নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঘৃণা নয়, ভালোবাসা...

আল্লাহ আমাদের সহায় হোন...

প্রিয়ম ৭৫

সুদিন ফিরে আসবে-ই...

প্রিয়ম ৭৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতিতে নেপাল

১১ ই জুন, ২০১৫ রাত ৯:৪১

আগস্ট ২০১৩। ঘড়িতে তখন ৪টা। ফোর পি.এম.। ছোট্ট জানালা (স্কাই ভিউ) দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। বিমানের জানালাগুলো খুব বেশি বড় হয় না, ডিম্বাকৃতি। সামান্য বড় হলে ভালো হতো। অনেকদূর পর্যন্ত নিমিষেই দেখতে পেতাম। হাজার হাজার ফুট উপর থেকে পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে কার না ভালো লাগে?
হঠাত্ সাউন্ডবক্সের অস্ফুট শব্দে নড়েচড়ে বসলাম। কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করলাম। ‘... ককিপট থেকে আমি পাইলট জামান বলছি। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স নেপালের উদ্দেশে ঢাকা বিমানবন্দর ত্যাগ করবে। আজ আমরা প্রায় ৩৩ হাজার ফুট উপরে ফ্লাই করব। আবহাওয়া ভালো নয়। আপনাদের কোনোরকম সমস্যা ছাড়াই এক ঘণ্টার মধ্যে নেপালে পৌঁছে দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।’
এরপর একজন বিমানবালা সিট বেল্ট বেঁধে নিতে অনুরোধ করলেন।
যথাসময়ে বিমান আকাশে উড়ল। ৩৩ হাজার ফুট উপর থেকে আমি চেষ্টা করলাম আমাদের রাজধানী ঢাকাকে দেখতে। কিন্তু ব্যর্থ হলাম। ঘন মেঘের কারণে নিচের দিকে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কেবল ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন চারদিক। মাঝে মাঝে বিমানের অদ্ভুত নড়াচড়া, অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। আবহাওয়া ভালো নয়... পাইলটের এই সতর্ক বার্তা বার বার কানে বাজতে লাগল। অতীতে বিমানে চড়ার অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে। এই বুঝি পড়ে গেলাম। বিমান ক্র্যাশ করলে কী হতে পারে—নদীতে নাকি জনাকীর্ণ কোনো রাস্তায় কিংবা কারও বাসার ছাদে আছড়ে পড়ব, এসব অদ্ভুত অলুক্ষণে চিন্তা মাথায় কিলবিল করছে। বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি। কখন যে এক ঘণ্টা পার হবে!
সৃষ্টিকর্তার কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। কোনোরকম সমস্যা ছাড়াই নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমাদের বহন করা ঢাউস সাইজের বিমানটি নামল।
বিমান থেকে নেমে একটি বড় নিঃশ্বাস নিলাম। সত্যিই বুকভরে নিঃশ্বাস নেয়ার মতো জায়গা বটে। আমরা তো ঢাকায় নিঃশ্বাস নিই ধুলো-বালি-সিসার ভয় নিয়ে।
ত্রিভুবন বিমানবন্দরে প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নেয়ার মতো চমত্কার পরিবেশ আছে বটে। বিমানবন্দরটি যেন একটি স্টেডিয়ামের মতো। স্টেডিয়ামে মাঠের চারপাশে যেমন বসার জন্য গ্যালারি থাকে, ঠিক তেমনি নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চারপাশে রয়েছে আকাশছোঁয়া পাহাড়। সত্যিই অদ্ভুত এক দৃশ্য বটে! যেন সবুজে মাখামাখি। বিমানবন্দরের আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে আমাদের জন্য অপেক্ষা করা গাড়িতে উঠলাম।
ত্রিভুবন বিমানবন্দরে নেমে যতটা না খুশি হলাম, ঠিক ততটা হতাশ হলাম রাজধানী কাঠমান্ডুর এবড়ো-থেবড়ো রাস্তা পার হতে গিয়ে। আকাশছোঁয়া বিল্ডিং নেই বললেই চলে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে অনেক বেশি উন্নত ঠেকল। হাল আমলের তেমন কোনো বিল্ডিং নেই। বেশিরভাগ ভবন পুরনো ।
তেমন জ্যামের মুখোমুখি হতে হয়নি। সিএনজি অটো রিকশা কিংবা রিকশা চোখে না পড়লেও অসংখ্য বাইক কাঠমান্ডুর রাস্তায় গিজগিজ করছে। হলফ করে বলতে পারি, নেপালের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষের বাইক রয়েছে। ঢাউস সাইজের কোনো বাস চোখে না পড়লেও রয়েছে অসংখ্য হিউম্যান হলার।
প্রায় এক ঘণ্টা পর আমরা আগে থেকে নির্ধারিত হোটেলে পৌঁছলাম। হোটেল মানাং। মানাং সম্পর্কে বলতে গেলে, স্বল্প পরিসরে চমত্কার পরিবেশ, এক নজর দেখেই যে কেউ মুগ্ধ হবেন। লবিতে ম্যানেজার চা খাইয়ে আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ডিনার খেতে গেলাম। সবকিছু কেমন অমৃত লাগছিল। পেটে প্রচণ্ড ক্ষিধা। সুতরাং খাবারে মনোনিবেশ করলাম পুরোপুরি। খাওয়া শেষ করে রুমে গিয়ে দিলাম এক লম্বা ঘুম। সত্যিই চমত্কার এক ঘুম। ইংরেজিতে যাকে বলে সাউন্ড স্লিপ। ঘুম ভাঙল ইন্টারকমের শব্দে। বন্ধু আল আমিন এবং বাপন সাহা ব্র্যাকফাস্টের জন্য তাগাদা দিলেন। হোটেলের নিচে অবস্থিত রেস্তোরাঁয় সকালের নাস্তা শেষ করে বের হলাম নেপালের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। আমাদের ছিল আটজনের একটি টিম।
ড্রাইভার প্রথমে যে জায়গায় নিয়ে গিয়ে আমাদের ছেড়ে দিলেন সেটি ছিল একটি ঐতিহাসিক বৌদ্ধ মন্দির। টিকিট কেটে আমরা প্রবেশ করলাম। সার্ক দেশগুলোর পর্যটকদের জন্য টিকিটের মূল্য তুলনামূলক কম ছিল।
প্রচুর পর্যটকের সমাগম। ক্লিক ক্লিক শব্দ চারদিকে। আমরাও বাদ যাইনি। ফটোশেসন পর্ব শেষ করে ঘুরে ঘুরে মন্দিরটি দেখলাম। মানুষ আর কবুতরে একাকার। পায়ে পায়ে যেন কবুতর খেলা করে। কবুতরের গা ঘেঁষে বসে আমরা অনেকগুলো ছবি তুললাম। মন্দিরকে ঘিরে প্রচুর দোকানপাট ছাড়াও রয়েছে বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রচণ্ড রোদে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারলাম না। বেরিয়ে পড়লাম অন্য গন্তব্যের উদ্দেশে।
পরে যে জায়াগায় চালক গাড়ি থামালেন, জানালার কাচ নামিয়ে রাস্তার পাশে দোকানের সাইনবোর্ডে চোখ রাখলাম। ...বখ্তপুর, নেপাল। বুঝলাম এই জায়গার নাম বখ্তপুর। আবার টিকিট কেটে যে জায়গাটি দেখার জন্য ঢুকলাম সেটি বাইরে থেকে মন্দির মনে হলেও আসলে এটি হচ্ছে নেপালের আদি রাজধানী। প্রায় তিন শতাব্দী আগে নির্মিত এই শহরে ঢুকলে নিজেকে অন্য জগতের বাসিন্দা মনে হবে। অত্যন্ত দক্ষ কারিগর দ্বারা নির্মিত হয়েছে প্রতিটি দালান। যেন এক-একটি ইতিহাস। নেপালের সরকার চেষ্টা করছে ভবনগুলোর পুরনো আদল ধরে রাখতে। এভাবে আর কতদিন টিকে থাকে সেটাই এখন দেখার বিষয়। এখানে ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার পসরা সাজিয়ে বসেছেন। সচল রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। চারদিকে শিক্ষার্থীদের কোলাহল ছাড়াও রয়েছে পর্যটকদের পদচারণা। ফুচকা দেখে জিভে পানি এসে গেল।
দুপুর ১টায় নেপালের এনসিয়্যান্ট সিটি পরিদর্শন শেষে পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করলাম। এবার আমাদের গন্তব্য নেপালের বিখ্যাত নাঙ্গরকোট। যেখানে মেঘের অবিরাম পথচলাকে থামিয়ে দিয়েছে আকাশছোঁয়া সব পাহাড়... (চলবে)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:০৮

নুরুল পলাশ বলেছেন: তারপর?

২| ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:৪৬

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: মোটামুটি লাগলো। ছবি থাকলে আরেকটু ভালো লাগতো। :(

০১ লা আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:১৪

প্রিয়ম ৭৫ বলেছেন: ধন্যবাদ ...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.