়ল। কান্নার শব্দ কমল কিন্তু বন্ধ হল না। শাহেদ গামছাধারিদের মধ্যে নেতা গোছের লোকটাকে কাছে ডাকল

- ও ভাই একটু শোনেন।

লোকটা এগিয়ে গেল কিন্তু কোনো কথা বলল না।

- ভাই আমাদের সাথে এসবের মানে কি? কারা আপনারা? কি চান আমাদের কাছে? যা চান দেবো। তবুও এমন করবেন না প্লীজ।

লোকটা কোনো কথা বলল না। হাতের হকিস্টিকটা মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগল।

- ভাই একটু বোঝার ট্রাই করেন, আমরা সবাই ভদ্র ঘরের ছেলে। কারো সাতে পাঁচে নাই। জীবনে কারো ক্ষতি করি নাই। আমাদের সাথে এমন করতেসেন কেন? টাকার জন্য? টাকা চান দেবো। কত চান বলেন?

লোকটা তবুও নিরুত্তর।

- ভাই বলেন কত চান?

লোকটা জবাব না দিয়ে ফিরে যাচ্ছিলো, শাহেদ আবার ডাকল

- ভাই আমাদের সাথে কেনো এমন করতেসেন? আমরাতো আপনার কোনো ক্ষতি করি নাই? ও ভাই একটু দয়া করেন।

লোকটা ঘুরে তাকালো তারপর ধীরে ধীরে বলা শুরু করল,

- তোরা কারো কিছু করিস নাই! কথাটা শুনে খুব হাসি লাগল। গত তিন বছরে এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তোদের দ্বারা হয় নাই। চাঁদা না দেয়ায় দুইজন ব্যাবসায়ীরে পিটায়ে মারছিস। সরকার দলীয় হওয়ায় মামলাও হয় নাই। কলেজে তোদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই হল, সবার সামনে নির্মম ভাবে পিটাইছিস। তোদের জন্য কতজন ছাত্র ক্লাস করতে পারে না তার হিসাব দিতে পারবি? তোরা যখন ওদের মারছিস, ওরাও তোদের কাছে মাফ চাইছে। তোরা ওদের আর্তনাদ শুনে হাসছিস। আজকে তোদের চিৎকার শোনারও কেউ নাই।

- ও ভাই আপনি এত কিছু জানেন যখন, তার মানে আপনি নিশ্চই আমাদের কলেজের কেউ। ভাই, ভাইরে আমাদের মাইরেন না। আপনি যা চান তা দেবো। আপনার পা ধরে মাফ চাই। আপনার কোনো ক্ষতি করে থাকলে সব পুষায় দেবো। ভাই দয়া করেন। আর যে কয়দিন কলেজে আছি আপনার পায়ের তলে থাকব।

- তাই? মনে আছে জাহিদের কথা, এইভাবে তোর পা ধরে কাঁদছিল। কি করছিল সে? তোদের মিছিলে আসে নাই। অসুস্থ ছিল ছেলেটা। তাই যেতে পারে নাই। তোরা সেই কথা শুনলি না। পিটায় হাত ভেঙ্গে দিলি।

- ভাই ও ভাই মাফ চাই। আর কোনো দিন করব না। ভুল হয়ে গেছে। মানুষ তো ভুল করেই। ভাই এমন কইরেন না ভাই। বলতে বলতে কেদে দেয় শাহেদ।

- তুহিনের কথা মনে আছে? একটা মেয়েরে ভালো লাগসিল। মেয়েটাও ওরেই পছন্দ করত। কিন্তু মেয়েটারে তোর গ্রুপের এক পাণ্ডা পছন্দ করে ফেলে। তোরা তুহিনরে ধরে নিয়ে গেলি। তুহিনও বলসিল যে ওর ভুল হয়ে গেছে। তোরাতো ও’র কথা শুনিস নাই।

- ভাই আর হবে না, ও ভাই আর করবো না। প্লীজ ভাই। ও ভাই। আপনি যা চান দেবো। চারপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ উঠলো। সবার মুখে একই আকুতি।

লোকটা বলল,

- কেদে লাভ নাই। বেশি কিছু করব না। দুইটা পা আর একটা হাত ভাঙব। আর কিছু না।

এতক্ষন সবাই চুপচাপ শুনছিল কিন্তু এই কথার পরই শুরু হল আগের চেয়েও জোরে চিৎকার।

কেউ কেউ চ্যাঁচাল, হেল্প হেল্প, আশে পাশে কেউ আছেন? আমাদের বাঁচান।

এই কথা শুনে লোকটা কলজে কাপানো একটা হাসি দিয়ে বলল, যত খুশি চ্যাঁচাতে পারো। তোমাদের চিৎকার শোনার জন্য আশে পাশে দশ মাইলের ভিতরেও কেউ নেই।

তারপর তার সাথের গামছাধারিদের দিকে ইঙ্গিত করে বলল, টাইম কম। তাড়াতাড়ি কর।

সবার মেরুদণ্ড বেয়ে একটা ভয়ের স্রোত নেমে গেলো। আকুতি গোঙ্গানি আর কান্নায় ভরে গেলো চারপাশ।

লাইনের সবার শেষের ছেলেটার পাশে দাঁড়াল লোকটা, তারপর সজোরে হকিস্টিক নামিয়ে আনল। ছেলেটার আর্ত চিৎকারে বাকি সবাই স্তম্ভিত হয়ে গেলো মূহুর্তের জন্য।

আবার শুরু হল কান্না। বাকি সবারও একই অবস্থা হল কিছুক্ষনের মধ্যে।

ব্যথায় ছটফট করছে সবাই। এরই মধ্যে সবাই বিস্ফোরিত চোখে দেখল দাড়িয়ে থাকা বাসটা চলতে শুরু করেছে। বাসটা ধীরে ধীরে সবার পায়ের উপর দিয়ে চলে গেল। সবার পা-ই গুড়িয়ে গেছে কিন্তু কান্নার আওয়াজ আর নেই। ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে গেছে সবাই।



৫।

ভোরের আলো ফোটেনি তখনও। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সামনে একটা বাস এসে থামল। আগে থেকেই একটা মোটর সাইকেল স্টার্ট নেওয়া অবস্থায় দাড়িয়ে ছিল সেখানে। বাসের ড্রাইভার নেমে মোটর সাইকেলের পিছনে উঠে গেলো।

বেলা বাড়তেই বাসের ভিতর ২০টি অর্ধমৃত মানুষের দেহ আবিষ্কৃত হল।

ঘটনায় সারা দেশ তোলপাড় হল। পুলিশ অনেক খুজেও এর কোনো সুরাহা করতে পারেনি। করবে কিভাবে? আহতরাইতো ঠিকমতো কোনো ক্লু দিতে পারেনি। কোথায় কারা কেন কখন তাদের মেরেছে কিছুই বলতে পারেনি তারা।

যে বাসে করে তাদের হাসপাতালে দিয়ে যাওয়া হয়েছিল তার আসল ড্রাইভার আর হেল্পারকে আহতদের কলেজেই হাত পা বাধা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। সবার সুস্থ হতে এক বছরের ও বেশি সময় লেগেছিল। তারা আর এই কলেজে পড়াশোনা করতে ফিরে আসেনি।



পরিশিষ্ট

পিকনিকের কথা শোনার পরই মাথায় প্লানটা এসেছিল। কাজটা আপাত দৃষ্টিতে কঠিন মনে হলেও আমার জন্য সহজ করে দিয়েছিল যে ব্যাপারটা তা হল, ওদের শত্রু সংখ্যা একটু বেশিই ছিল। ফলে প্ল্যানটার বাস্তবায়ন করতে সহজ হয়েছিল। আমার কাজ ছিল শুধু সঠিক লোকগুলোকে বাছাই করা। টাকা যা লেগেছিল সব দিয়েছে আমার গ্রুপের গডফাদার।

সবচে বড় ব্যাপার হল ভাগ্য আমার সহায় ছিল। কমিটির সবাইকে এভাবে একসাথে পাবো ভাবিনি। যে কয়জনকে পাই তাতেই আমি খুশি ছিলাম, এমনকি শুধু শাহেদকে

পেলেও চলত। কারণ ওর সাথেই আমার যত শত্রুতা। কলেজে বিগত তিন বছরের অপকর্ম ওর ইশারাতেই হয়েছে।

প্লান মত প্রথমে পিকনিকের একটা বাসের ড্রাইভার আর হেল্পারকে অজ্ঞান করে বেধে ফেলা হল। সেখানে গেলো আমার ঠিক করা (ওদের দ্বারা অত্যাচারিত) দুটো লোক। বাস ঠিক থাকার পরও তাই বাস চলল না। যে ফার্স্ট ইয়ারের ছেলেটা আয়োজক কমিটির আলাদা যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল সে ও আমার ঠিক করা। বাস ঠিক করার অভিনয়ের মাঝে বাসের হেল্পার ওদের খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল। তাই ওদের বাস থেকে নামিয়ে বেধে ফেলার সময়েও টের পায়নি।

ওই নির্জন পরিত্যক্ত জায়গাটার হদিস দিয়েছিল আমার মতই ওদের হাতে মার খাওয়া এক ছেলে যার বাড়ি কক্সবাজার।

গামছাধারি সবাই কারা তা নিশ্চই বুঝতে পারছেন?

আমি কোথায় ছিলাম ঘটনার সময়?

আমি সারাক্ষন আমাদের ব্যাচের সবার সাথেই ছিলাম, কিন্তু মধ্যরাতে কক্সবাজারে পৌছে সবাই যখন হোটেলে গভীর ঘুমে তখন আমি কি ঘুমিয়ে ছিলাম না অন্য কিছু করেছি তা তো কেউ জানে না! হোটেলের রুমমেট সকালে ঘুম থেকে উঠে আমাকে রুমে ঘুমন্ত অবস্থায়-ই পেয়েছে।

ও ভালো কথা, আমিই এখন কলেজের বড় ভাই।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:১০

আহনাফ আহমেদ আবির বলেছেন: valo laglo. ashole eder evabei punish kora uchit. shamna shamni korle to abar onek shomoy nijer family niyew tana tani pore. to shesh kotha holo, vai apnio ki ekhn oi rokom naki ;)

২| ০২ রা জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:৩৮

ট্রাক বলেছেন: না রে ভাই, আমি সবাইকে নিয়েই খাই। শত্রু বাড়ালে পরিনতি কি হতে পারে, তা তো আমিই ভালো জানি।

৩| ৩১ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:০৯

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: ওরে সর্বনাশ !! আপনি তো ভাই বিপদজনক লোক :( :(

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:৩৩

ট্রাক বলেছেন: মুহাহাহাহাহাহাহাহাহা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.