নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনের গল্প- ৯১

১১ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:১১

ছবিঃ আমার তোলা।

ভদ্রলোকের নাম নোমান।
বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কারাগারে। তার দুই মেয়ে। বড় মেয়ের বয়স ১৩ ও ছোট মেয়ের বয়স তিন বছর এবং স্ত্রী। তার সুখের সংসার ছিলো। এখন তার পরিবারের সবার মন খারাপ। ঘটনা হলো- নোমান সাহেব অফিস থেকে গাড়ি করে বাসায় ফিরছিলেন। সেদিন তার ড্রাইভার ছুটিতে গিয়েছিলো। তাই তিনি নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করছিলেন। নোমান সাহেব গাড়ি ভালো চালান। খুব ঠান্ডা মাথার এবং শান্ত স্বভাবের মানুষ তিনি। সবচেয়ে বড় কথা নোমান ভাইয়ের আল্লাহর উপরে পুরোপুরি আস্থা ভরসা। নোমান ভাই পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। রমজান মাসে রোজা রাখেন। চেষ্টা করেন এই দুষিত শহরে ইসলামের নিয়ম নীতি মতো চলতে। আমি বেশ কয়েকবার নোমান ভাইয়ের সাথে ঢাকার বাইরে গিয়েছি, নোমান ভাই গাড়ি চালিয়েছেন। নোমান ভাই বলেছেন, রাজীব তুমি আরাম করে ঘুমাও। আমি গন্তব্যে পৌঁছে তোমাকে ডেকে তুলবো।

সেদিন অফিস থেকে ফেরার পথে নোমান ভাই একসিডেন্ট করেন।
নোমান ভাইয়ের কিছু হয়নি। কিন্তু নোমান ভাইয়ের গাড়ির ধাক্কায় এক বৃদ্ধ প্রায় গাড়ি চাপা পড়েন। হঠাত করে যে কিভাবে বুড়ো গাড়ির কাছে চলে এলো নোমান সেটা এখনও বুঝতে পারেন না। যাইহোক, নোমান ভাই চেয়েছেন বুড়োকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে। চিকিৎসা করাতে কিন্তু জনতা রাজী হয় নাই। জনগন নোমাই ভাইয়ের গাড়ি ভেঙ্গেছে। এদিকে নোমান ভাই হাপানির রোগী। এছাড়া শারীরিক অনেক সমস্যা আছে। সেদিন জনগন তাকে মেরেই ফেলতো পুলিশ এসে নোমান ভাইকে বাচায়। নোমান ভাইয়ের ভাঙ্গা গাড়ি এখন থানায় আর নোমান ভাই কারাগারে। নোমান ভাইয়ের স্ত্রী জানেন না কিভাবে থানা পুলিশ করতে হয়, কিভাবে উকিল ধরে জামিন নিতে হয়। অনেক লোক ধরাধরি করে একজন উকিল নিয়েছেন। সেই উকিল শুধু টাকা নিচ্ছেন, কিন্তু নোমান ভাইকে থানা থেকে জামিনে বের করতে পারছেন না। উকিল সাহেব শুধু বলেন, ইনশাল্লাহ আগামী সপ্তাহে জামিন হয়ে যাবে।

নোমান ভাইকে আমি চিনি একদম ছোটবেলা থেকে।
গুড বয় বলতে যা বুঝায় নোমান ভাই তাই। দারুন ভালো ছাত্র। প্রচন্ড মেধাবী। ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স মাস্টার্স করেছেন। দরিদ্র পরিবারের ছেলে ছিলেন নোমান ভাই। নিজের তাগিদে লেখাপড়া শেষ করেই একটা ভালো চাকরি পেয়ে যান। নিজের যোগ্যতায় ও দক্ষতায় হুহু করে সামনে এগিয়ে যান। অনেক টাকা সেলারি তার। সৎ পথে গাড়ি করলেন, বাড়ি করলেন। হজ্ব করলেন। এছাড়া তিনি অনেক দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন। যেখানেই যান একা কোথাও যান না। পুরো পরিবার সাথে করেই নিয়ে যান। নোমান ভাইয়ের সাথে আমি থাইল্যান্ড গিয়েছিলাম একবার। জ্ঞানী মানুষ। তার চিন্তা ভাবনা আধুনিক। একজন সহজ সরল হৃদয়বান ও মানবিক মানুষ। দরিদ্র মানুষদের দান-খয়রাত করেন। করোনার সময় চারটা পরিবারকে নগদ অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন। নোমান ভাই জেলে, এদিকে কেউ তার পরিবারের খোজ খবর নেয় নাই। আমি তার বাসায় গিয়েছি, ভাবী শুধু কান্না করেন।

কাশিমপুর কারাগারে গেলেই আসামীদের সাথে দেখা করতে দেয় না ।
অনেক রকম নিয়ম কানুন আছে। এই মামলা কতদিন চলবে কে জানে! জামিন কেন হচ্ছে না সেটাও বুঝতে পারছি না। একজন বললেন, নির্বাচনের আগে ছাড়া পাবে না। সড়ক দূর্ঘটনায় বাংলাদেশের আইন কি বলে? নোমান ভাইয়ের পরিবার পুরো ধার্মিক। আল্লাহওয়ালা পরিবার। কেন আল্লাহ তাদের এই বিপদে ফেললেন? এ কোন পরীক্ষা। নোমান ভাইয়ের স্ত্রী দরিদ্রদের চাল ডাল তেল কিনে দেন। দরিদ্র মানুষ দেখলেই তার সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করেন। নোমান ভাইয়ের মুক্তির জন্য তার স্ত্রী প্রতিদিন রোজা রাখছেন। নামাজ পড়ছেন। দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছেন। নোমান ভাইয়ের বড় মেয়ে তার বাবার জন্য রোজা রাখেছে। নোমান ভাইয়ের স্ত্রীর ধারনা আল্লাহ ছাড়া নোমান ভাইকে কেউ বাচাতে পারবে না। আমি অনুভব করছি এই শহরে বেঁচে থাকার জন্য ক্ষমতার দরকার আছে। টাকা এবং ক্ষমতা না থাকলে কপালে দুঃখ আছে।

গতকাল জানতে পারলাম- নোমান ভাই অনেক অসুস্থ।
তার ইনহেলার সাথে নেই। নিঃশ্বাস নিতে তার অনেক কষ্ট হচ্ছে। জেলের খাবার তিনি খেতে পারছেন না। জেলের পরিবেশ ভয়াবহ রকম নোংরা। জেলের অন্যান্য কয়েদিরা গালি ছাড়া কথাই বলে না। ছোট একটা রুমে অনেকের সাথে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। আমি জানি নোমান ভাই অন্যদের মতো শক্তসামর্থ নয়। তার হার্টে সমস্যা আছে। ফুসফুসে সমস্যা আছে। ভীষন রকমের দুর্বল মানুষ। ভীতু মানুষ। প্রথম দিন কারাগারে গিয়েই নোমান ভাই বমি করেছেন। সেই বমি নিজেকেই পরিস্কার করতে হয়েছে। আমার মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে নোমান ভাইকে হাসপাতালে ভরতি করা উচিৎ। অথচ আমি কিছুই করতে পারছি না। তার পরিবারকেও শ্বান্তনা দিতে পারছি না। মানুষ যখন অসহায় হয়ে পড়ে তখন আল্লাহর হাতে সব কিছু ছেড়ে দিয়ে বসে থাকে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:২৫

এম ডি মুসা বলেছেন: সুন্দর পোস্ট

১৪ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১১ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:৪২

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: দুঃখজনক ঘটনা।

১৪ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: জীবনে মাঝে মাঝে রকম ঘটনাও ঘটে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.