নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

sohel sodeshi

রযাবিডি

আমি সোহেল খন্দকার, মুক্ত চিন্তার অধিকারী। নিজে স্বাধীনতা পছন্দ করি, অন্যের জন্যও স্বাধীনতা আদায়ে সচেষ্ট।

রযাবিডি › বিস্তারিত পোস্টঃ

চা দাস!

২১ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১০:১৬

চা শিল্প বা চা বাগান সম্পর্কে তেমন কিছু জানা ছিলো না। পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম চা শ্রমিকদের দৈনিক বেতন ১২০ টাকা। খটকা লাগলো ভুল দেখলাম নাতো? না ঠিকই দেখলাম ১২০ টাকা। আজ রিকশা চালাতে জানলেওতো ৫০০/৬০০ টাকা ইনকাম করা যায়। ওদের বেতন এতো কম কেন?
ইতিহাস ঘাটতে গিয়ে জানলাম চা শিল্পের শুরুতে চা শ্রমিকদের ভারতে বিভিন্ন জায়গা হতে নিয়ে আসে বৃটিশ। উড়িষ্যা, ঝাড়খন্ড, বিহার সহ বিভিন্ন জায়গা হতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টিদের জায়গা, বাড়ী ও চাকুরীর লোভ দেখিয়ে নিয়ে আসা হয় আসামে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর হাতে সেই শুরু শোষনের, যা আজও চলছে। চলে গেছে বৃটিশরা, চলে গেছে শোষক ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী, কিন্তু রয়ে গেছে শোষন ও শোষিত। বংশানুক্রমিক পেশায় এরা আজও হচ্ছে শোষিত। ১২০ টাকার বেতন ১৪৫ টাকায় উন্নিত হলো আন্দোলনের কারণে। কিন্তু এই টাকায় কি হয়? যখন এক কেজি মোটা চালের দাম ৬০ টাকা, তখন এদের সংসার চলে কি দিয়ে?
এ যেন এক দাস প্রথা! বংশানুক্রমিক দাস তারা। নেই ভিটে মাটির ও বাড়ীর অধিকার। ক্রীতদাস ছাড়া এরা কি? এরা যেন চা দাস।
স্বাধীন স্বার্বভৌম একটি দেশে আজও দাস প্রথা আছে এটা জেনে শুধু অবাক হইনি, বিস্ময়ে হতবাক। স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করা দেশ আজও দাস প্রথা শেষ করতে পারেনি কার স্বার্থে? স্বাধীনতার প্রবর্তকরা আজ কোথায়? কোথায় স্বাধীনতার ঘোষক? কোথায় পল্লী বন্ধু? কোথায় দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী? কোথায় আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা? কোথায় আজ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দেওয়া সবাই?
সবাই চুপ। কারণ এরা যে চা দাস, এরা অস্পৃশ্য।
এদের বলার কেউ নাই, কেউ চিৎকর দিয়ে বলবে না দুনিয়ার চা দাস এক হও, লড়াই করো, কেউ বলবে না ভাত ও ভোটের অধিকার চাই, নইলে কাজ বন্ধ! কারণ এরা যে অস্পৃশ্য, এদের প্রতিবাদ করতে নেই, এরা প্রতিবাদ করলে মরবে যেমন একবার মরেছিলো ১৯২১ সালের ২০শে মে। প্রতিবাদ করে মুল্লুকে চল ডাক দিয়ে এই চা শ্রমিকরা ফিরে যাচ্ছিলো তাদের বাড়ীর পথে, যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাড়ায় বৃটিশ সৈন্যরা। গুলি চালিয়ে কয়েকশো শ্রমিকক হত্যা করে তারা। আবার শৃংখলিত হয় এই চা দাসেরা!
স্বাধিন একটি দেশে আজও ওরা ক্রীতদাস, ওরা শোষিত জাতি। দেশে হাজারো এনজিও কাজ করছে গরীব ও অসহায়দের উন্নয়নে। তারা কোথায়? এরাও সেই পুজিবাদের কাছে আটকে গেছে।
হ্যা, নামে মাত্র কিছু কিছু চা বাগানে চালু আছে প্রাথমিক শিক্ষা, চিকিৎসা ও রেশন পদ্ধতি। যা শুধুমাত্র লোক দেখানো। অধিকাংশ চা বাগানে সেই সব ব্যবস্থাও নাই।
যে দেশের মন্ত্রী এমপি রা কোটি টাকার গাড়ী ব্যবহার করে, যে দেশের একজন খেলোয়াড়েরর ৭০০ কোটি টাকার সম্পত্তি থাকে, যে দেশের একজন ইউপি চেয়ারম্যানের কোটি কোটি টাকা থাকে, যে দেশের একজন ছাত্র নেতা ব্যাংক-বীমা, শিল্প কারখানার মালিক সেই দেশের জনগন ১৪৫ টাকায় কাজ করে কেন?
পুজিবাদের এই শোষন কবে শেষ হবে?
চা শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম লাভজনক ও বৈদেশিক মুদ্র অর্জনের মাধ্যম। সেই পেশার শ্রমিকদের এই অবস্থা কেন?
কত পরিমান সম্পদ হলে মিটবে এসব পুজিবাদী রাক্ষসদের ক্ষুধা? কত পরিমান লভ্যাংশ হলে শেষ হবে এসব পুজির গোলামী?
একটি প্রতিষ্ঠানের জরিপে দেখা যায় ভয়াবহ অবস্থা চা শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের, অর্থের কারণে পুষ্টির অভাবে তারা জীর্ণ ও খর্বকায়, ৪৭ ভাগ মেয়েদের বিয়ে হয় ১৮ বছরের আগে এবং তাদের বেশীর ভাগই মা হয় ১৮ বছরের আগেই। কোথায় সেই সব এনজিও যারা বাল্যবিবাহ বন্ধে কাজ করছে? এখানে তারা নীরব, কারণ ওরা অস্পৃশ্য, ওরা দাস।
যারা ১৪৫ টাকা চা দাসদের পাওনা নির্ধারণ করলেন তারা কি মানুষ? তাদের কি মনুষত্ব্য আছে? তারা কি একটি বার চিন্তা করে দেখেছে এই টাকায় কি হয়? নির্ধারণ কারীদের দুই মাস এই টাকায় চাকুরী করার জন্য বাধ্য করা হোক, তাহলে যদি কিছুটা বুঝতে পারে।

চা দাসদের দাসত্ব কবে শেষ হবে?
পুজিবাদের কাছে কত মার খাবে মনুষত্ব্য?


মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১১:০২

আহমেদ জী এস বলেছেন: রযাবিডি,




অস্পৃশ্য আর নিষ্পেষিত চা শ্রমিকদের প্রতিবাদ - সংগ্রাম জিন্দাবাদ ..............

২| ২১ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১১:২৭

রযাবিডি বলেছেন: চা শ্রমিকদের প্রতিবাদ সংগ্রাম জিন্দাবাদ।

৩| ২১ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১১:৪৯

ককচক বলেছেন: খুব দুঃখজনক। একটু আগে একটা ভিডিওতে দেখলাম, মিথিলা ফারজানা নামে এক চা শ্রমিক বলছেন- তার ছেলে ইলিশ মাছের ছবি দেখিয়ে জানতে চায় এই মাছের স্বাদ কেমন। মিথিলা কিছু বলতে পারেন না। কারণ তিনি কখনো ইলিশ মাছ খেতে পারেননি।

এই মানুষগুলো যুগযুগ ধরে বঞ্চিত। এদের উপরে উঠার সুযোগ নেই।

২৪ শে আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:৩৩

রযাবিডি বলেছেন: এদের আমরা উপরে উঠতে দিচ্ছি না।

৪| ২২ শে আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:৫৬

জুল ভার্ন বলেছেন: চা শ্রমিকদের জীবন এলেক্স হ্যালীর রুটস উপন্যাসের কিন্তা-কুন্তের জীবনের কথা মনে করিয়ে দেয়। কিন্তাকুন্তের জীবনের মতোই আমাদের দেশের চা শ্রমিকদের জীবন!

৫| ২৪ শে আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:৩৩

রযাবিডি বলেছেন: ঠিক বলেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.