নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
নীতিহীন মানুষ হওয়ার অপেক্ষায় এই আমি...
মিরপুর থেকে শাহবাগ আসছিলাম বাসে করে। কাওরান বাজার বাস সিগনালে দাঁড়িয়ে আছে। আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। হঠাত দেখলাম এক পাগল রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে দুই হাত উপরে তুলে বিক্ষিপ্ত মেজাজে চিৎকার করে বলছে- 'ঢাকা শহরে একটাও মানুষ নেই, সব শুয়োরের বাচ্চা।' বারবার চিৎকার করে এই কথাটাই বলে যাচ্ছে। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে- কথাটা সত্যই বলছে।
সারাদিন নানান কাজে আমাকে বাইরে থাকতে হয়। অজস্র মানুষের সাথে কথা বলে- কাওরান বাজারের ওই পাগলের মতোমারও চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে- 'ঢাকা শহরে একটাও মানুষ নেই, সব শুয়োরের বাচ্চা।' এ সমাজে মায়া-মমতা, ভালোবাসা মানুষের কাছে আশা করা ভুল। সবাই আজ বড় বেশি নিষ্ঠুর হয়ে গেছে। হিংস্র হয়ে গেছে। একজন আরেকজনকে টেক্কা দিয়ে, আঘাত দিয়ে, অপমান করে এগিয়ে যাবার চেষ্টায় সব সময় মশগুল থাকে।
আমার এক বন্ধু রমিজ নাম। একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। খুব সহজ সরল ছেলে। এই ছেলেকে অফিসের লোকেরা চাকরের মতোন খাটায়। খাটতে সে বাধ্য। অন্যথায় তার চাকরী চলে যাবে। চাকরী চলে গেলে তার সংসার চলবে কেমন করে? তাই সে অফিসের সবার ব্যাক্তিগত কাজ করে দেয়। তাকে চাকরের মতোন খাটায়। সে যখন আমার কাছে এসে এইসব মানুষের কর্মকাণ্ডের কথা আমাকে বলে, তখন আমার খুব রাগ হয়- কষ্ট লাগে। কিন্তু আমি রমিজের জন্য কিছুই করতে পারি না। রমিজ তাদের বাজার করে দেয়, তাদের ব্যাংকের কাজ করে দেয়। দিনের পর দিন এইভাবেই চলছে।
এই সমাজে যারা প্রতিনিয়ত ধান্ধাবাজি করে, চামচাগিরি করে এবং দালালি করে- তারাই ভালো থাকে। তারা তিনবেলাই ভালো ভালো খাবার খায়। পনের-বিশ টাকা বাচানোর জন্য অনেকখানি পথ হাটতে হয় না। দুপুরে ভাতের বদলে রাস্তার পাশের চায়ের দোকান থেকে চা বিস্কুট খেতে হয় না। অফিস শেষে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরতে হয় না। বিশ তারিখের পরে সংসার কি করে চলবে তা নিয়ে চিন্তা করতে হয়। ছোট মেয়েটার অসুখ ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। কোনো চিন্তা করতে হয় না। স্কয়ার অথবা ইউনাইটেড হাসপাতাল আছে না।
প্রচুর টাকা থাকলে যা খুশি তাই করা যায়। অন্যায় করা যায়, অবিচার করা যায়। কাজেই এই সমাজে সুন্দরভাবে চলতে হলে, সুন্দরভাবে বাঁচতে হলে নীতিহীন হতে হবে। বদমাশ হতে হবে। শুয়োর হতে হবে। ধান্ধাবাজ হতে হবে। দালালি করতে হবে। সব রকম খারাপ কাজ করলেই ভালো ভাবে থাকা যাবে। ধর্ষণ করে এসে ফেসবুকে নারী আন্দোলন নিয়ে স্ট্যাটাস দিতে হবে। পকেটে ঘুষের টাকা নিয়ে, চিৎকার করে বলতে হবে দুর্নীতি করবেন না। চামচাগিরি করে নিজের অবস্থান মজবুত করতে হবে। তারপর অধীনস্তদের দাপিয়ে বেড়াতে হবে। এই তো নিয়ম। এভাবেই এই সমাজে ভালো থাকা যাবে।
আর এই সমাজের অল্প কিছু ভালো মানুষেরা যতই চেষ্টা করুন কোনো লাভ নেই। তারা কোনো কিছুতেই একফোটা পরিবর্তন করতে পারবে না। নো নেভার। তাদের পরিবর্তন করতে দেয়া হবে না। হাসপাতালের আয়া থেকে একজন ডাক্তার পর্যন্ত তাদের মধ্যে কোনো মায়া-মমতা নেই। সরকারি অফিসের লোকদের মধ্যে কোনো মানবিকতা নেই। সামান্য একটা কাজে গেলেও তাদের মিষ্টি খাওয়ার জন্য টাকা দিতে হবে। ঘরে বাবা-মার ভদ্র ছেলেটি বাইরে কোনো মেয়ে দেখলে বিশ্রীভাবে তাকাবে এবং অবশ্যই বিশ্রী মন্তব্য করবে। দিনের পর দিন তো এইভাবেই চলছে।
মাঝে মাঝে আমার বন্ধু রমিজকে বলতে ইচ্ছে করে- একটু পরিশ্রম করে, একটু বুদ্ধি করে অবৈধ ভাবে প্রচুর টাকা কামাও। তারপর দেখবে সবাই তোমার কাছে এসে হুজুর হুজুর করবে। তোমার জয়গান করবে। সবাই জানবে তুমি অবৈধভাবে কোটি টাকার সম্পদ করেছো কিন্তু কেউ বলতে সাহস পাবে না। বরং দিনের মধ্যে অজস্র বার সালাম পাবে। কাজেই বলা যায়, নীতিহীন মানুষ হলে এ পৃথিবীতে তুমি এক আকাশ আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে। সহজ সরল ভালো মানুষ এই সমাজে একেবারে অচল।
হে প্রভু আমাকে নীতিহীন মানুষ বানিয়ে দাও। দাও। দাও।
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৫২
রাজীব নুর বলেছেন: জ্বী।
২| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪৬
সুমন কর বলেছেন: কথাগুলো শুনতে ও পড়তে খারাপ কিন্তু সত্য !!
সবাই আজ বড় বেশি নিষ্ঠুর হয়ে গেছে। হিংস্র হয়ে গেছে। একজন আরেকজনকে টেক্কা দিয়ে, আঘাত দিয়ে, অপমান করে এগিয়ে যাবার চেষ্টায় সব সময় মশগুল থাকে।
অ.ট.: শেষের ছবিটি কি আপনার?
৩| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৫
হাইপারসনিক বলেছেন: 'ঢাকা শহরে একটাও
মানুষ নেই, সব শুয়োরের বাচ্চা।'
আপনি ,আপনার বন্ধু এবং আমিও এর অর্ন্তভুক্ত হয়ে যাচ্ছি ।বস্তুত এসব হল হতাশা নামক ক্ষতের কারণে হয়ে থাকে ।তাই এর একমাত্র ঔষুধ হল ধৈর্য এবং সৎ হয়ে চলা ।
'ধৈর্য এমন এক বাহন যা কখনো হোচট খায় না ।'
ধন্যবাদ !
৪| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৫১
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: এই ব্যাপারটা ভাববার মতো- সবাই যদি নীতিহীন হয়ে যায়, তবে আর কাউকেই বঞ্চিত হতে হবে না!!!
৫| ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:৫৮
শিবলী আখঞ্জী বলেছেন: আপনার লেখাটি কপি করে আমার ফেইস বুকে দিয়ে দিয়েছি বড় ভাই কোন কার্টেসী দেই নাই।আমি প্রতিদিন একটা পাগলকে এই কথাটা বলতে শুনি,মনির নামে একটা পরিচিত মানুষ আছে যে আপনার বন্ধু রমিজের মত সে আমার কাছে এরকম ভাবে গল্প করে।লেখাটা পড়ে আমিও নীতিহীন হয়ে গেছি তবে লেখা চোরি করে মনে অপরাধবোধ কাজ করতেছে।
তাই জানিয়ে দিলাম, ভাই মাফ করবেন।।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪০
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: পাগলটা ঠিক কথাই বলেছে । শুধু ঢাকা শহর কেন সারা দেশেই একই অবস্থা । ব