![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পাঠ ও মন্তব্যের জন্য সকলকে স্বাগতম। কোন পুরানো পোষ্টেও নির্দ্বিধায় মন্তব্য করতে পারেন; সাড়া পাবেন।
"We know only a single science, the science of history. One can look at history from two sides and divide it into the history of nature and the history of men. The two sides are, however, inseparable; the history of nature and the history of men are dependent on each other so long as men exist. The history of nature, called natural science, does not concern us here; but we will have to examine the history of men, since almost the whole ideology amounts either to a distorted conception of this history or to a complete abstraction from it. Ideology is itself only one of the aspects of this history".
--------Karl Marx, German Ideology 1845
গত কিছুদিন ধরে 'মার্ক্সবাদ কি বিজ্ঞান?' অথবা 'Is Marxism Scientific?'
শিরোনামে http://www.muktopran.org/avijit/18023#comment
এবং
"বিজ্ঞান-অবিজ্ঞান কিম্বা কুবিজ্ঞানের তর্ক" শিরোনামে
Click This Link
এই দুটো ব্লগপোষ্টে একটা তর্ক চলছে। muktopran বা সচলায়তনের ব্লগে এ'প্রসঙ্গে আমার কিছু মন্তব্য থাকলেও বিজ্ঞান বিষয়ে ওখানে আমি প্রবেশ করি নাই, কোন মন্তব্যও করি নাই। তবে লক্ষ্য করছিলাম দুই ব্লগেই বিজ্ঞান প্রসঙ্গে এসে সবার আলোচনা বারবার হোঁচট খাচ্ছে, আটকে যাচ্ছে। আগাতে পারছে না। এই সমস্যার কোন হাল করা যায় কী না - এই ভাবনা থেকে কিছু করার চেষ্টাই এখানে এই পোষ্টের উদ্দেশ্য।
উপরের দুই ব্লগপোষ্টের মত "মার্কসবাদ" বলে আলোচনাটা শুরু করতে গিয়ে একটা বিপদ লক্ষ্য করছি। মার্কসবাদ কী অর্থে? মার্কস কি বলেছেন, তাঁর মৌলিক রচনাগুলোর মূলকথা কী - এই অর্থে? আবার মার্কসের কথাগুলো যারা প্রয়োগে নিয়ে গেছেন; সাফল্য, ব্যর্থতা, ভুলত্রুটি মিলিয়ে চর্চার ভিতর দিয়ে যা দাঁড়িয়েছে তাকেও তো মার্কসবাদ বলে সবাই চিনে। নাকি এই অর্থে?
অর্থাৎ Marxism as said ও Marxism as practiced বলে একটা ভাগ আছে তা স্পষ্ট মনে করিয়ে রেখে বলবার দরকার আছে কোন্ মার্কসবাদ নিয়ে আমি কথা বলছি। কোনটাকে ছোট বা কম গুরুত্ত্বপূর্ণ করার জন্য না, আর তা নয়ও। 'মার্ক্সবাদ কি বিজ্ঞান?' -মানে প্রয়োগটা বিজ্ঞানসম্মত না মূল বক্তব্যটা বিজ্ঞানসম্মত - কোন প্রশ্নটা নিয়ে আমি নাড়াচাড়া করবো আগেই পরিষ্কার রাখাটা জরুরী।
আমার মনে হয়, প্রশ্ন প্রয়োগটাকে নয়, মূলবক্তব্যকে করাটাই যুক্তিসঙ্গত। সোভিয়েত ইউনিয়ন ব্যর্থ কীনা এটা এখন আর কোন তর্কের বিষয় নয়। ওটা ভেঙ্গে পরে বাস্তবে তা প্রমাণ করেছে। এই ব্যর্থতার কারণ আমরা অনুসন্ধান করতেই পারি। কিন্তু মার্কসবাদের প্রয়োগ ওখানে বিজ্ঞানসম্মত না হওয়ার কারণে ঐ বিপর্যয় ঘটেছে কীনা খুজতে যাওয়া -এটা অতি-বিজ্ঞানবাদিতা হবে। কারণ সবার আগে বিচার করতে হবে গলদটা মূলবক্তব্যে কী না?
অতএব 'মার্ক্সবাদ কি বিজ্ঞান?' বলতে মার্কসের মূলবক্তব্যগুলো বিজ্ঞানসম্মত কী না - এটাই প্রশ্ন করা হচ্ছে। এটা ধরে নিয়ে আমি তাই এই প্রশ্নের উত্তর খুজবো মার্কসের মূল লেখায়; ষ্টালিনের কর্মদোষ, চিন্তা বা বক্তব্য এমনকি এসব নিয়ে নিস্পেষিত কোন সোভিয়েত নাগরিকের অভিযোগের মধ্যেও না।
বিজ্ঞান প্রসঙ্গে আমাদের অনেকের মধ্যে অদ্ভুত সব ধারণা আছে। বেশীর ভাগেরই ধারণাটা হলো, একটা ল্যাবরেটরী-বিজ্ঞান বা নিউটনিয়ান-বিজ্ঞান জাতীয়। আমাদের পাবলিক শিক্ষা পাঠ্যক্রমে সাইন্স আর আর্টসের ভাগাভাগিতে যেটা আর্টস, ওটার মধ্যে আর সাইন্স বা বিজ্ঞান নাই - এই ধারণা ক্রমাগত প্রচার হয়ে চলছে। আবার যারা সাইন্সে ঢুকছে তাঁদের মাথায় বিজ্ঞান মানে ল্যবরেটরী-বিজ্ঞান। ওদিকে, আর্টসের ছাত্র পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় সোসিওলজি পড়তে যেয়ে আবিষ্কার করে সে না কী আবার বিজ্ঞান (সমাজ বিজ্ঞান) পড়ে। এ কোন বিজ্ঞান? আবার আর্টসের বন্ধুদের ছেড়ে যারা বিজ্ঞান পড়তে পড়তে বিশ্ববিদ্যালয় এসে ঢুকলো এদের মাথার "বিজ্ঞান মানে ল্যবরেটরী-বিজ্ঞান" ধারণা আরও পোক্ত হয়ে এবার দাঁড়ালো নিউটনিয়ান-বিজ্ঞান জাতীয় ধারণা। নিউটনিয়ান-বিজ্ঞান অর্থাৎ বস্তুর গতিবিদ্যা নিয়ে যার কায়কারবার। ওদিকে তার ছোটবেলাকার বন্ধু যে সমাজ বিজ্ঞান, পুষ্টিবিজ্ঞান বা লাইব্রেরী সাইন্সে ঢুকেছে এসব বিজ্ঞানের সাথে তাঁর বিজ্ঞানের ফারাক-জটলার কোন এতে সুরাহা হলো না। এরই ভিতর 'মার্ক্সবাদ কি বিজ্ঞান" এ জাতীয় প্রশ্নের মোকাবোলা করতে নেমেছি আমরা।
বিজ্ঞান ধারণার সমস্যাটা গোড়াটা আসলে কোথায়?
প্রথম যেটা আমাদের মাথা থেকে তাড়াতে হবে তা হলো বিজ্ঞান বলে জ্ঞানের কোন শাখা নাই বা বিজ্ঞান জ্ঞানের কোন শাখা নয়। বরং উল্টা জ্ঞানের সব শাখাই বিজ্ঞানের সাহায্যে (বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে, তা মেনে) নিজেকে বিকশিত করে জ্ঞান হয়ে উঠে। এখন এই যে জ্ঞানের শাখা বললাম এটাই বা কী? বা অন্যভাবে বড় করে করা প্রশ্ন, জ্ঞানের বিষয় (object) কী? কী নিয়ে কার সম্পর্কে আমরা জ্ঞানলাভের, জ্ঞানসঞ্চয়ের চেষ্টা করি?
আমি অনুমান করি আমাদের বেশীর ভাগই বলবে - আমার বাইরের জগৎ, মানুষ দিক থেকে যা কিছু তাঁর সামনে হাজির, বাইরের তার সব। আর একটু বুদ্ধিমান যারা তাঁরা এর সাথে যোগ করতে পারেন- নিজের সম্পর্কেও। আপাতত এটুকু বোঝাবুঝির উপর ভরসা করে জ্ঞানের বিষয়ের সব কিছুকে এককথায় যদি প্রকৃতি বলি তাহলে দাঁড়াচ্ছে আমাদের জ্ঞানের বিষয় (object) হলো প্রকৃতি, প্রকৃতির সব কিছু।
এখন এই ধরণের প্রক্বতি ভাবনায় ভিতরে আবার এক সমস্যা তৈরী হয়ে গেল। যে আমি, মানুষ - জ্ঞানলাভের কর্তা, আমি subject - এই আমি কী আমার প্রক্বতির ধারণার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। না কী আমি বাইরের? এতে প্রথমে একটু থতমত খেলেও পরে আমরা দ্রুত সামলে নিয়ে বলবো, আমরা মানুষ প্রক্বতির বাইরে নই, ভিতরে। অর্থাৎ জ্ঞানের বিষয় (object) নিয়ে যে কথা তুলেছিলাম আপাতত তার উত্তর দাঁড়ালো, আমাদের জ্ঞানের বিষয় (object) হোল প্রকৃতি (তবে মানুষসহ জ্ঞান করে) আর যে জানবে সেই subject মানে হলো জ্ঞানের কর্তা বা মানুষ । কিন্তু এরপরও আর একটা প্রশ্ন থেকে গেল। জ্ঞানের বিষয় (object) হলো প্রক্বতি, মানুষ ইনক্লুডেড ধারণার প্রকৃতি (এখন থেকে একে আমি শুধু প্রক্বতি বলে বুঝাবো।) - এটা না হয় বুঝলাম। কিন্তু জ্ঞান নিজে? নিজের কী অবস্হা? নিজেও তো সে নিজের জ্ঞানের বিষয় (object) নয়। অর্থাৎ subject একইসাথে নিজেই নিজের object, নিজের জানার বিষয়ও বটে। এটা গণ্য না করা মানে কোন জ্ঞান যে জ্ঞান হয়েছে তার নিশ্চয়তা নাই। জ্ঞানের নিশ্চয়তার জন্যই কর্তাকে জানতে হবে, নিজেকেই একজামিনের বিষয়, জানার বিষয় বানাতে হবে। "knowing subject has to make itself its `object’ "। পাঠক এসব নিয়ে ভাবতে থাকুন। ইতোমধ্যে আমি জ্ঞানের বিষয় (object) প্রকৃতি এতটুকু বুঝে কথা আগাই।
উপরে যে প্রকৃতির কথা বললাম, তা বুঝতে জ্ঞান লাভ বা চর্চা করে কারা? দার্শনিকেরা। জ্ঞানী আর দার্শনিক (philosopher) শব্দ দুটোর অর্থ কাছাকাছি। [philosopher= philos "loving" + sophia "learning, wisdom"]। সারকথায়, সব মানুষই জ্ঞানী দার্শনিক হবার জন্য পোটেনশিয়াল তবে, যারা wisdom কে ধ্যানজ্ঞান করেছে তারাই দার্শনিক।
এদিকে আবার, জ্ঞান চর্চার ধারায় প্রক্বতি সংক্রান্ত (natural) ও সমাজ বা মানুষ সংক্রান্ত (social) - এভাবে মোটা দাগে দুটো ভাগ করে জ্ঞান বা দর্শন চর্চাকে করতে আমরা দেখছি বটে; কিন্তু দার্শনিকের কাছ জ্ঞান একটাই। একই জ্ঞানের ধারায় সে দুটোকেই ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা রাখে। অর্থাৎ সে অর্থে সবকিছুকে এবং তা অবশ্যই systematic examination of basic concepts অর্থেও। এজন্য, সব জ্ঞানের জ্ঞান হলো দর্শন। ঐ systematic examination of basic concepts এর খাস মানে হলো পদ্ধতির প্রশ্ন, যেটাকে আমরা বৈজ্ঞানিক বলে চিনি। আর পদ্ধতি ঠিক না হলে ওটা জ্ঞান বা দর্শন হিসাবে টিকে থাকতে পারবে না, কোন কিছু ব্যাখ্যাও করতে পারবে না। আমি এভাবে এখানে জ্ঞান, বিজ্ঞান ও দর্শন - শব্দ তিনটাকে পাশপাশি রেখে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলাম বটে, তবে বাক্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক সময় শব্দ তিনটাকে সমার্থক (synonymous) শব্দ অর্থে ব্যবহার করতে দেখা যায়। যেমন উপরে মার্কসের লেখা থেকে যে উদ্ধ্বতি "We know only a single science, the science of history" নিয়েছি, ওখানে science এর অর্থ জ্ঞান বা দর্শন। এর আরও বিস্তারে যাবার আগে চলতি প্রসঙ্গ শেষ করে নেই।
পুঁজিতান্ত্রিক সম্পর্কে দুনিয়ায় উৎপাদন শুরু হবার আগে বিজ্ঞান চর্চা বা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জ্ঞান চর্চা ছিল, তবে কারখানা এর পৃষ্টপোষক হবার পর থেকে উৎপাদনে পেশাদার লোক তৈরীর প্রয়োজনে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জ্ঞানকে যখন নামিয়ে আনা হলো, এবার জ্ঞানের নাম হলো শিক্ষা। এইভাবে সর্বোচ্চ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের নাম বিশ্ববিদ্যালয়। একে ফ্যাকাল্টিতে বিভাগে ভাগ করতে গিয়ে - প্রক্বতি সংক্রান্ত (natural) বিজ্ঞান ও সমাজ বা মানুষ সংক্রান্ত (social) বিজ্ঞান - এভাবে ভাগটা বজায় থেকে যায়। প্রক্বতি সংক্রান্ত (natural) বিজ্ঞান যার মধ্যে ইনজিনিয়ারিং, চিকিৎসাশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, উদ্ভিদ ও প্রাণী বিদ্যা, গণিত ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত - এটাই আকার ইঙ্গিতে একমাত্র বিজ্ঞান বলে এক ধারণার আধিপত্য সৃষ্টি করে। আর বিপরীতে সমাজ বা মানুষ সংক্রান্ত (social) বিজ্ঞান বিজ্ঞানের দাবীদারী হারায়। মানে দাঁড়ায় যেন, এই জ্ঞান অর্জন বা চর্চার ক্ষত্রে systematic examination of basic concepts অর্থে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নাই বা অনুসরণ করা হয় না। এর মূল কারণ এক্ষেত্রে এখানে পরীক্ষা করার পদ্ধতি ভিন্ন; প্রক্বতি সংক্রান্ত (natural) বিজ্ঞানের মত এটা ল্যাবরেটরী নির্ভর নয় বলে এবং ল্যাবরেটরী নির্ভরতাই একমাত্র বিজ্ঞানের মাপকাঠি - এই ধারণা চেপে বসেছে। এছাড়া , চোখে-দেখা ভিত্তিক বিজ্ঞান এই জ্ঞানতাত্ত্বিক সমস্যাও কম দায়ী নয়। আবার মজার কথা হলো, সমাজ বা মানুষ সংক্রান্ত (social) বিজ্ঞানকে বিজ্ঞানের খাতা থেকে খারিজ গণ্য করার পর আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী দেবার বেলায় যে যে ফ্যাকাল্টি থেকে আসুক না কেন ওকে বলা হচ্ছে, পিএইচডি, মানে ডক্টর অফ ফিলোসফি। কেন? প্রযুক্তিবিদের বা ইনজিনিয়ারিং এর সাথে দর্শনের কী সম্পর্ক? ডক্টর এর আদি মানে রোমান ক্যাথলিক চার্চের সূত্রে প্রখ্যাত ধর্মতত্ত্ববিদ। ওটা না হয় বাদ দিয়ে, এর অর্থ এই জমানার knowledgeable বা বিদ্যাধর ধরি তবু এই প্রযুক্তিবিদ বিদ্যাধরের সাথে দার্শনিকের সম্পর্ক বের করা সত্যিই জটিল কাজ। মস্করা থাক, জ্ঞানের শাখা, উপশাখায় ভেঙ্গে যত নিচেই যাই না কেন সব জ্ঞানে জ্ঞানের চূড়া - দর্শনে সবার ফিরে আসা বা ছুতে চেষ্টা বা তাগিদটাই এখানে লক্ষণীয় এবং গুরুত্ত্বপূর্ণ।
এত কিছু প্রাতিষ্ঠানিকতা (কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়) পর্ব সত্ত্বেও ওদিকে অপ্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান চর্চার ধারা সব সমাজেই পাশাপাশি নিজেকে টিকিয়ে চালিয়ে নিতে পেরেছে। সব সামাজিক বিপ্লবের চিন্তা, তত্ত্ব এসব প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে এসেছে এবং ঘটেছে। এটাই হতে বাধ্য। এখন এই বিপ্লবের দর্শনগুলো বৈজ্ঞানিক ছিল কী না তা কী দিয়ে মাপবো? এর উত্তরে একটু পরে আসছি।
শুরুতে দেয়া মার্কসের কোটেশনে যাবো এখন। মার্কসের বিজ্ঞান বিষয়ে দাবী হলো জ্ঞান বা দর্শন অর্থে, বিজ্ঞান একটাই, আর সেটা হলো ইতিহাসের বিজ্ঞান। এ'আবার কোন ইতিহাস? এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ইতিহাস নয় তা ভাবে বুঝি। এটা বায়তুল মোকার্রমের কোন "ঐতিহাসিক জনসভার" মাইকিংয়ে যেমন বলা হয় সেই ইতিহাস নয় - এটাও বোধহয় একটু একটু অনুমান করি। তাহলে একোন ইতিহাস বা ঐতিহাসিকতা?
ধরা যাক, আমি বললাম, মানুষ ধারণাটা ঐতিহাসিক। মানে কী? মানুষের একটা ইতিহাস আছে, তাই?
না। আজ পর্যন্ত দুনিয়ার দেখা সমাজে সবসময় মানুষ একরকম ছিল না। আমার আজ মানুষ বলতে যাকে সামনে দেখছি সে সবসময় এরকম নয় বা ছিল না। মানুষ ব্যক্তি হয়েছে তাঁর ইতিহাসের একটা পর্যায়ে। একই রকম চিন্তা করা এমনকি নিজের সম্পর্কে চিন্তা করা, বেঁচে থাকার উপায় সংগ্রহ, জীবনযাপন পদ্ধতি, অন্য মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্হাপন, প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক, উৎপাদন, শ্রমে নিয়োজিত হবার ধরণ, হাতিয়ার প্রয়োগের ধরণ - এরকম সবকিছুতে মানুষ একরকম ছিল না। তাহলে মানুষ সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা করতে গেলে ওটা ওর বেড়ে উঠার ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যেই অনুসন্ধান করে একএকটা করে পেতে হবে। এটা সবচেয়ে ভালো ভাবে ধরা যাবে ওর উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যে। ওটা বাকি সব কিছুর নির্ধারক। তাহলে উৎপাদন সম্পর্ক মানে আবার কী? মানে হল - মানুষে মানুষে ও মানুষে-প্রকৃতিতে উৎপাদন বিনিময় সম্পর্ক, আর এর ভিতর দিয়ে বদল ঘটা সম্পত্তির রূপ-সম্পর্ক। মানুষের ইতিহাসে এসব সম্পর্কের ভিতর দিয়ে মানুষ সম্পর্কে একটা ঐতিহাসিক ধারণা লাভ করা সম্ভব। এতে এখনকার দৃষ্টিভঙ্গি আগের ঘাড়ে চাপিয়েও বুঝা যাবে না। এই অর্থে মানুষ মাত্র ঐতিহাসিক মানুষ।
তো মানুষের ইতিহাসকে দেখার এই পদ্ধতিকে তিনি ইতিহাসের বিজ্ঞান দাবী করছেন ইতিহাসকে আবার মানুষের ইতিহাস আর প্রকৃতির ইতিহাস বলে দুভাগে ভাগ করে দেখার চেষ্টাকে তিনি নেহায়েতই দুটো আলাদা দিক থেকে দেখার চেষ্টা মনে করেন। কারণ পরখ করে দেখার সুবিধার জন্য ভাগ করে দেখলেও এরা অবিভাজ্য; মানুষ যতদিন আছে ততদিন মানুষের ইতিহাস আর প্রকৃতির ইতিহাস একে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়েই ইতিহাস হয়েছে। প্রকৃতির ইতিহাস যাকে আমরা তথাকথিত প্রকৃতি বিজ্ঞান বলি - সেটা এখানে তাঁর বিবেচ্য বিষয় নয়। তবে মানুষের ইতিহাস আমাদেরকে অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
এই হলো মার্কসের ইতিহাসের বিজ্ঞান আর সেই সূত্রে natural science ও social science কে দেখার ক্ষেত্রে মার্কসের মনোভাব।
কিন্তু প্রকৃতি বিজ্ঞান বা natural science কে মার্কস তথাকথিত বললেন কেন?
এর উত্তর আমি আগে দিয়েছি, জ্ঞানের বিষয় (object) আর কর্তা (subject) আলোচনায় । অনেকে ধরতে পারেননি হয়তো। আবার ধরিয়ে দেই।
প্রকৃতি বিজ্ঞান বা natural science: বিজ্ঞান মানে - systematic examination of basic concepts - বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রকৃতিকে জানা। প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান বা দর্শন।
পাঠক লক্ষ্য করুন, এখানে অবজেক্ট বা জ্ঞানের বিষয় হলো প্রকৃতি। আর সাবজেক্ট বা জ্ঞানের কর্তা হলো মানুষ বা চিন্তা।
এখন এই প্রকৃতি মানে কী? মানুষ কী এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত? এর অংশ ধারণা করেছি? কী না?
আগেই বলেছি, আমরা প্রথমে থতমত খেয়ে হলেও স্বীকার করবো, হ্যা মানুষ অন্তর্ভুক্ত, মানুষ প্রকৃতির অংশ। অথবা একটু বুদ্ধিমানেরা বলবে, মানুষ একই সঙ্গে প্রকৃতিও; মানুষ ও প্রকৃতি অবিচ্ছেদ্য।
কিন্তু প্রকৃতি বিজ্ঞান বা natural science যে বিজ্ঞানের দোকান খুলেছে ওখানে তো এই অবিচ্ছেদ্য জ্ঞান করে প্রকৃতি বিজ্ঞানকে সাজানো হয় নাই। মানুষ তো ওখানে দর্শক বা কর্তা মাত্র। তাহলে কাকে একজামিন করবো? কাকে একজামিন করে প্রকৃতি বিজ্ঞান বা natural science তার সৌধ গড়েছে? মানুষ কী স্রেফ বায়োলজিক্যাল এলিমেন্ট? অথবা মানুষ ছাড়া এক প্রকৃতির কল্পনা করবো? এ'আবার কেমন প্রকৃতি? সাবজেক্ট সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কার systematic examination of basic concepts নিব? অতএব, দেখা যাচ্ছে এই জ্ঞান অসম্পূর্ণ। প্রকৃতি বিজ্ঞান বা natural science একটা অসম্পূর্ণ জ্ঞান ও দর্শন। এজন্যই মার্কস একে তথাকথিত প্রকৃতি বিজ্ঞান বলেছেন। বলছেন বিজ্ঞান একটাই। মানুষের ইতিহাসের বিজ্ঞান। ঐতিহাসিক মানুষের বিজ্ঞান। জ্ঞান বা দর্শনও। বিজ্ঞানের বড়াইকারীরা এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণের পরই কেবল তারা আলাপ করতে পারে "মার্কসবাদ কী বিজ্ঞান?"।
অনেক প্রসঙ্গ এখানে বাদ পড়লো জানি এবং মানি। কিন্তু শেষ করতে হচ্ছে। যারার আগে একটা scoop দিয়ে শেষ করছি। মানুষ মানে, মানুষের দেহ যেখানে মানুষ ও প্রকৃতির মহামিলন প্রতীকায়িত হয়ে আছে। ওকে আলাদা করা এক অসম্ভব কল্পনা। জয়গুরু!
২| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৮:৫৪
তরিকুল হুদা বলেছেন: খুবই দরকারি লিখা।বিষয়ের কারনেই প্লাস দিলাম।ভালো মত পইড়া আবার কথা কব।
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১২:৪৭
পি মুন্সী বলেছেন: ধন্যবাদ তারিক। অপেক্ষায় থাকলাম।
আপনার Bruno Bauer নিয়ে লেখার কী হলো?
৩| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:০১
পাগল রাজা বলেছেন: সচলায়তনের দালাল হাসিব, দালালী কৈরা কত পাও ?
চান্দু, সামহোয়ারে ডিউটি ভালো কৈরা দিও কিন্তু, নাইল পেমেন্ট বন্দ হয়ে যাইবো কৈলাম।
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১২:৫৩
পি মুন্সী বলেছেন: হাসিব মাহমুদ আর পাগল রাজার ব্যাপারটা কী? আমার এই পোষ্টে আপনাদের কান্ডটা বুঝতে পারছি না। আমাকে মাফ করে দিলে হয় না?
৪| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:১৫
হাসিব মাহমুদ বলেছেন: অরজিনিয়াল নিকে প্লিজ @ ছাগল রাজা
৫| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:০৮
রিফাত হাসান বলেছেন: লেখাটি যদ্দুর সম্ভব পড়ে গেলাম, পরে আবার এসে মন্তব্য করবো। জরুরী লেখা।
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:১৪
পি মুন্সী বলেছেন: আপনার মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকলাম।
৬| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:২২
স্বাক্ষর শতাব্দ বলেছেন: আমি জানি না আপনি বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন কিনা, লেখাটা ভালো লেগেছে, একটা অনুরোধ, সেটা হলো, কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং অনিশ্চয়তাবাদ মেনে নিলে মার্ক্সের কার্যকারণ তত্ত্ব কি নাকচ হয়ে যায়? এ ব্যাপারে কোন পোস্ট দিলে অথবা আমার এই মন্তব্যের উত্তরে কিছু বললে খুশি হব।
ধন্যবাদ।
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:১৬
পি মুন্সী বলেছেন: বিজ্ঞানের ছাত্র মনে হয় ছিলাম, তবে বিজ্ঞানের দাবীদারদের কান্ডকারখানা দেখে দাবী ছেড়ে দেবার কথা ভাবছি। যাই হোক, মার্ক্সের কার্যকারণ তত্ত্বটা কি? আমার জানা নাই। প্রসঙ্গটা কোথায় আছে জানালে পড়ে আমার মন্তব্য জানাতে পারি।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স হয়তো (তত্ত্বগতভাবে) পদার্থ, রসায়ন বা বায়োলজিক্যাল সিষ্টেমের আচরণ দুনিয়ার (universe) প্রেক্ষিতে অনেক ক্ষুদ্র স্তরে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। তাসত্ত্বেও এটা মানুষ বা তাঁর সমাজ ব্যাখ্যা করতে পারবে না বা ব্যাখ্যা করতে কোন কাজে আসবে না। কারণ, মানুষ বায়োলজিক্যাল সিষ্টেম মাত্র নয়। মানুষ বায়োলজিক্যাল সিষ্টেম গণ্য করা মানুষকে খাটো করা, degrade করে দেখা। মানুষের চিন্তা করার ক্ষমতাই শুধু নয়, মানুষের Human faculty ও এর ক্ষমতাকে উপেক্ষা করা হবে। মানুষকে শুধু বায়োলজিক্যাল শরীর বলে আমরা ধরে নিতে পারি না। এটা physio-psyche এক সত্ত্বা। একই সাথে এটা শরীর ও মন, এক অবিচ্ছেদ্দ সমাহার। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের তত্ত্ব যদি অবিচ্ছেদ্দ সমাহার অবস্হায় মানুষকে বিবেচনা করতে না পারে, বায়োলজিক্যাল শরীর মাত্র গণ্য করে বিচারে বসতে চায় - তবে এটা ঐ তত্ত্বের অক্ষমতা এবং সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে এক অজ্ঞানতা। এসম্পর্কে বেখবর থেকে কোয়ান্টাম মেকানিক্স দিয়ে মানুষের কোন কিছু ব্যাখ্যা করার চেষ্টার অন্য মানে হবে, তত্ত্বের প্রয়োজনে বিচার্য বিষয়কে ছেঁটে খাটো করা, degrade করা।
আমার এই পোষ্টের মূল বক্তব্য ছিল, প্রকৃতি বিজ্ঞান বলে বিজ্ঞানের একছত্র সর্ব-প্রভাবী যে ধারা গড়ে উঠেছে এটা "প্রকৃতি-বিষয়ক" বিজ্ঞান নয় এবং তা হয়ও নি। কারণ, ওখানে "প্রকৃতি" ধারণার মধ্যে হয়, ১) মানুষকে অন্তর্ভুক্ত গণ্য করা হয়নি অথবা ২) মানুষকে শুধু বায়োলজিক্যাল শরীর গণ্য করে অন্তর্ভুক্ত বলে ধরে নেয়া হয়েছে।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স তো তথাকথিত প্রকৃতি বিজ্ঞানেরই আর এক ধারা মাত্র যেখানে মানুষ বড়জোড় শুধু বায়োলজিক্যাল শরীর।
কিন্তু তবু কেন আমরা যারা সমাজ নিয়ে বিতর্ক করি বুঝতে চাই তারা কেন বারবার তথাকথিত এই প্রকৃতি-বিষয়ক বিজ্ঞানের খপ্পড়ে পড়ছি, আকৃষ্ট বোধ করছি - আমি মনে করি আমাদের জানতে হবে এর উৎস কী? এর উৎস খুজে বের করতে না পারলে আমাদের মুক্তি নাই। এর উত্তর এঙ্গেলস সাহেবকে ধরলে জানা যেতে পারে।
ওদিকে দেখুন, Human faculty মানে কিন্তু নেহায়েতই মানুষের মন বলে ধরে নিয়ে বসে নাই। চিন্তা টের পেয়ে গেছে সে'ই faculty। সে গায়েবী না। চিন্তা জানে কে চিন্তা করে, কী করে করে, পদ্ধতি কী হতে পারে - এবং সর্বোপরি ঐ জানার নিশ্চয়তা কী যে সে জেনেছে - এটাও তার কাছে পরিস্কার। আপনার "অনিশ্চয়তাবাদ" সম্পর্কে আগাম অনুমানে ধরে নিয়ে এরচেয়ে বেশী বলতে পারলাম না। কেবল সারকথাটা আর একবার বললাম। আগামিতে প্রশ্ন আরও সুনির্দিষ্ট পেলে ভেবে দেখে আবার কথা বলতে পারি। ধন্যবাদ আপনাকে এসব জটিল বিষয়ে প্রবেশ করার তাগিদ অনুভব করার জন্য।
৭| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:২৬
শরৎ চৌধুরী বলেছেন: চোখে রাখলাম মুখে বলবো পড়ে..
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৫৪
পি মুন্সী বলেছেন: আপনার মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকলাম। ধন্যবাদ।
৮| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:২০
মনজুরুল হক বলেছেন: সুপ্রিয় পি.মুন্সি,
সচলে অভিজিতের লেখাটা বহুবার পড়েছি।ওখানে আপনার মন্তব্যও দেখেছি।আমি সচল ছেড়েছুড়ে চলে এসেছি বলে ওখানে কিছু বলার সুযোগ ছিল না।অভিজিৎ এন্ড গং রা যে উদ্দেশ্যে লেখাটা উপস্থাপন করেছিলেন সেটা হীন উদ্দেশ্য সন্দেহ নেই,কিন্তু সেটা যখন আপনি,ফারুক ওয়াসিফ,রাসেল এবং আরো কেউ কেউ কন্ডেম করতে চাইলেন তখন ধুরন্ধর অভিজিৎ প্রসঙ্গান্তরে সরে গেল।শেষের দিকে এসে ওটা আর মার্কসবাদ বিজ্ঞান কী-না সে আলোচনায় থাকল না।অভিজিতের মুখ দিয়ে মার্কবাদ এবং এ সংক্রান্ত বিষয়াদির প্রতি যে গরল বর্ষিত হয়েছে তার প্রত্যেকটা জবাব আমার কাছে ছিল,এবং সেগুলো দেওয়ারও সৎসাহস ছিল,কিন্তু ওই যে বললাম-আমি সচল ত্যাগ করেছি। যা হোক খুব অল্প কথায় অভিজিৎদের উদ্দেশ্য মনে হয়েছে এইরকমঃ
"পরিবর্ধণশীল,পরিবর্তনশীল সমাজ বিজ্ঞান কে নিরেট বিজ্ঞান আখ্যা দিয়ে প্রমানের ফ্রেমে ফেলে বাতিল বলে প্রতিয়মান করা,অথচ বাক্যপটুতায়,বাক্যগুরুগম্ভিরতায় এবং রেফারেন্সতুল্যতায় তা যেন প্রতিয়মান হয় 'দেখুন ভাই আমি মার্কসবাদের পক্ষেই' ধরণের সিদ্ধান্তে !এই প্রায়-নিখুঁত বুদ্ধিবৃত্তিক জালিয়াতি তে আর যাই থাকুক কোন সৎ উদ্দেশ্য নেই।"
ডায়ালেকটিকসের দুটি সুপরিচিত সংঘার্থ সূত্রায়িত করেছিলেন এঙ্গেলস।'ডালেকটিকস অব ন্যাচার' এ তিনি এর সংঘঅর্থনিরুপণ করেছেন সংযোগসমূহের বিজ্ঞান বলে,এবং 'এ্যান্টি ডুরিং'এ, সমস্ত গকি ও বিকাশের বিশ্বজনীন নিয়মগুলির বিজ্ঞান বলে। বিশ্বজনীন সংযোগের নীতিটাকে এঙ্গেলস বিবেচনা করেছিলেন গতি ও বিকাশের নীতির ঘনিষ্ট ঐক্যে,কেননা বস্তুগত জগতে সংযোগ বলতে বোঝায় মিথক্রিয়া,আর মিথক্রিয়া হলো গতি ও বিকাশ। 'আমাদের অধিগম্য প্রকৃতির গোটটাই গঠন করে একটি ব্যবস্থাতন্ত্র, পদার্থসমূহের এক আন্ত:সংযুক্ত সামগ্রিকতা, এবং পদার্থসমূহ বলতে আমরা এখানে বুঝি সমস্ত বস্তুগত অস্তিত্ব,এই পদার্থগুলি যে আন্ত:সংযুক্ত এই ঘটনাটির মধ্যেই এটা অর্ন্তভুক্ত যে সেগুলি একটি অপরটির প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায়, আর এই পারস্পারিক প্রতিক্রিয়াই হলো গতি।'
সেই জন্যই এঙ্গেলস যখনবিশ্বজনীন সংযোগের বিজ্ঞান বলে ডায়ালেকটিকসের সংঘার্থ নিরুপণ করেছিলেন,তখন তিনি এই সংযোগগুলির দ্বারা নির্ধারিত মিথক্রিয়ার বিশ্বজনীন নিয়মগুলিকেও গতি ও বিকাশের নিয়ম গুলিকে বুঝিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে সকল গতির বিশ্বজনীন নিয়মগুলির বিজ্ঞান বলে ডায়ালেকটিকসের সঙ্ঘার্থ-নিরুপণ করার সময়ে এঙ্গেলস বিশ্বজনীন সংযোগগুলিকেও বোঝান, কেননা মিথক্রিয়া বা গতি ছাড়া কোন সংযোগ নেই,ঠিক যেমন সংযোগ বা মিথক্রিয়া ছাড়া কোন গতি নেই।
দ্বান্ধ্বিক বস্তুবাদ বিজ্ঞান কী বিজ্ঞান নয়, তা কি পরিষ্কার হয়ে যায় না ?অবশ্যি ওরা এইসকল ত্বত্ত্ব,যুক্তিকে 'সনাতনী মার্কসবাদীদের যুক্তি' বলে উড়িয়ে উত্তরাধুনিকতাবাদীদের (পপার,দেরিদা) নিওলিবারালাইজেশন কে মার্কসবাদের বিকল্প বলে চালিয়ে দিতে চান।এই আহম্মকের ঢেঁকিদের সাথে তর্কযুদ্ধের সমস্যা একটাই, তা হল এরা শেষ পর্যন্ত প্রকরণবাদী আর প্রয়োগবাদীদের মত সাফল্য দিয়ে নিরুপণ করতে চান। সে কারণে সোভিয়েতের ভাঙ্গন কে আইডল ধরে মূর্খের মত বলেন-'তাহলে টিকল না কেন'?আহম্মক আর কাকে বলে !
পরে এ নিয়ে কথা হবে।
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:০৬
পি মুন্সী বলেছেন: অভিজিত সম্পর্কে আপনার বক্তব্য জানলাম। কম-বেশী আপনি ঠিকই বলেছেন। তবু অভিজিতের অভিযোগগুলো অভিজিতের জায়গায় দাড়িয়ে ওকে বুঝবার জন্য একটা সারসংক্ষেপ দাঁড় করানো দরকার বলে আমি মনে করি। চেষ্টা করছি, শেষ করতে পারি কী না দেখি।
আমার এই পোষ্টের পর এখন পর্যন্ত যা দাড়িয়েছে তাতে, আমি দাবী করছি- বিজ্ঞান একটাই। এই অর্থে জ্ঞানের বিষয়ের দিক থেকে বিবেচনায় প্রকৃতি বিজ্ঞানের প্রকৃতি ধারণাটাই অসম্পূর্ণ, সঠিক নয়। ফলে ওটা তথাকথিত প্রকৃতি বিজ্ঞান। আর অভিজিত পপার-বাদী হয়ে বলছেন, মিথ্যাপ্রমাণ যোগ্যতা নিয়ে শুরু হয় নাই বলে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নে মিথ্যাপ্রমাণ হয়েছে বলে মার্কসবাদ বিজ্ঞান নয়।
এখনও আমাদের দাবী দুটোকে আরো মুখোমুখি, যথেষ্ট সংঘাতে নেওয়া বাকি রয়ে গেছে।
আবার ওদিকে, দেরিদার নিওলিবারালাইজেশন দিকে অভিজিত ইতোমধ্যে তার চিন্তার নতুন সখ্যতা প্রকাশ করতে শুরু করছেন। এই প্রসঙ্গের দিকে আমার এখনও তাকে মোকাবোলায় যাওয়া হ্য় নাই। যেতে হবে।
আমার ধারণায় অভিজিত:
নিজের পেশায় বিজ্ঞানের ছাত্র বলে, বিজ্ঞান (আসলে তথাকথিত প্রকৃতি বিজ্ঞান) এর উপর সর্বোচ্চ আস্হা, উচ্চমার্গের শ্রেষ্ঠ ধরণের ধারণার কারণে - মার্কসের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নাই, ওটা বিজ্ঞান হয়নি- পপারের মার্কসের এই সমালোচনাগুলো অভিজিতকে খুবই আকৃষ্ট করে। করতেই পারে, এমনকি সঠিকভাবেই তা করতে পারে। সমস্যাটা হলো পপারের মার্কসকে সমালোচনাগুলো ভিতর দিয়েই অভিজিতের মার্কসের লেখায় প্রথম সিরিয়াস প্রবেশ ঘটছে। এই প্রবেশের পর মার্কসের লেখা মূল রচনা পর্যন্ত পড়ে মার্কসকে যাচাই করার কাজটা অভিজিত এখনও করেননি। এটা খুব সহজ কাজও নয়। এরপর যদি অভিজিত সমালোচনা লিখতো তো সেগুলো আমাদের জন্য খুবই কাজের হতো। এজন্য যদি জিজ্ঞাসা করা হয় মার্কসের কোন লেখাটা পরে আপনার এই ধারণা? তো পপারের বইয়ে উদ্ধৃত মার্কসের সমালোচিত অংশই অভিজিতের ভরসা। আমার এভাবে লেখার উদ্দেশ্য এমন নয় যে মার্কস ভুল করতেই পারেন না, বা মার্কসবাদের বিরুদ্ধে কোন প্রশ্ন, পর্যালোচনা আমার নাই।
সময়াভাবে এখনকার মত এখানেই শেষ করতে হচ্ছে।
৯| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সকাল ১০:২৬
পাগল রাজা বলেছেন: ছাসিব,
তুমি তুমার দালালী রেইট টা কইলেও কমু।
এইডাই আমার আসল নিক চান্দু।
১০| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১২:৫৫
দ্বিতীয়নাম বলেছেন: পুজিবাদে পুষ্টু শরীরে কত যে আহ্লাদী দেখুম।
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:১৬
পি মুন্সী বলেছেন: উপনিবেশী ব্যবসা-কায়কাবারের জন্য আমাদের তথা ভারতীয় উপমহাদেশে রেলওয়ে ব্যবস্হা চালু হয়েছিল। এই রেলওয়ে চড়ে আমরা চট্টগ্রাম কক্সবাজার আমোদ আহ্লাদ করতে যেতে পারি। এই রেলওয়ের কারণেই আমাদের প্রায় স্হবির জীবন অর্থনীতিতে যোগাযোগ প্রাণ এনেছিল। এসবে "পুষ্টু শরীরে" আমরা উপনিবেশকে ন্যায্য মনে করেনি। উপনিবেশের বিরুদ্ধে সংগ্রাম আমাদের করেছি, করতেই হয়েছে এবং এখনও ভিন্ন কায়দায় জারি রাখার ক্থা ভাবতে হবে।
১১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:২১
একবাল হুসেন বলেছেন: এইসব মানব রচিত মতবাদের মোহ ত্যাগ করুণ।
১২| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:৩৩
মনজুরুল হক বলেছেন: @একবাল হুসেন । আপনার মতবাদেই মোহাবিষ্ট হতে চাই: বলুন কী সেটা ?সেটা কী মানব রচনা করে নাই ?তাহলে কে করেছে ?ভূত, না একবাল হুসেন ?
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৪৩
পি মুন্সী বলেছেন: নীচে আপনাদের দুজনকেই একটা অনুরোধ করেছি। প্লিজ এটা অনুসরণ করুন।
১৩| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:৫৬
একবাল হুসেন বলেছেন: মনজুরুল হক, আপনার সাথে আলোচনায় আগ্রহী হতে পারি। কিন্তু আপনার মন্তব্যের শেষ তিনটি প্রশ্নের মধ্যে যে অবজ্ঞার সুর আছে তাতে মনে হয় না আলোচনা করে তেমন ফল হবে।
আমি আপনারা যাকে ফ্যানাটিক মুসলমান বলেন সেরকম কিছু নই। রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং দর্শন আমার প্রিয় বিষয়। আমি সাধারণভাবে ভাববাদের সমর্থক। রিলিজিওন হচ্ছে ভাববাদের সংগঠিত ধারক। ইসলাম এদের মধ্যে সব থেকে শক্তিশালী। ইসলামের অন্তর্নিহিত শক্তি এর উম্মাহ্ র ইমান। ইসলামের প্রথম কথা যে কলেমা তৈয়বা তাতে শুরুতেই একজন মুসলমান নিজেকে আল্লাহ এবং তার রাসুলের কাছে সমর্পন করেন। একজন মুসলমানের মতে তাঁদের ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন নাজিল হয়েছে আল্লাহ্ র প্রতিনিধি হযরত মুহাম্মদ (সা র উপরে। এই বিশ্বাস কে যিনি বস্তুবাদ দিয়ে বিচার করতে চান তিনি কোন অবস্থাতেই মুসলমান নন বা মুসলমানদের নিকট গ্রহণযোগ্য নন। বস্তুবাদের দৃষ্টিতে পৃথিবীকে দেখতে গেলে প্রথমেই একজনকে নাস্তিক হতে হয়। আপনাদের বস্তুবাদ জনবিচ্ছিন্ন হবার এটা একটা প্রধান কারন।
আপনারা যাকে রেনেসা বলেন বা এনলাইটেনমেনট বলেন সেটা তো আসলে খৃষ্টধর্মের একটা পরিবর্তিত ধারা। রেনেসার যুগে মুনাফার লোভে মূল খ্রীষ্ট ধর্মকে বস্তুবাদি দৃষ্টিতে কাটছেড়া করা হয়েছে। এরফলে তাদের সেই সমাজ গায়েবের প্রতি প্রশ্নহীন বিশ্বাস থেকে সরে এসেছে। যন্ত্র দিয়ে অতি উৎপাদন তাদেরকে শিরকের দিকে ঠেলে দিয়েছে। মুসলমানেরা তথা ইসলাম এই কাটাছেড়া থেকে মুক্ত। আজকে যাকে আপনারা শোষন বলেন তার ভিত্তিমুল উপরে ফেলতে গেলে ইসলাম ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই।
ধন্যবাদ।
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৫৩
পি মুন্সী বলেছেন: জনাব একবাল হুসেন, আমার একটা বিনীত অনুরোধ; আপনার "মানব রচিত মতবাদের মোহ ত্যাগ" করার আবেদন আমরা ভেবে দেখতে পারি, তবে, অন্যখানে যখন আমরা ঐ প্রসঙ্গে কোন আলাদা পোষ্টে এটা করবো। এখানে প্রসঙ্গ এটা "মানব রচিত মতবাদ" হ্যাঁ কী না - এটা একেবারেই নয়। প্রসঙ্গটা হলো প্রকৃতি বিজ্ঞান আদৌ বিজ্ঞান হয়েছে কী না? বিজ্ঞান বা দর্শন একটাই না একাধিক? -- এই সব।
কাজেই দয়া করে প্রাসঙ্গিক থাকার চেষ্টা করুন ও করবেন আশা করি।
একই সাথে মনজুরুল হককেও অনুরোধ করছি, "মানব রচিত মতবাদ" কী না এনিয়ে জনাব একবাল হুসেনকে কোন জবাব এই পোষ্টে দিবেন না, আশা করি ।
এটা নিয়ে আলাদা পোষ্ট কেউ করলে তাতে অংশ গ্রহণ করবো কথা দিচ্ছি।
১৪| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৮:০৪
ত্রিভুজ বলেছেন: হুমমম....
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:৩৫
পি মুন্সী বলেছেন: শুধু হুমমম.... বললে হবে?
আপনার কাছে কিছু শুনবো আশা করেছিলেন।
মার্কস শুনলে এড়িয়ে যাওয়া কি ঠিক? আমি তো ধর্ম বিদ্বেষী কোন অবস্হান নেইনি!
১৫| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:২৪
আলিফ দেওয়ান বলেছেন: ছাগুরাম বলেছেন : হুমমম....
১৬| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:২৮
ড্রিমক্যাচার বলেছেন:
এইডা আগমো থেরাপিস্ট ভাই না হয়া যাইতেই পারেনা
১৭| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:২৩
স্বাক্ষর শতাব্দ বলেছেন: "তবে এটা ঐ তত্ত্বের অক্ষমতা এবং সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে এক অজ্ঞানতা।"--- আমি দর্শন হিসেবে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ যে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কাছে এসে ধরা খাচ্ছে তার কথা বলতে চাচ্ছি। দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের দ্বারা যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি তা মানুষের কল্যাণ করবে সেটা আমি মানি, কিন্তু বস্তুর বৈশিষ্ট্য বা অবস্থান যে কোন স্থানে হতে পারে, এরকম ব্যাপার মনে হয় দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ সমর্থন করবে না। এ জন্যে সোভিয়েত বা ইউরোপীয় কমিউনিস্টরা কোয়ান্টাম তত্ত্বকে কখনোই মানতে পারেন নি।
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:৪০
পি মুন্সী বলেছেন: মার্কসের জবানে "দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ" প্রসঙ্গে কোন রচনা আপনার নজরে থাকলে জানাবেন।
১৮| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:৪৬
মনজুরুল হক বলেছেন: আবারো অভিজিৎ প্রসঙ্গঃ অভিজিতের উদ্দেশ্য খুবই পরিষ্কার।'মার্কসবাদ কি বিজ্ঞান'? প্রশ্নটা এভাবে এলে এর সহজাত উত্তর বা আলোচনা এগুনোর কথা মার্কসবাদ বিজ্ঞান কি না,অথবা বিজ্ঞান নয় কি কারণে ? এর উত্তরে আমরা যদি বলি "হ্যাঁ মাকর্সবাদ বিজ্ঞান"।তখনই প্রশ্ন এসে যাবে---'তাহলে প্রমান করুন ! বিজ্ঞান তো প্রমান ছাড়া চলে না।আমরা প্রমানের ফাঁদে পা দিলেই দেখব---আরো অনেক প্রশ্ন অপেক্ষায় আছে।শেষে যেয়ে দেখা যাবে অভিজিৎ প্রমান পেয়ে গেলেন----মাকর্সবাদ বিজ্ঞান নয়,সুতরাং ডায়ালেকটিকস মেটরিয়ালিজমই ভূয়া !
এইরকম একটি হীন পরিকল্পনা থেকে এই পিএইচডি আলোচনাটা ফেঁদেছেন। মার্কসবাদকে "নিরেট বিজ্ঞান" হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারলে আধুনিক সমাজবাস্তবতায় খন্ডন সহজ হয়ে যায়। ওদের আসল উদ্দেশ্য ছিল সেটাই।
আমার ধারণা ড.অভিজিৎ সেন এই বিষয় নিয়ে আর এগুবেনা। আর ও যে জার্মান চিরায়ত দর্শনের কথা এবং মার্কসের মূল রচনার কথা বলেছেন,সেটা পুরোটাই মিথ্যা। 'কমিউনিস্ট ইশতেহার' পড়লে পপার/দেরিদা আসার আগেই আদি বিষয়গুলি আসে,এবং প্রশ্নটাও এভাবে আসেনা। আমি তাকে Ralf Dahrendorf এর Classs and Class Conflict in industrial Society(2nd impression) টা পড়তে অনুরোধ করেছিলাম। সে এ বিষয়ে টুশব্দও করেনি।
খানাকতক উদ্ধৃতি খুলে বসে মার্কসবাদের অনেক রাজা-উজীর মারা সহজ। মূল কনফ্লিক্টে এলে ওইসব পিএইচডি মগজ ঘোলা হয়ে যাবে।(অসমাপ্ত)
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সকাল ১০:২৮
পি মুন্সী বলেছেন: লিঙ্কটা দেখুন।
Click This Link
১৯| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:৪৭
ভুডুল বলেছেন: +
২০| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:২২
স্বাক্ষর শতাব্দ বলেছেন: লেখক বলেছেন: মার্কসের জবানে "দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ" প্রসঙ্গে কোন রচনা আপনার নজরে থাকলে জানাবেন।
-------------বুঝলাম না
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৮:০২
পি মুন্সী বলেছেন: জীবিত মার্কসের ঘোষণা অনুযায়ী, তাঁর সমস্ত রচনা যৌথভাবে মার্কস-এঙ্গেস রচনাবলী নামে প্রকাশিত। একথা মানার পরেও মূল রচনা বা ড্রাফ্টটা কার করা এভাবে একটা ভাগ করা যায়। সেই অর্থে, মার্কসের কোন মুল রচনায় দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ প্রসঙ্গ তাঁর ঐ রচনার মধ্যে এসেছে - এমন কোন খবর আপনার কাছে আছে কী না, বা নজরে থাকলে জানাতে বলছিলাম। আমি দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ সম্পর্কে মার্কসের ফাস্ট হ্যান্ড মনোভাব বুঝতে চাইছিলাম।
২১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:২৫
মুসতাইন জহির বলেছেন: ভালো পোস্ট। অনেকদিন পর...
আপাতত পড়ে রাখলাম, পরে আলোচনা করার ইরাদা রাখি।
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৮:০৫
পি মুন্সী বলেছেন: পেটের ধান্ধায় ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছি আজকাল। আপনার মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকলাম।
২২| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১:১৬
হায়দার কািরগর বলেছেন: অনেক দরকারী পো্ষ্ট । আরো আলোচনা চলতে পারে।
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৮:০৮
পি মুন্সী বলেছেন: আলোচনা করার উস্কানি দিতেই তো লিখেছি। এখন একে সম্পূর্ণ করা আপনাদের পালা।
২৩| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:১০
মুহাম্মদ বলেছেন: কার্ল মার্ক্সের মতে এপিকুরোসীয় ও দেমোক্রিতোসীয় প্রকৃতি দর্শনের মধ্যে কি কি পার্থক্য (তার ডক্টরাল ডিসার্টেশনের বিষয়) আছে? সংক্ষেপে পয়েন্ট আকারে কেউ বললে ভাল হতো।
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:২৯
পি মুন্সী বলেছেন: কার্ল মার্কসের ডক্টরাল ডিসার্টেশনের বিষয়ে নীচের লিঙ্কটা দেখতে পারেন:
Click This Link
২৪| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:১৬
মইন বলেছেন: বহুত বড় লেখা।
এত্ত বড় লেখা লিখেন কিবা? কষ্ট লাগেনা?
না কপ্পিপেস্ট করা?
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:৪৭
পি মুন্সী বলেছেন: কষ্ট তো বটেই। এই যেমন আপনি কষ্ট করে এই প্রশ্নটা করেছেন। এরও পিছনেও একটা কষ্ট আছে, তাই না? আল্লাহ বলেছেন, দুনিয়াদারী করতে, দুনিয়াদারীর কষ্টের ভিতর দিয়ে জীবন পাড় করতে, তবেই জীবনের মানে বুঝা সম্ভব।
আবার এটা একমাত্র মানুষের পক্ষেই সম্ভব। ফেরেসতারাও যা পারে না আমরা মানুষেরা তাই পারি। এজন্য আমরা ফেরেসতার চেয়েও শ্রেষ্ট। আশরাফুল মুখ্লুকাত।
আর, এটা কপি-পেষ্ট করা কী না এর উত্তর আমি দিলে তো হবে না। এটা আপনাকেই কষ্ট করে নিশ্চিত হতে হবে। আমার মুখের কথায় বিশ্বাস কী?
ভালো থাকবেন, আপনার দুনিয়াদারী সফল হোক!
২৫| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৪৩
ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন: দুটো প্রশ্ন: মনুষ্যময়তা ছাড়া জ্ঞান ও দর্শনের জন্য কোনো লক্ষ্য ও উপায় সাব্যস্ত করা যায় কি? এবং বিজ্ঞান কি তাহলে নিছক একটা পদ্ধতি বিশেষ যার প্রয়োগ বিনা অর্থ নাই?
১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৩:৩৪
পি মুন্সী বলেছেন: পি মুন্সী বলেছেন: দুনিয়াতে জানা, বুঝা চিন্তা করার ক্ষমতা একমাত্র মানুষের আছে। এটা তাঁর সহজাত, অথাৎ এই ক্ষমতার জন্ম মানুষের জন্মের সাথে সাথে সহোদরের মত। ফলে মানুষ তো চিন্তা করবেই, চিন্তা আর মানুষ তাই প্রায় সমার্থক। মানুষ স-হ-জ ভাবে চিন্তা।
এখন মানুষ যা চিন্তা করে তা কার জন্য করে এই প্রশ্নকে ছাপিয়ে বড় প্রশ্ন হলো, কে বুঝবে তার চিন্তা? অর্থাৎ মানুষের চিন্তার "লক্ষ্য ও উপায়" কী তা সাব্যস্ত হবার আগাম প্রশ্ন হলো, কে বুঝতে পারবে তার চিন্তা? একমাত্র কাকে নিবেদন করা যাবে তাঁর চিন্তা?
উত্তর নিশ্চয় আপনার জানা। অন্য, অপর যেকোন এক মানুষই আপনার চিন্তা বুঝতে সক্ষম; এছাড়া কেউ নয়। বাদবাকির কাছে এটা বেকার। কেবল অপরের জন্যই আপনার চিন্তা নিবেদিত হতে পারে। ফলে আবার মানুষ, আপনার "মনুষ্যময়তা"। আমরা চাই বা না চাই, আগাম নির্ধারিত এই মনুষ্য-বিষয়ক-সম্পর্কের ভিতরেই আমরা চিন্তা করি, জ্ঞান ও দর্শন করতে যাই। মনুষ্যময়তার ভিতরেই জ্ঞান ও দর্শন হতে পারে "লক্ষ্য ও উপায় সাব্যস্ত" হয়ে যায়।
একটু ভুল বুঝার সুযোগ রাখলাম বোধহয়! মনুষ্য-বিষয়ক-সম্পর্কের - এভাবে বাক্য গঠন করেছি বটে কারণ চিন্তা মানুষের সমার্থক, আর চিন্তা নিয়ে কথা বলছিলাম তাই। কিন্তু এই মানুষ মানে - মানুষ আর প্রকৃতি - এরকম বিভাজন মনে আনা যাবে না, পিছনের মনেও না। যেমন, জানার প্রয়োজনে কোন কিছুকে আমার অনু পরমাণু বা পারলে আরও ছোট করে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দেখি। আবার দেখা শেষে আমরা বিভাজনটা মুখ্য গণ্য করি না, বরং সামগ্রিক ধারণা লাভ করাটাই মুখ্য থাকে ওখানে, লক্ষ্যও বটে। ফলে করা-বিভাজনটা ছাপিয়ে পিছনে ফেলে সামগ্রিক ধারণাটা আমাদের কাছে মুখ্য হয়ে যায়।
অতএব আপনার "মনুষ্যময়তা" দেখে আমি ভয় পাই নি, বিরোধ করিনি। আপনি যেটাকে "মনুষ্যময়তা" দেখছেন ওটাতো একই সাথে প্রকৃতিময়তাও বটে। এটাই মার্কসের কাছে এক অবিচ্ছেদ্দ বিষয়কে নেহায়েতই দুই দিক থেকে দেখা এবং এটা তখনই সমস্যা সৃষ্টি করে যখন ভেবে বসা হয় মানুষ প্রকৃতি থেকে স্বাধীন আলাদা কোন সত্ত্বা। তথাকথিত বিজ্ঞান মানে "প্রকৃ্তি বিজ্ঞান" এই স্বাধীন ধারণার উপরে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু তাই নয় মানুষের লক্ষ্য না কী "দূর্বিনীত" "প্রকৃতিকে জয়" করা। "প্রকৃতিকে জয়" করার তাবিজ বুকে বেঁধে মানুষের জন্য "বিজ্ঞানের" আবিস্কার জয়জয়কারে নেমেছে। আজকে পরিবেশ পরিবেশ বলে যে সংকটকে চেনানো হচ্ছে তা আসলে "প্রকৃ্তি বিজ্ঞান" এর দার্শনিক সংকট। এমনকি পরিবেশ বিজ্ঞান বলে "প্রকৃ্তি বিজ্ঞান" যে নতুন ফ্যাকড়া দাঁড় করিয়েছে ওখানেও এই দার্শনিক সংকট ওদের নজরে পড়েছে বা যেটাকে বলে এড্রেস করেছে এমন নজির নাই। ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি "প্রকৃতিকে জয়ী মানুষ" এর বীরত্ত্ব - একোন মানুষ? কে কাকে জয় করলো?
প্রকৃতির যে অংশগুলো ফ্যাকাল্টি-সম্পন্ন, চিন্তা করে ওগুলোকেই আপনি "মনুষ্যময়তা" দিক থেকে দেখছেন মাত্র। ঐ "মনুষ্যময়তা" সম্ভব হয়েছে প্রকৃতিময়তা আছে বলে। আবার, সব অর্থে মানুষ নির্ভর করে আছে, বেঁচে আছে একইসঙ্গে সে প্রকৃতি বলে। প্রকৃতিকে মানুষের বাইরে খুঁজতে যাবার দরকার নাই। আগে উল্লেখ করেছি, মানুষের দেহ বলে যেটাকে বুঝি ওটাই প্রতীকাবদ্ধ প্রকৃতি। মন বা চিন্তা অসম্ভব ওর একটা দেহগত অস্তিত্ত্ব না থাকলে। আবার দেহ ও মন অবিচ্ছেদ্দও বটে।
শেষের প্রশ্ন, "বিজ্ঞান কি তাহলে নিছক একটা পদ্ধতি"?
বিজ্ঞান মূলত পদ্ধতির প্রশ্ন সন্দেহ নাই, তবে পদ্ধতির ফলাফলকে পদ্ধতির নামে দেয়া ডাকনামটা চালু হয়ে গেছে। পদ্ধতি - মানে বিজ্ঞান বা বৈজ্ঞানিকতা অনুসরণের পর - পদ্ধতির ফলাফল মানে, জ্ঞান বা দর্শন না বলে ওকে বিজ্ঞান ডাকনাম দেয়াতে কোন সমস্যা হয় নাই। জ্ঞান, দর্শন ও বিজ্ঞানকে সমার্থক শব্দ জ্ঞান করা কোন বড় ব্যাপার না। অনেক ক্ষেত্রে এমন আমরা করে ফেলে থাকি। কিন্তু বিজ্ঞান বলতে তলে তলে যদি তথাকথিত "প্রকৃ্তি বিজ্ঞান" কেই কেবল একচেটিয়া বিজ্ঞানের (দর্শনও ) কর্তৃত্ত্ব দখল দিয়ে বিজ্ঞান কায়েম করে ফেলি তখনই তা দর্শনের সংকট সমস্যা তৈরী হয়। যেমন বলা হলো, বিজ্ঞান অনেক উন্নতি করেছে, আর্টস তেমন করে নাই। একই বাক্যে এমন বিজ্ঞান ও আর্টসের ব্যবহার অগ্রহণযোগ্য কারণ সমার্থক ধারণা দিয়েও এটা কাভার করা যায় না।
বিজ্ঞানের এই সংকটটা অগোচরে ঘটে গেছে তা নয়, "প্রকৃ্তি বিজ্ঞান" এর প্রধান পৃষ্টপোষক পুঁজিতন্ত্র বিজ্ঞানের এই হাল করেছে। আবার, পুঁজিতন্ত্রের অনেক পরে আসলেও সমাজতন্ত্র "প্রকৃ্তি বিজ্ঞান" এর এই দার্শনিক সংকট সম্পর্কে বেখবর থেকেছে, একই পথে হেঁটেছে। তথাকথিত শিল্প বিপ্লবকে সেও আদর্শ মনে করে নকল করেছে।
২৬| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:০৩
ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন: আমি কথাটা তুলেছিলাম, মার্কসবাদের ওপর ইউরোপীয় এনলাইটেনমেন্ট প্রকল্পের আছর হিসেবে অবজেক্টিভিটির অতি চাপকে মোকাবেলা করবার জন্য।
বিজ্ঞানকে তারা নৈর্ব্যক্তিক করেছে আর শিল্পকে করেছে ব্যক্তিগত তথা অধিবদ্যক। মার্কসবাদের দরবারি সংষ্করণেও এই সাবজেক্টিভ-অবজেক্টিভ ফ্যাকড়া তাই কাটে নাই। শিল্প সেখানে সমাজতত্ত্বের আশ্রয় ছাড়া চলে না, আর বিজ্ঞান হয়ে ওঠে ঈশ্বর। সেখানে আপনার প্রস্তাবকে কি এই দুইয়ের অভেদ হিসেবে ধরা যায়? যদি যায়, তাহলে তার ভেতরে অর্থাৎ সামান্য ও অসামান্যে, ব্যক্ত ও অব্যক্তে কিংবা মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যকার দ্বান্দ্বিকতেকে আখেরে যা আবার, 'বিজ্ঞান' ও ইতিহাসের দ্বান্দ্বিকতায় উত্তরিত হয়, তাকে কীভাবে বুঝবো?
আপনার আলোচনার দিশায় আস্থা পাচ্ছি, কিন্তু তার মধ্যে অভেদের টান কি ঢুকে পড়ছে? পড়লে তার স্থান মার্ক্সের নজরে কোথায়?
১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:২৩
পি মুন্সী বলেছেন: মার্কসের উপর ইউরোপীয় এনলাইটেনমেন্টের এর প্রভাব আছে এটা সত্য। ফিউড্যালিজম এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংগ্রামটা এনলাইটেনমেন্টের তরফে যখন ঘটছিল তার অংশীদারি মার্কসেরও। কী অর্থে?
রাজনৈতিক সংগ্রামটা ইংল্যান্ড, ফ্রান্সে যত না রাষ্ট্র ও চার্চের বিরুদ্ধে ক্ষমতা দিক থেকে পাল্টা ক্ষমতা হিসাবে সম্পন্ন, তুলনায় দার্শনিক মোকাবোলার দিকটা ততটাই অসম্পন্ন, উপেক্ষিত। আবার ইংল্যান্ড, ফ্রান্সের দুটোই কেবল পাল্টা ক্ষমতার দিক রাজনৈতিক সংগ্রাম হলেও এই দুই রূপান্তরের চরিত্র একরকম নয়। ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে এর বুর্জোয়া চরিত্রই সর্বব্যাপী তুলনায়, ফ্রান্সে ঊনজন বা প্লেবিয়ান এর অংশগ্রহণ নজরে পড়ার মত দৃশ্যমান ছিল।
ওদিক পুঁজিতন্ত্রে তুলনামূলক অর্থে লেট কামার জর্মানী, ফিউড্যালিজম এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংগ্রামের দার্শনিক মোকাবোলার কাজটা যেন তার ভাগেই পড়েছিল। হেগেল এর হাতে শুরু হওয়া ধর্মের পর্যালোচনা, ধর্মতত্ত্ব হয়ে ডান বাম মোড় নেবার পর দর্শন থেকে রাজনীতি হিসাবে আত্মপ্রকাশ ঘটে মার্কসের হাতে। এক লম্বা সময়। কিন্তু এত কিছুর পরও মার্কস এনলাইটেনমেন্টের মূল প্রজেক্ট আধুনিকতার বাইরে - একথা বলা যাবে না।
আমরা নামার দেশের লোক এত কিছু বুঝতে চাইনি। ফিউড্যালিজম এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংগ্রামের অর্থ বা মর্ম কোনটাই আমরা বুঝতে চাইনি। ফিউড্যালিজমকে না রাজনৈতিক ক্ষমতা দিয়ে মোকাবোলা না ধর্মের পর্যালোচনার কষ্টকর পথে ধর্মতত্ত্বকে মোকাবোলা - কোনটাই আমরা করিনি, কর্তব্য জ্ঞান করতেই শিখিনি। কেবল নগদ ফলাফলের দিকে লোভ হয়েছে আমাদের। আধুনিক। বুঝি না বুঝি রেডিমেড-আধুনিক হওয়াই জীবনের লক্ষ্য হয়ে গিয়েছে। তাও এই রেডিমেড ধারণাটা পেয়েছিলাম উপনিবেশী ঔরসে শাসনের কল্যাণে, ফলে উপনিবেশী শাসকের ভাবাদর্শের অনুসঙ্গ হিশাবে এনলাইটেনমেন্টের নামে আধুনিক হওয়ার কিছু খুচরা উদ্যোগ আমরা দেখেছিলাম। কিন্তু দেশ বিভাগকালে ধর্ম, অন্তত ডাকনামে, হাজির হওয়ার পর ধর্মতত্ত্বের ভিতরে সব গায়েব হয়ে যায়।
এরপর কমিউনিষ্ট ধারা নামে যা হাজির হয় তারও ঘোষিত অঘোষিত প্রজেক্ট সেই আধুনিকতাই। তফাৎ এতটুকু আগে যেটা ছিল উপনিবেশী শাসকের ভাবাদর্শের অনুসঙ্গ এখন এটা হলো প্রায় গায়ের জোড়ে ধর্মের প্রতিপক্ষ, বিরোধী হিসাবে আধুনিকতা। আর এর সাথে সোনায় সোহাগার মত কমিউনিষ্ট চিন্তায় ছিল এক বিশেষ মার্কসবাদ, আধুনিক মার্কসবাদ।
যদি প্রশ্ন করেন, যে দার্শনিক মার্কস ফয়েরবাখ-সহ তরুণ-হেগেলীয় বিরুদ্ধে লড়ছে, ধর্মতত্ত্বকে মোকাবোলা করছে - সেই মার্কস শেষে ঐতিহাসিক বস্তুবাদী বা 'পুঁজি'র রচয়িতা মার্কস, রাজনৈতিক মার্কস বলে হাজির কেন? আমরা এই প্রশ্ন করিনি। বরং উল্টা। এখানে যদি এই সম্পর্ক না বুঝে কেবল রাজনৈতিক মার্কসকে আলাদা করেন তবে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী বিপ্লবী, এক আধুনিক-মার্কসবাদ ওখান থেকে বের হবে। ষ্টালিন এটাই করেছিলেন।
এই আধুনিক-কমিউনিজম সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনেও তেমন চ্যালেঞ্জে পরে নাই, যেমনটা ৯/১১ এর পর হয়েছে। ইসলাম প্রসঙ্গ তাকে বিপদে ফেলেছে। "সন্ত্রাসবাদ" ক্রাইসিসে কমিউনিষ্ট, প্রগতিশীলদের অবস্হান আর "সন্ত্রাসবাদ বিরুদ্ধে যুদ্ধের" আমেরিকান বৈদেশিক নীতি আজ একাকার, ভাই ভাই। কী সূত্রে? আধুনিকতার সূত্রে ভায়রাভাই। ইউরোপের দিক থেকে দেখলে, পশ্চিম ক্রিশ্চানিটিকে পর্যালোচনা মোকাবোলা করে আধুনিক হয়েছে, সব ধর্মকে মোকাবোলা শেষ হয় নি তাতে। ফলে এটা মূলত পশ্চিমা এনলাইটেনমেন্ট বা আধুনিকতার সমস্যা যাকে এতদিন কেবল পশ্চিম নয় সবার আধুনিকতা বলে চালানো হচ্ছিল। এটাই একছত্র সুসভ্যতার গর্বটাকে ভেঙ্গে চূড়মার করে দিয়েছে। পুঁজিতন্ত্রের এই সভ্যতার বড়াই করেই এতদিন আমাদের কিনে নিয়েছিল। আমরাও নকল-আধুনিক হয়ে ঐ আধুনিকতাকে নমস্য বানিয়েছিলাম। আজ পশ্চিমকে এই নহবত দেখতে হচ্ছে। সর্বগামী পুঁজি আজ এই সংকটে যখন চ্যালেঞ্জ হয়েছে তখন আমরা কেউ আমেরিকান বৈদেশিক নীতির আড়ালে আত্মরক্ষার পথ খুজছি, কেউ বেহুশ হয়ে আধুনিকতা কত মহান এই অক্ষম তত্ত্ব ফেরি করছি। আমাদের নকল-আধুনিকতার খোলশ খুলে খুলে পড়ছে। অথচ, আধুনিকতা নকল করার জিনিষ নয়, নিজ জমিনে ধর্ম, ধর্মতত্ত্ব পর্যালোচনা, দার্শনিক লড়াই, রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন এভাবে রাজনৈতিকভাবে পরাস্ত করার পরই আধুনিক বলে কিছু একটা দাড়াতে পারে।
আমি মনে করি, ইসলাম বা ধর্ম প্রসঙ্গ আজকের সঙ্কট মার্কসবাদ কীভাবে মোকাবোলা করবে এর উপর নির্ভর করছে আগামি-মার্কসবাদ বলে কিছু থাকবে না তলিয়ে যাবে।
উপরে যে মার্কসবাদের বর্ণনা দিলাম, ওখানে "সাবজেক্টিভ-অবজেক্টিভ ফ্যাকড়া" বলে এর মত আরও অনেক ফ্যাকড়া আছে, জানি। আমি সে দিকে তাকিয়ে সাবজেক্ট অবজেক্ট এর কথা তুলি নাই। চিন্তার বিষয় কী - এটা ব্যাখ্যা করতে যতটুকু দরকার ততটুকুই - এখনকার।
২৭| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৪৩
মুসতাইন জহির বলেছেন:
ফারুক ভাইয়ের সর্বশেষ প্রশ্ন থেকে আধুনিকতা/ আলোজ্বালাতন ও ধর্ম প্রসঙ্গে আপনার ফিরতি মন্তব্যের সুতা ধরে দুয়েকটা কথা বলা যায়।
পয়লা বলা দরকার, ইতিহাসের দিক থেকে যদি দেখা হয় তো ফিউডালিজম এবং চার্চের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন তৈরি হয় ও বিপুলশক্তি নিয়ে দাঁনাবাধে তা মূলত ধর্ম-আন্দোলন। খ্রিস্ট ধর্মের ভিতর থেকে উঠে আসা ধর্মতাত্ত্বিক চিন্তা ও বয়ানে সংগঠিত। আবারো বলছি, যাকে রাজনৈতিক ও প্রগতিশীল বলে পরবর্তীতে ঐতিহাসিক ও দার্শনিক ভিত্তি দেওয়া হয়েছে সেটা ছিল সর্ম্পূণতই একটি ধর্মীয় আন্দোলন। সেক্যুলারইজম চার্চের ওই সংস্কার আন্দোলন থেকেই জন্ম, বেড়ে ওঠা ও পরিণতি লাভ। এখানে বহুল পরিচিত ধর্মের 'প্রগতিশীল' ভূমিকা আমার মূল আলোচ্য বিষয় নয়। বরং প্রগতিশীলতার ভিত্তি-ভুমিতে যে ধর্ম এবং ধর্মীয় আন্দোলন নিহিত সেটাই বলার কোশেশ।
তো পরে যখন আলোজ্বালাতন আর আধুনিকতার প্রকল্প চালু হয়ে গেল তখন এটাকে প্রামান্য এবং আবশ্যিক জ্ঞানতাত্ত্বিক উত্তরণের মডেল বানানো হোল। কিন্তু দার্শনিক ন্যয্যতাটা ফিউডালিজমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনুসঙ্গ বা তাতে শর্তাবদ্ধ করে কখনোই আলোচিত হয়নি। এটা কোথাও প্রধান কোনো বৈশিষ্ট্য সূচক দিক হিশাবে নির্ধারিত হয়নি।
বরং ধর্ম হিশাবে খিস্টীয় অভিজ্ঞতাকে বরাত হিসাবে ব্যবহারের সময় যেভাবে নিপীড়নমূলক দিককে সামনে আনা হয় তার পাল্টা ধর্মীয় প্রতিরোধ লড়াইয়ের কথা স্বীকারই করা হয় না। ব্যতিক্রম হিসাবে (মার্কস)এঙ্গেলস নিপীড়িত শ্রেণীর নিরুপায় হাতিয়ার বা মাধ্যম আরো স্পষ্ট করে বললে 'বাগধারা' বলে মান্য করেছেন। সেটাও যে জগতকে সমান মাত্রায় তার নিজস্ব চিন্তা ও মূল্যবোধে দাঁড়িয়ে পরিবর্তন, রুপান্তর ও উত্তরণের উপাদান জোগাতে সক্ষম সে সম্ভাবনাকে যথেষ্ট আমলে নেননি। ধর্মীয় চৈতন্য বা খোদ ধর্মকে মানুষের মুক্তির প্রতিবন্ধক এবং অনিবার্যভাবে অবিকশিত স্তর বলে সাধারণ সিদ্ধান্ত টেনেছেন।
ধর্ম বা পরমার্থিক চর্চাকে মানুষের স্ব-ভাব বিরুদ্ধ ও নিজের বাইরের (দৈব) শৃঙ্খল বলে গণ্য করার চলটা আসে গ্রীক চিন্তা থেকে। সেখানে দৈব প্রতিনিয়ত মানুষের বিরুদ্ধে খড়গ হস্ত। তার ক্রুর শক্তির বিরেদ্ধে লড়ে টিকে থাকতে হচ্ছে। মানুষ হয়ে উঠতে হচ্ছে। মজার ব্যাপার হোল ভারতীয় এবং অপরাপর ধর্মতো বটেই খোদ ইসায়ী ধর্মও এই ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গির পুরা বিপরীত। মানুষের বাইরের পরমার্থিক সত্তার সাথে সম্পর্কটি প্রেম ও বন্ধুত্বের। রহমত ও নেয়ামতের।
কর্তাভাবের উদ্বোধন বা চিন্তার নিজেকে চিনতে পারার প্রয়োজনীয়তা, রূপ ও স্বরূপের তারতম্য বিষয়ে অনেক কথা বলা দরকারি। শুধু এটুকু বলে আজ এখানে থামি যে স্বয়ং হেগেলও ধর্মের মধ্যে আর্বিভূত হলেই চিন্তাকে অনগ্রসর বা নিচের স্তরের মনে করতেন না।
২৮| ০৯ ই মে, ২০০৯ রাত ১১:৫১
লাকুল হক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ এই মূল্যবান লেখার জন্য...
১৪ ই মে, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৩৩
পি মুন্সী বলেছেন: অনেক দেরিতে দেখলেন আপনি।
২৯| ২৬ শে মার্চ, ২০১০ রাত ৩:৪২
হামোম প্রমোদ বলেছেন: আবারও পড়তে হবে। বেশ লম্বা এবং জটিল ব্যাখ্যা।
২৭ শে মার্চ, ২০১০ রাত ১:৫৬
পি মুন্সী বলেছেন: বেশ লম্বা এবং জটিল ব্যাখ্যা একটু কষ্ট করে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
ধন্যবাদ।
৩০| ০৯ ই মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১৩
পারভেজ আলম বলেছেন: আপাতত শুধু প্রিয়তে নেয়ার জন্য লগইন করলাম। কিছু কথা বলার আছে। যত তারাতারি পারি এসে কথা বলে যাবো।
০৯ ই মে, ২০১০ রাত ১১:২০
পি মুন্সী বলেছেন: ধন্যবাদ।
আশা করি আপনার "বলার কথা" শীঘ্রই শুনতে পাব।
৩১| ২৬ শে জুলাই, ২০১০ রাত ১১:১৪
স্তব্ধতা' বলেছেন: লেখাটি আগেই পড়েছিলাম।মন্তব্য করা হয়নি।'বিজ্ঞান' কি?, বা 'প্রাকৃতি' বিজ্ঞান' বিজ্ঞান কি না অথবা সমাজ বিজ্ঞান আদৌ 'বিজ্ঞান' কি না, এই বিতর্কগুলি অমীমাংসিত এবং বিতর্ক চলতে চলতে এই যুগে এসেও মতবাদের ভিন্ন ভিন্ন ধারায় তারা প্রতিষ্ঠিত।পপারের ফলসিফিকেশন থিওরী, ভিডগেন্সটাইনের 'সাইন্টিফিক ল্যাঙগুয়েজ' এর প্রয়োজনীয়তা, এ সবই যেমন প্রতিষ্ঠিত তেমনি বিতর্কিত।তাই আমার নিজস্ব সরলীকরণ চিন্তা আছে এ ব্যাপারে এবং সেটি খুব সরল।সেটিকে অনেকটা ফয়রাব্যান্ডের 'দাদায়ীও' বা 'এনার্কিক' এ্যাপ্রোচ বলা যেতে পারে 'এনিথিঙ গো'জ' আবার মাঝে মাঝে আমি ওয়েবারীয় এবং তখন আমি দু'টোর মধ্যে একটা সংযোগ স্থাপন করতে চাই।আমি বলি দু'টোই বিজ্ঞান।বিজ্ঞান এই অর্থে প্রকৃতিকে (মানুষ সহ) বোঝার জন্য বিশেষ কোন জ্ঞান যা জ্ঞান প্রসূত।প্রকৃতি ও তার উপাদান (মানুষ সহ, মানুষ শুধু মাত্র একটি কমোডিটি নয়) বোঝার জন্য যেটি সহায়ক সেটিই বেছে নেয়া হোক।এখন কোনটি সহায়ক, সেটি নির্ভর করবে তদন্তকারী ব্যক্তির উপর।তার এপিষ্টেমলজিক্যাল পজিশন (জাষ্টিফিকেশন), তদন্তকৃত ফেনমেনার অনটোলজিক্যাল পজিশন এবং তদুপরি তদন্তের পদ্ধতি সবগুলো মিলে যে জ্ঞান প্রসূত হবে তাই বিজ্ঞান।এখানে আপনার পিএইচডি আলোচনাটার উত্তরও মেলে যে কেনো যন্ত্রকৌশলীদেরও ডক্টর অব ফিলোসফী বলা উচিত।যন্ত্রের পেছনে আছে চিন্তা, চিন্তা মানেই তার এপিষ্টেমলজীক্যাল এবং যা জানতে চাওয়া হচ্ছে তার অনটোলজিক্যাল পজিশন।সুতরাং সেখানেই আসে জ্ঞান মাতা দর্শন।এখন বিজ্ঞানকে আমি আমার মতো সরলীকরনের সংজ্ঞায় ফেলে 'মার্কসবাদ' বিজ্ঞান কি না এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আগেতো তার 'বাদ' জানতে হবে...য জানা এখনও আমার শেষ হয়নি।তাই এই উত্তর আমি আপাতত খুঁজছিনা।তবে তাকে এখন পর্যন্ত যতটুকু বুঝেছি চিন্তায় তিনি 'মানবতাবাদী', তদন্তে তিনি বস্তুবাদী যেখানে মানুষও বস্তু, অন্তত তার কমোডিটি'র সংজ্ঞা অনুযায়ী মানুষ তাই।
২৭ শে জুলাই, ২০১০ সকাল ৮:২০
পি মুন্সী বলেছেন: ধন্যবাদ স্তব্ধতা, পুরানো লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়া আবার মন্তব্য লেখার জন্য।
মুখে "বিজ্ঞান" বলছি কিন্তু আসলে বুঝেছি ও বুঝাতে চাইছি ন্যাচারাল সাইন্স - এমন অসচতেন দশা নয় কাউকে খুঁজে পেতে আমাদের - লোম বাছতে কম্বল উজার অবস্হা হবে। তবু এমন অবস্হা যদি কারও হয় বা না হয়, বিজ্ঞান নিজে জ্ঞান নয়, জ্ঞান হয়ে উঠার বা জ্ঞানলাভের পদ্ধতি মাত্র - একথা মনে রাখলেই যথেষ্ট।
অর্থাৎ কোন প্রক্রিয়ার ফলাফল আর খোদ প্রক্রিয়াটা - এদুটো এক নয়। আবার এই দুইয়ের মধ্যে বদলাবদলি গন্ডগোল বা মনে মনে swap করে ফেলার সমস্যা তৈরি করে ফেলার মত কাজ করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, "বিজ্ঞান পড়ি" আমরা বলি বটে কিন্তু বিজ্ঞান কোন জ্ঞানের বিষয় (subject) বা জানার বিষয় নয়; জ্ঞানের বা জানার একটা পদ্ধতি মাত্র।
কাজেই প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান ইতিহাস বিজ্ঞান হতে কোন সমস্যা নাই, বাধাও নাই।
আমরা "বিজ্ঞান" কথাটা চলতিভাবে জানার বিষয় আর জানার পদ্ধতি - এই দুই অর্থেই সমার্থক (synonymous) ধরে নিয়ে ব্যবহার করি বটে কিন্তু এখানে আমাদের সতর্ক থাকতেই হবে। নইলে কথার মাথামুন্ডু কিছু বুঝা যাবে না। আমাদের জানতে হবে এমন জ্ঞানলাভের বিষয়গুলো বিজ্ঞান পদ্ধতিতে জানতে হবে; এতে জ্ঞানের বিষয় সমাজ(মানুষ) বা প্রকৃতি যাই হোক জানার পদ্ধতি হবে বিজ্ঞান বা বৈজ্ঞানিক।
এই হোল জ্ঞানের বিষয় নিরপেক্ষ জ্ঞানপদ্ধতি নিয়ে সারকথা।
এবার জ্ঞানপদ্ধতি নিয়ে কথা।
কেবল কোন ধারণা, বয়ান বা বক্তব্য (statement as outcome of a study) বিজ্ঞান বা বিশেষভাবে পাওয়া জ্ঞান হতে গেলে, স্বীকৃতি পেতে গেলে জ্ঞানলাভের পদ্ধতিগত কিছু নিয়ম, তত্ত্বগত দিক মেনে চলতে হয়, পালন করতে হয় - পালিত হলে সব অর্থেই তা সামাজিক অথবা প্রাকৃতিক যে কোন বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান অর্থাৎ তা বৈজ্ঞানিকভাবে লব্ধ সামাজিক অথবা প্রাকৃতিক বিষয়ে জ্ঞান হবে। প্রচলিত ভাষায় আমরা যাকে সামাজিক বিজ্ঞান বা প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বলি।
উপরে জ্ঞানলাভের পদ্ধতিগত কিছু নিয়ম, তত্ত্বগত দিক - এর কথা যেটা বললাম ওটাকেই বলা হয় জ্ঞানতত্ত্ব (epistemology)। মানে একটা জিনিষকে জানা কেন জ্ঞান হিসাবে গ্রহণ করা হবে, স্বীকৃতি পাবে এর শর্তাবলী, তত্ত্বগত দিক যেখানে আলোচনা চর্চার বিষয় সেটাই জ্ঞানতত্ত্ব বা epistemology । জ্ঞানতত্ত্ব কে বলতে পারি দর্শনশাস্ত্র বিষয়ের এক উপশাখা; A theory of knowledge which studies the nature of knowledge, in particular its foundations, scope, and validity।
লক্ষ্যণীয় যে জ্ঞানতত্ত্ব বা epistemology
প্রসঙ্গে কথাগুলো কেবল ফিজিক্স কেমিষ্ট্রির মত প্রাকৃতিক বিজ্ঞান প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে না। বরং সাধারণভাবে যেকোন জানার বিষয়ে ষ্টাডির প্রসঙ্গে কথা বলা হচ্ছে; সেটা ফিজিক্স হতে পারে এবং একইভাবে ল্যাঙ্গুয়েজ হতে পারে। সবকিছুরই বিজ্ঞান হওয়া, বলা সম্ভব। ফলে নিউক্লিয়ার বা আনবিক বিজ্ঞান যেমন হয় তেমন ভাষা বিজ্ঞান হওয়াটাও স্বাভাবিক ও সঠিক। সেভাবে ইতিহাস বিজ্ঞানও বটে।
আজকাল বাংলাদেশে নতুন যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃতত্ত্ববিদ্যা (Anthropology) পড়ছেন বা পাশ করেছেন তাদের মধ্যে একটা ট্রেন্ড লক্ষ্য করেছি। এরা নৃতত্ত্ববিজ্ঞান না বলে কেউ নৃতত্ত্ববিদ্যা বললে রীতিমত মাইন্ড করেন। সম্ভবত ক্লাশের কোন তরুণ উৎসাহী শিক্ষক তাদেরকে অনুপ্রাণিত করে থাকতে পারেন। গোস্বা-অভিমানের আরও কারণ আছে। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে নৃতত্ত্ববিদ্যাকে "আর্টস ফ্যাকাল্টি" তে অন্তর্ভুক্ত রেখে পড়ানো হত। এখন নৃতত্ত্ববিদ্যাকে কোন বিশ্ববিদ্যালয় ফ্যাকাল্টির নাম বদলে যদি "সাইন্স ফ্যাকাল্টি"তে অন্তর্ভুক্ত করে পড়ায় তাহলে কী এখন থেকে আগের নৃতত্ত্ববিদ্যা এবার নৃতত্ত্ববিজ্ঞান বলে পরিচিত হতে হবে? এর মানে আগে "নৃতত্ত্ববিদ্যা" কী "বিজ্ঞান" ছিল না? সব "অবৈজ্ঞানিক" ফালতু কথাবার্তা পড়ানো হত? আর এখন এক প্রশাসনিক কলমের খোঁচা খেয়ে সব "বিজ্ঞান" হয়ে গেল?
"যা আর্টস তা সাইন্স নয়" - আমার একথা পড়ে কতজন পাঠকের অস্বস্তি হবে তা এক হাতেই গুনে আটানো সম্ভব। অথচ এই গভীর মিথ্যা, ভিত্তিহীন ধারণাটা ছোট থেকেই আমাদের মনে গেথে গেছে। আমরা ভাবতে ভুলে গেছি; যেন আর্টসের নামে যা পড়ানো হয় সেসবের মধ্যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিগত লব্ধজ্ঞান নাই, বিজ্ঞান নাই।
আজকাল আবার আগেকার "আর্টস ফ্যাকাল্টি" এখন "সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ" বলে যায়গা ছেড়ে দিয়ে পালিয়েছে; আর "আর্টস" এর কলা এখন বাবু সেজে হয়ে গিয়েছে কলাবিদ্যা; আশ্রয় নিয়েছে যেটাকে আমরা মানব-কলাবিদ্যা, Fine Arts বা শিল্পকলা ইন্সটিটিউট বলে নাম নিয়েছে দেখতে পাই। আজকে কলাবিদ্যা, মিউজিক (গান বললে মাইন্ড খাবে তাই মিউজিক) শাস্ত্রবিদ্যার মর্যাদায় ডক্টরেট (সেই আবার দর্শনের বিশেষজ্ঞ, পি এইচ ডি) একাডেমিক খেতাব দিচ্ছে। একটু ভুল বললাম এটা আজকের নয়। সেই বৃটিশ আমলেই ১৯৪৩ সালে বিখ্যাত সুরকার কমল দাসগুপ্ত (নজরুলের গানের গায়িকা ফিরোজা বেগমের স্বামী) বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট অফ মিউজিক উপাধি লাভ করেন। তাঁর ষ্টাডির বিষয় ছিল উত্তর ভারতের ট্রাডিশনাল সঙ্গীতকলা হিসাবে মীরার ভজনে রাগসঙ্গীতের ব্যবহার নিয়ে গবেষণা। নজরুলের লেখা হামদ, নাত, খেয়াল গজলের সুরকারও তিনি। এখন কথা হলো, এই গানের ডক্টরেট কী গঙ্গা পাবে না, বিজ্ঞান লাভের মর্যাদা পাবে না? তাহলে কোথায় ফেলব তাকে?
আসলে গবেষণা পদ্ধতির জন্য তাঁর ষ্টাডির বিষয় অর্থাৎ গান, গানের বিজ্ঞান হয়ে উঠেছে, তাই নয় কী! একই পথে ভুপেন হাজারিকা বা অনুপ ঘোষাল গানে ডক্টরেট। অথচ জীবনে, ছোটবেলায় স্কুলে থাকতেও তাঁরা হয়ত ল্যাব, টেষ্টটিউব, স্পিরিট ল্যাম্প ইত্যাদি নেড়েচেড়ে দেখেননি। তবু "বিজ্ঞান" নাম তাঁদের কপালে, নামের আগে লকলক করছে। কী আজীব এই "বিজ্ঞান" বস্তুটা!
জ্ঞানতত্ত্ব বা epistemology বিষয়টা শেষ হয় নাই। শেষ কয়েকটা কথা বলে জবাব শেষ করব।
এটুকু হয়ত বুঝা গেল, কোন জানা, বিষয়কে জানা ষ্টাডি থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান হতে পেরেছে কী না, কী হলে হবে এসবের তত্ত্ব, পদ্ধতিগত বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া করে জ্ঞানতত্ত্ব।
কিন্তু আবার সেই বুঝাবুঝি: বুঝাবুঝি শেষ বিচারে কে করে? তত্ত্ব, পদ্ধতিগত সে যাই হোক সেটাও তো কাউকে না কাউকে বুঝাবুঝি করে নিতে হয়।
আবার বুঝাবুঝি একমাত্র মানুষের করে, মানুষই পারে।
এখন প্রশ্ন হলো, মানুষ বুঝাবুঝি কী দিয়ে করে? সহজ উত্তর, ইন্দ্রিয় দিয়ে, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতায়। মানুষ প্রখর ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতা সম্পন্ন তাই বুঝাবুঝির দায় এবং দায়িত্ত্বও সব তাঁর হাতে।
এদিকে আবার ইন্দ্রিয় কী? খোলসা করে নেই একটু। ছোটবেলায় পড়ে ঠোটস্ত করেছিলাম, চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক - মানুষের এই পঞ্চইন্দ্রিয়। এই পাঁচটা sensuous organ মানে ইন্দ্রিয়ানুভুতি ভরসা করে আমাদের সব বুঝাবুঝি চলে।
তাহলে সারকথা দাড়ালো, আমাদের জ্ঞানতত্ত্ব বা epistemology পঞ্চইন্দ্রিয় - এই পাঁচটা sensuous organ জাত ইন্দ্রিয়ানুভুতির ভরসা করে দাঁড়িয়ে আছে; বুঝাবুঝির সমস্ত কারবার এই পাঁচ ইন্দ্রিয়ানুভুতির সাহায্যে চলার কথা।
কিন্তু ভাল করে তাকালে দেখব, প্রচলিত "বিজ্ঞান" বললে যা বুঝি সেই প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ঐতিহাসিকভাবে কেবল চোখ - এই ইন্দ্রিয়ের উপর কান্নি মেরে তার জ্ঞানতত্ত্ব বা epistemology সাজিয়ে বসে গেছে। কেবল চোখ বা দেখা ভিত্তিক, সবচেয়ে বেশী বিশ্বাস করে এমন দেখা-সর্বস্ব "বিজ্ঞান" খাড়া করে ফেলেছে। চোখে না দেখলে বিশ্বাস নাই, অন্য চার ইন্দ্রিয়ের খবর নাই।
আমরা এটাকে বলতে পারি, দেখা-সর্বস্ব জ্ঞান বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা; পশ্চিমের হাতে গড়ে উঠা বিজ্ঞানের জ্ঞানতত্ত্ব বা epistemology বিষয়ক সমস্যা।
জবাব হিসাবে লেখার সাইজ আগেই ছাড়িয়ে গিয়েছে। ফলে এখানেই শেষ করলাম। ভাল থাকবেন।
৩২| ২৭ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৮
স্তব্ধতা' বলেছেন: আমি কিন্তু আপনার সাথে দ্বিমত করিনি।আমি এপিষ্টেমলজিক্যাল পয়েন্ট থেকেই 'বিজ্ঞান' কে দেখেছি এবং সেই মতে আমার বক্তব্য দিয়েছি।তাই উপরে আপনার বলা কথা গুলোর সাথে সহমত প্রদর্শন পূর্বক চিন্তা করছি কেন বলা হলো কথা গুলি।আমার বক্তব্যের সাথে কিন্তু কন্ট্রাডিক্ট করেনা।
ব্যস্ত আছি, তবু আরেকটু টানি, সহমত প্রদর্শনের স্বার্থে।'বিজ্ঞান' কি, এর সংজ্ঞা আমাকে প্রায়ই পড়তে হয়েছে।উইকি যদিও ভালো রেফারেন্স না তবু 'বিজ্ঞান' এর সংজ্ঞাটা দিলাম উইকি থেকেই কারন আমার পড়া সংজ্ঞা গুলোর সাথে ডিফার করেনা।
''Science (from Latin: scientia, meaning "knowledge") is a systematic enterprise of gathering knowledge about nature and organizing and condensing that knowledge into testable laws and theories.[1] As knowledge has increased, some methods have proved more reliable than others, and today the scientific method is the standard for science. It includes the use of careful observation, experimentation, measurement, mathematics, and replication — to be considered a science, a body of knowledge must stand up to repeated testing by independent observers.''
এই সংজ্ঞাটিও আমার কাছে বিতর্কিত মনে হয়।কারন দেখুন, 'সাইন্টিফিক মেথড' বলতে যে সমস্ত উপাদান এর কথা বলা হচ্ছে, 'অবজার্ভেশন', 'মেজারমেন্ট', 'ম্যাথামেটিকস' এন্ড 'রেপ্লিকেশন'।এখন এই উপাদান গুলো কি একটি এ্গ্জোস্টিভ লিষ্ট? (প্রাকৃতিক বিজ্ঞানবাদীরা তাই বলেন) । যদি তাই হয়, তাহলে ম্যাথ না থাকার কারনে কলা বিদ্যায় অনেক গবেষণাই 'বিজ্ঞান' হওয়া থেকে খারিজ হয়ে যায়।এখন যিনি গানের উপর গবেষণা করেছেন, তার গবেষণায় 'ম্যাথ' ছাড়া বাকী সবগুলো উপাদানই থাকা সম্ভব।এখন শুধু ম্যাথ নেই বলেই তাকে বিজ্ঞান বলা যাবেনা এটা মানতে আমি রাজী নই। আবার তারা ম্যাথ না থাকা জ্ঞান গুলোকে আরেকটি গাল ভরা ব্যঙ্গাত্মক (আমার কাছে) নামও দিয়েছেন, সিউডো সাইন্স (Pseudo Science) । আর কি আশ্চর্য, অন্য বিজ্ঞানবাদীরা এই নাম মাথা পেতে নিয়েছেনও।জ্ঞানের চর্চায় অজ্ঞানতার স্বেচ্ছাচারীতা ছাড়া একে আর কি বলা যায়? ভালো থাকবেন।
২৮ শে জুলাই, ২০১০ দুপুর ২:৪৬
পি মুন্সী বলেছেন: আপনি ঠিকই বলেছেন, উইকির বিজ্ঞানের সংজ্ঞা শুধু বিতর্কিতই নয়, ওটা বিজ্ঞানের সংজ্ঞা হয়নি। টেনটুনে ন্যচারাল সাইন্সকে একটা ব্যাখ্যা দিতে পারে হয়ত।
আসলে উপরে আগের মন্তব্যে আমি যে চিন্তার সমস্যা, সীমাবদ্ধতার কথা তুলেছি সে সমস্যা উইকির সংজ্ঞায় ভরপুর রকমে বর্তমান।
এছাড়া "শুধু ম্যাথ নেই বলেই তাকে বিজ্ঞান বলা যাবেনা এটা মানতে আমি রাজী নই" আপনি ঠিকই বলেছহেন। এটাকে আমি ম্যাথ পুজারীদের এক আন্দাজি উচ্ছ্বাসের বেশী কিছু বলতে পারছি না। এরা না বুঝেছে ম্যাথ কী না বুজেছে, ম্যাথ ও দর্শনের সম্পর্ক, নিদেন পক্ষে ম্যাথ-লজিকের সম্পর্ক।
৩৩| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১২:০৯
ডাইনোসর বলেছেন:
আপনার যুক্ত আমাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।
কিন্তু শেষ কমেন্ট টা ঠিক বুঝতে পারলাম না।"এটাকে আমি ম্যাথ পুজারীদের এক আন্দাজি উচ্ছ্বাসের বেশী কিছু বলতে পারছি না। এরা না বুঝেছে ম্যাথ কী না বুজেছে, ম্যাথ ও দর্শনের সম্পর্ক, নিদেন পক্ষে ম্যাথ-লজিকের সম্পর্ক।"
যদি ধরেনেই, যারা এই সজ্ঞা দিয়েছেন তারা প্রকৃতি বিজ্ঞানকেই বিজ্ঞান মানছে। তবে তারা ম্যাথ কে কেন বুঝতে পারবেনা??
প্রিয়তে নিলাম। আরো কথা হবে।
২১ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৩:৪৩
পি মুন্সী বলেছেন: ম্যাথ কী?
ম্যাথ মূলত লজিক, যুক্তিবিদ্যা। বিমুর্ত (abstract) কন্সেপচুয়াল লজিক। বিমুর্ত মানে একটা সুনির্দিষ্ট সাকার মুর্তি রূপে যা ধরা যায় না। সাকার মুর্তি রূপ সরিয়ে রেখে চিন্তা করা।
কোন ঘটনায় ঘটনাকে (phenomenon) বুঝতে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করার প্রয়োজনে ঘটনার উপাদানগুলো (factor) কারা, উপাদানগুলো কে কেমন কতখানি প্রভাব, কোন পরিস্থিতিতে প্রভাব রেখেছে ইত্যাদি আমরা বুঝার চেষ্টা করি। সেখান থেকে উপাদানগুলোর আন্তঃসম্পর্ক-সমীকরণ বুঝার চেষ্টা করি।
সাধারণভাবে একথা জ্ঞান আহরণের সব ফ্যাকাল্টি, পদ্ধতির ক্ষেত্রে খাটে। জ্ঞান আহরণ - যা কোন ঘটনাকে (phenomenon) বুঝতে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করার মুখ্য উদ্দেশ্য জ্ঞান আহরণ ।
এখন ম্যাথ এই ফ্যাকাল্টি অফ নলেজের বিশেষত্ত্ব হলোঃ
এই কাজ সে করে ঘটনার উপাদানগুলোকে (factor) সবার আগে সংখ্যা-গণিতে প্রকাশ বা quantify করে নিয়ে।
quantify বলতে বুঝাচ্ছি, যেমন ‘ভাল’ এইটা কোন সংখ্যাবাচক শব্দ নয়। কিন্তু এই কথাটা quantify করে সংখ্যায় প্রকাশ করতে, ০ থেকে ১০, এই রেঞ্জের মধ্যে ফেলে শুন্য সবচেয়ে কম ভাল আর ১০ সবচেয়ে বেশি ভাল এমন একটা মানে দাড় করতে পারি।
আবার, শুধু quantify করে নেয়াই নয়, ম্যাথ একইসাথে ঘটনার (phenomenon) ঘটার পিছনের factor গুলোকে বিমুর্ত করে বিবেচনা করে নেয়।
যেমন, x y z অথবা a b c d অথবা m n p কিংবা আলফা বিটা গামা ইত্যাদি বিমুর্ত প্রতীকগুলো। (ম্যাথ এ এই প্রতিটি লেটারের আলাদা বিশেষ মানে তাৎপর্য আছে, ধরে নিচ্ছি আপনি তা জানেন। ) এর মানে হলো, x বলতে কোন ঘটনার factor সেটা পদার্থবিদ্যার সময়-গতিবেগের 'গতিবেগ' অথবা অর্থনীতির চাহিদা-যোগানের 'চাহিদা' বুঝানো হতে পারে। 'গতিবেগ' অথবা 'চাহিদা' যাই হোক, ঘটনার এই উপাদানকে ম্যাথ বিমুর্ত করে ওদের নতুন নাম দেয় x । একইভাবে বিমুর্ত করে নেয়া আর একটা ফ্যাক্টর যার নাম ধরা যাক y দেয়া হয়েছে। এরপর x আর y এর সম্পর্ক কী, অথবা এদের সাথে মুল ঘটনা ধরা যাক সেটার নাম z, এই z এর সাথে সম্পর্ক কী সেসব দিয়ে পুরা ঘটনাকে বুঝবার চেষ্টা করে ম্যাথ।
এভাবে কোন ঘটনায় যত বেশি অথবা সব ফ্যাক্টরকে বিবেচনায় নিতে পারলে সে ঘটনাকে জানা বুঝা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা তত সঠিক হবে। তবে মনে রাখতে হবে যত বেশি ফ্যাক্টর বিবেচনায় নিব বুঝাবুঝির কাজ ততই জটিল ও কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। সেটা এড়ানোর সহজ বুদ্ধি হলো, সামান্য প্রভাব রাখে এমন ফ্যাক্টরগুলোকে অবলীলায় আমরা বাদ রাখতে পারি। কারণ ওতে ফলাফলে যেতে বড় কোন প্রভাব পড়ে না। ফলে মোট ফ্যাক্টরের সংখ্যা কম রেখে কাজ সহজ ও আরাম করতে পারি।
কিন্তু সার কথা হলো, মনে রাখতে হবে কোন ঘটনাকে (phenomenon) বুঝতে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে এটা ম্যাথামেটিক্যাল এপ্রোচ।
এর মানে আমি বলতে চাচ্ছি সব ঘটনাকে বুঝতে আমাদের তাতে ম্যাথামেটিক্যাল এপ্রোচ থাকতেই হবে নইলে তা জ্ঞান বলে বিবেচিত হবে না এমন না।। অর্থাৎ এর সুবিধা এবং অসুবিধা (সীমাবদ্ধতা) দুটোই আছে। এতে quantify করা যায় বলে এ থেকে অনেক সুনির্দিষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব। আর অসুবিধার দিক হলো, সব ঘটনাকে quantify করা যায় না, করার ভুল এড়ানোর জন্য করা উচিতও নয়। আর সর্বোপরি সব জায়গায় quantify করা দরকারই নাই। সাধারণত প্রকৃতি বিজ্ঞানের পদার্থবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, রসায়ন ইত্যাদি ধরণের বিষয়গুলোয় quantify করা অবশ্যই দরকার। বলা যায় quantify করার উপর এটা দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ওদিকে মানুষের সমাজকে বুঝতে চেয়ে যে বিজ্ঞান দাড়িয়েছে ওখানে quantify করা দরকারই পড়ে না। এমনকি কোথাও কোথাও করা মুশকিল ও অসম্ভবও। বরং না করে অর্থাৎ ম্যাথামেটিক্যাল এপ্রোচ না রেখেই অনেক ভালভাবে জানাবুঝা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা সম্ভব। আবার মানুষের সামাজিক বিষয়ে ম্যাথামেটিক্যাল এপ্রোচ খাটাতে গেলে তা যান্ত্রিক হয়ে যেতে বাধ্য একথা মনে রাখতে হবে। মানুষ তো যন্ত্র না।
অনেকে স্বল্পজ্ঞানে যা ভুল করে, ম্যাথামেটিক্যাল এপ্রোচ না থাকলে সেটা আর “বিজ্ঞান” হলো না মনে করে বসে। এটাকে একমাত্র জ্ঞানপদ্ধতি জ্ঞান করে। অন্যভাবে বললে এই একই জ্ঞানপদ্ধতিতে মানুষ ও তাঁর সমাজকে বুঝতে জবরদস্তিতে ব্যবহার করতে যায়।
এবার আমাদের মুল আলোচ্য বিষয়ের দিকে কথা প্রাসঙ্গিক করি।
বিমুর্ত করে নেয়া আর quantify করা নেয়ার যে ম্যাথামেটিক্যাল এপ্রোচ বা আগানোর পদ্ধতির কথা বললাম সেটা কিন্তু আদতে মানুষের চিন্তা। চিন্তা মানে মানুষের ইন্দ্রিয়বৃত্তি-সহ বুঝাবুঝির বুদ্ধির ক্ষমতা; তাঁর লজিক ও রিজন।
এর মানে কথা দাড়াল, এককথায় বললে মানুষের চিন্তার এক ম্যাথামেটিক্যাল এপ্রোচে ব্যবহারের পদ্ধতির কথা বলছি আমরা। লক্ষ্য করতে হবে এটা একটা জ্ঞান আহরণ পদ্ধতি মাত্র, একমাত্র নয়।
তবে এর বিশেষ সুবিধা ও মিলের দিকটা কী?
এর বিশেষ সুবিধা হলো, ম্যাথামেটিক্যাল এপ্রোচ বা আগানোর পদ্ধতিতে বিমুর্ত করে চিন্তা করার সুবিধা পাওয়া যায় যা কোন বিষয়ে গভীরে গিয়ে চিন্তা করতে পারার পুর্বশর্ত। জ্ঞান দর্শনে হাজির হওয়ার উপায়।
আর মিলের দিকটা হলো, ম্যাথ বা ম্যাথামেটিক্যাল এপ্রোচে আগানোর পদ্ধতি মানে তখনও তা মানুষের চিন্তার লজিক; যে কোন ঘটনা বুঝার ক্ষেত্রে মানুষের ইন্দ্রিয়বৃত্তি-সহ বুঝাবুঝির বুদ্ধির ক্ষমতা; তাঁর লজিক ও রিজন।
ম্যাথ মানে চিন্তার লজিক। নিউমেরিক্যাল লজিক। এবষ্ট্রাক্ট ও রিয়েল উভয় নিউমেরিক।
ম্যাথের বিমুর্ত-করণ এর পথ ওকে স্বততই সবসময় দর্শন অভিমুখি করে রেখেছে। বিমুর্ততা বা সাকার মুর্তি রূপে সরিয়ে রেখে চিন্তা করা মানে দর্শন। দর্শনের বৈশিষ্ট।
তাই 'বিজ্ঞান' বলতে তথাকথিত প্রকৃতি বিজ্ঞান বুঝলে তারা ম্যাথ কে বুঝতে পারবেনা। না ম্যাথের ক্ষমতা, না ম্যাথের সীমাবদ্ধতা।
আপনার বুঝাবুঝির মাত্রাকে ছুয়ে সেখানে আমার কথা পৌছাতে পারলাম কি না ঠিক জানি না। তবে চেষ্টা করলাম।
আপনার মনোযোগে পাঠ ও মন্তব্য লেখার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৮:৪৭
হাসিব মাহমুদ বলেছেন: থেরাপিস্ট ভাই আছেন কেমন ?