![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
'আমি আর ইয়াকুব নামে আমার এক ফটোগ্রাফার বন্ধু পরার্মশ করলাম, আজ মহাত্মাজীকে একটা উপহার দিব। ইয়াকুব বলল, ‘‘তোমার মনে আছে আমি আর তুমি বিহার থেকে দাঙ্গার ফটো তুলেছিলাম?" আমি বললাম, ‘‘হ্যাঁ মনে আছে।’’ ইয়াকুব বলল, ‘‘সমস্ত কলকাতা ঘুরে আমি ফটো তুলেছি। তুমি জান না তার কপিও করেছি । সেই ছবিগুলি থেকে কিছু ছবি বেছে একটা প্যাকেট করে মহাত্মাজীকে উপহার দিলে কেমন হয়।” আমি বললাম, "চমৎকার হবে। চল যাই, প্যাকেট করে ফেলি ।" যেমন কথা, তেমন কাজ। দুইজনে বসে পড়লাম । তারপর প্যাকেটটা এমনভাবে বাঁধা হল যে, কমপক্ষে দশ মিনিট লাগবে খুলতে। আমরা তাঁকে উপহার দিয়েই ভাগব। এই ফটোর মধ্যে ছিল মুসলমান মেয়েদের স্তন কাটা, ছোট শিশুদের মাথা নাই, শুধু শরীরটা আছে, বস্তি, মসজিদে আগুনে জ্বলছে, রাস্তায় লাশ পড়ে আছে, এমনই আরও অনেক কিছু।মহাত্মাজী দেখুক, কিভাবে তাঁর লোকেরা দাঙ্গাহাঙ্গামা করেছে এবং নিরীহ লোককে হত্যা করেছে।
আমরা নারকেলডাঙ্গায় মহাত্মাজীর ওখানে পৌঁছালাম। তাঁর সাথে ঈদের মোলাকাত করব বললাম। আমাদের তখনই তাঁর কামরায় নিয়ে যাওয়া হল। মহাত্মাজী আমাদের কয়েকটা আপেল দিলেন। আমরা মহাত্মাজীকে প্যাকেটটা উপহার দিলাম। তিনি হাসিমুখে গ্রহণ করলেন। আমরা অপরিচিত সেদিকে তাঁর ভ্রক্ষেপ নাই। তবে বুঝতে পারলাম, তাঁর নাতনী মনু গান্ধী আমার চেহারা দেখেছে ব্যারাকপুর সভায়, কারণ আমি শহীদ সাহেবের কাছে প্লাটফর্মে বসেছিলাম। আমরা উপহার দিয়ে চলে এলাম তাড়াতাড়ি হেঁটে। শহীদ সাহেব তখন ওখানে নাই। বন্ধু ইয়াকুবের এই ফটোগুলি যে মহাত্মা গান্ধীর মনে বিরাট দাগ কেটেছিলো তাতে সন্দেহ নাই। আমি শহীদ সাহেবকে পরে এ বিষয়ে বলেছিলাম।'
শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে; পৃ. ৮১-৮২
©somewhere in net ltd.