নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির, জ্ঞান যেথা মুক্ত,
জাপানী সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ এর মূলে 'হাইকু' । কবিতা শিল্পে হাইকু হচ্ছে বনসাই এর মতো । তার গঠন শৈলীর শাস্ত্র আছে, কিন্তু উপলব্দিতে শাস্ত্র চোখে পড়ে না। দেখা যায় শুধু সৌন্দর্য ।ক্ষুদ্রের মাঝে বিশাল এর নৈপুণ্য । কিছুদিন জাপানী ভাষা শিখেছিলাম, শিক্ষক রেখে। কিন্তু শেখা হয়নি। নিছক ক্ষেপামী- যেরকম বেহালা নিয়ে দীর্ঘ সময় পেরুনোর পর, হঠাত কি মনে হল, তাকে ছেড়ে আবার সেতার । ক্ষেপা খুঁজে খুঁজে ফেরে... । পরিশেষে সত্যিকার কিছুই পাওয়া হয়ে উঠে না। নোবেল জয়ী কাওয়াবাতা, কেঞ্জাবুরো ওয়ে পড়েছি । কাজুও ইশিগুরু- জাত বিচারে জাপানী কিন্তু কুল বিচারে জাপানীজ বলা যাবে না । সবদিক থেকে হারুকি মুরাকামী অনন্য। জাপানেই নিন্দিত যত, নন্দিত তার শতগুন স্বদেশে এবং বিশ্বজুড়ে । বলা হয়েছে 'পর্ণ গ্রাফার অফ ডিপ্রেশন'। কিন্তু তিনি অপ্রতিরোধ্য। চল্লিশটি ভাষায় এখন মুরাকামী র উত্থান। হয়তো সবকটি পড়া হয়ে যাবে । কিন্তু এর মাঝে চৌকস যা তা হচ্ছে 'হাইকু'। ধ্রুপদী 'হাইকু'র প্রতি বিশ্বজুড়ে ভালবাসা দীর্ঘ দিনের । জাপানি হাইকু বিশ্ব সাহিত্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বিস্ময়কর ক্ষুদ্র এবং স্বতন্ত্র কবিতা । তিন ছত্রবিশিষ্ট এবং ৫+৭+৫=১৭ অক্ষর মিলিয়ে সর্বমোট ১৭টি ধ্বনির সমন্বয়ই হচ্ছে হাইকু।আমাদের যেমন আমিত্রাক্ষর , গঠন শৈলী একই মাত্রা বৃত্তে । জাপানী ভাষায় ছবি ও ধ্বনির গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য । হাইকু'র বিস্ময় তার নোটেশনে নয় । সবচেয়ে বেশী সৌন্দর্য এই তিন লাইনের শব্দে একটা ছড়ানো ক্যানভ্যাস তৈরি র ক্ষমতায় আর তার দৃশ্যকল্পে। অনেক আগে পড়া, একটি হাইকু - গা চম চম করা একটি পরাবাস্তব গভীর নৈশব্দ এবং দ্রুত একটি ছবি তৈরির কারুকার্য । "পুরনো পুকু্র/ব্যাঙের লাফ/ জলের শব্দ ।" বিখ্যাত 'হাইকু' কবি মাতসু বাসো'র রচনা । হাইকু জাপানে খুবই জনপ্রিয়। অধিকাংশ জাপানিই হাইকু লেখায় সিদ্ধ। শিশুকাল থেকেই জাপানিরা হাইকু চর্চা করে থাকেন ফলে মৃত্যু পর্যন্ত তারা হাইকু লেখা ভুলে যান না। বিশেষ করে হেমন্ত ও বসন্তকালে জাপানিরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে বেরিয়ে পড়েন এবং নোটবুকে মনের অনুভূতি হাইকু আকারে লিখে রাখেন । "জোনাকি উড়ে যায়/এত দ্রুত এত নিঃশব্দে/আলোটুকু ফেলে যায়" অথবা "প্রজাপতি আতর মাখছে/নিজের ডানায়/অর্কিডের সুবাস"। দক্ষ চিত্রকর, মোটা তুলির এক টানে যেন তৈরি করে ছবি। হাইকু তৈরির কারুকার্য ঠিক তেমনি। লক্ষনীয় বিষয় টা হল, ভাবনায় হাইকু র আবহ এবং বর্ণনার চলচিত্রের দৈর্ঘ্য শীর্ণকায়া কবিতার মতো অত দ্রুত শেষ হয়ে যায় না পাঠকের মন থেকে। সে জন্যে হাইকু খুব ধীরে ধীরে পড়তে হয়। নির্বিঘ্ন অবসর না হলে হাইকু'র স্বাদ পাওয়া যায় না। সে ঘরের নিভৃতে হোক, আর প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে হোক । রচয়িতা আর পাঠকের জন্যে পরিবেশের আঙ্গিক একই রকম যেন । রবীন্দ্রনা্থও হাইকু'তে মজেছিলেন । তাঁর বেশ কিছু হাইকুর অনুবাদ আছে। মাতৃ ভাষায় পড়ার যে স্বাদ, অনুবাদে তা কখনো পাবার নয় । সেটা বাংলাদেশে অনুদিত অনেক ধ্রুপদী সাহিত্য পড়লে সহজেই বুঝা যায়, হোক না ইংরেজী থেকে অনুবাদ।ভাষান্তরে কৌলীন্য দেখানোর দক্ষতা সবার ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। ফলে অপুরনীয় ক্ষতি হয় পাঠকের। হাইকু র বিষয়ে জাপানী দের সাথে আলাপচারিতায় সেটা খুব বুঝেছি ।
২| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৩
পি কে বড়ুয়া বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্যে। আসলে 'হাইকু' র চর্চা র সাথে তাঁদের জীবন ধারা সন্নিবিষ্ট। এটা কোন আলাদা সৃজন শীলতা নয় । বা কোন বই প্রকাশ করার উদেশ্যেও নয় । আশা করি বিস্তারিত লিখব। আপনার এই উতসাহ মনে ধরল। ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৯
পুলহ বলেছেন: বাসোর হাইকুর ইংরেজি অনুবাদটা পড়েছিলাম। আপনার এখানে বাংলাটা পড়লাম...
"জোনাকি উড়ে যায়/এত দ্রুত এত নিঃশব্দে/আলোটুকু ফেলে যায়" --খুব ভালো লেগেছে।
"অধিকাংশ জাপানিই হাইকু লেখায় সিদ্ধ। শিশুকাল থেকেই জাপানিরা হাইকু চর্চা করে থাকেন ফলে মৃত্যু পর্যন্ত তারা হাইকু লেখা ভুলে যান না।"-- এ জায়গায় এসে একটু খটকা লাগল! চর্চা দিয়ে কি সৃষ্টিশীলতার অভাব তবে পুষিয়ে নেয় যায়- সে চিরন্তন প্রশ্ন আর কি!....
হাইকু সম্পর্কে আরো বিস্তারিত লিখতে পারেন সময় সুযোগ হলে। পাঠক হিসেবে পাশে থাকার চেষ্টা করবো।
শুভকামনা দাদা!