নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মধুরেণ সমাপয়েৎ

হালুম মামা৯৯

আমি একজন এ দেশের সাধারণ জনগণ ।

হালুম মামা৯৯ › বিস্তারিত পোস্টঃ

যাপিত জীবনের গল্প

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ভোর ৬:২৯

যাপিত জীবনের গল্প।
২০১৪ সালের জুলাই ছিল সম্ভবত। জীবনের প্রথম মাজারে যাওয়া। আমি স্বাভাবিক ভাবেই ভ্রমণপ্রিয়।খুব কাছের বন্ধু। একসাথেই চলি সবসময়। সন্ধ্যার সময় কল দিয়ে বলল মাজারে যাবে(মাজারটি চট্টগ্রামের খুব বিখ্যাত মাজার,নাম উল্লেখ করছিনা)। আমার অবস্থান থেকে প্রায় ১২০ কি:মি। যাবো বাইক নিয়ে।
রাস্তার সব জ্যাম পেরিয়ে যেতে মিনিমাম চার ঘন্টা লাগবে। তার মধ্যে আমরা রাস্তার কিছুদূর পর পর চা আর সিগারেট খাই। আরো কিছু বন্ধু যাবে।ওরা যাচ্ছে একটা ছোট পিক আাপ ভ্যান নিয়ে।সাথে দুইটা ছাগল নিয়ে যাচ্ছে মাজারে উৎসর্গ করবে তাই । বাসাই গিয়ে আগে মা'কে বুঝিয়ে অনুমতি নিলাম।দূরে যাবো।বাসায় খেয়ে যেতে হবে। ওকে।খেয়ে বের হলাম। আট টায় বের হয়ে গেলাম বাড়ি থেকে।সাড়ে আট টায় একসাথে হলাম তিনজন। তেল নিয়ে রওনা দিলাম। আধা ঘন্টা পরে একজায়গায় প্রথম ব্রেক। এইটা আমাদের স্বভাব। চা সিগারেট খেয়ে রওনা আবার। পনের মিনিট পরেই বিপত্তি শুরু। বৃষ্টি শুরু।হালকা থেকে ঝুম হয়ে গেল কিছুক্ষণের মধ্যে। পরের বাজারে দাঁড়ালাম। একটা দোকানে আশ্রয় নিলাম। দশ মিনিট অপেক্ষা করলাম।উপায় না দেখে ভেজার প্রস্তুতি নিলাম।কয়েকটা পলিথিন কিনলাম দোকান থেকে। বাড়িতে কল করে বলে দিলাম মোবাইল বন্ধ থাকবে।কারণও জানিয়ে দিলাম। এইবার নিশ্চিত। সবার সব মোবাইল বন্ধ করে সাথে মানিব্যাগ পলিথিনে ভালো করে মুড়ে নিলাম। শুধু একটা মোবাইল আর একটা মানিব্যাগ হাতে রাখলাম পলিথিনে করে ইমারজেন্সি হিসেবে।কারণ রাস্তায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে চা তো খেতেই হবে। দিলাম রওনা। ঝুম বৃষ্টি, তার মধ্যে রাত গভীর হচ্ছে আর বৃষ্টিতে রাস্তা খারাপ।গানের মধ্যে এগুচ্ছি। আমরা এইরকম ভ্রমণে সারা রাস্তা গান গাই।আমি আর বন্ধু দুইজন মিলে হাতবদল করে বাইক চালাই।একজনের উপর পুরো রাস্তা ছেড়ে দেয়া কখনো ঠিক না।
রাত প্রায় দুইটা নাগাদ আমরা মাজারের কাছাকাছি।মেইন রোড থেকে অনেক ভিতরে। ভিড়ের কারণে এই রাস্তাটা ঢুকতে আর বের হতে অনুমান করতে কষ্ট হচ্ছে। তিন কিলোমিটার ভেবে নিলাম।কিন্তু এই রাস্তাট পার হয়ে মাজারে পৌঁছাতে সময় লাগলো পাক্কা দেড় ঘন্টা। বাইক হাতে ঠেলে নিয়ে যেতে হয়েছিল মানুষের ভিড়ের কারণে।রাস্তার দুইপাশ ভর্তি বাস আর পিক আপ ভর্তি। সব মাজারে এসেছে ওরসে।
ঝুম বৃষ্টি চলছে। থামাথামির কোন নাম নাই।
কিছু করার নাই। ভিজে চুপচুপে অবস্থা।
যাক মাজারের সামনে চলে আসলাম। সামনে বেশকিছু দোকান।রমরমা বিক্রি চলছে।
আমরা প্রথমে দশ টাকা করে তিনটা মাথার টুপি কিনলাম। তারপর মোমবাতি আর আগরবাতি নিলাম।এইসবের মূল কারণ বন্ধু। খুব মাজার ভক্ত। গাড়িটা নিরাপদে রেখে মাজারে ঢুকলাম।
মাজারের সামনে একটা বিশাল পুকুর। এই পুকুরে হাত পা ধুয়ে তবেই নাকি মাজারে ঢুকতে হবে। এক ঘাটে মানুষ গরু ছাগল সবাই এক পানিতে।আমার কাছে একটা বিশ্রি কান্ড মনে হলো।কিছু করার নাই। করতেই হবে।বন্ধুর অনুপ্রেরণা। যাক হাত পা ধুয়ে মাজারে ঢুকলাম।ফ্লোরে পায়ের কনুই সমান পানি। জুতা যে বাইরে রেখে আসছি সেটা নিয়ে শঙ্কিত ছিলাম মনে মনে। মাজারে দুইটা কবর। প্রথমটাই প্রবেশ। বাঁধানো কবর। উপরে বিশাল টাকার পাহাড় হয়েছে। ফুলে সজ্জিত। আবার এইদিকে ফ্লোরের পানি ফুলের পাপঁড়িতে ভরা। মানুষের ভিড়ে কবরটা ছুঁয়ে দেখা একটা চ্যালেঞ্জের মত। যে একবার ধরতে পেরেছে মাথা নুঁয়ে ছাড়ার নাম নেই। আমার এক বন্ধু তো যুদ্ধে লেগেই পড়েছে।
এরমধ্যে কেউ একজন কবরের উপর থেকে টাকা নিয়েছে এই প্রসঙ্গে একটা ঝামেলা।
আমি দাঁড়িয়ে পুরো ব্যাপারটা অনুভব করছি আর টুকটাক অভিনয় চলছে। বন্ধু যেই ধরতে পেরেছে আর ছাড়ার নাম নেই। পরের কবরের রুমে ঢুকে একই অভিজ্ঞতা। যাক শেষ করে বের হচ্ছি।সামনে মানুষ লাইন ধরে মাজারের থেকে বিলি করা পানি বোতল ভরে নিচ্ছে।বিশাল বিশাল কিছু ড্রাম থেকে কিছু লোকজন মিলে পানি দিচ্ছে। বন্ধুর সাথে সামিল হলাম।যে পানি বোতল বন্ধি করছে সেই পানি কিন্তু ফ্লোরের পানিতে মিশে যাচ্ছে।মাজারের প্রতিটা স্টেপ আউটে টাকা দানের একটা সিস্টেম করা আছে। চাওয়ার আগে মানুষ আপোষহীন ভাবে দিয়ে যাচ্ছে।টাকার পাহাড় মোটামুটি।
যাক এই পর্ব শেষ করে বের হতেই দিনের মেঘলা আকাশের আলো।প্রথমে জুতা খুঁজে নিলাম। বৃষ্টি অবিরাম।এক বিশাল মাঠে রক্তাক্ত হাজারের উপর পশু। গরু আর ছাগল। একটা দোকানে আশ্রয় নিয়ে বাকি পরিচিত বন্ধুদের কল দিলাম।কিছুক্ষণের মধ্যে একজন এসে একটা বিশাল বাড়িতে নিয়ে গেল।
ঢুকলাম। বন্ধুকে জিজ্ঞাস করলাম এইটা কই নিয়ে আসলি কার বাড়ি?
খাদেমের। খাদেম কি?
ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিল একজন।
মনের মধ্যে একটাই প্রশ্ন দাঁড়ালো। এত টাকার বাড়ি সে কিভাবে করলো?
এইখানে ছাগল উৎসর্গ করে সেই ছাগলের মাংসের একটা খিচুরি রান্না হচ্ছে। এর নাম সম্ভবত তবরুখ ছিল। পুরো বাড়িতে মানুষের ভিড়ে কোথায় বসার বা দাঁড়ানোর জো নেই। বন্ধুরা সব ছাদে।ছাদে একটা ত্রিপল টাঙিয়ে ব্যবস্থা করা হয়ে।বৃষ্টিতে একটু রেহায় পেলাম ভেজা কাপড়ে।ছাদে উঠেই দেখছি বিশাল গোলবৈঠক। মধ্যে দেখি কম হলেও তিনশ গ্রাম 'উইড' নিয়ে শিল্পকর্ম চলছে।
একটু অবাক। অনেকের মতে মাজারে এইটা ছাড়া জমে না।যাক একটু সামিল হয়ে গেলাম।
খিচুড়ি রেডি।
কয়েকজন মিলে একটা বড় হাড়ি নিয়ে আসলো ছাদে। যাক খেয়ে নিলাম। পেটে ক্ষিদা ছিল ভালই।কিন্তু 'উইড' এর পর গিলতে ভালো কষ্ট হচ্ছিল।
যাক এইবার আমাদের রওনা দিতে হবে।বৃষ্টি থামার কোন সম্ভাবনা নাই। সকাল সাত টা প্রায়। রওনা দিলাম।সারা রাত বৃষ্টিতে ভেজা বাইক বেচারাকে স্টার্ট নিতে দুইজনের ভালোই বেগ পেতে হল। রাতে যেমন ছিল এখনো তেমন। মানুষের ভিড়ে বাইক নিয়ে হেঁটে বের হওয়ার অবস্থা । মেইন রাস্তাই পৌঁছে স্বস্তির নিশ্বাস। একটা দোকানে দাঁড়িয়ে চা খেলাম। এইবার রওনা বাড়ি। রাস্তার দু'পাশে বিল। পানি রাস্তা ছুঁয়েছে। মোটামুটি খালি রাস্তা। অবিরাম বৃষ্টি।
সাবধানে এগুচ্ছি। রাস্তা গর্তে ভরা। তার মধ্যে গর্তগুলো পানিতে ভর্তি থাকাতে বুঝাই যায় না কোথায় গর্ত আর কোথায় ভালো। বন্ধু বাইক চালাচ্ছে। হঠাৎ আচমকা ব্রেক। কি হল?
একটা কই মাছ রাস্তার উপর লাফিয়ে যাচ্ছে। আমি বললাম তোর চোখ তো শকুনের চেয়েও খারাপ।কই মাছটা সে ধরবেই। ধরে নিয়েও এল। হাতে কই মাছ। আমি এর মধ্যে নাই। আমার এই মাছ ধরতেও ভয় লাগে। বললাম তুই হাতে রাখ। দুইজনের কই মাছটা নিয়ে ভালোই আগ্রহ।
টান দিলাম আবার। সামনের বাজারে দাঁড়িয়ে একটা পলিথিনে মাছটা নিয়ে গাড়িতে ঝুলায় দিলাম।কই মাছের পরাণ নাকি অনেক শক্ত। মরবে না সহজে।রাস্তাই আরো কয়েকবার দাঁড়িয়ে বাড়ি পৌঁছালাম দিনের বারটা প্রায়। বৃষ্টিতে ভিজে হাত পা শরীর কুঁচকে গেছে অবস্থা। আধা ঘন্টা বয়ান শুনলাম আগে মায়ের। তারপর গোসলটা করলাম। তারপর আয়রনে একটা তাওয়াল পেঁচিয়ে বোন হাত পা ছেকে দিল।
ভালো ছিল জার্নি টা।
তবে এই বৃষ্টিতে ভেজার তেল প্রায় পনের দিন পর আমাকে খুব ভুগিয়েছে ।
হ্যাপি জার্নি।
বি:দ্র:-আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম ভ্রমণের। কোন প্রশ্ন রাখছি না।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:১৪

বাক স্বাধীনতা বলেছেন: হবে না।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৪৩

হালুম মামা৯৯ বলেছেন: কি হবে না??

২| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:১১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আমার এক পাগলা বন্ধু ছিলো, তার সাথে উল্টোপাল্টা ভ্রমণে বের হতাম মাঝেমাঝে।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ২:১০

হালুম মামা৯৯ বলেছেন: ভ্রমণ মনের জন্য ভালো অনেক

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.