নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গণতন্ত্র মুক্তি পাক, পরিবারতন্ত্র নিপাত যাক
হঠাৎ করেই জানুয়ারির শেষে অফিস থেকে জানানো হলো, অফিসের কাজ কমে আসছে, প্রজেক্টও হাতে কম। লে-অফ হচ্ছে, কিছুটা ভয় পাচ্ছিলাম বৈ কি! অবশেষে ভয়টাই সঠিক হলো। ফেব্রুয়ারি থেকেই ঘরে বসে আছি, মাঝে কয়েকটা ইন্টারভিউ দিয়েছি, কিন্তু করোনার প্রভাবে সবকিছুই কোন কিছুই আর সামনের দিকে এগুচ্ছেনা। ফেব্রুয়ারি শেষ হয়ে মার্চ শুরু হলো, কিছু একটা হওয়ার আশাতেও গুড়েঁবালি ঢেলে করোনা এলো। নিউ ইয়র্কের সবকিছুই এখন বন্ধ, অনেকেই চাকুরি হারিয়েছেন, বাড়ি ভাড়া, ক্রেডিট কার্ড বিল নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি আমরা সবাই। এপ্রিলে ট্যাক্স ফাইলিং করার শেষ সময় থাকলেও যেদিন আমি ফাইলিং করলাম সেদিনই জানলাম, ডেট বাড়ানো হয়েছে। যাইহোক ট্যাক্স রিটার্ন তেমন একটা কিছু পাবোনা এমনিতেও তাই খুব বেশী কষ্ট হয় নি।
সারাদিন বাসায় বসে থাকছি, খাচ্ছি, অবেলায় ঘুমোচ্ছি, নামাজ পড়ছি। এভাবেই দিন কাটছে। হঠাৎ করেই ব্যাকআপ ড্রাইভে অনেক পুরোনো কিছু গেম খুঁজে পেলাম। গেমগুলো ২০০০ সালের দিকে খেলেছি, মাঝে চলে গেছে প্রায় দু'ই দশক। গেম নিয়ে বসে পড়লাম বেশ কিছু ভিডিও ইউটিউবে আপলোডও করলাম, লোকজন খাচ্ছে না। খুব সম্ভবত খাবেও না, তবুও সময় পার করার জন্য গেম প্লেগুলো রেকর্ড করে আপলোড করছি। পুরোনো কিছু ব্যক্তিগত প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি আবারও, কাজ করছি, দিন যাচ্ছে।
ঠিক কিভাবে সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যে থেকে রাত হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। অজানা উৎকন্ঠায় কাটছে দিনগুলো। করোনা সহসাই বিদায় নেবে না বুঝতে পারছি, মৃত্যু পথ যাত্রীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে, হয়তো আরো বাড়বে। পুরোটা শহর থমথমে হয়ে আছে, রাস্তায় কেউই বের হচ্ছে না, অজানা মৃত্যুর ভয় সবাইকে গ্রাস করছে। আমি মাঝে মাঝে হাটতে বের হচ্ছি, মন্দ লাগছেনা, কিন্তু মনে হচ্ছে অচেনা কোন শহরে বাস করছি। নিউ ইয়র্কে সাধারণত মানুষ গিজগিজ করছে, অথচ গত ক'দিনে বদলে গেছে সব। মানুষ নেই বললেই চলে, মাঝে মধ্যে গাড়ি চলে যাচ্ছে শাই শাই করে। আমার কেন যেন ভয় করছেনা, বরং একাকী জনশূণ্য রাস্তায় হাটতে বেশ ভালো লাগছে। মাঝে মাঝে অনেকেই ভয় দেখাচ্ছে, বের হতে বারণ করছে, মৃত্যুর ভয়, আমার ভয় করছে না। মৃত্যুতো অমেঘ পরিণতি, ভয় পেয়ে কি হবে, যেখানেই থাকি না কেন, সময় হলে যেতেতো হবেই।
বারগুলো বন্ধ, মিউজিক বন্ধ কিছুটা হলেও ভালো লাগছে। অশ্লীল নৃত্য ছেড়ে এখন বার ড্যান্সারও হয়তো নিজেকে ঢেকে মুড়িয়ে নিয়েছে পোশাকে, করোনার ভয়ে। অথচ, এইতো ক'দিন আগেও হয়তো তার উদ্দাম নৃত্য দেখে কোন অচেনা যুবক হয়তো তার কষ্টার্জিত টাকা উড়িয়েছে। অবাধ যৌনতা ছেড়ে নষ্ট ছেলেটাও এখন জীবনের মায়ায় নিতান্তই ভদ্র বনে গেছে। ভাবতে মোটেও খারাপ লাগছে না।
অনেকেরই কষ্ট হচ্ছে, আমারও হচ্ছে। চাকুরি নেই, পকেটে টাকা নেই, মাস শেষে দেশে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থাও নেই। সবকিছু থমকে গেছে। মদ, মেয়ে মানুষ আর টাকার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা এ শহরের প্রতিটি ইট-পাথরের গায়ে যে দুর্গন্ধ জমেছে, তা ধীরে ধীরে কাটছে। পুরোপুরি পবিত্র হয়তো হবে না, তবে কিছুটা গন্ধ কমবে বৈ কি!
যে পৃথিবীটা ক্রমাগত ছুঁটেছে শুধু টাকার নেশায়, অন্যায়, অবিচার, শোষন, নিপীড়নের সব মাত্রা ছাড়িয়ে, আজ সেখানেও পড়েছে করোনার দাবদাহের প্রভাব। প্রয়োজন ছিলো এই স্তব্ধতার, জ্ঞানের বাড়াবাড়ি আর আত্ম অহমিকার বিনাশ, প্রয়োজন ছিলো আয়নায় নিজের মুখোশের ভেতরে লুকিয়ে থাকা আমিকে দেখার। আমি, তুমি, আমরা কেউই হয়তো এই সুত্রের বাইরে নই, যে পাপের বোঝা বইছে মানবজাতি, তার মূল্যতো একদিন পরিশোধ করতেই হবে। তাহলে, আজ অযাচিত এই ভয় কিসের? যখন অন্যায় করেছো, শোষণ করোছো নিরীহ মানুষদের, অসত্যকে সত্য ভেবে নিজেকে কলঙ্কিত করেছো তখন কোথায় ছিলো এই ভয়?
অনেক কিছু কেড়ে নিয়ে, করোনা হয়তো ফিরে যাবে একদিন। কিন্তু মনে রেখো অন্যরুপে সে আবারও ফিরে আসবে, শতাব্দী থেকে শতাব্দীতে তেমনটাই হয়েছে, হতে থাকবে অনন্তকাল ধরে।
২৪ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:৩৭
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: অতীব সত্য। রাব্বুল আলামীনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা ছাড়া আর উপায় নেই। সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি খুবই খারাপ, ভবিষ্যতও ভালো কোন ইঙ্গিত দিচ্ছে না। এই মহামারিও শেষ নয়, সামনে সবার জন্য এর চেয়েও ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে।
২| ২৪ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:১৬
রাজীব নুর বলেছেন: বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস মহামারী আকারে ধারণ করার দায় মসজিদগুলো কি এড়াতে পারবে? ধর্মান্ধ আলেমগুলো কি এড়াতে পারবে? তাদেরকে কেনো আইনের আওতায় আনা হবে না?
৩| ২৪ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:২১
নেওয়াজ আলি বলেছেন: মরণের ভয়ে সব সোজাসুজি চলবেই চলবে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:২৬
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা নিজেদেরকে ধবংসের দিকে ঠেলে দিও না।আমরা তাই করছি।আমাদের ভালোর জন্য যে কোন কথাই আমাদের কাছে গ্রহনযোগ্যতা পায় না।ফলে ধবংসও আসে আমাদের।