নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
১৮৭৬ সালে করাচিতে এক দুষ্ট বালকের জন্ম হয়। এবং ৭৬ বছর বয়সে দীর্ঘদিন যক্ষা রোগে ভূগে- দেশ ভাগের পরের বছর মারা যান। এই দুষ্ট বালকই পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা। নাম তার মুহাম্মদ আলি জিন্না। পাকিস্তানের লোকজন তাকে কায়েদে আযম বা মহান নেতা হিসেবে সম্মান করে। তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করে মাথায় সব সময় টুপি পড়ে থাকতেন, পরে এই টুপি জিন্না টুপি নামে পরিচিতি পায়। পাকিস্তানের জাতির পিতা ‘কায়েদে আযম’ এর প্রতি দেশটির জনগণের রয়েছে অগাধ শ্রদ্ধা। দেশের বিভিন্ন অফিস-আদালত, হাসপাতাল, স্কুল কলেজ সবখানেই পাওয়া যাবে তার ছবি। মুসলিম দেশ হলেও এতে কোন কার্পণ্য রাখেনি পাকিস্তানিরা।
লন্ডন থেকে লেখাপড়া শেষ করে জিন্না সাহেব বোম্বেতে এসে আইনপেশা শুরু করেন। সে সময় সারা বোম্বেতে তিনি একাই ছিলেন- মুসলিম ব্যারিস্টার। তার ভাগ্য ভালো ছিল। ১৯০৭ সালের মধ্যে তিনি একজন দক্ষ আইনজীবি হিসেবে খ্যাতি পেয়ে যান। অনেকেই মনে করেন- খ্যাতি পাওয়ার প্রধান কারণ হলো- নিজের উপর তার ছিল অগাধ বিশ্বাস। একবার ইংলন্ডে আইন পড়াকালীন সময়ে তিনি মনস্থিরও করে ফেলেছিলেন রসকষহীন আইন পাঠ ছেড়ে একটি শেক্সপেরিয়ান নাট্যদলের সাথে যুক্ত হয়ে নাট্যমঞ্চে অভিনয় শুরু করবেন।
মুলত ১৮৯৬ সালে ভারতের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে মুহাম্মদ আলী জিন্নার রাজনৈতিক জীবণ শুরু হয়। তিনি জন্ম দিয়েছিলেন দ্বিজাতি তত্ত্বের, যে তত্ত্ব কেবল ধর্মকে সম্বল করে হাজার মাইলের ব্যবধানে জন্ম দিয়েছিল একটি রাষ্ট্রের। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ নিজের রাজনৈতিক জীবনে কখনোই এক চিন্তাচেতনা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাননি। ব্যক্তি হিসেবে তাঁকে পরিপূর্ণ সফল মানুষ কোনোভাবেই বলা যায় না। তিনি সাংসারিক জীবনে সাফল্যের মুখ দেখেননি। ভালোবেসে বিয়ে করে তিনি তাঁর স্ত্রীকে অবহেলা করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী একপর্যায়ে তাঁর থেকে আলাদা হয়ে যান। রোগে ভুগে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন অপরিণত বয়সে। সেই স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তানও যে বাবার দৃঢ় অনুসারী ছিল—এ কথা জোর দিয়ে বলা যাবে না।
প্রথমবার মাত্র ১৫ বছর বয়সে জিন্নাহ বিয়ে করেছিলেন মায়ের চাপে পড়ে। কনের নাম ছিল এমি বাঈ। পরে ১৯১৮ সালে তিনি নিজের পছন্দে বিয়ে করেছিলেন পার্সি সম্প্রদায়ের মেয়ে রতন বাঈকে। ১৫ বছর বয়সে বিয়ে দেওয়ার ‘ক্ষোভে’ তিনি তাঁর মায়ের সঙ্গেও কোনো সম্পর্ক রাখেননি। মায়ের কনের সঙ্গে তিনি থাকেননি, মৃত্যুর সময়ও তাঁর গর্ভধারিণী মা জিন্নাহকে পাশে পাননি। জিন্নাহ সাহেব অবশ্যই শিয়া মুসলমান ঘরে জন্ম নেন। এবং কোনোদিন কোনো ধর্ম পালন করেননি। তার স্ত্রীও মুসলমান ছিলেন না। তিনি নামাজ পড়তেন না। মদ ও শুয়োরের মাংস নিয়মিত খেতেন। এবং কিন্তু মাথায় থাকত তার প্রিয় টুপি।
জিন্না সাহেবের ছোট বোন ফাতেমা জিন্না- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দন্ত চিকিৎসায় ডিগ্রি লাভ করার পর তিনি তার বড় ভাই মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর সহকর্মী ও উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। ফাতেমা জিন্নাহ ১৯২৩ সালে বোম্বেতে একটি ডেন্টাল ক্লিনিক চালু করেন। আজও পাকিস্তানে তাকে ভাইয়ের সহকর্মী হিসেবে তাকে সম্মান করা হয়। ভাইয়ের মৃত্যুর পর তিনি নিজেকে রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিলেন। ফাতেমা জিন্নাহ তার ভাই মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর উপর একটি অসমাপ্ত জীবনী লিখেছেন। এটি ১৯৮৭ সালে কায়েদে আজম একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়।
১৯৪৭ সালে মুসলমানরা পেয়েছে পাকিস্তান আর হিন্দুরা পেয়েছে ইন্ডিয়া। স্বাধীনতা সহজে পাওয়া যায়, কিন্তু শাসন পরিচালনা করা, গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রবর্তন করার জন্য প্রয়োজন হয় জ্ঞানের এবং এই জ্ঞান সহজ লভ্য নয়। এক একজন মানুষ এক একরকম ভাবে। তবে প্রত্যেকেই, মনে হয়, একটা জায়গায় একই রকম ভাবে। তা হল, দেশভাগ না হলেই ভাল হত। জিন্নাহ যে উপমহাদেশের রাজনীতিতে ক্রমশ প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছেন, তার একটা বড় কারণ তার রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তিটাই ছিল দুর্বল। নিজে ব্যক্তিগতভাবে ছিলেন পাশ্চাত্য শিক্ষিত অসাম্প্রদায়িকমনা মানুষ। কিন্তু ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রদর্শন এবং সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির অনুসারী ছিলেন। জিন্না দক্ষিন এশিয়ার সম্ভবত সব থেকে জটিল রাজনৈতিক চরিত্র।
মানুষকে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাতি, দেশ, জাতীয়তা, লিঙ্গ, ভাষা ইত্যাদি অনেক কিছু দিয়ে বিভাজিত করা যায়। ধুর্ত কিছু মানুষ এই বিভাজন থেকে সবসময়ই ফায়দা লুটার চেষ্টা করে। সময়-সুযোগে পুরুষ-নারী, জমিদার-প্রজা,আসামি-বাঙালি, ইরাকি-কুর্দি সব ধর্মের-দেশের-লিঙ্গের-জাতির-গো্ত্রের-ভাষার একদল মানুষ অপর একদল মানুষের কাছে নির্যাতিত হচ্ছে বা নির্যাতন করছে। এভাবে মানুষকে যতদিন না স্বার্থের কারণে বিভাজন বন্ধ হচ্ছে, যতদিন না আইনে-শাসনে-রাজনীতিতে-অর্থনীতিতে-সামাজিকতায় মানবিক পরিচয়টি প্রাথমিক বিবেচ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত এ ধরনের হানাহানি বন্ধ করা যাবে না।
১৯৪৮এ মহম্মদ আলি জিন্না ঢাকার মাটিতে দাঁড়িয়েই, বাঙ্গালির ভাষা পরিচয় ও সাংস্কৃতিক অভিমানকে কিছুমাত্র গুরুত্ব না দিয়ে ঘোষণা করে দিলেন ‘উর্দু এবং শুধু মাত্র উর্দুই’ হবে পাকিস্তানের একমাত্র সরকারী ভাষা। বলা বাহুল্য ঐদিনই মহম্মদ আলি জিন্না তার সাধের পাকিস্তানের অঙ্গচ্ছেদ ও একটি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখার বীজ পুঁতে দিলেন। তাই ভাষার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছিলো বাঙালিকে। বাংলা ভাষার জন্য ঝরেছিল বুকের তাজা রক্ত। অথচ সেই বাংলা ভাষার বিরুদ্ধাচরণকারী জিন্নাহ’র কবরেই টগবগ করছে বাঙালির প্রাণের ভাষা বাংলা। সেই সব দুঃখ দিনের কথা একটু একটু করে বলা হবে।
(ধারাবাহিক উপন্যাস।)
প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
৩য় পর্ব
২| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২১
শফিক2003 বলেছেন: I have found no reference book . please mention the reference where it is necessary otherwise it will be deformation of our glorious history
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩৭
শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: চালিয়ে যান,