![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"তোমার মনের মইধ্যে আলেকের বাস, সে না কাউরে শোনে, না কাউরে বোঝে। তুমি যা বোঝাও সে তাই বোঝে।"
//তিন পাগলে হৈল মেলা নদে এসে
তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে
একটা পাগলামী করে
জাত দেয় সে অজাতেরে দৌড়ে গিয়ে
আবার হরি বলে পড়ছে ঢলে ধূলার মাঝে
তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে
একটা নারকেলের মালা
তাতে জল তোলাফেলা করঙ্গ সে
পাগলের সঙ্গে যাবি পাগল হবি বুঝবি শেষে
পাগলের নামটি এমন
বলিতে ফকির লালন ভয় তরাসে
চৈতে নিতে অদ্বৈয় পাগল নাম ধরেছে
তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে//
লালন সাঁই র গান হিসেবে এই গানের জনপ্রিয়তা বেশ। অনেক কম মানুষই আছেন যারা গানটি শোনেন নাই। তবে এর অর্থ জানেন বোধকরি অনেক কম মানুষই। পিচ্চি কালে যখন এই গান শুনতাম তখন অর্থও বুঝতাম না :/ এই গানের মর্ম উদ্ধার করলাম খুব বেশি দিন হয় নাই। কয়েক বছর হবে। এখনো অনেকেই এই গানের অর্থ বুঝেন না। এই গানে লালন সাঁই নিজেই তার গুরুদের কথা তুলেধরেছেন।
শুধু সিরাজ সাঁইই নন, লালনের আরো বেশ কয়েকজন গুরু সানিধ্য হয়েছিল। তাদের কথা বলতেই এই গানের প্রতিটা চরণ সৃষ্টি।
//তিন পাগলে হৈল মেলা নদে এসে
তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে//
তৎকালীন নদীয়া জেলার কথা শোনেন নাই এমন মানুষ কম। সেখানে একসময়ে জ্ঞানপীঠ বলে বেশ সুখ্যাতি ছিল। সেখানেই সকল "পাগল" বলতে পন্ডিত ব্যাক্তিকে বোঝানো হয়।
//একটা পাগলামী করে
জাত দেয় সে অজাতেরে দৌড়ে গিয়ে
আবার হরি বলে পড়ছে ঢলে ধূলার মাঝে
তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে//
জাত নিয়ে এখন যেমন রেষারেষি চলছে তখনো চলতো। অজাতকে জাত দেওয়া পাগলামী ছাড়া আর কিছুই না, লালন সাঁইযে তেমনই এক পাগল ছিলেন তাই বলেছেন।
//একটা নারকেলের মালা
তাতে জল তোলাফেলা করঙ্গ সে
পাগলের সঙ্গে যাবি পাগল হবি বুঝবি শেষে//
নারকেলের মালা বা খোসার আরেক নাম "করঙ্গ" মগ টাইপের ব্যাবহারে নারকেলের মালা ব্যাবহার হত। সাধারণ ভাষায় তাই মনে হয়। কিন্তু এর আরকটি বৈশিষ্ট্য আছে। তা হল করঙ্গ স্থির। তাতে জল তোলাফেলা ছাড়া আর কিছুই হয় না।
এটা আমাদের মতন সাধারণ মানুষ যারা স্থির কর্পোরেট টাইপের তাদের প্রতীক। তারা সারা জীবন এক জায়গায় জমেই থাকে।
//পাগলের নামটি এমন
বলিতে ফকির লালন ভয় তরাইসে
চৈতে নিতে অদ্বৈয় পাগল নাম ধরেছে
তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে//
এই শেষ অংশে এসে লালন তার গুরুদের নাম বলেছেন। গুরুর প্রতি ভক্তি করে গুরুর নাম মুখে নিতে শ্রদ্ধায় কুঁকড়ে বলেছেন
"পাগলের নামটি এমন বলিতে ফকির লালন ভয় তরাইসে"
আর চৈত্যে, নিতেয়, অদ্বৈয় এই তিনজন হলেন শ্রীচৈতন্যদেব, শ্রী নিত্যানন্দ এবং অদ্বৈত আচার্য।
ইতিহাস ঘাটলে এদের সবাইকে খুব সহজেই চেনা যায়। শ্রীচৈতন্যদেব গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের প্রবর্তক এবং শ্রী নিত্যানন্দ এবং অদ্বৈত আচার্য সে আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন-বাংলার ইতিহাসে এ কথা স্বর্ণক্ষরে লেখা রয়েছে। স্বর্ণক্ষরে-এই কারণে যে, গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের মূলকথা হল গানের মাধ্যমে প্রেমের কথা বলা। এককথায় গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মটি হল প্রেমবাদ। যা একাধারে কৃষ্ণপ্রেম এবং জীবপ্রেম।
প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক যেনো অভ সিটিয়াম এর মতেঃ All people are manifestations of the one universal spirit and should, according to the Stoics,live in brotherly love and readily help one another. They held that external differences such as rank and wealth are of no importance in social relationships.
উৎসর্গঃ ইমন জুবায়ের ভাই, যার কারণে আমার এই সকল কিছু জানার সৌভাগ্য হয়েছিল।
৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১২
পুরোনো পাপী বলেছেন: আমি শুনি পিচ্চি কালে আমার বাপের লগে
কিচ্ছু বুঝতাম না তখন
২| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৭
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: আধ্যাত্মিক চেতনায় লালন সাই এর সাথে আর কারও তুলনা নাই
আমি তার গানের ভক্ত ।।
পোস্টে ধন্যবাদ
৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৩
পুরোনো পাপী বলেছেন: সত্য বচন।
৩| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৪
কাফের বলেছেন: শ্রদ্ধেয় ইমন জুবায়ের ভাইয়ের লালন গানের মর্ম অনুসন্ধান মূলক পোষ্ট গুলা সব পড়েছি। ইমন ভাইকে অনেক মিস করি।
৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:১৩
পুরোনো পাপী বলেছেন: উনার মতন বিশ্লেষণ আর কেউই করে নাই।
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৭
হাবলু মামা বলেছেন: গানটা প্রথম শুনি তানভীর মোকাম্মেলের "লালন" ছবিতে ৷ ভিডিওটা বেশ ভাল্লাগে!