নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তেজষ্ক্রিয় রশ্মি

রাকিব পলাশ

ভালবাসার ধুম্রজালে পুরোদমে আটকা আমি

রাকিব পলাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবনীর কষ্ট

০৫ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৮:৩৭

"এই খুকি আইসক্রীম খাবে?" অপরুপ একটি বাচ্চা মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন শফিক চৌধুরী। "না খাব না" বলেই এক দৌড়ে আড়ালে চলে গেল। অবাক হলেন শফিক সাহেব। নিজের মেয়ের স্কুল ছুটির পর প্রতিদিন তিনি তার মেয়েকে রাস্তার পাশের আইসক্রিমের দোকানে নিয়ে আসেন। তিনি খেয়াল করলেন যে, প্রতিদিনই স্কুল ড্রেস পরা এই নাম না জানা বাচ্চা মেয়েটি অপলক দৃষ্টিতে নানা রঙের আইসক্রিমের দিকে তাকিয়ে থাকে। তিনি মনে করলেন যে, মেয়টির হয়তো আইসক্রিম খাওয়ার খুব ইচ্ছা। কিন্তু মেয়েটি এভাবে দৌড়ে চলে গেল কেন তা তিনি বুঝতে পারলেন না।



পরের দিনও শফিক সাহেব তার মেয়েকে আইসক্রিম খাওয়াচ্ছেন, তখন মেয়েটিকে দেখতে পেলেন। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি যখন চলে যাচ্ছিল তখন তিনি একটি বিশাল আইসক্রীম বক্স আর তার মেয়েকে নিয়ে সেই মেয়েটির পিছন পিছন তার বাসায় গেলেন। বাসায় গিয়ে তিনি অবাক হয়ে গেলেন। বিভিন্ন জায়গায় শুধু আইসক্রিমের ছবি। তিনি মেয়েটির মায়ের সাথে পরিচিত হলেন। সবকিছু শুনে মেয়েটির মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। অবশেষে কান্না থামিয়ে ভদ্র মহিলা সব কাহিনী জানালেন।



মেয়েটির নাম অবনী। অবনীর যখন সাত বছর বয়স তখন ও খুব আইসক্রিম খেত। আর ওর বাবা কবির হোসেন নিজের আদরের মেয়ের জন্য প্রচুর আইসক্রিম কিনে দিতেন। দিনটি ছিল ২১ আগস্ট ২০১৩। অবনীর বাবা সুন্দর একটি আইসক্রিম বক্স উপহার দিলেন। কিন্তু বক্সটা খুলেই অবনী জেদ ধরলো। "আব্বু আমি ভ্যানিলা খাব না, আমাকে চকলেট আইসক্রিম এনে দাও।" অবনীর মা মেয়েকে বোঝালেন যে, "এখন অনেক রাত, তোমার বাবা কাল সকালে এনে দিবে।" কিন্তু অবনীর জেদ কমলো না। কবির সাহেব মেয়ের মুখের হাসি দেখার জন্য আইসক্রিম আনতে বেড়িয়ে গেলেন।



দোকান থেকে আইসক্রিম নিয়ে বের হয়ে রাস্তায় এসে দাড়ালেন। রিক্সা নেয়ার জন্য তাকে রাস্তা পার হতে হবে। কবির সাহেব তার মেয়ের হাসিমুখ দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছেন। কিন্তু নিয়তি তাকে মেয়ের হাসিমুখ দেখার সৌভাগ্য দিলনা। তিনি যখন রাস্তার মাঝখানে, ঠিক তখনই একটি ট্রাক এসে তাকে চাপা দিয়ে গেল। রক্তাক্ত কবির সাহেব রাস্তার মাঝখানে পড়ে আছেন। সমস্ত আকাশ কালো মেঘে ঢাকা। হঠাত মেঘ গলে এক ফোটা বৃষ্টির জল তাঁর মুখের উপর এসে পড়ল। কবির সাহেব শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। সমস্ত মেঘ আইসক্রিমের মত গলে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ল।



শফিক সাহেব তাঁর হাতের আইসক্রিম বক্সটার দিকে অপলক চেয়ে আছেন। ভিতরের আইসক্রিম গরমে গলে গেছে। অবনীর রুমে অবনী তাঁর বাবার ছবি হাতে নিয়ে বসে আছে। তাঁর দুচোখের অশ্রু আইসক্রিমের মত গলে পড়ছে। অন্তরের সকল কষ্ট পাহাড়ী ঝর্ণার মতো ঝরে পড়ছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.