নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দৃষ্টিতে মুক্ত আকাশ

নিকাশ আঁধারে খুঁজে বেড়াই, নিজের হারান অতীত।

রাহাত উদ্দিন রিফাত

কাজের ফাঁকে গল্প পড়তে ভালবাসি। আর বেশী সময় পেলে লিখার চেষ্টা করি।

রাহাত উদ্দিন রিফাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা ক্যালেন্ডার নিয়ে যত কথা

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৬:৫১

বঙ্গাব্দের সূচনা সম্পর্কে দু'টি মত চালু আছে৷ 



প্রথম মত অনুযায়ী - প্রাচীন বঙ্গদেশের (গৌড়) রাজা শশাঙ্ক (রাজত্বকাল আনুমানিক ৫৯০-৬২৫ খৃষ্টাব্দ) বঙ্গাব্দ চালু করেছিলেন৷ সপ্তম শতাব্দীর প্রারম্ভে শশাঙ্ক বঙ্গদেশের রাজচক্রবর্তী রাজা ছিলেন৷ আধুনিক ভারতের বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার অধিকাংশ এলাকা তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল৷ অনুমান করা হয় যে, জুলিয়ান ক্যালেণ্ডারের সোমবার ১২ এপ্রিল ৫৯৪ এবং গ্রেগরিয়ান ক্যালেণ্ডারের সোমবার ১৪ এপ্রিল ৫৯৪ বঙ্গাব্দের সূচনা হয়েছিল৷



দ্বিতীয় মত অনুসারে, ভারতে ইসলামী শাসনামলে হিজরী পঞ্জিকা অনুসারেই সকল কাজকর্ম পরিচালিত হতো। মূল হিজরী পঞ্জিকা চান্দ্র মাসের উপর নির্ভরশীল। চান্দ্র বৎসর সৌর বৎসরর চেয়ে ১১/১২ দিন কম হয়। কারণ সৌর বৎসর ৩৬৫ দিন, আর চান্দ্র বৎসর ৩৫৪ দিন। একারণে চান্দ্র বৎসরে ঋতুগুলি ঠিক থাকে না। আর চাষাবাদ ও এজাতীয় অনেক কাজ ঋতুনির্ভর। এজন্য ভারতের মোগল সম্রাট আকবারের সময়ে প্রচলিত হিজরী চান্দ্র পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্রাট আকবর ইরান থেকে আগত বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লাহ শিরাজীকে হিজরী চান্দ্র বর্ষপঞ্জীকে সৌর বর্ষপঞ্জীতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব প্রদান করেন। ওমর ফতুল্লাহ্‌ শিরাজির সুপারিশে পারস্যে প্রচলিত সৌর বর্ষপঞ্জীর অনুকরণে ৯৯২ হিজরী মোতাবেক ১৫৮৪ খৃস্টাব্দে সম্রাট আকবার হিজরী সৌর বর্ষপঞ্জীর প্রচলন করেন। তবে তিনি ঊনত্রিশ বছর পূর্বে তার সিংহাসন আরোহনের বছর থেকে এ পঞ্জিকা প্রচলনের নির্দেশ দেন। এজন্য ৯৬৩ হিজরী সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়। ইতোপূর্বে বঙ্গে প্রচলিত শকাব্দ বা শক বর্ষপঞ্চির প্রথম মাস ছিল চৈত্র মাস। কিন্তু ৯৬৩ হিজরী সালের মুহাররাম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস, এজন্য বৈশাখ মাসকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস এবং ১লা বৈশাখকে নববর্ষ ধরা হয়।



বঙ্গাব্দের মাস ও সময় কাল গুলোঃ 



বৈশাখ->এপ্রিল-মে                  গ্রীষ্ম

জ্যৈষ্ঠমে->জুন

আষাঢ়->জুন-জুলাই                   বর্ষা

শ্রাবণ->জুলাই-আগস্ট

ভাদ্র->আগস্ট-সেপ্টেম্বর          শরৎ

আশ্বিন->সেপ্টেম্বর-অক্টোবর

কার্তিক->অক্টোবর-নভেম্বর হেমন্ত

অগ্রহায়ণ->নভেম্বর-ডিসেম্বর

পৌষ->ডিসেম্বর-জানুয়ারি         শীত

মাঘ->জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি

ফাল্গুন->ফেব্রুয়ারি-মার্চ        বসন্ত

চৈত্র->মার্চ-এপ্রিল



বঙ্গাব্দের ১২ মাসের নামকরণঃ



বঙ্গাব্দের বারো মাসের নামকরণ করা হযেছে নক্ষত্রমন্ডলে চন্দ্রের আবর্তনে বিশেষ তারার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে । এই নাম সমূহ গৃহীত হয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক প্রাচীন গ্রন্থ "সূর্যসিদ্ধান্ত" থেকে।বাংলা মাসের এই নামগুলি হচ্ছে -



*বৈশাখ - বিশাখা নক্ষত্রের নাম অনুসারে

*জ্যৈষ্ঠ - জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের নাম অনুসারে

*আষাঢ় - উত্তর ও পূর্ব আষাঢ়া নক্ষত্রের নাম অনুসারে

*শ্রাবণ - শ্রবণা নক্ষত্রের নাম অনুসারে

*ভাদ্র -উত্তর ও পূর্ব ভাদ্রপদ নক্ষত্রের নাম অনুসারে

*আশ্বিন - অশ্বিনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে

*কার্তিক - কৃত্তিকা নক্ষত্রের নাম অনুসারে

*অগ্রহায়ণ(মার্গশীর্ষ) - মৃগশিরা নক্ষত্রের নাম অনুসারে

*পৌষ - পুষ্যা নক্ষত্রের নাম অনুসারে

*মাঘ - মঘা নক্ষত্রের নাম অনুসারে

*ফাল্গুন - উত্তর ও পূর্ব ফাল্গুনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে

*চৈত্র - চিত্রা নক্ষত্রের নাম অনুসারে

**সম্রাট আকবর কর্তৃক প্রবর্তিত তারিখ-ই-ইলাহী-র মাসের নামগুলি প্রচলিত ছিল পারসি ভাষায়, যথা: ফারওয়াদিন, আর্দি, ভিহিসু, খোরদাদ, তির, আমারদাদ, শাহরিযার, আবান, আযুর, দাই, বহম এবং ইসক্নদার মিজ।



বঙ্গাব্দের ৭ দিনের নামকরণঃ



বাংলা সন অন্যান্য সনের মতোই সাত দিনকে গ্রহণ করেছে এবং এ দিনের নামগুলো অন্যান্য সনের মতোই তারকামন্ডলীর উপর ভিত্তি করেই করা হয়েছে।



*সোমবার হচ্ছে সোম বা শিব দেবতার নাম অনুসারে

*মঙ্গলবার হচ্ছে মঙ্গল গ্রহের নাম অনুসারে

*বুধবার হচ্ছে বুধ গ্রহের নাম অনুসারে

*বৃহস্পতিবার হচ্ছে বৃহস্পতি গ্রহের নাম অনুসারে

*শুক্রবার হচ্ছে শুক্র গ্রহের নাম অনুসারে

*শনিবার হচ্ছে শনি গ্রহের নাম অনুসারে

*রবিবার হচ্ছে রবি বা সূর্য দেবতার নাম অনুসারে

**বাংলা সনে দিনের শুরু ও শেষ হয় সূর্যোদয়ে । ইংরেজি বা গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির শুরু হয় যেমন মধ্যরাত হতে ।



সনাতন বাংলা বর্ষপঞ্জিকাঃ 



৫৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বরাহমিহির পঞ্চসিদ্ধান্তিকা নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। গ্রন্থটি পাঁচটি খণ্ডে সমাপ্ত। এই গ্রন্থটিকে জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং জ্যোতিষশাস্ত্রের সংক্ষিপ্তসার বলে অভিহিত করা হয়। পঞ্চসিদ্ধান্তিকার পাঁচটি খণ্ডের নাম– এই সিদ্ধান্তগুলো হলো– সূর্যসিদ্ধান্ত, বশিষ্ঠসিদ্ধান্ত, পৌলিশ সিদ্ধান্ত, রোমক সিদ্ধান্ত ও ব্রহ্ম সিদ্ধান্ত। প্রাচীন ভারতে দিন, মাস, বৎসর গণনার ক্ষেত্রে 'সূর্যসিদ্ধান্ত' একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। বরাহমিহিরের পরে ব্রহ্মগুপ্ত নামক অপর একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী (জন্ম ৫৯৮) একটি সিদ্ধান্ত রচনা করেছিলেন। এই গ্রন্থটির নাম ব্রহ্মস্ফুট সিদ্ধান্ত। এই গ্রন্থটি খলিফা আল-মনসুরের আদেশে সিন্দহিন্দ নামে আরবি ভাষায় অনূদিত হয়েছিল। ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে সৌর-মাস নির্ধারিত হয়, সূর্যের গতিপথের উপর ভিত্তি করে। সূর্যের ভিন্ন অবস্থান নির্ণয় করা হয় আকাশের অন্যান্য নক্ষত্রের বিচারে। প্রাচীন কালের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সূর্যের বার্ষিক অবস্থান অনুসারে আকাশকে ১২টি ভাগে ভাগ করেছিলেন। এর একটি ভাগকে তাঁরা নাম দিয়েছিলেন রাশি। আর ১২টি রাশির সমন্বয়ে যে পূর্ণ আবর্তন চক্র সম্পন্ন হয়, তার নাম দেওয়া হয়েছে রাশিচক্র। এই রাশিগুলোর নাম হলো– মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কট, সিংহ, কন্যা, তুলা, বৃশ্চিক, ধনু, মকর, কুম্ভ ও মীন। সূর্যের বার্ষিক অবস্থানের বিচারে, সূর্য কোনো না কোন রাশির ভিতরে অবস্থান করে। এই বিচারে সূর্য পরিক্রমা অনুসারে, সূর্য যখন একটি রাশি থেকে অন্য রাশিতে যায়, তখন তাকে সংক্রান্তি বলা হয়। এই বিচারে এক বছরে ১২টি সংক্রান্তি পাওয়া যায়। একেকটি সংক্রান্তিকে একেকটি মাসের শেষ দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। যেদিন রাত্রি ১২টার মধ্যে সূর্য্য ০ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশে প্রবেশ করে তার পরদিনই ১ বৈশাখ (পয়লা বৈশাখ) হয়। যেদিন রাত্রি ১২টার মধ্যে সংক্রান্তি হয় তার পরদিনই মাসের প্রথম দিন। মূলত একটি সংক্রান্তির পরের দিন থেকে অপর সংক্রান্ত পর্যন্ত সময়কে এক সৌর মাস বলা হয়। লক্ষ্য করা যায় সূর্য পরিক্রমণ অনুসারে সূর্য প্রতিটি রাশি অতিক্রম করতে একই সময় নেয় না। এক্ষেত্রে মাসভেদে সূর্যের একেকটি রাশি অতিক্রম করতে সময় লাগতে পারে, ২৯, ৩০, ৩১ বা ৩২ দিন। সেই কারণে প্রতি বছর বিভিন্ন মাসের দিনসংখ্যা সমান হয় না। এই সনাতন বর্ষপঞ্জী অনুসারে বছর ঋতুভিত্তিক থাকে না। একেকটি মাস ক্রমশঃ মূল ঋতু থেকে পিছিয়ে যেতে থাকে

***(বিস্তারিত দেখুন উইকিতে)



আধুনিক বাংলা বর্ষপঞ্জিকাঃ



বাংলা একাডেমী কর্তৃক বাংলা সন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয় ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬ সালে। ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ'র নেতৃত্বে এ কমিটি বিভিন্ন বাংলা মাস ও ঋতুতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সাংস্কৃতিক জীবনে কিছু সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাকে নির্ণয় করে সেগুলো হতে উত্তরণের প্রস্তাবনা প্রদান করেন । বাংলা সনের ব্যাপ্তি গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির মতোই ৩৬৫ দিনের। যদিও সেখানে পৃথিবীর সূর্যকে প্রদক্ষিণের পরিপূর্ণ সময়কেই যথাযথভাবে নেয়া হয়েছে। এ প্রদক্ষিণের মোট সময় ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট এবং ৪৭ সেকেন্ড। এই ব্যবধান ঘোচাতে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে প্রতি চার বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয়। ব্যতিক্রম হচ্ছে সে শতাব্দীতে যে শতাব্দীকে ৪০০ দিয়ে ভাগ করা যায় না বা বিভাজ্য। জ্যোতির্বিজ্ঞান নির্ভর হলেও বাংলা সনে এই অতিরিক্ত দিনকে আত্মীকরণ করা হয়নি। বাংলা মাস অন্যান্য সনের মাসের মতোই বিভিন্ন পরিসরের হয়ে থাকে। এই সমস্যাগুলোকে দূর করার জন্য ডঃ মুহম্মদ শহীদূল্লাহ কমিটি বাংলা একাডেমীর কাছে কতকগুলো প্রস্তাব পেশ করে। এগুলো হচ্ছেঃ-

#বছরের প্রথম পাঁচ মাস অর্থাৎ বৈশাখ হতে ভাদ্র হবে ৩১ দিনের;

#বাকী মাসগুলো অর্থাৎ আশ্বিন হতে চৈত্র হবে প্রতিটি ৩০ দিনের মাস;

#প্রতি চতুর্থ বছরের ফাল্গুন মাসে অতিরিক্ত একটি দিন যোগ করে তা হবে ৩১ দিনের।

***বাংলা একাডেমী সরকারীভাবে এই সংশোধিত বাংলা মাসের হিসাব গ্রহণ করে। যদিও ভারতের পশ্চিম বাংলায় পুরনো বাংলা সনের প্রচলনই থেকে গেছে।

***(বিস্তারিত দেখুন উইকিতে)



পহেলা বৈশাখ, বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম দিন । বাংলাদেশে বাংলা একাডেমী কর্তৃক সংশোধিত বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে এদিন উদযাপন করা হয় প্রতি বছরের এপ্রিল ১৪ তারিখে । যদিও পশ্চিমবঙ্গে তা উদযাপন করা হয় সনাতন বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে। এটি পাশ্চ্যাতের বর্ষপঞ্জির মতো নির্দিষ্ট নয় । ভারতের বাঙালিরা নতুন বছর উদযাপন করে এপ্রিল ১৪/১৫ তারিখে



সুত্রঃ

১. উইকি

২. সূর্য স্বিদ্ধান্ত

৩. আমারদেশ 

৪. বাংলা নিউজ

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.