নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
সময় বিকেল তিনটা। স্থান ধানমন্ডি লেকের পাশে। অফিসের নাম- থমাস এডিসন। থমাস এডিসন কোম্পানিটি বিদেশ থেকে নানান জিনিস পত্র বাংলাদেশে আনে আবার বাংলাদেশ থেকে নানান জিনিস পত্র পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দেয়। ইউরোপে তাদের শাখা অফিসও আছে। আর ঢাকা অফিসের'ই তিন অপদার্থ একটা কফি শপে কফি খাচ্ছে। তিন জনের হাতেই একই ব্র্যান্ডের সিগারেট। তারা একটি মেয়েলি সমস্যা নিয়ে খুব আলোচনা করছে। দেড় ঘন্টা পার হয়ে গেছে- কিন্তু তারা এখনও উপসংহারে পৌঁছেতে পারেনি। তাতে সমস্যা কিছু নেই। তাদের অফিস টাইম বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত। তারা অফিস থেকে লাঞ্চ শেষ করে কফি খেতে বের হয়েছে। প্রতিদিনই তারা ফালতু বিষয় নিয়ে লম্বা আলোচনা করেন। গত এক বছরে তারা অফিসকে কি দিয়েছে খুঁজে পাইনি। অফিসের উন্নতি হোক- এমন আলোচনা তাদের কখনও করতে দেখিনি। বেশি ভাগ সময়'ই তারা নারী, জামা কাপড়, আর রাজ্যের যত ফালতু কথা আছে- সেইসব নিয়ে তর্ক-বিতর্ক নিয়ে ব্যস্ত। মেয়েদের মতো- এত কথা কিসের তাদের, ভেবে পাই না।
অফিসের সবচেয়ে বড় পদে যিনি আছেন মানে মুসা সাহেব- তিনি'ই সবচেয়ে বড় অপদার্থ। মূসা সাহেব সম্পর্কে থমাস এডিসন কোম্পানির এমডি'র মামাতো ভাই। এমডি অফিসে না থাকলে তিনি রাজত্ব করেন। তার খুব পাওয়ার। এই পাওয়ার প্রতিটা লোককে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বার বার বুঝিয়ে দেন। মাস শেষে মোটা অংকের টাকা বেতন নেন। সহজ সরল সত্য কথা হলো- এই লোক'টা মূলত নির্বোধ। বস্তুত তার অফিসে কোনো কাজ'ই নেই। এম'ডি সাহেব অফিসে না থাকলে, অন্য দুই বদ'কে নিয়ে দরজা বন্ধ করে সিগারেট খাওয়াই তার প্রধান কাজ। মূসা সাহেব অফিসেরর কাম-কাজ একেবারে কিছুই বুঝেন না। কিন্তু সব কিছুতেই নাক গলাতে থাকেন। অফিসের প্রতিটা লোককে বিরক্ত করেন। সবাই চুল করে সহ্য করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। দুনিয়ায় কত রকম মানুষ, আর কত বিচিত্র চরিত্র। কিছু লোক আছে তোষামোদকারী আবার কিছু লোক আছে চাটুকার। এই দুই শ্রেনীর লোক সাধারনত কাজে ফাকিবাজ।
দ্বিতীয় অপদার্থের নাম- আহমেদ রফিক। তিনি বয়সে অফিসে সবার চেয়ে বয়সে বড়। এবং সবচেয়ে বদ। কিন্তু তার আড়ম্বর খুব বেশি। তার প্রধান কাজ সময় সুযোগ পেলেই দরজা বন্ধ করে থ্রি এক্স ভিডিও দেখা। তার মতো- ৬৭ বছর বয়সের লোক যে অফিসে এই রকম কর্ম করতে পারেন- ভাবাই যায় না। আহমেদ শফিক সাহেব হলেন থমাস এডিসন কোম্পানীর এমডি'র দূর সম্পর্কের আত্মীয়। তিনি অফিসের প্রতিটা লোককে ডেকে যন্ত্রনা দেন। বিশেষ করে মেয়েদের। কিছু দুষ্টলোক সব জায়গায় থাকে। মক্কা- মদীনা বা গুলিস্তান- সদরঘাট। আহমেদ রফিকের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাওয়া উচিত ছিল- সদর ঘাটের সব্জি'র আড়তের বেপারি হওয়া। কিন্তু তিনি বড় পদ নিয়ে বসে আছেন। সুযোগ পেলেই অধীনস্ত কর্মচারীদের অপমান করেন। এই ব্যাপারে তিনি বিশেষ পারদর্শী।
তৃতীয় অপদার্থের নাম- সাদেক উল্লাহ। উনি অফিসে নতুন জয়েন করেছেন। যে কোনো মেয়েদের উপর খুব অল্প সময়ে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েন। নারী সঙ্গ তার খুব প্রিয়। অপ্রয়োজনে অফিসের নারী কর্মীদের তার রুমে ডেকে নিয়ে যান। কথায় কথায় বলেন, আমার রাশি হলো- কন্যা রাশি। এই জন্য'ই সব মেয়েরা আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। সত্য হলো- অফিসে কোনো মেয়েই- তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে না, বরং তিনি'ই ঝাঁপিয়ে পড়েন। অফিসের প্রতিটা মেয়েই তার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকতে চেষ্টা করে। অবশ্য তিনি মেয়েদের নানান কাজের কথা বলে- তার রুমে নিয়ে যান। আজাইরা প্যাচাল পারেন। এই প্যাচালে অফিসের দশ পয়সাও লাভ হয় না। অযথা হাজারটা ফালতু কথা বলে বসিয়ে রাখেন। গত পরশু অফিসে একটা নতুন মেয়ে এসেছে। নাম- মিম। ভদ্র ভালো এবং সহজ সরল। হাসি খুশি, প্রানবন্ত। সাদেক উল্লাহ সাহেব মিমকে অফিসের বাইরে মিটিং এর কথা বলে- বসুন্ধরাতে সিনেমা'তে দেখাতে নিয়ে গেলেন। মিম তো প্রচন্ড অবাক!! মাস শেষে মিম চাকরি ছেড়ে চলে যায়। কথা হলো- এই লোকের বউ আছে, বাচ্চা আছে। ঠিক আছে তোর যখন এত চুলকানি তাহলে তুই তোর বউ কে নিয়ে সিনেমা দেখতে যা।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার- থমাস এডিসন কোম্পানির এম'ডি এই তিন অপদার্থকে খুব'ই পছন্দ করেন। এদের ছাড়া তিনি কোনো মিটিং'ই করেন না। এদের উপর অগাধ আস্থা। এমডি সাহেব কি তাদের চরিত্র সম্পর্কে কিছুই জানেন না? উনি তো অফিসের সব খোঁজ খবর'ই রাখেন। নাকি জেনেও না জানার ভান করছেন? এই তিন ভয়াবহ মিথ্যাবাদীরা এমডি'কে সব সময় মিথ্যা সাত-পাঁচ বলে, ধোঁকা দিয়ে থাকে। কোম্পানী যে দিন দিন অধপতনের দিকে যাচ্ছে- সেদিকে অফিসের সাধারণ কর্মচারীরা খেয়াল করলেও- তিন বলদদের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। তারা সারাদিন এসি রুমে বসে থাকে। একটু পর বাইরে গিয়ে কফি খায়। সিগারেট খায়। দাদাগিরি ভাব দেখায়। সাধারন কর্মচারীদের দৌড়ের উপর রাখে। একটু পর পর পিয়নকে ডেকে নানান আজাইরা হুকুম দেয়।
একটা অফিসে শুধু অপদার্থ'ই থাকে না, কিছু যোগ্য লোকও থাকে। তার জান-প্রান দিয়ে কাজ করেন। কিছু অপদার্থ সব যুগেই সব জায়গায়'ই থাকে। আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যা- অযোগ্য লোক মামা চাচার ক্ষমতায় জোরে বড় বড় পদে আসন পেয়ে- ধরাকে সরাজ্ঞান করছে।
এই তিন অপদার্থ থমাস এডিসন কোম্পানীকে ধীরে ধীরে পথে বসিয়ে দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠিত একটি কোম্পানী চোখের সামনে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। এই করুন ব্যাপারটি কি এমডি'র চোখে পড়ছে না? না, উনার চোখে পড়ছে না। উনি প্রতিষ্ঠানটি আরও বড় করার জন্য দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
এবার একটি কৌতুক-
শিক্ষক –বলতো পদার্থ কাকে বলে?
ছাত্র –জানি না স্যার।
শিক্ষক –অপদার্থ কোথাকার! যার ওজন ও আয়তন আছে তাকেই পদার্থ বলে।
ছাত্র –তাহলে আমাকে অপদার্থ বললেন কেন? আমার তো ওজন আয়তন দুটাই আছে!
(এই গল্পের প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক। কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে, আমি দায়ী নই। )
২| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৪৫
পলাশমিঞা বলেছেন: আসলেই এদেরকে কিচ্ছু করা যায় না।
ওরা সবর্নাশ করেই শান্ত হয়।
৩| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৫৭
কালীদাস বলেছেন: এইটা কি আপনের অফিসের কাহিনীরে অন্য অফিসের কান্ধে ফালায়া লেখলেন নাকি? আমার তো তাই মনে হৈতাছে.....
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:০৮
রাজীব নুর বলেছেন: আমার অফিস ঢাকা শহরের তিনটা ভালো অফিসের একটা। প্রতিটা লোক ভালো, আন্তরিক। সবার সাথে সবার ভালো সম্পর্ক। আমি যদি বিদেশ না যাই তাহলে সারা জীবন এই অফিসেই কাজ করবো।
৪| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:০০
অন্তরালের পথিক বলেছেন: গল্পের চরিত্রগুলোর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো হুবহু না মিললেও গল্পের থিমটা পুরাপুরি আমার অফিসের সাথে মিলে গেল। সব অফিস-ই কি এমন নাকি আমি-ই এমন হতভাগা কোম্পানিতে এসে পড়লাম সেটা খুব জানতে ইচ্ছা করে। ভালো লাগলো লেখাটা।
৫| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৪০
নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: কাল্পনিক হোক আর বাস্তবিক, তবে দেশের প্রতিটি অফিসেই তোষামোদি ও চাটুকারিতা করার মতো লোক অাছে। আর এদের কাজই হচ্ছে অন্যের উপর খবরদারী করা, যদিও নিজের খবর নিজেরাই রাখতে পারে না। বিশেষ করে সরকারি অফিস গুলোতে এইরকম লোকের সংখ্যা একটু বেশিই থাকে। কিন্তু এদেরকে অপদার্থ বলার কোনো জো নেই।
আপনার গল্পতে কৃতজ্ঞতা রইল ভাই। কাল্পনিক চরিত্র হলেও বাস্তবিক গল্প।
৬| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:১২
অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন: অনেক দিন পর আসলাম আর আপনার লেখা পড়ে হাসলাম.।
ভালো আছেন ভাই?
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:৪৪
গেম চেঞ্জার বলেছেন: শেষের কৌতুকটা মোটেই হাসির উদ্রেক করলো না। তবে তিন অপদার্থের ওপর আস্থা রাখা এমডি'র চেয়ে বড় অপদার্থ আর কে হতে পারে সেটাই ভাবছি!!!!!