নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
ছবিঃ আমার তোলা।
রানা জেলের মধ্যে ঢুকেই দেখতে পায়- হলুদ পাঞ্জাবি পরা এক লোক বসে আছে। মাথার চুল এলোমেলো এবং মুখ ভরা দাড়ি। লোকটি জেলখানার ছোট্র জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে, মাঝে মাঝে বিড় বিড় করে যেন কি বলছে।রানা হলুদ পাঞ্জাবি ওয়ালাকে বলল- ভাই জানালা দিয়ে তাকিয়ে কী দেখেন? হলুদ পাঞ্জাবি পরা লোকটি কিছু বলল না,শুধু একবার রানা'র দিয়ে তাকালো। পাঞ্জাবি ওয়ালার চোখ দেখে রানা খুব ভয় পেল।রানা খুব নরম গলায় বলল- ভাই, আপনার নাম কি? হলুদ পাঞ্জাবি পরা লোকটি বলল- আমার নাম হিমু।রানা বলল- বাহ! এটা আবার কেমন নাম আগে শুনি নাই তো।
হিমু রানা নামের লোকটির দিকে তাকালো।
লোকটি চোখে মুখে এক আকাশ ভয় এবং অস্থিরতা।সামান্য শব্দে কেঁপে উঠছে রানা। জেলখানার পরিবেশের সাথে সে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারছে না।একবার সে দাড়াচ্ছে,একবার বসছে। আবার হাটছে।হিমু বলল- চুপ করে বসেন। রানা রেগে গিয়ে কঠিন চোখে বলল-চুপ থাক।হিমু বলল- আমি একজন বিখ্যাত মানুষ, আমার চুপ করে থাকলে চলবে না। আমার অনেক কথা বলতে হবে।আমি তো আপনার মতন কোনোদিন তেলের ব্যাবসা করি নাই। রাজনীতি করি নাই। মুরাদ গং নামের কোনো লোকের চামচামি করি নাই।অসৎ ভাবে টাকা ইনকাম করি নাই।
রানা রেগে গিয়ে বলল- খবরদার, আর একটা কথা বলবি না।
একদম চুপ।চিনিস আমাকে?আমার কিচ্ছু হবে না। কয়েক মাস পর আমি হাজত থেকে ছাড়া পাবো, পাবোই। হঠাৎ করে হিমুর খুব রাগ হলো, যে কাজ হিমু কোনো দিন করেনি- আজ করল। রানার গালে ঠাশ করে একটা চড় বসিয়ে দিল। রানা ছিটকে পড়ল। এইবার হিমু বলল- চিনতে পেরেছো আমাকে? আমি কে? আমি হচ্ছি হিমালয়। বাবা আমাকে আদর করে ডাকে হিমু।রানা উঠে দাঁড়িয়ে বলল- হিমুদা, আমাকে বাঁচান। আপনি ছাড়া আমাকে আর কেউ বাঁচাতে পারবে না। আপনি যা বলবেন- আমি শুনবো। আজ থেকে আপনিই আমার সব। গং বাদ। কোনোদিন আর রাজনীতি করবো না, দরকার হলে না খেয়ে থাকব।
সময় রাত এগারোটা।
রানা বসে আছে হিমুর পায়ের কাছে।সে হিমুর পা টিপে দিচ্ছে।হিমু গভীর ঘুমে। রানা জানে হিমু যদি চায় তাহলে সে জেলখানা থেকে ছাড়া পাবে। আর জেলখানা থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সে বাকি জীবনটা হিমু ভাইজানের সাথে কাটিয়ে দিবে।হিমু ভাই যা বলবে- সে তাই করবে।হিমু ভাই যদি বলে-রানা কান ধরে দাঁড়িয়ে থাক, তাহলে সে তাই-ই করবে। যদি তার হিমু ভাইয়ের সাথে আগে পরিচয় হতো- তাহলে সে কোনো দিনও মুরাদ গং ভাইয়ের সাথে মিশতো না। প্রয়োজনে বাপের তেলের ব্যবসা দেখাশোনা করতো। রানার এখন ইচ্ছা করছে হিমু ভাইকে ডেকে কিছু কথা বলতে। যা বলা খুব দরকার। কেন জানি মনে হচ্ছে- তার হাতে বেশী সময় নেই।
হিমু এখন গভীর ঘুমে- স্বপ্ন দেখছে।
স্বপ্নটা এই রকম- অনেকদিন পর সে হিমির সাথে দেখা করতে গেছে। হিমির বাসায় গিয়ে দেখল হিমি নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হিমি ভীষণ অসুস্থ- স্কয়ার হাসপাতালে ভরতি। হিমু একটা চায়ের দোকানে বসে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ভাবছে- হিমিকে দেখতে স্কয়ার হাসপাতালে যাবে কিনা ।পরপর দুই কাপ চা আর দুইটা বেনসন সিগারেট শেষ করে, হিমু সিদ্দান্ত নিলো সে অবশ্যই যাবে হাসপাতালে। এবং যাওয়ার আগে সে খুব বড় দেখে একটা তরমুজ কিনে নিল। হিমি তরমুজ খুব পছন্দ করে। স্কয়ার হাসপাতালের সিকুরিটি গার্ড কিছুতেই হিমুকে তরমুজ নিয়ে হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করতে দিবে না। ...
হিমুর ঘুম ভাঙ্গে ফযরের আযানের পর।
ঘুম থেকে উঠে দেখে- তার বালিশের পাশে একটা চিঠি এবং রানা মরে পড়ে আছে- তার মুখ থেকে এখনও রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। এই চিঠি কে লিখেছে, এবং চিঠিতে কি লেখা আছে হিমু সব জানে। হিমুদের সব জানতে হয়। কিন্তু আশে পাশের মানুষরা ভাবে হিমুরা বুঝি কিচ্ছু দেখে না, কিচ্ছু বুঝে না। শুধু হন হন করে রোদ বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে বেড়ায়। হিমু এবং রানার গল্প এইখানেই শেষ। তারপরও হয়তো অনেকে জানতে চাইবেন রানা কিভাবে মরলো? এবং চিঠিতে কি লেখা ছিল? উৎসাহী পাঠকদের জন্য শুধু রানার শেষ লেখা চিঠির দুইটা লাইন বলি- হিমু ভাইজান, বিল্ডিংটা ধসে পড়ে যাওয়ার পর এক মিনিটের জন্যও শান্তি পাচ্ছি না।সব গুলো মৃত শ্রমিক সারাক্ষন আমার পাশে ঘুর ঘুর করে। তাদের কারো পা কাঁটা, কারো হাত।হাত পায়ের কাঁটা অংশ থেকে টপ টপ করে রক্ত পড়ছে। তাদের চোখে মুখে এক আকাশ ঘৃ্না ।ওদের কাঁটা হাত গুলো এসে বার বার আমার গলা টিপে ধরছে।
৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:১৯
রাজীব নুর বলেছেন: না।
রানা প্লাজার রানা। যে বিল্ডিং ভেঙ্গে অনেক পোশাক শ্রমিক মারা গেছেন।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ ভোর ৪:২০
অনল চৌধুরী বলেছেন: কোনন রানা? শেখ আবদুল হাকিমের ?