নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাথাই আসছেনা

রাখাল রাাজু

মুক্ত মতে বিশ্বাসী

রাখাল রাাজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রগতিশীলতার মাতলামি বনাম নাক চুলকানি

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৪৬

যদি জিজ্ঞেস করা হয় আপনার সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক কি? উত্তরে আপনি বলবেন আমি রাষ্ট্রের নাগরিক! নাহ! তা হবে না, বলতে হবে আপনি রাষ্ট্রের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নাগরিক। শুধু নাগরিক হলে চলবে না। শুধু নাগরিক হলে আপনাকে চুপ থাকতে হবে, কোন প্রকার কথা বলা যাবে না। সেই প্রক্রিয়াটাই মেনে চলছিলাম। খুব ভয় হয়- কখন যেন একটা একটা ট্যাগ লেগে যায় শরীরের উপরে যে- আমি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তিদের সমর্থন করছি।

কিন্তু নাক বলে একটা কথা, নাকে চুলকানি উঠলে আর কোন কিছু বাধে না। ধরে নেয়া যাক এখনকার কথা গুলো সেই নাকের চুলকানিকে সারা দিয়েই লিখছি।

পাঠ্যবই থেকে আমি খুব বেশি কিছু শিখতে পারিনি কিংবা জানতে পারিনি। যখন বুঝতে পারলাম পাঠ্যবইয়ের ইতিহাসগুলোর মাথা শাসক গোষ্ঠী এবং তাদের শাসনের কাছে মাথা বন্ধক দিয়েছে। সেই সুবাদে দেশ রাষ্ট্র, জনগন, মুক্তিযুদ্ধ, জনতার অধিকার এই বিষয়ে আমার শিক্ষাটা কিছু প্রগতিশীল ভাইদের কাছ থেকে- যারা এখন দেশের স্বনামধন্য ব্লগার এবং প্রগতিশীল নেতা বলে পরিচিত। তাদের ইদানিং একটি বিশেষ চরিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে- আর তা হল, প্রগতিশীল এই ব্লগার রা যা চিন্তা করবে, আপনাকেও তাই চিন্তা করতে হবে, সে যা ভাববে আপনাকেও তা ভাবতে হবে আর তা না হলে আপনি কি আউট।

যুদ্ধ অপরাধ ইস্যু দেশে এখনো পুরনো হয়ে গেছে। এই ইস্যুটি নিয়ে কয়েকদিন বেশ ভালই চলছিল, এখনো চলছে। তবে এখনকার উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হল- জামায়াত এবং পশ্চিমবঙ্গের মমতার সাথে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা এবং একজন কবির সুমনকে নিয়ে।

ছোটবেলা আমি সুমনের গান শুনেছি। কিন্তু তার নামের আগে যে কবির আছে এই কথাটি জানলাম অনেক বড় হয়ে। নির্যাতিত মানুষের জন্য তিনি গান গান, তার গানে থাকে নির্যাতিত মানুষের নির্যাতনের ভাষা। এটা জেনেছি বড় ভাইদের কাছ থেকে। আর কবি সুমনের যেকোনো লেখা এবং যেকোনো সাক্ষাৎকার দেখতাম ফেচবুকে তারা অহরহ শেয়ার করেন। আমিও পরতাম খুব মন ভরে। এবং দেখতাম হ্যা সত্যি তো! তিনি একজন ভাল মানুষ। কিন্তু হঠাত করেই তারা আবার কবির সুমনের উপরে খিস্তি মারা শুরু করলো। কারণটা ও কি তাহলে তাদের মতের সাথে না মেলার কারনে? রাতারাতি কবির সুমন হয়ে গেল একজন বদমাশ? বউ পেটানো লোক! দুর্নীতিবাজ নেতা!

গত কয়েকদিন ধরে দেশের কয়েকজন স্বনামধন্য রক্ষণশীল (রক্ষণশীল বললাম এই কারনে কারন তারা সরাসরি তাদের নিজেদের ফেবু তে নোটিশ দিয়ে দেয় যারা তাদের মতের বাইরে তাদেরকে তারা কোন চিন্তা না করেই কিক আউট করে দেয় তাদের বন্ধু তালিকা থেকে। এবং তার সাথে জড়িয়ে দেয় কিছু প্রগতিশীল গালিগালাজ) মুক্তমনা (যদিও তাদেরকে মুক্তমনা ভাবতে একটু আক্ষেপ্ হয় তারপরও বলছি কারন মুক্তমনার তালিকা থেকে তাদের বাদ দিলে দেশে আর মুক্তমনা থাকে না- এটা তাদের দাবী) ব্লগাররা সেই কবির সুমনকে এমন ভাবে খিস্তি দিচ্ছে যেন কবির সুমন বড় কোন পাপ করে ফেলেছে। ভেতরের কথা জানার মত খুব একটা দুঃসাহসিক আমি নই। তারপরও কবির সুমনের অপরাধ হিসেবে যতটুকু আমি জেনেছি তাহলে কোন এক বেনামি লেখকের লেখা শেয়ার করেছিলেন তিনি। তবে কি ছিল সেই লেখায়?

পরিচয় পাত্র(এটা ছদ্মনাম হিসেবে কেউ ধরবেন না, ওনার নাম হল পরিচয়, আর পাত্র হল ওনার বংশের নাম) নামে একজন কবির সুমনকে একটি খোলা চিঠি লিখেছিলেন। উক্ত চিঠিতে বাংলাদেশের যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার, যুদ্ধ অপরাধী জামায়াতের সাথে কলকাতার মমতার আতাত, বি এন পির সংযোগ, এবং কবির সুমনের সমর্থন নিয়ে লম্বা একটি লেখা লিখেছেন। ঐ লেখাটির বিপরীতে আর জিম নাওয়াজ নামে আর একজন একটি লেখা লিখেছিলেন “কবীর সুমন ও পরিচয় পাত্রের পরিচয় উদ্ঘাটন” শিরোনামে। পরিচয় পাত্রের লেখাটিতে কবির সুমনকে যেভাবে খিস্তি দেওয়া হয়েছে পরের লেখাটিতে সেই খিস্তি থেকে কবির সুমনকে বের করা হয়েছে। দ্বিতীয় লেখাটি কবির সুমন শেয়ার করেছিলেন। এটাই তার কাল হয়ে দাঁড়ালো। অমনি আমাদের দেশের সেই স্বনামধন্য ব্লগার রাও সুর মিলালো পরিচয় পাত্রের সাথে।

আর তা সাথে যোগ দিল তসলিমা নাসরিন ও। তসলিমা নাসরিন আমার পছন্দের একজন মানুষ। উনাকে দেশের মাঠে সবাই গালিগালাজ করলেও আমি ওনাকে সম্মান করি। তবে সম্মান করার জায়গাটা হল- লেখনীর কারনে ওনার দেশান্তরি হওয়ার জায়গা থেকে। এটা সবাই পারে না। একজন লেখকের লেখনী যখন সমাজের একটি শক্তি হয়ে যায় এবং সেই শক্তির বিরুদ্ধে আর একটা শক্তি দাড়ায় তখন অবশ্যই বলতে হবে তিনি আসলেই ভাল লেগেন। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে অথবা জলন্ত দেশের সামনে দাড়িয়ে প্রিয়ার ওষ্ঠে চুমু খাওয়া লেখকদের মত নয়। এই জায়গা থেকে ওনাকে আমি বিশেষ সম্মান করি। শুধু তাই নয় ওনার লেখা আমাকে অনেক কিছু শিখতে জানতে সহায়তা করেছে। কিন্তু উনিও আজ এদের সাথে সুর মেলালেন কেন? উনিও তো কোন একদিন কবির সুমনের গুনগান গেয়েছিলেন? আজ কেন সুমনকে বউ পেটানো লোক বলে দাবী করছেন!

বেশ কয়েক বছর ধরে তসলিমা দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোন ভাবেই পারছেন না। এবং আমরা এটাও জানি তিনি যেখানেই গিয়েছেন সেখানেই কোন কোন একটি বিতর্কের তৈরি হয়েছে, অথবা তিনি বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে আমাদের দেশের মিডিয়া তার সম্পর্কে যাচ্ছে তাই ছাপিয়ে যাচ্ছে। সেদিক থেকে তার প্রতি আমার সম্মান দিন দিন বেরেছে কমে নি। কিন্তু উনাকে সুর না পাল্টানো মানুষ হিসেবেই জানতাম। হটাত করে আমাদের দেশের এই ব্লগারদের সাথে সুর মিলিয়ে এমনভাবে একাকার হয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য টা কি সেটা আমার বোধগম্য নয়। তবে আমার এক জনৈক সাংবাদিক বন্ধু বলেছিল- দেশে ফেরার জন্য তসলিমা নাকি এখন এইসব ব্লগার দের দ্বারস্ত হচ্ছে! কথাটা আমি উড়িয়ে দিয়েছিলাম। আপনারাও নিজ দায়িত্বে উড়িয়ে দিতে পারেন। তবে সত্য হিসেবে মেনে নিলে আমি দায়ী নয়।

আমার এই লেখার মানে কোন বিরোধিতা কিংবা কাউকে সমর্থন করা নয়। পশ্চিম বঙ্গ থেকে বেশ কয়েকদিন আগে এক সাংবাদিক বন্ধু বলেছিল- তাদের ওখানে বসবাসরত মুসলমানদেরকে জঙ্গি হিসেবে আখ্যায়িত করতে নাকি বেশ কয়েকটি সংস্থা বেশ মরিয়া হয়ে উঠেছে। সংস্থা গুলো কারা হতে পারে তা অন্ধের ভাই কানাও জানে। অন্ধের ভাই কানা এই প্রবাদটি স্বয়ং পরিচয় পাত্র ব্যবহার করেছিলেন।

এর মূল কারন নাকি জামায়াতের সাথে, বি এন পির সাথে মমতার আতাত, জামায়াতকে এখন আর কেউ জামায়াত বলে না, তারা এখন যুদ্ধ অপরাধী, রাজাকার, জঙ্গি। এই শব্দগুলোকে আমাদের দেশের শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের মিডিয়া এক প্রকার প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। “বাংলাদেশে একটা জঙ্গির দেশ, এখানে অনেক জঙ্গি থাকে, যারা দেশের বাইরে পশ্চিমবঙ্গের হামলার সাথে জড়িত” কথাগুলো আপনার আমার কাছে অপমানজনক মনে হলেও শাসক গোষ্ঠীর কাছে এটি বসন্তের ককিলের সুরের মতন শোনাবে। কারন তারা এই ধারনাটা প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে বিরোধীদের দমনে আর কোন বাধা থাকবে না। এইটাও অন্ধের ভাই কানায় জানে।

প্রসঙ্গ ছিল আমাদের দেশের প্রগতিশীল এবং তাদের প্রগতিশীলতা নিয়ে। স্বাধীনতা এবং যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার এই দেশের প্রতিটি মানুষের একটি আকাঙ্খিত বিষয়। প্রতিটি মানুষের একটি স্বপ্ন- দেশের মাটিতে যুদ্ধ অপরাধীর বিচার হোক। তাদের ফাঁসি হোক। কিন্তু সমস্যাটা হল আমরা কি যুদ্ধ অপরাধীর বিচারের দাবিতে স্থির আছি। এক যুদ্ধ অপরাধীর বিচারের দাবী নিয়ে আজ দেশকে ভাগ করে দিয়েছি। ২০ বছরের যে ছেলেটি ইতিহাসকে না বুঝে যুদ্ধ অপরাধীর পক্ষে কথা বলছে তাকে ছাগু বলে তারিয়ে দিচ্ছি, তার শরীরে লাগিয়ে দিচ্ছি রাজাকারের ট্যাগ। যদি স্বাধীনভাবে এবং নিরপেক্ষ ভাবে দেশে একটি গন স্বাক্ষর অভিযান পরিচালনা করা হয়- যে দেশের কতজন মানুষ যুদ্ধ অপরাধীর বিচার চায়? এটার উত্তর কি হবে সেটাও কানার ভাই অন্ধ জানে। প্রশ্ন হল যুদ্ধ অপরাধীর বিচারের ইস্যুটা কেন প্রশ্নবিদ্ধ হবে? কারন এই একটি ইস্যু আজকে অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, দেশকে দুই ভাগ করেছে। স্বাধীনতার পক্ষ আর বিপক্ষ।

আমাদের দেশের প্রগতিশীলরা আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমাদের মা বোনকে যারা ধর্ষণ করেছে তাদের ফাসির জন্য লেখালেখি করছে, সমাবেশ করছে, সারা দেশ তোলপাড় করছে। কিন্তু আজকের সকালে যেই মেয়েটি ধর্ষিত হল- আজকের সকালে অফিস থেকে ফেরার পথে যেই মা ধর্ষণের স্বীকার হল সে হয়ে যাচ্ছে বেওয়ারিশ ধর্ষণ। তার বিচারের জন্য কারো মুখ থেকে কোন কথা বেরোয় না। পঞ্চাশ বছর আগে কোন এক হিন্দু বাড়িতে আগুন দিয়েছিল সেই সুবাদে তার ফাসির দাবিতে আমরা একত্রিত হচ্ছি- কিন্তু গতকাল যে হিন্দুর মেয়েটিকে ধর্ষণের পর পুড়িয়ে মারা হল তার জন্য একফোঁটা করুনার জল আমাদের নেই। একদিকে দেশকে দায়মুক্ত করা, কলঙ্ক মুক্ত করাটাও যেমন প্রগতিশিলতার একটি দায়িত্ব তেমনি দেশকে কলঙ্কমুক্ত রাখাটাও একটি প্রগিতশিলতার একটি দায়িত্ব। ধর্ষিত মেয়েকে ধর্ষণের কলঙ্ক থেকে থেকে মুক্ত করে নিজেই আবার ধর্ষণ করার নাম নির্মম পৈশাচিকতা।

আগে রাজনৈতিক দল গুলো একে অপরকে আঘাত করতো, এরপরে বংশ নিয়ে ঝগড়া। কিন্তু এখন ইতিহাস নিয়ে। রাজনীতিবিদের আর সরকারের বক্তৃতা শুনলে এখন কেবল শুনবেন ইতিহাস আর পাল্টা ইতিহাস। ইতিহাস পাল্টা ইতিহাস নিয়ে যখন শাসক গোষ্ঠী আর বিরোধী পক্ষ উন্মাদ হয়ে যায় তখন দেশ আর সামনের দিকে যায় না বরং ইতিহাসের দিকেই ফিরে যায়।

নাকের চুলকানিতে সারা দিয়ে অনেক কথাই বলে ফেললাম। আশা করি সবাই নাকের চুলাকানিতেই পড়বেন। আর না পড়লে আমার এই লেখাটা স্বার্থক।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:১০

রাফা বলেছেন: হুমম. ....ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এক যায়গায় ফিরে এসেছেন।চমৎকার বিচার চাই তবে,কিন্তু,যদি-প্লাস্টিকের মত স্বচ্ছ হোতেই হবে।

প্রগতিশিলরা কবে কোথায় বলেছে বর্তমান অপরাধের বিচার তারা চায়না?
অন্য অপরাধের বিচার হোচ্ছেনা বলে যুদ্ধাপরাধের বিচার করা যাবেনা এই তত্ব কোথা থেকে আবিস্কার করলেন?

কোথায় কবে ৫০ বছর আগে যুদ্ধাপরাধ হয়েছে এই কথা থেকেই প্রমাণ দিয়ে দিয়েছেন আপনার জাতের।
৭১-র কথা যখন বলবেন খুব হুস কইরা বইলেন।২০ বছরের যুবক না বুজেই যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন করছে ভালো যুক্তি দেখাইলেন...তাহোলে ১৯ বছরের যে যুবক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলছে সে জানছে কি করে?

আপনাদের ট্যাগ দিতে হবে কেনো!আপনাদের অবস্থান আমাদের কাছে খুব পরিস্কার।

২| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:২৬

রাখাল রাাজু বলেছেন:
স্বচ্ছ একবেরে পানির মত

৩| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৫২

জাকির হায়দার বলেছেন: q্ব্বেডফ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.