নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
ছবি: ছবি এঁকেছে আমার কন্যা ফারাজা। ঘরের সব দেয়ালে সে আঁকাআঁকি করেছে। তার অনেক গুলো ছবি আকার খাতা আছে। তবু সে দেয়ালে আকবে। আকুক। আমি কিছু বলি না, সুরভিও কিছু বলে না।
এই লেখাটা লিখেছে হাছান। হাছান একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। হাছান ভালো ছেলে। সহজ সরল। মানবিক ও হৃদয়বান। হাছান একদম জটিলতা কুটিলতা মুক্ত। আধুনিক এবং কুসংস্কার মুক্ত। একদিন সে অনেক বড় হবে। দেশ ও সমাজের জন্য অনেক কিছু করবে, এই বিশ্বাস আমার আছে।
পাগলরা আমাদের জীবনের আয়না।
তাদের দরিদ্র বেশে লুকিয়ে থাকে এক গভীর বোধ আর দার্শনিকতা, যা আমরা কখনো উপলব্ধি করি না। আমাদের জীবনের প্রতিদিনের পথচলায় নানান মানুষের সাথে দেখা হয়—কেউ পরিচিত, কেউ অপরিচিত। কিন্তু এদের মধ্যে কিছু কিছু পাগলের সাথে দেখা হলে কিছু স্মৃতি সহজে ভুলে থাকা যায় না। তাদের ছেঁড়া কাপড়, ময়লা প্যান্ট, এলোমেলো চুল আর অপলক দৃষ্টিতে লেগে থাকা অদ্ভুত শূন্যতা যেন এক রহস্যময় জগতের দরজা খুলে দেয়।
কিছুদিন আগে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ইসিবি চত্বরে একটা পগল দেখলাম।
পাগলটির পরনে বহুদিনের ময়লা পাঞ্জাবি। মাথাভর্তি চুলগুলো জট পাকিয়ে গেছে, যা দেখে মনে হয়, সময়ের ভারে চুলগুলো নিজেই হাল ছেড়ে দিয়েছে। নোংরা ময়লার ভারে বড় বড় নখগুলো নেতিয়ে পড়েছে। গায়ে ময়লা আর ধুলোর স্তর জমে গেছে, যেন সে ঢাকা শহরের সব ধুলোকে আপন করে নিয়েছে। তার পরনে ছেঁড়া প্যান্ট, আর হাতে সিগারেটের একটা অবশিষ্টাংশ। তার পুরো চেহারায় দরিদ্রতার এক বিশাল গল্প যেন লেখা ছিল।
ভার্সিটি যাওয়ার সময় পাগলটিকে আমি প্রতিদিন দেখি।
সে সবসময় শহরের মোড়ে বড় বড় গাছগুলোর নিচে বসে থাকে। কখনো কৃষ্ণচূড়া, কখনো বকুল, কখনোবা শিমুল গাছের নিচে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস—তার বসে থাকা থামে না। মাঝে মাঝেই দেখি আটোশাটো হয়ে শুয়ে থাকতে। কখনো দেখি তার সাড়া শরীর বকুল ফুলে ভরে গেছে, কখনো বা লাল কৃষ্ণচুড়া। এমনকি বকুল গাছ থেকে খসে পড়া শুকনো পাতাগুলো তার গায়ে জমে থাকে, কিন্তু সেই পাতাগুলোর প্রতি কোনো বিরক্তি নেই যেন তার। বরং কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুলগুলো কুড়িয়ে সে এক পাশে জমা করে, যেন সেগুলো তার একমাত্র সঙ্গী। কেন সে ফুল গুলো জমা করে রাখে কে জানে!!? এরপর সে খোলা জায়গায় সে প্রাকৃতিক কাজ সারে, যা দেখলে হয়তো শহরের মানুষ বিরক্ত হয়। কিন্তু সে এটা নিয়ে কোনো ভাবনা করে না, কারো ধার ধারে না। যেন পুরো ঢাকা আমাদের বানানো নিয়মে চলছে, আর পাগলটার জীবন চলছে তার নিজের নিয়মে।
একদিন দেখি পাগলটা নেই।
আগ্রহ নিয়ে বাস থেকে নামলাম। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর তাকে না পেয়ে পাগলটা যেখানে শুয়ে থাকে সেই বড় গাছটার নিচে বসে পড়লাম। তারপর খেয়াল করে দেখলাম একটু দূরে সে প্রাকৃতিক কাজের ডাকে সাড়া দিচ্ছে। কেন জানি আমার সেদিন তাকে খোলা জায়গায় টয়লেট করতে দেখে খুব রাগ হয়েছিল। রাগ নিয়ে দুটো ইটের টুকরো ছুঁড়ে মেরেছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে পাগলটি ক্ষেপে গিয়ে দুই হাত ভরা গু নিয়ে আমাকে তাড়া করেছিল। তখন আমি দৌড়াচ্ছি, পাগলও দৌড়াচ্ছে। সেদিন আমার আত্মসম্মান যায় যায় অবস্থা। এরপর হটাত সে থমকে দাঁড়ালো বকুল গাছটার নিচে! যাক এই যাত্রায় বাঁচা গেল।
পরদিন ভার্সিটি যেতে দেখি পাগলটা একটা চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি গতকালের কথা স্মৃতিচারণ করে ওর দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ হাসলাম। অমনি সে আমার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচিয়ে উল্টো হাসতে শুরু করল। সঙ্গে সঙ্গে বাস থেকে নেমে গিয়ে ধমক দিয়ে বললাম, এই ব্যাটা, হাসছিস কেন? পাগলটা আমার কাছে এসে বলল, "সবাই আমাকে দেখে হাসে, কারণ আমি সবার থেকে আলাদা। আর আমি সবাইকে দেখে হাসি কারণ সবাই এক রকম।"
আমি সেদিন পাগলের কথায় মুগ্ধ হয়ে তাকে এককাপ চা খাওালাম।
চা খেতে খেতে সে এক অদ্ভুত প্রশ্ন করলো, "আপনি কি ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ পড়েছেন?" তার এমন প্রশ্নে চমকে উঠলাম। সাধারণ মানুষ পাগলদেরকে যতই অবজ্ঞা করুক, তাদের কথায় যেন দার্শনিকতার ছোঁয়া থাকে। আমি বললাম, "হ্যাঁ, কপিলা চরিত্রটি আমার ভীষণ প্রিয়।" পাগল স্পষ্ট গলায় বলল, "আমার ভালো লেগেছে হোসেন মিয়া। অনেক রহস্যময় চরিত্র।" তার কথায় মনে হলো, পাগলদের মধ্যে এক অদ্ভুত গভীরতা আছে, যা আমরা সাধারণত দেখিনা। আমার ধারণা, ঢাকা শহরের বেশিরভাগ পাগল ও ভিক্ষুকরা দার্শনিক শ্রেণীর। তারা হয়তো জীবনের মানে আমাদের চেয়ে ভালো বোঝে।
সমাজের চোখে তারা পাগল, কিন্তু তারা হচ্ছে প্রকৃতির সন্তান।
কেননা বেশিরভাগ সময়ে পাগলরা আমাদের চোখে অসহায়, অবহেলিত কিংবা লাঞ্ছিত। তবে প্রকৃতি তাদের প্রতি সদয়। শহরের মানুষ তাদের দিকে তাকায় না, কেউ তাদেরকে পাত্তা দেয় না, কিন্তু গাছের ছায়া আর ঝরে পড়া ফুলগুলো তাদের আশ্রয়। তাদের জীবন সরল, তাদের প্রয়োজন সামান্য! হা হা
সব ভিক্ষুক ও পাগলরা আমাদের সমাজের এক রহস্যময় চরিত্র।
আমরা হয়তো তাদের বাহ্যিক অসহায়ত্ব দেখে তাদেরকে অবজ্ঞা করি, কিন্তু তাদের ভেতরেও এক বিশাল জগৎ লুকিয়ে থাকে। তারা আমাদের মতো ব্যস্ত জীবনের দৌড়ে অংশ নেয় না। তারা শুধু বসে থাকে, পৃথিবীর দিকে চেয়ে থাকে, আর কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুলগুলো কুড়িয়ে জমা করে। হয়তো তারা জানে, জীবনের আসল মানে কী?
১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪
রাজীব নুর বলেছেন: আসলেই খারাপ।
আপনি এই দেশ ছেড়ে গিয়ে ভালো করেছেন।
২| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১৮
কামাল১৮ বলেছেন: পাগলের কথা চিন্তা করতে করতে আপনি আবার পাগল হয়ে না যান।মস্তিস্কের কোন একটা সমস্যার জন্য মানুষ পাগল হয়ে যায়।তারা সঠিক ভাবে চিন্তা করতে পারে না।
১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪
রাজীব নুর বলেছেন: পাগল হতে চাই না।
পাগলের জীবন বড় কষ্টের।
৩| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০০
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
ধন্যবাদ। শুভ কামনা রৈল। ভালো থাকবেন।
৪| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪১
এসো চিন্তা করি বলেছেন: ভাই আপনার কথাটা পড়ে এখন সমাজবিজ্ঞানীর একটা উক্তি মনে পড়লো
কথাটা বলেছেন। আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী রস কথাটা এমন যে
মানুষ যখন পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন হয় তখন তারা পাগল হয়
মানসিক ভাবে অসুস্থ হয় না হলে আত্নহত্যা করে ।
আপনার লেখাটা পড়ে উনার কথার সাথে অনুধাবন করলাম
☺️
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৮
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
বাংলাদেশের মানুষের মানসিক স্বাস্খ্যের অবস্থা খুবই খারাপ।