নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার মা

০৯ ই মে, ২০২১ দুপুর ১:৫৮



আমাদের বাসার কাছে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস।
১৯৭১ সালের কথা। ২৫ শে মার্চ রাত। পুলিশ লাইনে চলছে ভয়াবহ গোলাগুলি। কোথাও কোথাও আগুন লেগে গেছে। চারিদিকে কালো ধোঁয়া আর ধোঁয়া। তখন আমার মায়ের বয়স দশ বছর। আমার নানা নানী পাকিস্তানীদের হঠাত আক্রমনে দিশেহারা। মা ছোট মানুষ কিছুই বুঝতে পারছে না। নানা নানী ভয়ে ঘরের আলো বন্ধ করে খাটের নীচে আশ্রয় নিলো। খাটের নীচেই রাতের খাওয়া সারলো। একটি পরিবার সারাটা রাত খাটের নীচে পার করে দিলো। পুরো ৯ মাস যুদ্ধের সময় নানা নানী আর মা ঢাকা শহরে কাটিয়ে দিলো। অনেকে বলেছিলো- গ্রামে চলে যেতে কিন্তু নানা নানী যায় নি।

একবার আমাদের বাসার কাছেই কোথাও আগুন লাগলো।
তখন আমার বয়স তিন বছর। আমার মা আমাকে কোলে করে নিয়ে দৌড়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেলো। আগুন নিভে গেলে মা আমাকে নিয়ে বাসায় আসে। তখন নানী মাকে বললেন, আগুন লাগলো- তুই তোর ছেলে নিয়ে চলে গেলি। বুড়ো বাপ মায়ের কথা একবার ভাবলি না?! মা বলেছিলো, আমার ছেলে আমার কাছে সবার আগে। আরেকটা ঘটনা আমার মনে দারুন ছাপ ফেলেছিলো। সেটা হলো- একবার আব্বা রাগ করে গ্রামে গিয়েছে। ঢাকা ফিরছে না। তখন আমার বয়স দুই বছর। মা আমাকে কোলে নিয়ে বিক্রমপুর রওনা দিলো। তখন বিক্রমপুর যেতে ৬/৭ ঘন্টা সময় লাগতো। যাই হোক, পদ্মা নদী থেকে নামতেই শুধু হলো ঝড়। তুমুল ঝড়। আমার মা আমাকে বুকে জড়িয়ে রেখেছে। সে এক ভয়ানক সময় গিয়েছে।

ঈদ উপলক্ষ্যে মা আমাকে দশ হাজার টাকা দিয়েছে।
আমি বলেছি, টাকা লাগবে না। তবু মা জোর করে দিয়েছে। বলেছে, আমি দিচ্ছি তুমি রাখো। আমি লক্ষ্মী ছেলের মতোন টাকা নিয়ে পকেটে রেখে দিলাম। মায়ের মনে তো কষ্ট দিতে পারি না। এছাড়া মা আমার জন্য গেঞ্জি, জুতো আর শার্ট এনেছে। আমার কন্যা ফাইহা ইদ উপলক্ষ্যে তেরো টা জামা পেয়েছে। প্রতিটা জামা অনেক সুন্দর। আরো তিনটা জামা আসতেছে। আমি দুঃখিত, এই পোষ্টে শুধু মায়ের কথা বলবো। ভুলে আমার কন্যার কথা এসে গেছে। সকালে মায়ের ঘরে গেলাম। মা আমাকে অবাক করে দিয়ে বিরানী খেতে দিলো। সাথে টিকিয়া আর কোকও আছে। দেশী মুরগীর ঝাল ফ্রাইও আছে। আমি তো অবাক। বললাম, ঘটনা কি? মা বলল, এত কথা বলিস না। চুপ করে খা। আমি ইচ্ছা মতো খেলাম। খাবারটা ভালো হয়েছে।

আমার সাথে আব্বার কখনও ঝগড়া হয়নি।
ঝগড়া হয়েছে মার সাথে। কঠিন ঝগড়া। এক বাসায় থাকি অথচ মুখ দেখাদেখি বন্ধ। এদিকে তিন মাস পার হয়ে গেছে। আমার ঘাড় ত্যারা। আমি মার কাছে যাই নি। শেষে মা স্যরি বলেছে। জরিমানা স্বরুপ কিছু টাকা দিয়েছে আমাকে। তখন আমার রাগ কমেছে। থাক, রাগ করে লাভ কি? মা তো। নিজের মা। মা ভুল করলে মাকে তো আর ফেলে দিতে পারি না। আমাদের বাড়িটা ছিলো নানীর নামে। আমার মা সরকারি অফিসে ঘুরে ঘুরে সেই বাড়ি নিজের নামে করেছে। বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিল, টেলিফোন বিল এখন সব মার নামে আসে। মা বলেছে, বাড়ির ঝামেলা যা আছে- আমি সব শেষ করে দিয়েছি। আমি মরে গেলে তোমাদের কোনো বেগ পেতে হবে না। কাগজ পত্র সব গুছানো আছে আলমারিতে।

আমার মার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা ফ্রি।
অথচ সে যায় সরকারী হাসপাতালে। বলে, সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসা অনেক ভালো। মা আমাকে প্রায়ই বলে, তুমি রাতে ঘুমাও না। চলো আমার সাথে ডাক্তারের কাছে। সরকারী হাসপাতালের ডাক্তাররা দেশের সেরা ডাক্তার। সেদিন মা যাবে হাসপাতালে করোনার দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে। অথচ মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে এমন কেউ নেই। সবাই ব্যস্ত। শেষে মাকে আমি নিয়ে গেলাম মুগদা হাসপাতালে। সব মিলিয়ে ৪৫ মিনিট সময় লেগেছে। রিকশা করে বাসায় ফেরার পথে মা বলল, বার্গার আর কোক খাবি? তখন আমার আব্বার কথা মনে পড়লো। আব্বার সাথে বাইরে গেলেই আব্বা বার্গার আর কোক খাওয়াতো। মা আব্বার সাথে কোথাও কোথাও মিল আছে।

আমার মা বাবা দুইজন দুই মেরুর মানুষ।
তারা কোনো দিনই কোনো কিছুতে একমত হতে পারেনি। কিন্তু মার চিন্তা ভাবনা আব্বা মেনে নিয়েছে। আর আব্বার চিন্তা ভাবনা মা বেশির ভাগই মেনে নিতে পারে নি। এভাবেই তারা একসাথে ৩৮ টা বছর পার করে দিয়েছে। আমরা চার ভাই হয়েছি চার রকম। কেউ কারো মতো না। আব্বা মৃত্যুর দুই মাস আগে মাকে বলেছিলো- আমি যদি কিছু ভুল করে থাকি আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমার সময় শেষের দিকে। আমি অন্য সবার কাছেও ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি। মা হাসতে হাসতে বলেছিলো- আমি তোমাকে ক্ষমা করবো না। তখন আমি আব্বার পাশে বসা। আমি বললাম, তোমরা কি নাটক শুরু করেছো? সারাটা জীবন তোমাদের নাটক-সিনেমা দেখতে দেখলে বিরক্ত হয়ে গেছি। এবার থামো।

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:০৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আপনার কোন এক লেখায় পড়ে ছিলাম
আপনার আব্বার সাথে আপনার একটু
দুরত্ব বেড়ে গিয়ে ছিলো। মা'র সাথেও
অনেক দিন কথা বলেন নি !! আশা
করি এখন সব সমস্যার সমাধান হয়েছে!
বাবাকে হারিয়েছেন বাবার অভাব বুঝতে
পারছেন, মা আছেন তার সেবা যত্ন করুন।
আপনারা সবাই খুব ভালো মানুষ। ভালো
মানুষদের আবেগ বেশী। সবাই ভালো
থাকুন। অগ্রীম ঈদের .শুভেচ্ছা।
বিঃদ্রঃ সাবধানে থাকবেন !
করোনার ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে বাংলাদেশে

০৯ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:১১

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ। বাইরে আমি কম যাছি।

২| ০৯ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:১৩

রানার ব্লগ বলেছেন: আপনার মা ভালো থাকুন সুস্থ্য থাকুন এটাই কামনা করি

০৯ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

৩| ০৯ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:১৩

চাঁদগাজী বলেছেন:



মা আপনার টাকশাল, উনি থাকতে থাকতে আপনি কোন কিছু একটা চেষ্টা করেন।

০৯ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:২০

রাজীব নুর বলেছেন: ৫/১০ হাজার দেয়। এর বেশী দেয় না।

৪| ০৯ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:২০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
চাঁদগাজী বলেছেন: মা আপনার টাকশাল, উনি থাকতে থাকতে আপনি কোন কিছু একটা চেষ্টা করেন।

খা্নসাবের মা অনেক বুদ্ধিমতি মহিলা। খানসাবকে এক পয়সাও দেবেন না কোন কাজ করার জন্য।
কারণ তিনি বুঝে গেছেন খানসাবকে দিয়ে কোন ব্যবসা বাণিজ্য হবেনা। তবে একটা চায়ের দোকান
দেবার শখ খানসাবের। যদি তিনি সেট্ করতে চান তা হলে হয়তো দিতেও পারেন। =p~

০৯ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: অন্তর্জামী হয়েছেন?

৫| ০৯ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:৩৩

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: @ নূর মোহাম্মাদ নূরু --- খান সাহেব সহজ মানুষ । চায়ের দোকানও করতে পারবেন না কারণ আমরা সবাই গেলে উনি আমাদেরকে ফ্রি খাওয়াতে খাওয়াতেই দোকান শেষ।

০৯ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: হা হা হা----

৬| ০৯ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:০৭

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: আল্লাহ আপনার মাকে নেক হায়াত দান করুন

০৯ ই মে, ২০২১ বিকাল ৫:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

৭| ০৯ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:৩৫

সিগনেচার নসিব বলেছেন: বাবা-মা দুনিয়ার সবচেয়ে দামী সম্পদ।
আপনার মা’র সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।

০৯ ই মে, ২০২১ বিকাল ৫:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: শুকরিয়া জনাব।

৮| ০৯ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:৪৩

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ম দাবসে মায়ের কথা মনে পড়লো!!!



মা বলেছে, বাড়ির ঝামেলা যা আছে- আমি সব শেষ করে দিয়েছি। আমি মরে গেলে তোমাদের কোনো বেগ পেতে হবে না। কাগজ পত্র সব গুছানো আছে আলমারিতে।

জ্বী, মা-বাবা মারা যাবার পরে তাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি নিজ নামে করা, ভাগাভাগি করা বিশাল এক দিকদারির বিষয়। নিজ স্বার্থে সেই দিকদারি আমরা মেনে নেই। সম্পদ পেয়ে গেলে দিকদারিকে আর দিকদারি মনে হয় না। অথচো অনেক সময় জীবিত বাবা-মা কেই অনেকে দিকদারি মনে করে।

০৯ ই মে, ২০২১ বিকাল ৫:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

৯| ০৯ ই মে, ২০২১ বিকাল ৪:১৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
অসাধারণ একটি গল্প।

০৯ ই মে, ২০২১ রাত ১১:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: জীবনের গল্প। বাস্তব গল্প।

১০| ০৯ ই মে, ২০২১ বিকাল ৫:৪৩

শিস্‌তালি বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন। আপনার মাকে সালাম। বেঁচে থাকুক আরও অনেক বছর।

০৯ ই মে, ২০২১ রাত ১১:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

১১| ০৯ ই মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৯

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
তবে উনার সমর্থন নিয়েই আপনার উচিত কোনো একটি ব্যবসা শুরু করা।

০৯ ই মে, ২০২১ রাত ১১:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: আমি তো কোনো ব্যবসা জানি না।
এর আগে দুবার ব্যবসায় নেমে ধরা খেয়েছি।

১২| ০৯ ই মে, ২০২১ রাত ৯:০৫

কামাল১৮ বলেছেন: নানা নানির গ্রামের বাড়ী কোথায়?আমার নানার বাড়ী মুন্সিগন্জ।

০৯ ই মে, ২০২১ রাত ১১:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: আমার নানা বাড়ি, নানী বাড়ি। দাদা ও দাদী বাড়ি বিক্রমপুর।
নানা বাড়ি লৌহ জং। সিরাজ দিখান।

১৩| ১০ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:১৬

মরুর ধুলি বলেছেন: মা বলেছে, বাড়ির ঝামেলা যা আছে- আমি সব শেষ করে দিয়েছি। আমি মরে গেলে তোমাদের কোনো বেগ পেতে হবে না। কাগজ পত্র সব গুছানো আছে আলমারিতে- সবচেয়ে ভাল লেগেছে এই অংশটা।

১০ ই মে, ২০২১ বিকাল ৫:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: হ্যাঁ মা খুব করিতকর্মা মানুষ। তাঁর ধারনা আমরা এসব কাজ পারবো না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.