![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে, দাদা দেখেন চোখে কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছেন না।
দাদা অন্ধ হয়ে গেছেন। ডাক্তার বললেন, বাকি জীবনে উনি আর কিচ্ছু দেখতে পাবেন না। কলকাতা নিয়ে যাওয়া হলো, কলকাতার ডাক্তারও একই কথা বললেন। দাদা ছিলেন জমিদার টাইপ মানুষ। দেখতে শুনতে স্মার্ট। লেখাপড়া শেষ করে দাদা কলকাতায় ব্যবসা করতেন। এখন দাদা চোখে দেখেন না। ব্যবসা বন্ধ। সারাদিন বাসায় থাকেন। তার অনেক গুলো ছেলেমেয়ে। দাদা থাকেন বিক্রমপুর। দোতলা কাঠের বাড়ি। সারাদিন দাদা উঠানে বসে থাকেন। তার একমাত্র সঙ্গী তিন ব্যাটারির রেডিও। দেশ বিদেশের সব খবর তার জানা। তার নিয়ম কানুনের বাইরে কেউ যেতে পারতো না। সন্ধ্যার পর বাড়ির দরজায় তিনি তালা মেরে দিতেন।
দাদী দাদাকে অনেক ভালোবাসেন।
দাদাকে ছাড়া দাদী কোথাও যায় না। দুজনে অনেক খাতির। সারাদিন দুজনে পান খান। দাদা অন্ধ হয়ে যাওয়াতে তার ছেলেমেয়েরা কিছুটা স্বাধীন হয়ে গেলো। তবু দাদা চেষ্টা করেন- ছেলেমেয়ে যেন বেলাইনে যেতে না পারে। কঠিন শাসন অব্যহত ছিলো। আমার বাবা সবচেয়ে বড়। দাদা আব্বাকে যেকোনো কিছুতে ডাকে। আলাপ আলোচনা করে। আব্বা আমাকে বছরে দুই তিন বার গ্রামে নিয়ে যেতো। তখন বিক্রমুপুর যেতে অনেক সময় লাগতো। নদীপথে যেতে হতো। অন্ধ দাদার পাশে চুপচাপ বসে থাকতাম। দাদা তার ছোটবেলার গল্প শুনাতেন। গল্প শুনতে আমি সব সময় পছন্দ করি। এখনও মানুষের গল্প শুনি।
দাদাকে নিয়ে পদ্মার পাড় যেতাম বিকেলে।
মাঝে মাঝে নৌকায় করে ঘুরে বেড়াতাম। ভাগ্যকুল বাজারে গিয়ে মিষ্টি খেতাম। দাদার ব্যাক্তিত্ব ছিলো। ব্যাক্তিত্বের কারণে গ্রামের সবাই দাদাকে সম্মান করতো। দাদা কোনোদিন সেলুনে গিয়ে চুল দাড়ি কাটেননি। নাপিত বাসায় এসে দাদার চুল দাড়ি কেটে দিতেন। একবার দাদা ঢাকায় আসেন। আমাদের বাড়িতে উঠেন। তখন আমি ক্লাশ সেভেনে পড়ি। দাদাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াই। একদিন দাদাকে নিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন গেলাম। দাদা বললেন, এখানকার পরিস্থিতি বর্ননা করো। আরেকদিন দাদাকে নিয়ে রমনা পার্কে গেলাম। রমনা পার্কের পরিস্থিতি বলতে গেলাম, দাদা বললেন, বলতে হবে না। আমি অনুভব করতে পারছি। শীতল বাতাস, পাখির গান। অতি মনোরম পরিবেশ।
গ্রামে গেলে দাদীর সাথেও গল্প হতো।
দাদীর জীবন গেছে রান্না করতে করতে। দাদা সাত পদ ছাড়া খেতে বসতেন না। চোখে দেখেন না। তবু তার সাত পদ চাই-ই চাই। কোনো কোনো দিন দুই এক পদ কম হলে তিনি রাগারাগি করতেন। রেডিও এবং টেলিভিশন ভেঙ্গে ফেলতেন। দাদীর রান্না ছাড়া দাদা অন্য কারো রান্না খেতেন না। বিক্রমপুরের মানুষের রান্না ভালো। আমার মা খালা, ফুপু সবার রান্না দারুন। দাদী মাঝে মাঝে আফসোস করে বলতেন, বাপের বাড়ি যেতে পারি না। শরীর খারাপ হলে ডাক্তারের কাছে যেতে পারি না। তোমার দাদা আমাকে কোথাও যেতে দেন না। একবার দাদা দাদী ঢাকায় আমাদের বাসায় আসেন। তখন দাদাকে অনুরোধ করে আমি দাদীকে বাইরে নিয়ে যাই।
দাদী রিকশায় ঘুরতে পছন্দ করতেন।
শেষ বয়সে দাদীর সিগারেটের অভ্যাস হয়ে যায়। ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে লুকিয়ে সিগারেট খেতেন। আমি দাদীকে কার্টূন কার্টুন সিগারেট কিনে দিতাম। একদিন দাদী ছেলেমেয়েদের চোখ আড়াল করে বাথরুমে সিগারেট খেতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে হাত ভেঙ্গে ফেলেন। তখন তার ছেলেমেয়েরা বলল- আপনি যে সিগারেট খান সেটা আমরা জানি। কাজেই লুকিয়ে খেতে হবে না। দাদী ভালো গান জানতেন। রান্না করতেন আর গান গাইতেন। দাদা-দাদীর এগারো জন ছেলেমেয়ে। তেরো জন ছিলো। জন্মের পর-পর দুজন মারা যায়। দাদীর অনেক গহনা ছিলো। সেই সব গহনা চুরী হয়ে যায়।
মৃত্যুর আগে আমি দাদা দাদীর সেবা করেছি।
দাদা খুব বেশি রোগে শোকে ভূগেন নাই। দাদী ভূগেছেন অনেক। উঠে বসার শক্তি নেই। কিছু চিবিয়ে খাওয়ার শক্তি নেই। হাতে ঘা হয়েছে। সেই ঘা পুরো শরীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। দাদীর অনেক কষ্ট। তবু তার দম বন্ধ হয়ে যায় না। কদিন পর-পরই তার নিশ্বাসের টান ওঠে। সবাই ভাবে আজই বুঝি দাদী মারা যাবেন। তার কষ্টের অবসান হবে। কিন্তু না, দাদী মরে না। হাসপাতালে দুদিন থেকে বাসায় ফিরে আসে। অসংখ্য বার আমি দাদীকে কোলে করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছি। দাদা মারা গেলেন। তার চার বছর পর দাদী মারা গেলেন।
২| ২৪ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৪:০১
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- গল্পের শুরুটাকি আগেই পড়েছি কোনো লেখায়?
৩| ২৪ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৬
ফেনিক্স বলেছেন:
আপনি নিষ্ঠার সাথে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন।
৪| ২৪ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৯
মেহবুবা বলেছেন: আপনার দাদীর রান্না নিশ্চয় আপনারও পছন্দের ছিল।
তাদের সেবা করতে পেরেছেন, পরম সৌভাগ্য আপনার।
৫| ২৪ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩২
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আপনার দাদা-দাদী কে মহান আল্লাহতায়ালা জান্নাতবাসী করুন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে মে, ২০২৫ দুপুর ২:৪১
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
কোন দেশের মানুষ যখন চরম দুর্নীতিবাজ হয়ে যায় তখন সেই দেশের নষ্ট মানুষগুলো ধর্মকর্ম বেশী বেশীই করে।
বাংলাদেশ এখন সেই পর্যায়ে আছে।
অফিসের টপ টু বটম - বিগ বস থেকে স্মল পিয়ন পর্যন্ত মুখে দাড়ি মাথায় টুপি আর কপালে কালো দাগ।
কিন্তু চরম ঘুষখোর।
সব চেয়ে বড় কথা এরা বেশরম।
কোন লজ্জা শরম নাই।