নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই- ৮২

১২ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:৪৫

‘সময় হলো খোলা তলোয়ারের মতো, তুমি যদি সময়কে না কাটো, তবে ঠিক যেন সময় তোমাকে কাটবে।’ রবীন্দ্রনাথ সময়কে কেটেছিলেন, আর সময় কেটেছিল কাদম্বরীকে।কাদম্বরী ছিলেন ঠাকুরবাড়ির বাজার সরকার শ্যাম গাঙ্গুলির তিন নম্বর মেয়ে। সেজদাদা সত্যেন্দ্রনাথ আর তাঁর বিলেত-ফেরত স্ত্রী জ্ঞানদানন্দী মনে করতেন কাদম্বরী কখনই জ্যোতিরিন্দ্রের যোগ্য নয়। ঠাকুরবাড়িতে কাদম্বরীর বাবা আত্মীয় হিসেবে কখনোই সম্মান পাননি। সামাজিক লজ্জার ভয়ে একসময় বাবা শ্যাম গাঙ্গুলিকে ঠাকুরবাড়ি থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় গাজীপুরের বাড়িতে। এসবই কাদম্বরীকে দহন করত। ঠাকুরবাড়িতে চিরকালই তাঁকে ‘আদরের উপবাস’ সইতে হয়েছে। কাদম্বরী গান পারতেন, অভিনয় পারতেন, সাহিত্য আর কবিতার দারুণ সমঝদার ছিলেন। ঠাকুরবাড়ির অবহেলা-অপমান থেকে যিনি তাঁকে আগলে রাখতেন, যাঁর প্রেম তাঁর যাপিত জীবনের সব দুঃখ ভুলিয়ে দিত, সেই রবীন্দ্রনাথ যখন বিয়ে করে ফেললেন, তখনই তিনি সত্যিকারের নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন।



রবীন্দ্রনাথের তখন ২৩, কাদম্বরী দেবীর ২৫; ১৮৮৪ সালের ১৯ এপ্রিল আফিম খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন নতুন বউঠান, মারা যান ঠিক দুই দিন পরে। রবীন্দ্রনাথের বিয়ের মাত্র চার মাস পরেই জ্যোতিরিন্দ্রনাথের স্ত্রী, রবির নতুন বউঠানকে কেন আত্মহননের পথ বেছে নিতে হলো?তাঁর শেষ চিকিৎসার জন্য সাহেব ডাক্তার ডি বি স্মিথকে আনা হয়েছিল ৪০০ টাকা খরচ করে, ওষুধ কেনা হয়েছিল ২৫ টাকায়, ডাক্তারকে টাকা দেওয়া হয়েছিল চেকে; সঙ্গে বাঙালি ডাক্তার ছিলেন নীলমাধব হালদার আর সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়; তেতলার ঘরে রাখা হয়েছিল তাঁকে, যে ঘরে কেউ থাকতেন না; অন্ধকার সেই ঘরে দেড় টাকা খরচ করে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল; কিন্তু বাতির আলোয় নিসাড় পড়ে ছিলেন কাদম্বরী, তাঁর শরীর থেকে প্রাণের আলো ক্রমেই চলে যাচ্ছিল। সবার সমবেত প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে ২১ এপ্রিল মারা গেলেন কাদম্বরী। লোপাট করা হলো সব প্রমাণ; কোথাও ছাপা হলো না তাঁর মৃত্যুর খবর।



রবীন্দ্রনাথের দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে কাদম্বরী দেবীর ৫ই জুলাই ১৮৬৮ সালে বিয়ে হয়। তখন কাদম্বরী দেবীর বয়স ৯ বছর। কাদম্বরী দেবীর আসল নাম ছিল মাতঙ্গিনি গঙ্গোপাধ্যায়।রবীন্দ্রনাথ তাঁর বাল্যস্মৃতিতে লিখেছেন যে জ্যোতি দাদা ও বৌঠান চিৎপুরের রাস্তা দিয়ে ঘোড়ায় চড়ে গঙ্গার ধারে ইডেন গার্ডেনে বেড়াতে যেতেন।রবীন্দ্রনাথ তার প্রত্যেকটি কবিতা আগে কাদম্বরি দেবীকে পড়ে শুনাতেন।কাদম্বরি দেবীর একাকিত্ব আর নিঃসঙ্গতা দূর করতে তাকে নিয়ে বাগানে ঘুরে বেড়াতেন।এমনি ভাবে রবীন্দ্রনাথ একদিন বেরিয়েছেন কাদম্বরি কে নিয়ে, এমন সময় আকাশ কেলো করে বৃষ্টি নামলো, দুজনে বৃষ্টিতে ভিজলেন, আর রবীন্দ্রনাথ লিখলেন-

“এসো নীপবনে, ছায়াবীথি তলে

এসো কর স্নান, নবধারা জলে”



জ্যোতিদাদা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন-জ্যোতিদাদা পিয়ানোর উপর হাত চালিয়ে নতুন নতুন ভঙ্গিতে ঝমাঝম সুর তৈরি করে দিতেন আমাকে পাশে রাখতেন,তখনই সেই ছুটে চলা সুরে কথা বসিয়ে বেধেঁ রাখার কাজ ছিলো আমার বৌঠাকুরাণ গা ধুয়ে চুল বেধেঁ তৈরি হয়ে বসতেন আমি ধরতুম চড়া সুরের গান সূর্য-ডোবা আকাশে ছাদে ছড়িয়ে যেত আমার গান।কবির শৈশব ও কৈশোর কেটেছিলো নারী স্নেহ বঞ্চিত হয়ে জীবনটা ছিলো তাঁর অত্যন্ত একঘেয়ে,অতি সাধারণ এবং ছেলে মানুস বলে অবহেলার সে সময় নতুন বৌঠান এলেন ঠাকুর পরিবারে,কবি এই ঘটনা উল্লেখ করেছেন প্রাণের আবেগ মিশিয়ে-দিনগুলো এমনি চলে যায় একটানা,নিজের ঘরে ঢুকতেই ক্লাসের বেঞ্চি,টেবিলগুলো মনে যেন শুকনো কুনুইয়ের গুঁতো মারে।রোজই তাদের একই আড়ষ্ট চেহারা...। এমন সময় একদিন বাড়িতে বাজলো সাঁনাই বারোয়াঁ সুরে বাড়িতে এলো নতুন বউ কচি শ্যামলা হাতে সরু সোনার চুড়ি।পলক ফেলতেই ফাঁক হয়ে গেলো বেড়া,দেখা দিল চেনাশোনার বাহির সীমানা থেকে মায়াবী দেশের নতুন মানুষ।শ্যামা কবিতায় কবি এই নতুন বউ এর কথা উল্লেখ করেছেন এভাবে- উজ্জ্বল শ্যামল বর্ন,গলায় পলার হারখানি

চেয়েছি অবাক মানি তার পানে

বড় বড় কাজল নয়ানে,

অসংকোচে ছিলো চেয়ে

নব কৈশরের মেয়ে।



এই নারীর স্নেহ ও শাসন রবীন্দ্রনাথের যৌবনকে সুন্দর পথে চালিত করেছিলো।‘রবীন্দ্রনাথ কাদম্বরী দেবীকে শ্রদ্ধা করতেন, আবার স্মৃতি ও প্রীতির আসনেও বসিয়েছিলেন।’কবি যে শুধু কাদম্বরী দেবীকে নিয়ে লিখেছেন ঠিক তা নয়। তার মৃত্যুর পর একবার যখন বিদেশে গিয়ে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো নামে এক বিদেশিনীর প্রেমে পড়েছেন রবীন্দ্রনাথ, তিনি তখন ওকাম্পোকে উদ্দেশ্য করে একটি গান রচনা করেছেন_ 'আমি চিনিগো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী/তুমি থাকো সিন্ধু পারে ওগো বিদেশিনী'। ওকাম্পো নামক সেই যুবতীর ভালোবাসার আশ্রয়ে দীর্ঘদিন ছিলেন কবি। কতভাবে যে তিনি বলেছেন প্রেমিকাকে_ 'তোমায় দেখেছি শায়দ প্রাতে, তোমায় দেখেছি মাধবী রাতে/তোমায় দেখেছি হৃদি মাজারে, ওগো বিদেশিনী'। আপন আত্মার অন্তরালে থেকে প্রকৃতির অভ্যন্তরে কান পেতে কবি কেবলই শুনতেন সেই প্রেয়সীর প্রেম গান_ 'আমি আকাশে পাতিয়া শুনিছি, শুনিছি তোমারি গান/আমি তোমারে সঁপেছি প্রাণ ওগো বিদেশিনী'। জগৎ সংসার পরিভ্রমণ করে অজানা নিখিলে দিনের পর দিন অতিবাহিত করে কবি অবশেষে পেঁৗছালেন ওকাম্পোর দোরগোড়ায়। দীন দরিদ্রের মতো আতিথ্য প্রার্থনা করেছেন সেই বিদেশিনীর কাছে_ 'ভুবন ভ্রমিয়া শেষে আমি এসেছি নূতন দেশে/আমি অতিথি তোমারি দ্বারে ওগো বিদেশিনী'।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.