![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“I dream my painting and I paint my dream.” ― Vincent van Gogh
ভীষণ অবাক হই তখন, যখন দেখি বুয়েট কিংবা মেডিকেলের মত সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ভর্তি যুদ্ধ প্রতি বছরই! যে যুদ্ধের সৈনিক সংখ্যা কিনা আবার পলাশী যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সৈনিকের চেয়েও বেশি।
কিন্তু অবাক হই কেন ? তাও আবার ভীষণ !!
এ প্রশ্নের উত্তরে যাওয়ার আগে একটি মাঝারি গল্প বলি। একটি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা স্কুলের গল্প।
আমাদের মাধ্যমিক শিক্ষা ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ধরা হয়ে থাকে। যদি জিজ্ঞেস করি বিদ্যালয় কিসের জায়গা ? অধিকাংশ মানুষই বলবে বিদ্যালয় লেখাপড়ার জায়গা।
কিন্তু আসলেই কি তাই ?
না, আংশিক সত্য হলেও পুরোপুরি সত্য না। বিদ্যালয় হচ্ছে জ্ঞান অর্জনের জায়গা। যার মানে হচ্ছে লেখাপড়া বলতে আমরা যা বুঝি, বইয়ের পড়া। কিন্তু জ্ঞান অর্জন বলতে আমরা বুঝি শিক্ষা, সুশিক্ষা বা প্রকৃত শিক্ষা। এই শিক্ষা হচ্ছে কয়েকটি বিষয়ের সমন্বয়ে গঠিত একটি ব্যবস্থা। যাদের মধ্যে বইয়ের পড়া কেবল মাত্র একটি বিষয়। বাকি বিষয় গুলোতেও আসব, তার আগে গল্পটি শেষ করি।
সেই জেলা স্কুলে একজন বাংলা শিক্ষক আছেন, যিনি খুব ভালো ভাবে পাঠ্য বইটি পড়িয়ে থাকেন। কিন্তু সাথে সাথে ক্লাস পরীক্ষা গুলোর আগে তার কাছের কিছু ছাত্র-ছাত্রিকে শর্ট সাজেশনের নামে পারলে গোটা প্রশ্নপত্রটিই দিয়ে দেন।
ধর্মের একজন শিক্ষক আছেন, যিনি স্কেল মেপে নাম্বার দেন। তার মানে হচ্ছে, যে যত পৃষ্ঠা লিখবে সে তত বেশি নাম্বার পাবে।
একজন শিক্ষক আছেন, যিনি সামাজিক বিজ্ঞানের ক্লাস নেন। তার ক্লাসে কেউ পড়া না পারলে তিনি বেত দিয়ে এমন ভাবে মারতে থাকেন যেন বিষাক্ত সাপ মারছেন। যেটা মেরে না ফেললে তার প্রান সংশয় রয়েই যাবে!
শারীরিক শিক্ষার একজন শিক্ষক আছেন, যিনি যেকোন অপরাধের দণ্ড হিসাবে একই শাস্তি দিয়ে থাকেন। শরীর চর্চার শিক্ষণ, অলস হলে তো তার চলবে না। তাই তিনি একাধারে পড়ানও মারেনও। এক হাতে বই নিয়ে পড়াতে থাকেন, অন্য হাতে বেত নিয়ে টেবিলের নিচে মাথা ঢোকান প্রাণীটির যেটুকু বাইরে বেরিয়ে আছে সেটুকু জায়গা জুড়ে পড়ার সুরে সুরে অবিরাম বেত চালাতেই থাকেন।
অংকের মাস্টার, যার পছন্দ ডাস্টার। পড়া পারনা ? হাত মুঠো করে সামনে ধর। টিফিন ফাঁকির কেস ? হাত মুঠো করে সামনে ধর। গতকাল স্কুলে আসনি ? হাত মুঠো করে সামনে ধর। ইত্যাদি নানান রোগের একই চিকিৎসা।
একজন শিক্ষক আছেন, যিনি কিনা প্রকৃত শিক্ষাটিই প্রদান করে থাকেন শিক্ষার্থীদের। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মতে স্কুলের মধ্যে সবচেয়ে বাজে শিক্ষক যেজন এই হচ্ছে সেজন।
পড়ালেখা অনেক হল। এবার আসা যাক সমাপনি পরীক্ষায়। ফল প্রকাশের পরে দেখা গেল অনেকেই একটি বিষয়ের উপরে খারাপ করেছে, যার মানে ফেইল। কিন্তু কোন চিন্তা নেই। এবছর তো একটিতে পার পাবেই, দুইটি পর্যন্তও যেতে পারে।
এক্ষেত্রে স্বভাবতই প্রশ্ন আসবে কেন ? কেন তারা সঠিক নিয়মে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রদান করছেন না ?
এর পিছনে বিস্তর কারন আছে। তার মধ্যে সবচাইতে লাভজনক একটি কারন হচ্ছে বেতনের বাইরে উপরি উপার্জনের একটি রাস্তা তৈরি করা।
তবে এই নিয়ে আলোচনায় পরে আসা যাবে। আগে মাঝারি গল্প মাঝারি আকারেই শেষ করি।
এই করে করে ষষ্ঠ সপ্তম অষ্টম নবম এমনকি দশমও। এমতাবস্থায় চলে এলো বোর্ড পরীক্ষা। এই প্রায় পাঁচটি বছর এক-দুইয়ের খেলা খেলে তো পার হল। কিন্তু বোর্ড পরীক্ষায় তো তা হবার নয়!
শেষে আর কি করার! টেস্টের পরে ফাইনালের আগ পর্যন্ত যে সময়টুকু থাকে তার মধ্যেই নাকে-মুখে লেখাপড়া করে একটি হেস্তনেস্ত করতে হল।
এই গেল গল্প।
রইল উচ্চ মাধ্যমিক। কলেজ জীবন নাকি দেখতে দেখতেই কেটে যায়। প্রাথমিক, মাধ্যমিক পাঁচ বছর পাঁচ বছর করে কাটিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে এসে দুই বছরের কোর্সটির সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে নিতেই আবার আর একটি বোর্ড পরীক্ষা সামনে হাজির হয়।
আর সেই মাধ্যমিকের মত করে প্রায় একই নিয়মে কলেজ জীবনটাও সমাপ্ত হয়।
এখন আসা যাক আসল কথায়।
এইযে প্রাথমিক বাদ দিয়ে বাকি সাতটি বছরের শিক্ষা জীবন। এইযে গড়পড়তায় উপরিউক্ত গল্পের আদলে বেশিরভাগ বিদ্যালয় গুলোরই কম বেশি একই চিত্র। এর ভিতরেও প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয় থেকেই কিন্তু প্রতি বছর কেউ না কেউ বা কয়েকজন বা অনেক ছেলেমেয়ে নিজেদেরকে নিজেরা যোগ্য করে তোলে এই বুয়েট কিংবা মেডিকেল-এর মত উচ্চ মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে সুযোগ পাওয়ার মত করে।
এদেরকে দেখে আমি অবাক হই! আর ভীষণ অবাক হই কখন?
কেবল একটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করেই যে ভয়াবহ অবস্থার আঁচ পাওয়া যায় বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার, তাতে করে আমার মতে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো আসন সঙ্কটে না পরে আসন পূরণের সঙ্কটে পরা উচিত।
এখন স্বভাবতই প্রশ্ন আসবে, বাস্তবতা তো তা বলছে না। বাস্তব চিত্র তো ভিন্ন। সেটি কেন?
এই ‘কেন’-এর উত্তর পেতে গেলে পিছনে ফিরে যেতে হবে আবার। সেই পলাশীর যুদ্ধ। যেখানে ঠিক কি ঘটেছিল? মীরজাফরের অধীনে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো যুদ্ধে অংশ নেওয়া প্রায় দুই তৃতীয়াংশ সৈনিক!
পরাজয় বরণ করেছিলো তৎকালীন ভারতবর্ষ। শত বছরের পরাজয়।
আমরাও কি ঠিক তেমনি এক দীর্ঘমেয়াদী পরাজয়ের দিকেই অগ্রসর হচ্ছি না?
একটি যুদ্ধের প্রধান অস্ত্র সৈনিক। তেমনি একটি জাতীর উন্নতির প্রধান অস্ত্র শিক্ষা, সুশিক্ষিত শিক্ষার্থী, শিক্ষিত যুব সমাজ।
এবার আসি ভীষণ অবাক হই কেন সে প্রসঙ্গে ।
এইযে এতো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করেও গোটা দেশ থেকেই বেশ কিছু সংখ্যক ছেলেমেয়ে ভালো ফলাফল করছে, সুশিক্ষিত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বাস্তবতা তো ভিন্ন কথা বলছে! বেশ কিছু ছেলেমেয়ে কিন্তু না, অনেক সংখ্যক ছেলেমেয়েই ভালো ফলাফল করছে। তাই বলে এটা নয় যে বেশি সংখ্যক ছেলেমেয়ে ভালো ফলাফল করতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবতার মধ্যেও তো আরেক বাস্তবতা থাকে। আরেক ভাবে বলতে পারি ‘সত্যিটা’। এই সত্যিটা আসলে কি ?
খুশি হতাম, খুশি হত সবাই, যদি মেনে নিতে পারতাম এই বিপুল সংখ্যক ভালো ফলাফল কারিদের সকলেই তাদের নিজ নিজ ফলাফল অর্জনের যোগ্যতা রাখে। কিন্তু বাস্তবতার ভিতরের বাস্তবতাটি কিন্তু অন্য ইঙ্গিত দিচ্ছে।
একটি উদাহরণ দেই, এই দুই-এক বছর আগের ঘটনা। একটি সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হল, সদ্য এসএসসি পাস করা ভালো ফলাফলের সর্বোচ্চ মাপকাঠি জিপিএ-৫ পাওয়া কিছু শিক্ষার্থীদেরকে প্রশ্ন করা হল ‘আমি জিপিএ-৫ পেয়েছি এর ইংরেজি কি হবে?’ একজন শিক্ষার্থী উত্তর দিয়েছিল, ‘I’m GPA-5.’ বিজ্ঞানের একজন ছাত্র পিথাগোরাসের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছিল তিনি একজন উপন্যাসিক। যেখানে নেপালের রাজধানী চলেগিয়েছিল নেপচুনে।
এমনি করে বেশ কিছু শিক্ষার্থীদের সাধারণ জ্ঞান বা অসাধারণ জ্ঞান সব দিক মিলিয়েই কিছু প্রশ্ন করা হয়েছিল। উত্তর গুলো ছিল ভয়ানক! ভীষণ অবাক হওয়ার মত ভয়ানক!!
অথচ এরাইতো বুয়েট কিংবা মেডিকেলের মত উচ্চ মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতা তথা জিপিএ পেয়েছে। এ কি ভীষণ অবাক হবার ব্যাপার নয় ?
তাহলে উপরুক্ত আলোচনার সারসংক্ষেপে আমরা কি পাই?
একই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছু সংখ্যক যোগ্যতা সম্পন্ন, কিছু শিক্ষার্থী অযোগ্য। শুধু তাই নয়। মাঝারি মেধা সম্পন্ন শিক্ষার্থী বা খারাপ মেধা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের অবস্থা তো আরও ভয়াবহ।
কিন্তু এমন কেন? তাদের পরিক্ষার ফলাফল তো একই?
উত্তরটা অতি সহজ। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াবহ অবনতিই এ জন্য দায়ী। মীরজাফরের মত কিছু মানুষ, কিছু সিস্টেম, আমাদের এই শিক্ষার্থীদের তথা অশিক্ষার হাত থেকে স্বাধীন করার হাতিয়ার শিক্ষার্থী সৈনিকদের ভুল পথে চালিত করে স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। তাদেরকে লোভ দেখিয়ে, সরলতার সুযোগ নিয়ে, নিয়মের নামে শৃঙ্খলায় বন্দি করে বানিয়ে তুলছে কুশিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ।
ফায়দা লুটছে তারা আর ধ্বংস হচ্ছে কারা? যাদের হাতে দায়িত্ব ছিল সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এই দেশটিকে ধাপে ধাপে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দেওয়ার।
শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলতে গেলে বা শিক্ষার মান নিয়ে ভাবতে গেলে প্রথমেই চলে আসে দেশের শিক্ষা পদ্ধতির বিষয়টি। সেক্ষেত্রে বাস্তব চিত্রের প্রসঙ্গ না হয় আপাতত বাদই দিলাম। কিন্তু আমাদের দেশের যে শিক্ষা পদ্ধতিটি আছে সেখানেই তো খুঁজে পাওয়া যায় বিস্তর গলদ। সে শিক্ষা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে আমারা শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করি এবং শিক্ষা জীবন শেষে যখন কর্ম জীবনে ঢুকি তখন দেখা যায় শিক্ষা জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল সার্টিফিকেট! সাথে সাথে এও দেখতে পাই কর্ম জীবনে এসে অর্জিত শিক্ষার সিংহ ভাগেরই কোন বাস্তব প্রয়োগ নেই!!
এখন প্রশ্ন আসে, তাহলে এই প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধিতে শিক্ষিত হয়ে অর্জিত শিক্ষার প্রয়োগটা আমরা কোথায় গিয়ে করবো? ভীষণ অবাক হই তখন, যখন দেখি বুয়েট কিংবা মেডিকেলের মত সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ভর্তি যুদ্ধ প্রতি বছরই! যে যুদ্ধের সৈনিক সংখ্যা কিনা আবার পলাশী যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সৈনিকের চেয়েও বেশি।
কিন্তু অবাক হই কেন ? তাও আবার ভীষণ !!
এ প্রশ্নের উত্তরে যাওয়ার আগে একটি মাঝারি গল্প বলি। একটি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা স্কুলের গল্প।
আমাদের মাধ্যমিক শিক্ষা ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ধরা হয়ে থাকে। যদি জিজ্ঞেস করি বিদ্যালয় কিসের জায়গা ? অধিকাংশ মানুষই বলবে বিদ্যালয় লেখাপড়ার জায়গা।
কিন্তু আসলেই কি তাই ?
না, আংশিক সত্য হলেও পুরোপুরি সত্য না। বিদ্যালয় হচ্ছে জ্ঞান অর্জনের জায়গা। যার মানে হচ্ছে লেখাপড়া বলতে আমরা যা বুঝি, বইয়ের পড়া। কিন্তু জ্ঞান অর্জন বলতে আমরা বুঝি শিক্ষা, সুশিক্ষা বা প্রকৃত শিক্ষা। এই শিক্ষা হচ্ছে কয়েকটি বিষয়ের সমন্বয়ে গঠিত একটি ব্যবস্থা। যাদের মধ্যে বইয়ের পড়া কেবল মাত্র একটি বিষয়। বাকি বিষয় গুলোতেও আসব, তার আগে গল্পটি শেষ করি।
সেই জেলা স্কুলে একজন বাংলা শিক্ষক আছেন, যিনি খুব ভালো ভাবে পাঠ্য বইটি পড়িয়ে থাকেন। কিন্তু সাথে সাথে ক্লাস পরীক্ষা গুলোর আগে তার কাছের কিছু ছাত্র-ছাত্রিকে শর্ট সাজেশনের নামে পারলে গোটা প্রশ্নপত্রটিই দিয়ে দেন।
ধর্মের একজন শিক্ষক আছেন, যিনি স্কেল মেপে নাম্বার দেন। তার মানে হচ্ছে, যে যত পৃষ্ঠা লিখবে সে তত বেশি নাম্বার পাবে।
একজন শিক্ষক আছেন, যিনি সামাজিক বিজ্ঞানের ক্লাস নেন। তার ক্লাসে কেউ পড়া না পারলে তিনি বেত দিয়ে এমন ভাবে মারতে থাকেন যেন বিষাক্ত সাপ মারছেন। যেটা মেরে না ফেললে তার প্রান সংশয় রয়েই যাবে!
শারীরিক শিক্ষার একজন শিক্ষক আছেন, যিনি যেকোন অপরাধের দণ্ড হিসাবে একই শাস্তি দিয়ে থাকেন। শরীর চর্চার শিক্ষণ, অলস হলে তো তার চলবে না। তাই তিনি একাধারে পড়ানও মারেনও। এক হাতে বই নিয়ে পড়াতে থাকেন, অন্য হাতে বেত নিয়ে টেবিলের নিচে মাথা ঢোকান প্রাণীটির যেটুকু বাইরে বেরিয়ে আছে সেটুকু জায়গা জুড়ে পড়ার সুরে সুরে অবিরাম বেত চালাতেই থাকেন।
অংকের মাস্টার, যার পছন্দ ডাস্টার। পড়া পারনা ? হাত মুঠো করে সামনে ধর। টিফিন ফাঁকির কেস ? হাত মুঠো করে সামনে ধর। গতকাল স্কুলে আসনি ? হাত মুঠো করে সামনে ধর। ইত্যাদি নানান রোগের একই চিকিৎসা।
একজন শিক্ষক আছেন, যিনি কিনা প্রকৃত শিক্ষাটিই প্রদান করে থাকেন শিক্ষার্থীদের। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মতে স্কুলের মধ্যে সবচেয়ে বাজে শিক্ষক যেজন এই হচ্ছে সেজন।
পড়ালেখা অনেক হল। এবার আসা যাক সমাপনি পরীক্ষায়। ফল প্রকাশের পরে দেখা গেল অনেকেই একটি বিষয়ের উপরে খারাপ করেছে, যার মানে ফেইল। কিন্তু কোন চিন্তা নেই। এবছর তো একটিতে পার পাবেই, দুইটি পর্যন্তও যেতে পারে।
এক্ষেত্রে স্বভাবতই প্রশ্ন আসবে কেন ? কেন তারা সঠিক নিয়মে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রদান করছেন না ?
এর পিছনে বিস্তর কারন আছে। তার মধ্যে সবচাইতে লাভজনক একটি কারন হচ্ছে বেতনের বাইরে উপরি উপার্জনের একটি রাস্তা তৈরি করা।
তবে এই নিয়ে আলোচনায় পরে আসা যাবে। আগে মাঝারি গল্প মাঝারি আকারেই শেষ করি।
এই করে করে ষষ্ঠ সপ্তম অষ্টম নবম এমনকি দশমও। এমতাবস্থায় চলে এলো বোর্ড পরীক্ষা। এই প্রায় পাঁচটি বছর এক-দুইয়ের খেলা খেলে তো পার হল। কিন্তু বোর্ড পরীক্ষায় তো তা হবার নয়!
শেষে আর কি করার! টেস্টের পরে ফাইনালের আগ পর্যন্ত যে সময়টুকু থাকে তার মধ্যেই নাকে-মুখে লেখাপড়া করে একটি হেস্তনেস্ত করতে হল।
এই গেল গল্প।
রইল উচ্চ মাধ্যমিক। কলেজ জীবন নাকি দেখতে দেখতেই কেটে যায়। প্রাথমিক, মাধ্যমিক পাঁচ বছর পাঁচ বছর করে কাটিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে এসে দুই বছরের কোর্সটির সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে নিতেই আবার আর একটি বোর্ড পরীক্ষা সামনে হাজির হয়।
আর সেই মাধ্যমিকের মত করে প্রায় একই নিয়মে কলেজ জীবনটাও সমাপ্ত হয়।
এখন আসা যাক আসল কথায়।
এইযে প্রাথমিক বাদ দিয়ে বাকি সাতটি বছরের শিক্ষা জীবন। এইযে গড়পড়তায় উপরিউক্ত গল্পের আদলে বেশিরভাগ বিদ্যালয় গুলোরই কম বেশি একই চিত্র। এর ভিতরেও প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয় থেকেই কিন্তু প্রতি বছর কেউ না কেউ বা কয়েকজন বা অনেক ছেলেমেয়ে নিজেদেরকে নিজেরা যোগ্য করে তোলে এই বুয়েট কিংবা মেডিকেল-এর মত উচ্চ মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে সুযোগ পাওয়ার মত করে।
এদেরকে দেখে আমি অবাক হই! আর ভীষণ অবাক হই কখন?
কেবল একটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করেই যে ভয়াবহ অবস্থার আঁচ পাওয়া যায় বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার, তাতে করে আমার মতে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো আসন সঙ্কটে না পরে আসন পূরণের সঙ্কটে পরা উচিত।
এখন স্বভাবতই প্রশ্ন আসবে, বাস্তবতা তো তা বলছে না। বাস্তব চিত্র তো ভিন্ন। সেটি কেন?
এই ‘কেন’-এর উত্তর পেতে গেলে পিছনে ফিরে যেতে হবে আবার। সেই পলাশীর যুদ্ধ। যেখানে ঠিক কি ঘটেছিল? মীরজাফরের অধীনে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো যুদ্ধে অংশ নেওয়া প্রায় দুই তৃতীয়াংশ সৈনিক!
পরাজয় বরণ করেছিলো তৎকালীন ভারতবর্ষ। শত বছরের পরাজয়।
আমরাও কি ঠিক তেমনি এক দীর্ঘমেয়াদী পরাজয়ের দিকেই অগ্রসর হচ্ছি না?
একটি যুদ্ধের প্রধান অস্ত্র সৈনিক। তেমনি একটি জাতীর উন্নতির প্রধান অস্ত্র শিক্ষা, সুশিক্ষিত শিক্ষার্থী, শিক্ষিত যুব সমাজ।
এবার আসি ভীষণ অবাক হই কেন সে প্রসঙ্গে ।
এইযে এতো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করেও গোটা দেশ থেকেই বেশ কিছু সংখ্যক ছেলেমেয়ে ভালো ফলাফল করছে, সুশিক্ষিত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বাস্তবতা তো ভিন্ন কথা বলছে! বেশ কিছু ছেলেমেয়ে কিন্তু না, অনেক সংখ্যক ছেলেমেয়েই ভালো ফলাফল করছে। তাই বলে এটা নয় যে বেশি সংখ্যক ছেলেমেয়ে ভালো ফলাফল করতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবতার মধ্যেও তো আরেক বাস্তবতা থাকে। আরেক ভাবে বলতে পারি ‘সত্যিটা’। এই সত্যিটা আসলে কি ?
খুশি হতাম, খুশি হত সবাই, যদি মেনে নিতে পারতাম এই বিপুল সংখ্যক ভালো ফলাফল কারিদের সকলেই তাদের নিজ নিজ ফলাফল অর্জনের যোগ্যতা রাখে। কিন্তু বাস্তবতার ভিতরের বাস্তবতাটি কিন্তু অন্য ইঙ্গিত দিচ্ছে।
একটি উদাহরণ দেই, এই দুই-এক বছর আগের ঘটনা। একটি সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হল, সদ্য এসএসসি পাস করা ভালো ফলাফলের সর্বোচ্চ মাপকাঠি জিপিএ-৫ পাওয়া কিছু শিক্ষার্থীদেরকে প্রশ্ন করা হল ‘আমি জিপিএ-৫ পেয়েছি এর ইংরেজি কি হবে?’ একজন শিক্ষার্থী উত্তর দিয়েছিল, ‘I’m GPA-5.’ বিজ্ঞানের একজন ছাত্র পিথাগোরাসের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছিল তিনি একজন উপন্যাসিক। যেখানে নেপালের রাজধানী চলেগিয়েছিল নেপচুনে।
এমনি করে বেশ কিছু শিক্ষার্থীদের সাধারণ জ্ঞান বা অসাধারণ জ্ঞান সব দিক মিলিয়েই কিছু প্রশ্ন করা হয়েছিল। উত্তর গুলো ছিল ভয়ানক! ভীষণ অবাক হওয়ার মত ভয়ানক!!
অথচ এরাইতো বুয়েট কিংবা মেডিকেলের মত উচ্চ মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতা তথা জিপিএ পেয়েছে। এ কি ভীষণ অবাক হবার ব্যাপার নয় ?
তাহলে উপরুক্ত আলোচনার সারসংক্ষেপে আমরা কি পাই?
একই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছু সংখ্যক যোগ্যতা সম্পন্ন, কিছু শিক্ষার্থী অযোগ্য। শুধু তাই নয়। মাঝারি মেধা সম্পন্ন শিক্ষার্থী বা খারাপ মেধা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের অবস্থা তো আরও ভয়াবহ।
কিন্তু এমন কেন? তাদের পরিক্ষার ফলাফল তো একই?
উত্তরটা অতি সহজ। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াবহ অবনতিই এ জন্য দায়ী। মীরজাফরের মত কিছু মানুষ, কিছু সিস্টেম, আমাদের এই শিক্ষার্থীদের তথা অশিক্ষার হাত থেকে স্বাধীন করার হাতিয়ার শিক্ষার্থী সৈনিকদের ভুল পথে চালিত করে স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। তাদেরকে লোভ দেখিয়ে, সরলতার সুযোগ নিয়ে, নিয়মের নামে শৃঙ্খলায় বন্দি করে বানিয়ে তুলছে কুশিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ।
ফায়দা লুটছে তারা আর ধ্বংস হচ্ছে কারা? যাদের হাতে দায়িত্ব ছিল সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এই দেশটিকে ধাপে ধাপে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দেওয়ার।
শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলতে গেলে বা শিক্ষার মান নিয়ে ভাবতে গেলে প্রথমেই চলে আসে দেশের শিক্ষা পদ্ধতির বিষয়টি। সেক্ষেত্রে বাস্তব চিত্রের প্রসঙ্গ না হয় আপাতত বাদই দিলাম। কিন্তু আমাদের দেশের যে শিক্ষা পদ্ধতিটি আছে সেখানেই তো খুঁজে পাওয়া যায় বিস্তর গলদ। সে শিক্ষা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে আমারা শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করি এবং শিক্ষা জীবন শেষে যখন কর্ম জীবনে ঢুকি তখন দেখা যায় শিক্ষা জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল সার্টিফিকেট! সাথে সাথে এও দেখতে পাই কর্ম জীবনে এসে অর্জিত শিক্ষার সিংহ ভাগেরই কোন বাস্তব প্রয়োগ নেই!!
এখন প্রশ্ন আসে, তাহলে এই প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধিতে শিক্ষিত হয়ে অর্জিত শিক্ষার প্রয়োগটা আমরা কোথায় গিয়ে করবো?
২৬ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:১৩
রাখাল. বলেছেন: হুম
২| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:২০
মোঃ আল মামুন শাহ্ বলেছেন: শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন যে কবে হবে, তা কে জানে!
২৮ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:১৪
রাখাল. বলেছেন: তা ঠিক, তবে খুব দ্রুতই একটি পরিবর্তন দরকার।
৩| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:১১
জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদেশী কর্মিদের সংখ্যা বাড়ছে। শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন, উন্নয়ন না হলে বিদেশী সংখ্যা আরো আরো বাড়বে। অযোগ্যদের কেউ চাকুরী দেবে না।
সরকারসহ সবার ভাবা উচিত।
২৮ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:১৬
রাখাল. বলেছেন: শুধু বাড়ছেই না, গুরুত্বপূর্ণ পোস্টগুলো তারাই দখল করে আছে।
৪| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:২২
সিগন্যাস বলেছেন: ইলন মাষ্ক বই পড়ে রকেট বানানো শিখেছে
২৮ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:১৬
রাখাল. বলেছেন: হুম
৫| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:২৯
রাজীব নুর বলেছেন: আমি যার ক্যারিয়ার বাঁচিয়েছি, তিনি আজ আমার ক্যারিয়ারের মৃত্যুদণ্ডের ঘোষণা দিলেন। এই ঘোষণা শোনার পর আমার ভেঙে পড়বার কথা। কিন্তু আমি হাসছি আর হাসছি।
২৮ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:১৭
রাখাল. বলেছেন: সেটা কেমন?
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:৫০
Mr. Tuhin বলেছেন: শুধু বই আর বই ভিতরে ঘোড়ার ডিম।