নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

তাবিজ কবজ

০১ লা জুন, ২০২১ ভোর ৪:২৩



দুর্বলচিত্তের লোকদের একটা অদ্ভুত ব্যাপার যে, তাদের তাবিজ-কবচ যাই দেয়া হোক না কেন তাতেই তারা বেশ সাহসী হয়ে ওঠেন। এবার সেই তাবিজের ভেতর কিছু থাক বা না থাক। কিন্তু কাউকে যদি মানসিকভাবে শক্তিশালী করা যায় তবে অনেক সমস্যাই দূর হয়ে যায়। ধান্ধাবাজরা টাকা নেন না, হাদিয়া নেন। কি চমৎকার সাধুতা! এদের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন যাতে থাকে উদ্দীপক, সুড়সুড়িমূলক নানা ভাষা। আর আমাদের সমাজে তথাকথিত শিক্ষিত কোট টাই পরা ভদ্রলোকরাও সেগুলো দেখে যান উদ্দেশ্য হাসিল করতে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের এই সময় বসবাস করে বিজ্ঞানমনস্ক সমাজের বাসিন্দা হিসেবে এসব অতিপ্রাকৃত ঘটনা বিশ্বাস করা কতটা যুক্তিযুক্ত? আধিভৌতিক চিন্তা-ভাবনা থেকে আমাদের মুক্তি কবে মিলবে?

কবিরাজ মানে আয়ুর্বেদীয় চিকিত্সক, বৈদ্য।
একটি কলস, একটি থালা ও কিছু তৈজসপত্র। বিড়বিড় করে কিছু মন্ত্রপাঠ করে পানি দিয়ে জন্ডিস রোগীর মাথা ধুয়ে দেয়। এভাবে বেশ কয়েকবার মন্ত্রপাঠ করলেই জন্ডিসের জীবাণু নেমে যায় রোগীর শরীর থেকে। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী জন্ডিসের রোগীকে পুরোপুরি বিশ্রামে রাখার নিয়ম। মানুষের অসুখ, ভুতে ধরা, নজর লাগার সমাধান হিসেবে তাদের ওপর ঝাড়ফুক করা হয়। ঝাড়ফুক করতে গিয়ে অসুস্থ মানুষের ওপর অবৈজ্ঞানিকভাবে অত্যাচার চালানো হচ্ছে এমনকি নাকে মুখে লঙ্কার ধোঁয়া দেওয়া হচ্ছে। অলৌকিক চিকিৎসায় রোগ সারানোর চেষ্টা করা বেআইনি।

দেহের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সব বিষয়ের খুঁটিনাটি এখন আমাদের জানা, কোষ এবং তারও ভেতরের উপাদানগুলো কীভাবে কাজ করে, কীভাবে বংশগতি প্রবাহিত হয় এবং কীভাবেই বা সমন্বিত হয় কোষ ও কলার কাজ সমূহ, কোনো সামান্য প্রোটিনের ভুলে বা কোনো ছোট্ট DNA-জনিত ত্রুটিবিচ্যুতির দরুন দেখা দেয় জটিল অনেক রোগ। এসব তথ্য আজ আমাদের হাতের মুঠোয়। একসময়কার ভয়াবহ রোগ বলে বিবেচিত কলেরা, প্লেগ, ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, কুষ্ঠ, গুটিবসন্ত, টিটেনাস ইত্যাদি পরাজিত হয়েছে বিজ্ঞানের কাছে। কলেরা বসন্ত রোগ সম্পর্কে এর পিছনে জিন-ভূত অথবা কোনো অপশক্তি আছে বলে মনে করা হতো এবং এর জন্য ঝাড়ফুক তাবিজ-কবচ ইত্যাদির রমরমা ব্যবসা ছিল। এই অপশক্তি তাড়ানোর জন্য মৌলভী সাহেবরা কাগজে দোয়া দরুদ লিখে দিতেন যা বাড়ির প্রবেশ পথে সুপারি গাছ বা বড় গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখা হতো, উদ্দেশ্য ছিল উক্ত অপশক্তি আর প্রবেশ করবে না। রাত্রিবেলায় উচ্চস্বরে সুরা কেরাত পড়ে কলেরা ও বসন্তের জিন-ভূত তাড়ানো হতো। মানুষ মনে করতো এভাবেই এই অপশক্তি গুলো অন্যত্র চলে যাবে। অথচ হাজার হাজার মানুষ মারা যেত।

একজন তান্ত্রিক মন্ত্রপাঠ করে কারো নামে একটি সুতা কাটবেন অথবা একটি পুতুল মাটিতে পুতবেন এবং ঘোষনা করবেন যে তিনি অমুক ব্যাক্তির আয়ু কমিয়ে দিয়েছেন বা তমুক ব্যাক্তির আত্নাকে জীবিত দেহ থেকে বের করে মাটিতে পুতে দিয়েছেন। আয়ুহীন আত্নাহীন বিশ্বাসি ব্যাক্তিটি ঐ দিন থেকে খারাপ অনুভব করা শুরু করবেন। তাবিজ, মাদুলীতে যারা বিশ্বাসি তাদের জন্যে এগুলো হল মহা ঔষধ। কবিরাজ/সাধুবাবা ঘোষিত ক্যান্সার/এইডস জাতিয় রোগ গুলো সারাতে তাবিজ, মাদুলি, মন্ত্র, ফু দেওয়া পানি, কবিরাজ বাবার হাতের ঝাড়ু, পীর বাবার অলৌকিক হস্ত শরীফ, সাধুবাবার পায়ের অলৌকিক লাথি'ই যথেষ্ট।

আর বিশ্বাস তো গভীর হবেই।
অমুক গ্রামের তমুককে সাপে কেটে ছিল। বিষের যন্ত্রনায় অস্থির। তখন সর্পরাজ বাবা আলিমুদ্দি তাবিজ বেধে দিল। সাথে সাথেই বিষ ও যন্ত্রনা দুটোই নামল। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিকে নিয়ে কেউ কেউ ব্যবসা করে চলেছে। জিন, ভূতের নাম করে পেটানো, ঝাড়ফুঁক, তাবিজ-কবচের নামে ভণ্ডামি আর প্রতারণার শিকার বহুলোক অহরহই হচ্ছে। মৃগী রোগী তো এই সেদিনও বদ জিনের কাজ-কারবার ছিল। সামান্য ভয়ে একটু অসুস্থ হলেই কবিরাজের কাছে যাচ্ছে আর তাকে মোটা টাকা দিয়ে কিনে আনছে তাবিজ-কবচ। খোদ রাজধানী ঢাকাতেই এ রকম প্রথম দর্শন, খানকায়ে পীর ইত্যাদি প্রচুর ব্যবসা জেঁকে বসেছে। এখনো অনেকেই সন্তান লাভের আশায় হুজুরের কাছে যায়। যদিও তাতে সন্তানের চেহারা হুজুরের মতোই হয়।

কেউ কেউ বলে থাকেন কবিরাজের ঝাঁটার বাড়ি খেয়ে, পীরের পানি পড়া খেয়ে জিন চলে গেছে। এরও একটা ব্যাখ্যা আছে। প্রচণ্ড ভয়ে মানুষ যখন হ্যালুসিনেশনে পড়ে যায় তখন তাকে যদি পেটানো অর্থাৎ স্নায়ু উত্তেজিত করা হয় তাহলে তার সেই ভাবটা কেটে যায়, যার পুরো কৃতিত্ব নিয়ে নেয় কবিরাজের ঝাঁটার বাড়ি। প্রাকৃতিক চিকিৎসা অর্থাৎ বস্তু ও তার প্রভাবের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক, যা খুবই স্পষ্ট এমনকি মানুষ সেটা বাস্তবে অনুভব ও উপলব্ধি করতে পারে। দরিদ্র মানুষের অসুখ-বিসুখে তাদের একমাত্র ভরসা গ্রামীণ হাতুড়ে ডাক্তার আর ওঝা-ফকিরের তাবিজ-কবচ, ঝাড়-ফুঁক, পানি ও তেলপড়া। আর এতেই আস্থা রেখে অসুখের সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবন পাড়ি দিতে হচ্ছে তাদের।

ইন্ডিয়ান টিভি চ্যানেলে দেখাচ্ছিলো- এক ধরনের আর্মলেট, লকেট ও ব্রেসলেট বিক্রি করছে। তারা একে সুরা কবজ বলছে। সুরা কবজ মানুষকে অন্য মানুষের নজর লাগা বা কুদৃষ্টি থেকে রক্ষা করবে। একটি আর্মলেট বা ব্রেসলেটের দাম ২৫০০ রুপি। বাস্তব কারণ না খুঁজে যদি তাবিজ কবচের পেছনে ছোটেন তখন সমস্যার সমাধান তো হবেই না, উল্টো টাকা পয়সা খোয়াবেন।

পাথর কারো ভাগ্য বদলায় না।
পাথর কাউকে কোটিপতি লাখপতি বানায় না। তাহলে সমস্ত এস্ট্রলজাররা কোটিপতি হয়ে যেতো। কারণ যার কোটি টাকা সে কেন বসে থাকবে আপনার ফি-র জন্যে। তাবিজ-কবজ গুলো হচ্ছে তথাকথিত পীরদের পয়সা কামাই করার একটা বুদ্ধি। আর এদের সবচেয়ে সহজ শিকার হয় মহিলারা। কোনো বিবাহিতা মহিলাকে যদি অস্থির মনে হয় তাহলে তাকে বললেই হয় যে- আপনার স্বামী কি আপনার দিকে একটু কম নজর দিচ্ছে? মহিলা তখন খুঁজে খুঁজে সাম্প্রতিক সময়ে তার স্বামীর সেই আচরণ গুলোকেই মনে করার চেষ্টা করবে যেখানে তার স্বামীকে তার ব্যাপারে একটু অমনোযোগী মনে হয়েছে। সে তখন এই বাস্তবতার কথা মাথায় রাখবে না যে বিয়ের পরের কয়েক মাস একজন স্বামী তার স্ত্রীকে নিয়ে যেভাবে ব্যস্ত থাকে সারা বছর তো আর তা থাকবে না। আর এরপর ভণ্ড পীর যখন বলবে, আপনার স্বামীর নজর তো মনে হচ্ছে অন্যদিকে। তিনি তখন তার সঞ্চয়ের সবকিছুই ঐ ভণ্ড পীরকে দিয়ে দিতে রাজী থাকবেন তার স্বামীকে ফিরিয়ে আনার আশ্বাসের বিনিময়ে। আর পীর সাহেবও তখন তে-মাথার মাটি লাগবে, চার নদীর পানি লাগবে, জোড়া খাসি লাগবে, পাঠা লাগবে ইত্যাদি নানা অজুহাতে পয়সা হাতাতে শুরু করেন। সঞ্চয় তো বটেই নিজেদের স্বর্ণালঙ্কার পর্যন্ত মহিলারা এভাবে তুলে দেন তাদের হাতে।

রোগ নিরাময়ের বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়াকেই চিকিৎসা বলে।
চিকিৎসা শব্দটার আগে আলাদা ভাবে ‘বৈজ্ঞানিক উপায়ে’ ক্রিয়া-বিশেষণ তাও আবার যত্ন সহকারে যুক্ত করার মানে দাঁড়াচ্ছে যে, বিপরীত অর্থে নিশ্চয়ই অবৈজ্ঞানিক উপায়ে যত্ন ছাড়াও কোন চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। অনেকটা ‘মিষ্ট-রসগোল্লা’র মতো। রসগোল্লা তো মিষ্টিই হয়। যদি ঝাল-রসগোল্লা, টক-রসগোল্লা বা তিতে-রসগোল্লা জাতীয় কিছুর অস্তিত্ব থাকতো, তাহলে যেমন মিষ্ট-রসগোল্লার মাহাত্ম্য বোঝা যেতো, বৈজ্ঞানিক উপায়ে চিকিৎসাও সেরকমই।

তাবিজ কবজ, পানি পড়া, আয়না পড়া করে কেউ কোনদিন কিছু করতে পারে নাই পারবেও না! এইগুলা হল মানসিক ব্যাপার। পারলে কেও তাবিজ কবচ করে আমাকে মেরে ফেলেন বা মারাত্মক অসুস্থ করে ফেলেন, পারলে আমি আপনার সারা জীবনের জন্য গোলাম হয়ে থাকবো!

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুন, ২০২১ সকাল ১০:১৭

রবিন.হুড বলেছেন: সুশিক্ষার অভাবেই মানুষ তাবিজ কবোজে বিশ্বাস করে। মানুষের মনই তার শরীর নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু আজকাল মন নিয়ন্ত্রন হচ্ছে অশিক্ষা, কুশিক্ষা ও কুসংস্কারের প্রতি বিশ্বাস দ্বারা। তাই এই সকল সমস্যা সমাধানে সুশিক্ষা বিস্তারের কোন বিকল্প নেই।

০১ লা জুন, ২০২১ বিকাল ৩:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: সহমত।

২| ০১ লা জুন, ২০২১ সকাল ১০:২৬

আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: খুবি চমৎকার এক বিষয় সুন্দর ফুটে উঠেছে রাজীব দা

০১ লা জুন, ২০২১ বিকাল ৩:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো থাকুন।

৩| ০১ লা জুন, ২০২১ দুপুর ১২:১৫

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: পাথর কারো ভাগ্য বদলায় না।
এতো বড় লেখা পড়া হলো না। শুধু উপরের এই একটি লাইনের কথা বলি।
পাথরে ভাগ্য বদলায়। যে পাথ বিক্রি করে তার ভাগ্য বদলায়।

০১ লা জুন, ২০২১ বিকাল ৩:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: হা হা হা----
অসৎ ভাবে ধনী হওয়ার মুল্য নেই।

৪| ০২ রা জুন, ২০২১ রাত ১০:৩৬

ঢাকার লোক বলেছেন: রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, তাবিজ ঝুলানো শিরক
https://www.youtube.com/watch?v=NNPe5LHDLYc

০৩ রা জুন, ২০২১ রাত ১:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: এযুগের মানুষ এতই খারাপ হয়েছে যে তারা কোরআন হাদীসের কথা জানে। বিশ্বাস করে। কিন্তু কোরআন হাদিসের দেখানো পথে কেউ চলে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.