নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার দুনিয়ায় আপনি আমন্ত্রিত

রাজন আল মাসুদ

খুঁজে ফিরি স্বপ্নগুলো............

রাজন আল মাসুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হৃদয়ে শাহবাগ

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৪

প্রবাসে থেকে শাহবাগের ছবিগুলো দেখতে, আপডেট গুলো জানার সময় কি এক তীব্র কষ্ট হয় জানেন? এই কষ্টের কোনো নাম আমার জানা নেই। জানব কিভাবে? আগে কখনো যে এইটা উপলব্ধিই করিনি। এই কষ্ট ফ্যামিলির থেকে দুরে থাকার নয়, প্রিয় মানুষের হাত ধরতে না পারার নয়, যেন তার চেয়েও বড় কিছু। নিজেকে মনে হয় চরম বঞ্চিত। এমনকি আমার তো নিজেকে ইদানিং বেঈমানও মনে হয়। আমি কি পারি না এখনি বাংলাদেশে চলে আসতে? উত্তাল সেই জন সমুদ্রে যোগ দিয়ে আরেকটা জল কনা হতে? ইচ্ছা করে ওই হায়েনাদের ফাঁসীর দাবিতে মিছিল করি আমিও, মিশে যাই জনতার কাতারে, অংশ হই ইতিহাসের। প্লেনের টিকেট কাটার পয়সা কি আমার কাছে নেই? আছে। কিন্তু পারি না। দেশে আসার কথা ভাবার সাথে সাথে মনে আসে, দেশে গেলে নেক্সট সেমিস্টার এর টিউশন ফিস দিতে পারব তো? সেমিস্টার মিস হলে আবার আসার সময় ইমিগ্রেশন যদি আটকে দেয়, তখন কি হবে? স্বার্থপর এই আমার আর সাহস হয়না। ভাবি নিজের জীবন গড়তে কি বেঈমানি করছি দেশের সাথে? হয়ত.....আমি '৭১ দেখতে পারিনি, ২০১৩ তেও থাকতে পারলাম না। এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে? চেয়ে চেয়ে দেখি ফেসবুকের পেজ গুলোর প্রতিমূহুর্তের আপডেট। ক্লাসের সময় অথবা কাজের সময়, মনটা পরে থাকে শাহবাগে। আশায় থাকি কখন ব্লগে কেউ বিস্তারিত লেখবে। সেই আশাও পূরণ হয় না। সবাই এখন শাহবাগে প্রতিবাদে সোচ্চার। অনলাইনে বিস্তারিত ঘটনার বিবরণ কম। অবশ্য এখন অনলাইন এর চেয়ে মাঠে থাকাই জরুরি। যখন দেখি শাহবাগের জনসমুদ্র ধীরে ধীরে আকৃতি নিয়েছে স্মৃতি সৌধের, শরীরের রক্ত তখন ঝন-ঝনিয়ে উঠে। ছাগু পেজের হাজার হাজার লাইক দেখে মনটা সবসময়ই খারাপ হত। আজকে বুকটা ফুলে যায় গর্বে যখন দেখি আমার ভাই বোনেরা ফেসবুকে না রাস্তায় একসাথে হয়েছে লাখে লাখে :)। একটু পরেই আবার গ্রাস করে তীব্র হতাশা। পারলাম না ওখানে থাকতে। এখানকার বন্ধু-বান্ধবদের মন খারাপ চেহারা দেখে বুঝি এই মুহুর্তে দেশে থাকার কি তীব্র আকাংখা ওদেরও। কিন্তু বিধি বাম। একই পরিস্থিতেতে যে ওরাও। গোদের উপর বিষ-ফোড়ার মত আছে প্রবাসী ছাগুদের ম্যাতকার। কি যে অসহ্য.....আর আজব ব্যাপার এদের সংখ্যাও অনেক। ইউনিটিও এদেরই বেশি। এক ছাগুর সাথে তর্ক লাগলে কোথা থেকে সাপোর্টে আরো দুই-তিন জন এসে হাজির হয়। এদের যা ইচ্ছা করে তা করতে পারিনা। কোনো যুক্তি এদের মাথায় ঢুকে না। এদের মাথায়, জিহ্বার আগায় শুধু এদের জামাতি বাবাদের নাম। হাসি পায় যখন দেখি প্রায় নিয়মিত কুইন্সের চাইনিজ বডি ম্যাসেজ পার্লারে ম্যাসেজ নিতে যাওয়া পাবলিক শাহবাগের গাজাখোর, বেশ্যা, নাস্তিকদের হাত থেকে ইসলাম বাচানোর জন্য ফ্যানাটিক হয়ে উঠে। অবাক হই সেই ছেলেকে দেখে যে ক্লাসের মেয়েদের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি দিতে ছাড়ে না কিন্তু ফেসবুকের ওয়াল ভরিয়ে ফেলে ইসলামিক পোস্ট আর বাঁশের কেল্লা পেজের আপডেট দিয়ে। তাকে দেখলে মনে হয় ইসলাম রক্ষায় জান দিয়ে দিতেছে। এরা তো পারভার্ট, কিন্তু সবচেয়ে বেশি অবাক হই ঐসব মানুষদের দেখলে যারা সকালে প্ল্যান করে শাহবাগের সাথে একাত্বতা জানানোর, বিকালে যায় শিবির কর্মীর বাসায় ঝাল মুড়ি পার্টি করতে। যখন আমি তর্ক করি ঐসব শিবির কর্মীদের প্রপাগান্ডার বিরুদ্ধে তারা একটি কথাও বলে না রিলেশন নষ্ট হবে বলে। যখন আমার উপর অপবাদ আসে কম্যুনিটির ঐক্য নষ্ট করার তখন তারা শুনেও না শোনার ভান করে। যখন ওই জামাত শিবিরের ফেসবুক ওয়াল ভরে যায় দেশের বিরুদ্ধ কথায়, শাহবাগের প্রতি চরম অপমানজনক সব পোস্টে, তাদের কি-বোর্ড তখন চলে না। যদিও ঝাল-মুড়ি পার্টির ছবিতে লম্বা কমেন্ট দিতে তাদের হাতে আসুরিক শক্তি ভর করে। আমার ঘৃনা হয় এই মেরুদন্ডহীন লোকগুলোর সাথে কথা বলতে। এদের নিকৃষ্ট মনে হয় ছাগুগুলোর চেয়েও। ওদের অন্তত নিজ চিন্তা-চেতনা প্রকাশের সাহসটুকু আছে। তাদের বলি শাহবাগ এর সাথে একাত্বতা প্রকাশের সেই কথা, ছবি তাহলে কি কেবলই লোক দেখানো আর একটু বাহবা কুড়ানোর জন্য? তাদের বলি দরকার হয় একাই থাকব তাও ওই হারামিদের কথার প্রতিবাদ করব সবসময়। নিজের সীমিত জ্ঞান দিয়ে একাই লড়ব ওদের বিরুদ্ধে। কারণ শুয়োরের সাথে সহবাসের ফতোয়া আমি অস্বীকার করি। যখন দেখি ইউ.এস.এ এর নানা ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টরা শাহবাগ নিয়ে গান লিখছে, ভিডিও ব্লগ করছে, প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাড়িয়েছে কোমর পর্যন্ত তুষারের মধ্যে তখন মনে হয়, না আমি একা না।



রাজাকারদের ব্যাপারে সরকারের ভুমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। প্রসিকিউশন টীমের ব্যার্থতা কাদের মোল্লার লঘু দন্ড হওয়ার জন্য দায়ী। সরকারের পক্ষ থেকে শক্তিশালী প্রসিকিউশন টীম নিয়োগের কোনো লক্ষণ ও দেখা যাচ্ছে না। আওয়ামী ব্লগাররা বলেন, বিচার করতেছে আদালত, এখানে সরকার কি করবে? হাসায়েন না ভাই। আপনাদের চেয়ে অনেক কিছু কম জানলেও, কম বুজলেও আমরা ফিডার খাই না। বাংলাদেশে কোন ব্যাপারটায় সরকারের প্রভাব না থাকে? কিছু আশা করাই আমাদের বোকামি। যে পালায়া থাকে তার হয় ফাসি আর যেই হারামজাদা ভিতরে আছে, '৭১ এ কসাইগিরি করছে, '৭১ এর পরেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলে গেছে তার হয় যাবজ্জীবন। যেই দেশের মানুষ মারছে তাদের ট্যাক্সের টাকায় এখন জেলে বইসা পোলাও-কোর্মা খায়............সত্যি সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ! সরকার নিরবে আন্দোলনকে সমর্থন দিচ্ছে। কিন্তু আসল যেটা দরকার জামায়াতকে গোড়া থেকে উপড়ে ফেলা, সেটায় তাদের ব্যাপক অনীহা। যে গণ জাগরণ তৈরী হইছে তাতে এখন জামায়াতকে কি নিষিদ্ধ করা যায় না? শিবিরের তান্ডব তো এই আগুনে আরো ঘি ঢেলে দিছে। আর কি চাই আপনাদের? প্রথমে ভাবতাম সরকার টেনশনে থাকে জামায়াত নিষিদ্ধ করলে ব্যাপক তান্ডব শুরু হবে কিন্তু এই আন্দোলন চলার সময়ে তা করলে কতটুকু তান্ডব করার সাহস তারা পাবে? আমার দেশ যে মিথ্যাচার চাল্লাছে, স্পেশাল ট্রাইবুনালের বিচারপতির স্কাইপ কথোপকথন ট্যাপ করে প্রকাশ করে ভুল ব্যাক্ষা দিয়ে যে অপরাধ করছে তাতেই তো এইটা বন্ধ করা যায়। মাঝে মাঝে তো মনে হয় সরকারেরই সদিচ্ছার অভাব আছে। সবই গভীর রাজনীতির খেলা।



বৃহত্তর জামায়াতে ইসলামীর বি.এন.পি শাখার কথা আর কি বলব? এরা যে আসলেই জামায়াতে ইসলামীর শাখায় পরিনত হইছে তার প্রমান তো রাতদিন দিচ্ছে। চিন্তিত সৈকত নামের একজন ফেসবুকে এটা সুন্দর করে লিখেছেন -



"৫ই ফেব্রুয়ারিঃ

BNP থেকে বলা হয়ঃ- এই আন্দোলন ফ্যাসিবাদীদের

৬ই ফেব্রুয়ারিঃ

BNP থেকে বলা হয়ঃ- সরকার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত

৭ই ফেব্রুয়ারিঃ

BNP থেকে সকালে বলা হয়ঃ- প্রজন্ম চত্বরে দেশ রসাতলে যাচ্ছে

BNP থেকে বিকালে বলা হয়ঃ- জনতা জেগেছে

৮ই ফেব্রুয়ারিঃ

BNP থেকে সকালে বলা হয়ঃ আমরা আন্দোলনের সাথে একার্থতা ঘোষণা করলাম

BNP থেকে বিকালে বলা হয়ঃ আন্দোলনে সব আওয়ামীলীগের লোক

৯ই ফেব্রুয়ারিঃ

BNP থেকে সকালে বলা হয়ঃ আমরা জামায়াতের সঙ্গ ছাড়বো না

BNP থেকে বিকালে বলা হয়ঃ আমরাই যুদ্ধাপরাধীর বিচার করবো

১০ই ফেব্রুয়ারিঃ

BNP থেকে সকালে বলা হয়ঃ দেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই, এই আন্দোলন আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে

BNP থেকে বিকালে বলা হয়ঃ প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনে আমরা আবারও একমত, রাজাকারের বিচার হবে

১৮ তারিখ এসে BNP থেকে আবারও বলা হয়ঃ আন্দোলনের নামে সরকার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত



বিঃদ্রঃ BNP= Bangladesh Non-Sense Party"



ওনার এইটার পরে আর কিছু বলার থাকে? হয় এদের সবার ভীমরতিতে ধরছে নাহলে নিজেদের আত্মা বিক্রি করেছে পুরোটাই। খালেদা জিয়া কি মনে করেন? ওয়াশিংটন টাইমস এ কলাম লিখে বারাক ওবামার সহায়তা চেয়ে উনি দেশের সার্বভৌমত্বের মান উঁচু করেছেন? এখনো যদি এই দল দেশের মানুষের কাছে জামায়াতকে সহায়তা দেয়ার জন্য মাফ না চায় তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাসের আস্তাকুড়েও এদের জায়গা হবে না।



আমার বন্ধু নাবিল ২ দিন আগে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিল- "বাঙালি রাজনীতি বুঝুক না বুঝুক "পলিটিক্সে" এই জাতের জুড়ি মেলা ভার"। ১০০ তে ২০০ সঠিক। আন্দোলনের কৃতিত্ব কে নিবে এই নিয়া শুরু হইলো পলিটিক্স। জয় বাংলা স্লোগান নিয়া পলিটিক্স। লাকি আপুর মাথায় আঘাত করা নিয়ে ছাত্রলীগ আর ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যে ক্যাচাল লাগানোর জন্য শুরু হইলো পলিটিক্স। নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু মিয়া হঠাৎ উইড়া আইসা জুইড়া বইসা ভাষণ দিয়ে খেললো পলিটিক্স। সরকারী দল আন্দোলনটাকে নিজ দলের নামে নেয়ার জন্য শুরু করলো পলিটিক্স। জাগরণ মঞ্চে ভাষণ দেয়ার জন্য শুরু হইলো পলিটিক্স। কয়েকজন ব্লগারদের সরকারের পক্ষ থেকে গানম্যান দেয়া নিয়ে শুরু হইলো পলিটিক্স। এই দেশে সব কিছু নিয়াই বিতর্ক। যদিও প্রথম কয়েকজন ব্লগার ছাড়া বাকি কাউরে বেশিরভাগ মানুষই চিনে না। যাক সে অন্য কথা। তাওসিফ হামিম নামের একজন দেখলাম ফেসবুকে লিখেছেন এই কয়জনকে নিরাপত্তা দেয়া হলো, তাহলে তার আর বাকি সবার কি হবে? উনি আবার থাকেন ইউক্রেন। এখন ওনার দাবি কি সরকারের কাছে নিরাপত্তার জন্য ইউক্রেনে গানম্যান পাঠানো নাকি কে জানে। আরে ভাই যারা সারা জীবন অনলাইনে জামায়াত-শিবির দৌড়ের উপর রাখল তারাই তো নিরাপত্তা আগে পাবে, নাকি? আমি, আপনি তো আর হিট লিস্টে নাই। আর এত লক্ষ লক্ষ মানুষরে গানম্যান দেয়াও তো সম্ভব না। সবাইরে গানম্যান দিতে হইলে তো দেশে কোটি কোটি গানম্যান লাগে। খালি লেখার জন্য বেহুদা লেখেন নাকি?



একটা কথা আছে যে যারা দাবা খেলতে থাকে, তাদের চেয়ে পাশে বসা লোক চাল বেশি বুঝে। একই সিনড্রমে আমাকেও ধরছে। তাই আন্দোলনের কিছু কিছু জিনিস কেমন যেন মনে হয়। আন্দোলনের নির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা আছে বলে এখনো বুঝা যাচ্ছে না। অথচ যারা নেতৃত্বে আছেন সবাই যোগ্য লোক। অনলাইনে তাদের ছাগু প্রতিহত করার কাহিনী লিজেন্ডারী। কাদের মোল্লার রায়ের ব্যাপারে আইন সংশোধন করা এই আন্দোলনের অনেক বড় একটা প্রাপ্তি। কিন্তু আমার দেশ, নয়া দিগন্ত, ফেসবুকের ছাগু পেজ ক্রমাগত অপপ্রচারণা চালিয়েই যাচ্ছে। এই ব্যাপারে কি কিছু করা যায় না? কারণ গ্রাম গঞ্জের যেসব মানুষ সরাসরি শাহবাগে আসতে পারছেন না তারা কিন্তু এইসব পত্রিকার মাধ্যমে ভুল খবর জানছেন (সস্তা হওয়ায় অনেকেই এসব পত্রিকা কেনেন)। একটা মিথ্যা কিন্তু বারবার বললে একসময় সেইটা সত্য হিসাবে মানুষ বিশ্বাস শুরু করে। এভাবেই কিন্তু জামায়াত তাদের অনেক সাপোর্টার তৈরী করেছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারী সাঈদীর রায় হবার কথা ছিল। হয় নাই। রায় পিছানো নিয়ে একটা শক্ত প্রতিবাদ কি আমরা করতে পারতাম না?



শাহবাগের জনজাগরণকে মুক্তিযুদ্ধের সাথে তুলনা করা হচ্ছে অনেক জায়গায়। ব্যাপারটা আমাকে বিস্মিত করে। দুটোই স্বমহিমায় উজ্জল, তবে মুক্তিযোদ্ধা আর শহীদরা যারা রক্ত দিয়েছিলেন তাদের ত্যাগ একটু হলেও বেশি.......আবার শাহবাগকে তুলনা দেয়া হচ্ছে তাহরীর স্কয়ার এর সাথে। কেন? সব কিছুতেই কি অন্য দেশ থেকে একটা তুলনা খুঁজে আনাটা জরুরি? তাহরীর স্কয়ার এর আন্দোলন মুসলিম ব্রাদারহুড কে ক্ষমতায় বসিয়েছে। যা আখেরে ভালো হয়েছে কিনা তা সন্দেহের সম্মুখীন। যেখানে আমরা আন্দোলন করছি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা একটা বিষয়ে। আন্দোলন সফল হলে (হবেই) আমরা কলঙ্কমুক্ত হব সন্দেহাতীত ভাবে। তাহরীর স্কয়ার এর চেয়ে শাহবাগ প্রজন্ম চত্তর এদিক থেকেও এগিয়ে।



সহ-ব্লগার থাবা বাবা ওরফে রাজীব ভাই মারা যাওয়ায় ক্যাচাল শুরু হলো আস্তিক নাস্তিক নিয়ে। আন্দোলন চলে গেল কিছুক্ষণের জন্য ধর্মের চাদরের নিচে। ধর্ম প্রিয় কিছু মানুষের ধর্ম ভীরুতার সুযোগ জামায়াত শিবির কাজে লাগানোর চেষ্টা করলো পুরোদমে। '৭১ এ হিন্দু-মুসলিম বলে যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছিল, একই ছকে সেটাকে ২০১৩ তে আস্তিক নাস্তিক এ রূপান্তর করে ফেলল। কিছুটা সফলও হলো। অনেক আন্দোলনকারীদেরকেই দেখলাম নাখোশ হলো। কেন বাবা? এইটা কি ধার্মিক আন্দোলন? সে নাস্তিক হইছে তাতে সমস্যা কোথায়? বিশ্বাস যার যার, দেশটা সবার। নাস্তিক হইছে দেখে সে আন্দোলনের অধিকার হারাইছে? ব্রেনটা একটু খাটান ভাই।



রাজীব ভাইয়ের হত্যার পর তা নিয়েও চলল পলিটিক্স। একেক জন একেক কাহিনী বলল। কেউ বলল শিবির মারছে, কেউ বলল নারীঘটিত কারণ। শোনা গেল পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে কিন্তু তদন্তের স্বার্থে কিছুই প্রকাশ করবে না। ব্যাস এইটুকুই। আর কিছু জানা গেল না। ধর্মান্ধর দল ভুয়া ওয়েবসাইট বানিয়ে তাকে দুনিয়ার সব চেয়ে বড় নাস্তিক প্রমানে উঠে পরে লাগলো আবার অন্যদিকে কিছু সুশীল তারে প্রায় ঈমানদার বানিয়ে ফেলল। তারা দাবি করতে লাগলো তার পোস্ট ব্লগ থেকে সরিয়ে দিতে। কিছু শুনলাম সরানো ও হইছে। থাবা-বাবা যে নাস্তিক ছিলেন তা সবাই জানে। এখন তার পোস্ট সরিয়ে তাকে ঈমানদার বানানোর কোনো মানে হয়? উল্টা উনি সারা জীবন যে ধ্যান-ধারনায় বিশ্বাস করতেন তাকে মুছে ফেলার চেষ্টা করে ওনাকেই অপমান করা হয়। ওনাকে শহীদ বলা হচ্ছে তা নিয়েও কিছু পাবলিকের আপত্তি। আচ্ছা ওনার জানাজা হইছে, এইটা ঠিক কি বেঠিক তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে যেহেতু উনি নাস্তিক ছিলেন। কিন্তু শহীদ বলা নিয়ে প্রশ্ন থাকবে কেন? নাস্তিককে যদি শহীদ বলা না যায় তাহলে তো '৭১ এ অন্যান্য ধর্মাম্বলী যারা মারা গেছেন তাদের ও তো শহীদ বলা যাবে না। একজন মৃত মানুষের আন্দোলনে অবদানের জন্য শহীদ বলে তাকে সম্মান দেয়া হচ্ছে। এতেও মানুষের সমস্যা !!!!! এদের কি আল্লাহ লিমিটেড সম্মান এর স্টক দিয়ে পাঠাইছে, যে ফুরায়া যাইতেছে?



মন খারাপ হয় জাফর মুন্সীর জন্য, যে এক ব্যান্কার মারা গেলেন আর সেই ভদ্রলোক যে হরতাল প্রত্যাখ্যানের ডাকে সাড়া দিয়ে বের হয়ে এসেছিলো রাস্তায়। বাড্ডা থেকে আসার পথে পিকেটিং এর শিকার হয়ে একটা মিনিবাসে এক্সিডেন্ট এ মারা যান তিনি। জাফর মুন্সীর খবর কিছুটা পেপারে আসলেও বাকি দুজনের খবর বলতে গেলে কিছুই আসেনি। ব্লগার রাজিবের প্রতি পরিপূর্ণ সম্মান রেখেই বলছি, ওনাকে হারানোর মুল্য অপরিসীম কিন্তু রাজীব হত্যার আড়ালে কি এদের আত্মত্যাগ চাপা পরে যাবে? রাজিবকে বলা হচ্ছে প্রথম শহীদ তাহলে জাফর মুন্সী কই? আমার জানামতে উনিই প্রথম মারা যান। আমরা আগেও যার যা প্রাপ্য সম্মান তাকে দিতে পারি নাই.....এখনো পারব না? রাজীব খ্যাতিমান ব্লগার ছিলেন আর এরা সাধারণ মানুষ.....তাই কি আমরা তাদের কথা ভুলে যাচ্ছি? সাধারনরা কি বঞ্চিতই থাকবে শাহবাগেও যেখানে সাধারণ জনতাই প্রধান শক্তি? যার যা সম্মান তাকে তা দেয়া হোক আর রাজীব হত্যার প্রতিশোধের সময় আমরা যেন এই সাধারণ মানুষগুলোর কথা ভুলে না যাই...........



ব্লগার রাজীব মারা যাবার পর জাগরণ মঞ্চের কর্মসূচিতেও ব্যাপক হতাশ। আন্দোলনের স্লোগান- "জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো", "একটা একটা শিবির ধর.....সকাল বিকাল জবাই কর" আর কর্মসূচি হলো বেলুন উড়ানো। রিয়েলি বেলুন? বেলুন উড়ায়া আগুন জ্বলবে? শিবির নিশ্চিহ্ন হবে? জামায়াত শিবিরের মত ফ্যানাটিক, ওয়েল অর্গানাইজড আর ফিনান্সিয়ালি শক্তিশালী একটা দলকে মোমবাতি জ্বালায়া, বেলুন উড়ায়া, নিরস্ত বা দমন যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। যতদিন আমাদের যোদ্ধারা মারা না গেছেন ততদিন গান্ধীবাদী অহিংস আন্দোলন ঠিক ছিল। কিন্তু এখন রক্ত ঝরার পর ও? পতাকা পোড়ানোর পর ও ? শুধু গান্ধীবাদ দিয়ে কিন্তু ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়নি, সাথে ভগত সিং রাও ছিল। কোনো বিপ্লবে, আন্দোলনে শান্তিপূর্ণ ভাবে দাবি আদায় হইছে এমন একটা উদাহরণ আছে? এইখানে আবার প্রতিপক্ষ চরমপন্থী এক দল। উপরের নির্দেশে জান দিয়া দিতেও যারা পিছ পা হবে না। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অস্ত্র বেলুন !!!!! বেলুনই যদি উড়াইতে হয় তাইলে আর না খায়া পোলাপানের শাহবাগের মোড়ে পরে থাকার দরকার কি? যে যার বাসার ছাদে উঠে উড়াইলো। তাতে বেলুন আরো উপরেও উঠলো !!!!!



আমার কথার মানে এই না যে এখনি ককটেল, কিরিচ, দা, বন্দুক হাতে জামায়াত শিবিরের উপর ঝাপিয়ে পড়তে হবে, কিন্তু শান্তি পূর্ণ ভাবে শাহবাগের কয়েক হাজার লোক মিলে ইসলামী ব্যাঙ্কের একটা ব্রান্চ চুপচাপ ঘেরাও করে রাখা যায়। আমার দেশ পত্রিকার অফিস ঘেরাও করা যায়। অনেকেই লেখেন মাহমুদুর রহমানকে শাহবাগে চা খেতে আসতে বলা হোক। কেন ভাই? সে যে আসবে না তাতো জানা কথা, তাইলে কেন এইসব ফাও কথা বলেন? আমরা যেতে পারি না? তার অফিসের সামনে যেয়ে যদি আমাদের পক্ষ থেকে ঘন্টায় ঘন্টায় চা পাঠানোর ব্যবস্থাও করা হয় তার জন্য, তাও তার জন্য চরম পীড়াদায়ক হবে কোনো সহিংসতা ছাড়াই। আমরা পারিনা তার অফিসের সামনে যেয়ে কয়েক বান্ডিল আমার দেশ কুটিকুটি করে ছিড়ে তাকে লজ্জা দিতে? যে লোকগুলা, ছেলে-মেয়েগুলা দিনের পর দিন শাহবাগে আছে তারা নিশ্চয়ই শুধু মোমবাতি আর বেলুন উড়াতে আসে নাই। তারা একটা কাঠামো বদলে দিতে এসেছে, এসেছে ৩০ লক্ষ শহীদ আর ২ লক্ষ নির্যাতিত বোনদের ন্যায় বিচারের দাবিতে। তাদের কে কি আপনারা হতাশ করে ফেরত পাঠাবেন? আমার ভয় হয় কঠিন কর্মসূচির অভাবে যে আগুন জ্বলে উঠছে তা নিভে যাওয়ার, লক্ষ মানুষের চোখের দ্যুতি স্লান হয়ে যাওয়ার (অনেকেরই কিন্তু মন ভেঙ্গে গিয়েছিল আন্দোলনের সময়সীমা ৩ টা -১০ টা করায়)। ভয় হয় জামায়াত-শিবির হায়েনার হাসি দিয়ে আমার ভাইদের লাশের উপর দাড়িয়ে বলবে "দেখ ওরা শুধু এগুলাই পারে"। ভয় হয় ওরা জিতে যাবে। আমার বিশ্বাস আমরা এগুলো হতে দেব না.............আমার বিশ্বাস আমরাই পারব। শাহবাগ রয়েছে আমাদের হৃদয়ে। হৃদয় দিয়ে যা অনুভব করা হয় তা কখনো হেরে যায় না। যখন দেশে আসব সেই দেশ হবে রাজাকার মুক্ত, কলংক মুক্ত বাংলাদেশ। জয় বাংলা।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:১৪

joos বলেছেন: ৫তারিখের পর ব্লগে ঢুকাই হয়নাই খুব একটা। যা পড়েছি সবই গতবাধা মনে হচ্ছিলো, কোনটাতেই মন্তব্য করারও ইচ্ছা হয়নি। কিন্তু আপনারটা বাধ্য করল।

সাধারণ ভাষায় অসাধারণ একটা লেখা লিখেছেন ভাই। তবে লেখার শুরুর অংশটুকু পড়ে আমার মন খারাপই হয়েছে বেশি। আপনি দেশের বাইরে বলে আন্দোলনে আসতে পারছেন না, আর কিছু বলদের বাচ্চা দেশে থেকেও রাস্তায় নামার কষ্টটা করতে রাজি না। উল্টা ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে 'আমি রাজাকারের ফাঁসী চাই, তাই বলে আন্দোলনে না গেলেই কি আমি ছাগু?' টাইপের আবালীয় যুক্তি দেখিয়ে। এদের দেখলে ঘৃণায় মাথা হেঁট হয়ে যায়।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৫:২৬

রাজন আল মাসুদ বলেছেন: সবচেয়ে বেশি ঘৃনা করি যারা দুই নৌকাতেই পা দিয়ে চলে.............পড়ার জন্য ধন্যবাদ :)

২| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:১৮

অজানাবন্ধু বলেছেন: জয় বাংলা

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৫:২৬

রাজন আল মাসুদ বলেছেন: জয় বাংলা

৩| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:০৬

এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:
ব্রো, আমার পোষ্টে নিচের দিকে ২৪ ঘন্টার শাহবাগ শিরোনামে একটা ভিডিওর লিঙ্ক দেয়া আছে, ওটা দেইখেন।

অঃটঃ সুনিতে যাব মনে হয়, পরে আপনার মত দুঃখের কাহিনী লিখব একা থাকার :(

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:২২

রাজন আল মাসুদ বলেছেন: খুঁজে পাচ্ছি না :(...........আপনার পোস্ট রেগুলারই দেখি...............আপডেট জানার জন্য বেস্ট :)

নতুন কলেজের জন্য শুভকামনা রইলো................সুনির কোনটায় যাচ্ছেন?

৪| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৪৯

ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
চমৎকার লিখা, চমৎকার প্রকাশ ||

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৯

রাজন আল মাসুদ বলেছেন: ধন্যবাদ ᎵᎥᏦᎯ ᏟᏥᏪ

৫| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:১২

তন্ময় ফেরদৌস বলেছেন: দেশে আয়, এখনো অনেক যুদ্ধ বাকি আছে।

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:১০

রাজন আল মাসুদ বলেছেন: দোস্ত এখন শুধু একটাই স্বপ্ন আর চিন্তা, কবে দেশে আসব..........যুদ্ধ কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই করব।

৬| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:৪১

যুক্তিপ্রাজ্ঞ বলেছেন: শাহবাগের ভাগাড়ই গন্তব্য ছিল, ভাগাড়েই অপচয় হয়েছে - এই আমার উপলব্ধি.

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:০২

রাজন আল মাসুদ বলেছেন: শাহবাগ একটা চেতনা, চেতনা কখনো ভাগাড়ে যায় না। শাহবাগ থেকে প্রাপ্তি অনেক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.