![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ডিজিটাল বাংলাদেশ ও আমাদের করণীয়। ( Towards a Complete Digital Bangladesh.)
“ডিজিটাল বাংলাদেশ ও আমাদের করণীয়” শীর্ষক সেমিনারে উপস্থিত প্রধান অতিথি জনাব শওকত আলী, মাননীয় ডেপুটি স্পীকার , বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ। সেমিনারের সম্মানিত সভাপতি জনাব মোহা: আনিছুর রহমান, মাননীয় জেলা প্রশাসক , শরীয়তপুর, শরীয়তপুর জেলায় কর্মরত সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ , রাজনৈতিক নেতৃবর্গ , জনপ্রতিনিধিবৃন্দ, শিক্ষাবিদগণ , তথ্য ও প্রযুক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ , বিভিন্ন মিডিয়ার প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ , উপস্থিত সুধীমন্ডলী সবাইকে জানাই সালাম, শুভেচ্ছা এবং প্রাণঢালা অভিনন্দন।
সেমিনার টাইটেলঃ ডিজিটাল বাংলাদেশ ও আমাদের করনীয়।
সেমিনারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন, জেলা প্রশাসক ও সভাপতি জেলা আইসিটি কমিটি, শরীয়তপুর, জনাব মোহাঃ আনিছুর রহমান। এবং জেলা আইসিটি কমিটির সকল সদস্য।
সেমিনার পেপার তৈরী উপ-কমিটি নিম্নরুপঃ
১. জনাব দুলাল কৃষ্ণ সাহা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক, অহবায়ক।
২.এ এইচ এম আব্দুল করিম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্ত, শরীয়তপুর সদর উপজেলা- সদস্য।
৩. মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার, সিনিয়র সহকারী কমিশনার, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, শরীয়তপুর- সদস্য।
৪. মোঃ হাবিবউল্লাহ, সহকারী কমিশনার, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, শরীয়তপুর- সদস্য। .
৫. এ এইচ এম মিজানুর রহমান, বিভাগীয় প্রধান কম্পিউটার বিজ্ঞান , বুড়ির হাট পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউট, শরীতপুর- সদস্য।
পেপার তৈরী ও উপস্থাপনায়ঃ
জনাব মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার, সিনিয়র সহকারী কমিশনার, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, শরীয়তপুর।
মুখবন্ধ
সেমিনারের লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পুরো আলোচনায় সহজ সাধারন ভাষা ব্যহারকরা হয়েছে। টেকনিকেল শব্দ বাদ দিয়ে রুপক অর্থ ব্যাবহার করা হয়েছে। যেমন ইন্টারনেট রাস্তা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সহজ করার কারন ডিজিটাল যন্ত্রপাতি মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাপনের হাতিয়ার হিসাবে কাজ করবে, তাই এটাকে সবার জানতে হবে, বুঝতে হবে। আর এদের অধিকাংশই গ্রামের খেটে খাওয়া দরিদ্র স্বশিক্ষিত স্বল্পশিক্ষিত লোকজন। এদের কে জানাতে হবে এটা বিলাসিতা নয়, এটা প্রয়োজনীয়তা।
-------সূচিপত্রঃ-------
১. ভূমিকাঃ
২. ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণা
৩.ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রয়োজনীয়তা/সুবিধা
৩. ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে অত্যাবশ্যকীয় উপাদান সমূহ
৪. ডিজিটাল বাংলাদেশঃ বর্তমান অবস্থা
৫. ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে প্রতিবন্ধকতা সমূহ
৬. ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে আমাদের করনীয় (সুপারিশমালা)
৭. উপসংহার
ভূমিকাঃ ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরী ও ভিশন ২০২১ এ পৌছানোর ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের উদ্যগে দেশের ৬৪ টি জেলায় ও ৪৮১ উপজেলায় "ডিজিটাল বাংলাদেশ ও আমাদেরদের করণীয়" শীর্ষক সেমিনার/সিম্পোজিয়াম/ওয়ার্কসপ আয়োজন করা হচ্ছে। সরকারের লক্ষ্য ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, শুধু ডিজিটাল ঢাকা নয় তাই এধরনের আয়োজনের ভেতর দিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও বের হয়ে আসবে ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে আমাদের ভাবনা কি, চাহিদা কি, আমাদের সামর্থ্য আর প্রত্যাশা কতটুকু। এই উদ্দেশ্য বিবেচনায় রেখে এই সেমিনারে আমরা খুজে দেখবো ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে কি বোঝায় ? সেই সাথে ডিজিটাল বাংলাদেশ কেন ? ডিজিটাল বাংলাদেশে কি ভাবে পৌঁছাতে হবে ? আর এই প্রশ্নের উত্তরগুলি খুঁজতে আমরা ইলেক্ট্রনিক/ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখবো। কারন ইহা দিবালোকের সত্য "আগে রাস্তা, তারপর গাড়ি "।
ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারনাঃ ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে আসলে আমরা কি বুঝি ? এটা কি খলি ল্যাপটপ আর ইন্টারনেট ? নাকি "শুধু" মোবাইল টিভি রেডিও সহ সকল আধুনিক ডিজিটাল যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও একটা বাজার ? না তা নয়। আমরা ডিজিটাল শব্দটিকে প্রায়ই ভুল তুলনা করলেও ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারনাটি প্রকৃত পক্ষে একটি দীর্ঘ প্রতক্ষিত সমাজের কথা বলে, যেখানে থাকবে ন্যায় বিচার, থাকবে না দারিদ্র, থকবে নিজস্ব সম্পদ ব্যবহার করে অর্ধনৈতিক সমৃদ্ধি। ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারনাটি আপাত দৃষ্টিতে নতুন মনে হলেও এরকম একটা সমাজের স্বপ্ন বাঙালী জাতি অনেক আগে থেকেই দেখে আসছে। এরকম একটি বাংলাদেশের জন্য রক্ত দিয়েছে প্রতিটি ফাল্গুনের তরুনেরা, আন্দোলন করেছে রাজপথে বছরের পর বছর, মরেছে অকাতরে। ত্রিশ লাখ মানুষের প্রাণ দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, সে অনেক দিনের কথা। এক প্রজনমের স্বপ্ন আরেক প্রজন্মের দায়িত্ব তাই আজ আবার পুরান স্বপ্ন জেগে উঠেছে, দেখেছে ডিজিটাল বাংলাদেশই পারে পূর্ব পরুষের রক্তে কেনা স্বপ্নে সোনার দেশে নিয়ে যেতে।
ডিজিটাল বাংলাদেশে কি কি সুবিধা থাকবেঃ World Summit on Information SystemSISভিশন ২০১০ এর রুপকল্পে ডিজিটাল অবকাঠামোয় আমাদের সোপানগুলো কি কি হবে সেগুলো দেখলেই উপলব্ধি করতে পারবো কোথায় আমাদের অগ্রাধীকার এবং কি ভাবে লক্ষ্য অর্জন করা যাবে। ডিজিটাল বাংলাদেশে মূলত আমরা কতগুলো সিসটেম/এপলিকেশন ডেভলপ করবো যেমনঃ ই-সরকার ব্যবস্থাvernance, ই-ব্যাবসাeness, ই-শিক্ষাning, ই-স্বাস্থe, ই-পরিবেশ, ই-কর্মসংস্থান, ই-কৃষি, ই-বিজ্ঞান। এ রকমই অসংখ্য এ্যাপলিকেশন বা তথ্যযোগাযোগের বাহন থাকবে ডিজিটাল বাংলাদেশে। ঠিক যেভাবে গাড়ি চালানোর আগে রাস্তা প্রয়োজন তেমনি ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধাগুলো ভোগ করার জন্য উপরের এই সিস্টেমগুলি চালাতে আমাদের ডিজিটাল কমিউনিকেশন বা টেলিকমিউনিকেশন কিরকম হওয়া উচিত তাই আমরা এই আলোচনায় প্রাধান্য দিচ্ছি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে অপরিহার্য উপাদান সমূহঃ এই অংশে আমরা দেখবো ডিজিটাল বাংলাদেশ বানাতে এবং ভিশন ২০২১ এর রৃপকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে এই মুহূতে যেগুলির উপর আমাদের সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেয়া উচিত সেই বিষয় গুলি কি কি ? সে গুলির অতীত কেমন ছিল ? বর্তমান কেমন আছে ? ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কতটুকু নির্ভরযোগ্য ? এবং দেশের চাহিদা, সামর্থ্য অনুযায়ী অপরিহার্য উপাদানগুলির অগ্রাধিকার তালিকা কেমন হবে ?
ইন্টারনেটঃ ইন্টারনেট আসলে একটি টেলিকমিউনিকেশন বা দূর-যোগাযোগ।মানে সারা দুনিয়ায় জালের মত সবার সাথে সবার যোগাযোগ করে দেয়া। যেমন এই মুহূর্তে আমি আমার হাতের মোবাইল দিয়ে পাশের টাওয়ার হয়ে ঢাকা হয়ে সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে ঢুকে সারা দুনিয়া ঘুরে মূহূর্তে এই টাওয়ার দিয়ে নেমে আসতে পারবো। এটাই ইন্টারনেট। এর ইতিহাস অনেক আগের যা সাবমেরিন ক্যাবল পার্টে দেখবো।
বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেট হলো সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিকমিউনিকেশন। কারন এর ভেতর দিয়ে মুহূর্তে একটা বিশাল বই, ভিডিও, আরও হাজারো রকমের ডাটা এক টিপ দিয়েই পৃথিবীর এক প্র্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পাঠিয়ে দেয়া যায়। ইন্টারনেট এই নেটওয়ার্কে কোথাও তারের ভেতরে কোথাও তার বিহীন যেমন মোবাইল সংযোগের মাধ্যমে সারা দুনিয়ায় ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগের রাস্তা তৈরী করেছে। আবার আমাদের বাস ট্রাকের রাস্তা যেমন ১৮ ফুট ৩২ ফুট কোথাও ২০০ ফুট হয় ঠিক একই ভাবে ইন্টারনেটের রাস্তা মোটা চিকন হয়। এর পরিমানকে ব্যান্ডউইথ বলে। যেমন বাংলাদেশে আমাদের রাস্তা ৫ কেবি/সেকেন্ড জাপান ১জিবি/সেকেন্ড যার মানে জাপানে ইন্টারনেটের রাস্তা বাংলাদেশের চেয়ে ২০,০০০ (বিশ হাজার ) গুন চওড়া।
এখন দেখা যাক ইন্টারনেট এই রাস্তার জন্য কি কি প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
সাবমেরিন ক্যাবলঃ সাবমেরিন ক্যাবল টেলিকমিনিকেশনে বিপ্লব এনেছিল ২০০ বছর আগেই। দূরকে জয় করার প্রয়োজন ও ইচ্ছা মানুষের সহজাত একটা বিষয়। এর শুরু আদিম যুগে। মানুষ ইশারা দিয়ে বা চিৎকার দিয়ে দূরে আর একজনের সাথে প্রথম যোগাযোগ করে তখনই শুরু হয় প্রথম টেলিকমিউনিকেশন। আমরা দেখি হাজার হাজার বছর ধরে মসজিদে সুউচ্চ মিনারে উঠে মোয়াজ্জিন আজান দিচ্ছে, এটাও টেলিকমিনিকেশন। এক সময় এলো টেলিগ্রাফ, তারের ভেতর দিয়ে ছোট্টো ম্যসেজ পাঠিয়ে দিচ্ছে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। এখানে এসে প্রয়োজন পড়লো সমুদ্র পার হয়ে অন্য মহাদেশে যাওয়ার।
সমুদ্রের তলদেশে তার ফেলে টেলিগ্রাফিক ম্যাসেজ পাঠানোর ধারনা প্রথম দেয় স্পেনের একটি কোম্পানি, ১৭৯৫ সালে।প্রথম সফল তারটি ফেলা হয় ১৮৫০ সালে ইংলিশ চেনেলে, ফ্রান্স ও ইংলেন্ডের মাঝে। ১৮৫৬ সালে প্রথম ট্রান্স আটলান্টিক কেবেলটি রানী ভিক্টোরিয়া আমেরিকার প্রসিডেন্ট জেমসের সাথে টেলিগ্রাফিক মেসেজ দিয়ে উদ্ভোধন করেছিলেন। ১৮৭০ সালেই উপমহাদেশের বোম্বের সাথে লন্ডনের প্রথম সংযোগ তারটি ফেলা হয়েছিল। তারগুলির একটা বৈশিষ্ট্য হলো এগুলোর স্থায়িত্ব পনের-বিশ বছর। এরপর রিপ্লেস করা হয় আরও উন্নত সুবিধার ও দ্রুতগতির তার দিয়ে। ১৯৫০ সালের পর দেখা যায় আটলান্টিকে, ইংলিশ চ্যানেলে, প্রশান্ত মহাসাগরে একের পর এক আরও দ্রুতগতি ও অধিক ক্যাপাসিটির ক্যাবল লাগানো হতে থাকে।
১৯২০ সালে বেতার তরঙ্গের আন্তমহাদেশিয় টেলিকমিউনিকেশের আবিষ্কার হলেও সস্তা আর নির্ভরযোগ্যতার জন্য সাবমেরিন ক্যাবলই জনপ্রিয় থেকে যায়। আর ১৯৭৮ এর দিকে যখন এ অঞ্চল ঘেষে প্রথম তারটি যায় যেখানে সংযুক্ত হওয়া এদেশের টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের জন্য একান্ত প্রয়োজন ছিল তখন আমরা এর খবরও রাখি নাই, যদিও তখনও বাংলাদেশ থেকে একটা টেলিফোন করলে তা লন্ডন হয়ে কোলকাতা বা ইসলামাবাদ যেত। বঙ্গোপসাগর দিয়ে এ অঞ্চলের প্রথম তারটির নাম সাউথ-ইস্ট এশিয়া-মিডলইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ-১ সংক্ষেপে সি-মি-উই-১, ৩৫ হাজার কিলোমিটার লম্বাছিল তারটি। এ অঞ্চলে প্রথম অপটিকেল ফাইবার বসানো হয় ১৯৮৫ সালে নাম সি-মি-উই-২, এ পরিবারের তৃতীয় তারের কাজ শুরু হয় ১৯৯৪ সালে যা আরও অনেক বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন ফাইবার অপটিক। এই তারটির নাম সি-মি-উই-৩, তখনও আমরা এতে সংযুক্ত হইনি।
সব শেষ ২০০২ সালে মেমোরেন্ডাম স্বাক্ষর হয়ে সি-মি-উই-৪ এর কাজ শুরু হলেও আমরা সিদ্ধান্ত নিতে আরও ৪ বছর বিলম্ব করে ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে প্রথম সংযুক্ত হই সাবমেরিন ক্যাবলে। ১৯৯০ থেকে ২০০৭ এ সময়টাতে যখন টেলিকম পৃথিবীতে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয় সেখানে আমরা সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত না হয়ে দেশের আইটি ডেভলপমেন্টে কত ক্ষতি করেছি তা আসলে শুধু টাকা দিয়ে হিসেব করা সম্ভব নয়। একটা প্রজন্মকেই তার সমসাময়িক পৃথিবীতে বিজ্ঞানের এ যুগে অদক্ষ করে রেখেছি। অথচ যদি এর উল্টো হতো তাহলে এদেশের লোকজন আজ কমপিটার ইন্টারনেটের নাম শুনে ভয় পেতনা।
এদিকে এই সংযোগে ঢুকে গত তিন বছর যাবৎ আমরা কি করছি ? যেমন এই মুহুর্তে আমাদের সাবমেরিন ক্যাবলের মোট ক্যাপাসিটি ৪৪.৬ জিবি/সেকেন্ড এবং সারাদেশের আমরা মোট ব্যবহার করছি ১০জিবি/সেকেন্ড। অবশিষ্ট ৩৪.৬ জিবি ব্যান্ডউইথ প্রতি সেকেন্ডে অব্যাবহৃত থাকছে, নষ্ট হচ্ছে। ৫ ভাগের ৪ ভাগ অপচয় হচ্ছে অথচ এদেশে ইন্টারনেটের গতি ৪ থেকে ৫ কেবি। আবার গত ডিসেম্বরে অনেক কম পয়সায় সংযোগে আরও ৪০ জিবি/সেকেন্ডের প্রপোজাল রিজেক্ট করেছি। সত্যি সেলুকাস !
ব্যান্ডউইথ বা ইন্টারনেটের মাপকাঠিঃ ইন্টারনেট হলো রাস্তা আর ব্যানডউইথ হচ্ছে সেই রাস্তা মাপার স্কেল। সরকারের কাছ থেকে আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার) গুলি, যেমন মোবাইল, ব্যান্ডইথ কিনে আমাদের মত সাধারন ব্যবহারকারির কাছে খুচড়ায় বিক্রি করে। যেমন গ্রামীন আমার কাছ থেকে প্রতি মাসে কম বেশী ১০০০ হাজার টাকা নেয়, আর মাত্র ৩ বা ৪কেবি/সেকেন্ড গতি দেয়। দুই বছর আগেও একই ছিল। উল্লেখ্য এদেশে ২০০৭ সাল থেকে মোবাইল কোমপানীগুলি প্রথম ইনটারনেট বিক্রি করার অনুমতি পায়। এছাড়া ঢাকা চিটাগাংয়ে ডিসের তার দিয়ে ব্রডব্যন্ড বিক্রি করে। আর সম্প্রতি ঢাকায় সীমিত পর্যায়ে ওয়াইমেক্সের মাধ্যমে ইন্টারনেট দেয়া শুরু হয়েছে।
তাহলে দেখা যায় আইএসপি সরকারের কাছ থেকে হোলসেলে ব্যান্ডউইথ কিনে ব্যবহারকারির কাছে বিক্রি করে। এক্ষেত্রে এখানেও আইএসপিরা সিন্ডিকেট করে নেটে স্ট্যন্ডার্ড ব্যন্ডউইথ ডিসট্রিবিউশন করে প্রতি ২৫০ জনের জন্য ১এমবি/সেকেন্ড। (তথ্য গ্রামীন ১২১ থেকে নেয়া
) এবং আমরা ৩ থেকে ৪ কেবি স্পীড পাই। কখনও ইউজার কম অনলাইনে থাকলে আপনি হয়তো ৫ বা ১০ কেবি পেয়ে থাকি। অথচ সরকার গত বছর জুন মাস থেকে ব্যন্ডউইথের দাম ৬০% কমিয়ে ৮৪ হাজার টাকা থেকে ১০দশ হাজার টাকায় নামিয়ে আনলেও আমরা আমাদের গতিতে বা দামে কোন ইতর বিশেষ পাই না।আইএসপিরা আগে যততটুকু কিনতো কেনা দাম ৮ গুন কমলেও এখনও একই দামে একই পরিমান কিনে আরও অধিক ইউজারের কাছে বিক্রি করছে। আগে যা ৮৪ হাজার টাকার কিনে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করছে এখনও তা মাত্র ১০ হাজারে কিনে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায়ই বিক্রি করছে।
অপটিকেল ফাইবার নেটওয়ার্কঃ সাবমেরিন ক্যাবলের পরে গুরুত্বপূর্ন হলো দেশ ব্যাপী অপটিক ফাইবার নেটওয়ার্ক। টি এন্ড টি'র তারগুলিই রিপ্লেস হয়ে এই মাটির নিচে অপটিক ফাইবার ঢুকেছে। অপটিক ফইবার হলো এক প্রকার তার। এর মধ্যে দিয়ে অনেক বেশি ডাটা আদান প্রদান করা যায়। ডিজিটাল বাংলাদেশ এই তার ছাড়া কল্পনা করা প্রায় অবাস্তব, তারের বড় গুন হলো এদিয়ে কম পয়সায় ব্যান্ডউইথ পাওয়া যায়, যেমন সড়কে বিমানের চেয়ে কম খরচে চলাচল করা যায়।
পৃথিবীতে অনেক অনেক বছর আগেই ক্যাবেল ব্রডব্যন্ডের তার মাটির নিচে ফাইবার অপটিক দিয়া রিপ্লেস করা হয়েছে।ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৯৭৭ সালের এপ্রিল মাসে পৃথিবীর প্রথম অপটিকেল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয়। লাইভ টেলিফোন ট্রাফিক হ্যান্ডেল করতে এটা ছিল ৬ এমবিপিএস অপটিক কেবেল সিস্টেম।আর আজ ২০১০ সালে সারা দুনিয়ায় মানুষ ঘরে বসে ফিক্সড লোকেশনে এই অপটিক তার দিয়ে আমাদের চেয়ে কয়েক হাজারগুন বেশী গতীতে ইন্টারনেটে কাজ করছে। সুতরাং তাদের তুলনায় আমাদের ওয়ার্ক ইফসিয়েন্স শূন্য। যেমন ভারতে একটা ছেলে এক ঘন্টায় যতটুকু কাজ করবে আমাদের লোকেশনে তা ২৪ ঘন্টায়ও করতে পারবো না।
আর আমরা সবার পরে সিদ্ধান্ত নিয়ে ২০০৮ সালে অপটিকেল ফাইবার স্থাপনের লাইসেন্স ওপেন করলেও অসংখ্য কারনে একটি মাত্র কোম্পানীকে সারা দেশে অপটিক ফাইবার স্থাপনের লাইসেনস্ দেয়া। এখন কথা হচ্ছে একটি মাত্র কো্পানী যখন সারাদেশে অপটিক ফাইবার স্থাপন করবে তখন তার ৫০ বছর লাগবে উপজেলা পর্যন্ত যেতে। শুধু ঢাকায়ই ২০ বছর নেবে অথচ ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের জন্য সর্বচ্চো আগামী ৫ বছরের মধ্যে ঢাকা থেকে উপজেলা পর্যন্ত অপটিক ফাইবার লাগবে।
এই অপটিক ফাইবার হলে কি কি সুবিধা হবে তা বলে শেষ করা যাবে না, শুধু এটুটু বলবো কম পয়সায় অনেক চওড়া রাস্তা পাওয়া যাবে।
ওয়াইম্যাক্সঃ ওয়াইম্যাক্স হলো মোটা রাস্তায় ইন্টারনেট দেওয়ার একটা তারবিহীন প্রযুক্তি। যে দেশে সামান্যতম ক্যাবল নেটওয়ার্ক নেই সে দেশে ওয়াইমেক্সের মত তারহীন ব্রডবেন্ড কমিউনিকেশন টুলকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রি করে দেশের ব্রডব্যান্ড ফিউচারের ভবিষ্যৎ ২০০৮ সালে নষ্ট করে দেয়া হয়। যেখানে ওয়াইম্যাক্স ২০০১ সাল শুরু হয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার অনেক উদাহরন ছিল আশপাশের দেশেই। যার ফলাফল দুই বছরে ঢাকার ২০ ভাগও কভার করতে পারেনি। ঐদিকে তখন আমরা বোকার মত দাবি করেছি পৃথিবীতে বাংলাদেশের ওয়াই মেক্স লাইসেন্স সবচেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। অন্য দিকে পৃথিবী এখন লাইসেন্স ফ্রী ওয়াইমেক্সের চিন্তা করছে।
এসএমএস ব্যাংকিঃ এসএমএস ব্যাকিং কি ? সহজ ভাষায় এসএমএস ব্যাংকিং হলো ফ্লাক্স্রীলোড। অর্থাৎ আমাদের যে ব্যাংক একাউন্ট আছে তার একাউন্ট নম্বরে একটা সীম কার্ড দেবে অথবা অন্যকোন ভাবে আমার হাতের মোবাইলের নাম্বারে একাউনট নম্বরটা ঢুকিয়ে দেবে। তাহলেই ব্যাংক একাউন্ট আমাদের হাতে চলে আসবে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক তিনটি ব্যাংক বললেও প্রকৃতপক্ষে ট্রাস্ট ব্যাংক নামক একটি মাত্র ব্যাংককে এসমএস ব্যাংকিং করার অনুমতি দেয়। এতে আর যাই হোক ভেদরগঞ্ গোসাইর হাট উপজেলার মত অন্তত ৪৭৬ টি উপজেলার কোন কাজেই লাগবে না। বরং এসএমএস ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যৎ প্রতিদিন আরও অনেক দিন করে পেছাবে। অথচ লাইসেন্সটা সবার জন্য ওপেন বা লিবারেল থাকলে দেশের সাধারন ব্যাংক গুলো এতদিনে প্রতিযোগীতায় নেমে যেত কে কার আগে টেক্নোলজিটা ইনস্টল করে সার্ভিসটা সেল করবে।
এতে লাভ কি ? আমাদের এই শরীয়তপুর জেলায় ছয়টি উপজেলায় হাটবাজার আছে অনেক। উপজেলা সদর বাদ দিয়ে ইউনিয়ন লেভেলেও হাটবাজার আছে, সেখানে ডিমের পাইকার চালের ব্যবসায়ী মাছের ব্যাবসায়ী পানির ব্যাবসায়ী অনেক আছে। এরা মালের অর্ডার দিতে দশ হজার টাকা, বিশ হাজার টাকা টিটি করার জন্য উপজেলা বা জেলায় যাচ্ছে প্রতিদিন, কাজ ফেলে বাসে, রিক্সায় চড়ে। অথচ ওদের হাতে মোবাইল আছে ব্যাংকে এক্উন্ট আছে এবং তার সাত বছরের ছেলেটাও ফ্লাক্সীলোড করতে কোন দিন ভুল করেনি। উল্লেখ্য এখানে নিরাপত্তা কোন বিষয়ই না আমাদের উদাসিনতাই বিষয়। আমরা যে ব্যাংকে টাকা রাখি তার নিরাপত্তা ব্যাংক ওয়ালা ও সরকারের নীতিমালাই দেয়।
৩জিঃ মানে থার্ডজেনারেশন মোবাইল নেটওয়ার্কঃ এটা খুব ভালো প্রযুক্তি। এতে অনেক কিছুইয় যেমন ভিডিও কল, ভিডিও কনফারেন্স সহ অসংখ্য সেবা মোবাইলে ঢুকছে কেবল মাত্র ৩জি আছে বলে। আমাদের জন্য এর সবচেয়ে বড় গুন হলো এই ৩জির ভিতর দিয়ে ব্রডবেন্ড ইনারনেট দেয়া যায়। যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক ছারা এদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে টেলিকমিউনিকেশন নিয়ে যাওয়ার কথা কল্পনাও করা যায় না সেখানে ৩জি লাইসেন্স ওপেন না করা সতি দূঃখ জনক।
দুনিয়ার প্রথম থ্রীজি (3G) নেটওয়ার্ক ইনস্টল করেছিল জাপান ২০০১ সালের মে মাসে। দক্ষিন কোরিয়া ২০০২ জানুয়ারীতে। শ্রীলংকা ২০০৬ সালেই সব কয়টি অপারেটরকে ফ্রী থ্রীজি দিয়া দুই বছর সময় দিয়া দিছে নেটওয়ার্ক সম্পন্ন করার শর্ত দেয়। মিয়ানমারও ২০০৮ সালে দিয়ে দেয়। অথচ এই থ্রীজি ২০০৫ সালে ওয়ারিদ মার্কেটে দেওয়ার কথা বলে আবেদন করলেও আজও আমরা টাকা নিয়ে অনুমিতি দেয়ার কাজটিও করতে পারছি না।
স্পেকটার্ম ম্যানেজম্যান্ট বা ফ্রিকোয়েন্সি এলোকেশন কমিটিঃ এই নামে একটা কমিটি আছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ে।এর কাজ হলো এইযে এত সব মোবাইল ৩জি ওয়াইম্যাক্স, পিসটিএন, রেডিও, টিভি সহ যত ওয়ারলেস সার্ভিস আছে তাদেরকে লাইসেন্স দেয়ার মানে আর কিছু না শুধু তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়া।যেকোন লাইসেন্স দেরার আগে প্রস্তাবটি এই কমিটিতে যায় আর আগই নীতিমালা করে এই কমিটিই ঠিক করে কয়টা লাইসেন্স দেয়া যাবে। ওরা খালি বলে দুইটা'র বেশী দেয়া যাবে না ফিকোয়েনসি নাই। এমনিতেই পিএসটিএন অনেকগুলো ফিকোয়েন্সি ব্লক করে রেখেছে। লাইসেন্স বাতিল করলে হাই কোর্ট চলে যাবে। এখানে কারনটা এরকম যে বাতাসের এই ফ্রিকোয়েন্সি গুলিকে লিমিটেড রিসোর্স বলা হয়। পৃথিবীর অনান্য দেশে ফ্রিকোয়েন্সির অভাব আছে তাতো মনে হয় না। সৃষ্টিকর্তা ভূগর্ভে এবং ভূপৃষ্ঠে, অঞ্চল ভেদে সম্পদের তারতম্য করলেও মাথার উপর আকাশে সবাইকে একই পরিমান সম্পদ দিয়েছেন। যেমন আমার এফএম ১১০.১ ফ্রিকোয়েন্সি আছে নিউ ইয়র্কের কারো মাথার উপর এর একটিও বেশি নেই।
এখানে এই কমিটি ছোটবেলা পড়া শিয়ালের কুমিরের বাচ্চা দেখানোর গল্পটা মনে করতে পারলে খুব সহজেই এই লিমিটেড সম্পদকে ৬৪টর সাথে গুন দিয়ে কখনও ৬৪টা আবার কখনও ৪৮১টা উপজেলার সাথে গুন দিয়ে ৬৪ গুন বানেয়ে ফেলতে পারতো, যখন যত প্রয়োজন। আচ্ছা যদি এফএম ৯০.০ দিয়েই ৭টা বিভাগের ৭টা জেলায় ৭টা রেডিও এফএম ৯০.০ বাজানো হয় তাহলে কি, কোন অসুবিধা হবে ? ঠিক একই ভাবে ৬৪ জেলায় ৬৪ টা ওয়াইম্যাক্স লাইসেন্স দিলেও সর্বোচ্চো ৩ বা ৪ ফ্রিকোয়েন্সি দিয়েই রিপিট করে করে অনেক ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ করতে পারতো
রেডিও কমিউনিকেশনঃ আমাদের সামাজিক অর্থনীতিতে ও অবকাঠামোয় ২০১০ সালেও এখানে ডিজিটাল বাংলাদেশের মেরুদন্ড হতে পারে রেডিও কমিউনিকেশন। রেডিওর সাথে এ জাতির আছে গভীর পরিচয়। ১৯৭১ এ একটা স্বাধীন বাংলা বেতার সাতকোটি মানুষকে যুদ্ধের কথা শুনিয়েছ আজ কয়েকশ রেডিও চাই জীবনের কথা বলতে।
এটাই হতে পারে সবচেয়ে শক্তিশালি ইনফর্মেশন আউটপুট কারন এই টেকনোলজিটা সবচেয়ে পুরাতন। সবার জানা ও সবচেয়ে সহজ। একেবারে বিনা পয়সায় তথ্য। এ দেশে মোট জনগোষ্ঠির কম বেশি সত্তুর শতাংশ মানুষ গ্রমের কৃষক এ সকল মানুষদের আগামী ২০ বছরেও তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে কম্পিউটার লেপটপের ব্যবহারের প্রয়োজন এবং সামর্থ্য কোন টা নাই।
তবে তথ্যের প্রয়োজন এদের অপরিহার্য, সারাদিন অজস্র তথ্য লাগবে। লোকাল পত্রিকার গরম খবরটা জানতে হবে, একই ভাবে ছেলে হউক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট এরকম তথ্য থেকে শুরু করে কোন নির্দিষ্ট এলাকায় কয় তারিখের মধ্যে বোর রোপন করতে হবে, চাপাশে বাজার দর কোথায় কেমন ? আর এসবই সম্ভব হবে রেডিও গুলি যদি উপজেলা থেকে প্রচার করা হয়। কেননা প্রতিটি উপজেলাই সবচেয়ে ভালো জানে তার সীমানার কোথায় কি লাগবে। আর এক্ষেত্রে আমাদের উদ্দেশ্য যদি থাকে গ্রামে তথ্য দেয়া তবে সেটা হতে হবে ফ্রী তথ্য। ৩০ হাজার টাকার একটা লেপটপ নিয়ে ৫০,০০০ হাজার মানুষকে ব্যবহার করার সেটআপ দিতে হবে। যেন কোন উপজেলার সবচেয়ে রিমোট লোকেশন থেকেও একজন কৃষক উপজেলা সদরে খোলা একটা লেপটপে ক্লিক করে জেনে নিতে গুটি ইউরিয়ায় কি লাভ হয়। আর সারাদিন হাজরো কথাতো থাকবেই। এখন আর স্টার হতে ঢাকা যেতে হবে না, নিজের এলাকায়ই হওয়া যাবে।
যেদিন দেশের যে কোন লোকেশনে দাড়িয়ে অন্তত ১০ (দশ) টি এফএম রেডিও শোনা যাবে সেদিন ডিজিটাল বাংলাদেশ সত্যি সহজ হয়ে যাবে। অর্ধেকেরও বেশী মানুষকে লাইভ সংযোগ করে ফেলা যাবে উপজেলার যে কোন লোকেশন থেকে । কয়েকটা নির্ধারিত নম্বরের একটিতে কলে করে এক কলের পয়সায় পুরো উপজেলার জনগনকে তথ্যটা শেয়ার করতে পারবে কোন হিডেন কস্ট ছাড়াই।দেখার হাওরের বাঁধ ভাঙ্গার উপক্রম তা সবার আগে শোনা যাবে রেডিও দক্ষিন সুনামগঞ্জে। আর বছর খানেক সময় দিলে এমন ছোট্টো স্টেশনই ইন্টারনেট রেডিও এড করে সারা দুনিয়াতে চলে যাবে। আজ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও প্রত্যান্ত অঞ্চলেও উপজেলাগুলির শতাধীক প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে ক্লাস ও দৈনন্দিন কর্মকান্ডে নির্দেশনা দিচ্ছে উপজেলা শিক্ষা অফিসার।
আর কৃষির মত শতভাগ শারীরিক শ্রমের কাজ যেখানে ইনফর্মেশন ও মোবিলাইজেশনই আসল কথা যেমন সঠিক বাজারে উৎপাদিত পন্যটি নিতে পারা তেমনি কোন নদীতে পানি কতটুকু বেড়েছে, ট্রলার কোন পর্যন্ত চলা শুরু হয়েছে, কোন গ্রামে এবছর পাটের ফলন ভালো হয়েছে, কোন ইউনিয়নে বোরো কাটা শুরু হয়েছে, কৃষি অফিসার বেগুন চাষ সম্পর্কে কি বলছে, সারের ট্রলার বা ট্রাক ফ্যাকট্রি থেকে কখনযাত্রা শুরু করেছে, উপজেলায় কৃষকের কার্ড তৈরীর কাজ কবে শুরু করেছে ইত্যাদি হাজারো তথ্য। সে দেশে গরীব কৃষকদের এই সস্তা কমিউনিকেশন টা ব্যাহার করতে দেয়া ন্যায় সংঙ্গত।
টেক্নোলজিটা কত সহজ ? ১৮৯৬ সালে মারকুনির Patent 1203, সেই থেকে একশত চব্বিশ বছরে টেকনোলজিটা আজ হাউজহোল্ড হয়ে গেছে। দেশের অসংখ্য টেকনিকেল কলেজের সবচেয়ে কোমল মতি ছাত্র টাও হাতে বানিয়ে সারা উপজেলার সাথে সংযুক্ত হয়ে যেতে পারবে।
টেরেস্টারিয়াল টেলিকাস্টঃ মানে হলো এয়ার টিভি বা Air টেলিভিশন যা আমারা বিটিভি নমে চিনি। টেরেস্সারিয়াল টেলিভিশন এই কমপিউটার ইন্টারনেটের যুগেও পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্তিশালি ডিজিটাল কমিনিকেশনের অবস্থানেই আছে। কারন হলো এই টিভি দেশের যেকোন প্রান্তে শুধু একট এন্টেনা তুলেই দেখা যায়। দেখতে পয়সা লাগে না। আর আমাদের দেশের ৭০ ভাগ মানুষ এখনও বাধ্য হয়ে বি-টিভি দেখছে, আর বিটিভি এক জরিপে বলেছে আমাদের ৯০ শতাংশ মানুষর টেলিভিশন এক্সেস আছে। টেরস্টারিয়াল টেলিকাস্ট গন মানুষের কাছে যেতে পারে বিধায় এটা গনশিক্ষায় ইডুকেশন সামাজিক শিক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে।
কিছু দিন আগে চ্যানেল আই এর এগার তম জন্ম দিনে লক্ষ্য করলাম সারাদেশের বিভাগ ও জেলা পর্যায় সহ রাজধানী ঢাকায় বিশাল বিশাল সব অনুষ্ঠান হলো। এই অনুষ্ঠানে দেশ বরেণ্য সব বিশাল মাপের লোকজন এসে যোগ দিলেন। হৃদয়ে মাটি ও মানুষ কৃষকের ঈদ আনন্দ অনুষ্ঠানগুলোর ভুয়শি প্রশংসা হলো। গ্রাম থেকে কৃষকও আনা হলো। অথচ দেখলাম কেউ কেউ এটাই জানেনা চ্যানেল আই কেন একমাত্র বিটিভি ছাড়া অন্য কোন চ্যানেল এদেশের আশি ভাগ লোকের কাছে যেতেই পারে না যদিও সারা দুনিয়ায় চলে গেছে এরই মধ্যে। এটা আমরা আইন করে বন্ধ করে রেখেছি, আদেশটা হলো টেরেস্টারিয়াল টেলিকাস্ট শুধু বিটিভির জন্য সংরক্ষণ করা হলো। এমন একটা কালো আইন ডিজিটাল বাংলাদেশে থেকে মুছে দিতে হবে।
চলুন দেখি আমাদের কত শতাংশ লোক চ্যানেল আই সহ অন্যান্য সেটেলাইট টিভিগুলি দেখছে। পুরো রাজধানী সহ সকল জেলা শহরে ক্যাবল নেটওয়ার্ক আছে। আর রাজধানী সহ ৬৪ জেলা সদরে আমাদের মোট জনগষ্ঠির ২০% এর কম জনগন বসবাস করে,বাকি প্রায় আশি ভাগ লোক গ্রামে থাকে।
দেশে মোট ৪৮০ টির মত উপজেলা আছে। ঢাকার আশেপাশে হাতে গোনা কয়েকটি উপজেলায়, উপজেলা সদরের বাইরে দু-একটি বাজারে ২০০ থেকে ৩০০ কানেকসনের কেবেল নেটওয়ার্ক থাকলেও সারা দেশে শুধু উপজেলা সদরে অল্প কিছু কেবেল নেটওয়ার্ক আছে তার মধ্যে হাওর সহ দুর্গম উপজেলা গুলোর অবস্থা সত্যিই করুন।
১. উপজেলাঃ আমতলি
জেলাঃ বরগুনা
মোট জনসংখ্যঃ ২৪৪৪৩৮
উপজেলা সদরে জনসংখ্যাঃ ১৪২৭৬
স্যাটালাইট চেনেল দর্শকঃ ১৭%
২. উপজেলাঃ লোহাগড়া
জেলাঃ চট্টগ্রাম
মোট জনসংখ্যঃ ২০৩৪৫৩
উপজেলা সদরে জনসংখ্যাঃ ২২২৯৪
স্যাটালাইট চেনেল দর্শকঃ ০৯%
৩. উপজেলাঃ হাতিবান্ধা
জেলাঃ লালমনির হাট
মোট জনসংখ্যঃ ২০১৫৯১
উপজেলা সদরে জনসংখ্যাঃ ১৭৮৬৮
স্যাটালাইট চেনেল দর্শকঃ ১১%
৪. উপজেলাঃ ঈশ্বরগঞ্জ
জেলাঃ ময়মনসিংহ
মোট জনসংখ্যঃ ৩০৬৯৭৭
উপজেলা সদরে জনসংখ্যাঃ ২৫১০৮
স্যাটালাইট চেনেল দর্শকঃ ১০%
অর্থাৎ দশ কোটি গ্রামের মানুষের ১০% সেটেলাইট টিভি দেখছে।
বাকি লোকজন যাদের জীবনে টেলিভিশনই একমাত্র বিনোদনের মাধ্যম
আপনাদের অবশ্যই মনে আছে সরকারের অনুমতি পেয়ে ২০০১ সালে সারা দেশের লোকজন একুশে টিভি দেখেছিল। এর মানে বাংলাদেশে ২টা ভিএইচএফ চ্যানল আছে। এরা এত শক্তিশালী যে ১৫ কোটিমানুষকে সংযুক্ত করতে পারে। একটা বিটিভি চালাচ্ছে আর একটা বন্ধ আছে। এটা ডিজিটাল বাংলাদেশে সময়উপোযযী সিদ্ধান্ত না।
সুপারিশ মালাঃ ১. ডিজিটাল বাংলাদেশ ভাবনা ও বাস্তবায়ন দুটোই দেশের গ্রাম অঞ্চল থেকে শুরু হতে হবে।
২. ডিজিটাল বাংলাদেশ রুপকল্প বাস্তবায়নে প্রথম পর্যায়ে সময়ের উপর বিশেষ সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে কেননা বর্তমান প্রযুক্তির যুগে আর যুগ শতাব্দী দিয়ে হিসেব করার সুযোগ নেই এখন মাস আর বছর হলেই অনেক বেশি এদিকে ডিজিটালাইজেশনের পৃথিবীতে প্রবেশের ক্ষেত্র আমরা অলরেডি দশ বছর (অন্তত) পেছনে পড়ে আছি, সেটা অতিক্রম করতে হবে স্বল্পতম সময়ে।
৩. ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন সমন্বয়ন ও সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্র মডেল টুলস ও বিহেভআওয়ার উদ্ভাবন প্রনয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য একটি আলাদা মন্ত্রনালয় স্থাপন করতে হবে।
উপসংহারঃ ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে আমরা বুঝেছি একটা জীবন্ত বাংলাদেশ যেখানে মানুষ মানুষের সাথে, মানুষ রাষ্ট্রের সাথে, মানুষ বাকি পৃথিবীর সাথে একটা সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে তার অবস্থান থেকে সামর্থ ও চাহিদা অনুযায়ী সংযুক্ত হবে দেশের সাথে এবং দেশ পৃথিবীর সাথে। এক কথায় বললে অন্ন বস্ত্র বাসস্থান এবং কমিউনিকেশন/ব্রডব্যান্ড হবে আমাদের মূলনীতি। আর এর চুড়ান্ত লক্ষ্য হলো দক্ষ জনশক্তির মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈষম্যমুক্ত দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ।
©somewhere in net ltd.