![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একটা আধাপাগলা.......!! চলতে চলতে ঘুমাই, ঘুমাতে ঘুমাতে চলি...............
আমাদের বগুড়া জিলা স্কুলের ভেতরে পুরোনো আমলের ছোটখাট একটা ভাঙাচোরা বাড়িমত আছে। আমাদের সময়ে স্কুলের ক্লাশ থ্রি-ফোরের ছেলেদের কাছে ঐ ভাঙা বাড়িটা ছিল রীতিমত একটা হন্টেড হাউজ। আরেকটা গা ছমছমে জায়গা হল আমাদের স্কুলের “লাল দালান” শহীদ দোলন ছাত্রাবাস। আর সম্ভবত সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জায়গাটা হল আমাদের বায়োলজি ল্যাবটা। যাদের বুকের পাটা একটু বেশি বড় ছিল, তারা গিয়ে ল্যাবের দরজার ফাঁক দিয়ে দেখে আসতো ল্যাবের কঙ্কালটা কীভাবে চোখ বড় বড় করে, দাঁত কিঁড়মিড় করে চেয়ে আছে!
বড় হওয়ার সাথে সাথে আমাদের বেশিরভাগেরই আধিভৌতিক ব্যাপারগুলো থেকে কেন যেন বিশ্বাস কোথায় মিলিয়ে যায়। হয়ত শুধুমাত্র দৃশ্যমান জিনিসগুলোর ওপর বিশ্বাস করার অভ্যাসটা গড়ে ওঠে। অথবা সাহসী হয়ে উঠি, তাই।
কিন্তু আসলেই কতটা সাহসী আমরা? অচেনা অন্ধকার ঘরে একাকী রাত কাটাতে বললে কয়জনের সাহসে কুলাবে? এ ধরণের কোনো পরিস্থিতিতে ঠিকই আমাদের অবচেতন মন প্রশ্ন করে বসে, If something is really out there? ভূত এফএমে শোনা গল্পগুলোর সবগুলোই গাঁজাখুরি, এই কথা জোর দিয়ে বলার মত দুঃসাহস দেখানো উচিত নয়, অন্তত আমি তা-ই মনে করি। কিছু ঘটনা সত্যি হতেও তো পারে!
সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করা যাক প্যারানরমাল বা সুপারন্যাচারাল ঘটনা বা অভিজ্ঞতা আসলে কী। সেই সব ঘটনা বা অভিজ্ঞতা, যেগুলোর কোনো স্বাভাবিক বা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। মোট কথা, ব্যাখ্যাতীত ঘটনা। পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম ব্যাখ্যাতীত বা অমীমাংসিত ঘটনার সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল, ইউএফও, ব্ল্যাক ম্যাজিক, বিগ ফুট, লক নেসের দানব, ভুতূড়ে জাহাজ ফ্লাইং ডাচম্যান এসবের নাম শোনেনি এমন মানুষ নেই। স্টোনহেঞ্জ কীভাবে তৈরী হল তা পৃথিবীর ইতিহাসে আজও বিরাট এক রহস্য। এমনকি মানুষের হাতে তৈরি অমীমাংসিত ঘটনার সংখ্যাও কোনোভাবেই কম হবে না।
২০০৫ সালে আমেরিকান রিসার্চ কোম্পানি গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩৭% আমেরিকান, ২৮% কানাডিয়ান ও ৪০% ব্রিটিশ প্যারানরমাল ঘটনায় বিশ্বাস করে।
এই লেখায় আমি পৃথিবীর ইতিহাসের অমীমাংসিত কিছু রহস্যের সাথে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেব। তবে কোনোকিছুর বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে লেখাটাকে দীর্ঘায়িত করব না।
১৯৭৮ সালে একদিন ২০ বছর বয়সী বৈমানিক ফ্রেডরিক ভ্যালেন্টিখ তাঁর ট্রেনিংয়ের অংশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার আকাশে একটি সেসনা বিমান চালাচ্ছিলেন। হঠাৎ অদ্ভুত কিছু একটা দেখতে পেয়ে তিনি মেলবোর্ন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে রিপোর্ট করলেন। তাঁর বর্ণনামতে, “কিছু একটা” তাঁর থেকে ১০০০ ফুট উপরে অবস্থান করছিল আর প্রচণ্ড গতিতে অগ্রসর হচ্ছিল। জিনিসটাতে চারটি উজ্জ্বল আলোর উৎস ছিল। কন্ট্রোলার এয়ারক্রাফটটির বর্ণনা জানতে চাইলে তিনি স্পষ্ট করে বললেন, “এটা কোনো এয়ারক্রাফট নয়।” এরপর হঠাৎ করে তাঁর বিমানের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। কন্ট্রোলার ফ্রেডরিকের সাথে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেন ও রাডার থেকে ফ্রেডরিকের বিমানের চিহ্ন অদৃশ্য হয়ে যায়।
নিউ মেক্সিকোর তাওস শহরের কিছু মানুষ দূরে কোথাও ইঞ্জিন চলার মত অদ্ভুত এক ধরণের শব্দ শুনতে পায়। অত্যন্ত নিচু ফ্রিকোয়েন্সির এই শব্দটি Taos Hum নামে পরিচিত। শহরের সবাই এই শব্দটি শুনতে পায় না। তবে যারা পায় তাদের কোনো না কোনো শারীরিক সমস্যা হয়। শব্দের উৎস সম্পর্কে কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। কোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রে এই শব্দটি ধারণও করা যায়নি। ব্রিস্টল, অকল্যান্ড, ভ্যাঙ্কুভারেও এ ধরণের শব্দ শোনা গেছে।
সত্য মিথ্যা জানি না, তবে টাইম ট্র্যাভেলের অনেক উদাহরণ পাওয়া যায়। যেমন, ১৯৪১ সালে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় গোল্ড ব্রিজ উদ্বোধনের দিনে তোলা একটি ছবিতে একবিংশ শতাব্দীর মানুষের মত দেখতে একজনকে দেখা যায়। লোকটির গায়ে দেখা যায় একটি আধুনিক টিশার্ট, চোখে আধুনিক সানগ্লাস এবং হাতে একটি আধুনিক ক্যামেরাসদৃশ বস্তু। ১৯৪১ সালে এরকম একটি লোক কীভাবে এল?
ছবি: ১৯৪১ গোল্ড ব্রিজ টাইম ট্রাভেলার।
১৯২৮ সালে চার্লি চ্যাপলিনের একটি সিনেমার প্রিমিয়ারে ধারণ করা একটি ভিডিওতে একজন মহিলাকে কানে সেলফোনসদৃশ একটি বস্তু ধরে কথা বলতে দেখা যায়। ভিডিওটি ইউটিউবে বেশ সাড়া ফেলেছে। কিন্তু এসব রহস্যের কোনো সমাধান হয়নি।
মোবার্লি ও জোর্দেন নামক দুজন শিক্ষিত ফরাসি মহিলা সম্পর্কে প্রচলিত আছে, তাঁরা ১৯০১ সালে একদিন ফ্রান্সের ভার্সাই প্যালেসের একটি ম্যানর পরিদর্শন করছিলেন। সেসময় হঠাৎ করে ম্যানরে অষ্টাদশ শতকে ফ্রেঞ্চ রিভল্যুশনের সময়ে বেঁচে থাকা ফ্রান্সের একজন রাণী ও সমসাময়িক লোকজনের সাথে তাঁদের সরাসরি দেখা হয়ে যায়, যিনি সেই সময়ে ঐ ম্যানরে বাস করতেন।
১৯৫০ সালে নিউ ইয়র্কে একদিন রুডলফ ফেঞ্জ নামক একজন লোক গাড়ি ধাক্কা খেয়ে মারা গেল। দেখা গেল, লোকটির পরনে ১৯ শতকের পোশাক। তদন্তে জানা গেল, রুডলফ ফেঞ্জ নামের একজন লোক সত্যি সত্যি ১৮৭৬ সালে কোনো জানান না দিয়ে হুট করে একদিন গায়েব হয়ে যায়। আর লোকটির কাছে পাওয়া জিনিসপত্র প্রমাণ করে যে সে সরাসরি ১৮৭৬ থেকে ১৯৫০ এ চলে এসেছে। কীভাবে সম্ভব?
আইনস্টাইনের ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি ব্যবহার করে আলোকে বেন্ড করার মাধ্যমে কোনো বস্তুকে অদৃশ্য করে ফেলার ওপর ১৯৪৩ সালে ইউএস নেভী একটি এক্সপেরিমেন্ট চালায়, যা ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্ট বা প্রজেক্ট রেইনবো নামে পরিচিত। এই এক্সপেরিমেন্টের ফলাফল ছিল ভয়াবহ। শোনা যায়, এই এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে ইউএস নেভীর একটি ডেসট্রয়ার শিপকে সত্যি সত্যি সম্পূর্ণ অদৃশ্য করে ফেলা সম্ভব হয়েছিল এবং শিপটি টেলিট্রান্সপোর্ট হয়ে ২০০ মাইল দূরে ভার্জিনিয়ায় চলে গিয়েছিল এবং ১০ সেকেন্ড পরে শিপটি আবার আগের জায়গায় ফিরে আসে আর শিপটি সময়ের থেকে ১০ সেকেন্ড পেছনে চলে যায়।
পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে ইংল্যান্ডে ফসলের মাঠে হঠাৎ করে উদয় হওয়া বিচিত্র সব নকশা বেশ হইচই ফেলে দিয়েছে। জিনিসটাকে বলা হয় ক্রপ সার্কেল। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে ফসল কেটে এ নকশাগুলো তৈরী হয়। কিন্তু কারা এ কাজটা করে, কীভাবে করে, তার কোনো হদিশ আজ অবধি পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার ব্যাখ্যা হিসেবে এলিয়েন তত্ত্ব বেশ জনপ্রিয়। অবশ্য হওয়ার কারণও আছে। নকশাগুলোর বেশিরভাগই জটিল আর দুর্বোধ্য সব গাণিতিক ও জ্যামিতিক প্যাটার্নে আঁকা। আর ফসলের মাঠে নকশাগুলো উদয় হয় সাধারণত এক রাতের মধ্যে। এত অল্প সময়ে মাইলকে মাইল মাঠের ফসল অত্যন্ত নিখুঁতভাবে কেটে এরকম বিশাল নিখুঁত নকশা তৈরি করে ফেলা মানুষের পক্ষে কীভাবে সম্ভব, তার উত্তর পাওয়া যায়নি। ১৯৭০ সালের পর থেকে এই জিনিসটা মিডিয়াতে বেশ সাড়া ফেলে। ১৬৭৮ সালে ইংল্যান্ডে ছাপা একটি বিশেষ বুলেটিনেও এ ধরণের বিচিত্র ক্রপ সার্কেলের রিপোর্ট পাওয়া যায়। বুলেটিনটির শিরোনাম ছিল “মোয়িং ডেভিল”। এ পর্যন্ত পৃথিবীতে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি ক্রপ সার্কেল আবিষ্কৃত হয়েছে।
ছবি: ২০০১ সালে ইংল্যান্ডের মিল্ক হিলে দেখতে পাওয়া একটি ক্রপ সার্কেল। উৎস: উইকিপিডিয়া
ক্যালিফোর্নিয়া ও নেভাডার মাঝে অবস্থিত ডেথ ভ্যালির মুভিং স্টোন বা সেইলিং স্টোন রহস্যের সমাধান আজও হয়নি। ডেথ ভ্যালির উত্তপ্ত মরুভূমিতে নুড়িপাথর থেকে শুরু করে কয়েকশ পাউন্ডের পাথরগুলো সময়ের সাথে সাথে কোনো এক অজানা উপায়ে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে চলে। তবে পাথরের চলাচল আজ পর্যন্ত সরাসরি দেখা যায়নি। মাটিতে রেখে যাওয়া দাগ দেখে পাথরগুলোর চলার পথ বোঝা যায়। বিস্ময়কর এই ঘটনাটি প্রথম নজরে আসে ১৯১৫ সালে। ১৯৪৮ সালে ব্যাপারটা নিয়ে বিশদভাবে গবেষণা শুরু হয়। গবেষণা চালিয়ে বিভিন্ন পাথরের চলার পথের প্যাটার্নের মধ্যে জ্যামিতিক মিল পাওয়া গেছে। কিন্তু প্রচণ্ড ভারী এই পাথরগুলো কীভাবে চলাচল করে? উত্তর অজানা।
ছবি: ডেথ ভ্যালির একটি সেইলিং স্টোন। উৎস: উইকিপিডিয়া
সার্চ ফর এক্সট্রা টেরিস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রজেক্টের আন্ডারে ওহিয়ো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ডিপ স্পেস সিগন্যাল শনাক্ত করার জন্য দ্য বিগ ইয়ার রেডিও টেলিস্কোপ বসানো ছিল। ১৯৭৭ সালের ১৫ আগস্ট অপারেটর জেরি এহম্যান সত্যি সত্যি একটা ডিপ স্পেস সিগন্যাল শনাক্ত করে ফেলেন। হতভম্ব জেরির সামনে জীবন্ত হয়ে উঠলো স্পিকার, রেকর্ডারে সংকেত লিপবদ্ধ হতে লাগলো। ৭২ সেকেন্ড ধরে একটানা সংকেত আসতে থাকল, তারপর স্পিকার নিশ্চুপ হয়ে গেল। কাঁপা কাঁপা হাতে সিগন্যালের প্রিন্টেড কপিটি হাতে নিলেন স্তব্ধ জেরি, তারপর প্রিন্ট আউটের এক কোণায় লাল কালিতে লিখলেন "Wow!" সিগন্যালটি পরিচিতি পেল The Wow! signal নামে। ইউটিউবে সিগন্যালটি শুনেছি, শুনতে গিয়ে আত্মা কেঁপে উঠেছিল। সিগন্যালটি এসেছিল পৃথিবী থেকে ১২০ আলোকবর্ষ দূরের স্যাগিট্টেরিয়াস নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে। কিন্তু কারা পাঠিয়েছিল সিগন্যালটি?
ছবি: ওয়াও! সিগন্যালের প্রিন্টেড কপি। উৎস: উইকিপিডিয়া
১৫৮৬ সালে রোমান সম্রাট দ্বিতীয় রুডলফের কাছে বিচিত্র একটি পাণ্ডুলিপি আসে। অদ্ভুত ও দুর্বোধ্য ভাষায় লেখা পাণ্ডুলিপিটাতে ছিল রঙিন কালিতে আঁকা গাছ, ফুল, লতাপাতার ছবি, গ্রহ-নক্ষত্রের বিচিত্র ছবি, অদ্ভুত রাশিচক্রের ছবি, বিবসনা নারী-পুরুষের ছবি। যে বিষয়টা সবচেয়ে অবাক করে, তা হল, ছবির ঐসব গাছগাছালি পৃথিবীর কোনো গাছের সাথে মেলে না! তাহলে পাণ্ডুলিপিটি এল কোথা থেকে? ১৯১২ সালে উইলফ্রেড ভয়নিখ নতুন করে পাণ্ডুলিপিটি আবিষ্কার করেন। পাণ্ডুলিপিটির নামকরণ করা হয় Voynich manuscript. বর্তমানে এটি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। আজ পর্যন্ত এই রহস্যময় পাণ্ডুলিপির পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পাণ্ডুলিপিটি কোথা থেকে এসেছে, এ বিষয়েও পরিষ্কার কোনো তথ্য খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি।
ছবি: ভয়নিখ ম্যানুস্ক্রিপ্টের পাতা। উৎস: উইকিপিডিয়া
ইংল্যান্ডে ভুতূড়ে রাজপ্রাসাদের অভাব নেই। এর মধ্যে হ্যাম্পটন কোর্ট বেশ বিখ্যাত। এখানে রাজপরিবারের নানা মানুষের প্রেতাত্মা দেখা যায় হরহামেশাই। ২০০৩ সালে একদিন হ্যাম্পটন কোর্ট প্যালেসের একটি এক্সিবিশন হলের কাছে ফায়ার এলার্ম বেজে উঠলো, যার অর্থ একটা ফায়ার ডোর খোলা হয়েছে। সিকিউরিটি গার্ডরা চেক করে দেখলো, প্রত্যেকটি দরজা সিলড, অর্থাৎ খোলা হয়নি। তাহলে অ্যালার্ম কেন বাজলো? এরপর সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে চমকে যাবার মত জিনিস দেখা গেল। একটা ফুটেজে দেখা গেল, দরজা সত্যি সত্যি খুলে গেল, লম্বা কোট পরা ভৌতিক একটা অবয়ব বেরিয়ে গেল, তারপর দরজা আবার বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু দরজাটা সিলড অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।
ছবি: সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পাওয়া সেই ভৌতিক অবয়ব।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় স্যার ভিক্টর গডার্ডের স্কোয়াড্রন ইংল্যান্ডের ডাইডালুস ট্রেনিং ফ্যাসিলিটিতে সার্ভিস দিয়েছিল। যুদ্ধের পর ১৯১৯ সালে স্কোয়াড্রনের একজন সদস্য ফ্রেডি জ্যাকসন দুর্ঘটনাক্রমে এয়ারপ্লেন প্রপেলারের আঘাতে মারা যান। তাঁর মারা যাওয়ার দুই দিন পর তাঁর শেষকৃত্যানুষ্ঠানে পুরো স্কোয়াড্রনের একটি গ্রুপ ফটো তোলা হয়। রহস্যময়ভাবে ছবিটিতে দাঁড়ানো প্রথম সারির বাম থেকে চতুর্থজনের পাশে একটি ভৌতিক মুখচ্ছবি দেখা যায়। স্কোয়াড্রনের সদস্যরা ঐ মুখটিকে পরিষ্কারভাবে ফ্রেডি জ্যাকসনের মুখ হিসেবে চিনতে পারে।
ছবি: ফ্রেডি জ্যাকসনের ভূত!!
১৯৬৪ সালের ২৩ মে ইংল্যান্ডের সলওয়ে ফার্থে ফায়ারম্যান জিম টেম্পলটন তাঁর পাঁচ বছর বয়সী মেয়ের তিনটা ছবি তুললেন। ছবি প্রিন্ট করার পর একটি ছবিতে রহস্যময় একটি জিনিস দেখা যায়। ছবিতে দেখা যায়, মেয়েটার মাথার পেছনে ডান দিকে হেলানো একটা মানুষের অবয়ব। মানুষটা শুন্যে ভাসছে, পরনে স্পেসস্যুট। কিন্তু জিম টেম্পলটন নিশ্চিত ছিলেন যে ছবিটা তোলার সময় আশেপাশে এ ধরণের কোনো মানুষ ছিল না। ঐ অবয়বটা কীভাবে ক্যামেরায় ধরা পড়লো, তা এক রহস্য।
ছবি: সলওয়ে ফার্থ স্পেসম্যান। উৎস: উইকিপিডিয়া
১৯৪৭ সালে ইন্দোনেশিয়ার নিকটে দুটো আমেরিকান জাহাজ এসএস অরাং মেডান নামের একটি জাহাজ থেকে একটি মোর্স কোড মেসেজ পায়, যার অর্থ, “ক্যাপ্টেন সহ সকল অফিসার মরে চার্টরুম আর ব্রিজে পড়ে আছে। সম্ভবত সব ক্রু মারা গেছে।” এরপর কিছু অস্পষ্ট মেসেজ, তারপর শেষ ছোট্ট স্পষ্ট মেসেজ: “আমি মারা যাচ্ছি।” যদি জাহাজটি কারও দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়ে থাকতো, তাহলে এসওএসের ধরণটা এরকম হত না। রেসকিউ টিম অরাং মেডানে পৌঁছে দেখতে পায়, লাশগুলো ভয়ঙ্করভাবে পড়ে রয়েছে, কিন্তু কারও শরীরে কোনো ক্ষতচিহ্ন নেই। এবং সবার হাত সূর্যের দিকে নির্দেশ করছে।
আটলান্টিক মহাসাগরে ১৮৭২ সালের ৫ ডিসেম্বর মেরি সেলেস্তে নামের একটি জাহাজকে সম্পূর্ণ জনমানবহীন অবস্থায় খুঁজে পাওয়া যায়। জাহাজটির আটজন ক্রু আর দুজন যাত্রীর কাউকেই জাহাজের ভেতর পাওয়া যায়নি। জাহাজটিতে একটি লাইফবোট কম ছিল, যার অর্থ জাহাজের সবাই লাইফবোটটিতে করে পালিয়েছে। কিন্তু কেন পালিয়েছে, এ রহস্যের উদঘাটন হয়নি। খারাপ আবহাওয়ার কোনো লক্ষণও ছিল না, জাহাজটিতে অস্বাভাবিক কোনো কিছুর আভাসও পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতেও জাহাজের যাত্রীদের আর কোনো হদিশ পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ওরিগনের ম্যাকমিনভিলে বাস করতেন পল ট্রেন্ট ও তাঁর স্ত্রী ইভিলিন ট্রেন্ট। ১৯৫০ সালের ১১ মে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ইভিলিন তাঁদের ফার্মে কাজ করছিলেন। হঠাৎ তিনি আকাশের উত্তর-পূর্ব দিক থেকে একটা ধাতব চাকতির মত কিছু একটাকে আস্তে আস্তে আসতে দেখলেন। তিনি চিৎকার করে পলকে ডাকলেন। পল দাবি করেন, তিনিও জিনিসটাকে দেখতে পেয়েছিলেন। পল ঘর থেকে ক্যামেরা নিয়ে এসে জিনিসটার ছবি তুলে ফেলেন। ছবিতে একটা গোলাকার চাকতিকে আকাশে ভেসে থাকতে দেখা যায়। পলের বাবা দাবি করেন, জিনিসটা পশ্চিম আকাশে মিলিয়ে যাওয়ার আগে তিনিও জিনিসটাকে দেখতে পেয়েছিলেন।
ছবি: পল ট্রেন্টের তোলা সেই ছবি। উৎস: উইকিপিডিয়া
মানব সভ্যতার ইতিহাস শুধু বিশালই নয়, বরং জটিল, অদ্ভুত এবং রহস্যময়। এসব ব্যাখ্যাতীত রহস্যময় ঘটনাগুলোর কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমি এই লেখায় অল্প কয়েকটি ঘটনা সংক্ষেপে বর্ণনা করে পাঠকদের আগ্রহ জাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলাম। আগ্রহী পাঠকরা চাইলে ইন্টারনেটে গবেষণা চালিয়ে আরও তথ্য জেনে নিতে পারেন। পৃথিবীতে জ্ঞানের যেমন কোনো শেষ নেই, তেমনি রহস্যেরও কোনো শেষ নেই।
[লেখাটি প্রথম প্রকাশ হয় আমাদের স্কুলের রিইউনিয়নের ম্যাগাজিনে। তারিখ: আগস্ট ২০১৪]
©somewhere in net ltd.