নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার দুনিয়ায় আপনি আমন্ত্রিত

রাজন আল মাসুদ

খুঁজে ফিরি স্বপ্নগুলো............

রাজন আল মাসুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেই দিনগুলি (১)

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০৯

(একেবারেই নিজস্ব বিক্ষিপ্ত চিন্তা-ভাবনা, স্মৃতিচারণ। কারো পড়ার মত কিছু নেই)



বই পড়তে পড়তে রাত পার হয়ে গেছে এমন দিন কম না। প্রগতি আর রাদুগা প্রকাশনের সেই রুশ রূপকথার অনুবাদগুলো দিয়ে পড়া শুরু। দারুন ছবি ওয়ালা কভারে অদ্ভুত সুন্দর ছিল সেই বইগুলো। রঙিন মোটা পাতা। কি সুন্দর সব ছবি। আর বই খুললেই কি অপূর্ব সুঘ্রান। আজও আছে বুকসেল্ফে ওই বইগুলো। তারপর চাচা চৌধুরী, ফ্যান্টম, নন্টে-ফন্টে। বাসার সবাই বই পড়ত কম-বেশি। তাই প্রাথমিক অবস্থায় কিনে বই পড়তে হয়নি। একটু বড় হবার পর ভাইয়া পড়তে দিল ওর তিন গোয়েন্দাগুলো। ও ততদিনে মাসুদ রানায় নিজেকে প্রমোশন দিয়েছে। তিন গোয়েন্দার এডভেঞ্চার যেন চোখের সামনে দেখতে পেতাম। স্কুলে থাকতে টিফিনের টাকা জমিয়ে বই কেনা, পড়ার বইয়ের ফাঁকে রেখে, শীত কালে লেপের নিচে চার্জার লাইট জ্বালিয়ে সেই বই পড়া। বাথরুমে গেলে বেরোতে আমার বরাবরই দেরী হত। কারণ সন্ধ্যা ৭ টা- ১০ টা পর্যন্ত বই পড়ার একটাই উপায় ছিল, তা হলো বাথরুমে যেয়ে। কিন্তু টিফিনের পয়সা জমিয়ে বই আর কত কেনা যায়? অবশ্য ফাইনাল পরীক্ষার পর আম্মু একটা সমগ্র কিনে দিত প্রতি বছর। এছাড়া জন্মদিনে শীর্ষেন্দু অথবা লীলা মজুমদারের বই পাওয়া। ততদিনে ভাইয়ার মাসুদ রানার কালেকশন বেশ মনোহর আকৃতি ধারণ করেছে। বইয়ের অভাব, প্রচ্ছদে অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে, পিস্তলের ছবি আর ভাইয়ার নিষেধ অমান্য করার অমোঘ আকর্ষণ ক্লাস সেভেনের এই আমার পক্ষে এড়ানো সম্ভব হয়নি। প্রথম মাসুদ রানার বই পড়ি খাটের নিচে লুকিয়ে। ওহ কি কাহিনী। আজও মনে আছে প্রথম পড়া বইটার নাম। রত্নদ্বীপ। এরপর মাসুদ রানার ভালবাসা থেকে নিজেকে ছুটাই সেই সাধ্য আমার কই? খাটের নিচে আর বাথরুমে লম্বা সময় কাটাতে লাগলাম। আমার মনে আছে আরামে বই পড়ার জন্য ফ্রিজের লম্বা বাক্স শুয়িয়ে আমি তিন গোয়েন্দার হেড কোয়াটারের মত একটা গোপন আস্তানা বানিয়েছিলাম ভাইয়ারই খাটের নিচে। ওইখানে এমনকি এক প্যাকেট বিস্কুট পর্যন্ত রাখতাম। এরপর আস্তে আস্তে হাতে এলো সেবার ওয়েস্টার্ন, ক্লাসিক, অনুবাদ। বই পড়ার অভ্যাস আর বইয়ের প্রতি ভালবাসা তৈরী করেছিল সেবা প্রকাশনী। তারপর হুমায়ুন আহমেদ, সত্যজিত, সমরেশ, সুনীল, জাফর ইকবাল, বুদ্ধদেব গুহ কত কি। উত্তরাধিকার সুত্রে আব্বু-আম্মুর কাছ থেকে পেয়েছিলাম বিমল কর, আকবর হোসেন, নীহাররঞ্জন গুপ্ত, শরতচন্দ্রের বই। বই পড়ার আমার সর্বগ্রাসী লোলুপ আকাংখা সেগুলোকে শেষ করতে বেশিদিন নেয়নি।



ততদিনে কলেজে উঠে গেছি। সিগারেট ধরিয়ে মাস্তান ভাব নেবার কারণে তখন বই কেনার টাকায় টান পরা শুরু হয়েছে। তাই বলে কি বই পড়া বন্ধ থাকবে? আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার জেনারেশনের কিছু ছেলের, বন্ধুর বই পড়ার অভ্যাস তখনও ছিল। এছাড়া পাড়ায় তিন টাকায় বই ভাড়া দেবার দোকানও তখন পর্যন্ত বিলুপ্তির মুখ দেখেনি। ঐগুলো দিয়ে কোনো মতে চালিয়ে নিচ্ছিলাম এমন সময় আগমন ঘটল ই-বুকের। আহা বিনে পয়সায় কম্পিউটারের স্ক্রিনে কি সুন্দর বই পড়া যায়। যে সব বইয়ের দিকে তাকালেই শূন্য পকেট হাহাকার করে উঠত সেগুলো পড়তে পারতাম আয়েশ করে। বাসায় কম্পিউটার থাকলেও ইন্টারনেট ছিল না। যাদের বাসায় ইন্টারনেট থাকত তারা বই ডাউনলোড করার সাইট জানত না। বেশিরভাগ বই যে ডাউনলোড করা যায় তাই জানত না। এই অবস্থায় স্বর্গের দেবদূত হিসাবে হাজির হয় বন্ধু নাবিল। ইন্টারনেট সম্পর্কে আমার জ্ঞান যখন প্রাঘঐতিহাসিক যুগে তখন এই ব্যাটা রীতিমত জাদুকর। হেন কোনো সাইট নাই যা বান্দা জানে না। আর বন্ধুদের মধ্যে ওর ইন্টারনেটের স্পিডই ছিল সবচেয়ে বেশি। জিপ এর লাইন ছিল। আমার হাই ৫ আর প্রথম ফেসবুক প্রোফাইলও ওর দ্বারাই খোলা। তখন জিমেইলে একাউন্ট খুলতে ইনভাইটেশন লাগত। ওই বাঁধাও এই ব্যাটার মাধ্যমেই পার হয়েছিলাম। শুক্রবার ওর বাসায় চলে যেতাম বিকালে, আসতাম রাত্রে। এরমধ্যে ওর গোল্ডলিফের প্যাকেট, নাস্তা, চা সব হজম করে ব্যাপক সময়ের জন্য ওর পি.সি. দখল করে রাখতাম। এমনে মাসখানেক চলার পর ব্যাটা আমার ফোন ধরতেই সম্ভবত ভয় পেত শুক্রবার। কিন্তু তাতে কি আমাকে ঠেকানো যায়? সোজা বাসায় হাজির হয়ে যেতাম। বই নেয়া নিয়ে কথা। এছাড়া ওরও বই পড়ার ব্যাপক অভ্যাস থাকায় সত্যিকারের বইও পাওয়া যেত ওর কাছে। এখন একা থাকি। রাত জেগে বই পড়লে বকা দেয়ার কেউ নেই। হাই স্পিড ইন্টারনেট, নিজের ল্যাপটপ। অনেক বইয়ের সাইট ব্রাউজারে বুকমার্ক করে রাখা। শুধু ডাউনলোড করা হয় না, পড়া হয় না। বাংলাদেশ থেকে পাঠানো বইয়ের মধ্যে দুটো অনুবাদ এখনো পড়া বাকি। কাজের পর এসে কেন জানি আর পড়তে ভাল্লাগে না। রান্না, খাওয়া, দেশে কথা বলা এইত, সময় শেষ। ভাইয়ার খাটের নিচে আমার বানানো ফ্রিজের বক্সের গোপন আস্তানায় ঢুকে বই পড়তে ইচ্ছা করে খুব মাঝে মধ্যে……....................................

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১৮

নষ্ট কাক বলেছেন: পড়ার মত কিছু নেয় তবুও মন দিয়ে পড়লাম । স্মৃতি চারণ ভাললাগছে।

তবে আপনার মত বই পড়ার জন্য আমাকে কষ্ট করতে হয় নি । বাসায় লোজিং টিচার থাকত উনি যে বই পড়ত আমিও সেই বই পড়তাম B-) B-) ;)

আমারদের সময়টা তো কাটছে ট্যাবলেট-ফ্যাব্লেটে মাঝে । তাই জীবনে ছাপাখানের বইয়ের চেয়ে পিডিএফ ই বেশি পড়া হয়েছে।

পোস্টে ১ম পেলাচ!

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪১

রাজন আল মাসুদ বলেছেন: বই পড়েন তো নিজের লোক, তা ছাপাখানার বইই হোক আর পিডিএফই হোক :)

২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৩

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: খুব সুন্দর স্মৃতিচারন! ভালো লেগেছে। মানুষের স্মৃতি পড়তে পারাটা বেশ ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার। নিজের সাথে মিলে গেলে তো কথাই নাই। ভালো লাগায় তা পরিপূর্ন হয়ে উঠে।

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৫

রাজন আল মাসুদ বলেছেন: ধন্যবাদ কা_ভা ভাই। এইটা যে কেউ পড়বে তাই ভাবি নাই। অবশ্য কারো পড়ার জন্য লেখাও না, নিজের জন্য লেখা। সময় নষ্ট করে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২০

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: সুন্দর স্মৃতিচারণ। আমার তেমন কষ্ট করতে হয় নি। বাবা সবকিছু সুন্দরভাবে রুটিন করে দিতো ছোটবেলায় .....সেখানে গল্পের বই পড়ার সময়ও ছিল। বইও সব বাবাই কিনে এনে দিতো.....


এখন সময়ের অভাবে গল্পের বইয়ের ধারে কাছেও যেতে পারি না।

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৩

রাজন আল মাসুদ বলেছেন: রুটিন করে গল্পের বই পড়া !!!!! কি বলব কিছুই বুঝতেছি না। তবে আপনি ভাই অনেক মজা মিস করছেন রুটিনে বাঁধা পরায়।

৪| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫৭

কালোপরী বলেছেন: :)

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৩

রাজন আল মাসুদ বলেছেন: :)

৫| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৪

নীলপথিক বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে মনে হয়, আমাদের সবার মোড়ক আলাদা, কিন্তু ভেতরটা এক-ই। কাহিনী আমারও মোটামুটি একরকমই। ভালো লাগলো স্মৃতিচারণা।

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৭

রাজন আল মাসুদ বলেছেন: আমরা যারা একরকম, তাদের ভিতরটা যে একরকমই তবে তাতে আর আশ্চর্যের কি :)

৬| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪৯

রাশেদ অনি বলেছেন: সুন্দর স্মৃতিচারন। আমার চুরি করে গল্পের বই পরার মনে করায়ে স্মৃতি দিলেন ভাই।মাসুদ রানার সব বই পড়ে ফেলছি আমি উইথ তিন গোয়েন্দা ভলিউম।
পোস্ট করার জন্য ধন্যবাদ।

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৩৭

রাজন আল মাসুদ বলেছেন: কষ্ট করে পড়া এবং তার চেয়েও বেশি কষ্ট করে কমেন্ট করার জন্য :P আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ অনি ভাই :)

৭| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:০০

মোঃ আব্দুস সালাম বলেছেন: আমেরিকার এক বছর সিরিজটা কি শেষ করে দিলেন নাকি? এইটা এখনও শুরু করিনি। পরে পরব। আগে আমার কথা উত্তর দেন।

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪১

রাজন আল মাসুদ বলেছেন: হ্যা সালাম ভাই :(

৮| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ ভোর ৫:৩৭

আমিই মিসিরআলি বলেছেন: স্কুল জীবনের কথা মনে পরে গেল ২০০০সালে ক্লাস ৭-এ থাকতে প্রথম সেবার সাথে পরিচয় । বন্ধুর সাথে পার্টনারে,টিফিনের টাকায় এমনকি চুরি করা টাকা দিয়েও বই কিনতাম । আর বাথরুমে বই ছাড়া তো ঢুকতামই না কোমরে গুজে নিয়ে গেতাম,পড়ার বইয়ের ভিতর লুকিয়ে বা রাতের বেলা লাইট ফ্যান অফ করে মোমবাতি জ্বালিয়ে সেটা আবার মোটা কাগজ দিয়ে আড়াল করে পরতাম কারণ টর্চ ছিলোনা আমার :( মাঝে মাঝে গভীর রাতে জানালার পর্দা সরিয়ে দিতাম পাশের বাসার সারারাত জালানো থাকা লাইটের আলো খাটের উপর এসে পড়ত,সেই হালকা আলোয় তিন গোয়েন্দা,মাসুদ রানা,হরর,রহস্য পত্রিকা আরও কত বই পড়ে শেষ করেছি সেইদিনগুলো এখন শুধুই স্মৃতি /:)

১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:২৪

রাজন আল মাসুদ বলেছেন: স্মৃতি শুধু বেদনা :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.