নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বর্গ-পৃথ্বী অন্তঃস্থলে, বহুকিছু ফিরে-চলে, যাহা বিস্ময়কর

প্রোফেসর শঙ্কু

বুড়ো ভগবান নুয়ে নুয়ে চলে ভুল বকে আর গাল দেয়

প্রোফেসর শঙ্কু › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুবাদ গল্প: দা আলেফ (হোর্হে লুইস বোর্হেস)

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৪

'O God! I could be bounded in a nutshell, and count myself a King of infinite space...'

Hamlet, II, 2



'But they will teach us that Eternity is the Standing still of the Present Time, a Nunc-stans (as the schools call it); which neither they, nor any else understand, no more than they would a Hic-stans for an Infinite greatness of Place.'


Leviathan, IV, 46



অগ্নিক্ষরা এক ফেব্রুয়ারি দুপুরে বিয়াট্রিয ভিটেরবো মারা গেল।



তার মৃত্যুতে বুকের ভেতরে বিষাক্ত ক্ষতের মত কিছু বিষাদ জড়ো হয়েছিল। ব্যথা কমাতে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার পাশের বিলবোর্ডগুলো দেখছিলাম। পুরনোটা বদলে ওখানে একটা নতুন বিজ্ঞাপনের উদয় ঘটেছে, কোন একটা আমেরিকান সিগারেটের রংচঙে ছবি টানানো হয়েছে। ব্যাপারটা আমাকে আহত করল, কারণ এই নতুন সিগারেটের ব্র্যান্ড চিৎকার করে বলছিল- বিয়াট্রিযকে ছাড়াই জগৎ নিজের ভঙ্গিতে এগিয়ে যাবে। এই সামান্য পরিবর্তন সামনের বহু বহু অশেষ পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করছিল সদম্ভে। অবশ্য কেমন একটা অন্তঃসারশূন্য ভাবনা ঘুরছিল মাথায়, বিশ্ব পালটালেও আমি তো পালটাচ্ছি না...



আমি জানি, মাঝে মাঝে আমার খাদহীন ভালবাসার প্রকাশে ও বিরক্ত হয়েছে। আমাকে অপমান করেছে, দূরে ঠেলেও দিয়েছে। এখন অন্ততঃ 'মৃত' বিয়াট্রিযকে আমার সর্বস্ব দিয়ে ভালবাসতে পারি। তাতে প্রতিউত্তর না পাই, অন্ততঃ অপমানিত হবার ভয় তো থাকে না! আমার মনে আছে এপ্রিলের তিরিশে ওর জন্মদিন। এই দিনে যদি বিয়াট্রিযের বাবা আর কার্লোস আরজেন্টিনো দানেরি- ওর চাচাত ভাইয়ের সাথে দেখা করি, ভালো হয় না? ওদের বাসাটা গ্যারেই স্ট্রীটে। আরেকবার সেই ছোট, বিক্ষিপ্ত সাজানো ড্রয়িংরুমে বসে অপেক্ষা করব। দেয়ালে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে দাঁড়িয়ে থাকা ওর অসংখ্য ছবির খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করব সানন্দে। বিয়াট্রিয ভিটেরবোর প্রোফাইল ছবি, একটা ছবি ঝকঝকে রঙিন। বিয়াট্রিয একটা মুখোশ পরে আছে- ১৯২১ এর কার্নিভ্যালের সময়কার ছবি। বিয়াট্রিয- গির্জার পাশে দাঁড়িয়ে আছে; বিয়াট্রিয- বিয়ের পোশাকে গির্জার মঞ্চের ওপর দাঁড়িয়ে চুমু খাচ্ছে জামাই রবার্তো আলেসান্দ্রি-কে; বিয়াট্রিয- ডিভোর্সের কিছুদিন পর টার্ফ ক্লাবের পার্টিতে; বিয়াট্রিয- কুইলমসের বীচে চাচাত ভাই আর ভাইবৌয়ের সাথে; বিয়াট্রিয- কোলে একটা বলিরেখাসমৃদ্ধ কুকুর নিয়ে (কুকুরটা ভিলেগাস হাইডো দিয়েছিল- বজ্জাত লোক); বিয়াট্রিয- হাসছে, চিবুকের ওপরে হাত রেখে,...অন্ততঃ এবারে আগের মত র‍্যাপিং পেপারে মুড়ে বই নিয়ে যেতে হবে না, নিজের অস্তিত্বের কথা ওকে জানান দেবার জন্য। বিয়াট্রিয, দেখো, আমি আছি! কিন্তু ও বইগুলো খুলেও দেখত না। কিভাবে জানলাম?



বইগুলোর মাঝখান থেকে সেলাই কেটে আমি আলগা করে রাখতাম, যাতে বই খুললেই পাতাগুলো পড়ে যায়। কিন্তু মাসদুয়েক পর যখন বইগুলোকে ড্রয়িংরুমের এককোণে পড়ে থাকতে দেখতাম, তখনও তারা অক্ষত থাকত, হাসত আমার দিকে চেয়ে, জিব বের করে ভেংচে দিত। যাক, সে অন্ততঃ র‍্যাপিং পেপারটা তো খুলত!



বিয়াট্রিয ভিটেরবো মারা গেল ১৯২৯ সালে। তখন থেকে, প্রতিবছর তিরিশে এপ্রিল আমি ওদের বাড়িতে যেতাম। ঠিক সাতটা পনেরোতে বাড়িতে ঢুকতাম, ভেতরে বসে থাকতাম প্রায় বিশ পঁচিশ মিনিটের মতো। প্রতিবার আগের বছরের চেয়ে একটু পরে ঢুকতাম, আর বেরোতাম আরেকটু দেরিতে। ১৯৩৩ সালে, বাড়িতে ঢোকার পরপরই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল, ফলে বিয়াট্রিযের পরিবার বাধ্য হয়েই আমাকে ডিনারের দাওয়াত দিল (স্বাভাবিকভাবেই, আমি লুফে নিলাম সুযোগটা)। ১৯৩৪ সালে, আমি বাড়িতে গেলাম একটা সান্তা ফে ক্রিম কেক নিয়ে, আর এবারও আমাকে ডিনারের জন্য থাকতে বলা হল। এভাবে অনর্থক বিষাদে ভরপুর সব অনুষ্ঠান আর মেকি দুঃখের মাখামাখির মধ্য দিয়ে ঘুরপাক খেতে খেতে একদিন আমি আবিষ্কার করলাম, বিয়াট্রিযের পরিবার, বিশেষ করে কার্লোস আরজেন্টিনো দানেরি আমাকে একজন বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে।



বিয়াট্রিয ছিল লম্বা, রোগা, সামান্য কুঁজো হয়ে হাঁটত; ওর হাঁটার ভঙ্গিতে একধরণের সংশয়হীন সাবলীলতা ছিল। দারুণ সতেজতা ছিল। আর কার্লোস আরজেন্টিনো হল গোলাপি-মুখো, ভীষণ মোটা, ধূসর চুলের একটা অপদার্থ। একমাত্র এর হাতটা শিল্পীদের মত (আসলে বিয়াট্রিযের মত); সুন্দর, রুচিশীল। সে কাজ করত বুয়েন্স আয়ার্সের দক্ষিণাংশে একটা ছোট্ট লাইব্রেরিতে। তাকে বাসায় খুঁজে পাওয়া যেত খুব কম, লাইব্রেরিতেই পড়ে থাকত সারাদিন। দুই পুরুষ ধরে আর্জেন্টিনায় বাস করা সত্ত্বেও, ইতালিয়ান রক্তের প্রভাব তার কথাবার্তায়, চলনবলনে স্পষ্ট ছিল। কথা বলার সময় অর্থহীন ভারি বিশেষণ ব্যবহার করতে, বা একটা কথা বলার আগে বিনা কারণে বিরতি নিতে তার মনে হয় খুব ভাল লাগত। নিজেকে একজন দারুণ সাহিত্যবোদ্ধা মনে করত গাধাটা। যেমন একবার সে পড়ল এক অখ্যাত কবি, পল ফোর্টকে নিয়ে। 'ইনি হলেন কাব্যশাস্ত্রের রাজপুত্র', দানেরি (বিনা কারণে) গলা উঁচু করে চিল্লাত, 'মানুষ তাকে যথোপযুক্ত সম্মান দেয় না, বুঝলে বোর্হেস, কিন্তু একদিন এরাই তাকে মাথায় করে নাচবে।'



১৯৪১ সালের তিরিশে এপ্রিলে, সান্তা ফে কেকের সাথে সাথে একটা আরজেন্টাইন কগনাক নিয়ে বিয়াট্রিযের বাসায় গেলাম আমি। দানেরি গ্লাসে একচুমুক গিলল, ঘোষণা করল, 'ভালো জিনিস', এবং আরও কয়েক চুমুক পরে গা এলিয়ে দিয়ে মানুষের আধুনিক জীবনের মহিমা ব্যাখ্যা করা শুরু করল।



'দেখো', সে অস্বাভাবিক উৎসাহ নিয়ে শব্দবমি করতে লাগল, 'আমাদের চারপাশে কত ভালো ভালো জিনিস আবিষ্কৃত হচ্ছে। টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, ফোনোগ্রাফ, ওয়্যারলেস সেট, স্লাইড প্রজেক্টর, চলচ্চিত্র (বলে হিক! করে উঠল), ডিজিটাল ডিকশনারি, টাইমটেবিল, হ্যান্ডবুক, বুলেটিন...'



ও বারবার বলতে লাগল যে, মানুষ এতো যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করেছে যে, এখন সত্যিকারের ভ্রমণ করাটা হল অনর্থক খরচ। বলল, 'এই বিংশ শতাব্দিতে কোন জায়গা তুমি দেখতে চাও? তোমাকে ওইখানে যেতে হবে না। জায়গা-ই তোমার কাছে আসবে। আর ভবিষ্যতে মানুষ ভ্রমণ করবে বাড়ি থেকে না বেরিয়েই।' তার ব্যাখ্যা ভীষণ বোকা-বোকা, অবাস্তব আর ফাঁপা লাগল আমার কাছে। তাই সাথে সাথে আমি কথার স্রোত অন্যদিকে সরিয়ে দিলাম, বললাম সে এইসব 'গুরুত্বপূর্ণ' আইডিয়া লিখে রাখে না কেন। এবং সবচেয়ে বড় ভুলটা করলাম।



দানেরি বলল যে এই কাজ সে ধরেছে বহুদিন আগে থেকেই। এই আইডিয়া, এবং এইরকম আরও বহু বহু আইডিয়া সে তার কবিতায় ঢুকিয়ে দিয়েছে। অনেক বছর ধরেই সে এই কবিতা লিখছে, একাকীত্ব এসে হানা দিয়েছে- কাজ এসে বিরক্ত করেছে- তবুও সে কবিতাটা লেখা থামায় নি। প্রথমে দানেরি নিজের 'কল্পনার দরজা হাট করে খুলে দিয়েছে', তারপর 'কলম তুলে নিয়ে কাগজের ক্যানভাসে ছবি এঁকেছে' (গাধা কোথাকার)। কবিতার নাম ছিল 'পৃথ্বী', এবং তাতে পৃথিবীর রূপক-নির্ভর বর্ণনার কোন অভাব ছিল না।



ভদ্রতার খাতিরে আমি তাকে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, সে কবিতার কয়েকটা লাইন পড়ে শোনাতে চায় কিনা। দানেরি তার ডেস্কের ড্রয়ার থেকে একগাদা কাগজ বের করল, তারপর কণ্ঠে পরিতৃপ্তি নিয়ে পড়তে লাগল,



সেই বৃদ্ধ গ্রিকের মতই, আমার চোখেতে লেগে আছে

তোমাদের নগরী

তোমাদের খ্যাতি

তোমাদের কাজ, সেই দিন, সেই রাত বিবর্ণ হয়ে

অম্বরে অটুট;

কোন নাম, কারো বাস্তবতা না পাল্টে-

আমি নিঃসঙ্গ প্রাচীন সমুদ্রযাত্রায় নামি...অতোঁয়া দে

মাকামব্রেঁ।




'যেদিক থেকেই দেখো না কেন, এই প্রথম স্তবকটা ভীষণ ইন্টারেস্টিং', দানেরি নিজের মতামত দিল, 'সাধারণ পাবলিকের কথা বাদই দিলাম, যেকোনো সাহিত্যের প্রফেসর কিংবা সমালোচকও মুগ্ধ হয়ে যাবে শব্দচাষ দেখে।'



'দ্বিতীয় স্তবকে দেখবে মহাকবি হোমার থেকে শুরু করে হেসিয়ড পর্যন্ত যারা যারা মহাকাব্য রচনা করেছেন, তাঁদের সেই প্রাচীন ধারা পুনর্জীবিত করা হয়েছে। আর তৃতীয়টা- ক্ষয়িষ্ণু Baroque শিল্পরীতি ফলো করে দুই শ্লোকে কবিতার আসল, বিশুদ্ধ ফর্ম তুলে আনা হয়েছে। চার নম্বর শ্লোকে দেখবে আবারো একটু ফ্রেঞ্চ ভাষা এসেছে, সেই সাথে কবিতার যে সতেজতা, যে তীব্র আবেদন- তার সাবলীল হৃদপ্রকাশ ঘটেছে। আসলে পুরো কবিতায়, কখনো দুই দুই চার ফরম্যাট আবার কখনো পাঁচ আট তিন ফরম্যাটে আমি একটা গল্প বলে গেছি। গল্পটা ত্রিশ শতাব্দী ধরে সমৃদ্ধ হওয়া সাহিত্যের গল্প। এখানে Odessey-র মহাকাব্যিক এসেন্স আছে, Works and Days-এর সারমর্ম আছে, Xavier de Maistre-র মত তুচ্ছ কিন্তু হালকা মেজাজের গীতিকাব্যের সুখস্পর্শও আছে!'



দানেরি আমাকে আরও অনেক অনেক স্তবক পড়ে শোনাল, আর প্রত্যেক স্তবকের ওপরে দীর্ঘ ব্যাখ্যা-বক্তৃতা দিয়ে নিজের প্রতিভার কথা ঘেউঘেউ করে বলতে লাগল। কবিতার লাইনগুলো মোটেই আকর্ষণীয় ছিল না। একেকটা স্তবক কে কত ভারি তাই নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, অপ্রয়োজনীয় টীকা-টিপ্পনী আর অপরিচিত শব্দ নিয়ে পুরো কবিতা ভরপুর। আমার দুঃখ হতে লাগল, ইস, কাগজের কি নিদারুণ অপচয়!



জীবনে মাত্র একবার আমার সুযোগ হয়েছিল মাইকেল ড্রেটনের Polyolbion পড়ে দেখার। এই বইয়ে তিনি ইংল্যান্ডের উদ্ভিদ ও প্রাণীজীবন, জলবিদ্যা, সামরিক ইতিহাস, স্থাপত্যবিদ্যা- সবগুলোর ওপর আহরিত জ্ঞান এবং পর্যবেক্ষণের ফলাফল প্রকাশ করেছিলেন। আমি নিশ্চিত, এমনকি এই সুবিশাল সৃষ্টিও কার্লোস দানেরির কবিতা থেকে অনেক অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং। দানেরি ঠিক করেছিল পুরো পৃথিবীর বর্ণনা সে কবিতায় তুলে ধরবে, এবং ১৯৪১ সালের মধ্যে সে প্রায় দেড় লাখের মত শব্দ লিখে ফেলেছিল (অবশ্যই, কবিতার শব্দসংখ্যা কত সেটা দানেরি-ই জানিয়েছিল)। নতুন অনেক শব্দ সে আবিষ্কার করেছিল। তার মতে আকাশের আসল রঙ 'দিব্যশ্বেত', নদী 'কাঁকড়ার মত ঘষটে ঘষটে' বয়ে চলে, এবং মাথাব্যথা করার সময় যে অনুভূতি হয় তার নাম 'স্পর্শজ'। মাঝরাতের দিকে আমি জান নিয়ে কোনোমতে পালিয়ে এলাম।



দুই সপ্তাহ পর, দানেরি আমাকে কল করল- সম্ভবত ওর জীবনে প্রথমবারের মত। 'আমার বাড়িওয়ালা দুই বুড়ো-বুড়ি আছে না, জুনিনো আর জুনগ্রি? ওরা আজকে একটা ককটেল পার্টি থ্রো করেছে, 'স্যালন বারে'। কি বল বোর্হেস, যাবে?' দানেরি পার্টির দাওয়াত দিল আমাকে। উৎসাহ ছিল না, কিন্তু সময় কাটানোর মত কিছু পাচ্ছিলাম না (আর ফ্রি খাবার কে-ই বা মিস করতে চায়?) - তাই রাজি হয়ে গেলাম।



স্যালন বারে গিজগিজ করছিল মানুষ, টেবিল খুঁজে পাওয়াই দায়। বারের চেহারায় আধুনিক ধাঁচ আনার অস্বাভাবিক চেষ্টা করা হয়েছে- অবশ্য যা আশা করেছিলাম তারচেয়ে একটু কুৎসিত কমই। পাশের টেবিলে বসে থাকা লোকজন চোখ বড় বড় করে দম না ফেলে বকবক করছিল- 'দেখেছ, পার্টিতে কি পরিমাণ খরচ করেছে? ওরে বাপ, জুনিনো জুনগ্রি কি দিলখোলা মানুষ!' দানেরি আশেপাশে তাকিয়ে মুগ্ধ হবার ভান করছিল, একবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল, 'যা-ই বল বোর্হেস, আমার দেখা বেস্ট পার্টিগুলোর মধ্যে এটা একটা।'



সে তারপর তার কবিতার চার-পাঁচটা অংশ আবার পড়ে শোনাল। কে জানত এই লোক পকেটে কবিতা-লেখা একতাড়া কাগজ নিয়ে ফেরে! তার সোজা শব্দকে অনর্থক প্যাঁচানোর অভ্যাসটা আমার মাথা ধরিয়ে দিচ্ছিল। যেখানে স্রেফ 'নীল' ব্যবহার করলেই হয়, সেখানে 'জলোবিম্ব' লাগিয়ে দিয়েছে। 'মায়ের দুধ'টা তার জন্য 'বেশি সোজা' হয়ে যায়, এর বদলে বেছে নিয়েছে 'পয়ঃ', 'স্তন্যক্ষীর', এমনকি একটা শব্দ বানিয়েও ফেলেছে- 'পয়স্বিনী'! কিছুক্ষণ কবিতা নিয়ে কথা বলেই দানেরি আসল কথাটা পাড়ল: 'বুঝলে, আসলে সকল গ্রেট সাহিত্যকর্ম শুরু হওয়া উচিত একটা গ্রেট মুখবন্ধ দিয়ে। ধর মোটামুটি পরিচিত একজন রাইটার যদি একটা বইয়ের শুরুতে কিছু লিখে দেয়, তাহলে পাঠকের কাছে বইটার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়ে যায়। আমি চিন্তা করছি আমার কবিতাটার প্রথম ভল্যুমটা বের করে ফেলব। বেশি না, ২৫ হাজারের মত শব্দ থাকবে ওটাতে...'



এতক্ষণে আমাকে পার্টিতে ডাকার মাজেজা বুঝতে পারলাম। দানেরি বই লিখছে, আর আমাকে চেপে ধরবে তার বইয়ের শুরুতে ভাল ভাল কিছু কথা লিখে দেবার জন্য। তার এই শব্দের জগাখিচুড়িকে ভাল বলে স্বীকৃতি দিলে, আমার লেখক জীবনের কি অবস্থা হবে তাই নিয়ে ভয় ধরে গেল। সৌভাগ্যক্রমে দানেরি জানাল, আমাকে না, সে চায় আমার পরিচিত এক রাইটার- আলভারো মেলিয়ান লাফিনোঅরকে। আমি যেন আলভারোকে অনুরোধ করে ব্যাপারটা সেটল করে ফেলি। দানেরি আরও যোগ করল, 'আর বিয়াট্রিয বেঁচে থাকলে তোমাকে ও-ই বলত কাজটা করে দিতে।'



হাতে ধরা বিয়ারের প্রভাবেই হয়তো, আমি উচ্ছ্বসিতভাবে রাজি হলাম। 'হু, ঠিক ঠিক। সামনের বৃহস্পতিবারে রাইটার্স ক্লাবে ডিনারের দাওয়াত আছে আমার, ওখানে আলভারোর সাথে কথা হবে। ওকে তোমার কথাটা বলে দেখব, হুঁ? আচ্ছা, আসি তাহলে।' বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলাম।



সামনের মোড়টা ঘুরতে ঘুরতে আমি অপশনগুলো ভেবে দেখতে লাগলাম।

১) আমি আলভারোকে বলতে পারি, ভাই, আমার মৃত প্রেমিকার চাচাত ভাই একটা বিশাল আবর্জনা প্রসব করেছে, প্রকাশ করতে চায়। তুমি একটা প্রিফেস লিখে দাও।



২) কিছুই না বলে চুপচাপ ডিনার খেয়ে এসে পড়া।



হুমম...নম্বর দুই। নিঃসন্দেহে দুই।



কিন্তু, পরবর্তী শুক্রবারটা শুরু হলো একপ্রকার আত্মা-ধকধক-করা ভয় নিয়ে। ফোনের দিকে তাকিয়ে আমি কুঁকড়ে যেতে থাকলাম। একটু অপরাধীও মনে হচ্ছিল নিজেকে। যে যন্ত্র একসময় বিয়াট্রিযের সিল্কের মত কোমল কণ্ঠস্বর বয়ে নিয়ে আসত, সেই একই যন্ত্রে আজ হয়তো দানেরির ধোঁকা-খাওয়া রাগান্বিত গলা শুনতে হবে। খোদার অসীম রহমতে, কেউ ফোন করল না।



তার পরের দিনও না।



তার পরের দিনও না।



ক্রমান্বয়ে দানেরির ফোনকল যে আসতে পারে, এই কথাটাই আমি ভুলে যাচ্ছিলাম। কিন্তু অক্টোবরের শেষের দিকে একদিন, ফোন বাজল। লাইনে ছিল দানেরি। আমি প্রথমে ওর কণ্ঠ চিনতে পারিনি দেখে বিরক্ত হলো, একটু আহতও হলো মনে হয়। আমি ভাবছিলাম হয়তো বইয়ের কথা তুলবে, কিন্তু দানেরি কথা বলল আরেক বিষয়ে, 'জানো, হতভাগা জুনিনো-জুনগ্রি আমার বাড়ি ভেঙে ফেলতে চায়? ওরা নাকি স্যালন-বারটাকে আরও বড় করবে!' তারপর সে সুর করে অর্ধেক-কান্না অর্ধেক-গালাগালির মত একটা কিছু করতে লাগল।



তার হতাশা আমাকেও ছুঁয়ে গেল। আসলে বয়স পঞ্চাশের কোঠা পার হয়ে গেলে, একটা সময় সকল পরিবর্তনই বিষবৎ মনে হয়। তাছাড়া আমার বিয়াট্রিযের সব স্মৃতির বসবাস তো ওখানেই। আমি সামান্য অস্বস্তির সাথে তাকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করলাম, কিন্তু দানেরি আমার কথা কানেই তুলল না। ও বলতে লাগল, 'ওরা যদি সত্যি সত্যি বাড়িটা ভেঙে ফেলে, আমি মামলা ঠুকে দেব। ডাঃ জুনিকে হায়ার করে মামলা লড়ব। না হলেও পঞ্চাশ হাজার ডলার ড্যামেজ ফী দেওয়াবো ওদের দিয়ে।'



ডাঃ জুনির নাম শুনে আমি একটু নিশ্চিত হলাম। এ ব্যাটা সাত ঘাটের পানি খাওয়া লোক, এবং পুরো এলাকায় তুখোড় উকিল নামে পরিচিত। আমি দানেরিকে বললাম তাড়াতাড়ি তাকে হায়ার করে ফেলতে, দানেরি সম্মতি জানিয়ে বলল সে এই বিকালেই কল করবে। তারপর, কোন গোপন কথা বলার সময় আমরা যেমন গলা নামিয়ে ফেলি, তেমনি করে ও জানাল, কবিতাটা ও শেষ করতে পারেনি। মাটির নিচের ঘরের 'আলেফ'টা নষ্ট হয়ে গেলে পারবেওনা।



'জিনিসটা ডাইনিং রুমের নিচের ঘরে', দানেরি গলা আরও নামিয়ে ফেলল, 'আলেফের ভিতরে, জানো বোর্হেস, পুরো পৃথিবীটা ঢুকে বসে আছে। ওটা আমার--আমার! একেবারে ছোট্ট থাকতে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম ওটাকে। নিচের ঘরে যাবার সিঁড়িগুলো খুব ঢালু দেখে চাচা-চাচি আমাকে কখনো ওখানে যেতে দিতেন না আমাকে। একদিন যখন কেউ বাসায় ছিল না, আমি চুপিচুপি নিচে নামতে শুরু করি। কিন্তু সিঁড়িতে হোঁচট খেয়ে গড়াতে গড়াতে নিচে পড়ে যাই। অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। যখন চোখ খুললাম, তখনি সামনে দেখতে পেলাম জিনিসটা। আলেফ।'



'আলেফ?' আমি বোকার মত পুনরাবৃত্তি করলাম।



'হ্যাঁ, পৃথিবীর একমাত্র জায়গা যেখানে পুরো পৃথিবী ঢুকে বসে আছে। সমস্ত পৃথিবীর সবকিছু তুমি একত্রে দেখতে পাবে, সকল সম্ভাব্য অ্যাঙ্গেল থেকে, পুরোপুরি পরিস্কারভাবে- কিন্তু তবুও একটার সাথে আরেকটা কক্ষনো গুলিয়ে যাবে না। এই আবিস্কারের কথা আমি কাউকে বলিনি। এরপরে সুযোগ পেলেই মাটির নিচের অন্ধকার ঘরটায় গিয়ে আলেফের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। আলেফের কারণেই তো কবিতাটা লিখতে পারছিলাম, সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে করে। আর ওরা আমার আলেফ নিয়ে যাবে? নষ্ট করে দেবে? কক্ষনো না। আলেফটা শুধু আমার, আমার। ডাঃ জুনি সবার সামনে কোর্টে প্রমাণ করে দেবেন।'



আমি যুক্তি দিয়ে দানেরিকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম, 'তুমি না বললে ঘরটা অন্ধকার? তাহলে আলেফটাকে দেখলে কি করে?'



-'আরে যদি মহাবিশ্বের সকল কিছু আলেফের ভিতরে থাকে, তাহলে তো সব তারা-নক্ষত্র, সব আলোর উৎসও এর ভিতরে আছে। তাহলে এর বাইরে তো অন্ধকারই থাকবে। সোজা জিনিসটা ধরতে পারছ না?'



'আচ্ছা তুমি দাঁড়াও, আমি আসছি।'

দানেরি কিছু বলতে পারার আগেই ফোনটা নামিয়ে রাখলাম। হাঃ! নিজেকে আস্ত গাধা মনে হচ্ছে আমার। এই ব্যাপারটা আগে চোখে পড়েনি কেন? ভিটেরবো বংশের সকল পুরুষের মতই, কার্লোস আরজেন্টিনো দানেরি-ও একটা পাগল ছাড়া আর কিছু নয়। পাগলামির লক্ষণ আগেই ছিল, বাড়ি ভেঙে ফেলার কথায় মাথার ওপরে হয়তো চাপ পড়েছে; পুরোপুরি মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। তার এই পাগলামিতে আমার কেমন একটা যেন স্যাডিস্টিক আনন্দ হতে লাগল। আনন্দের পরিপূর্ণতা আসবে চোখের সামনে ওকে পাগলামি করতে দেখলে। মনের গহিনে, কেন যেন এই গাধাটাকে প্রথম দিন থেকেই ঘৃণা করে আসছি। কে জানে, হয়তো ও-ও একই রকম ঘৃণা করে আমায়!



গ্যারেই স্ট্রীটের বাসাটায় ঢুকলাম। কাজের মেয়েটা বলল অপেক্ষা করতে, কারণ দানেরি সেলার রুমে 'ছবি ডেভেলপ করছে'। সোফার পাশে পুরনো পিয়ানো, কেউ বাজায় না বোঝাই যাচ্ছে। ধুলো জমে গেছে। তার পাশে একটা ফুলহীন শূন্য ফুলদানি। ফুলদানির পেছনে দেয়ালে বিয়াট্রিযের বিশাল চকচকে ছবি। আমি আশেপাশে তাকাই।



কেউ নেই।



আমি মোহগ্রস্ত প্রেমিকের মত সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াই। ছবিটার ওপর মুখ ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বলি, 'এই, এই বিয়াট্রিয, এই বিয়াট্রিয ইলেনা ভিটেরবো, তাকাও তাকাও, দেখ, দেখ আমি, আমি বোর্হেস- এসেছি।'



কিছুক্ষণ পর কার্লোস এলো। শুকনো গলায়, কোন প্রকার কুশল জিজ্ঞাসায় না গিয়ে বলল, 'প্রথমে এক গ্লাস সুয়েডো-কগন্যাক গিলবে। তারপর যাবে সেলারে। শোনো, কোন আলো নিয়ে যেতে পারবে না। সেলারের মেঝেতে চিত হয়ে শোবে, আর চোখ রাখবে সিঁড়ির উনিশ নম্বর ধাপে। তুমি নিচে যাবার পর আমি দরজাটা বন্ধ করে দেব। কোন নড়াচড়া করবে না, চোখ সরাবে না। আর ইঁদুর গায়ের ওপর দিয়ে দৌড়ে গেলে ভয় পেয়ো না, ওরা কামড়ায় না...সাধারণতঃ।'



-'তারপর?'



'তাকিয়ে থাকার দুই এক মিনিটের মধ্যেই তুমি আলেফ দেখতে পাবে। আলেফ, আমার সত্যিকারের সম্পদ, আমার আত্মা! কত ভাগ্যবান তুমি ভেবে দেখ, এই জিনিস তোমাকে দেখতে দিচ্ছি!' দানেরির চোখমুখে নাটুকে একটা ভঙ্গি ফুটে উঠল।



ডাইনিং রুমে যেতে যেতে সে যোগ করল, 'আর, যদি দেখতেই না পাও, তাহলে বুঝতে হবে তোমার ভাগ্য খারাপ, নয়তো চোখ নষ্ট। এখন যাও যাও, তাড়াতাড়ি কর। ফিরে এসে বিয়াট্রিযের ছবির ওপর যত খুশি হুমড়ি খেয়ে পড়ে থেকো।'



ওর বারংবার তাগাদায় কিছুটা বিরক্ত হয়েই আমি সেলারের সিঁড়ি বেয়ে নামতে শুরু করলাম। সত্যি বলতে অন্ধকার সেলারটাকে কালো সর্বগ্রাসী একটা গহ্বরের মত লাগছিল। অন্ধকার আস্তে আস্তে চোখে কিছুটা সয়ে আসতে লাগল। আবছা আলোয় দেখতে পেলাম ঘরে কয়েকটা শূন্য কমদামি বিয়ার-কেস পড়ে আছে, এখানে ওখানে ক্যানভাসের শূন্য বস্তা দুএকটা ইতস্ততঃ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দানেরি বস্তাগুলোর একটা তুলে দু'ভাঁজ করল, তারপর সিঁড়ির সামনা-সামনি একটা জায়গায় বিছিয়ে দিল। আমি একটু বিরক্ত হবার ভঙ্গি করলাম।



'আহা, বালিশ হিসেবে হয়তো খুব একটা সুবিধার না', দানেরি শুকনো মুখে বলল, 'কিন্তু যদি জিনিসটা আর হাফ ইঞ্চিও বেশি পুরু হয়, তাহলে কিচ্ছু দেখতে পাবে না, গাধার মত শুয়ে থাকতে হবে শুধু শুধু। সুতরাং অমন করে মুখ বেঁকিও না। চটপট শুয়ে পড়ো এখানে, তারপর মেঝে থেকে গুণে গুণে উনিশ নম্বর ধাপের দিকে তাকিয়ে থাক।'



ও যা বলল একে একে সবই করলাম, তারপরে অবশেষে দানেরি দূর হল। দরজাটা লাগিয়ে দেবার পর, সত্যি বলতে একটু ভয় ভয় লাগছিল। আবছা আবছা যে আলোটা এতক্ষণ আসছিল, সেটাও দূর হয়ে যাওয়ায় কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। নিজের হাত পা মাথা সব কেমন বিচ্ছিন্ন, আলাদা আলাদা মনে হচ্ছিল। পরম অন্ধকারে ডুব দিলে যা হয়। এরকম অবস্থায় ভাবতে ভাবতে প্রথম বারের মত বুঝতে পারলাম, নিজেকে কি পরিস্থিতিতে ছুঁড়ে ফেলেছি। দানেরি পাগল তাতে কোন সন্দেহ নেই। তার পাগলামিতে আমি যদি সায় না দেই, যদি বলি আমি সত্যিই কোন আলেফ-টালেফ দেখিনি, তাহলে ও কি করবে? নিজের পাগলামি লুকিয়ে রাখতে মেরে ফেলবে আমাকে? নাকি এই ব্যবস্থা আরও আগে করে রেখেছে? কগন্যাকে বিষ মিশিয়ে দেয়নি তো??--ভাবতে ভাবতে আমার হৃদপিণ্ড লাফিয়ে উঠতে থাকে, আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি-- তারপর চোখ খুলি আবার। তখনই আমি দেখতে পেলাম আলেফ-টা।



গল্পের এই অংশে এসে আমাকে থেমে পড়তে হচ্ছে বারবার। একজন লেখক হিসেবে নিজের অক্ষমতারও মুখোমুখি হচ্ছি। তবুও, চেষ্টা করি।



প্রতিটি ভাষাই কয়েকটি নির্দিষ্ট প্রতীক, চিহ্ন নিয়ে গড়ে ওঠে। আর প্রতীক বা চিহ্নগুলো বেছে নেওয়া হয় ব্যবহারের ক্ষেত্রবিশেষে, অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। তাহলে যে জিনিসটা আগে আমি কখনো চোখে দেখিনি, অনুভব করিনি, তাকে কি দিয়ে বর্ণনা করব? অন্ধকে আকাশের রং যে নীল, বধিরকে পিয়ানোর সুর যে কেমন মিষ্টি - সেটা কি রূপক দিয়ে বোঝানো যায়?



সুফিরাও খোদাকে নিয়ে গান বাঁধতে গিয়ে, লিখতে গিয়ে এরকম সমস্যায় পড়েছেন। তারা এর সমাধানে আবার রূপক-ই বেছে নিয়েছেন। ঈশ্বরের অস্তিত্ব বোঝাতে গিয়ে এক পার্সিয়ান সুফি একটা পাখির কথা বলেছেন, যেটা একইসাথে পৃথিবীর সব পাখির অংশ। ফ্রেঞ্চ দার্শনিক Alanus de Insulis সেই ১১৬০ সালে একটা গোলকের কথা বলেছেন; মহাবিশ্বের প্রতিটি বিন্দু এর কেন্দ্র, কিন্তু এর কোন পরিধি নেই। আরও আছে চারমুখো Ezekiel-এর কাহিনি; যে একই সময়ে একই সাথে উত্তরে-দক্ষিণে-পূর্বে-পশ্চিমে যেতে পারে (বিনা কারণে এগুলো বলছি না, আলেফের আইডিয়াটার সাথে এদের প্রত্যেকের কোন না কোন দিকে মিল আছে)। হয়তো আমি আরও উদাহরণ দিতে পারব, কিন্তু তাতে জিনিসটার বর্ণনা আরও ঘোলাটে, অস্পষ্ট লাগবে আপনাদের কাছে। সসীমের মাঝে কখনো অসীমের ধারণা ঢোকানো সম্ভব কি? আলেফের দিকে তাকানোর সাথে সাথে কোটি কোটি মানুষের হাসি-কান্না-আবেগের ছবি (আসলে চলমান সিনেমার মত প্রত্যেকটা, কিন্তু বিভ্রান্তি কমানোর জন্য 'ছবি' শব্দটা ব্যবহার করছি) আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল, প্রত্যেকে সম্পূর্ণ পরিষ্কারভাবে, কোথাও কোন অস্পষ্টতা নেই। প্রত্যেকটা ঘটনা ঘটছিল একই সাথে। কিন্তু তাদের বর্ণনা দিতে গিয়ে এখন যা লিখব, তা আসবে ক্রমান্বয়ে। কারণ ভাষা বর্ণনার ওপর নির্ভরশীল, আর সকল বর্ণনাই একটা ক্রম মেনে চলে।



উনিশ নম্বর ধাপের একটু পেছনে, আঁধারের মাঝে, ছোট একটা গোলক শূন্যের ওপর ভাসতে ভাসতে ধীরে ধীরে ঘুরছিল। আমি আরেকটু ভাল করে দেখলাম। না, আসলে ওটা স্থির, কিন্তু গোলকের মাঝে অসংখ্য জিনিস ঘুরছে, ফিরছে, পাক খাচ্ছে - তাই পুরো জিনিসটাই নড়ছে বলে ভ্রম হচ্ছে। গোলকটা ব্যাসে কত হবে? এক ইঞ্চি, নইলে এক ইঞ্চির একটু বেশি। কিন্তু বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবটাই ওই এক ইঞ্চি গোলকের মধ্যে ভাসছিল। কোন কিছুকে যত ভাবে দেখা সম্ভব, তার ওপর যতভাবে আলো ফেলা যায়, ঠিক ততভাবেই আমি প্রত্যেকটা বস্তুকে দেখছিলাম। আয়নার বিপরীতে আরেকটা আয়না লাগিয়ে একটা নির্দিষ্ট কোণ থেকে তাকিয়ে দেখবেন, মনে হয় একটার পর একটা অসংখ্য আয়না দেখা যাচ্ছে। তেমনি, বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে একটা জিনিসের অসংখ্য রূপ একই সাথে আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল।



আমি দেখতে পেলাম বিশাল সুনীল সমুদ্র, দেখলাম রাত নেমে আসতে, দেখলাম ভোর হচ্ছে। প্রতিটা মানুষকে আলাদা করে দেখলাম। কালো পিরামিডের অন্ধকার কোণে এক মাকড়সার রূপালি জাল দেখলাম। একটা বিক্ষিপ্ত গোলকধাঁধার মত জায়গা দেখলাম (পরে মনে হল ওটা সম্ভবতঃ লন্ডন ছিল)। দেখলাম অসংখ্য চোখ আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন তারা আয়নায় নিজেকেই দেখছে। আমি পৃথিবীর সবগুলো আয়না দেখলাম, কিন্তু কোথাও নিজের প্রতিবিম্ব খুঁজে পেলাম না। আমি...বুকে বাতাস ভরে নিলাম অনেকটা। চোখ বন্ধ করলাম। তারপর তাকালাম আবার।



সোলার স্ট্রীটের একটা বাড়ির সামনের উঠোন। বাড়ির চকচকে টাইলস।

সেই একই টাইলস, যা ত্রিশ বছর আগে ফ্রে বেন্তোসে এক বাসায় দেখেছিলাম।

আঙুর-শাখা।

তুষার।

টোব্যাকোর ঘ্রাণ।

ধাতুর কাঁচা খণ্ড, দূষিত বাষ্প।

মরুভূমির উঁচুনিচু বালুর স্তুপ।

বালুর স্তুপের প্রতিটি আলাদা আলাদা কণা।

লম্বা করে একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা। তার চেহারা ভুলব না কখনো। দেখলাম তার জট-পাকানো চুল, তার ডান স্তনে ক্যান্সারের সংক্রমণ।

ফুটপাথের একপাশে একটা জায়গায় পড়ে থাকা আলগা মাটি। আগে একটা গাছ ছিল এখানে।



আদ্রোঁগ শহরের এক কোণে একটা সামার হাউস। দেখলাম বাসাটার এক ঘরে ফিলেমন হল্যান্ডের প্রথম বইটার ইংরেজি অনুবাদের প্রথম কপি, পড়ে আছে অযত্নে। একই সময়ে বইটার প্রতিটা পাতার প্রতিটা অক্ষর ফুটে উঠল চোখের সামনে (ছোট থাকতে মাঝে মাঝে মনে হত- আচ্ছা, কোন বই যখন বন্ধ করে শেলফে তুলে রাখা হয়, তখন অক্ষরগুলো আলগা হয়ে একটা আরেকটার সাথে মিশে যায় না কেন?)

জাপানের এক শহরে সূর্য অস্ত যাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছিল বাংলার একটা গোলাপ ফুলের রং এসে মিশে গেছে সূর্যে।



শূন্য ঘর। আমার ঘর।

আলকামারের একটা ক্লজিটে দুটো আয়নার মধ্যে একটা গ্লোব রাখা। আয়নাদুটোয় গ্লোবের অসংখ্য প্রতিবিম্ব।

সন্ধ্যা নামছে। কাস্পিয়ান সাগরের তীর ধরে দৌড়ে যাওয়া একদল বন্য ঘোড়ার কেশর উড়ছে বাতাসে।

কারো হাতের হাড়গুলোর সূক্ষ্ম কাঠামো।

যুদ্ধরত সৈনিকরা বাড়িতে পাঠাচ্ছে ছবিঅলা পোস্টকার্ড।

মির্জাপুরের এক দোকানের শোকেসে স্প্যানিশ তাসের প্যাকেট।

একটা গ্রিনহাউসের মেঝেতে নুয়ে পড়া ফার্ণের ছায়া।

বাঘ এগোচ্ছে সাবধানে পাতা মাড়িয়ে, শিকারি চোখে ।

বন্য মোষের দল।

নদীতে জোয়ার ভাটা চলছে।

একটা প্রাচীন পার্সিয়ান জ্যোতির্মন্দির।

পৃথিবীর যত পিঁপড়ে আছে সবগুলোকে দেখলাম। সব।

একটা টেবিলের ড্রয়ারে কতগুলো চিঠি (হাতের লেখাটা দেখে আমি কাঁপতে শুরু করলাম), অবিশ্বাস্য অশ্লীল আর কামুক চিঠি।

বিয়াট্রিয লিখেছে কার্লোস আরজেন্টিনোকে।

দেখলাম একটা সমাধিফলক, যা আমি একসময় পূজা করতাম। তার নিচে পচাগলা অবশিষ্টাংশ, হাড় হয়ে গেছে ধুলো-মাটি। এদের সবার একসময় 'বিয়াট্রিয ভিটেরবো' নামক একটা একক, লোভনীয় অস্তিত্ব ছিল।

দেখলাম নিজের কালচে রক্তপ্রবাহ।

প্রেমিক-প্রেমিকারা মিলিত হচ্ছে।

প্রেম করছে।

মরে যাচ্ছে।

বিচ্ছিন্ন হচ্ছে।



প্রত্যেক বিন্দু, প্রত্যেক কোণ থেকে আমি দেখলাম- আমি তাকিয়ে আছি আলেফের দিকে।

আলেফের ভেতরে দেখলাম পৃথিবী।

পৃথিবীর ভেতরে আলেফ।

আলেফে পৃথিবী।

পৃথিবীতে আলেফ।

আলেফ... পৃথিবী...

পৃথিবী...আলেফ...

তারপর নিজের পা, মুখ চোখ দেখলাম। নিজের নাড়িভুঁড়ি দেখলাম। তোমাকে দেখলাম। আমাকে দেখলাম। তারপর হাসলাম, চোখ বন্ধ করে কাঁদতে চাইলাম কিন্তু পারলাম না। মাথা ঘুরতে লাগল। বমি বমি কেমন যেন। মানুষ যাকে চেনে মহাবিশ্ব নামে, কিন্তু যার প্রকৃত রূপ- সম্পূর্ণ রূপ- সে কখনো দেখেনি- আমি সেই নিষিদ্ধ রূপ দেখলাম।



কি অসীম বিস্ময়, কি অসীম আনন্দ!



-'হা হা, পুরো বোকা হয়ে গেছ, তাই না?' একটা খুশি খুশি, আমুদে কণ্ঠস্বর বলে উঠল, 'যে জিনিস দেখালাম, এই ঋণ হাজার বছরেও শোধাতে পারবে না। জিনিসটা এক কথায় স্বর্গীয়, তাই না বোর্হেস, অ্যাঁ?'



কার্লোস আরজেন্টিনো দাঁড়িয়ে ছিল সিঁড়ির সবচে ওপরের ধাপটায়। দরজার ফাঁক দিয়ে যে ক্ষীণ হলুদ রশ্মি চুইয়ে চুইয়ে আসছিল, তার আলোয় আমি নিজের পায়ে উঠে দাঁড়ালাম, তারপর বিড়বিড় করে জবাব দিলাম ওকে, 'স্বর্গীয়? হু, স্বর্গীয়ই বটে।'



আমার কণ্ঠে আশ্চর্যের সুরটাকে কার্লোস ভুল করে বিদ্রূপ ভাবল। একটু উদ্বেগে পড়ে গিয়ে ও জিজ্ঞেস করল, 'তুমি তো সব দেখেছ, না? একেবারে পরিষ্কার করে?'



ওই মুহূর্তেই আমি আমার প্রতিশোধের উপায় খুঁজে পেলাম।



সরাসরি ওকে দয়া দেখানোর ভান করে, কোমল স্বরে ওর আতিথেয়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানালাম। বললাম, সেলারে শুয়ে থেকে আমি অনেক 'আনন্দ' পেয়েছি। সেই সাথে কাঁধে হাত দিয়ে মেকি সহানুভূতি দেখিয়ে বললাম, 'বাড়িটা ভেঙে ফেলা তো আর ঠেকানো যাবে না, তুমি এক কাজ কর - ক'দিন গ্রাম দিয়ে ঘুরে এস। শহরের পরিবেশটা এত বাজে, তোমাকে কি আর বলব- আমারই তো মাঝে মাঝে মাথা নষ্ট হয়ে যায়!'



দানেরিকে কেমন অসহায় দেখাচ্ছিল। ও আলেফের কথা বলতে চাইল, কিন্তু আমি হাত নেড়ে জোর করে সে নিয়ে আর কথাই বললাম না। বেরিয়ে আসার আগমুহূর্তে আমি ওর সাথে ভীষণ আবেগের সাথে কোলাকুলি করলাম; তারপর আরও একবার গ্রামের তাজা আলোবাতাসের উপকারিতা নিয়ে একটা ছোটোখাটো ভাষণ দিয়ে খুশিমনে বেরিয়ে এলাম। পেছনে পড়ে রইল বিধ্বস্ত দানেরি।



বাইরে বেরিয়ে রাস্তা পার হয়ে, সিঁড়ি বেয়ে কনস্টিটিউশন স্টেশনে নামতে নামতে একটা ভয় আমাকে আঁকড়ে ধরতে শুরু করল। সাবওয়ের ট্রেনে চড়তেই ভয়টা আরও ঘনীভূত হল। এই জায়গায় আমি আগে কখনো আসিনি, কিন্তু যেখানে তাকাচ্ছি, যার দিকে তাকাচ্ছি- প্রত্যেকটা বাঁক, প্রত্যেকটা মুখ অনেকদিনের পরিচিত বলে মনে হচ্ছে। আমি এদের সবাইকে চিনি। সবকিছু দেখা হয়ে গেছে। সব পথ চলা হয়ে গেছে। একটা অবর্ণনীয় অনুভূতি চড়ে বসল বুকের ওপর। আমি কি আর কখনো নতুন কিছু দেখব না? শুনব না নতুন কোন সুর?



সম্পূর্ণ বিশ্বজগতের জ্ঞান আমাকে পাগলামির দিকে ঠেলে দিচ্ছিল, খুব আস্তে আস্তে।



সৌভাগ্যক্রমে, নির্ঘুম কয়েকটা রাত কাটানোর পর একদিন সকালে আবিষ্কার করলাম, পাখির এই ডাকটা আগে কখনো শুনিনি। বাইরের সূর্যোদয়টা নতুন মনে হচ্ছে। নতুন! এভাবেই বিস্মৃতির অতলে আলেফের কথাগুলো ডুবে গেল একদিন।





পুনশ্চ -



গ্যারেই স্ট্রীটের 'কোন একটা' পুরনো বাড়ি ভেঙে ফেলার ছয় মাস পরের কথা। প্রোক্রাস্ট অ্যান্ড কো. নামের এক প্রকাশনী কি জানি কোন কারণে দানেরির 'মহাকাব্যে'র একটা অংশ প্রকাশ করল। পুরোটা না, আর্জেন্টিনার বর্ণনার অংশটুকু। তারপর কি হল সেটাকে কি বলা যায়? (আমি বলব আমাদের সাহিত্যমানের জন্য একটা অশনিসংকেত) কার্লোস আরজেন্টিনো দানেরি জাতীয় সাহিত্য পুরষ্কারে দ্বিতীয় স্থান লাভ করল। ('প্রিয় বোর্হেস, তোমার অভিনন্দন-পত্র পেয়েছি', ক'দিন পর আমাকে ও চিঠি পাঠাল, 'ভদ্রতার মুখোশের নিচে তোমার ঈর্ষা আর বিদ্বেষের বাহার দেখে আমোদিত হলাম। তবে যা-ই বল, তোমাকে স্বীকার করতেই হবে এবারের জয়মাল্যটা আমারই প্রাপ্য। আমার মুকুটেই সাহিত্যের পদ্মরাগমণিটির যথার্থ স্থান') প্রথম পুরষ্কার পেলেন ড. আইতা, তৃতীয় পুরষ্কার গেল ড. মারিও বনফান্তির কাছে। সবচে অবিশ্বাস্য ব্যাপারটা হল- আমার বই 'শানানো শব্দের চিরকুট' একটা ভোটও পেল না! নীরস আর মানহীন বাজারি লেখকদের জয় হল আরেকবার! দানেরির সাথে আমি কয়েকবার দেখা করার চেষ্টা করেছি। বাজারে গুজব আছে তার নাকি আরেকটা কবিতার বই বেরুবে। তিনটে বড় বড় প্রকাশনী ওর পেছনে লাইন দিয়ে বসে আছে। আলেফের প্রভাবমুক্ত হয়ে তার কলমও ঘন ঘন গর্ভবতী হয়ে পড়ছে, এখন লিখছে আমাদের জাতীয় বীর জেনারেল স্যান মারটিনকে নিয়ে (খুব সম্ভব একটা মহাকাব্য)



আলেফ সম্পর্কে আমি কয়েকটা ধারণা যোগ করতে চাই- একটা এর প্রকৃতি নিয়ে, আরেকটা এর নাম নিয়ে। 'আলেফ' হচ্ছে হিব্রু বর্ণমালার প্রথম অক্ষর। এই শব্দটি কাব্বালা ধর্মে 'En Soph' নামে পরিচিত, যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে 'ঈশ্বরের বিশুদ্ধ ও সীমাহীন বৈশিষ্ট্য'; এবং 'En Soph' বা আলেফ যদি মানুষের রূপ ধারণ করে, তাহলে তার মাথা স্পর্শ করে স্বর্গ এবং পায়ের পাতা স্পর্শ করে পৃথিবী (এই ধর্মে পৃথিবী-স্বর্গের মাঝে দূরত্ব অসীম ধরা হয়)। জর্জ ক্যান্টরের Mengenlehre গ্রন্থে আলেফকে ধরা হয়েছে ট্রান্সফাইনাইট সংখ্যার প্রতীক হিসেবে, (যেসব সংখ্যা যেকোনো সসীম সংখ্যার চেয়ে বড় কিন্তু অসীম সংখ্যা নয়) যেমন আলেফ-ওয়ান, আলেফ-নাল ইত্যাদি। অর্থাৎ আলেফ নিতান্তই কোন মনগড়া শব্দ নয়, এর পেছনে অনেক ইতিহাস আছে। সুতরাং প্রশ্ন হচ্ছে দানেরি জানল কি করে, তার সেলারের জিনিসটার নাম 'আলেফ'?



আমার ধারণা, গ্যারেই স্ট্রিটের বাসায় আমি যা দেখেছিলাম- ওটা আসল আলেফ নয়। নকল।



আগে কয়েকটা তথ্য দেই। রিচার্ড ফ্র্যান্সিস বার্টন ১৮৬৭ সালের দিকে ব্রাজিলের সাও পাওলোতে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ৭৫ বছর পর, জুলাই ১৯৪২ সালে এক গবেষক সাও পাওলোর লাইব্রেরিতে স্বয়ং বার্টনের হাতে লেখা একটা পাণ্ডুলিপি খুঁজে পান। পাণ্ডুলিপিতে বলা হয়েছে এক রহস্যময় আয়নার কথা, যাতে তাকালে ধরা পড়ে 'পুরো বিশ্বের প্রতিবিম্ব'। বার্টন বলছেন এই আয়নার মালিক ইস্কান্দার জুলকারনাইন, মুসলমানদের একটা অংশ বিশ্বাস করে ইনি একজন আল্লাহ-প্রেরিত নবী ছিলেন। একে পশ্চিমা বিশ্ব চেনে ম্যাসিডোনিয়ার 'আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট' নামে।



বার্টন একইরকম আরও কয়েকটা বিশেষ বস্তুর নাম করেছেন -- পার্সিয়ান সম্রাট কায়খসরু-র সাকির পেয়ালা- যাতে অনন্তকাল ধরে সাকি ঢাললেও অর্ধেকের বেশি ভরতো না কখনো। আরব্য এক হাজার এক রজনীর গল্পে আছে - তারিক-ইবনে-যিয়াদ সুউচ্চ এক দালানে খুঁজে পেয়েছিলেন আয়না- যাতে মানুষ বাদে আর সবকিছুর প্রতিবিম্ব দেখা যেত (Thousand and One Nights, 272)। জুলস ভার্ন, এইচ.জি ওয়েলসের প্রায় দুই হাজার বছর আগে সিরিয়ার অধিবাসী লুসিয়ান প্রথম সায়েন্স ফিকশন লেখেন, 'ট্রু হিস্টোরি' বা 'সত্যিকারের ইতিহাস' নামে। এই বইয়ে আছে চাঁদের গায়ে লেগে থাকা একটা আয়নার কথা (True History, I, 26)। দার্শনিক ক্যাপেলার Satyricon বইয়ে আয়নার তৈরি এক বর্শার উল্লেখ আছে - যা কারো গায়ে বিঁধলে সে অদৃশ্য হয়ে যেত।



জাদুকর মারলিনের আয়নার বর্ণনায় বলা হচ্ছে, 'এটি ছিল গোলাকার, ফাঁপা, এবং ফাঁপা অংশটিতে সত্যিকারের জগতের অবস্থান। আমাদের জগত ওই জগতটির প্রতিবিম্ব মাত্র (The Faerie Queene, III, 2, 19)।'



কায়রোতে 'আমর ইবনে আল-আসের মসজিদ' নামে একটি মসজিদ আছে। যেসব বিশ্বাসীরা ওই মসজিদে জড়ো হন- তাদের মাঝে একটি শতাব্দীপ্রাচীন ধারণা বিদ্যমান, যে- যেসব স্তম্ভ এত বছর ধরে মসজিদের ভার বহন করে চলেছে, তাদের একটির ভেতরে গোল একটা পাথর ঢোকানো আছে। অবশ্য পাথরটি কেউ কখনো দেখেনি। কিন্তু স্তম্ভগুলোর একটিতে কান পেতে থাকলে নাকি পুরো মহাবিশ্বের গুঞ্জন শোনা যায়। অনুভব করা যায়। মসজিদটি সপ্তম শতাব্দীতে তৈরি করা হয়। কিন্তু এর গায়ের ইটপাথর বা স্তম্ভগুলোর উৎস সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায় না। যেমনটা ইবনে খালদুন লিখেছেন, 'যখন বেদুইনরা সভ্যতা গড়ে, তখন মরুভূমি তাদের বালু ছাড়া আর কিছু দিতে পারে না। তাই তারা সভ্যতা গড়বার উপাদান ধার করে বাকি বিশ্বের কাছ থেকে।' ।



তাহলে যুগ যুগ ধরে আলেফের অস্তিত্ব কোথায় ছিল? মারলিনের আয়নায়? কায়রোর ওই মসজিদের কোন এক স্তম্ভে? সসীম কিছুতে অসীমকে অনুভব করা কি আদৌ সম্ভব? নাকি দানেরির ওই সেলারের মেঝেতে শুয়ে আমি সত্যিই 'আলেফ' দেখেছিলাম, এখন সেই অভিজ্ঞতা কোনোভাবে ভুলে গেছি, তাই সংশয় মাথাচাড়া দিচ্ছে?



আমাদের জগতটা পরিবর্তনশীল। সবসময় ঘুরছে, ফিরছে, রক্তের মত মেঝে বেয়ে গড়াচ্ছে, বদলে যাচ্ছে, পাল্টে যাচ্ছে। মানুষের মনটা তেমনি, বাঁচতে বাঁচতে একসময় কুয়াশার মত বিস্মৃতি এসে ঢেকে দেয় প্রিয়- পরিচিত সবকিছুকে। আমি নিজেও বদলে যাচ্ছি। হারিয়ে যাচ্ছি। বছরের পর বছরেরা এসে বাড়িয়ে দিচ্ছে ক্লান্তি। ভুলিয়ে দিচ্ছে আলেফ কি ছিল কি না ছিল।



ভুলিয়ে দিচ্ছে বিয়াট্রিযের মুখ।

মন্তব্য ১০০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৬

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: আর্জেন্টাইন লেখক হোর্হে লুইস বোর্হেস, স্প্যানিশ সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক, সম্ভবতঃ ১৯৪৫ সালে এই গল্পটি লেখেন, 'এল আলেফ' নামে তা প্রকাশিত হয়। তার লেখনীর মূল বিষয়গুলোর প্রায় সবই এই গল্পে কোন না কোন ভাবে এসেছে, আর তাই 'এল আলেফ'কে বোর্হেসের সবচে পরিণত গল্পগুলোর একটি বলে ধরা হয়।

বোর্হেসের ছোট গল্পগুলোতে আমরা নির্দিষ্ট কয়েকটা থিম বারংবার আসতে দেখি। স্বপ্ন, বই, লাইব্রেরি, গোলকধাঁধা, আয়না, অসীম সংখ্যা বা ধারণা ইত্যাদির সাথে ধর্ম, ঈশ্বরের আইডিয়া মিলেমিশে অদ্ভুত এক পরিবেশের সৃষ্টি করে। বাস্তবের সাথে পরাবাস্তবতা মিশে যায়। জন্ম হয় জাদুবাস্তবতার। বোর্হেস ব্যক্তিগতভাবে অজ্ঞেয়বাদী ছিলেন, তিনি বিশ্বাস করতেন মানুষের পক্ষে ঈশ্বরকে বোঝা, তার অস্তিত্বের অসীমতা অনুধাবন করা সম্ভব নয়। কিন্তু তার প্রতিটি গল্পই এর বিপরীতে লড়ে যায়, চেষ্টা করে অসীমকে বুঝতে।

১৯৫০ সালের শুরুর দিকে বোর্হেস সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যান। গল্প লেখালেখি প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। অন্যের সহায়তা ছাড়া চলতে পারতেন না। জীবনের শেষ দিকে এসে তিনি ক্রমশ হতাশাবাদী হয়ে পড়ছিলেন, দুনিয়াজোড়া পরিচিতি পাওয়া সত্ত্বেও নিজেকে ব্যর্থ লেখক মনে করতেন। অবশেষে ১৯৮৬ সালে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে জেনেভায় তার মৃত্যু হয়।

তার অন্যান্য ছোটগল্পের সংকলনের মাঝে 'The Book of Sand', 'Dr. Brodie's Report', 'Historia universal de la infamia', 'Garden of Forking Paths' ইত্যাদি অন্যতম।

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৭

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: কতিপয় লিংক

*En Soph - http://en.wikipedia.org/wiki/Ein_Sof

*ট্রান্সফাইনাইট সংখ্যা - Click This Link

*স্যার ফ্র্যান্সিস বারটন - Click This Link

*সম্রাট কায়খসরু (মূল গল্পে এর উচ্চারণ লেখা হয়েছে Kay Kosru) - http://en.wikipedia.org/wiki/Cyrus

*পার্সিয়ার লুসিয়ান (সম্ভবতঃ প্রথম সা-ফি লেখক, তার গল্পে তিনি আন্তঃগ্রহ যুদ্ধ, অন্য গ্রহে ভ্রমণ, এলিয়েন- ইত্যাদি নিয়ে লিখেছেন সেই ১৫২ সালে) - http://en.wikipedia.org/wiki/Lucian

*লুসিয়ানের বই - http://en.wikipedia.org/wiki/True_History

*দার্শনিক ক্যাপেলার গ্রন্থ - http://en.wikipedia.org/wiki/Satyricon

*আমর ইবনে আল-আসের মসজিদ - Click This Link

*হোর্হে লুইস বোর্হেসের সাক্ষাৎকার (বঙ্গানুবাদ) - http://ebanglalibrary.com/1150

২| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৩২

কালীদাস বলেছেন: অনুবাদ ভাল হৈছে। তয় গল্পটা কয়েক জায়গায় বেখাপ্পা লাগায়, অতটা ভাল লাগে নাই আমার :|

আছেন কেমন? :)

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৩৮

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: বোর্হেসের গল্প লেখার ধরণ কেমন যেন, অনুবাদ করে খুব একটা শান্তি পাওয়া যায় না। আমার অবশ্য তা-ও ভাল লাগে :|

অনেকদিন পর দেখলাম আপনাকে। ভাল আছি অনেক:)

৩| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৩৬

অরুদ্ধ সকাল বলেছেন:
অর্ধেকটা পড়তে পারছি___
তবে লেখোয়াড় ভাই থাকলে পুরোটা পড়ে বলিতে পারিতেন কিছু।

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৪০

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: বড়সড় গল্প তো, ব্যাপার না- আস্তে আস্তে পড়ে দেখেন।

লেখোয়াড়ের পড়ার স্পিড অনেক বেশি নাকি?:)

৪| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:০৬

মামুন রশিদ বলেছেন: গল্পের অনুবাদ আক্ষরিক অর্থে কখনোই শুধু ভাষান্তরকে বোঝায় না । সাহিত্য অনুবাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন পরিবেশ ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন সময়কে আত্মীকরণ করে পাঠকের সামনে সেটাকে বিশ্বাসযোগ্য ভাবে তুলে ধরতে হয়, মুলের প্রতি অনুগত থেকে । কর্মটি নিঃসন্দেহে শ্রমসাধ্য আর দক্ষতাজাত বলেই অনুবাদকে সাহিত্যকর্ম হিসাবেই স্বীকৃতি দেয়া হয় ।

আর এই কাজটিই আপনি দারুণ সাবলীলতার সাথে করে যাচ্ছেন ।

গল্পে ভালোলাগা ++

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৪০

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: আপনার মন্তব্য ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করল, প্রিয় মামুন। অনেক উৎসাহ পেলাম।

অনুবাদ দেবার ক্ষেত্রে আমি চেষ্টা করছি একইসাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছোটোগল্পের প্রতি পাঠকের আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে। একজনও যদি অনুবাদ পড়ে উৎসাহী হন, সাহিত্যের এই ধারাটি নিয়ে নাড়াচাড়া করেন- তাহলে আমার কাজ সার্থক।

সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৫| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:২২

মাসুম আহমদ ১৪ বলেছেন: লম্বা গপ। বুকমার্ক করে রাখলাম। পরে পড়বো

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৪২

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: হু, একটু বড় গল্প। সময় নিয়ে পড়লেই ভাল লাগবে।

৬| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫৭

ইসতিয়াক অয়ন বলেছেন: অসাধারন একটা কাজ করেছেন ভাই !
চমৎকার হয়েছে অনুবাদ ।
প্রিয়তে নিলাম !

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:০৫

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ জানবেন:)

৭| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৫২

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:



ভাই আপনার তুলনা আপনি নিজেই। গ্রেট একজন লেখকের সাথে পরিচয় হয়েছে এই জীবনে ব্লগের মাধ্যমে।

++++++++

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:০৯

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: সত্যিকার অর্থেই লজ্জিত হলাম, সম্মানিত হলাম। অনেক কৃতজ্ঞতা জানবেন কাণ্ডারি।

শুভেচ্ছা রইল।

৮| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:১৯

ভবঘুের মানব বলেছেন: Do u earn online income..?
if u earn and learn outsourcing......

visit & see tutorial : http://www.youtube.com/OutsourcingHelpBd
http://www.outsourcing-institute.com .

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৪২

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ?

৯| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:৪৫

হু বলেছেন: ভাল লাগল..... ভাললাগা রইল আপনার ও আপনার অনুবাদের প্রতি +++

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৪৩

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ধন্যবাদ ব্লগার হু।

১০| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৩:৩৭

বিকারগ্রস্থ আগন্তুক বলেছেন: কয়েকদিন ধরে একটি ছোট গল্প অনুবাদ করার কথা চিন্তা করছিলাম আপনার অনুবাদ গল্পটা পড়ে এটির জন্য উৎসাহ পেলাম।

বোর্হেসের সাহিত্যের সাথে পরিচয় ছিল না। গল্পের শুরুটা ভাল লাগেনি। মাঝে বুদ হয়ে ছিলাম। শেষের যবনিকাপাতটা মনের মত হয়নি। আমি যেভাবে কল্পনায় একেছিলাম তার সাথে বিন্দুমাত্র মিল খুজে পাইনি, তাই হয়ত। আপনার অনুবাদ ভাল লেগেছে। বোর্হেসের আরো কিছু লেখা আপনার কীবোর্ড থেকে পাব আশা করছি।

শুভকামনা রইল।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৫০

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: আপনার কথায় আনন্দিত হলাম। অনুবাদটি পড়ার জন্য অপেক্ষা করছি।

বোর্হেসের ছোট কয়েকটা গল্প আছে, 'The Zahir', 'LIbrary of Babel', পড়ে দেখতে পারেন।

আরও অনুবাদ করার ইচ্ছা আছে। সাথেই থাকুন:)

১১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৭:০১

আমিই মিসিরআলি বলেছেন: প্রোফেসর সাব অনুবাদ যথেষ্ট সুন্দর হয়েছে , কিন্তু গল্পটা একটু একটু বেখাপ্পা লাগছিল, অর্ধেকটা পড়লাম , প্রিয়তে রাখলাম , আবারও পড়ব ১ম থেকে

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৫৫

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: পড়ার জন্য এবং প্রিয়তে নেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ, মিসিরআলি। শুভেচ্ছা।

১২| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:১৮

সায়েম মুন বলেছেন: এক তৃতীয়াংশ পড়লাম। গল্পে গতি আছে। বাকীটা সময় করে পড়ে ডিডেইল কমেন্ট দিবো। :)

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:২৭

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: আচ্ছা, ডিটেইল কমেন্টের অপেক্ষায় আছি:)

১৩| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:১৯

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: অনুবাদটা আমার বেশ ভালো লেগেছে। মামুন ভাই একদম ঠিক আমার মনের কথাটাই বলেছেন যে গল্পের অনুবাদ আক্ষরিক অর্থে কখনোই শুধু ভাষান্তরকে বোঝায় না । সাহিত্য অনুবাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন পরিবেশ ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন সময়কে আত্মীকরণ করে পাঠকের সামনে সেটাকে বিশ্বাসযোগ্য ভাবে তুলে ধরতে হয়, মুলের প্রতি অনুগত থেকে । কর্মটি নিঃসন্দেহে শ্রমসাধ্য আর দক্ষতাজাত বলেই অনুবাদকে সাহিত্যকর্ম হিসাবেই স্বীকৃতি দেয়া হয় ।

এর আগেও আপনার অনুবাদ পড়েছি। আশা করি এটা নিয়মিতই করবেন। :)

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৩৫

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ, কা_ভা। উৎসাহ পেলাম অনেক।

কৃতজ্ঞতা জানবেন :)

১৪| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৪

সুমন কর বলেছেন: আপনি অনুবাদ ভাল করেন। কাজটি অনেক কঠিন ও শ্রমসাধ্য। অনেক ধন্যবাদ।
আর আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম, একজন নতুন লেখকের কথা।
গল্পটা কিছু পড়লাম, বাকিটা সময় করে পড়ে নেব।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৩৮

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: বোর্হেসের লেখনীটা আমাদের উপমহাদেশীয়, এমনকি পশ্চিমের লেখকদের চেয়েও আলাদা, তাই কিছুটা মনোযোগ দাবি করে। তার সাথে আপনার পরিচয় করিয়ে দিতে পেরে আনন্দিত হলাম।

শুভেচ্ছা।

১৫| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: এখন... বোর্হেসের সবচেয়ে পরিণত গল্প বলে কথা। আমার কাছে অবশ্য তথ্য ভারাক্রান্ত মনে হয়েছে কিছুটা। আলেফের ভেতর বিশ্ব অবলোকনের বিস্ময়, আলৌকিকভাবে হয়তোবা আলেফের কারণেই দানেরির সেরা কবি বনে যাওয়া, অতঃপর বিয়াট্রিজ এবং আলেফ দুইকেই ভুলতে থাকা। শেষ লাইনে বিয়াট্রিজ আর আলেফ এর কথা একত্রে বলার কারণ কী? দুটোই সমতূল্য? প্রেমিকার চোখ, স্মৃতিতে যে অলৌকিকত্ব আছে পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর গোলকও তাকে অতিক্রম করতে পারে না? আলেফের ভেতর আমরা অবর্ণনীয় কিছু দেখতে পাই, বিয়াট্রিজের ভেতরেও তাই। হয়তো বা আমাদের সবচেয়ে আবেগের স্থানে আলেফ/বিয়াট্রিজ অধিগ্রহণ করে থাকে। তারপরেও, সব ছাপিয়ে আমাদের বিস্মরণমুখো বেঁচে থাকার ইতিহাসই জয়ী। এক ক্যান বিয়ার আর ভালো কিছু খাবার খেতে খেতে সৃজনের তৃপ্তি অথবা ঈর্ষা, তারপর একটা ঢেকুর।

আপনার অনুবাদ অসাধারণ। বিশেষ করে কিছু নতুন শব্দের নির্মাণ। প্রতিমাসে অন্তত একটা করে অনুবাদ গল্প চাই।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৫৫

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: বোর্হেস পরবর্তীতে গল্পের একটা ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, সেটার কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি -

'আলেফ কি? ওটা কি আমাদের মনগড়া কিছু? আমরা ছুটে চলি অসংখ্য জিনিসের পেছনে সারা জীবন ধরে, কিন্তু এদের আসল গুরুত্ব বুঝতে পারি না কখনো। দানেরি আলেফের দাস হয়ে ছিল, যেই একে হারাল- সে খ্যাতি পেয়ে গেল, তার প্রতিভার উন্মেষ ঘটল। বোর্হেস দাস হয়ে ছিল বিয়াট্রিযের, কিন্তু তাকে হারানোর পর উল্টোটা ঘটল- সে হারিয়ে ফেলল তার লেখক সত্ত্বাকে।...কে যেন বলেছিল, ঈশ্বর যদি না-ও থাকতেন, মানুষ-ই তাকে সৃষ্টি করে নিত। আমরাও তেমনি। বেঁচে থাকার জন্য একটা কারণ খুঁজে নিতে শিখি, যেখানে আদতে হয়তো এমন কোন কারণই নেই! আমরা কি নিশ্চিত হতে পারি? চলতে থাকে জীবন। বিশ্বের সবচে বিস্ময়কর বস্তুটিও তাকে থামিয়ে রাখতে পারে না, সাজিয়ে রাখতে পারে না।'

আমারও এটাই মনে হয়, বোর্হেস আলেফ আর বিয়াট্রিযের তুলনাটাই গল্পে দেখাতে চেয়েছেন। তাকে শেষটায় এনে বিচিত্র এক ভাবনায় পর্যবসিত করেছেন।

কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, প্রিয় হা_মা। চেষ্টা থাকবে অবশ্যই। শুভরাত্রি।

১৬| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৭

গ্রাম্যবালিকা বলেছেন: paulo coelho এর আলেফ পড়েছি..... গল্পের নায়ক সেখানে তার স্বেচ্ছা নির্বাসিতা স্ত্রীকেও আলেফ বলেছেন ৷ পুরোটা বইতে সে তার আলেফ কে খুঁজে ফেরে! গোলমেলে লেখা :|

কি চমত্কার অনুবাদ করেন! মুগ্ধ :)

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৫৭

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: পাওলো কোয়েলহোর সাম্প্রতিক বইটাও চমৎকার, এবং হ্যাঁ, গোলমেলেও বটে!

ধন্যবাদ:)

১৭| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৮

ঢাকাবাসী বলেছেন: পড়তে গিয়ে দেখি আজদাহা সাইজ! পরে পড়ব। ধন্যবাদ।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৫৮

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: আচ্ছা ঠিক আছে। শুভেচ্ছা রইল।

১৮| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৪৪

আজ আমি কোথাও যাবো না বলেছেন: অনুবাদ মানে যে কেবল ভাষান্তর নয় সেটা বুঝতে পারছি।
দুর্দান্ত অনুবাদ করেছেন প্রফেসর সাহেব। :)
শুভকামনা নিরন্তর।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:০০

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি! শুভকামনা রইল আপনার জন্যেও।

১৯| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৪০

অপু তানভীর বলেছেন: এতো বড় গল্প পিসি মনিটরে পড়া আমার পক্ষে সম্ভব না । আপাতত প্রিন্ট দিলাম ।

কেমন লাগলো পড়ে এসে জানাচ্ছি । :):)

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:২২

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: আচ্ছা ঠিক আছে:) অপেক্ষায় আছি

২০| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৩৯

জোবায়েদ-অর-রশিদ বলেছেন:
পার্থিবতার যেখানেই ইতি ঘটেছে সেখান থেকেই ‘মেটাফর’ য়ের লজিক শুরু হয়। গল্পটি একই প্রশ্ন করছে ! বোর্হেস তার ডগম্যাটিক বর্ণনায় অথবা কখনো যুক্তির শয্যায় ভাবোদ্দীপক শব্দটিকে পরতীত করতে চাইছিলেন। আপনার অনুবাদেও যার প্রসঞ্জন ঘটেছে। সুতরাং লিখাটি ভাল লাগলো। নরম্যানের অনুবাদে বোর্হেসকে পেয়েছিলাম। অনুবাদ এবং গবেষণার বর্তমানে ক্লাসিক্যাল সাহিত্যের স্বাদ আমাদের মুগ্ধ/ভাবিত করে থাকে। যা অবশ্যই পরিশ্রমসাধ্য ... কৃতজ্ঞতা জানবেন।

ব্লগটিতে এ ধরনের লিখা আজকাল দেখাই যায় না। আপনি লিখুন। ব্লগে আসার ইচ্ছে ; আমি পাঠককে, উৎসাহিত করবে।

[প্লাস]

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৫০

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: এই লেখকের গল্পগুলোতে বাস্তব আর কল্পনার মাঝের রেখাটা খুব সূক্ষ্ম হয়ে দেখা দেয়, মাঝে মাঝে মিশে গিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টি করে- এই ব্যাপারটা আমার খুব পছন্দের। নরম্যানের অনুবাদটি পড়া হয় নি এখনো।

চেষ্টা ছিল মূলের সাথে (কিংবা ঠিক করে বললে মূলের অনুবাদের সাথে!) বিশ্বস্ত থাকার। আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম।

আরও কয়েকটা অনুবাদে হাত দিচ্ছি। আশা করি সেগুলোও ভাল লাগবে পাঠকের। শুভেচ্ছা।

[প্লাসের জন্য ধন্যবাদ]

২১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৪৬

অপু তানভীর বলেছেন: গল্পটা পড়ার সময় মনে হয় নি যে আসলে অনুবাদ পরছি ! এখানে মনে হয় একজন অনুবাদকের সব চেয়ে বড় অর্জন !
চমৎকার অনুবাদ !

তবে লেখার বিষয় বস্তু ঠিক ধরতে পারলাম কি না বুঝতে পারলাম না ! দেখি আরেকবার পড়ে !

:):)

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:০২

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: :) ধন্যবাদ!

লেখার বিষয়বস্তু দেখতে হামার চমৎকার কমেন্টে নজর বুলাতে পারেন।

শুভেচ্ছা রইল অপু!

২২| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:১৮

একজন ঘূণপোকা বলেছেন:

একটানে পড়ে গেলাম।


অপু তানভীর বলেছেন: গল্পটা পড়ার সময় মনে হয় নি যে আসলে অনুবাদ পরছি ! এখানে মনে হয় একজন অনুবাদকের সব চেয়ে বড় অর্জন !
চমৎকার অনুবাদ !


সহমত

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:০৪

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ধন্যবাদ ঘুণপোকা। কৃতজ্ঞতা রইল।

২৩| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৫৯

আদনান শাহ্‌িরয়ার বলেছেন: অনুবাদের কাজটা আমার সবসময়ই কঠিন মনে হয় । কারণ, অনুবাদে শুধু আক্ষরিক অনুবাদ করলেই হয়না, মূল লেখককে বুঝে তার মানসিকতাকে নিজের চিন্তাধারার সাথে সমন্বয় করে পাঠকের কাছে পৌঁছাতে হয় । আপনার এই দক্ষতা বিপুল পরিমানেই আছে । এই দীর্ঘ গল্পে যেভাবে আপনি আপনার শব্দ চয়নের গুনে আটকে রাখলেন তাতে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না । গল্পে কিছু দুর্বোধ্যতা আছে কিন্তু তা চমৎকার একটা গল্প পড়ার তৃপ্তি থেকে বঞ্চিত করে না ।

শুভেচ্ছা , ভালো থাকবেন । :) :)

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:১৩

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: প্রিয় আদনান, অনুবাদে যেটুকু পরিশ্রম যায়, সেটি আপনাদের ভাল লাগলেই সার্থক মনে করি। সাথে থাকার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা।

ভাল থাকুন আপনিও :)

২৪| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:১৬

আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
দূর্দান্ত হয়েছে প্রোফেসর।

আপনার কি বই এসেছে কোনো?

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:২৬

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ধন্যবাদ, কবি।

না, ভবিষ্যতে ইচ্ছা আছে যদিও, কিন্তু বই বের করার মত সাহস এখনো হয়নি:)

শুভেচ্ছা।

২৫| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৩:৫০

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন:

আপনার অনুবাদ পারদর্শিতার প্রশংসা না করে পারছি না। উপযুক্ত শব্দ চয়ন আর অসাধারন বাক্য বিন্যাস পাঠকের জন্য গল্পটা পড়া সহজ করে দিয়েছে।

গল্পের বিষয়বস্তু একটু গোলমেলে ঠেকল। হামা ভাইয়ের কমেন্ট আর আপনার উত্তর দেখে কিছুটা পরিষ্কার হয়েছে। ঘুম ঘুম চোখে পড়ায় বুঝিনি মে বি। দিনে আবার চেষ্টা করব।

আপনার জন্য শুভেচ্ছা শঙ্কুদা।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:২৪

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ধন্যবাদ নাজিম। আবার পাঠের আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখছি।

শুভেচ্ছা রইল।

২৬| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৫

মোঃ ইসহাক খান বলেছেন: প্রাণবন্ত অনুবাদ। ভারী একটি কাজ হাতে নেয়া, এটিই অনেক সাহসের কাজ ছিল। সাধুবাদ।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৪৩

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: প্রিয় লেখককে পেয়ে আনন্দিত হলাম। ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

২৭| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৬

অদৃশ্য বলেছেন:






অপূর্ব এক গল্প পাঠ করবার সৌভাগ্য হলো... গল্পের স্বাদ আস্বাদনে আপনার অনুবাদ যথেষ্ট ছিলো তা অন্তত আমার দারুনভাবেই মনে হয়েছে...

অসাধারণ এই গল্প আর আপনার শৈল্পিক অনুবাদের জন্য গুচ্ছ গুচ্ছ গোলাপের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি...

আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি...


প্রফেসরের জন্য
শুভকামনা...

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৪৯

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: গুচ্ছ গুচ্ছ গোলাপের শুভেচ্ছা গৃহীত হল:)

পড়ার জন্য ধন্যবাদ, অদৃশ্য।

২৮| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:০৩

গোর্কি বলেছেন:
মামুন ভাইয়ের মন্তব্যে ভোটাপ। অনুবাদ আমরা সবাই কম-বেশী করতে পারি। তবে আমার কাছে মনে হয় ভাবানুবাদ বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। সবার দ্বারা সম্ভব না। আপনার সাবলীল ভাবানুবাদ মুগ্ধ করেছে। অবশ্য এর আগেও কয়েকটি অনুবাদ পড়ে একই রকম অনুভূতি হয়েছিল। সাধুবাদ আপনাকে চমৎকার একটি গল্প উপহার দেবার জন্য সুহৃদ প্রোফেসর। খুব ভালো থাকা হোক।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৫৫

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: সুপ্রিয় গোর্কির মতামত পেয়ে খুশি হলাম। অনুবাদের একটা আলাদা আনন্দ আছে, আর সেই আনন্দের সাথে গল্পের যোগাযোগ মিলে এইরকম পোস্ট দিতে চাইছিলাম। আপনাদের সাথে পেয়ে ভাল লাগছে অনেক।

ভাল থাকুন আপনিও।

২৯| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৩৩

জুন বলেছেন: ঝরঝরে অনুবাদ । আটকে যেতে হয়নি । নতুন একটি গল্পের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য প্রফেসরকে অসংখ্য ধন্যবাদ :)

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৫৮

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: একেকটি গল্প একেকটি জগতের মত। নিজস্ব সৌন্দর্য নিয়ে উপস্থিত। সেই জগতের মাঝে সবাইকে নিয়ে আসতে পেরেই নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।

ধন্যবাদ জানবেন জুন:)

৩০| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:২৭

এহসান সাবির বলেছেন: প্রোফেসর সাহেব....

লগইন করবার পর লম্বা সময় নিয়ে পড়লাম।

অসাধারণ অনুবাদ।

যদিও গল্পটা আমাকে আরেকবার পড়তে হবে আরেকটু ভালোভাবে বুঝবার জন্য।

আশা করি আপনার কাছ থেকে নিয়মিত লেখা পাবো।

শুভকামনা।

১৫ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৪৮

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: চেষ্টা থাকবে অবশ্যই। ধন্যবাদ এহসান সাবির।

৩১| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:৪৫

রাসেলহাসান বলেছেন: অনেক বড় গল্প। প্রিয় তে নিয়ে রাখছি। সময় করে পড়ে জানাবো।

১৫ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৫৯

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: প্রিয়তে নেবার জন্য ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইল।

৩২| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৩৭

ইলুসন বলেছেন: চমৎকার একটা গল্প পড়লাম, আর আপনার অনুবাদও অনেক সাবলীল হয়েছে।

১৫ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:০০

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: অনুবাদটা গল্পের গতির কারণেই কোনোমতে উৎরে গেছে। ধন্যবাদ।

৩৩| ০৭ ই মার্চ, ২০১৪ ভোর ৬:৪৮

উদাস কিশোর বলেছেন: চমত্‍কার লেগেছে পড়ে ।
আমি অপু তানভীর ভাইয়ের কথাটাই বলতে চাই

১৫ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:০৩

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

৩৪| ০৮ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:৩০

বোধহীন স্বপ্ন বলেছেন: অনুবাদ ভালো হয়েছে।

গল্পটা শুরুর দিকে ঠিকই ছিল, কিন্তু শেষের দিকে গিয়ে কেমন যেন ফিচার টাইপের হয়ে গেছে। তবে উপভোগ করেছি। মার্কেস পড়ে জাদু-বাস্তবতার ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। এখন একটু বোর্হেসও পড়লাম।

১৫ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:০৬

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: আমি যতদূর জানি, শেষের এরকমটা লেখকের ইচ্ছাকৃত। জাদুবাস্তবতার আরেক ধাপ। ভাল লাগায় খুশি হলাম।

৩৫| ০৯ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ২:২৪

শুঁটকি মাছ বলেছেন: অনেকদিন পর ফিরলেন!

১৫ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:০৭

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: হ্যাঁ!

একটা একটা করে সবার লেখা পড়ে দেখছি এখন:)

শুভেচ্ছা রইল, প্রিয় পাঠক।

৩৬| ১৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:১১

ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
বিশাাাাল !
সময় নিয়ে পড়তে হবে ||

১৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৪৪

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: সময় নিয়েই পড়ুন, কোন তাড়াহুড়ো নেই :)

৩৭| ১৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৫৭

অস্পিসাস প্রেইস বলেছেন: অসাধারণ!!

ভালো লাগলো।

অপু তানভীর ও মামুন ভাইয়ের মন্তব্যের সাথে সহমত।

১৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৩৪

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ, অস্পিসাস!

৩৮| ১৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:০০

মোঃ ইসহাক খান বলেছেন: সুন্দর এবং সাবলীল। পরিশ্রমে সাধুবাদ।

১৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৩৫

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: প্রিয় লেখককে পেয়ে আনন্দিত হলাম। ধন্যবাদ জানবেন।

৩৯| ১৬ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:৫২

বৃতি বলেছেন: চমৎকার একটা গল্প উপহার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানবেন। আশা করি নিয়মিত লিখবেন :)

আমারও ইচ্ছে আছে কিছু গল্প অনুবাদ করার।

১৬ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৩৬

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: নিয়মিত লেখার চেষ্টা রাখব অবশ্যই:)

আপনার অনুবাদ পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।

৪০| ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৪

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: বোর্হেসের গল্প পড়তে বরাবরই ভালো লাগে। আপনার অনুবাদ হলে তো কথাই নেই। চমৎকার ও সাবলীল অনুবাদ। গল্পটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।

১৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:১৯

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, প্রিয় অর্থনীতিবিদ। শুভেচ্ছা রইল।

৪১| ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৫১

আফ্রি আয়েশা বলেছেন:
অনুবাদ ভালো লেগেছে।
গল্পটাও ভালো :)

২০ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৭

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৪২| ২৯ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৩২

মাহমুদ০০৭ বলেছেন: আলেফ বোর্হেস এর অনেক প্রিয় গল্প । উনার কিছু গল্প রাজু
আলাউদ্দিন অনুবাদ করেছেন , উনার কিছু প্রবন্ধ ও ।

দারুণ অনুবাদ করেছেন আপনি , বোর্হেস কে অনুদিত করা একটু কস্টকর ই , আপনি অনেক টাই সার্থক হয়েছেন ।
খুবই ভাল লাগল আপনার অনুবাদ ।
বোর্হেসে কেমন একটা গোলকধাঁধায় হারানোর মজাটা পাওয়া যায় ।
পুরো একটা পৃথিবী ভ্রমণ করার স্বাদ পাওয়া যায় উনার গল্পে ।
কল্পনা বাস্তব বিভ্রম ইতিহাস পুরান কি নেই উনার গল্পে !

উনি সাহিত্য বিষয়ক অনেক মূল্যবান প্রবন্ধ ও লিখেছেন , ভাল হয় আপনি যদি
গল্পের পাশাপাশি এসবেও একটু নজর দিলে , অনেকের উপকার হবে ।



আপনি আলেফ অনুবাদ করেছেন - ব্যক্তিগতভাবে খুবই ভাল
লেগেছে আমার কাছে ।


এভাবে ভাল গল্পগুলো অনুবাদ করে আমাদের আরো সমৃদ্ধ করবেন
এই প্রত্যাশা রইল আপনার কাছে ।

অনুবাদক প্রফেসরের প্রতি অনেক অনেক শুভকামনা ।

২৯ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৪৯

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ''বোর্হেসে কেমন একটা গোলকধাঁধায় হারানোর মজাটা পাওয়া যায় ।
পুরো একটা পৃথিবী ভ্রমণ করার স্বাদ পাওয়া যায় উনার গল্পে ।
কল্পনা বাস্তব বিভ্রম ইতিহাস পুরান কি নেই উনার গল্পে !''

ঠিক এই ব্যাপারটাই অনুবাদ করার জন্য আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল- তার অদ্ভুত বিশ্বজনীন লেখনি।

বোর্হেসের দুটো প্রবন্ধ হাতের কাছে আছে, কদিনের মাঝে অনুবাদ করার ইচ্ছা আছে। আশা করি আপনার ভাল লাগবে মাহমুদ।

'অনুবাদক' বলে লজ্জা দেবেন না, নিতান্তই পাঠকের ওপর ভরসা করে ভাষান্তরিত করি। আশা করি ভবিষ্যতেও আপনাকে সাথে পাব।

অনেক দিন পর দেখলাম আপনাকে। ভাল আছেন আশা করি। শুভেচ্ছা এবং অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি প্রিয় ব্লগার।

৪৩| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৪

রেজওয়ান তানিম বলেছেন: আপনার সাথে কিছু বিষয় নিয়ে আলাপ করতে চাই। আশা করছি লিখবেন এই ঠিকানায় - [email protected]

গল্প বা অনুবাদ নিয়ে আমার মতামত পরে দেবো।

শুভকামনা জানবেন

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:২৮

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: অবশ্যই লিখব। শুভকামনা রইল আপনার জন্যেও।

৪৪| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:১৭

অপু তানভীর বলেছেন: আপনার ইমেইল টা কি পাওয়া যাবে ! যতদুর জানি আপনার ফেসবুকে একাউন্ট নাই ! একটু দরকার ছিল !

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:৪৯

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: অবশ্যই :) [email protected]

ভালো আছেন নিশ্চয়ই?

৪৫| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:১৮

অপু তানভীর বলেছেন: থেঙ্কু !! মেইল পাঠাইছি ! :)

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:০৭

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: আন্সার দিয়েছি :)

৪৬| ০৭ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪২

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
শ্রমসাধ্য এ ধরণের কাজ আরো পাব আশা করি ৷ যদিও প্রতিমন্তব্যে সে রকম ইঙ্গিতও দিয়েছেন ৷ ভাল থাকবেন ৷

০৮ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:০৯

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: চেষ্টা থাকবে। ভাল থাকুন অনেক।

৪৭| ০৭ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৯

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
অপেক্ষা আর অপেক্ষা.........

২০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:১৪

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: কয়দিনের মধ্যেই হাত লাগাইতেছি এই কাজে :)

৪৮| ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:২৬

রাজিব বলেছেন: গল্পটা আমার তেমন ভাল লাগেনি কিন্তু আপনার অনুবাদ বেশ ভাল লেগেছে। খুব সাবলীল অনুবাদ। পড়তে বেশ আরাম লাগে। মনে হয় না যে অনুবাদ পড়ছি।

৩১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:৪৭

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: খুশি হোলাম রাজিব, অনেক ধন্যবাদ জানবেন।

৪৯| ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:১৭

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: মূল ইংরেজি অনুবাদটার ফেব্রুয়ারিটা দেখে মনে পড়ছিল, 'আগুন ঝরা ফাগুন', 'অগ্নিক্ষরা ফেব্রুয়ারি।

যাইহোক, অনুবাদ কর্ম সহজ কাজ না, তাই এই কাজের বেশি ফাঁক-ফোকর অন্বেষাও মনে করি এক ধরনের অত্যাচার।

এখন পাঠকের মনে যদি প্রশ্ন আসে বিয়াত্রিয কোন সময় মারা গেল, সকাল-দুপুর-রাত্রি মাঝরাত্রি- কখন? তেমনই স্থান, দিক, এমন কিছু নির্দিষ্ট কিছু ব্যাপার অনুবাদে থাকতে পারতো।

যদিও আগেই বলেছি কাজটা সহজ নয়, তবু মূল গল্পের ঘ্রাণটা পাওয়াও জরুরি। তা ছাড়া আপনার অনুবাদ হচ্ছে অনুবাদের অনুবাদ। কাজেই পাঠকের জন্য কোথাও কোথাও খানিকটা কঠিন/ সাবলীলতার কমতি /আড়ষ্ট অংশগুলোতে নিজের ভাবনাটা ঢেলে দিলেই মনে হয় সুবিধা।

যাউজ্ঞা, দেরিতে হইলেও পড়লাম।

ভালো থাকেন সব সময়, আর এই কাজে আলস্য পরিহার করবেন এটাই প্রত্যাশা।

৩১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৫২

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ''আপনার অনুবাদ হচ্ছে অনুবাদের অনুবাদ...''

খাঁটি কথা বলেছেন। বিদেশি লেখকদের লেখা পড়তে গেলে এই সমস্যাটা খুব বেশি ফেস করি। অনুবাদ করতে গেলেও একই কথা, নিজেও পড়ে স্বস্তি পাই না। আবার লেখার মাঝে নিজের ভাবনা ঢালতেও অনেকসময় দ্বিধাসংকোচ জাগে; এইজন্যে মনোযোগী পাঠকের প্রয়োজন। পাঠক যদি কমেন্টে বলে বা সাজেশন দেয় যে আপনার অমুক লাইনে অনুবাদ এরকম হলে ভাল হয়, এই শব্দটা মানায় ভাল- ইত্যাদি ইত্যাদি, তাহলে মনে করেন কাজটা অনেক সোজা হয়ে যায়।

পড়ছেন খুব ভাল করছেন :) প্রথম লাইনটা ঠিক করে দিলাম। প্রচন্ড গরমের চেয়ে 'অগ্নিক্ষরা' অনেক উপযুক্ত শব্দ। আরও সাজেশন থাকলে দিয়েন, দ্বিধা কৈরেন না।

আলস্য ত্যাগ করতেছি :) আজকে একটা গল্প অনুবাদে হাত দিছি, বারটার মধ্যে শেষ হইলে পোস্ট করে ফেলমু চিন্তা করতাছি। দেখা যাউক!

ভাল থাকেন। শুভরাত্রি।

৫০| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৬

দুর্বৃত্ত বলেছেন: চমৎকার গল্প, চমৎকার অনুবাদ!
ধন্যবাদ ধন্যবাদ :) :)

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৪৩

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.