নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জাগ্রত বিবেক

প্রািন্ত

যেদিন তুমি এসেছিলে ভবে কেদেছিলে তুমি আর হেসেছিল সবেএমন জীবন করো হে গঠনমরনে হাসিবে তুমি কাদিবে ভুবন

প্রািন্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের ঋতু চক্র ও আমার রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:১১

“শীত রাত্রির ঢেউ” নামে একটি রাশান বই পড়েছিলাম, সেই ছোটবেলা। বরফ পড়া শীতে কর্মহীন গরীব এক রাশান পরিবারের কাহিনী। রুটি বা গমের অভাব, সামান্য সরকারী রেশনে আধপেটা খাওয়া, বস্ত্রহীন শীতে গমের নাড়ার আগুনে শরীর ছেকা আর সেই আগুনে আলু পোড়া খেয়ে দূর্বিসহ জীবন নিয়ে বেচে থাকার গল্প!
আমরা চাইনা এরকম দূর্বিসহ বরফ পড়া শীত আর বৈরী আবহাওয়া। যাতে কর্মহীন হয়ে কৃষক-শ্রমিককে আলু পোড়া খেখতে না হয়।
তবে ষড়ঋতুর †দশে ছয়টি ঋতুকে আমরা যথাযথ কামনা করি, যাতে করে আমাদের তথা বিশ্ব পরিবেশের ভারসাম্য, ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী টিকে থাকে তাতে করে স্ব স্ব ভূখন্ডের লোকেরা নিজস্ব প্রচলিত ধারা অনুযায়ী মৌসুমী আবাদগুলো সফলভাবে করতে পারে অনুকূল আবহাওয়া ও পরিবেশে। যদিও পৃথিবীর একেক জায়গায় একেক রকম ঋতু।
কথা শুরু করতে চেয়েছি আসলে এবারের শীত নিয়ে। আমরা লক্ষ্য করছি, এবার শীত ঋতুতে তেমন কোন শীত নেই। এর ফলে উত্তর মেরুর বরফস্তর গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির স্তর বৃদ্ধি পাবার আশংকা সহ নানারুপ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা। এর পিছনে কিছু কারণ রয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা এষড়নধষ ডধৎসরহম হলো জলবায়ু পরিবর্তনে একটি বিশেষ ঘটনা। এটি মানুষের কার্যক্রমের প্রভাবে ঘটছে মূলত। এবং কিছুটা প্রকৃতিগত ভাবেও।
উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ সমূহ বা গ্রীনহাউজ গ্যাসসমূহ: কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, এবং সালফারের অন্যান্য অক্সাইড সমূহ। নাইট্রিক অক্সাইড ইত্যাদি। এসব গ্যাস আমাদের কলকারখানার কার্যক্রম গাড়ী, রেফ্রিজারেটর হতে নির্গত। উল্লেখিত গ্যাসগুলির কারণে ওজনস্তর ক্ষয়ে যাওয়ার ফলে, সূর্যের বিকিরণ পৃথিবীতে আসে এবং ট্রপোমন্ডল উত্তপ্ত হয়। এবারের শীতের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে মাঘ বাঘ দুটোই বিলুপ্তির পথে!
আমাদের ঋতু ছয়টি, এছয়টি ঋতুতে আমরা ছয়রকম আবহাওয়া দেখতে পাই। প্রত্যেকটি ঋতু একেক রকম আবাদে আমাদের সহায়ক ভূমিকা রাখে। এ ঋতুগুলো যদি নিজস্বতা হারায়, তাহলে চাষাবাদ সহ বিভিন্নরকম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে আমাদের। জলবায়ুর পরিবর্তন ইতিমধ্যেই আমরা অবলোকন করছি। বরফ পড়া অতিশীত বা অতিবৃষ্টি, অতিখরার মত চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া কিছুতেই যেমন আমাদের কাম্য নয়, তদ্রুপ শীতহীন, বৃষ্টিহীন ঋতুর পরিবর্তন ও আমাদের কাম্য নয়। গত ক’বছর ধরে এরকম পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। এবার যেমন মাঘ মাসেও শীত নেই, শৈত্য প্রবাহও নেই। যদিও আমরা শীত কামনা করিনা, মানুষের কষ্টের কথা ভেবে। তথাপিও ষড়ঋতুর দেশে নিয়ম মাফিক শীতটুকু প্রয়োজন, আবহাওয়ার ভারসাম্যে ও চাষাবাদের কারণে।
ঋতুভেদে আমাদের কৃষি মৌসুম প্রধানত দুটি। এপ্রিল থেকে নভেম্বরের শুরু পর্যন্ত মৌসুম। আর নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত রবি মৌসুম। মুলত শীতকালটাই আমাদের রবি মৌসুম। শীতের মৌসুমে শীত নাই, কিংবা অতিশীত, আবার বর্ষা মৌসুমে
অনাবৃষ্টি বা অতিবৃষ্টি আমাদের কৃষি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। ঋতু তার নিজেস্ব বৈশিষ্ট্য ধরে না রাখলে আমাদের বিপর্যয়। এর জন্য দায়ী আবহাওয়া এবং জলবায়ুর পরিবর্তন। জলবায়ুর পরিবর্তন ও বৈরী আবহাওয়া আমাদের শস্য উৎপাদন ও পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ। এই জলবায়ু পরিবর্তনের নানাবিধ কারণ রয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমরা †য চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়তে যাচ্ছি। তার কারণগুলো হলোঃ
* আমাদের সংকটাপন্ন ভৌগলিক অবস্থান * দূর্বল অবকা?ামো * ঋতু বৈচিত্র * দারিদ্রতা * জনসংখ্যার ঘনত্ব * সমান্তরাল ও নীচুভূমি * চরম আবহাওয়া
পৃথিবীসহ বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। এমনকি গড় বৃষ্টিপাতও বেড়েছে। ফলে দূর্যোগ একের পর এক আসছেই। বন্যা, আইলা, সিডর, নার্গিস সহ নানারকম ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা করতে হচ্ছে। জলবায়ুর এই পরিবর্তন বাংলাদেশের তিন অঞ্চলের উপর বেশী প্রভাব ফেলেছে, উপকূল, হাওড়, চরাঞ্চল। মূলতঃ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই তিন অঞ্চলসহ সারাদেশে কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মানুষ আর্থ সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ একটি দূর্যোগপূর্ণ দেশ। যদিও বাংলাদেশে গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন কম, প্রায় ০.১৭ তবুও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশের মানুষই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বেশী।
কর্মসংস্থানের অভাবে উত্তরাঞ্চল এমনিতেই মঙ্গাপ্রবণ এলাকা,। আবার খরা, বন্যা, অতিশীত, কমশীত হলে কৃষি সমস্যা ও অনাসৃষ্টিতে অবস্থার আরও অবনতি ঘটবে। বন্যপ্রাণী নিধন ও গাছ কেটে অরণ্যধ্বংস ও এর অন্যতম একটি কারণ। এ কারণেই রুপক হিসেবে আমি বাঘের কথা বলছি। আমার বিষয় ছিল মাঘ ও বাঘ দুটোই বিলুপ্তির পথে এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল, এড় Go wild for life. বাংলায় “বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ, বাঁচায় প্রকৃতি বাঁচায় দেশ।” আবার ২৯শে জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস। ২০১৫ সালের প্রতিপাদ্য ছিল, “বাঘ বাঁচলে বাঁচবে বন, রক্ষা হবে সুন্দরবন।” বিশ্বজুড়ে বিলুপ্ত প্রায় এই প্রাণী রক্ষায় বাঘ আছে, এমন দেশগুলোয় পালিত হয় দিবসটি। IUCN এর রেড ডেটা অনুযায়ী বাঘ বিশ্বের মহাবিপন্ন প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তাই আমাদের সুন্দরবনের বাঘের বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে ভাবা প্রয়োজন। অরণ্য শুধু বাঘের জন্যই নয়, বরং মানুষের জন্যও। নিজেদের নির্মল শ্বাস নেবার জন্যই, যেটুকু বন আছে তার অরণ্য ধ্বংস না করে রক্ষা করা প্রয়োজন।
সুন্দরবনের তিনদিকেই বসতি। শুধু দুক্ষিণ দিকে সমুদ্র। বিশ্বের অন্যতম ম্যানগ্রোভ বন, আমাদের সুন্দর বন। আমাদের সুন্দর দৃষ্টিই এই বন আর বন্য প্রাণীকে বাঁচিয়ে রাখতে সহায়ক।
আগেই বলেছি, “বাঘ” আমি রূপক অর্থে ব্যবহার করেছি। মূলত জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়েই আমার আশংকা। বাঘের চেয়েও বন আমাদের বেশী প্রয়োজন। সুন্দরবন আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ মানুষের রুজি রোজগারের ক্ষেত্রেও এতভাবে সেবা দেয় যা বর্ণনাতীত। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার মাছ রপ্তানি হয় এই সুন্দরবন থেকে। এটা স্বীকার্য যে, আমরা ইচ্ছে করলেই আরেকটি সুন্দরবন বানাতে পারবোনা। সঙ্গত কারণেই এসে যায়, “রামপাল কয়লা তাপ বিদ্যুৎ নির্মাণ কেন্দ্রের কথা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এটি একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এ কারনেই সবার প্রশ্ন “ রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র আশীর্বাদ না সর্বনাশ?”
এ ব্যাপারটি নিয়ে ব্যপক লেখালেখি ও আলোচনা ইতিমধ্যেই হয়েছে। বিষয়টি কম বেশি সবারই জানা আছে। তবুও সংক্ষেপে এটুকু বলা যায় যে, গত ১০ সালে ভারত সফরের সময় যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল, সেখানে দুই দেশ মিলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালনের একটি প্রস্তাব ছিল। এই প্রস্তাবই মূলত আজকের রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ †কন্দ্র। এটি ভারতের “ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশনের (NTPC) সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বোর্ডের (PDB) চুক্তি। এটি বাস্তবায়নের নিমিত্তে ১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর ভূমি অধিগ্রহণের আদেশ জারি ও অবকাঠামোর নকশার রূপরেখা চুড়ান্ত করা হয়।
আমরা এও জানি, ভারতের NTPCকোম্পানী তাদের দেশে ছত্তিসগড়ে একই রকম বিদ্যুৎ প্রকল্প প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিলে সেই দেশের পরিবেশ মন্ত্রলায়ের গ্রীণ প্যানেলের (EIA) রিপোর্ট, প্রকল্পটিকে পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি বলে প্রতিবেদন দেয়, অতঃপর ভারত সরকার সেই প্রকল্প বাতিল করে। অথচ একই প্রকল্পকে বাংলাদেশ ইনভায়রনমেন্ট ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (EIA) পরিবেশ বান্ধব বলে রিপোর্ট দিয়েছে। এরকম আজব রিপোর্টে আমাদের দেশের অভিজ্ঞ সুশীলরা ও আমজনতা সবাই অবাক এবং এর প্রতিবাদেও তারা নানরকম কর্মসূচী পালন করে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন।
ভারতে ওয়াইল্ড লাইফ প্রটেকশন অ্যাক্ট ১৯৭২ অনুযায়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৫ কিঃমিঃ ব্যাসার্ধের মধ্যে কোন বাঘ বা হাতি সংরক্ষণ অঞ্চল, জীব বৈচিত্র্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বনাঞ্চল, জাতীয় উদ্যান, বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য কিংবা অন্যকোন সংরক্ষিত বনাঞ্চল থাকা চলবেনা।
অথচ এওঝ সফটওয়্যার দিয়ে মেপে দেখা গিয়েছে, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনের এই দূরত্ব সর্বনিম্ন ৯ কিঃ মিঃ হতে সর্বচ্চ ১৩ কিঃমিঃ। যা বন্যপ্রাণী, অরণ্য ও পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বলে অভিজ্ঞমহল এবং জনগন মনে করছেন।
আমরা জানি, আরেকটি সুন্দরবন তৈরি করা সম্ভব নয়। সুতরাং যেটি আছে আশীর্বাদ স্বরূপ সেটির সাথে সখ্যতা রেখে তার যতœ নেয়াই শ্রেয়। প্রকৃতিকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেয়া উচিৎ। অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেছেন, “রামপালে এক বিদ্যুৎ কেন্দ্র না হলে ১০ টা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান করে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা যায়। সুন্দরবন ধ্বংস হলে আরেকটা সুন্দরবন তৈরি করা সম্ভব নয়”। স্বনামধন্য মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাইদ, শফিক উজ্জামান সহ বহু বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি এই প্রকল্প পরিদর্শন করেন এবং সবাই এটিকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেন।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন ক্রমাগত সংকুচিত হচ্ছে মানুষের আগ্রাসনে। নির্মানাধীন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সেই আগ্রাসনে নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে এবং সুন্দরবন ও পরিবেশের জন্য হুমকির কারণ বলে চিহ্নিত হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
আমি শুরু করেছিলাম মাঘ আর বাঘ বিলুপ্তির কথা নিয়ে। আসলেই এটা স্বীকার্য যে, আমরা সাবধানে না চললে প্রকৃতির সম্পদ যথেচ্ছা এলোমেলো ব্যবহার বা নষ্ট করলে প্রকৃতি ভারসাম্য হারাবে। এবং তার ফলাফল খুব ভালো হবেনা মানুষের জন্য, তারই প্রমান আজকের ঋতু সংকট! ষড়ঋতু আজ নিজস্বতা হারানোর অভিমানে তার রং বদলাচ্ছে দিনে দিনে।
শুরু করেছিলাম রাশান কৃষকের গল্পদিয়ে। আমরা চরমভাবাপন্ন জলবায়ুর চক্রে পড়ে, ওই ভাগ্যাহত রাশান চাষীদের মত, বরফ পড়া কঠিন শীতে আলুপোড়া খেতে চাইনা।
আমরা চাই,
শীতে শীত থাকুক আর বর্ষায়
স্বাভাবিক বৃষ্টি,
চাই কোমল ষড়ঋতু, চাইনা দুর্যোগ
আর অনাসৃষ্টি।


নার্গিস জামান
শিক্ষক, কবি ও কলামিস্ট

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.