নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই -৬১

০৬ ই জুন, ২০১২ রাত ৮:২৯

রবীন্দ্রনাথের নারী চরিত্রগুলোর মধ্যে যেমন আধুনিকার অভাব নেই তেমনি বঞ্চিতের সংখ্যাটাও নিতান্ত কম নয় । আধুনিকা চরিত্ররূপে যেমন শেষের কবিতার কেটি, গোরা’র ললিতা বা অপরিচিতার নায়িকার মতো অগণিত চরিত্র আছে তেমনি বিনোদীনি বা নিরুপমা কিংবা হৈমন্তীর চরিত্রও পাঠকচিত্ত মাত্রই বেদনার উদ্রেক ঘটায় । ব্রাহ্ম সমাজের নারীদের অগ্রগতি তার রচনায় চোখে পড়ার মতো । রবীন্দ্রনাথ যে বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই তার অধিকাংশ চরিত্রের রূপায়ন ঘটিয়েছেন তা তিনি নিজেই বলে গিয়েছেন । সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ যেমন নারীদের অধিকারের কথা বরেছেন তেমনি বাস্তব জীবনেও তিনি এই বিষয়টির প্রতি সব সময় সচেতন ছিলেন । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'নাম্নী' একটি দীর্ঘ কবিতা । এ কবিতায় ১৭ জন নারীর বর্ণনা দিয়েছেন কবি । কাজলী, শামলী, হেয়ালী, খেয়ালী, জয়তী, নন্দিনী, মুরতি, প্রতিমা_এ রকম ১৭ জন নারীর নাম রয়েছে এ কবিতায় । এ ১৭ জন নারীর রয়েছে ১৭ রকম বৈশিষ্ট্য । 'নাম্নী' কবিতায় পাওয়া যায় তাঁদের হতাশা, বেদনা, স্বপ্নের খোঁজ । 'স্ত্রীর পত্র' গল্পে মৃণাল তার স্বামীর কাছে চিঠি লিখেছে, আমি আর তোমাদের সেই সাতাশ-নম্বর মাখন বড়ালের গলিতে ফিরব না । আমি সকল দিকে আপনাকে অত খাটো করতে পারিনে । আমি যেটাকে ভালো বলে বুঝি আর কারও খাতিরে সেটাকে মন্দ বলে মেনে নেওয়া আমার কর্ম নয়_ তুমি তার অনেক প্রমাণ পেয়েছো ।



বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পর উপন্যাস রচনায় রবীন্দ্রনাথ নারীর মনসমীক্ষণে স্বতন্ত্র ধারায় অগ্রসর হন । বঙ্কিমচন্দ্র ও শরৎচন্দ্রের মতো বিধবা চরিত্রের প্রেমচিত্র অঙ্কনে রবীন্দ্রনাথ ধর্মীয় সংস্কার ও প্রেমের দ্বন্দ্ব নির্দেশের পরিবর্তে বিধবা চরিত্রকে সধবার মতো একক হিসেবে তার মানসিক দ্বন্দ্ব নির্দেশের ওপর গুরুত্ব আরোপ করায় বিধবা চরিত্র দেশের পরিবৃত্ত অতিক্রম করে সর্বজনীন নারী রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের ভান্ডার অফুরন্ত । তাঁর ছোটগল্পে নারীর চরিত্র গুলি উঠে এসেছে বিভিন্ন অবয়বে । নারী কখনো আবেগী, প্রতিবাদী, মায়া-ময়ী আবার কখনো বিগলভা । কখনো অন্ত::কষ্টে জর্জরিত । এমনি আরো নানা চেতনা ফুটে উঠেছে রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের মাধ্যমে । শাস্তি গল্পে চন্দরা' এক আত্মত্যাগিনী নারী । তার ভাসুরের ক্রোধের-ফল চন্দরার জা'র মৃত্যু । ভাসুরের হাতে জা' খুন হওয়ার পর, স্বামীর কথা মতো সেই খুনের দায় চন্দরা নিজের কাঁধে নেয় । শুধু-ই স্বামীর কথায়, ভাসুর কে বাঁচাতে । নারীর মুক্তি তার কাজে বিষয়টি খুব স্পষ্ট করে লিখেছেন তিনি 'জাপানযাত্রী' প্রবন্ধে । লোকের কাছে শুনতে পাই, এখানকার পুরুষরা অলস ও আরামপ্রিয়, অন্য দেশের পুরুষের কাজ প্রায় সমস্তই এখানে মেয়েরা করে থাকে । হঠাৎ মনে আসে, এটা বুঝি মেয়েদের উপরে জুলুম করা হয়েছে । কিন্তু, ফলে তো তার উল্টোই দেখতে পাচ্ছি । এই কাজকর্মের হিলেল্গালে মেয়েরা আরো যেন বেশি করে বিকশিত হয়ে উঠেছে । কেবল বাইরে বেরুতে পারাই যে মুক্তি তা নয়, অবাধে কাজ করতে পারা মানুষের পক্ষে তার চেয়ে বড়ো মুক্তি । পরাধীনতাই সব চেয়ে বড়ো বন্ধন নয়, কাজের সংকীর্ণতাই হচ্ছে সবচেয়ে কঠোর খাঁচা ।



রবীন্দ্রনাথ তার সৃষ্টিতে নিজের রুচিবোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন । তাই তার গল্পগুচ্ছের চরিত্রগুলোতে একপ্রকার পুরো ব্রাশের টান টের পাওয়া যায়, যা অনেকটা সুখী, অনেকটা স্বপ্নীল জগতের আলোকচ্ছটাময় । 'ক্ষুধিত পাষাণ' গল্পের যে অদৃশ্য নারী চরিত্র, যে গভীর রাতে জলের চলকে ক্ষুধিত পাষাণের মতো দাঁড়িয়ে বাড়িটির ভীত কাঁপিয়ে দেয়, তার ভেতর থেকেও একটা সৌন্দর্যের আলাকছটা আমাদের শরীরে এসে লাগে । রবীন্দ্রনাথের সৃষ্ট নারী চরিত্রগুলোর মধ্য থেকে সর্বোচ্চ আধুনিক চরিত্র বের করে আনতে চাইলে, তার নাম বোধ হয় হবে লাবণ্য । ভারতবর্ষে যখন সংস্কার কিংবা প্রথার বাইরে যাওয়ার চিন্তা অবান্তর ছিল ,বলা যায় , তখনই নোবেলজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অবলা নারী সবলা চরিত্র একেছেন তার গল্প, কবিতা এবং উপন্যাসেও । নারী স্বাধীনতা বা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে তার লেখনী রীতিমত প্রথা ভাঙ্গার এক অন্যরকম সংগ্রাম । কবিগুরুর তার লেখায় উঠে আসে সাম্যের সমাজ গড়তে নারীর ক্ষমতায়নের কথা । জীবনের শেষ প্রান্তে এসে রবীন্দ্রনাথ নারীমুক্তির বিষয়টি আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করেন । ১৯৩৬ সালের অক্টোবরে রবীন্দ্রনাথ নিখিলবঙ্গ মহিলা কর্মী সম্মেলনে পড়েন তার লেখা 'নারী' প্রবন্ধটি । প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, এ দিকে প্রায় পৃথিবীর সকল দেশেই মেয়েরা আপন ব্যক্তিগত সংসারের গণ্ডি পেরিয়ে আসছে । আধুনিক এসিয়াতেও তার লক্ষণ দেখতে পাই । তার প্রধান কারণ সর্বত্রই সীমানা ভাঙার যুগ এসে পড়েছে ।



রবীন্দ্রনাথের গল্প নারীমুক্তির দরজা খুলেছে । নারীকে সত্যের মুখোমুখী দাড় করিয়েছে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে । তার লেখায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে নারীর প্রতিবাদী রুপ তুলে এনেছেন । স্ত্রীর পত্রে মৃনাল চরিত্রে একেছেন নারীর রাজনৈতিক স্বাধীনতার কথা । যেমনটা এনেছেন, ছোটগল্প সমাপ্তির মৃন্ময়ী, ল্যাবরেটরীর সোহিনী, অথবা শাস্তি উপন্যাসের চন্দরা চরিত্রের মাধ্যমে । ১৮৯৭ সালে ইবসেন তার 'পুতুলের খেলাঘর' নাটকটিতে নায়িকা নোরার মুখ দিয়ে সরলভাবে বলিয়েছেন যে, নারী একজন মানুষ । নোরা ও পশ্চিমের নারীমুক্তিবাদীরা নারীর জন্য চেয়েছে মানুষের অধিকার । কিন্তু বিশ্বকবি হওয়ার আগে প্রাচ্যের তরুণ রবীন্দ্রনাথের লেখায় ১৮৮১ সালে উঠে এসেছে নারীমুক্তির কথা । তিনি বাঙালি নারীকে ঘরে আটকে রাখার অপরাধে অভিযুক্ত করেছিলেন পুরুষদের । 'প্রবাসীর পত্র' গদ্যে তিনি লিখেছিলেন_ 'একজন বুদ্ধি ও হৃদয় বিশিষ্ট মানুষকে জন্তুর মত, এমনকি তার চেয়েও অধম একটা জড়পদার্থের মত সম্পূর্ণরূপে নিজের প্রয়োজনের জিনিস করে তোলা ... এ সকল যদি পাপ না হয় তবে নরহত্যা করাও পাপ নয় ।' নারীর স্বাধীনতার প্রতি এতটাই গভীর চিন্তা ছিল তার ওই বয়সেই । তবে তিনি এও বলেছেন, নারী নারী বলিয়াই শ্রেষ্ঠ ।



“একটি দেশের উন্নয়নের জন্য শিক্ষা এবং নারীর ক্ষমতায়নের কথা রবীন্দ্রনাথ বারবার বলেছেন, বাংলাদেশেও তাই ঘটেছে । ”রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে এ দেশের উন্নয়ন নিয়ে তিনি গর্ব করতেন বলেন মনে করেন বাঙালি এই নোবেলজয়ী । শান্তিনিকেতনের সভায় ভাষণ বক্তৃতার মতো ১৩১৬ মাঘ উৎসবে তিনি এক লিখিত ভাষণে বলেছিলেন, "যে বোধ সকলের চেয়ে বড়ো সেই বিশ্ববোধ- যে লাভ সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ সেই ব্রহ্মলাভ কাল্পনিকতা নয় ।" বলেছেন, "মানুষ নিজেকে যতই ব্যাপ্ত করতে থাকে ততই তার অহংকার এবং বাসনার বন্ধন কেটে যায় । . . . তার যে-সকল হৃদয়বৃত্তি সকলের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে চায় তাকেই উৎসাহ দ্বারা এবং চর্চার দ্বারা কেবল বাড়িয়ে তুলতে হয় । পরিবারবোধের চেয়ে সমাজবোধে, সমাজবোধের চেয়ে স্বদেশবোধে মানুষ একদিকে যতই বড়ো হয় অন্যদিকে ততই তাকে আত্মবিলোপ সাধন করতে হয় । বুদ্ধদেব বসু তাঁর ‘রবীন্দ্রনাথ : বিশ্বকবি ও বাঙালি’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন, রবীন্দ্রনাথ হচ্ছে নদীর স্রোতের মতো । কোথাও আঙুল দিয়ে বলা যাবে না যে, ‘এই হলেন রবীন্দ্রনাথ’। রবীন্দ্রনাথ অতুলনীয় কারণ কোনো একটা একক রচনা দিয়ে তাঁকে চিহ্নিত করা যাবে না, যেমন ফাউস্ট দিয়ে করা যাবে জার্মান কবি গ্যেটেকে, রবীন্দ্রনাথকে বরঞ্চ চিহ্নিত করতে হবে তাঁর ‘ব্যাপ্তি, বৈচিত্র্য ও পরিমাণ’ নিয়ে । আর অমিত চৌধুরী ‘বলাকা’ কবিতার পরিব্রাজনতার ওপর নির্ভর করে রবীন্দ্রনাথের কাব্যভাষা নিয়ে যে তাত্ত্বিক আলোচনা করেছেন, এবং যেভাবে আধুনিক যুগের প্রধান ইংরেজ কবি এলিয়টের রচনার সঙ্গে বারবার সমীকরণ টেনেছেন তাতে রবীন্দ্রনাথকে পশ্চিমা পাঠকের কাছে খুবই খন্ডিতভাবে উপস্থাপন করার মওকা তৈরি হয়েছে ।



রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, যাবার দিনে এই কথাটি বলে যেন যাই -/ যা দেখেছি, যা পেয়েছি, তুলনা তার নাই ।/ এই জ্যোতিসমুদ্র মাঝে যে শতদল পদ্ম রাজে/ তারি মধু পান করেছি, ধন্য আমি তাই ।/ যাবার দিনে এই কথাটি জানিয়ে যেন যাই ।/ বিশ্বরূপের খেলাঘরে কতই গেলেম খেলে,/ অপরূপকে দেখে গেলেম দুটি নয়ন মেলে ।/ পরশ যাঁরে যায় না করা সকল দেহে দিলেন ধরা,/ এইখানে শেষ করেন যদি শেষ করে দিন তাই -/ যাবার বেলা এই কথাটি জানিয়ে যেন যাই ...



( চলবে....)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুন, ২০১২ রাত ৯:০২

সিস্টেম অ্যাডমিন বলেছেন: আপনার ধারাবাহিক পোস্ট গুলির মধ্যে কিছু কিছু পড়েছি । ভাল লেগেছে। আর একটা বিষয় যেটা আপনি আপনার পোস্ট গুলির হেড লাইন করেছেন। সে বিষয় বলতে গেলে বাংলা তথা বিশ্ব সাহিত্যে তাঁর মত প্রতিভা বিরল। সত্যিই রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নেই।

২| ০৬ ই জুন, ২০১২ রাত ৯:১৮

চিকন আলি বলেছেন:

"দুরাশা", "ভারততীর্থে" "শীবাজি উৎসব" পড়ুন..... রবি ঠাকুরকে চিনুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.