নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনের গল্প- ৫৬

১১ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:৫১



ছেলেটার নাম আকমল হোসেন।
হত দরিদ্র একটা ছেলে। বয়স আনুমানিক ২২/২৩ হবে। বিয়ে করেছে। আকমলের স্ত্রী গ্রামে থাকে। আকমল ঢাকা এসেছে কাজের আশায়। এর আগে সে ঢাকা শহরে কখনও আসে নি। ঢাকা শহরে সে কোনো কাজ পায় নি। শেষে একটা চায়ের দোকানে সে চায়ের কাপ ধুয়ে দেয়। বাজার থেকে চিনি, চা পাতা নিয়ে আসে। বিনিময়ে চায়ের দোকানের মালিক তাকে ৫০/১০০ টাকা দেয় প্রতিদিন। চায়ের দোকান বন্ধ থাকলে, সে চায়ের দোকানের সামনে একটা সবজির দোকান আছে। সেই সবজির দোকানে সে সবজি বিক্রেতাকে সবজি বিক্রি করতে সাহায্য করে। বিনিময়ে ৫০ টাকা পায়। আমি যে দোকানে চা খাই, সে দোকানেই আকমল কাজ করে। ছেলেটাকে ছয় মাস ধরে আমি দেখছি। সহজ সরল একটা ছেলে। হাস্যমুখী। আমি মাঝে মাঝে আকমলের সাথে কথা। আকমল ক্লাশ ফাইভ পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। সে বাপ মায়ের একমাত্র সন্তান। তাঁর বাবা মারা গেছে।

একদিন চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছি।
হুট করে শুরু হলো বৃষ্টি। চায়ের দোকানে বেশ ভিড়। দাড়ানোর জায়গা পর্যাপ্ত নেই। আকমল বলল, স্যার আমার বাসায় আসেন। চায়ের দোকানের পেছনেই আমার বাসা। আমি গেলাম আকমলের বাসায়। এটা কোনো বাসা না। ছোট্র একটা রুম। এই রুমকে কলা'র গোডাউন বানানো হয়েছে। যারা রাস্তায় ভ্যান গাড়ীতে করে কলা বিক্রি করে- তারা ৪/৫ জন মিলে এই রুমটা ভাড়া নিয়েছে। এর মধ্যেই আকমল এক কোনায় পাতলা কাঁথা বিছিয়ে শুয়ে থাকে। কলা পাহারা দেয়। তাঁর কোনো টাকা পয়সা লাগে না। সেদিন আকমলের সাথে আমার অনেক কথাবার্তা হয়। আকমল বলল, আমার ব্যবসা করতে মন চায়। আমি বললাম, কি ব্যবসা? আকমল বলল, সবজির ব্যবসা। কাওরানবাজার থেকে ভোরে সবজি কিনে এনে বিক্রি করবো সারাদিন। বেশ ভালো লাভ থাকে। আকমল আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল, আমার বিশ্বাস আমি সবজির ব্যবসায় ভালো করবো। কিন্তু আমার কাছে কোনো টাকা নেই। আমি আকমলকে চার হাজার টাকা দিলাম। সে খুব লজ্জিতভাবে টাকাটা নিলো।

আকমল ব্যবসা শুরু করলো।
কারওয়ান বাজার থেকে প্রতিদিন ভোরে গিয়ে সবজি নিয়ে আসে। একটা ভ্যান ভাড়া নেয় সারাদিনের জন্য ৮০/১০০ টাকা দিয়ে। সেই ভ্যানে সে সারাদিন সবজি বিক্রি করে। এর মধ্যে একটা সবজি মাপার মেশিন কিনেছে ১৬০০ টাকা দিয়ে। তাঁর বিক্রিবাট্রা বেশ ভালো। সে খিলগাও বউ বাজার এলাকায় সবজি বিক্রি করে। এজন্য লাইনম্যানকে ৫০ টাকা দিতে হয়। খিলগাও কাপড়ের দোকানের সামনে সবজি বিক্রি করে সেখানে পুলিশকে ৫০ টাকা দিতে হয়। সারাদিন সবজি বিক্রি করে, সব খরচ বাদ দিয়ে আকমলের ৭০০ থেকে ১০০ হাজার টাকা লাভ থাকে। আকমল খুব খুশি। তাঁর ভাগ্য ভালো তাঁর এক ভ্যান সবজি বিক্রি করতে সারাদিন লাগে না। বিকেলের আগেই সব শেষ হয়ে যায়। বাকি সময়টা সে চায়ের দোকানে দেয়। এগুলো এক বছর আগের কথা। আমার সাথে মাঝে মাঝে রাস্তায় দেখা হয়। সে আমাকে লম্বা করে সালাম দেয়। খুব সম্মান শ্রদ্ধা করে। আকমলের কর্মাকান্ডে আমার খুব অস্বস্তি হয়।

আকমলের বর্তমান পরিস্থিতি-
সে এখন ফ্লাট বাড়িতে একটা ঘর ভাড়া নিয়েছে ৭ হাজার টাকা দিয়ে। গ্রাম থেকে তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে এসেছে। তাঁর ঘরে টিভি আছে। ফ্রিজ আছে। ডিসের লাইন আছে। প্রতিমাসে তাঁর ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা ইনকাম আছে। আকমল ভালো আছে তাঁর পরিবার নিয়ে। তাঁর চিন্তা ভাবনা বদলে গেছে। তাঁর চেহারার মধ্যে একটা সুখী সুখী ভাব চলে এসেছে। সে তাঁর বুদ্ধিমত্তা আর পরিশ্রম দিয়ে অনেক দূর এগিয়েছে গেছে। ভবিষ্যতে আকমলের অবস্থা আরো ভালো হবে- এবিষয়ে আমি নিশ্চিত। আকলম আমাকে অত্যাধিক ভালোবাসে। আমি যে দোকানে চা খেতাম এখন সেই দোকানে যাই না, কারন আকমল চায়ের দোকানদারকে বলেছে রাজীব ভাইয়ের কাছ থেকে চা- সিগারেটের দাম নিবেন না। সত্যি সত্যি চায়ের দোকানদার আমার কাছ থেকে চা-সিগারেটের দাম নেয় না। কিছুতেই নেয় না। আমার খুবই অস্বস্থি লাগে। আমার চা সিগারেটের বিল প্রায় ১০০ টাকার মতোন হয়ে যায়। এখন আমি সেই চায়ের দোকানে যাই না।

আকমল নতুন অত্যাচার শুরু করেছে।
সে প্রায়ই আমার বাসায় নানান রকম সবজি দিয়ে যায়। আমি মানা করলেও আমার মানা সে শুনছে না। এই ৫ কেজি টোমেটো, আলু, লাউ, শসা, বেগুন ইত্যাদি দিয়েই যাছে। আমি আকমলকে বুঝিয়ে বলেছি, আমার এত সবজি লাগে না। তুমি অপচয় করছো। সে আমার কথা শুনে না। সে বলে, আল্লাহর দোহাই লাগে- আমাকে মানা করবেন না। আপনি আমার জীবন বদলে দিয়েছেন। এতটুকু আমাকে করতে দেন। প্লীজ। তা না হলে আমি শান্তি পাবো না। আমি বললাম, তাহলে এই সবজির টাকা তোমাকে নিতে হবে। সে টাকা নিতে নারাজ। গতকাল আকমল বাসায় এসেছে- এক বস্তা সবজি নিয়ে। মা আকমলকে ঈদ বকশিস দিলো। আমি দুটা শার্ট আর একটা লুঙ্গি দিলাম। সুরভি আকমলের স্ত্রীর জন্য একটা শাড়ি দিলো। আমার বড় ভাই আকমলকে ঈদ বকশিস দিলো।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মে, ২০২১ বিকাল ৪:০০

চাঁদগাজী বলেছেন:



অনেকদিন পর, একটি সফলতার জীবন কাহিনী শুনলাম

১১ ই মে, ২০২১ বিকাল ৪:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: সফলতার কাহিনী গুলো আমাদের আনন্দ দেয়। ভালো থাকতে সাহায্য করে।

২| ১১ ই মে, ২০২১ বিকাল ৪:২০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আকমল খিলগাও কাপড়ের দোকানের সামনে সবজি বিক্রি করে সেখানে পুলিশকে ৫০ টাকা দিতে হয়।
সারাদিন সবজি বিক্রি করে, সব খরচ বাদ দিয়ে আকমলের ৭০০ থেকে ১০০ হাজার টাকা লাভ থাকে।

অবিশ্বাস্য ও হাস্যকর !!

১১ ই মে, ২০২১ বিকাল ৪:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: জ্বী সে প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজার টাকার সবজি কিনে। সেখানে থেকে সব খরচ বাদ দিয়ে ৭ থেকে ১ হাজার টাকা লাভ থাকে।

মুরুব্বী নিজের মনের অবিশ্বাস দিয়ে অন্যের বিশ্বাসকে আহত করা ঠিক না।

৩| ১১ ই মে, ২০২১ বিকাল ৪:৪০

বিড়ি বলেছেন: খুব ভালো লাগলো ভাইয়া , আপনি একজন ভালো মানুষ, জীবনে আমাদের অনেক সময় একটু পুশ এর দরকার হয় , একমাত্র ভালো মানুষেরাই সেই সময়টাতে সাহায্য করতে পারে।

১২ ই মে, ২০২১ রাত ৯:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: সবাই সবাইকে সাহায্য করলে আমাদের দেশের চেহারা বদলে যেত।

৪| ১১ ই মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৫

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:


অসাধারণ একটি ভালো কাজ।

১২ ই মে, ২০২১ রাত ৯:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

৫| ১২ ই মে, ২০২১ রাত ৯:২১

ইসিয়াক বলেছেন:

১২ ই মে, ২০২১ রাত ৯:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: ভালোবাসা নিরন্তর।

৬| ১৩ ই মে, ২০২১ সকাল ৭:৪৭

কামাল১৮ বলেছেন: সৎপাত্রে দান।সঠিক লোক চেনাও একটা গুন।আপার গুরু সঠিক লোক চিনতে পারতেন।

১৩ ই মে, ২০২১ দুপুর ১২:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: ইয়েস। ইউ রাইট।

৭| ১৩ ই মে, ২০২১ সকাল ১০:১১

নূর আলম হিরণ বলেছেন: নুরু ভাই কেনো অবিশ্বাস করছেন, সবজি বিক্রি করে ৭০০থেকে ১০০০ টাকা লাভ হতেই পারে।

১৩ ই মে, ২০২১ দুপুর ১২:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: যে বিষয়ে উনার জানাশোনা কম তা উনি বিশ্বাস করতে চান না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.