নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
ছবিঃ আমার তোলা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পেছনে দাঁড়িয়ে আছি।
অনেকক্ষন ধরে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে। সময় দুপুর দুইটা। রোদের খুব তাপ। চামড়া জ্বলে যাচ্ছে। আমার গায়ে একটা অফ হোয়াইট শার্ট। কালো প্যান্ট। পায়ে কালো সু। হাতে একটা চামড়ার বেল্টের ঘড়ি। পকেটে মানিব্যাগ নেই। মোবাইলও নেই। তবে শার্টের বুক পকেটে অল্প কিছু টাকা আছে। আমি কে? আমার বাসা কই? আমার নাম কি? কিছুই মনে করতে পারছি না। খুব ব্যাড়া-ছ্যাড়ার মধ্যে পড়ে গেলাম।
কাউকে কি জিজ্ঞেস করবো- ভাই আমি কে?
অথবা আমার বাসাটা কোথায়? গলির ভেতরে পাশাপাশি দুইটা চায়ের দোকান। দুইটা দোকানেই খুব ভীড়। আমি চায়ের দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালাম- চায়ের দোকানের কেউই আমাকে চিনলো না। অর্থ্যাৎ আমার বাসা এই এলাকায় না। বাসা এই এলাকায় হলে চায়ের দোকানদার খাতির করতো।
চায়ের দোকানে বসে চা দিয়ে রুটি খাচ্ছি। চায়ের দোকানের সামনেই একটা হোটেল। হোটেলের নাম দি নিউ আল মদীনা হোটেল। সাইনবোর্ডে একটা মোটা গরু-ছাগল আর মূরগীর ছবি আঁকা। তাদের সামনে প্লেটে নানান ধরনের খাবার সাজানো। গরু-ছাগল আর মূরগী অবাক চোখে খাবারের দিকে তাকিয়ে আছে। যেহেতু আমি হোটেলের নাম পড়তে পেরেছি তার মানে আমি লেখাপড়া জানি। আমি বুদ্ধি দিয়ে আমার নিজের অবস্থানটা বের করতে চেষ্টা করছি। স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলাকে ডাক্তারি ভাষায় কি বলে? ডিমেনশিয়ার?
হাঁটতে হাঁটতে সংসদ ভবনের সামনে চলে এলাম।
একটা সিলভার রঙের গাড়ির ভেতর থেকে একটা মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা সুন্দর। বড় বড় চোখ। সেই চোখে আবার কাজল দেয়া। এই মেয়েটা কি আমার বউ নাকি? বউকে পেলে তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। সে আমাকে ধরে বাসায় নিয়ে যাবে। আদর করে পাশে বসিয়ে ভাত খাওয়াবে। চিকিৎসা করাবে। বড় বড় চোখওলা মেয়েটা চোখ আরো বড় করে বলল- এই সমস্যা কি? এইভাবে রাস্তার মধ্যে অসভ্য লোকদের মতোন তাকিয়ে আছেন কেন? আমি বললাম, স্যরি। আমার ভুল হয়েছে। আসলে হঠাত করে আমি সব ভুলে গেছি। আমার কিছুই মনে পড়ছে না। মেয়েটা এবার তার বড় চোখ ছোট করে বলল- মেয়েদের সাথে লাইন মারার ফন্দি ফিকির তো ভালোই জানেন। যা ভাগ ফাজিল। বদের বদ।
মেয়েটার এমন ব্যবহারে মনটা খারাপ হয়ে গেল।
মেয়েটা কি পারত না আমার হাত ধরে তার গাড়িতে বসাতে। আমার সমস্যাটার সমাধানে সহযোগিতা করতে। দিন-দিন মানুষের মন থেকে মায়া মমতা, ভালোবাসা উঠেই যাচ্ছে। সংসদ ভবনের সামনে অনেকগুলো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। এমন কি হতে পারে না- এখান থেকে সবচেয়ে সুন্দর গাড়িটা আমার। স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলেছি দেখে নিজের গাড়ি চিনতে পারছি না। ড্রাইভার হয়তো গাড়ি রেখে আশে পাশে কোথাও বিড়ি ফুকতে গিয়েছে।
টিভি চ্যানেলে কি একটা বিজ্ঞাপন দিব?
আমি হারিয়ে গেছি এবং নিজেকে চিনতে পারছি না। অতীতের কোনো কথাই আমার মনে নেই। আমার পরিবারের লোকজন যেন আমাকে এসে বাসায় নিয়ে যায়। টিভিতে বিজ্ঞাপন দিতে কত টাকা লাগে কে জানে! সন্ধ্যা হয়ে গেছে। চুপচাপ মন খারাপ করে সংসদ ভবনের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। আকাশের অবস্থা ভালো না। যে কোনো সময় ঝুম বৃষ্টি নামবে। রাস্তার গাড়ি গুলোর যেন খুব তাড়া। শো শো করে রকেটের মতো ছুটছে।
প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে।
ক্ষুধা এমন একটা ব্যাপার- সে কিছু বুঝতে চায় না। সে সব সময় এসে উপস্থিত হয়। এই যে আমি এমন ব্যাড়া-ছ্যাড়া অবস্থায় আছি- এখন ক্ষুধা না লাগলেও তো চলতো। আমার উপর একটু দয়া করতো। যাই হোক, হাটতে হাঁটতে আমি খুব ভালো একটা জায়গায় চলে এলাম। রাস্তার পাশে মজার মজার খাবার বিক্রি করছে। ছেলে-মেয়েরা জোড়ায় জোড়ায় বসে খাচ্ছে। সাইনবোর্ডের দিকে তাকিয়ে জানলাম এ জায়গায় নাম জেনিভা ক্যাম্প। শার্টের পকেটে এখনও কিছু টাকা আছে। সেই টাকা দিয়ে লুচি আর কাবাব খেলাম। খেতে মন্দ নয়।
রাস্তার পাশে একটা দোকানে লেখা 'এখানে খাটি গরুর দুধের চা পাওয়া যায়।' পর-পর খাটি গরুর দুধের দুই কাপ চা খেলাম। যদিও লেখা খাটি গরুর দুধ। আসলে দুই কেজি মিল্কভিটার সাথে পাঁচ কেজি পানি মিশায়। প্রতারনা ছাড়া এই দেশে কোনো ব্যবসা নেই। সে যাই হোক, এখন আমি আমার বাসায় যাব কি করে? আচ্ছা, এমন কি হতে পারে আমি একজন এলিয়েন। অন্য কোনো গ্রহ থেকে কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য আমাকে এখানে পাঠানো হয়েছে।
রাস্তার ল্যাম্পপোষ্টের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
এমন সময় একটা বাচ্চা মেয়ে আমার কাছে এসে বলল- স্যার ফুল নিবেন। বেলী ফুল। খুব সুন্দর সৌরভ! ফুলের চেয়ে মেয়েটির মুখ বেশি সুন্দর লাগছে আমার কাছে। আমার শার্টের পকেটের সব গুলো টাকা মেয়েটাকে দিয়ে দিলাম। মেয়েটা তার সব গুলো ফুলের মালা আমাকে দিয়ে দিল। ইচ্ছে হলো মেয়েটাকে কোলে নিয়ে আদর করে দেই। হঠাত বৃষ্টি শুরু হলো। ঝুম বৃষ্টি। এমন কি হতে পারে না- ফুল বিক্রি করা মেয়েটি আমার মেয়ে। আমি তার বাবা। তার মা গিয়েছে মানুষের বাসায় থালা বাসন মাজতে। স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছি বলে নিজের মেয়েকে চিনতে পারছি না।
রাত ১১ টা।
মন খারাপ করে পান্থপথ সিগন্যালে দাঁড়িয়ে আছি। বৃষ্টিভেজা রাতের রাজপথ দেখতে ভালো লাগছে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। ঠিক এমন সময় একটা বাচ্চা মেয়ে গাড়ি থেকে নেমেই আমাকে বাবা বাবা বলে জড়িয়ে ধরল। একটু পর বাচ্চার মা ছাতা হাতে গাড়ি থেকে নামল। তার চোখ লাল ও ভেজা। মনে হয় বেচারি অনেক কেঁদেছে। জোরে একটা ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে গেল। বাচ্চা মেয়েটির মা'র হাত থেকে ছাতাটা উড়ে গেল। আমরা তিনজনই বৃষ্টিতে ভিজছি। কি মনে করে আমি পকেট থেকে বেলী ফুলের মালা গুলো বের করলাম। আর চারদিক বেলী ফুলের সুবাসে ভরে গেল।
০৩ রা মে, ২০২১ রাত ১০:০২
রাজীব নুর বলেছেন: হ্যা দুই একদিন খুব কষ্ট হবে।
আমাকে কি মন্তব্য করার সুযোগ দেওয়া হবে না? না দিলে না করে দিক। আমি সামু ছেড়ে চলে যাই। প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে।
২| ০৩ রা মে, ২০২১ রাত ১০:২৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
একটু রেষ্ট নেন, এডমিন আপনাকে আজীবনের জন্য আটকায়নি।
০৩ রা মে, ২০২১ রাত ১০:৩২
রাজীব নুর বলেছেন: আমাকে একটা ব্লগের সন্ধান দিন। সেখানে চলে যাবো।
৩| ০৩ রা মে, ২০২১ রাত ১০:৩৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
সামুই শ্রেষ্ঠ ব্লগ, বাকীগুলো মরে গেছে বললেই চলে।
০৩ রা মে, ২০২১ রাত ১০:৩৯
রাজীব নুর বলেছেন: ওকে। থাকলাম।
কিন্তু জেলখানা ভালো লাগে না।
বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে।
৪| ০৩ রা মে, ২০২১ রাত ১১:৩৭
মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন: ব্যাড়া-ছ্যাড়া পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে অসম্ভব সুন্দর একটি লেখা।
০৩ রা মে, ২০২১ রাত ১১:৪৮
রাজীব নুর বলেছেন: একটা লোক হঠাত তাঁর সৃতি হারিয়ে ফেলে। এই হলো মুল বিষয়।
৫| ০৩ রা মে, ২০২১ রাত ১১:৪৭
কামাল১৮ বলেছেন: এমন গল্প লেখার আগে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে আলাপ করে লেখলে ভালো।অথবা কিছু বই পড়ে,আপনার গুরু যেটা করতেন।
০৩ রা মে, ২০২১ রাত ১১:৪৯
রাজীব নুর বলেছেন: বই নাই। কেনার মতো টাকাও নাই। চাপে আছি।
৬| ০৪ ঠা মে, ২০২১ রাত ৩:২৩
কামাল১৮ বলেছেন: স্মৃতি হারিয়ে ফেললে সেকি মনে করতে পারে তার স্মৃতি হারিয়ে গেছে।এমন কিছু প্রশ্ন আছে এই গল্পে,এই জন্য বলা।আমারো জানা নেই।
০৪ ঠা মে, ২০২১ বিকাল ৪:২৩
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি ভালো পয়েন্ট ধরেছেন। আমি দুর্বল লেখক।
৭| ০৪ ঠা মে, ২০২১ সকাল ৮:০২
জটিল ভাই বলেছেন:
০৪ ঠা মে, ২০২১ বিকাল ৪:২৩
রাজীব নুর বলেছেন: উনি ভিজিট কত নেন? তিন হাজার?
৮| ০৪ ঠা মে, ২০২১ দুপুর ১:৩৮
রানার ব্লগ বলেছেন: আহ !! আসলেই সেই দিনকার বৃষ্টিটা জাদুকরি ছিলো।
০৪ ঠা মে, ২০২১ বিকাল ৪:২৪
রাজীব নুর বলেছেন: বৃষ্টি অনেক কিছু ঢেকে দেয়। মানুষের মন শান্ত করে দেয়।
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা মে, ২০২১ রাত ১০:০০
চাঁদগাজী বলেছেন:
ঢাকায় বৃষ্টি হলে বস্তির লোকের অবস্হা খারাপ।